Posts

Showing posts from August, 2016

নতুন পুরোনো বাংলা বই + ঈগলের চোখ

Image
দিল্লির গোলমার্কেটের কাছে ভাই বীর সিং রোডে বঙ্গ সংস্কৃতি ভবনের বইয়ের দোকানটায় না যাওয়ার কোনও কারণ নেই। যাওয়ার কারণ অগুনতি। প্রথম কারণ, বেড়ানো। আনন্দ-র দোকান আমাদের বাড়ির কাছেই। প্রক্সিমিটি ব্রিডস কনটেম্পট। আনন্দ-তে যাওয়া অনেকটা নিয়ম পালন করার মতো। গোলমার্কেটের দোকানে যাওয়া মানে দিল্লির সবথেকে সুন্দর জায়গাটায় অটো চেপে ঘোরাঘুরি, বই দেখা, বই কেনা, আশেপাশে কোথাও খেয়েদেয়ে বাড়ি ফেরা।  দ্বিতীয় কারণ, এই দোকানে আনন্দ ছাড়াও অন্য প্রকাশনীর বই পাওয়া যায়, বৈচিত্র্য অনেক বেশি। বিস্তর পুরোনো বই। অচেনা বই। (যদিও আমি শেষপর্যন্ত চেনা বই-ই কিনি, তবু অচেনা বই দেখতে ভালো লাগে।)  তৃতীয় কারণটা মনে করিয়ে দিলেন দোকানের রক্ষক ভদ্রমহিলা। বললেন, আনন্দ বড় ব্র্যান্ড কিনা তাই আনন্দ-র বইয়ের দাম বেশি। বাংলা বইয়ের দাম নিয়ে অবশ্য আমার কোনও অভিযোগ নেই। আমি মনে করি বাংলা বইয়ের দাম আরও অনেক বেশি হওয়া উচিত। এখনও একটা উঁচুমানের বাংলা বই একটা অকথ্য ইংরিজি বইয়ের হাফ দামে বিকোয়। ছাপা খারাপ, বাঁধাই খুলে আসে। হাতের লেখা অনেক সুন্দর হবে জানা সত্ত্বেও উপহার দেওয়ার সময় কালিপেনে শুভেচ্ছা লিখতে ভয় লাগে। আমি পাত

গুলাটি, পাণ্ডারা রোড

Image
প্রায়ই অফিস যাওয়ার পথে বলে, কখনও সখনও অফিসে পৌঁছে চ্যাটবাক্সে বলে, মাঝে মাঝে চা খেতে খেতে আর টিভি দেখতে দেখতে বলে, আর যে সব রাতে বাদশাহী আংটি চালিয়ে ঘুমোতে যাওয়া হয় সে সব রাতে তো উইদাউট ফেল অর্চিষ্মান কথাটা বলে।  বলে, ওর নাকি লখনৌ যেতে ইচ্ছে করছে। ভীষণ, মারাত্মক ইচ্ছে। আমি শুনি। ওর ইচ্ছেপূরণের উপায় ভাবি। কিন্তু পূরণের আগে চাই বিশ্লেষণ। কারণ একেকটা ইচ্ছের একশোখানা করে পরত। একেবারে মূলের ইচ্ছেটা খুঁড়ে না বার করলে ওপর ওপর যত ইচ্ছেই পূরণ হোক না কেন, মন ভরবে না। এক শনিবার সকালে অর্চিষ্মানের ইচ্ছেটাকে নিয়ে বসি।  লখনৌ যাওয়ার ইচ্ছেটার মানে ঠিক কী? ভোরবেলা শতাব্দীর চেয়ার কারে জানালার ধারে বসে আকাশবাতাস দেখার ইচ্ছে? ইমামবাড়ার প্রকাণ্ড হলঘরের ওই দেওয়ালে দেশলাই ঘষে জ্বালালে এই দেওয়ালে কান পেতে তার প্রতিধ্বনি শোনার ইচ্ছে? সূর্য ওঠার আগে রেসিডেন্সির মাঠে কুয়াশার সমুদ্র থেকে অনাবৃত ঊর্ধ্বাঙ্গ জাগানো গাছেদের মধ্যে ঘোরাঘুরির ইচ্ছে? ভাঙাচোরা ইমারতে ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ দেওয়াল টপকে পাশের ঘরে ঢুকে পড়ে প্রেমিকপ্রেমিকাদের ভ্রূকুটির মুখে পড়ার ইচ্ছে? এসব ইচ্ছে মেটাতে হলে ছুটির ব্যবস্থা করতে

