Posts

Showing posts from June, 2019

প্রিন্টার বনাম মিনিম্যালিজম

নতুন অফিসে জাঁকিয়ে বসেছি। আগের অফিসের ড্রয়ারে যা যা রাখতাম সে সব এই অফিসের ড্রয়ারে ঢুকিয়েও জায়গা বাকি থেকে গেছে। আগের অফিসের ডেস্কের ওপর রাখা জিনিসগুলোও চোখের আড়ালে চালান করলাম। তারপর ডেস্কের দিকে তাকিয়ে খুশি হয়ে ভাবলাম, নাঃ, এতদিনে হয়েছে ডেস্কখানা মিনিম্যালিস্টের মতো মিনিমালিস্ট। পরদিন সকালে অফিসে গিয়ে দেখি ডেস্কের ওপর একখান প্রিন্টার গ্যাঁট হয়ে বসে আছে এবং আমার ডেস্কখানা আর মিনিম্যালিস্ট নেই।   মিনিম্যালিজমের সংজ্ঞা নিয়ে একজনের সঙ্গে একবার আলোচনা হচ্ছিল। সে জানতে চাইছিল মিনিম্যালিজম বলতে আমি কী বুঝি। বললাম, যতটুকু লাগে ততটুকু নিয়ে জীবন কাটানোই মিনিম্যালিজম। সে বলল, তা হলে পৃথিবীর সব লোকই নিজেকে মিনিম্যালিস্ট বলে দাবি করতে পারে। আমি বললাম, কী রকম? সে বলল, যদি ধর মুকেশ আম্বানি দাবি করে যে অ্যান্টিলার সাতাশ তলার প্রতিটি তলাই ওর বসবাসের জন্য লাগে আর ওই ছশো পরিচারকের একজনকে ছাড়াও ওর চলবে না, তোমার যুক্তি মেনে তা হলে কি মুকেশ আম্বানিও মিনিম্যালিস্ট হলেন না? বলে, ‘কেমন দিলুম?’ ভুরু নাচাল। আমি হাঁ বন্ধ করে, তাই তো, ঠিক তো, বলে প্রাণ বাঁচালাম। প্রিন্টার জরুরি জিনিস। সকলেরই ক

তখনকার পড়া, এখনকার পড়া

মাঝখানের কয়েকটা বছর বই পড়ার সময়ে টান পড়েছিল। ভেবেছিলাম জীবনে বই পড়ার থেকে গুরুতর যে সব কাজ আছে সব একে একে শেষ করে আবার পড়া শুরু করব। কাজেরা যতদিনে গুরুত্ব হারাল ততদিনে আরও অনেক কাজ জুটে গেছে। যেগুলো সবক’টাই বই পড়ার থেকে সোজা। টিভি দেখা, ইন্টারনেট সার্ফিং, ক্যান্ডি ক্রাশ খেলা। এগুলো ঘণ্টার পর ঘণ্টা করলেও বইয়ের কথা একবারও মনে পড়ে না। অথচ বইয়ের চারপাঁচ পাতা পড়তে না পড়তেই এগুলোর কোনও একটা খুলে বসতে মন আনচান করে।   তা বলে বই একেবারেই কি আর পড়তাম না? পড়তাম। ইচ্ছে হলে। মাঝেসাঝে। কিন্তু গোটা একটা দিন, কখনও কখনও পরপর দুই তিন চারদিন বইমুখো না হয়ে কাটিয়ে দেওয়াটা ধাতে সয়ে এসেছিল। মন খারাপ হত। একটা দামি জিনিস যে হারিয়েছি সেটা সর্বক্ষণ চেতনায় খোঁচা দিত। মনে পড়ত, একসময় বই পড়াটা তেষ্টা পেলে জল খাওয়ার মতোই সোজা ছিল। যখন বই পড়তাম আর যখন বই পড়ছি না,   জীবনের এই দুটো পর্বের ভাবগতিকও তুলনা করার জন্য ছিল হাতের সামনেই। কার্যকারণ কে ঠিক করে। হতে পারে শান্তি গেছে বলেই বই পড়ার অভ্যেস গিয়েছিল কিন্তু আমার ভয় হত উল্টোটাই ঘটেছে। বই পড়ছি না বলেই সব অগোছালো হয়ে গেছে। কেনার অভাবে পড়া হচ্ছিল না তেমন

