Posts

Showing posts from July, 2018

ডালমুট কিনতে গিয়ে

চাল আটা দুধ দই সর্ষের তেল সার্ফ এক্সেলে টিক মারা হয়ে যাওয়ার পর বললাম, "এবার একটা জেমস, একটা পটেটো চিপস আর ঝাল দেখে একটা ডালমুটের প্যাকেট দিন দেখি।" দোকানের নতুন ছেলেটি ফ্যালফেলিয়ে রইল।   "ডালমুট . . . কী জিনিস?" সামনে আয়না না থাকা সত্ত্বেও ওই মুহূর্তে আমার মুখটা কেমন দেখাচ্ছিল কল্পনা করতে অসুবিধে হয়নি। লিনিয়ার অ্যালজেব্রার ক্লাসে প্রথম যখন ডিটারমিনেন্টস কষতে শিখেছিলাম, এই কোণা ওই কোণা গুণফল থেকে ওই কোণা এই কোণার গুণফল বিয়োগ করার নিয়মটা জেনেছিলাম, এক সহপাঠী হাত তুলে জিজ্ঞাসা করেছিল, কেন এই পার্টিকুলার প্যাটার্নই হতে হবে, কেন এই কোণা ওই কোণার বদলে ওই কোণা এই কোণা হবে না? আমার মুখটা সেই মুহূর্তে বোর্ডের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা দিদিমণির মুখটার মতো দেখাচ্ছিল। এই প্রশ্নটা যে কেউ করতে পারে এটা যেমন উনি কস্মিনকালেও ভেবে দেখেননি তেমনি "সংজ্ঞাসহ ডালমুটের বৈশিষ্ট্য যাহা জান লিখ", জীবনে চলার পথে এ প্রশ্নের মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা সত্যি সত্যিই আমার আনসিন ছিল।   আমতা আমতা করে শুরু করলাম, "ডালমুট . . . ছোটো ছোটো গোল গোল . . . হলদেটে . . ."  

আমার কৈশোরের পাঁচটার মধ্যে একটা জ্বলন্ত প্রশ্ন

Image

৪ নম্বর প্ল্যাটফর্মে বর্ষা

Image
আমাকে হাড়ে হাড়ে চেনা সত্ত্বেও সাতদিনের নোটিসে আমার থেকে হাজার শব্দের লেখা আদায়ের ঝুঁকি কেন নিলেন সেটা সোমেন বলতে পারবেন, সাতদিনের নোটিসে হাজার শব্দের লেখা দেব প্রমিস করার স্পর্ধা আমি কেন দেখালাম সেটা আমি বলতে পারি। কারণ এক, নিজেকে আমার এখনও চিনতে বাকি।   দুই, আমাকে লেখাটা লিখতে বলা হয়েছিল বর্ষাসংক্রান্ত আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা/উপলব্ধি/ভাবনা/কল্পনা নিয়ে। আজকাল যাকে বলে মুক্তগদ্য। আমরা যাকে বলতাম রচনা। সাতদিনের মধ্যে হাজার শব্দের বর্ষার রচনা যদি লিখে উঠতে না পারি তাহলে সে লজ্জা আমার। সে লজ্জা আমার বাংলার দিদিভাইদেরও যারা বছরের পর বছর হাফইয়ার্লি আর অ্যানুয়ালের খাতায় 'একটি বর্ষার সকাল/বিকেল/দুপুর/রাতদুপুর' রচনায় আমার আবেগমথিত আর বিশেষণখচিত বাংলার খোঁচায় ক্ষতবিক্ষত হয়েছেন। একটিবারও বলেননি, 'কুন্তলা, অনেক তো হল, এবার একটু অন্য রচনায় হাত পাকাও যেটা খানিকটা প্রিপেয়ার করে হলে আসতে হয়।' বললে আমি খুবই বিপদে পড়তাম। ভারতের ম্যাঙ্গানিজ আর মাইকা উৎপাদক রাজ্যের নাম মুখস্থ করতেই আমার জিভ বেরিয়ে যেত, এর ওপর বিজ্ঞান কেন আশীর্বাদ-এর পক্ষে পাঁচটা পয়েন্ট আর অভিশাপ-এর

