পাড়ার ভালোমন্দ



নাকতলার ছাদের বাগান দেখার মতো। স্বর্ণচাঁপা থেকে বেগুন, পাতিলেবু থেকে ক্যাকটাস। মা একটা পুঁইচারা দেখালেন, লকলকিয়ে উঠছে। এত সতেজ, এত ডাঁটো, চোখ ফেরানো যায় না।

ডাঁটার সবুজতম অংশ আলতো ছুঁয়ে, কেন বললাম জানি না, জীবনে কোনও গাছ, ফুল, ফল দেখে এই রিঅ্যাকশন হয়নি, সেদিন হল। দেখেই বোঝা যাচ্ছে বেগুন, বড়ি দিয়ে কী চমৎকার লাগবে।

পুঁইডাঁটাটা আমার চোখে চোখ রেখে স্লো মোশনে ওয়াও বলল, তারপর বলল, ইনি নাকি মুরগিপাঁঠাদের কষ্ট সহ্য না করতে পেরে ননভেজ ছেড়েছেন। কী আমার এমপ্যাথেটিক ভেজিটারিয়ান রে। লজ্জাও করে না।

কথা না বাড়িয়ে দৌড়ে নিচে এসে লুচির থালার সামনে বসে পড়লাম।

বাড়িতে কী খেলি, জিজ্ঞাসা করে অনেকে। নাকতলায় থাকলে উত্তরটা বুক ফুলিয়ে দিই। বেশি করে ঘি কাজুবাদাম দেওয়া চিঁড়ের পোলাও, ভাজাভাজা আলু পোস্ত, ধোঁকার ডালনা, গৌরীর রাঁধা পনীরের একটা স্পেশাল ঝোল। সে ঝোল বোতলে করে বিক্রি করলে এমনি কিনে স্ট্র দিয়ে খেতে পারি। বেগুনের হয় ভাজা নয় পোস্ত নয় কিছু একটা, যেহেতু আমার বেগুন প্রিয়। পাছে বাড়ির খাবার খেয়ে পেটে চড়া পড়ে, বাবা নাটক দেখে ফেরার পথে তড়কারুটি নিয়ে আসেন। ল্যাংড়া আম আর কামধেনুর চমচম তো আছেই। ঢালাও রাবড়িও।

খেয়ে আবার গোকুলপিঠে প্যাক করে নিয়ে আসি।

রিষড়ায় কী খেলি জিজ্ঞাসা করলে থমকাই। কথাটা ঘোরানোর চেষ্টায় থাকি। নেহাত না পারলে মাথা চুলকে, গলা নিচু করে বলি কলমী শাক, ছোলা দিয়ে ডুমুরের মাখামাখা তরকারি, গাঁঠি কচুর ঝোল, ওল ভাতে লংকা পোড়া দিয়ে মাখা, বিকেলে বিজলীদির বানানো আলুকাবলি, রসুন দিয়ে গরগরে সোয়াবিনের তরকারি, পাতলা করে মুসুর ডাল, ছোলা দিয়ে ঝাল ঝাল কচুশাক, গাছের নিমপাতা পেড়ে শুকনো কড়াইয়ে নেড়ে, গুঁড়িয়ে, আলুভাজা, আলুসেদ্ধ বা বেগুনভাজার সঙ্গে মেখে গরমভাতে খাওয়া। সবথেকে ভালো কী খেলাম সেটা অবশ্য হারগিজ বলি না। অবান্তরে কিছুই চাপি না, রাদার চাপতে পারি না বলে বলে দিচ্ছি। আমার আর বাবার গালা ডিনার। আলুসেদ্ধ, খুব করে ঠেসে বেলডাঙার লংকা আর পেঁয়াজকুচো দিয়ে মাখা, সর্ষের তেল দিলেও হয়, না দিলেও অসুবিধে নেই। সঙ্গে শ্যামলীর হাতের, টিউবলাইটের আলো এফোঁড়ওফোঁড় করা,  কম্পাসকাটা রুটি।

