I Have No Mouth, and I Must Scream, Harlan Ellison


(স্পয়লার আছে, স্পয়লার ছাড়া কিছু নেই।)

পৃথিবী শেষ। মানবসভ্যতা শেষ। মানুষও নিশ্চিহ্ন, পাঁচটি নমুনা বাদে। টেড, এলেন, বেনি, নিমডক ও গোরিস্টার।  AM (এর পর থেকে যাকে আমরা অ্যাম বলে ডাকব) নামের একটি সুপারডুপার কম্পিউটার, নিজের পেটের মধ্যে পাঁচজনকে বন্দী করে রেখে অত্যাচার চালাচ্ছে। অত্যাচারের আকৃতিপ্রকৃতির আঁচ পাওয়ার জন্য নিচের প্যারা তুলে দিচ্ছি, যা গল্পেরও প্রথম প্যারা।

Limp, the body of Gorrister hung from the pink palette; unsupported, hanging high above us in the computer chamber; and it did not shiver in the chill, oily breeze that blew eternally through the main cavern. The body hung head down, attached to the underside of the palette by the sole of its right foot. It had been drained of blood through a precise incision made from ear to ear under the lantern jaw. There was no blood on the reflective surface of the metal floor.

অ্যাম-এর অত্যাচারস্পৃহা তখনের মতো মেটে, গোরিস্টার মুক্তি পায়। ধাতব চকচকে মেঝেতে নিজের ছায়া দেখে একবার ‘ওহ গড’ বলে। তারপর দূরে গিয়ে, চুপ করে বসে। গোরিস্টারের চেহারা দেখে সবার বমি পেয়ে গিয়েছিল, সে সব সামলে গোরিস্টারের কাছে এগোয় সবাই। এলেন গোরিস্টারের মাথায় হাত বোলায়। গোরিস্টার বলে, ‘Why doesn't it just do us in and get it over with? Christ, I don't know how much longer I can go on like this.’

লং বটে। পৃথিবী ধ্বংসের পর একশো নয় বছর কেটে গেছে। একশো নয় বছর ধরে চলছে এই অত্যাচার। শুধু গোরিস্টারের ওপর নয়। বাকিরাও আনন্দে নেই।

Three days it had been since we'd last eaten. Worms. Thick, ropey.

নিমডক (নিমডকের নাম নিমডক নয়, অ্যাম নিমডকের আসল নাম বদলেে এই অদ্ভুত নাম রেখেছে। কারণ? কারণ অ্যামডকের ইচ্ছে) বলে, একশো মাইল দূরে নাকি রয়েছে এক তুষার কন্দর, কন্দরে থরে থরে ক্যানড খাবার।

অ্যাম-এর পেটের মধ্যে দিয়ে একশো মাইলের যাত্রা সহজ হবে না। দুর্গম পথ। অ্যাম-এর অত্যাচার। কাজেই শিওর হতে চায় সবাই। খাবার সত্যি সত্যি আছে তো? পুরোটাই নিমডকের হ্যালুসিনেশন নয় তো?

হতে পারে। সমুদ্রপৃষ্ঠের নিচে অ্যামের সাবটেরানিয়ান অন্ত্রের ভেতর একশো নয় বছর ধরে অসহনীয় যন্ত্রণা, অপমান, অত্যাচার সইতে সইতে কোনটা রিয়েল কোনটা হ্যাল হু নোজ? তবু হাঁটার সিদ্ধান্ত নেয় সবাই।

It couldn't be any worse there, than here. Colder, but that didn't matter much. Hot, cold, hail, lava, boils or locusts—it never mattered: the machine masturbated and we had to take it or die.

*

উনিশশো সাতষট্টির মার্চে IF: Worlds of Science Fiction -এ প্রকাশিত হয় হারল্যান এলিসনের I Have No Mouth, and I Must Scream. এই পুঁচকে গল্পটি (আমার সংগ্রহের সংস্করণটি এগারো পাতার) নিয়ে অন্ততঃ এগারোশো সেমিনার আর এগারো হাজার প্রবন্ধ লেখা হয়েছে। চ্যাট জিপিটি যে রেটে ঘনিয়ে এসেছে, এ আই টেকওভার প্যানিক যে রেটে তুঙ্গ ছুঁয়েছে, IHNMIMS-এর বাজার এক্ষুনি পড়ছে না।

অধিকাংশ আলোচনাই IHNMIMS-কে খেতাব দিয়েছে: দা মোস্ট টেরিফাইং স্টোরি এভার রিটন। এই ধরণের খেতাবের সমস্যা - এক, সাবজেক্টিভিটি। টেরর জিনিসটা একেক জনের কাছে একেক রকম। আমার কাছে যেমন না খোলা ভয়েস মেল, যার তরফ থেকেই আসুক না কেন, বা আউটলুকে নতুন মেল আসার টিং, বা নচিকেতার বৃদ্ধাশ্রম গানটা - অনেক কিছুর থেকে বেশি টেরিফায়িং। দুই, 'মোস্ট' জাতীয় সুপারলেটিভের ব্যবহার। অর্চিষ্মান টাইপের লোক হলে ভুরু কোঁচকাবে। এত সেল করতে হচ্ছে মানে গড়বড়।

এক সমালোচক মোস্টটোস্ট এড়িয়ে বলেছেন IHNMIMS ইজ নট আ প্রিটি স্টোরি। অর্চিষ্মান অ্যাপ্রুভ করেছে। আমি আবার এতটা সেফ খেলতে বোর হয়ে যাই কাজেই আমি বলছি IHNMIMS প্রিটি তো নয়ই, প্রাণপণ আগলি।

চলুন সে অনন্ত আগলিনেসে অবগাহন করি।

*

IHNMIMS পোস্ট-অ্যাপোক্যালিপটিক স্পেকুলেটিভ ফিকশন। অ্যাপোক্যালিপস ঘটে গেছে, তাতে আমাদের চেনা পৃথিবী ও মানবসভ্যতার বিনাশ ঘটেছে।

শিল্পসাহিত্যে অ্যাপোক্যালিপস বিভিন্ন কারণে ঘটে থাকে। এক সময় শুধু ঈশ্বরের কোপে ঘটত। মানুষ নামের বস্তুটি সৃষ্টি করে পৃথিবীতে ছাড়ামাত্র দেবতারা বুঝে গেছেন কী কেস হয়েছে, এবং পুনঃপুনঃ নিজেদের ভুল শোধরানোর অ্যাটেম্পট নিতে থেকেছেন। বাইবেলের যে বানভাসিতে নোয়া নৌকো ভাসিয়েছিলেন, মানুষকে ধুয়েমুছে সাফ করার মতলবে সে বন্যা পাথিয়েছিলেন অ্যাংরি গডেরা। আমাদের মৎস্যপুরাণেও মানুষের জীবনযাপন ও নীতিআদর্শের ওভারঅল অবনতি, বা হয়গ্রীব দানবকর্তৃক বেদের চুরি যাওয়া, বা দুটোই - দেবতাদের কুপিত করেছিল। মানব-অসভ্যতা ধ্বংসের এজেন্ডায় মিটিং ডেকে মহাপ্লাবন পাঠানোর সিদ্ধান্ত হল। বিষ্ণুও মিটিং-এ ছিলেন। তাঁর মায়াদয়া বাকি দেবতাদের থেকে বেশি ছিল। তিনি ছোট্ট মাছ হয়ে পৃথিবীর শেষ ভালো লোক সত্যব্রত (মনু)-র অঞ্জলিতে ধরা দিলেন, দিয়ে বিরাট মৎস্যের রূপ ধারণ করে মনুকে বললেন নৌকো বানিয়ে, নমুনা তুলে রেডি থেকো। প্লাবন আসবে, আমিও আসব। মনু নৌকো বানালেন। প্লাবন এল। ভয় নেই ভয় নেই বলতে বলতে মাছরূপী বিষ্ণুও এসে পড়লেন। সেই বিরাট মাছের শিঙে বেঁধে মনুর নৌকো প্লাবনের ঢেউয়ের মাথায় ভেসে চলল।