হ্যাপি ফাদার'স ডে

১। বাবার জন্মদিনঃ ১০ জানুয়ারি, ১৯৫২ ২। বাবার প্রিয় খাবারঃ আলুপোস্ত। তবে স্ট্রিক্টলি এই ভ্যারাইটির । ৩। বাবার প্রিয় বেড়াতে যাওয়ার জায়গাঃ পুরী ৪। বাবা হাজার টাকা পেলেঃ পাঁচশো টাকা জমাবেন বাকি পাঁচশো দিয়ে ঘুরতে যাবেন। দশ হাজার পেলে পাঁচ হাজার জমাবেন, বাকি পাঁচ হাজারে ঘুরতে যাবেন। দশ লাখ পেলেও হিসেবটা পাঁচ পাঁচেরই থাকবে। ৫। বাবাকে বর্ণনা করার তিনটে বিশেষণঃ উৎসাহী, পুঙ্খানুপুঙ্খ, চাপা। ৬। বাবার সঙ্গে আমার মিলঃ তালজ্ঞান, মাত্রাজ্ঞানহীনতা, বসার ভঙ্গি, খাদ্যাখাদ্য রুচি (কলমি শাক, পটল এবং বাঁধাকপি, আমাদের কমন ফেভারিট), মেজাজ। ৭। বাবা ভালো পারেনঃ গান গাইতে, গান শুনতে, বেড়াতে, টেবিল টেনিস খেলতে, আয়ব্যয়ের হিসেব রাখতে, জায়গার জিনিস জায়গায় রাখতে, নানারকম লোকের সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতাতে। ৮। বাবা আমাকে শিখিয়েছেনঃ সাইকেল এবং স্কুটার চালাতে, সাঁতার কাটতে, QWERTY মেনে টাইপ করতে, শুরুতে পাটকাঠিতে গুঁজে এবং ক্রমে হাতে ধরে পটকা ফাটাতে, যখন যেটা খেতে ইচ্ছে করছে তখন সেটা অম্লানবদনে খেয়ে ফেলতে। অর্থাৎ এখন ফুচকা খেলে রাতে রুটি ঢ্যাঁড়সভাজা না খেতে পারার আতংকে না ভুগতে। ৯। বাবা অনেক চেষ্টা

অফিস শিফটিং

আমাদের অফিস বাড়ি বদলাচ্ছে। কেন বদলাচ্ছে, দরকার ছিল কি না, বর্তমান লোকেশনের তুলনায় নতুন লোকেশনের তুল্যমূল্যতা নিয়ে আমার কিছু বলার নেই। কোনও বিষয়ে যদি মতামত স্ট্রং হয় অথচ সেই মতামতে পরিণতির প্রভাবিত হওয়ার বিন্দুমাত্র সম্ভাবনা না থাকে তবে সে মতামত জাহির করা বেকার। তার থেকে বরং আমার যা করণীয় সেটাই করি। বাক্সপ্যাঁটরা বাঁধি আর কালোর মধ্যে ভালো খুঁজে সান্ত্বনা পাই। দ্বিতীয়টা করতে খুব যে অসুবিধে হচ্ছে তেমন নয়। গ্লাস সর্বদা হাফ ফুল দেখার বদভ্যেস চিরকালই ছিল। অনেক সময় এমনও ঘটেছে, গ্লাস একেবারে ঠনঠনে, আমি চোখ সরু করে, ঘাড় বেঁকিয়ে, চশমা মুছে তাতে ফোঁটা দুয়েক জল আবিষ্কার করেছি। প্রথমেই মনে হল এই সুযোগে ডেস্কে জমে ওঠা জঞ্জাল সাফ করা যাবে। স্বেচ্ছায় এবং দায়ে পড়ে নেওয়া প্রিন্ট আউট, হাবিজাবি আমন্ত্রণপত্র, সেমিনার কর্মসূচী পাইকারি দরে রিসাইকেল বিনে পাঠালাম। তিনটে স্টেপলার, দু’খানা পাঞ্চিং মেশিন, তিনটে প্রোজেক্টের তেরোখানা নোটবুক, পনেরোটা নীলকালো রেনল্ডস পেন, বাইশটা অজন্তা পেনসিল - বিদায় হল। কার্টনে সেলোটেপ সাঁটতে এসে ভাইসাবেরা ভুরু কুঁচকোলেন। বস? দুই হাত তুলে দিলাম। বস।   সব বদলই নত

সুইট বান

আমি সাধারণত মাঝসকালের চায়ের সঙ্গে কিছু খাই না। খাওয়ার জিনিসের অভাবজনিত কারণে নয়। আন্টিজির দোকানে জিরে বিস্কুট, টোস্ট, ফেন, মঠরি, দোকানের পাশে আংকলজির উনুন থেকে গরম রুটি নামতেই থাকে, ডাল কিংবা ভাজি, যেদিন যেটা থাকে, সেই দিয়ে খাও। কোনওটাই খাই না কারণ এক তো খিদে থাকে না। তাছাড়া এই গরমে ঠাণ্ডা জল (আর গরম চা) ছাড়া কিছু শরীরের ভেতর সেধে পাঠানোর চিন্তাও প্রাণঘাতী।   কিন্তু কাল সকালে এমন একটা কাণ্ড ঘটল যে বিনা কোনও জোরাজুরি, বিনা কোনও ব্ল্যাকমেল, বিনা কোনও চক্ষুলজ্জা, এই সাতচল্লিশ ডিগ্রির বাজারেও আমাকে খেতে হল। দোকানের নিচু গ্রানাইট তক্তায় আমার ছায়া পড়ল, আন্টিজির বউমা চোখ তুলে তাকিয়ে, কেটলি নামিয়ে ফিকি চায়ের সসপ্যান হিটারে চড়ালেন। আমিও, যাক এখন বাধ্য হয়েই খানিকটা বেশি সময় অফিসের বাইরে কাটাতে হবে মনে করে সাইড করে দাঁড়িয়ে পাঁচিলে হেলান দিয়ে ক্যান্ডি ক্রাশ সোডা খুললাম। খুলতে একটু সময় লাগল, ফোনটা পুরনো হয়ে গেছে কিংবা সময় নষ্টের পাপের ভাগী হতে চায় না। ফোনের অকারণ সর্দারিতে বিরক্ত হয়ে এদিক ওদিক তাকাচ্ছি, মঠরির বয়ামের পাশের প্লাস্টিকের প্যাকেটের চোখে চোখ পড়ে গেল। না, জিরে বিস্কুটের প্যাকেটটা