গোলটেবিলে কাচের শিশিতে রাখা থাকে কুচো, ফুসকো, খাস্তা নিমকি। খেতে বসার আগে, খেয়ে উঠে,  যেতেআসতে মুঠো মুঠো মুখে ফেলি। বাবার একমাসের নিমকির স্টক সাড়ে তিনবেলায় খতম। বয়াম রিফিল হয়। দিল্লির ব্যাগের ওপর একটা এককেজি নিমকির প্যাকেট শুয়ে থাকে। পাশে একটা ছোট পলিথিনে কী যেন। বাইরে থেকে দেখে চিনতে ব্যর্থ হয়ে গিঁট খুলে এক চোখ বুজে অন্য চোখের কাছে তুলে আনি। শুঁকি। হাত ঢুকিয়ে এক টুকরো তুলে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখি। বাদামচাকের মতো দেখতে, কিন্তু বাদামচাক নয়। হাতও চ্যাটচ্যাট করছে না। বাবা কখন পেছনে এসে দাঁড়িয়েছেন। খেয়ে দেখ, খেয়ে দেখ। সন্দিগ্ধ দাঁত ছোঁয়াই। ছোলাভাজা! নুনমশলা মাখিয়ে তারপর কেউ আচ্ছা করে পিটিয়েছে। পেটানি খেয়ে ছোলাভাজারা একে অপরের সঙ্গে জুড়ে গেছে।

রান্নাঘরের মেঝের কোণে দুটো সন্দেহজনক গোলক। তালের বড়া হবে, তারপর সেগুলো প্যাক হয়ে সোনার সঙ্গে দিল্লি যাবে। 

মুখ ভ্যাচকাই। তালফাল খাই না। তীব্র গন্ধযুক্ত ফল, ফুল, ব্যক্তিত্বে রুচি কোনওদিন ছিল না। অর্চিষ্মানের আছে। ওই বড়াগুলো জামাইস্পেশাল। শ্যামলী তাল ছাড়ায়, ঘষে, জ্বাল দেয়। পরদিন বিজলীদি গরমের মধ্যে ঘেমেনেয়ে বড়া ভাজে, ঠাণ্ডা করতে বাটি ভরে ফ্যানের তলায় রেখে যায়। গাঢ় বাদামী, জায়গায় জায়গায় সামান্য কালচে, গোল গোল, ছোট ছোট বড়া, ভালো লাগবে না জানা সত্ত্বেও একটা তুলে মুখে না পুরে থাকা অসম্ভব মনে হয় ওই মুহূর্তে। তালের স্বাদ অপছন্দ হলেও তালের বড়া কীসে ভালো হয়, কীসে খারাপ আইডিয়া আছে। এই বড়াগুলো ওয়ার্ল্ড ক্লাস। বাইরে মুচমুচে, ভেতরে নরম। আঙুলে লাগা সামান্য তেল বিছানার চাদরের কোণায় মুছে বিজলীদিকে চেঁচিয়ে বলি, ফাটিয়ে দিয়েছ।

পাড়াতে সবার বাড়িতেই তালের বড়া হচ্ছে। বা পায়েস। লোকে নিজের বাড়ির গাছের তাল শেষ না করতে পেরে বিলিয়ে দিচ্ছে। বেলা এগারোটা নাগাদ বুচিদিদি একটা বাজারের ব্যাগ নিয়ে চলেছে, বাজারের উল্টোদিকে। আজকাল পাড়ার বিভিন্ন জায়গায় দোকানবাজার গজিয়ে উঠেছে, তাই ভাবছি হয়তো ওদিকেও বাজার বসেছে। কিন্তু বুচিদির হাঁটার ভঙ্গিতে কোথাও বাজারে যাওয়া নেই। জেরা করতে হল। বাজারে যাচ্ছ বলে তো বোধ হচ্ছে না, তাহলে বাজারের ব্যাগ হাতে কোথায় চলেছ? বুচিদিদি বলল, অমুককাকুর বাড়ির বাগানে তাল গড়াগড়ি খাচ্ছে, কাকু ফোন করে করে এস ও এস পাঠাচ্ছেন। উদ্ধারকর্তাদের মধ্যে বুচিদিদিও পড়েছে। আমি বললাম, তাল এনে এসো, চা খাওয়া যাবে। বুচিদিদি, ওক্কে বস্‌, বলে চলে গেল। আমি ছাদে গিয়ে দেড়হাজার স্টেপ হেঁটে ফেললাম, নিচে গ্রিল খোলার শব্দ হল। বুচিদিদি।