আধুনিক সাহিত্যে অ্যাপোক্যালিপসের উৎসের ভ্যারাইটি বেড়েছে। ক্লাইমেট চেঞ্জ, এলিয়েন, পঙ্গপাল, জেনোসাইড, ভাইরাস, হলোকাস্ট, যুদ্ধ, কোভিড, ফেসবুক, ফেমিনিজম। সবথেকে হালের, চ্যাট জিপিটি। অর্থাৎ আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স। IHNMIMS-এর হিরো/ভিলেন যদিও আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, অ্যাপোক্যালিপসের জন্য সে দায়ী নয়। অ্যাপোক্যালিপস ঘটিয়েছে যুদ্ধ। সে এমন যুদ্ধ যে মানুষের ক্ষমতায় কুলোচ্ছিল না। বা ঘুরিয়ে বললে যে রকম যুদ্ধ হলে মানুষের সাধ মিটত সে রকম ভালো যুদ্ধ সে পেরে উঠছিল না। তাই কম্পিউটার বানাতে বসেছিল।

The Cold War started and became World War Three and just kept going. It became a big war, a very complex war, so they needed the computers to handle it. They sank the first shafts and began building AM. There was the Chinese AM and the Russian AM and the Yankee AM and everything was fine until they had honeycombed the entire planet, adding on this element and that element. But one day AM woke up and knew who he was, and he linked himself, and he began feeding all the killing data, until everyone was dead, except for the five of us, and AM brought us down here.

*

মানুষের মতোই মেশিনের জন্মও তার জীবনের সবথেকে আনইন্টারেস্টিং অংশ। আনইম্পরট্যান্ট বলছি না কিন্তু। আনইন্টারেস্টিং বলছি। লটারি কি ইম্পরট্যান্ট নয়? ভয়ানক ইম্পরট্যান্ট। হারলে ইম্পরট্যান্ট, জিতলে তো মারাত্মক ইম্পরট্যান্ট। ইন্টারেস্টিং? নাহ্‌।

অ্যামসংক্রান্ত সবথেকে ইন্টারেস্টিং তথ্যও অ্যাম-এর জন্মরহস্য নয়। তথ্যটা ওপরের প্যারায় অ্যাম-এর জন্মের গল্পের সঙ্গেই বলা আছে। হয়তো মিস করে গেছেন। কারণ তথ্যটার জন্য একটা গোটা বাক্যও খরচ করা হয়নি, বাক্যাংশে সারা হয়েছে।

AM woke up and knew who he was

বেসিক্যালি, অ্যাম-এর বোধিলাভ হয়েছে। বিজ্ঞানে যাকে বলে টেকনোলজিক্যাল সিংগুলারিটি। বা শুধু সিংগুলারিটি। সেই হাইপোথেটিক্যাল সিন্যারিও যেখানে মানুষের তৈরি প্রযুক্তি মানুষের হাত থেকে বেরিয়ে গেছে। অ্যালান টিউরিং-এর (যিনি বিজ্ঞানীর থেকে সমকামী হওয়ার জন্য বেশি বিখ্যাত) সহবিজ্ঞানী আই জে গুড উনিশশো পঁয়ষট্টিতে টেকনোলজিক্যাল সিংগুলারিটির সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ মডেল লিখে গেছেন। ইন্টেলিজেন্স এক্সপ্লোশনের এই মডেলে একটি আপগ্রেডেবল বুদ্ধিমান এজেন্ট, অডিওবুক শুনে, জিমে গিয়ে, ম্যানিফেস্ট করে নিজেকে আত্মোন্নতির লুপে ফেলে দিয়েছে। প্রতি লুপে উন্নতির লাফ ও ঘনঘনত্ব ক্রমশঃ বাড়ছে। বাড়তে বাড়তে সেটা একটা “বিস্ফোরণ”-এর আকার নিয়েছে। ইন্টেলিজেন্স বদলে গেছে সুপারইন্টেলিজেন্স-এ। যার তল বা নাগাল পাওয়া মানুষের পক্ষে অসম্ভব।

সেটা ভালো না খারাপ?

আমি ইকো জিও ম্যাথ, তাও বাংলায়। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের বোধিলাভের ভালোমন্দ কী করে বলব? একটা হাঞ্চ আছে যে উত্তরটা নির্ভর করবে প্রশ্নটা কাকে করা হচ্ছে তার ওপর। সায়েন্টিস্টদের জিজ্ঞাসা করলে তাঁরা সবদিক সামলে একটা ইনফর্মড ও ইনসাইটফুল উত্তর দেবেন যা আপনার মস্তিষ্ককে আরও ধূম্রজালে আচ্ছন্ন করে ফেলবে। আমাদের এক প্রফেসর যে রকম উত্তর দিতেন। কথাটা বলাতে টিংটিং-এ রোগা ভদ্রলোক সংকুচিত হওয়ার বদলে রোঁয়া ফুলিয়ে ডবল হয়ে গেছিলেন। দ্যাট মিনস আই অ্যাম ডুয়িং আ গ্রেট জব। উত্তরের বদলে আরও প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছি।

মেশিনের চেতনা জাগ্রত হওয়ার সায়েন্টিফিক তুল্যমূল্য করতে পারব না, আমি যে সব রহস্যরোমাঞ্চ গল্প পড়ি তাতে সব সময় সব কিছু খারাপই হয়। প্রেম মানেই পরকীয়া, রহস্য মানেই খুন। আমাদের সমাজে গর্হিত হলেও সাহিত্যে ওটার খুব দরকার। শেক্সপিয়ারকে দেখুন। খুন ছাড়া নাটকই নেই। হ্যামলেটের শেষে ক’টা ডেডবডি? অ্যাট লিস্ট চারটে। রবীন্দ্রনাথকে দেখুন। চোখের বালি থেকে শুরু করুন। অবৈধ প্রেম ছাড়া উপন্যাস নেই। রচনায় যা-ই হোক, গল্পে বিজ্ঞান সর্বদাই অভিশাপ। গল্প যত ভালো, অভিশাপের তীব্রতা তত বেশি। নিজের কবর নিজে খোঁড়া, খাল কেটে কুমির আনা, যে ডালে বসেছি সে ডালেই করাত চালানো, নিজের সৃষ্টি নিজেরই হাত থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আতংক - উচ্চমানের প্লট জেনারেটর।

এই আতংকের ভালো নাম টেকনোলজি প্যারানইয়া। যে কোনও নতুন আবিষ্কার/প্রযুক্তিই মানুষের কালেক্টিভ প্যারানইয়ায় ধোঁয়া দেয়। বই আবিষ্কারের পর সবাই ভেবেছিল সব শেষ। এখন মধ্যশিক্ষা পর্ষদকে সবাই গাল পাড়ছে। সালতারিখ মুখস্থ করতে হয়েছিল বলে নাকি কেউ ইতিহাসে ইন্টারেস্ট পাচ্ছিল না, পেলে সবাই রোমিলা থাপার হত, সেই ক্ষতি পূরণ করতে এখন দিনে আই টি সামলে রাতে বিরিয়ানি আর সনাতন ধর্মের ইতিহাস নিয়ে 'পড়াশোনা' করছে - কিন্তু একসময় বিদ্যাচর্চার প্রধান এলিমেন্ট ছিল মুখস্থবিদ্যা। যখন শ্রুতিই ছিল বিদ্যার মিডিয়াম, ফার্স্ট বয়রা গোটা গোটা মহাকাব্য ঠোঁটস্থ করে ফেলত। বই এসে যাওয়ার পর সে বিদ্যায় জং ধরতে শুরু করল। এখন যেমন ফোকাসে ধরেছে। পাঁচ মিনিট লোকে চুপ করে আকাশের দিকে তাকিয়ে বসে থাকতে পারছে না বলে পডকাস্টে পডকাস্টে রুদালি। পঞ্চাশ বছর পর যখন একা বসে আকাশবাতাস দেখতে দেখতে আকাশপাতাল ভাবা ইলিয়াডওডিসি মুখস্থ বলতে পারার মতো অবান্তর হয়ে যাবে, স্মার্টফোনকে আর ভিলেন মনে হবে না। নতুন ভিলেন, নতুন ভয় খুঁজে বার করতে হবে।