পেঁপে পাতা, প্যারাসিটামল আর সাপ্তাহিকী

এদিকে খুব ইয়ে হচ্ছে, জানিস সোনা।  ইয়েটা কী সেটা বুঝলাম। এবং শব্দটা মনে থাকা সত্ত্বেও কেন মা এড়িয়ে গেলেন তাও বুঝলাম। বললাম, আমি এখনও ডেঙ্গুই বলছি মা। আর ক’বছর দেখি, তারপর না হয় ডেঙ্গির দলে নাম লেখানো যাবে।  মা হাঁফ ছেড়ে গল্পটায় ঢুকলেন।  রিষড়া শ্রীরামপুরে খুব ডেঙ্গু হচ্ছে। ঠাকুমার ফিজিওথেরাপি করান গ, তিনি গত সপ্তাহে ঠাকুমার হাত পা চালনা করে বেরোনোর সময় আমার মাকে ডেকে নাকি বলেছেন, মা দেখো তো গাটা গরম হয়েছে কি না।  গ আমার মাকে মা বলেন। গ আমার ঠাকুমাকে মা বলেন। সব মহিলাকেই গ মা বলেন। আমি প্রথমে ভেবেছিলাম গাঁইয়ামো, তারপর খানিকটা বুদ্ধি খরচ করে বুঝলাম কারণটা সম্পূর্ণভাবে পেশাগত। গ-কে পেশার কারণে মহিলাদের শরীর নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করতে হয়। গ শুরুতেই সবার সঙ্গে মা ছেলে পাতিয়ে ফেলেন যাতে মহিলারা আশ্বস্ত হন যে তাঁর কোনও রকম কুমতলব নেই। এবং নিজেকে নিশ্চিন্তে গ-এর হাতে সমর্পণ করতে পারেন।  মোদ্দা কথা, গ-কে দেখতে স্বাভাবিক মানুষের মতো হলেও গ অস্বাভাবিক রকম বুদ্ধিমান। এতদিন দেখে আমি গ-এর মধ্যে একটিমাত্র মানবিক দুর্বলতা আবিষ্কার করেছি। নিজের সন্তান। দেখা হওয়ার পাঁচ মিনিটের মধ্যে গ ম

মালশেজ ঘাট 2/2

Image
অবশেষে একটা করার মতো কাজ বার করা গেছে। এখান থেকে তিরিশ কিলোমিটার দূরে শিবনেরি দুর্গ দেখতে যাওয়া। শিবনেরি দুর্গ হছে শিবাজির জন্মস্থান। এখানকার পাহাড়গুলো এত নিচু যে দশ মিনিট গাড়ি করে গেলেই উপত্যকায় নেমে যাওয়া যায়। সেখানে হাটবাজার, স্কুল, স্কুলে যাওয়া বাচ্চা, ধপধপে সাদা ও গুরুত্বপূর্ণ চেহারার মিউনিসিপ্যালিটি অফিস দেখে আবার দশ মিনিট গাড়ি চালালেই আরেকটা পাহাড়ের মাথা। এরকম কয়েকটা পাহাড় নেমে উঠে আমরা পৌঁছে গেলাম শিবনেরি দুর্গের গোড়ায়। আমাদের বেরোতে একটু দেরিই হয়ে গেছে কারণ সকালে ঘুম থেকে উঠে যা দেখলাম তেমন কুয়াশা আমি জীবনে আর দেখিনি। কুয়াশা বললে কুয়াশা, মেঘ বললে মেঘ। সে কুয়াশার ছোঁয়া সাংঘাতিক, যা ছোঁয়, ভিজিয়ে স্যাঁতসেঁতে করে দেয়। আমাদের বারান্দা ভিজে, করিডোরের চৌকো টাইলের কোণে কোণে জলবিন্দু চকচক করছে, বাথরুমে কাল সন্ধ্যেবেলা গা ধোয়ার তোয়ালে এখনও শুকোয়নি। এই স্যাঁতসেঁতে চরাচরে একমাত্র চনমনে দেখছি বারান্দায় রাখা টবের গাছগুলো। আর আমার মেজাজ। এই দেখতেই তো এসেছি। গাড়ি যেখানে নামিয়ে দিল সেখান থেকে চারশো সিঁড়ি ভেঙে আর গোটা সাতেক ভাঙাচোরা গেট পেরিয়ে শিবনেরির ধ্বংসাবশেষ। এই দু