সিঁড়ি দিয়ে নেমে ঘরে ঢুকতে ঢুকতে দেখি বুচিদি বিজলীদির হাতে কী একটা দিচ্ছে। বিজলীদিকে দেখে মনে হল জিনিসটার প্রত্যাশায় ছিল, হাতে নিয়ে রান্নাঘরের দিকে হাঁটল। খবর নিয়ে জানলাম। ওটা একটা সুগার-ফ্রি-র সিংগল বটিকা। আমাদের বাড়িতে ও জিনিস খাওয়ার কেউ নেই, তাই বুচিদিদি যখন চা খেতে আসে, বাড়ি থেকে সঙ্গে একটা করে সুগার ফ্রি নিয়ে আসে।

ঘটনাটাকে আমার পাড়ার আরেকটা ওয়ার্ম ফাজি ফিলিং-এর গল্প বলে চালাতে পারতাম। প্রতিবেশীদের রান্নাঘরের স্টক, খাদ্যাভ্যাস, অসুখবিসুখ, স্বাদবিস্বাদ সম্পর্কে কতখানি বোঝাপড়া থাকলে এ রকম একটা প্র্যাকটিস তৈরি হতে পারে, সেটাএই ভার্চুয়াল রিয়্যালিটির বাজারে গল্প করে বলার মতোই। হয়তো এই গল্পগুলো শুনেই ঊর্মির মনে হয়েছে, আমাদের পাড়াটা বাকি পাড়ার থেকে ভালো।

মনে হওয়াটা সত্যি নয়। এই পোস্টগুলো নিখাদ নস্ট্যালজিয়ার জায়গা থেকে লিখি, আর নস্ট্যালজিয়ার থেকে আনরিলায়েবল ন্যারেটর আর নেই। সত্যিটা হচ্ছে আমার পাড়া পৃথিবীর বাকি সমস্ত পাড়ার মতোই। কারণ আমার পাড়া মানুষ দিয়ে তৈরি আর মানুষ বাকি সমস্ত মানুষের মতো। আমাদের পাড়ার লেটেস্ট গসিপের ফিরিস্তি দিলে ঊর্মি কানে আঙুল দিয়ে পালাবে। এমনকি আমার প্রতি ভুরু কুঁচকে তাকাতেও পারে এই ভেবে যে কুন্তলাদি এই ধরণের কথাবার্তা বলা লোকেদের মধ্যে অম্লানবদনে ঘোরে কী করে। শুধু ঘোরে না, তাদের পছন্দও করে।

সে রকম কয়েকটা গসিপ হচ্ছে, কে বউ মরে যাওয়ার পর আবার বিয়ে করছে (পাড়ার লোকের মত নেই), প্রভাতফেরীতে কার বর কার বউয়ের দিকে আড়াইবারের বদলে সাড়ে তিনবার মুচকি হেসেছে (হিতৈষীরা উক্ত পুরুষের স্ত্রীকে সাবধান করছে, বরকে সামলা), কোন ডিভোর্সি মেয়ের জামাকাপড়ের ছিরি দেখে সকলের সন্দেহ হচ্ছে তার সেক্স ড্রাইভ "নর্ম্যাল" মেয়েদের থেকে হাই (পাড়ার লোক দুশ্চিন্তায় ঘুমোতে পারছে না)।

অর্চিষ্মান মাথা নাড়ে। এই হচ্ছে মফঃস্বল।

আমিও মাথা নাড়ি। এই হচ্ছে মানুষ। শহরে কেউ কারও বাড়ি গিয়ে পি এন পি সি করতে বসে না, তাই এ সব চাপাচুপি থাকে। মাথায় আসে সবারই। শহুরে মাথা আর মফঃস্বলী মাথায় যতখানি তফাৎ মনে করা হয় ততটা নয়।

অর্চিষ্মান বলে, স্টিল । মাথায় এল কিন্তু মুখ বুজে থাকাটা, মাথায় যা এল হড়হড় করে বলে দিলাম-এর থেকে বেটার।