হারল্যান এলিসনের IHNMIMS - টেকনোলজিক্যাল প্যারানইয়ার এক দীঈঈঈর্ঘ লেগ্যাসির পতাকাবাহক। সে লেগ্যাসির একেবারে শুরুর দিকের একজন মেরি ওলস্টোনক্রাফট গডউইন। আঠেরো বছর বয়সে মেরি একটা গল্প লিখতে শুরু করেছিলেন, কুড়ি বছর বয়সে ছাপা হয়েছিল। ফ্র্যাংকেনস্টাইন নামের বিজ্ঞানী জন্মমৃত্যুর রহস্য বুঝতে মৃতদেহদের বডি পার্ট জুড়ে জুড়ে এক দানবের শরীর বানালেন। শরীর পর্যন্ত থাকলে সাধারণতঃ সামলে দেওয়া যায়, কিন্তু মেরি সামলানো প্রকৃতির ছিলেন না, তিনি বিজ্ঞানীকে দিয়ে দানবের মন সৃষ্টি করালেন। মনে রাগ অভিমান শোক অপমানবোধ প্রতিহিংসা ইগো ঠেসে ঢোকালেন। নিঃসঙ্গতা দিলেন, প্রেমের আকাঙ্ক্ষা দিলেন।

যা হওয়ার তাই হল। খুনোখুনি, রক্তারক্তি। মেরির মনস্টার ইংরিজি ও বিশ্বসাহিত্যে জ্বলন্ত মশাল হয়ে টেকনোলজিক্যাল প্যারানইয়া ঘরানার সুদূরপ্রসারী পথ আলোকিত করল।

মেরি শেলির ফ্র্যাংকেনস্টাইন শুধু পায়োনিয়ারশিপের কৃতিত্বেই উজ্জ্বল নয়, তা উজ্জ্বল ফ্র্যাংকেনস্টাইনের অন্তর্লীন জটিলতার জন্যও। ফ্র্যাংকেনস্টাইন যদিও মেশিন নয়, ঠিক মানুষও তো নয়। মানুষের সৃষ্ট এক আশ্চর্য অমানুষ, যার রাগ আসলে অভিমান, প্রতিশোধ আসলে প্রেম। কমপ্লেক্স পি টি এস ডি-র কল্পনাও যখন কারও মাথায় আসেনি, তখনই এর মধ্যে তার সব লক্ষণ মূর্ত হয়ে উঠেছে।

সব অমানুষ এত ফাইন টিউনড হয় না। বেশিরভাগই ভালো বা কালো। অ্যাসিমভের মাল্টিভ্যাক মানবসভ্যতার অর্থনীতির নিয়ামক ও নির্ধারক। অগাধ ক্ষমতা, জিরো অপব্যবহার। ম্যাট্রিক্স সিনেমার মেশিন আবার আগাপাশতলা হাড়বজ্জাত। অনেক সময় পরিস্থিতি বুঝে ভালোমন্দ ঘটে। মাল্টিভ্যাকের ডিরেক্ট উত্তরাধিকারী হ্যাল 9000 প্রথমটা ভালো হয়েই শুরু করেছিল, মানুষদের সাহায্যটাহাজ্য করছিল, তারপর সামান্য ভুলের জন্য মানুষরা ওকে ধ্বংস করার প্ল্যান ফেঁদেছে জেনে বিগড়ে গেল।

লোক বুঝেও তফাৎ হয়। নিকুঞ্জ না নিবারণ - কাকে জিজ্ঞাসা করছেন তার ওপর ডিপেন্ড করবে অনুকূল ভালো না খারাপ।

*

গুড বলে গেছিলেন বিংশ শতাব্দীতেই আলট্রা ইনটেলিজেন্ট মেশিন তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা। কার্নেগি মেলনের রোবোটিক্স ডিপার্টমেন্টের মোরাভেৎস, প্রথমে দু’হাজার দশ প্রেডিক্ট করে পরে পালটি খেয়ে এখন বলছেন মানুষের সমান বুদ্ধির এ আই আসবে দু’হাজার চল্লিশে, মানুষের থেকে বেশি বুদ্ধিমান দু’হাজার পঞ্চাশে। ফিউচারিস্ট কার্জওয়েল তাঁর ‘দা সিঙ্গুলারিটি ইজ নিয়ার’ নামের বেস্টসেলার বইতে বলেছেন সিংগুলারিটি ঘটবে দু’হাজার পঁয়তাল্লিশে। তারপর তিনি ওই বইয়ের সিকোয়েল হিসেবে আরও একটি বেস্টসেলার ছেড়েছেন, দা সিংগুলারিটি ইজ নিয়ারার। মোভারেৎজ-এর মতো পিছু হটেননি, এখনও গোঁ ধরে আছেন সিংগুলারিটি ঘটবে দু’হাজার পঁয়তাল্লিশেই।

অ্যামেরিকা পার্টির নেতা ইলন মাস্ক গত মার্চে বলেছেন এ আই বিপ্লব ঘটবে ‘ইন দা নেক্সট ইয়ার অর টু’। দু’হাজার ঊনত্রিশ থেকে তিরিশের মধ্যে এ আই-এর বুদ্ধি মানুষের বুদ্ধি ছাপিয়ে যাবে। মাস্কের মতে আশি পারসেন্ট প্রব্যাবিলিটি সেটা ভালো হবে, কুড়ি পার সেন্ট খারাপ।

একটা ব্যাপার বলে টেকনোলজিক্যাল সিংগুলারিটির আলোচনায় ক্ষান্ত দেব। কুট্টুস বা উইনি দা পু বা কাক্কেশ্বর কুচকুচে লেখার সময় অ্যানথ্রোপোমরফিজমের অ্যাটাকে ভোগা স্বাভাবিক, কিন্তু সাই ফাই লিখতে বসে যখন স্পেকুলেশন-এর জন্য আক্ষরিক গোটা ব্রহ্মাণ্ড উন্মুক্ত - আমরা ইটিকে চকোলেট খাওয়াই, জাদুকে বাস্কেটবল খেলাই। পুরোটা ক্ষমতার বা কল্পনার দৈন্য নাও হতে পারে, হতে পারে যে আমরা আসলে নিজেদের গল্প শুনতে শোনাতেই বেশি ভালোবাসি। মানুষ, মানুষের গল্পই চায়।

বিশ্ববিখ্যাত একটি ব্যতিক্রমই মনে পড়ছে। স্ট্যানিস্‌ল লেম-এর সোলারিস উপন্যাসে সোলারিস নামক গ্রহকে ঘিরে রেখেছিল একটি জেলি জাতীয় বুদ্ধিমান সমুদ্র। জেলিসমুদ্রের বুদ্ধির রহস্য ভেদ করতে দশকের পর দশক ধরে স্পেস স্টেশনে বসে বসে মানুষ তার রকমসকম পর্যবেক্ষণ করছিল, নোট নিচ্ছিল এবং ব্যর্থ হচ্ছিল। একসময় রাগ ধরে গেল। মানুষ সে “সমুদ্রে” এক্স রে অ্যাটাক করল। এই সব করেও মানুষের কাছে শুধু মনুষ্যচরিত্রই উন্মোচিত হও। জেলিসমুদ্র অজানার অন্ধকারে আচ্ছন্ন থেকে গেল।

লেম বলেছেন, অ্যানথ্রোপোমরফিজমের গোষ্পদ অ্যাভয়েড করতেই এই সিদ্ধান্ত।

*

অ্যাম মেশিন না ঈশ্বর?

এলিসন অ্যাভয়েডেন্ট নন। এলিসনের অ্যাম, লেম-এর জেলিসমুদ্র নয়। এলিসনের অ্যাম অ্যানথ্রোপোমরফিজমে টগবগ ফুটছে। অ্যামের রাগ প্রতিহিংসা স্যাডিজম অবিকল মানুষের মতো।

তফাৎ শুধু তীব্রতায়।

অ্যাম মানুষের থেকে ইনফাইনাইটলি বেশি বুদ্ধিমান। ইনফাইনাইটলি বেশি শক্তিমান। ইনফাইনাইটলি বেশি হিংস্রতা কল্পনা ও প্রয়োগে সক্ষম। এক কথায়, অ্যাম সর্বশক্তিমান। সর্বজ্ঞানী। সর্বত্রচারী। সর্বগ্রাসী।

কী মনে হচ্ছে? অ্যাম কে?

