Posts

Showing posts from February, 2023

রুটি

আমার কেন যেন ধারণা 'দিনরাতের লোক' দু'রকমের সেট আপের সংসারে সফল হয়। এক, নিউক্লিয়ারে, দুই, গাদাগাদি ভিড়ভাট্টায়। দু'রকম পরিস্থিতিতেই সে লোকের থাকাটা মিলেমিশে যায়। আমাদের বাড়ি ছিল এই দুইয়ের মাঝামাঝি, কাজেই দিনরাতের লোক রাখার এক্সপেরিমেন্ট সবিতাকে দিয়ে শুরু এবং শেষ হয়েছিল। তার আগে মলিনা ছিল কিন্তু সে চাইল্ড লেবার, পরিপূর্ণ লোক না। সবিতা ছিল সোমত্ত। সবিতা ক'দিন ছিল, নাকি ক'মাস, মনে নেই। যতদিন ছিল ততদিন ওর থাকাটা যে সকলের চোখে পড়ত সেটা মনে আছে। চোখে পড়ার একটা কারণ ছিল কাজ সেরে রোজ বিকেলবেলা চুল বেঁধে গেটের সামনে দাঁড়িয়ে সবিতার লোক দেখা, যেটা ঠাকুমা অপছন্দ করতেন। কিন্তু ইদানীং মনে হয় প্রধানতর কারণ ছিল সবিতার ভাবলেশহীনতা। কোনওরকম অপছন্দজ্ঞাপনের উত্তরে সবিতার ভাবভঙ্গিতে তিলমাত্র ভয়, দুঃখ, রাগ, বিদ্রোহ ফুটত না। অর্থাৎ সবিতাকে পেড়ে ফেলা গেল কি না সে সম্পর্কে অপছন্দজ্ঞাপক পার্টির সংশয়ও যেত না কিছুতেই। এত সাসপেন্স নিয়ে সহাবস্থান কঠিন, কাজেই কিছুদিন পর বাক্সপ্যাঁটরা এবং ভাবলেশহীন মুখ নিয়ে সবিতা চলে গেল। একটা লেগ্যাসি রেখে। রাতে আমরা রুটি খেতাম। রেলকোয়ার্টারে সাত জাতে

২১ ফেব্রুয়ারি

Image
 

ডিয়ারেস্ট ডায়রি

চৌকো, মোটাসোটা জিনিসটা অর্চিষ্মান ব্যাগ থেকে বার করে টেবিলে রাখা মাত্র শিরদাঁড়া টানটান, ইন্দ্রিয়রা সচকিত হল। চোখের কোণ দিয়ে দেখা, তবু চিনেছি। তাছাড়া জানুয়ারি মাস। একমাসের মাইনে বাজি ধরতে পারি ওটা কী। কনফারেন্সে দিল? হ্যাঁ। আমি নেব? ডায়রিটা অলরেডি হাতে তুলে নিয়েছিল অর্চিষ্মান, প্রশ্নটা শেষ হওয়ারও আগে আমার হাতে এসে গেল। আর আমার আনন্দ হল। কীসে আমার আনন্দ জিজ্ঞেস করলে, কেউ করে না, কিন্তু ফ্যান চালিয়ে শুয়ে যখন পারসুইট অফ হ্যাপিনেসট্যাপিনেস নিয়ে ভাবিটাবি, কীসে আমার আনন্দ, অ্যাকচুয়াল আনন্দ - অটোগ্রাফ বিতরণ, বিশ্বভ্রমণ, হিমালয়গমন ইত্যাদি মনে পড়ে। এ সব গ্র্যান্ড ইভেন্টের তুলনায় একখানা নতুন ডায়রির মালিকানা যে ওই পরিমাণ আনন্দ উৎপাদন করতে পারে আবিষ্কার করে আমি চমকে গেলাম। হয়তো আবিষ্কার করে নয়। হয়তো মনে পড়ে। কারণ এই আনন্দটা আগেও হয়েছে। এত আগে যে ভুলে গেছি। বাবামা অফিস থেকে গুচ্ছের ডায়রি পেতেন, তাদের এক বা একাধিকের মালিকানা পেতাম প্রতি বছর। সঙ্গে অপরিমেয় আনন্দ। হতে পারে ব্রেনে আনন্দটা জমা ছিল, জাস্ট ধুলো ঝাড়ল। সেরোটোনিন ঝরিয়ে গেল সেই সময়টার অনন্ত সম্ভাবনারা। এই পার্টিকুলার ডায়রিটা