সেটা অবশ্য আমারও মত। ভেতরে ঠিকভুলের দড়িটানাটানি চলতে থাকুক, সবারই চলে, কেউই উদারতার পরাকাষ্ঠা নয়, কিন্তু মাথায় ঘাই মারা ভুলগুলো নির্লজ্জের মতো বুক ফুলিয়ে বলে বেড়ালে সততার নম্বর দিই না আমি। আবার এই বিষয়গুলোতে খুব একটা প্রজ্বলিতও হই না আর। ছোটবেলায় হতাম। আমার চরিত্রে যতখানি হওয়া সম্ভব। জামায় কাপড়ের পরিমাণ দিয়ে সেক্স ড্রাইভ মাপার বৈজ্ঞানিক ভিত্তিহীনতা নিয়ে তর্কে নামতাম। আশ্বাস দিতাম, পাড়ার যে কাকু গামছা পরে শ্মশানে রাজদ্বার একাকার করে ফেলছেন তাঁর সেক্স ড্রাইভ যদি পাড়ার লোকের থ্রেটের কারণ না হয় তাহলে আজন্ম দৌড়োদৌড়ি করে, রাস্তার এ মাথা থেকে ও মাথা সাইকেল শিখে বড় হওয়া মেয়েটার হাফপ্যান্ট পরে ছাদে ঘোরা নিয়ে আতংকের কিছু নেই। কিংবা অত কথায় না গিয়ে সেই চিরন্তন "তাতে তোমার/ তোর কী?” বলে প্রতিবেশীত্বের যাবতীয় ব্রিজ পুড়িয়েঝুরিয়ে ছাই করে দিতে পারতাম।

দিই না। এক, সত্যের খাতিরে সম্পর্ক মাটি করার শিরদাঁড়া আমার নেই। কোনওদিন ছিল না। দুই, আমার নিজের যে গুচ্ছ গুচ্ছ খারাপ সেগুলো তো সবাই ভদ্রতাবশতঃ চুপ করে সয়ে নিচ্ছে। আমি তাদের সে হিরণ্ময় নীরবতার কার্মা পাস অন করে স্থিতাবস্থা বজায় রাখছি।

তিন নম্বর কারণটা নতুন হয়েছে। আগে সামনে কিছু না বললেও নিজের ইকো চেম্বারে ঢুকে প্রতিপক্ষের মাথা হাতে কাটতাম। এখন কাটি না। বরং এই ইস্যুগুলো প্রতিপক্ষের মাথায় এত প্রবলভাবে ধাক্কা মারছে কেন, তাকে এত বিচলিত ও উদ্বেলিত করছে কেন, সেটা ফিগার আউট করার একটা প্রায় অশ্লীল কৌতূহল অনুভব করি।

বাই দ্য ওয়ে, এবার গিয়ে খবর পেলাম যে মেয়েটির সেক্স ড্রাইভ আবার কমে নর্ম্যাল মেয়েদের সমান হয়ে গেছে। কী করে হল-র উত্তর সহজ। আবার বিয়ে হয়ে গেল। শুধু বিয়ে না, বরের সঙ্গে নিউ জার্সি চলে গেল তো। এর পরেও আরোগ্য নিয়ে কারও সন্দেহ থাকলে তার মাথা খারাপ।

অর্চিষ্মান মাথা নাড়ে। আমি অট্টহাস্য করি।

দিল্লি চলে এসেছি। বাড়ির খাওয়াদাওয়া মিস করছি খুব। নিন্দে করতে চাই না, কিন্তু এ সব দিকে লোকে ভালো রান্না বলতে বোঝে টমেটো আর শুকনো লংকার গুঁড়োময় একটা লাল রঙের ঝোলে সব কিছু ভাসিয়ে দেওয়া। বাড়ির মতো খাওয়াও মিস করছি। তিনটে রান্না করা মিল, মাঝখানে কিছু না। কী অল্প পরিমাণে সেটাও আশ্চর্য। হতে পারে বাড়িতে স্ট্রেস কম। আজকাল মনে হয় আমাদের সব খাওয়াদাওয়াই ইমোশনাল বা স্ট্রেস ইটিং। বাড়ির লোকেদের স্ট্রেস হয় না এটা হতে পারে? কে জানে ঝামেলাটা কোথায়।

যেখানেই থাক, মনে মনে ভেবেছি এবার থেকে কয়েকটা রান্না নিজে করব। সপ্তাহে একটা কি দুটো দিয়ে শুরু করে ধীরে ধীরে বাড়াব। কী রাঁধব সেটারও আন্দাজ আছে। কচুর শাক রাঁধতে বলার ডিজ্যাস্টার এখনও ভুলিনি। তার পর থেকে ও জিনিস নিজেই রেঁধেছি। ধোঁকা, পনীর, মুরগি, মটন, এ সবের গৌরবের দাবি অন্যকে সমর্পণ করে যাবতীয় কচুঘেঁচুর ব্রাত্যপদে স্পেশালাইজ করব।