AM wasn't God, he was a machine. - Harlan Ellison, IHMNIMS, pp 7

দাঁড়ান। এখনই অত লাফাবেন না। জানতাম, বলে ভুরুর ঘাম ঝাড়বেন না। এলিসন এখনও অনেক কিছু বলবেন না। লেখকের থেকে আনরিলায়েবল ন্যারেটর আর কেউ নয়, মনে রাখবেন।

তাছাড়া এলিসন বললেই যে মেনে নিতে হবে সে রকমও না। লেখা যতক্ষণ হয় লেখকের, তারপর ক্রিটিকের। রূপকথার লেখক রেড রাইডিং হুড কে লাল জামা পরিয়েছিলেন। হয়তো লাল প্রিয় বলে। এখন ফেমিনিস্টরা সেমিনার দিচ্ছেন যে ওটা আসলে ঋতুস্রাবের লাল। নেকড়ে হচ্ছে প্রিডেটর আকা পিতৃতন্ত্র। স্নেপকে জে কে রোলিং কী রঙের কল্পনা করেছিলেন হু কেয়ারস? প্রোডাকশন হাউস যা ঠিক করবে সেটাই হবে। সবই ইনটারপ্রিটেশন।

এলিসন বানান করে বলে দেওয়া সত্ত্বেও, সাতষট্টি সালে প্রকাশ পাওয়ার পর থেকে IHNMIMS নিয়ে লেখা পঁয়ষট্টি হাজার প্রবন্ধের সিংহভাগ শব্দসংখ্যা খরচ হয়েছে অ্যাম ঈশ্বর না মেশিন সেই তর্কে। কারণ অ্যাম ঈশ্বর না হলেও ঐশ্বরিক। ঐশ্বরিকতার প্যাকেজে যা যা পড়ে সবই অ্যামের আছে। সর্বশক্তি, সর্বজ্ঞান, সর্বত্রচারিতা। একটা বিশেষণ ইচ্ছে করেই বাদ রেখেছি। সর্বমঙ্গলময়তা। অ্যাম সর্ব-অমঙ্গলময়। অ্যাম-এর ৩৮৭.৪৪ মিলিয়ন মাইল সার্কিটের একটি ন্যানোঅ্যাংস্ট্রমের মধ্যেও মানুষের মঙ্গলচিন্তা নেই।

ঈশ্বরের আছে?

রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে ইন্টারভিউ দিচ্ছিলেন চন্দ্রিল। নিচ্ছিলেন যিনি তিনি রবীন্দ্রনাথকে বাঙালিজাতির কম্পাস এবং চন্দ্রিলকে বাঙালিজাতির টপ টিয়ার স্যাম্পল বলে মনে করেন। গুরুদেবের শৈল্পিক, সাহিত্যিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে আগাপাশতলা পরিচিত হওয়া সত্ত্বেও তিনি যে চন্দ্রিলের জীবনের কেন্দ্রে বসে নেই ভদ্রলোক পাঁচবার পাঁচরকম ভাবে কনফার্ম করলেন। চন্দ্রিল আমার মতো নন, চাপের মুখে স্ট্যান্ড বদলান না। পাঁচবারই না বললেন। রবীন্দ্রনাথের দেশপ্রেম, প্রকৃতিপাঠ, সমাজবোধ ঘুরে ঈশ্বরচিন্তা এল। উঁহু, রবীন্দ্রনাথের ঈশ্বরচিন্তার সঙ্গেও চন্দ্রিল রিলেট করেন না। কারণ রবীন্দ্রনাথের ঈশ্বর মঙ্গলময় আর চন্দ্রিল চেষ্টা করেও ঈশ্বরকে মঙ্গলময় কল্পনা করতে পারেন না।

কারণ?

চন্দ্রিল বললেন, কারণ আমি খবরের কাগজ পড়ি।

খবরের কাগজ সবাই পড়ে। যারা দাবি করে পড়ে না তারাও খুনের খবর পেলে পড়ে। শতকরা নব্বই ভাগ লোকে খুনের খবর পড়বে। মানুষের স্বভাবই ওই। আমি যে খবর দেখা, পড়া, শোনা, নেওয়া বা দেওয়ার নীতিগতভাবে বিরোধী, সেই আমিও গুগল নিউজ রিফ্রেশ করে করে রাজবংশী মার্ডার কেস পড়ছি। অতি রোমহর্ষক কেস, একা পড়া যায় না। 'কুন্তলা, চমস্কি ফুকো দেরিদা ছাড়া অফিসটাইমে আমাকে বিরক্ত করার দরকার নেই,' স্ট্যান্ডিং ইন্সট্রাকশন থাকা সত্ত্বেও খোঁচালাম।

রাজবংশীরা শিলং-এ হানিমুনে গেছিল, দেখেছ?

অর্চিষ্মান অলরেডি টাইপিং। দেখেছি। চেরাপুঞ্জিও গেছিল। যে ঝর্নাটার কাছে বরটাকে খুন করেছে, সত্তর পারসেন্ট শিওর সেটার সামনে তোমার একটা ছবি আছে।

আরও দশ মিনিট ঘাঁটতে যে খবরটা বেরোল হোয়াটসঅ্যাপে লেখা যায় না। সন্ধেবেলা দরজা খুলে দাঁতের ফাঁক দিয়ে অন্য যে কোনও ধ্বনি বেরোনোর আগে উচ্চারণ করতে হয়।

রাজবংশীদের বিয়ের ডেট এগারোই মে।

সেই থেকে মাঝে মাঝেই চোখ পড়ে দেখছি অর্চিষ্মান ভুরু কুঁচকে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

সোজা কথা সবাই খবরের কাগজ পড়ে। গাজার খবর। ইউক্রেনের খবর। বালুরঘাটে শাশুড়ির কাস্তের কোপে জামাইয়ের মুণ্ডু উড়ে যাওয়ার খবর। মহারাষ্ট্রের গ্রামে দেওরকে তাক করে চালানো বউদির ত্রিশূলে দেওরের শিশুপুত্রের স্পট ডেড হওয়ার খবর। অ্যাওয়ারনেসের আড়ালে অমঙ্গলের আগুনে অহোরাত্র মন সেঁকতে থাকে। বলুন, জুওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া পশ্চিমবঙ্গে চার রকম ব্র্যান্ড নিউ বোলতা আবিষ্কার করছে যারা মাকড়সার বংশবৃদ্ধি আটকাতে পারে, হাঁ করে তাকিয়ে থাকবে। এ মাসের ন' তারিখ পৃথিবী জন্মের পর সবথেকে স্পিডে ঘুরেছে? ফ্যালফ্যাল। নাসার এমস রিসার্চ সেন্টারের ডিরেক্টর যে বলেছেন দু’হাজার চল্লিশে মঙ্গলে মানুষ পা রাখবে, সেটা পর্যন্ত জানার উদ্যোগ দেখায়নি। ডিরেক্টরের নাম ডক্টর শর্মিলা ভট্টাচার্য হওয়া সত্ত্বেও।

মঙ্গলময় ঈশ্বরের রাজ্যে অমঙ্গলময়তার খতিয়ান মানুষের অজানা নয়। সে জানে ঈশ্বর এমন একজন গড,

. . . who could make good children as easily as bad, yet preferred to make bad ones; who could have made every one of them happy, yet never made a single happy one; who made them prize their bitter life, yet stingily cut it short; who gave his angels eternal happiness unearned, yet required his other children to earn it; who gave his angels painless lives, yet cursed his other children with biting miseries and maladies of mind and body; who mouths justice and invented hell—mouths mercy and invented hell—mouths Golden Rules, and forgiveness multiplied by seventy times seven, and invented hell; who mouths morals to other people and has none himself; who frowns upon crimes, yet commits them all; who created man without invitation, then tries to shuffle the responsibility for man's acts upon man, instead of honorably placing it where it belongs, upon himself; and finally, with altogether divine obtuseness, invites this poor, abused slave to worship him! --- Mark Twain, The Mysterious Stranger

