Posts

Showing posts from October, 2018

কথোপকথন

ক্যায়সে ইংলিশ বোলতে হ্যায় ইয়ে লোগ।   অভিযোগটা মিস করে যেতে পারতাম। কারণ সমস্ত মনোযোগ ন্যস্ত ছিল দুহাতে ধরা পাসপোর্টে। কাজটা যতটা কঠিন হবে ভেবেছিলাম তার থেকেও কঠিন। জানালার সিট চেয়ে এমারজেনসির এক্সিটের জানালার সিট পেয়েছি। ওটা অনেকের কাছেই কভেটেড কারণ পা ছড়ানো যায়, সামনের সিট অসভ্যের মতো নাকের ওপর পড়ে না। মুশকিল একটাই, ওই সিটে বসলে পায়ের সামনে তো বটেই, কোলেও কোনও রকম হ্যান্ড লাগেজ রাখা বারণ। সব তুলে দিতে হবে ওভারহেড বিনে। ব্যাগ, মানিব্যাগ, পাসপোর্ট সব।   প্রশ্নই ওঠে না। কারণ আমার এ বারের বনযাত্রার থিম পাসপোর্ট না হারানো। ব্যাগ তুলে দিয়েছি, কিন্তু পাসপোর্ট দুই হাতের মধ্যে নিয়ে বসে আছি। নেক্সট আটঘণ্টা এই ভাবেই বসে থাকব। এদিকে প্লেন ছেড়েছে রাত আড়াইটেয়। যখনতখন ঘুমিয়ে পড়তে পারি এবং হাতের গ্রিপ খুলে পাসপোর্ট পড়ে যেতে পারে। কাজেই ওই মুহূর্তে অন্য কোনও দিকে মন দেওয়ার প্রশ্নই নেই।   আমি সাধারণত পারিপার্শ্বিকের দিকে দরকারের বেশিই নজর দিই। সামনের লোকের অর্ধেক কথা মাথার ওপর দিয়ে যাচ্ছে অথচ তিনটে টেবিল পেরিয়ে চতুর্থ টেবিলের কে কার বাবা কে শ্বশুর, ফার্স্ট ডেট চলছে নাকি ব্রেক আপ হবে হবে

এখানে ওখানে

আমাকে একটা রেললাইন দিন। লাগোয়া একটা প্ল্যাটফর্ম। কালীপাহাড়ির মতো ভালো দেখতে প্ল্যাটফর্ম হওয়ার দরকার নেই। কদাকারও হলেও চলবে। তার ওপর দাপুটে, বদমেজাজি। কালীপাহাড়ির তিনখানা প্ল্যাটফর্ম পাশাপাশি জুড়লে তার একটা হয়। সে রকম ষোল বা ওই রকমই হাস্যকর গুনতির অনেকগুলো প্ল্যাটফর্ম পাশাপাশি রাখুন। গিজগিজ ভিড়। দাঁড়িয়ে, শুয়ে, বসে, উবু হয়ে, হেলান দিয়ে, দৌড়ে। ভিড়ের মাথায়, মাথার তলায়, কোলে, কাঁখে, গোড়ালির ফাঁকে লটবহর। মগজের সুইচ অফ সে ভিড়ের। অন্তরীক্ষ থেকে যান্ত্রিক গলা আর বোর্ডে লাল দপদপে আলো তাদের চালনা করছে। পাঠাচ্ছে এদিকসেদিক। কুকুরবেড়াল শুয়োর হনুমান, পাখিরাও আছে। গ্রাসাচ্ছাদনের ধান্দায় ঘুরছে ভিড়ের আড়ালে আবডালে।   গরম নেই। কিন্তু তাপ আছে। এতগুলো লোকের কোঁচকানো ভুরু, মাল বওয়ার ক্লান্তি, অপেক্ষার শ্রান্তি এবং ভালোয় ভালোয় গন্তব্যে পৌঁছনো হয় কি না হয় টেনশনের আঁচ, আবহাওয়ায় আনমিসটেকেবল।   গোটা দৃশ্যের একটি ছোট অংশে এইবার নড়াচড়া শুরু হল। না না, নড়াচড়া তো ছিলই শুরু থেকে, সেই সর্বব্যাপী এবং সর্বগ্রাসী চাঞ্চল্যের ওপর বাড়তি চাঞ্চল্য। প্রথমে চাঞ্চল্যের কারণ বোঝা যাবে না। তারপর ভিড়ের মাথার ওপর তার মাথা