মালশেজ ঘাট ১/২

Image
শনিবার বিকেলে যখন টি থ্রি-র দিকে যাচ্ছি তখন পঞ্চশীল পার্কের বাড়িগুলোর মাথার ওপর আকাশের ঘন স্লেট রঙে একচুল ফাঁক নেই যেখান দিয়ে নিভে যাওয়ার আগে শেষবারের মতো একবার দিনের আলো ঢুকে পড়তে পারে। ওয়াইপারের দিকে তাকিয়ে থাকলে হিপনোটাইজড হওয়ার সম্ভাবনা। ঘাড় ঘুরিয়ে জানালা দিয়ে বাইরে দেখলে মনে হচ্ছে গত ক’দিনে জল পেয়ে গাছগুলো যেন আরও ইঞ্চিদুয়েক লম্বা হয়েছে। আরও পুরুষ্টু, আরও সবুজ। দুলছে মাথা নেড়ে নেড়ে। হা হা করে হাসছে আমরা বাক্সপ্যাঁটরা বেঁধে বৃষ্টি দেখতে চলেছি দেখে। যখন টপ টেন মনসুন ডেস্টিনেশন ইন ইন্ডিয়া দিয়ে সার্চ করেছিলাম তখন দিল্লির এ চেহারা কল্পনাতেও ছিল না। লিস্টের বেশিরভাগ নামই দিল্লি থেকে বহুদূরের। কাছাকাছির মধ্যে বারবার আসছিল খালি উদয়পুরের নাম। লেকের মাঝখানে প্রাসাদের বারান্দায় বসে বৃষ্টি উপভোগ করুন। সে উপভোগের কতখানি বৃষ্টির কেরামতি আর কতখানি লেকের মাঝখানে বিলাসবহুল প্রাসাদের সন্দেহ ছিল বলে এগোইনি। শেষ পর্যন্ত পশ্চিমঘাট পর্বতমালাই স্থির হল। টপ টেন মনসুন ডেস্টিনেশনস ইন ওয়েস্টার্ন ঘাটস বলে সার্চ দিলাম। লোনাভালা, পঞ্চগনি, খান্ডালা এসবের নাম বেরোলো। সঙ্গে চমৎকার ছবি। অর্চিষ্

সাতটা জানা আর সাপ্তাহিকী

দিল্লির মেয়ে ফের দিল্লিতে। গত ক’দিন ঘুরতেফিরতে যা যা চোখে পড়ল তার থেকে ঝেড়েবেছে সাতটা পয়েন্ট আপনাদের বলছি।  ১। এদের অনেক শব্দ ‘লা’ দিয়ে শেষ হয়। রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে কতবার যে থেমে পেছন ফিরেছি, কেউ আমার নাম ধরে ডাকল ভেবে। ২। ভাষায় ড় এবং ণ-এর প্রাধান্য থাকলে, যত মিষ্টি করে যা-ই বলা হোক না কেন, কঠিন শুনতে লাগে। ৩। অথচ এঁরা কেউই কঠিন প্রকৃতির নন। এঁদের থেকে আমি অনেক বেশি কঠিন। দিল্লিতে লোকে খুব স্বাভাবিক কথাও মারমুখো হয়ে বলে। আমিও বলতে শিখে গেছি। সোয়া একঘণ্টা লেটে গাড়ি নিয়ে এসে ভাইসাব এমন মোলায়েম সুরে জ্যামের অভিযোগ (অভিযোগটা খাঁটি) করতে লাগলেন যে কিছুক্ষণ আগে ফোনে আমি কী রকম কড়া গলায় ওঁকে “আপ কাহাঁ হো?” জিজ্ঞাসা করেছিলাম মনে করে নিজেরই লজ্জা করতে লাগল।  ৪। বড় বাড়ি আর ওপচানো ভ্যাট দুটোই দিল্লিতে আছে। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দুটো আলাদা আলাদা জায়গায়। এখানে একেবারে পাশাপাশি।  ৫। এখানে পাড়ায় পাড়ায় ন্যাচারাল আইসক্রিমের দোকান। শুধুমাত্র এই কারণে যে কোনওদিন অর্চিষ্মান বলবে, চল, বম্বে শিফট করি।  ৫। দিল্লির সঙ্গে যদি আমার দৈব জড়িয়ে না থাকত তাহলে আমি সত্যি সত্যি থানেতে

সাপ্তাহিকী আর ছুটি

Image
I would maintain that thanks are the highest form of thought, and that gratitude is happiness doubled by wonder.                                                                                                      —G. K. Chesterton পড়া হয়ে গেলে ওবামার সঙ্গে দ্য গার্ল অন দ্য ট্রেন নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে। ইন ফ্যাক্ট আলোচনা সিনেমাটা দেখে নিয়ে করলে আরও জমবে।   মিউজিয়ামে শব্দছক সাজানো আছে দেখলে সেটা আবার ভর্তি করতে লেগে যাবেন না যেন।  বইয়ের দোকান আর লাইব্রেরির ঘনত্ব দিয়ে শহরের র‍্যাংকিং।  তিরিশ বছর বাদে নতুন অ্যান্টিবায়োটিক খুঁজে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। নাকের ডগায়।   স্মৃতিভ্রংশ ধ্বংসের এক উপায়।  হস্ত থাকিতে মুখে কেন কথা বল-র এর থেকে ভালো উদাহরণ পাওয়া শক্ত। এঁরা স্টোনহেঞ্জ আরেকবার বানিয়ে দেখছেন স্টোনহেঞ্জ বানানো কত শক্ত ছিল।  You are what you read.  এই হলাম আমি।   Moderately sensitive & emotional.   Free spirited & independent.  Right-brained, creative.   Not natural leader.   Not kind or nurturing.   আর যাঁরা গোয়েন্দাগল্প ভালোবাসেন