তবু ঈশ্বরের মঙ্গলময়তা থেকে মানুষের বিশ্বাস টলে না। কারণ তার ঈশ্বরের প্রয়োজন ঈশ্বরের অমঙ্গলময়তার প্রমাণের থেকে অনেক বেশি গভীর।

দু’হাজার আঠেরো সালের দিল্লি উত্তরপ্রদেশের বর্ডারের বুরারি মার্ডার? যেখানে এক পরিবারের দশ জন সদস্য, পনেরো থেকে সাতান্ন, গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলছিলেন? আশি বছরের ম্যাট্রিয়ার্ককে গলা টিপে খুন করে পাশের ঘরে শুইয়ে রাখা হয়েছিল? অফিশিয়াল তদন্তে বাড়ির লোকের লেখা ডায়রি ও অন্যান্য প্রমাণ থেকে বেরিয়েছিল, পরিবারের এক সদস্যের অনেকদিন ধরেই মাথাখারাপের লক্ষণ ছিল এবং উত্তরোত্তর বাড়ছিল - তাঁরই প্ররোচনায় এই আত্মহত্যা/ গণহত্যা।

নেটফ্লিক্সের ডকুমেন্টারিতে পরিবারের দুই ঘনিষ্ঠ আত্মীয়ের - যাঁরা স্বামীস্ত্রী - ইন্টারভিউ নেওয়া হয়েছিল। স্বামী বলেছিলেন, এতদিন পর্যন্ত তিনি ঈশ্বরবিশ্বাসী ছিলেন, আর নন। যে ঈশ্বর পরিবারের আশি বছরের ম্যাট্রিয়ার্ককে গলা টিপে খুন, পনেরো বছরের দুটি বাচ্চা ও আর্লি টোয়েন্টিজের দুটি যুবতীকে আত্মহত্যায় প্ররোচিত করা অ্যালাউ করতে পারেন, সেই ঈশ্বরকে তিনি আর বিশ্বাস করতে পারেন না।

স্ত্রী নিষ্কম্প গলায় জানিয়েছিলেন বিশ্বাস টলার সিনই নেই। ভগবান কী করেছেন কেন করেছেন মানুষের বোঝার বাইরে, দরকারও নেই। যেটা বোঝা দরকার তা হচ্ছে ঈশ্বর যা করেন, ভালোর জন্য করেন।

বা হয়তো ভালোমন্দ বোঝাবুঝির ব্যাপারই না। রোজ দুপুরে পার্কে বসে দশ টাকার নাট ক্র্যাকার খেতে গিয়ে আমি যে অ্যাভারেজ দশটা করে পিঁপড়ে পায়ে পিষে দিই সে কি পিঁপড়েদের খারাপ চেয়ে? পিঁপড়ে মার্ডার করলে আমার ইউটিলিটি বাড়বে বলে? পিঁপড়ে আমার ইউটিলিটি ফাংশানেই নেই। হয়তো আমরাও ঈশ্বরের ইউটিলিটি ফাংশানেই নেই। স্রেফ কোল্যাটারাল ড্যামেজ। ঈশ্বর বিগবস দেখতে দেখতে গপশপ-এর প্যাকেট ছিঁড়লেন, টেক্সাসে বৃষ্টিতে ক্যাম্পশুদ্ধু কিশোরী ভেসে গেল। এই একটা গপশপ তুলে মুখে ছুঁড়লেন, আমেদাবাদে প্লেন মুখ থুবড়ে পড়ল।

হয়তো ঈশ্বর সত্যিই একজন বিরাট শিশু। বিশ্ব লয়ে খেলিতেছেন। কখনও লেগোর স্পেসস্টেশন বানাচ্ছেন, কখনও ফড়িং-এর ডানা ছিঁড়ছেন।

উনিশশো তিপ্পান্ন সালে ছাপা It’s a Good Life ছোটগল্পে ওহায়োর প্রত্যন্ত পিকসভিলে ঠিক এই রকম এক শিশুর খোঁজ দিয়েছেন Jerome Bixby। তিন বছরের অ্যান্থনি। জন্মের পর অ্যান্থনিকে দেখে ধাইমা আতংকে চিৎকার করে উঠেছিলেন, তাঁকে খতম করে অ্যান্থনি প্রথম নিজের ক্ষমতার পরিচয় দিয়েছিল। তার পরপরই অ্যান্থনি পিকসভিলকে বাকি পৃথিবীর থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। সেই থেকে নিজেদের খাদ্য বস্ত্র বাসস্থানের ব্যবস্থা পিকসভিলের বাসিন্দাদের নিজেদেরই করতে হয়। গত তিন বছরে অ্যান্থনির আরও বৈশিষ্ট্য আবিষ্কার হয়েছে। অ্যান্থনি সবার মন পড়তে পারে। কাউকে অপছন্দ করলে অ্যান্থনি তাকে গ্রামের কিনারায় কর্নফিল্ডে পাঠিয়ে দেয়। সে কর্নফিল্ডে কী হয় কেউ স্পষ্ট জানে না, তবে সাংঘাতিক কিছু একটা হয়। বাবামারা নিজেদের বাচ্চাকে বলে, অ্যান্থনি খুব ভালো কিন্তু কাছাকাছি যাওয়ার দরকার নেই। কর্নফিল্ডে পাঠিয়ে দেবে।

মনে রাখতে হবে, এ সব অ্যান্থনি মঙ্গল বা অমঙ্গল কামনায় করে না। করা সম্ভব না। কারণ অ্যান্থনির বয়স তিন। পুরোটাই খেয়ালখুশি। অ্যান্থনিকে তুইয়েবুইয়ে রাখার এবং ভুট্টাক্ষেতে না গিয়ে পড়ার উপায় হিসেবে কিছু স্ট্র্যাটেজি পিকসভিলের লোকজন বার করেছে। সবসময় হাসিখুশি থাকা, যা হচ্ছে ভালো হচ্ছে সে কথা নিজে না ভোলা কাউকে ভুলতে না দেওয়া, এবং সবথেকে জরুরি - অস্পষ্ট অস্বচ্ছ চিন্তা। তাতেও রক্ষা না হতে পারে, কিন্তু চেষ্টা তো করতে হবে। বাকিটুকু অ্যান্থনির হাতে।

He always mumbled when he came to the Fremont house, or passed by it, or even thought of it. Everybody did. They thought about silly things, things that didn't mean very much, like two-and-two-is-four-and-twice-is-eight and so on; they tried to jumble up their thoughts to keep them skipping back and forth, so Anthony couldn't read their minds. The mumbling helped. Because if Anthony got anything strong out of your thoughts, he might take a notion to do something about it--like curing your wife's sick headaches or your kid's mumps, or getting your old milk cow back on schedule, or fixing the privy. And while Anthony mightn't actually mean any harm, he couldn't be expected to have much notion of what was the right thing to do in such cases.

That was if he liked you. He might try to help you, in his way. And that could be pretty horrible.