সকালে রাজু ঘণ্টি বাজাল। অর্চিষ্মান ফিরছে আজ। ঢ্যাঁড়স কিনলাম। আমার যেমন কমফর্ট বেগুন, ওর তেমন ঢ্যাঁড়স। একটা লোক এত ঢ্যাঁড়সভাজা কী করে খায় রহস্য। ওল নিলাম, চিচিঙ্গা। লাউ নেব ভাবতে ভাবতে দেখতে দেখি কোণার দিকে খুব ঘন সবুজমতো পুঁই। টাটকা। ইলিশের সিজন চলছে, ছোট ইলিশ পাওয়া গেলে সেটার মাথাটা দিয়ে বানানো যাবে অর্চিষ্মানের জন্য, বাকি হাফটা কুমড়ো, বেগুন, আলু দিয়ে আমার। অর্চিষ্মান ভাগ পাচ্ছে না সে হাফের, পেলেও পাবে কম কম। ভারী ব্যাগ নিয়ে দোতলায় উঠতে উঠতে ভাবলাম প্রসেনজিৎকে কেটেকুটে দিতে বলব, তারপর নিজেই রাঁধব। শুধু পুঁইডাঁটাগুলোকে কচুকাটা করে গরম তেলের কড়াইয়ে ফেলে নাড়াচাড়ার সময় মুখটা মনে করে দুঃখীদুঃখী রাখতে হবে।

Comments

  1. দুর্দান্ত ভালো লাগলো। কত কি ভালো ভালো খেলেন - খুব লোভ দিলাম - বিশেষ করে রিষড়ার খাবারগুলো। নাকতলার খাবার আর বাগান মচৎকার। দেখি আমিও একটু একটু রান্না করে। খুব inspired হলাম, অন্তত কুচো নিমকি তো খেতে হবেই।

    খুব ভালো থাকবেন

    ইন্দ্রানী

    ReplyDelete
    Replies
    1. থ্যাংক ইউ, ইন্দ্রাণী। এটা ঠিক কুচো নিমকি নয় বোধহয়, তবে সাইজের দিক থেকে ডেফিনিটলি কুচো। ব্যাপারটা অন্য নিমকির থেকে অনেক হালকা, এটাই বোধহয় মূল তফাৎ।

      রান্না করলে আমার ধারণা অ্যাংজাইটিও কমবে। জানি না। মনে হল।

      Delete
  2. হুঁ হুঁ রান্না করলে অ্যাংজাইটি কমে। মানে আমিও শুনেছি আর কি।
    তোমার খাবারের গল্প শুনে ভারী ভালো লাগলো যদিও এর অধিকাংশই আমি খাইনা। আবার অনেকগুলোই ভারী পছন্দের। তোমার পাড়ায় ভালোমন্দ মিশিয়ে যেমনই হোক, একসাথে থাকার উষ্ণতা তো আছে বটেই৷ লেখা থেকেই টের পাওয়া যায়। সর্বাঙ্গসুন্দর এর থেকে মিশ্র জিনিসই ভালো মনে হয়।
    তোমার রান্নার জন্য আগাম শুভেচ্ছা রইল। - প্রদীপ্ত

    ReplyDelete
    Replies
    1. সেটা ঠিকই বলেছ, প্রদীপ্ত। ভালোমন্দ মিশিয়ে পাড়াখানা উষ্ণ বটে। সে জন্যই অনেক দোষ থাকা সত্ত্বেও থাকতে ভালোলাগে।

