Posts

Showing posts from August, 2023

জয়পুর ৩ঃ সিটি প্যালেস

Image
সিটি প্যালেসের এন্ট্রি ফি মাথাপিছু পাঁচশো টাকা। মিউজিয়াম আর লাইট অ্যান্ড শো মিলিয়ে। টিকিট কেনার পর থেকেই থানে থানে সাদা জামা, লম্বা ল্যাজওয়ালা লাল পাগড়ি পরা অপেক্ষারত কর্মচারীরা ন্যাভিগেশনে সাহায্য করবেন। মিউজিয়ামটিয়াম, আমার মতো লোকের কাছে অপচয়। কত দেখার জিনিস, কত মূল্যবান জিনিস, নব্বই শতাংশই স্মৃতি থেকে বেরিয়ে যায়। বা তেমন করে দেখাই হয় না। এক সপ্তাহও হয়নি (না হয়েছে, আট দিন) সেভাবে কিছু মনে পড়ছে না। খালি মনে পড়ছে প্রাসাদের বিরাট চাতাল পেরিয়ে প্রথম যে ঘরটায় গেলাম তার সিলিং থেকে ঝুলছিল বিরাট ঝাড়লণ্ঠন। চারদিকের দেওয়াল ঘিরে প্রমুখ সোয়াই সিংদের ছবি। আমিআপনি যদি একখান একখান মানুষ হই তাহলে এঁরা সোয়াখান। সেই থেকে সোয়াই। সিংটাও পয়দায়েশি না। আকবরের দেওয়া। অধিকাংশই বাঁ দিকে মুখ ফিরিয়ে, কেউ সোজা দাঁড়িয়ে, কেউ চেয়ারে বসে। নিচে তাঁদের কর্মকাণ্ডের বিবরণ। সোয়াখানই বটে। শহর গড়েছেন, লাইব্রেরি খুলেছেন, কত বই কত ভাষা থেকে কত ভাষায় অনুবাদ করেছেন, গলফ কোর্স বানিয়েছেন, আর পোলো তো খেলেইছেন। পোলো হল গিয়ে জয়পুরের রাজাদের একটা লক্ষক। পাগড়িধারী ভাইসাবের তর্জনী অনুসরণ করে চাতাল পেরিয়ে ঢুকলাম আরেকটা প্রাসাদে। প্

জয়পুর ২ঃ গুলাব জামুন, গাট্টা কারি ও হাওয়ামহল

Image
ট্রেনে উঠতে ভুল। নামতেও ভুল। জয়পুর জংশনে নামার কথা আমাদের। কামরার সবাই নামছে দেখে আমরাও নেমে পড়লাম। ওটা গান্ধীনগর। জয়পুর জংশনের আগের স্টেশন। আমাদের হোটেল আবার  জয়পুর জংশনের নাকের ডগায়। কোই বাত নেহি, উবার ডেকে চলে যাওয়া যাবে। ডাকলাম। ভাইসাব বললেন, আপ কাহাঁ হো? আমরা বলছি, যাহাঁ বহোৎ সারে অটো কা ভিড় উধার। ভাইসাব বললেন, ম্যাডাম, পুরা জয়পুরমে বহোৎ সারে অটো কা ভিড় হ্যায়। তখন ফোন নামিয়ে একজনকে জিজ্ঞাসা করতে হল, আমরা কোথায়। গেট নাম্বার টু-তে। তথ্য সরবরাহ করে দিলাম, ভাইসাব একনম্বর গেটে দাঁড়িয়ে ছিলেন, ব্যাজার গলায় বললেন, আ রহা হুঁ। এলেন। শহরের পথে ভেসে পড়লাম। অর্চিষ্মান অটোর ওই ফোঁকর দিয়ে, আমি অটোর এই ফোঁকর দিয়ে বডি অর্ধেক বার করে  জয়পুর গিলতে গিলতে চললাম। দিল্লিতে পাঁচ কিলোমিটার পরপর ভাঙা বাড়ির খণ্ডাংশ দেখা যায়, এখানে মোড়ে মোড়ে একটা লাল পাথরের হয় সিংদরজা নয় উঁচু মিনার টাইপের জিনিস। সেগুলো অরিজিন্যাল নাকি পরবর্তীতে শহরের চরিত্রের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে বানানো জানি না। সিংদরজাগুলো অবশ্যই আগেকার। অর্চিষ্মান ভুলধরা জেঠুদের মতো বলল, পাথরগুলো তো লাল, গোলাপি তো না? আমি বললাম, একই হল। আমাদের হোটেল আর