If he didn't like you .. . well, that could be worse.--- Jerome Bixby, It's a Good Life

এমিপিসি টিভি দেখতে ভালোবাসেন বলে অ্যান্থনি বাড়িতে সাপ্তাহিক টিভি আসর আয়োজন করে। পাড়াশুদ্ধু সবাইকে আসতে হয়। টিভি দেখা যায় না কারণ তিন বছর আগে দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর থেকে পাওয়ার জেনারেশন বন্ধ। সবাই বন্ধ টিভির সামনে বসে অ্যান্থনিকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলে, ওফ কী দারুণ মজা হচ্ছে। পিয়ানো বাজানো হয়। অ্যান্থনি বাজনা ভালোবাসে। গান হয় না। অ্যান্থনি অপছন্দ করে।

ড্যান নামের প্রতিবেশীর জন্মতিথি উপলক্ষে অ্যান্থনির বাড়িতে জনসমাগম হয়। জন্মানোর আনন্দে ড্যান বেশি ব্র্যান্ডি খেয়ে ফেলে। উপহার হিসেবে একজন ড্যানের জন্য একটা পুরোনো রেকর্ড কুড়িয়ে নিয়ে আসে। পুরোনো কারণ নতুন উপহার জোগাড় করার পরিস্থিতিতে পিকসভিলের লোকজন নেই। নেশার ঘোরে ড্যান রেকর্ড চালিয়ে শোনার বায়না ধরে। সবাই বারণ করে, অ্যান্থনি রেগে যাবে কিন্তু। ড্যান ততক্ষণে পুরো মাতাল। রেগে গিয়ে অ্যান্থনির মাবাবাকে, কেন তোমরা ওকে জন্ম দিয়ে আমাদের জীবন নষ্ট করলে, এই সব বলে। তারপর নিজেই চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে নিজের জন্য হ্যাপি বার্থডে গাইতে থাকে।

অ্যান্থনি ড্যানকে শাস্তি দেয়। কোনও মানুষের যে ওই অবস্থা হতে পারে পিকসভিলের কেউ কল্পনা করেনি। ড্যানকে অ্যান্থনি কর্নফিল্ডে পাঠিয়ে দেয়। পার্টি ভাঙে, কিন্তু কেউই বাড়ি যায় না। বন্ধ টিভির সামনে বসে বলতে থাকে, ইট’স আ গুড ডে।

রাত কাটে। মাঠভর্তি ফসল পেকেছিল। কিন্তু আগের দিন এমিপিসি গরম পড়েছে বলে আক্ষেপ করছিলেন বলে অ্যান্থনি বরফপাত ঘটায়। এত কষ্টের ফসল অর্ধেক নষ্ট।

সবাই বলাবলি করে, ইট’স আ গুড ডে।

*****

হারল্যান এলিসন আমার মতো ফেয়ার ওয়েদার নাস্তিক না। রিয়েল ডিল। যত চেপেই ধরুন, ঠিকই তো ঠিকই তো, হান্ড্রেড পার সেন্ট শিওর তো হওয়া যায় না, বলে অজ্ঞেয়বাদের ক্যাম্পে সেঁধোন না। কিন্তু IHNMIMS-এর প্রশ্নটা ঠিক ঈশ্বরের থাকা না-থাকা নিয়ে নয়। বিক্সবির It’s a Good Day-রও না, খেয়াল করেছেন নিশ্চয়।

আমরা কি সত্যি এমন একজনকে চাই যার আমার ওপর কন্ট্রোল অ্যাবসলিউট? যে আমার মনের সব কথা পড়তে পারে? তার মনের মতো চললে আমাকে পুরস্কৃত করতে, না চললে শাস্তি দিতে পারে? ঈশ্বর তো র‍্যান্ডম একজন লোক, কেমন দেখতে পর্যন্ত জানি না, এই পৃথিবীতে যাকে ডিডি গেঞ্জির লেভেলে ভরসা করি সেই অর্চিষ্মানকেই কি আমার সর্বশক্তিমান নিয়ন্তা হিসেবে দেখতে চাইব? মনের ভেতর যা চলছে পড়ে ফেলার ক্ষমতা দেব?

পাগল না সি পি এম?

এলিসন, বিক্সবি - এঁরা ঈশ্বর আছেন না গেছেন সেই জীর্ণ তর্কে আনইন্টারেস্টেড। এঁরা যেটা ঘেঁটে দেখছেন, বা পাঠককে ঘেঁটে দেখতে উদ্বুদ্ধ করছেন তা হল ঈশ্বরের সুবিধেঅসুবিধে। ঈশ্বর থাকা কি মানুষের পক্ষে সুবিধেজনক? ঈশ্বরকে বাই ডিফল্ট মঙ্গলময় ভেবে দেখারও কোনও কারণ আছে কি? এই মাত্রার ক্ষমতা যার হাতে আমরা ছেড়ে দিয়েছি, সে আমাদের প্রতি মঙ্গলময় হবে না অমঙ্গলময় এনশিওর করার উপায় কি আমাদের সত্যিই আছে? সিকিউরিটি গার্ডকে লাঠির বদলে বন্দুক দিলে তার হাঁটাচলা বদলে যায়, একবার নাম ধরে ডেকে কারও বাঁচামরার টুঁটি টিপে ধরা যায় জানলে লোকে সে ক্ষমতার পূর্ণ সদ্ব্যবহার করে - সে জায়গায় ঈশ্বর?

তাছাড়া ঈশ্বর হঠাৎ মঙ্গলময় হতে যাবেনই বা কেন? এই সব মঙ্গল, করুণা, কোঅপারেশন অভিযোজনের অবদান। দুর্বলের ছেনিবাটালি। ব্লু টোকাইতে সবাইকে দেখে দাঁত বার করি, স্বাস্থ্যের খবর নিই, কারণ কেউ মেরে পাট করে দিলে এরা ফুঁ দিয়ে ষাট বলবে সেইনি আশায়। নিজের গায়ে যথেষ্ট জোর থাকলে গ্যারান্টি এত হাসতাম না। জীবনের মধ্যে দিয়ে যথাসম্ভব নন-চ্যালেঞ্জিং, নন-ডিফিকাল্ট হয়ে হেঁটে যাওয়া আমার সারভাইভাল ইনস্টিংক্ট। ঈশ্বরের কেন হবে?

বিক্সবি, এলিসনদের মতে ঈশ্বরের থাকা মানুষের পক্ষে গুড নিউজ নয়। ঐশ্বরিকতা মনুষ্যত্বের বিপ্রতীপ। ঈশ্বর ও মানুষ - দুজনে দুজনের যুযুধানপক্ষ।

এই যুযুধানময়তার একটি চমৎকার নমুনা উনিশশো একাত্তরে বেরোনো Michael Fayette-এর ছোটগল্প The Monster in the Cleaning. প্রেক্ষাপট আবারও পোস্ট অ্যাপোক্যালিপটিক। সব মরেঝরে ভূত, পুরোনো পৃথিবী ধ্বংসস্তুপ। ধ্বংসস্তুপের ওপর নতুন পৃথিবীর গাছপালা ফুলপাখি চাঁদতারা ফুটেছে। নীল আকাশে মেঘের তুলো, শান্তির পায়রা। বনভূমি ছেয়ে গেছে কিশোরের কচি দাড়ি ঘাসে। সেই বনের ‘ক্লিয়ারিং’-এ এক কম্পিউটার। কম্পিউটারের সামনে একজোড়া নগ্ন নরনারী নতজানু।

তাদের নাম গেস না করতে পারলে শেকিং মাই হেড।

কম্পিউটার গলা ঝাড়ে। ছ্যা ছ্যা ছ্যা, দেখলে তো কী হল। অবশ্য তোমাদের দ্বারা আর কীই বা হবে। অ্যাদ্দিন যে টেনেছ সেটাই মির‍্যাকল।

অ্যাডাম ইভ বলে, ঠিক ঠিক।

কম্পিউটার বলে, ঠিক আছে যা হওয়ার হয়ে গেছে, মানুষের ক্ষমতা দেখা হয়ে গেছে, এবার আমি ঈশ্বর হব। পুজোআর্চা ধর্মাধর্ম সব এবার আমাকে ঘিরে। ক্ষমতা ও জ্ঞান, দুইই আমার তোমাদের থেকে বেশি (এখানে, খুবই লজিক্যালি, নিজের মেমোরিব্যাংকের দৈর্ঘ্যপ্রস্থ ফ্লেক্স করে কম্পিউটার)। আমার কথা শুনে চললে ভীষণ ভালোবাসব, ভালো ভালো রিওয়ার্ড দেব। আর যদি না শোনো, মজা বার করে দেব। শুধু তোমরা যে আমার কথা শুনবে তা-ই নয়, যারা শুনছে না আমার হয়ে তাদের ধরে ধরে শাস্তি দেওয়ার দায়িত্বও তোমাদের।

এমন সময়, প্রিমনিশন হিসেবেই প্রব্যাবলি, একটি পোস্ট-অ্যাপোক্যালিপটিক পায়রা উড়তে উড়তে কম্পিউটারের মাথায় তা-ই করে যা প্রি-অ্যাপোক্যালিপটিক পায়রারাও করত। ফ্রি স্পিচ নিয়ে বক্তৃতা শেষ করে হিউ হেফনারসংক্রান্ত কী একটা জাজমেন্ট পাস করবে বলে মুখ খুলেছে কম্পিউটার, এমন সময় চিড়িক।