আপনি যদি সি আই ডি-র ভিলেন হন

১। দুষ্কর্ম করতে যাওয়ার আগে ফলস দাড়ি লাগিয়ে নিন। বা অলরেডি থাকলে, কামিয়ে নিন। দাড়ি থাকা না-থাকার ওপর দয়ার হাতের চড়থাপ্পড় খাওয়া (আপনি মহিলা হলে সেই এপিসোডে উপস্থিত মহিলা অফিসারের) না-খাওয়া নির্ভর করবে না, কিন্তু সি আই ডি টিমের সবথেকে খতরনাক সদস্যের চোখে ধুলো দিলেও দিতে পারেন।   না, দয়া সি আই ডি টিমের সবথেকে খতরনাক সদস্য নয়। দড়াম দড়াম দরজা ভাঙা ছাড়া আর কোনও কাজের নয় দয়া। আমার ফেভারিট অফিসার অভিজিৎও নয়। ফ্রেডরিক তো আছে খালি কমেডি করতে। এ সি পি প্রদ্যুমন্‌ও "কুছ তো গড়বড় হ্যায়" জাতীয় কিছু জরাজীর্ণ ম্যানারিজম ছাড়া মোটের ওপর আলংকারিক। ডক্টর সালুংখের যত কেরামতি ল্যাবে, তিনি আপনার পিছু ধাওয়া করতে বেরোবেন না। টিমের নারীসদস্যদের সম্পর্কে আপনাকে সতর্ক করতে পারলাম না বলে দুঃখিত। তাতে ক্ষতি নেই কিছু কারণ তাঁরা নির্বিষ।   যার হাত থেকে বাঁচানোর জন্য আপনাকে দাড়িসংক্রান্ত পরামর্শটা দিলাম, একদিক থেকে দেখলে তিনি সি আই ডি টিমের সদস্যই নন। তিনি পাঞ্জাবীপরিহিত, চশমাশোভিত নিরীহ একজন আর্টিস্ট। ডাক পাওয়া মাত্র ঝোলা, ঝোলার ভেতর খাতা পেন্সিল নিয়ে হাজির হবেন আর প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ শুনে আপনা

অসম্ভব

বছর ঘুরে ইনটার্ন-ঋতু ফিরেছে, অফিস অলরেডি কানায় কানায় ছিল, ফাটো ফাটো হয়েছে। কনফারেন্স রুমের দরজা খুললে ইনটার্ন উপচে পড়ছে, প্যাসেজ দিয়ে হাঁটার সময় তাদের ল্যাপটপের প্রসারিত তারে ঠোক্কর খাচ্ছি সকালবিকেল।   খারাপ লাগে না। এমনিতে তো সাড়ে আটটা-পাঁচটা জ্যান্ত মড়া হয়ে ঘোরা, ঘণ্টায় একবার করে প্যান্ট্রি ভিজিট। গরম জলে লেমন টি ব্যাগ ডোবাতে ডোবাতে প্রোজেক্ট আর সাবমিশন আর সেমিনারের চর্বিতচর্বণ। সে জায়গায় যৌবনের দূতেরা রংচঙে মাছের মতো ঝাঁক বেঁধে অফিসের মধ্যে দিয়ে ভেসে বেড়াচ্ছে, লাফিয়েঝাঁপিয়ে কাজ করছে, শেষ করে এনে জিজ্ঞাসা করছে, "এবার কী করব?"  ইচ্ছে হয় শিখিয়ে দিই, "কাজ শেষ হয়ে গেছে বলতে নেই, ঘাপটি মেরে থাকো যতক্ষণ না বস ডেকে পাঠায়।" শেখাই না। আমার ওস্তাদি করার দরকার নেই, এ সব বেসিক শিক্ষা সময় শিখিয়ে দেবে। এরা জোরে কথা বলে, আস্তে হাসতে পারে না। এদের হেডফোনের ওপারের ঢিকচিক ঢিকচিক গোটা অফিস শুনতে পায়। সেদিন আমার এক সহকর্মী "বচা লো ভাইয়া" বলে অ্যাডমিনের কাছে গিয়ে হত্যে দিয়ে পড়েছে। তার পাশের ঘরে চারজন ইনটার্ন বসেছে এবং ক্রমাগত উচ্চঃস্বরে কথা বলছে, হেসে গড়াচ্ছে।