      উত্তর দিতে দেরি হল অনেক। সরি।

      Delete
  3. রিষড়ার খাবারগুলো দুর্দান্ত! এইসব খাবার আর কোথাও পাওয়া যাবেনা| তালের বড়া আমার খুব ভালো লাগে| অগাস্ট মাসে দেশে গেলে অবশ্যই খাওয়া হতো তালের বড়া তাল ক্ষীর| এদেশে বাংলাদেশী দোকানে তালের রস পাওয়া যায় ফ্রোজেন, সেই দিয়ে তালের বড়া করেছি| খাওয়াদাওয়ার কথা যখন উঠলো, তখন বলি পনীর নিয়ে একবার যা লিখেছিলে তার তুলনা হয়না| ওই যে পনীর থেকে আরো কত কি যে অনেক ভালো বাঙালি খাবার আছে সেই লেখাটা| আমি যে কতজনকে পড়িয়ে শুনিয়েছি, ভাবছি বাঁধিয়ে রাখবো প্রিন্ট করে| যারা vegetarian শুনলেই একটা করে পনীর বানিয়ে রাখে তারা আমার বাড়ি এসে সেটা দেখবে|
    ও বাড়ির খাবার গুলিও খুব ভালো- একটু সফিস্টিকেটেড ভালো|

    ReplyDelete
    Replies
    1. ঠিক বলেছেন, অমিতা। নাকতলার খাবার তো আমার মনে হয় একটু বেশিই ভালো। তাছাড়া মা আমার জন্য এক্সট্রা ভেবে ভেবে নিরামিষ ভালোভালো পদ রান্না করিয়ে রাখেন, সেই ভাবনা কনসিডার করলে খাবারগুলো আরও ভালো।

      রিষড়ার খাবারগুলো প্রিয় কারণ এক খেতে ভালো। দুই, কম খাওয়া হয়। ওলভাতে তো কেউ নেমন্তন্ন করে খাওয়ায় না (হয়তো ঠিকই করে। ওগুলো নিজের বাড়িতে খাওয়ারই জিনিস। বাইরের লোককে খাওয়ালে নিন্দে হবে) অথচ লংকাপোড়া সহকারে মাখা ওলভাতে দিয়ে আমি সত্যি সত্যি সব ভাত খেয়ে নিতে পারি।

      পনীর নিয়ে লিখেছিলাম বুঝি? আমার পনীরের প্রতি রাগ নেই। উল্টে বাঙালিদের পনীরব্যাশিং-এর প্রতিরোধেও নামতে পারি (মনে মনে)। কিন্তু পনীরের থেকে কত উমদা নিরামিষ আছে বাঙালিদের, পনীরের প্রসঙ্গই তো ওঠা অবান্তর। আমার ধারণা এটা অনেক রাজ্যের খাবারের ক্ষেত্রেই সত্যি। এই সেদিন কুমাওনি থালি খেতে গিয়েছিলাম দুজনে, কী অসামান্য নিরামিষ থালি। পনীরের একটা পদ ছিল বটে, সে রাখতেই হয় আই গেস না হলে লোকে বলবে পয়সা উশুল হল না, লোকে তৃপ্তির থেকে দামকে অনেক বেশি গুরুত্ব দেয়, অথচ শাকপাতা তরিতরকারির পদগুলো আমার তো চমৎকার লাগলই, অর্চিষ্মানও চেটেপুটে খেল।

      Delete
    2. সেকি ভুলে গেছো? এই নাও পড়ে দেখো| সেটাই তো বলছি বাঙালিদের অনেক অনেক সবজি আছে সব খুব ভালো খেতে, সেসব বাদ দিয়ে পনীর কেন? আমি তো শুধু ভেজেটেরিয়ান নই, wannabe vegan! বাড়িতে নিজের জন্য কোনো ডেয়ারি কিনিনা| আর হ্যা অল ভাতে কেন করা যাবেনা লোকের জন্য? আমি তো পার্টিতে কচুবাটা করি, signature ডিশ আর লোকজন সব খেয়েও অল্প কচুবাটা রেখে দেয় সব শেষে খাবে করে|

      "তাছাড়া এদের সর্বত্র পনীর দেওয়ার অসভ্যতাটা? অর্চিষ্মানের রাগ তখনও কমেনি। ছোলেভাটুরা খেতে গেছিল কোথায়, কানের ভেতর আটরংগি রে-র গানের সঙ্গে সঙ্গে সানমাইকার টেবিলে টোকা মারছিল ফুর্তিতে, যতক্ষণ না ছোলেভাটুরের থালার পাশে এক্সট্রা বাটিতে সবুজ কাদায় প্রোথিত একপিস ফ্যাটফেটে পনীর এসে হাজির।