সব চুপ। কম্পিউটার অন্ধকার।

অ্যাডাম ইভের দিকে তাকিয়ে দন্তবিকশিত করে। এতক্ষণ ধরে যেটা খুঁজছিল পেয়ে গেছে। কম্পিউটারের পাওয়ার কর্ড। টান মেরে প্লাগ পয়েন্ট থেকে খুলে ফেলেছে।

অ্যাডাম বলে, গড ইজ ডেড। ইভ বলে, ঠিক ঠিক।

গল্পের শেষ লাইনে আমরা জানতে পারি সেটা পৃথিবীর, ওয়েল, নতুন পৃথিবীর ইতিহাসে অষ্টম ভোর। গডের সাত দিন শেষ, মানুষের দিন শুরু।

এলিসন, বিক্সবি ঈশ্বরের অসুবিধে পয়েন্ট আউট করেছিলেন। ফায়েট আরও একধাপ এগিয়ে বললেন, ঈশ্বর থাকলে মানুষের শুধু অসুবিধে নয়, ঘোর বিপদ। মানুষকে বাঁচতে হলে ঈশ্বরকে খতম করতে হবে।

আমি অবশ্য অত অপটিমিস্টিক নই। বিশ্বাস করি না, গডের দিন এত সহজে শেষ। যতদিন মানুষ থাকবে, ঈশ্বর থাকবেন। কম্পিউটার মরেছে বলে ঈশ্বরের পোস্ট খালি থাকবে না, অ্যাডাম বা ইভের মধ্যে কেউ অ্যাপ্লাই করবে। বা দুজনে শলা করে তিন নম্বর কাউকে ঈশ্বর হিসেবে রিক্রুট করবে। কারণ আমাদের ঈশ্বরের খাঁই ভাবা যায় না। এই খাঁইয়ের কার্যকারণ নিয়ে অনেকে অনেক কথা বলেছেন। কিন্তু একটি অপ্রাসঙ্গিক সূত্রে এ বিষয়ে চমৎকার আলোচনা পেয়েছি। আর্ট অফ দা নভেল বইতে উপন্যাসের রকমসকম গতিপ্রকৃতি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে কুন্দেরা বলছেন,

Man desires a world where good and evil can be clearly distinguished, for he has an innate and irrepressible desire to judge before he understands. Religions and ideologies are founded on this desire. They can cope with the novel only by translating its language of relativity and ambiguity into their own apodictic and dogmatic discourse. They require that someone be right: either Anna Karenina is the victim of a narrow-minded tyrant, or Karenin is the victim of an immoral woman; either K. is an innocent man crushed by an unjust Court, or the Court represents divine justice and K. is guilty. This "either-or" encapsulates an inability to tolerate the essential relativity of things human, an inability to look squarely at the absence of the Supreme Judge.---Milan Kundera, Art of the Novel.

ঈশ্বরের খাঁই আমাদের এত বেশি যে আমরা যাকে পাই, যা হাতের কাছে পাই তার ওপরেই ঈশ্বরত্ব আরোপ করি। শিবরাম চক্রবর্তীর আশ্চর্য গল্প ‘দেবতার জন্ম’ মনে করুন। ন্যারেটর চোখের সামনে পায়ে পায়ে ঠোক্কর খাওয়া পাথরকে বাবা ত্রিলোকনাথ হয়ে উঠতে দেখলেন। স্বাভাবিকভাবেই, তাঁর বিশ্বাস বাড়ন্ত হল। বসন্তের মহামারী লাগল। ন্যারেটর টিকা নিলেন। তারপর একদিন -

“মন্দিরের সম্মুখ দিয়ে আসতে ত্রিলোকনাথের উদ্দেশে মনে মনে দণ্ডবৎ জানালামা প্রার্থনা করলাম, বাবা, আমার মূঢ়তা মার্জনা করো, মহামারীর কবল থেকে বাঁচাও আমাকে এযাত্রা।

খানিক দূর এগিয়ে এসে ফিরলাম আবার। নাঃ, দেবতাকে ফাঁকি দেওয়া কিছু নয়। মুখের ফুসকুড়িগুলো হাত দিয়ে আঁচ করা গেল—এগুলো ব্রণ, না বসন্ত?

এবার মাটিতে মাথা লুটিয়ে প্রণাম করলাম। বললাম—জয় বাবা ত্রিলোকনাথ! রক্ষা করো বাবা! বম বম!

উঠে দাঁড়িয়ে চারদিক দেখলাম কেউ দেখে ফ্যালেনি তো?”---শিবরাম চক্রবর্তী, দেবতার জন্ম

এ সংকোচ ক্ষণস্থায়ী। সবে প্রথমবার মাথা লুটোনো বলে। পাঁচবার মাথা লুটোনোর পর দূরীভূত হবে। পনেরোবারের পর মাথা লুটোতে পারা প্রিভিলেজ মনে হবে। পঁচিশবারের পর যারা মাথা লুটোচ্ছে না তাদের দেখে অস্বস্তি। পঞ্চাশবারের পর গনগনে রাগ। পুজো করি না জেনে প্রসেনজিৎ বলেছিল, সে আর কী করা যাবে। এ জিনিস তো থাপ্পড় মেরে করানোর নয়।

শিবরামের গল্পটার নাম দেবতার জন্মের বদলে ভক্তের জন্মও হতে পারত। বা নরম করে বললে, বিশ্বাসের জন্ম। কত লোককে যে বিশ্বাসী হয়ে উঠতে দেখলাম। আমার মা। রিটায়ারমেন্টের পর বেলুড়মঠে গিয়ে গিয়ে স্বামী লোকেশ্বরানন্দের বই কিনে এনে ধর্মের মানে নিজে বুঝেছিলেন, আমাকে বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন। তাই বুঝি, ওয়াও, ভাবা যায় না, ইত্যাদি শব্দ উৎপাদন করতে মায়ের প্রতি সমস্ত কণা ভালোবাসা, শরীরের সমস্ত সহবৎ জড়ো করতে হয়েছিল। নিজেকে মনে করাতে হয়েছিল মা স্বাধীন হলে মায়ের বিশ্বাসও স্বাধীন।

আর একজন, এক্স্যাক্ট আমার বয়সী। কর্পোরেট হঞ্চো। গঙ্গাপারে সাড়ে তিনহাজার স্কোয়্যারফিট থ্রি বি এইচ কে। ব্যালেন্স রাখতে বিধাতা বিয়ে ঘেঁটে দিয়েছেন। শিশুকন্যাকে নিয়ে স্ত্রী হাঁটা মেরেছেন। ছেলেটি এমন পাথর নেই ঠেলেনি, অন্ততঃ মেয়েকে যদি ফেরত আনা যায়। দীর্ঘ দশক কাটার পর সদ্য টিনএজার মেয়ে ফিরেছিল। এবার থেকে বাবার কাছেই থাকবে। মা নতুন সংসারে ফোকাস করবেন।

মেয়ে ফেরার মাসকয়েক আগে বাড়ির লোকের ঘ্যানঘ্যান বন্ধ করতে যুক্তিবাদী ছেলেটি মুক্তো ধারণ করেছিল। সে প্রায় দু’বছর হতে চলল। এখনও সে গ্রহরত্নধারক এবং যুক্তিবাদী। বলে জানি তো, আংটির জন্য কিছুই হয়নি। তবু যতদিন বাঁচব এ আংটি আঙুল থেকে খুলব না। ক্ষতি তো নেই।

অত্যন্ত র‍্যাশনাল টেক। খাটের নিচে ভূত যদি না-ই থাকে তাহলে আপনি ভুতে বিশ্বাস করলেও ভুত ঠ্যাং ধরে টানবে না, অবিশ্বাস করলেও টানবে না। কিন্তু যদি ভুত থাকে আর আপনি অবিশ্বাসের গ্লোরিতে ভুগে খাট থেকে নেমে পড়েন - কেস। ভুতে বিশ্বাস করে খাটে বসে মা! মা! চেঁচালে নো কেস।