দ্য কফি শপ, সাকেত

Image
পি ভি আর অনুপম, সাকেত চত্বরের 'দ্য কফি শপ'-এ গিয়েছিলাম আগের সপ্তাহে। সাধারণত কফির দোকানে গেলে অর্চিষ্মান কফি খায় (ক্যাপুচিনো, প্রত্যেকবার)। আমি চা (ইংলিশ ব্রেকফাস্ট কিংবা দার্জিলিং, ক্বচিৎ কদাচিৎ আসাম)। কিন্তু এঁদের মেনুতে কফির ছবি দেখে আমার লোভ হল। আমি নিলাম হ্যাজেলনাটের গন্ধওয়ালা কফি। অমনি দেখি অর্চিষ্মান মেনু মুড়ে বলছে, আমি বাবা আসাম চা খাব। বুঝলাম পছন্দঅপছন্দটা কথা নয়। চা-কফির ব্যাপারে ও আমার টিমে খেলবে না, সেটাই হচ্ছে কথা। আমি কফির গুণবিচারী নই। শুধু হৃদয়খানা সুন্দর ফুটেছিল আর গন্ধও বেরিয়েছিল ভারি ভালো। 'দ্য কফি শপ' নামটা মিসলিডিং। ব্রেকফাস্ট থেকে শুরু করে স্যালাড, পাস্তা, পিৎজা, ডেজার্ট সবই পাওয়া যায় দোকানে। আমরা অবশ্য এগুলোর একটার জন্যও যাইনি। আমরা গিয়েছিলাম এদের মেনুর ইন্টারনেট-খ্যাত ‘হিমালয়ান ব্রেকফাস্ট’ খেতে। সেটা এক প্লেট অর্ডার করা হল।  আর পুলড পর্ক স্যান্ডউইচ এক প্লেট।  পর্ক স্যান্ডউইচ ভালো খেতে কিন্তু আরও ভালো খেতে হচ্ছে হিমালয়ান ব্রেকফাস্ট। এতে থাকে তিব্বতি রুটি, আলুর তরকারি, গোর্খা আচার আর নন ভেজের অংশ হিসেবে মসালা

দ্য ব্লাডি লিটল বেলজিয়ান

Image
*স্পয়লার আছে। উৎস গুগল ইমেজেস Firstly, I am not a 'bloody little Frog!' I am a bloody little Belgian!                             ---হারক্যুল পোয়্যারো, দ্য  মিস্ট্রি অফ দ্য স্প্যানিশ চেস্ট  কারও সম্পর্কে কথা বলতে গেলে, বিশেষ করে সেটাকে যদি বিশ্লেষণের দিকে নিয়ে যাওয়ার উচ্চাশা থাকে তাহলে সে লোকটার প্রতি একটা আবেগহীন উদাসীনতার ভাব থাকলে সুবিধে হয়।  রাগ থাকলে বেরিয়ে পড়ে বিশ্রী ব্যাপার হয়, অন্ধ আনুগত্য থাকলেও আলোচনা ভজন হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা।  কিন্তু আমি যে টাইপের লোক, দেখা হওয়ার (অনেক সময় না দেখেই) পাঁচমিনিটের মধ্যে একটা লোকের সম্পর্কে আমার মনে কিছু না কিছু মতামত জন্মে যায়। কারও সঙ্গে তেত্রিশটা উপন্যাস আর চুয়ান্নটা ছোটগল্প কাটানোর পর তো জন্মায়ই। সে সব মতামত নিজের কাছে রাখতে পারলেই সবথেকে ভালো কিন্তু তাহলে ব্লগ চলে না। একমাত্র রাস্তা হচ্ছে পোস্ট শুরুর আগেই ডিসক্লেমার দিয়ে রাখা। বলে রাখা এর পর যা যা আসছে সে সবই আমার মতামত দ্বারা আকীর্ণ। নিরপেক্ষ আলোচনার দুরাশা থাকলে হতাশা আসতে বাধ্য।  হারক্যুল পোয়্যারোর সঙ্গে আমার সম্পর্কটা খুব একটা মধুর/সরল নয়।