      এইও। সেনসিটিভ জায়গায় ঢুকছি। পনীর নিয়ে কথোপকথন ডেসিবেল ছাড়িয়েছে বেশ কয়েকবার। হতে পারে ভেজিটারিয়ান হয়ে আমার গায়ের চামড়া এক্সট্রা পাতলা হয়ে গেছে - পনীর নিয়ে প্রগতিশীল বাঙালির হাসাহাসি জাস্ট নিতে পারি না। পনীর খেতে ব্যক্তিগতভাবে খারাপ বেসেও (ছানার ডালনাও আন্তরিক অপছন্দ করি) লড়ে যাই। লড়ি বেচারা অর্চিষ্মানের সঙ্গেই। বাকিদের নীরবে জাজ করে বেরিয়ে আসি। আমি এটা খাই বলে আমি বুদ্ধিমান, তুই ওটা খাস না বলে আমার যোগ্য নস, এই লাইনে নিজেদের ঔৎকর্ষ প্রমাণের ফাঁকিবাজি জাস্ট নিতে পারি না।

      অথবা নতুন নিরিমিষ হয়েছি বলেই লড়ি। হিঁদুর পোলা মুসলমান হলে বেশি গরু খায়, ঠাকুমা বলতেন।

      আলোচনাটা তর্কের দিকে না নিয়ে যাওয়ার সদিচ্ছেতেই বোধহয় অর্চিষ্মান বলল, পনীর ইজ ফাইন। পনীরের বিরুদ্ধে ওর মূল অভিযোগ যে কোনও নিরামিষ খাবারকে মহার্ঘ প্রতিপন্ন করতে গেলেই পনীর এনে জোটানোর এদের প্র্যাকটিসটা। কথাটা ঠিকই। নিরামিষ ভালো খাবার ইকুয়ালস টু পনীর আর পনীর ইকুয়ালস টু নিরামিষ ভালো খাবারের সরলীকরণ, সত্যি অতিসরলীকরণ। এটা আজকাল বাংলাতেও ঘটছে। আত্মীয়প্রতিবেশীর নেমন্তন্ন বাড়িতে গেলেও হরদম পনীরের মুখোমুখি পড়তে হয়। পনীর আর ধোঁকা। দুটোর থেকেই এককোটিগুণ সুখাদ্য হচ্ছে তেতোচচ্চড়ি, আলুরদম, আলুভাজা, নিমবেগুন, হিং বেগুন, বেগুন ভাজা, যাবতীয় শাক, আলুপোস্ত, আলুভাজা, পটলভাজা, পটলপোস্ত, মোচার ঘণ্ট, থোড়ের ছেঁচকি, আলুপটল, আলুফুলকপি, কুমড়োর ছক্কা, কুমড়োফুল ভাজা, উচ্ছেকুমড়ো, শিমচচ্চড়ি . . .

      অর্চিষ্মানের সঙ্গে এ বাবদে এক শিবিরে আমি। পৃথিবীতে যে ক'টা কর গোনা রাজযোটক বিয়ে দেখেছি, একটা নিশ্চিতভাবেই ছোলে আর ভাটুরের। ফাটোফাটো, গমরঙা, ভালোমানুষ ভাটুরের পাশে গাঢ় শ্যামবর্ণ, হাই-ভোলটেজ ছোলে। এদের মধ্যে পনীরের পরকীয়া গোঁজার ধ্যাষ্টামোটা, সিরিয়াস ধ্যাষ্টামো। "

      Delete
    3. ও হ্যাঁ, মনে পড়েছে 😕আপনার কচুবাটা সার্ভ করার সাহসে অভিবাদন।

      Delete
    4. সবুজ কাদায় প্রোথিত একপিস ফ্যাটফেটে পনীর“ - এটা জাস্ট কোনো কথা হবেনা

      Delete
  4. কি ভালো গল্প হল, পাড়া, বাড়ি, খাবার, বাজার, বাগান, যদিও অদ্ভুত ভাবে আমি এদিকে একেবারে বেরসিক পুঁই , কচু, তালের বড়া, এমনকি ইলিশ, নিমকি কিছুই আমার প্রিয় খাবারের মধ্যে নয়, কিন্তু এসব গল্প আড্ডার মত পড়তে দারুণ জমাটি লাগল, তার মধ্যে আবার আমিও ছোট্ট করে আছি :)

    ReplyDelete
    Replies
    1. ঊর্মি

      Delete
    2. এই পোস্টের অনুঘটক তুইই, ঊর্মি।

      Delete

Post a Comment