Lethal White, Cormoran Strike #4

Image
(স্পয়লার থাকতে পারে।) জে কে রোলিং বলেছেন, লিথ্যাল হোয়াইট লিখতে তাঁর ভয়ানক পরিশ্রম হয়েছে। কিন্তু বইটা লিখে তিনি আনন্দও পেয়েছেন খুব। রবার্ট গ্যালব্রেথ ছদ্মনামে লেখা জে কে রোলিং-এর করমোরান স্ট্রাইক সিরিজের চতুর্থ বই লিথ্যাল হোয়াইট। আমি লিখতে যাচ্ছিলাম যে হ্যারি পটারের মতো এই সিরিজেও জে কে রোলিং ক্রমশ মোটা থেকে মোটাতর বই লিখছেন, তারপর গুডরিডস ঘেঁটে দেখলাম যে আগের তিনটে বই-ই সাড়ে চারশো থেকে পাঁচশো পাতার মধ্যে ছিল। এইবারেই একলাফে ছশো ছাপ্পান্ন। ছশো ছাপ্পান্ন পাতার একটাই ডিটেকটিভ গল্প আগে খুব বেশি কিংবা আদৌ পড়েছি কিনা মনে পড়ছিল না, কিন্তু সবেরই প্রথমবার আছে। পড়তে শুরু করলাম এবং বুঝলাম লিথ্যাল হোয়াইট আসলে দুটো বই। একটা রোম্যান্স, অন্যটা ডিটেকটিভ। পাঠকদের বোঝার সুবিধের জন্য পার্ট ওয়ান পার্ট টু আলাদা করেও দেওয়া আছে, ছোটখাটো ব্যতিক্রম বাদ দিলে পার্ট ওয়ানের অধিকাংশ জুড়ে রয়েছে রবিন করমোরানের রোম্যান্স আর দ্বিতীয়ার্ধে রয়েছে রহস্য গল্পটি। এর আগের বইগুলোতেও স্ট্রাইক আর রবিনের ব্যক্তিগত জীবন ফোকাসে ছিল, তবে চারশো শব্দের মধ্যে আরেকটা রহস্য ফেঁদে তার জট ছাড়ানোর ঝামেলা ছিল বলে অল

বিচার

Image
আজ থেকে প্রায় একশো সাড়ে সতেরো বছর আগে, উনিশশো সালের ডিসেম্বর মাসের এক তারিখ। হাড়কাঁপানো শীতের রাত। নিশ্চিন্তে ঘুমোতে গেলেন আইওয়ার মেডোরা শহরের সমৃদ্ধ চাষী জন হোস্যাক। দু’তারিখ সকালে উঠে বাড়ির লোক দেখলে রাতে কেউ এসে ঘুমন্ত জন হোসাকের মাথা কুঠারের দুটি নিপুণ আঘাতে থেঁতলে দিয়ে গেছে। ঘটনার চারদিন পরে খুনের দায়ে এমন একজনকে গ্রেপ্তার করল পুলিশ যে হোস্যাক পরিবারের আত্মীয় বন্ধু প্রতিবেশী, গোটা মেডোরা স্তম্ভিত হয়ে গেল। ক্রমে জন হোসাক হত্যারহস্যের স্ক্যান্ডাল হইহই করে দেশময় ছড়িয়ে পড়ে। শুধু খুনই নয়, ওই খুনপরবর্তী মামলার অংশটুকুও সমান রোমহর্ষক। একটা নমুনা দিলেই আপনারা বুঝতে পারবেন, একসময় জন হোস্যাক হত্যা মামলায় বিবাদীপক্ষের মূল অস্ত্র ছিল বাড়ির কুকুর ‘শেপ’। রাত ন’টা থেকে দশটার মধ্যে শেপ চেঁচিয়েছিল কি না, কতখানি চেঁচিয়েছিল, তারপর সারা রাত আর টুঁ শব্দ করেনি কেন, এই নিয়ে দিনের পর দিন লড়ে গিয়েছিলেন দুই পক্ষের উকিলরা। দেশের সব কাগজ ফলাও করে মামলার গতিপ্রকৃতি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে ছেপেছিল। এই সব যখন হচ্ছিল তখন সুস্যান গ্লাসপেল নামে একজন 'ডে মইন ডেইলি নিউজ' পত্রিকায় সাংবাদিকতা করতেন। তাঁকে