জয়পুর ১

কামরার এদিকে দুটো সিটের সারি। ওদিকে তিনটের। আমাদের সিট ওদিকটায়। তিরিশ একত্রিশ। বত্রিশে অন্য কেউ বসবে। একত্রিশে আমি। তিরিশের জানালায় অর্চিষ্মান। ওর জন্য উইন্ডোসিট প্রেফারেন্স দিয়েছিলাম। অর্চিষ্মান শিভ্যালরাস হাত ছড়িয়ে আমাকে জানালার দিকে চালিত করল। বললাম, সিরিয়াসলি? অর্চিষ্মান মুখ এক্সট্রা উদাস করল। আর কী। অ্যাকসেপ্ট করলাম বটে কিন্তু মনে মনে স্থির করলাম যে ফেরার পথে করব না (করিওনি)। ফেরার পথেও ওর উইন্ডোসিট, আমার উইন্ডোর পাশের। যদিও ফেরার পথে সন্ধে হয়ে যাবে, জানালা দিয়ে বেশিক্ষণ দেখা যাবে না। সকালে গোটা রাস্তাটাই দেখা যাবে। টোটাল সাম্যবাদ হবে না। নিজেকে সান্ত্বনা দিলাম। ইন্টেনশনটাই আসল। ল্যাপটপ মেললাম। যেন যত জমা কাজ নেক্সট সাড়ে চারঘণ্টায় শেষ করে ফেলব। শতাব্দীতে প্লাগ পয়েন্ট নর্ম্যালি দেওয়ালে থাকে, নেই। অর্চিষ্মান বলল, দেখ সিটের নিচে আছে হয়তো। অর্চিষ্মান ল্যাপটপ বার করল। নিজের ব্যাকপ্যাক তুলল বাংকে। তোমারটা তুলব? তোলাই যায়, কিন্তু নিজেকে চিনি, তোলার পরমুহূর্ত থেকে মনে হবে ওটা ভেতরে রয়ে গেল, সেটা বার করা হল না। এক্ষুনি বার না করলে প্রাণ বেরিয়ে যাবে। তার থেকে পায়ের কাছে থাক। আমি ফস ক

পাড়ার ভালোমন্দ

নাকতলার ছাদের বাগান দেখার মতো। স্বর্ণচাঁপা থেকে বেগুন, পাতিলেবু থেকে ক্যাকটাস। মা একটা পুঁইচারা দেখালেন, লকলকিয়ে উঠছে। এত সতেজ, এত ডাঁটো, চোখ ফেরানো যায় না। ডাঁটার সবুজতম অংশ আলতো ছুঁয়ে, কেন বললাম জানি না, জীবনে কোনও গাছ, ফুল, ফল দেখে এই রিঅ্যাকশন হয়নি, সেদিন হল। দেখেই বোঝা যাচ্ছে বেগুন, বড়ি দিয়ে কী চমৎকার লাগবে। পুঁইডাঁটাটা আমার চোখে চোখ রেখে স্লো মোশনে ওয়াও বলল, তারপর বলল, ইনি নাকি মুরগিপাঁঠাদের কষ্ট সহ্য না করতে পেরে ননভেজ ছেড়েছেন। কী আমার এমপ্যাথেটিক ভেজিটারিয়ান রে। লজ্জাও করে না। কথা না বাড়িয়ে দৌড়ে নিচে এসে লুচির থালার সামনে বসে পড়লাম। বাড়িতে কী খেলি, জিজ্ঞাসা করে অনেকে। নাকতলায় থাকলে উত্তরটা বুক ফুলিয়ে দিই। বেশি করে ঘি কাজুবাদাম দেওয়া চিঁড়ের পোলাও, ভাজাভাজা আলু পোস্ত, ধোঁকার ডালনা, গৌরীর রাঁধা পনীরের একটা স্পেশাল ঝোল। সে ঝোল বোতলে করে বিক্রি করলে এমনি কিনে স্ট্র দিয়ে খেতে পারি। বেগুনের হয় ভাজা নয় পোস্ত নয় কিছু একটা, যেহেতু আমার বেগুন প্রিয়। পাছে বাড়ির খাবার খেয়ে পেটে চড়া পড়ে, বাবা নাটক দেখে ফেরার পথে তড়কারুটি নিয়ে আসেন। ল্যাংড়া আম আর কামধেনুর চমচম তো আছেই। ঢালাও রাবড়