কিকিরা

প্রথম দু’খণ্ড তেড়েফুঁড়ে শেষ করে তৃতীয় খণ্ড শুরু করতে যাব, ভূমিকায় চোখ আটকাল।   বিমল কর লিখছেন, "গোয়েন্দা গল্প বলতে যা বোঝায়, কিকিরার গল্প তা নয়। অপরাধমূলক কাহিনী বলা যায়। খুনোখুনি বন্দুক পিস্তল রক্তপাত - এইসব ভয়ংকর ব্যাপার কিকিরার গল্পে নেই; যেটুকু আছে তা আড়ালে, এবং অতি সামান্য। এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। কিকিরাসারকে যাদের ভালো লাগে, এই লেখাগুলি তাদের তৃপ্ত করলে খুশি হব।" কেলেংকারি। কিঙ্কর কিশোর রায় বা কিকিরা-কে নিয়ে অবান্তরে পোস্ট লেখার পরামর্শ দিয়েছিলেন একজন কিছুদিন আগে। কিকিরা পড়েছি সেই ছোটবেলায়, তাও বছরে একবার পূজাবার্ষিকীতে। মেন চরিত্রদের নাম মনে আছে, দুয়েকটা গল্প পড়া শুরুর পর প্লটও হয়তো ছায়াছায়া মনে আসবে, ব্যস। তাছাড়া তখনকার পড়া, চোখের সামনে ছাপার অক্ষর আছে তাই পড়া। আগামাথা বুঝে, তুল্যমূল্য বিচার করে পড়া নয়। কাজেই কিকিরা নিয়ে আমার মহার্ঘ মতামত দেওয়ার আগে আরেকবার পড়া আবশ্যিক।   আর সেই পড়তে গিয়ে এই সর্বনাশ। যেখানে লেখক নিজেই বলে দিচ্ছেন যে কিকিরার গল্প গোয়েন্দা গল্প নয়, সেখানে গোয়েন্দা গল্পের মাপকাঠিতে কিকিরাকে মাপা অবিচার নয় কি?   এ দ্বন্দ্বের দুটো সম

বুড়ো হওয়ার সহজ টোটকা

Make your interests gradually wider and more impersonal, until bit by bit the walls of the ego recede, and your life becomes increasingly merged in the universal life. An individual human existence should be like a river — small at first, narrowly contained within its banks, and rushing passionately past rocks and over waterfalls. Gradually the river grows wider, the banks recede, the waters flow more quietly, and in the end, without any visible break, they become merged in the sea, and painlessly lose their individual being.                                                                                                                                                                                                         ---Bertrand Russell কৃতজ্ঞতা স্বীকার

ইদানীং চারদিকে যা সব ঘটছেটটছে

Image
মায়ের শব্দচয়ন এবং কথনে সিরিয়াস গোলযোগ দেখা দিয়েছে। হঠাৎ হঠাৎ মা এমন কিছু শব্দ বলে উঠছেন, কখনও কখনও সে সব শব্দ সাজিয়ে গোটা বাক্য গড়ে ফেলছেন যেমন, শটটা কেমন বেঁকে গিয়ে জালে ঢুকে গেল দেখলি সোনা? গত চার বছরে এ সব কথা মা মুখে আনেননি। সামনের চার বছরেও আনবেন না, গ্যারান্টি।   দূরত্ব পাঁচ ফুটের বেশি হলে যার গলা শোনা যায় না, সেই অর্চিষ্মান রাতদুপুরে ছাদ ফাটিয়ে চেঁচাচ্ছে। দুঃস্বপ্ন দেখে নয়, রীতিমত সজ্ঞানে। হলটা কী-র উত্তরে বলছে ফ্রি কিকটা গোল হতে গিয়েও হল না।   মোটামুটি বিজ্ঞানমনস্ক, কমবেশি কুসংস্কারমুক্ত মানুষ বলে নিজের প্রতি যে ধারণাটা ছিল, গুঁড়িয়ে যাচ্ছে। আমার খেলা দেখা না দেখার ওপর কোনও দলের জেতাহারা যে নির্ভর করে না সেই সত্যিটা জানছি, কিন্তু মানছি না। নিজেকে পৃথিবীর সেরা অনামুখো মনে হচ্ছে। যারা হারলেজিতলে (হারলেই বা কী, জিতলেই বা কী? খেলা বই তো নয়। এও জানি, কিন্তু মানি কি?)   আমার যায় আসে, তাদের খেলা চলাকালীন টিভির ত্রিসীমানায় থাকছি না। বাড়তি ঘরটা এ ব্যাপারে হেল্প করেছে। এ মন নয় যে এইসব বাজে টোটকা কাজে দিচ্ছে , তবু। মায়ের অধিকাংশ আচরণের যুক্তি বোঝার আশা ছেড়ে দিলেও একটার যুক্