ডাক্তারখানায়

টাক পড়ে যাচ্ছে বলে ডাক্তারখানায় গেলাম। ডাক্তারবাবু সেনগুপ্ত, পঁয়ত্রিশ বছর ধরে দিল্লিতে। দু'সেকেন্ড চোখ চালিয়ে বললেন, যা পড়ে যাচ্ছে তো যাচ্ছে  কিন্তু যা রয়ে যাচ্ছে তো সব সাদা। এর জন্য আপনি এক, ডাই ব্যবহার করতে পারেন, দুই, ভেষজ কিছু ওষুধ আছে . . . বললাম, সাদা থাকলে অসুবিধে নেই, কিছু যাতে থাকে এনশিওর করা দরকার। ডাক্তারবাবুর চোখেমুখে 'ধরে ফেলেছি' ভাব ফুটল। আমার জামাইও আঁতেল। গোটা মাথা সাদা হয়ে গেছে তবু ডাই করবে না। পার্সোন্যালিটি এনহ্যানস করছে। গালের খানাখন্দগুলো কবে থেকে? ক্লাস সেভেন। ক্রিম লিখে দিচ্ছি। সকাল বিকেল মাখবেন। একটা ফেস ওয়াশ দিচ্ছি, ব্যবহার করবেন। পেট পরিষ্কার হয়? বললাম, টাকের ব্যাপারে যদি কিছু সাজেশন . . . বাড়িতে কে কে আছে? হাড়ের ডাক্তার, জ্বরের ডাক্তার, স্ত্রীরোগের ডাক্তার, টাকের ডাক্তার - এই প্রশ্নটা কমন। রোগীর নাড়িনক্ষত্র না জানলে নাড়ি টিপে লাভ নেই। বললাম। ছেলেপুলে? নেই। সিনটা দুঃখের নয় কনফার্ম করে মুচকি হাসলেন। আমি বলছি কেন নেই। ওয়ার্ল্ড পপুলেশন বিস্ফোরণ, রিসোর্স ডিপ্লিশন, চাদ্দিকে অন্যায় অবিচার দাঙ্গা হাঙ্গামা, এর

সত্যিটা হচ্ছে

আজকাল আকাশপাতাল ঢুঁড়েও অবান্তরে লেখার কোনও বিষয় পাই না। ব্যাপারটা সন্দেহের স্তর কাটিয়ে নিশ্চয়তায় পৌঁছেছে। আমার আর কিছু লেখার নেই। আগেও ছিল না। তবু কত কিছু নিয়ে লিখতাম। শৈশব। কৈশোর। সরস্বতী পুজো। অষ্টমীর অঞ্জলি। সুমন-নচিকেতা। গলা টিপে ধরলেও ও সব নিয়ে এখন এক লাইন বেরোবে না মনে হয়। আগে আরেকরকম পোস্ট লিখতাম খুব যা মনে পড়লে শিউরে উঠি। বাইরে খাওয়া। সিম্পলি ইডিয়টিক। বেড়াতে যাই না আর যে সে নিয়ে লিখব। গেলেও সম্ভবতঃ ভ্রমণ কাহিনির মতো করে লিখতে অস্বস্তি হবে। কাহিনি বানানটা আজকাল অবলীলায় এই রকম টাইপ করি। লিখি না কিন্তু। কাগজে কলমে লেখার সময় এখনও 'কাহিনী' বেরোয়। কাগজে লিখি 'বাড়ী', 'পাখী', 'বৌ', 'অঙ্ক', 'সূচীপত্র'। টাইপ করি 'বাড়ি', 'পাখি', 'বউ', 'অংক', 'সূচিপত্র'। হাফ সেকেন্ড হাত কাঁপে না। আসলে কাগজে যে কুন্তলা লেখে আর ল্যাপটপে যে কুন্তলা টাইপ করে, দুটো আলাদা লোক। দুটো আলাদা বাংলা বানান শেখা লোক। নতুন বানানগুলো যে খুব কনফিডেন্ট হয়ে লিখি তেমনও না। 'কাহিনি' ঠিক না 'কাহিনী' কে জানে। অনেকেই 'ক

বিকেলের গান

Image
 

ওটেসা মশফেঘঃ দুটি উপন্যাস

Image
(স্পয়লার আছে, তবে ওটেসা মশফেঘের গল্প প্লটনির্ভর নয় কাজেই স্পয়েল করার কিছু নেই। সাহস করে পড়তে পারেন।) ওটেসা মশফেঘের দুটো উপন্যাস পড়লাম। Eileen এবং My Year of Rest and Relaxation । মশফেঘ আত্মপ্রকাশ করেছিলেন ছোটগল্প সংকলন Homesick for Another World দিয়ে। অর্ধেক পড়েছি। এই পোস্টে উপন্যাসদুটো নিয়েই কথা হবে। এ সিদ্ধান্তের সঙ্গে লেখাগুলোর গুণগত মানের কোনও সম্পর্ক নেই। হোমসিক যতটুকু পড়েছি, ইমপ্রেসড কিছু কম হইনি। আইলিন, ওটেসা মশফেঘের প্রথম উপন্যাস। দু’হাজার পনেরোয় প্রকাশিত, দু’হাজার ষোলোয় ম্যান বুকার প্রাইজের জন্য শর্টলিস্টিত, একই বছরের হেমিংওয়ে ফাউন্ডেশন/পেন পুরস্কারে পুরস্কৃত। ‘মাই ইয়ার অফ রেস্ট অ্যান্ড রিল্যাক্সেশন’ প্রকাশ পায় দু’হাজার আঠেরোয়। নিউ ইয়র্ক টাইমস বেস্টসেলার। দুয়েক জায়গায় মশফেঘের লেখালিখির সঙ্গে বেল জার-এর তুলনা দেখেছি। আমার মতে মিলটা বহিরঙ্গের। বেল জার-এর মূল চরিত্র একলা নারী, মশফেঘের উপরোক্ত দুটি উপন্যাসের মূল চরিত্রও একলা নারী। বেল জার প্রথম পুরুষে লেখা, আইলিন এবং মাই ইয়ার-ও। বেল জার ক্যারেকটার স্টাডির টেক্সটবই হিসেবে গণ্য হতে পারে, মশফেঘও চরিত্রচর্চা করেন, প্লটের দ