ভুত ও ভিকটিম

আনন্দবাজারের কোণায় একটা দেড় ইঞ্চি বাই দেড় ইঞ্চি বিজ্ঞাপন। বেলেঘাটা অঞ্চলে বড়রাস্তার পঞ্চাশ পা ভেতরে একটি পুরোনো বাড়ি ভাঙা হয়ে ফ্ল্যাটবাড়ি তৈরি হবে। আগ্রহী খরিদ্দারেরা যোগাযোগ করুন। মা খুব খরিদ্দার ছিলেন বলে মনে হয়নি কখনও। সংসারের হাঁ মেটাতে যা লাগে কিনতেন। চাল ডাল নুন তেল হারপিক লাইজল। সমাজের প্রয়োজনেও কিনতেন। এর বিয়ের বেডকভার, তার পুজোর শার্টপ্যান্ট , আমার ফ্রকের রং মিলিয়ে নিউ মার্কেটে ঘুরে ঘুরে সিল্কের রিবন। নিজের জন্যও কিনতেন, তবে সে সব কেনায় অন্যদের জন্য কেনার তুলনায় পঁচাত্তর গুণ বেশি  প্রয়োজন-শখের তুল্যমূল্য দড়িটানাটানি লেগে থাকত। মা ডেফিনিটলি আগ্রহী ছিলেন। ভাড়াবাড়ির বারান্দার রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে মণি ভাবত, বড় হয়ে একটা নিজস্ব, বিরাট, ছাদওয়ালা বাড়ি হবে ওর। মণিমঞ্জিল। মণির সে মঞ্জিলের সঙ্গে বেলেঘাটার ফ্ল্যাটের (যদি আদৌ হয় কোনওদিন) আকৃতিপ্রকৃতিতে কোনও মিল থাকবে না জেনেও মা গিয়েছিলেন। একাই। সে বাড়ি তখন সদ্য ভাঙা হচ্ছে। বাড়ি ভাঙা হল। ফ্ল্যাট শুরু হল। মা অফিস থেকে ফেরার পথে মাঝেসাঝে দেখে আসতেন। প্রোমোটার বদলাল। নতুন প্রোমোটার এল। ফ্ল্যাট ফিনিশ হল। কাগজপত্র হল। ভাঙাপড়া বাড়ির মালি

সময়ের ফের

নববাবু বিচলিত হলেন। ইস, হারমোনিয়ামটার সারা গায়ে তো ঘামাচি হয়ে গেছে। নির্ঘাত কেউ পাকামো করে রোদে দিয়েছিল? হারমোনিয়াম যে রোদে দেওয়া উচিত নয় বিজলীদিকে সকালেই সে বাবদে জ্ঞানদান করেছি। তবু লাফিয়ে পড়ে ক্রেডিট নিতে পারলাম না। নববাবুর উপমাটা আমার ক্রেডিটের ধক তলানি করে দিল। রোদ্দুর লেগে পালিশ চটে গিয়ে সারা গায়ে জন্মানো ফ্যাকাশে ফুটকিগুলোকে হারমোনিয়ামের ঘামাচি বলে চালাতে বাংলাদেশের খুব বেশি কবিসাহিত্যিকের কুলোবে না। নববাবুকে এমারজেন্সি কল দিয়েছে বাবা। আগেরদিন সকালে ২০৪৮ খেলতে খেলতে আঙুল অবশ করে ফেলছিলাম, এমন সময় বিজলীদি কথা নেই বার্তা নেই দমাস করে এনে হারমোনিয়ামটাকে বিছানার ওপর বসিয়ে দিয়ে গেল। এই নাও সোনা। আরে এটা কে! বলে ২০৪৮ ফেলে লাফিয়ে উঠে বেলো খুলতে না খুলতে, রিডে আঙুল ছোঁয়ানোর আগেই একটা কনস্ট্যান্ট প্যাঁঅ্যাঁঅ্যাঁঅ্যাঁ। আঙুল ছোঁয়াতে কোমল ধা, কোমল নি আর ওপরের সা-এর রিড খুলে এদিকওদিক ছিটকে পড়ল। মায়ের হারমোনিয়ামটা পঁচাত্তর সালের। চাকরি পেয়ে নিজেই গানের মাস্টারমশাই ঠিক করে, নিজেই হারমোনিয়াম কিনে এনেছিলেন মা। সেই হারমোনিয়াম ছোটমামা মায়ের শ্বশুরবাড়ি আসার ট্যাক্সিতে তুলে দিয়েছিলেন। ন