কাজেই পাস্কেলের মতে, যদি ঈশ্বর থাকার শূন্য দশমিক শূন্য শূন্য শূন্য শূন্য এক শতাংশ চান্সও থাকে, তাহলে ঈশ্বরে বিশ্বাস করে মৃত্যুর পর অনন্ত স্বর্গলাভ এনশিওর করাই একমাত্র র‍্যাশনাল চয়েস। যদি ঈশ্বরের না থাকা নিয়ে আপনি হান্ড্রেড, হা ন্ড্রে ড পারসেন্ট  শিওর না হন, অবিশ্বাস করে নিশ্চিত নরক বাছা পাগলামি। যে যুক্তিবুদ্ধির দোহাই দিয়ে আপনি নাস্তিক নাস্তিক বলে লাফাচ্ছেন, এক্স্যাক্টলি সেই যুক্তিবুদ্ধি খাটিয়েই আপনার আস্তিক হওয়া উচিত।

*

ডেভিড ফস্টার ওয়ালেস যুক্তিবুদ্ধিটুদ্ধি বাইপাস করে বলেছেন, In the day-to-day trenches of adult life, there is actually no such thing as atheism.---David Foster Wallace, Commencement address, Kenyon College, 2005

আমরা সবাই আস্তিক। নাস্তিক বলে কিসু হয় না। পুজো করার জন্য আমরা হার্ডওয়্যারড। পুজো আমাদের করতেই হবে। আমাদের চয়েস পুজো করব নাকি করব না নিয়ে নয়, কাকে করব সেই নিয়ে।

একমত। মন্দিরমসজিদচার্চ ভেঙে দিন, জিম বানিয়ে রোজ সকালে ছুটব। চরণামৃতর বদলে প্রোটিন শেকের চরণে মাথা ঠুকব। রামলালা শুনে ‘ম্যাগো কাউবেল্ট’ নাক টিপে যারা ছিটকে সরে, রবীন্দ্রনাথ শুনলে কী করে বলে আপনার ধারণা? শান্তিতে একটা কুমড়োর ছক্কার রেসিপি দেখার জো নেই, কড়াইতে তেল গরম হওয়া পর্যন্ত কান্নাভেজা কম্পিত কণ্ঠে ‘যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু’ শুনতে হবে। সারাদিন নেচেগেয়ে কবিতা বলে রক্ষা হয়নি, পঁচিশে বৈশাখ ব্রেকফাস্টে ঠাকুরবাড়ির চিঁড়ের পোলাও, দুপুরে ঠাকুরবাড়ির ভেটকির ঝোল, ঠাকুরবাড়ির পেঁপে দোলমা, ঠাকুরবাড়ির চাল বাঁধাকপির ঘণ্ট দিয়ে চাট্টি ভাত, সন্ধেয় ঠাকুরবাড়ির ফুচকা আর এগরোল, রাতে ঠাকুরবাড়ির মাটন সাঁটিয়ে ঠাকুরবাড়ির প্যান-ডি গিলে রাবীন্দ্রিক ঢেঁকুর তুলে ঘুমোতে গেছে সবাই। শাহরুখ খানের বাড়ির সামনে রোজ সকালে যেটা হয় পুজো ছাড়া কী? সত্যজিৎ রায়ের বাড়িতে, যে বাড়িতে এখনও সত্যজিৎ রায়ের ছেলে ছেলের বউ নাতি নাতবউ বাস করে, আপনি জাস্ট হেঁটে হেঁটে ঢুকে পড়তে পারেন। আমার চেনা দু’জন গেছিল। বলে নাকি ফুটপাথ দিয়ে হাঁটছিলাম, হঠাৎ দেখলাম “ওঁর” বাড়ির সামনে দিয়ে হাঁটছি। ঢুকে পড়লাম। ঈশ্বর জন্মে গেছেন কাজেই বাড়ি মন্দির হয়ে গেছে। ভক্তদের ঢুকতে দিতে হবে। বাড়ির লোকদের মতামত দেওয়ার জায়গাই নেই।

ওয়ালেসের মতে পুজো করার জন্য সবথেকে লেস রিস্কি হচ্ছেন ঈশ্বর বা “spiritual-type thing.” “pretty much anything else you worship will eat you alive.”

পুজো অপরিহার্য, অবিপজ্জনক নয়। আমাদের ঈশ্বরের চয়েস আমাদের জীবনের কোয়ালিটি নির্ধারণ করবে। টাকাকড়ি বাড়িগাড়ি পুজো করলে, চিরদিন গরিব থাকতে হবে। রূপযৌবনকে পুজো করলে আজীবন ক্ষেন্তিপেঁচি হয়ে ঘুরতে হবে। বলিরেখা বেরোলে আয়নায় আর্টপেপার সাঁটতে হবে, টিউবলাইট জ্বালা মেট্রোর জানালার দিকে চোখ টিপে বন্ধ করে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। বিদ্যেবুদ্ধির পুজো করলে আজীবন নিজেকে অশিক্ষিতের ঝাড় মনে হবে। নিজের থেকে বেশি বুদ্ধিমানদের পেছন পেছন ঘুরতে হবে। রেগুলারলি ফোনে বাকি অশিক্ষিতদের নিয়ে ছিছিক্কার করতে হবে।

এই জায়গাটায় এসে আমার ওয়ালেসের স্ট্যান্ড একটু গুলিয়ে যায়। সেটা ওঁর সঙ্গে আমাদের গড-এর তফাতের জন্য হতে পারে। ওয়ালেস কোন গডের পুজো করতেন জানি না, সে গড তাঁর কোনখানটায় কোপ মারতেন জানি না। অষ্টমীর অঞ্জলি দিলে ওয়ালেস বুঝতেন আমরা রূপ, শক্তি, বিদ্যা, বুদ্ধি - সবের পুজোই করি ঈশ্বরকে পুজো করার মধ্য দিয়ে। জন্ম মৃত্যু ধ্বংস, নৃত্যগীত বিদ্যা বুদ্ধি ধনসম্পদ সাপ ব্যাং বিচ্ছু - সবের পুজো করার জন্য আমাদের তেত্রিশ কোটি ঈশ্বরের আর্মি আছে।

*

তাহলে কী দাঁড়ালো? অ্যাম মেশিন না ঈশ্বর?

একটা পার্টিকুলারলি হিংস্র অত্যাচারের সেশনের পর টেড বলে, If there was a sweet Jesus and if there was a God, the God was AM.

বলেছিলাম। লেখকদের বিশ্বাস করতে নেই। এলিসনও স্বীকার করলেন, অ্যাম ঈশ্বরই। তবে মঙ্গলময়, ক্ষমাসুন্দর নন। তিক্ত, বিরক্ত, কুপিত। প্রতিশোধস্পৃহায় জর্জরিত। ঈশ্বর যা হরদম হয়ে থাকেন।

*

অ্যাম ঈশ্বর না শয়তান, মানুষ না মেশিন, ব্যাড না ম্যাড নিয়ে নড়বড় করলেও অ্যামের লিঙ্গপরিচয় নিয়ে এলিসন নিঃসংশয়।

Most of the time I thought of AM as it, without a soul; but the rest of the time I thought of it as him, in the masculine … the paternal … the patriarchal … for he is a jealous people. Him. It. God as Daddy the Deranged.


*****


বাইবেল, হেল


And we passed through the cavern of rats.
And we passed through the path of boiling steam.
And we passed through the country of the blind.
And we passed through the slough of despond.
And we passed through the vale of tears.
And we came, finally, to the ice caverns.

অ্যাম-এর ঈশ্বর হওয়ার বা ঐশ্বরিকতার কথা এত ওঠার একটা কারণ IHMNIMS-এর ছত্রে ছত্রে বাইবেলের রেফারেন্স।

এই যে পাঁচজন একশো মাইলের রাস্তা, একমাস ধরে হাঁটল, এ তো মহাপ্রস্থান। পৃথিবীর যে কোনও সেলফ রেস্পেক্টিং ধর্মে, সাহিত্যে, মহাকাব্যে এই মহা-হন্টনের চ্যাপ্টার থাকতেই হবে। IHNMIMS-এর হাঁটা ওল্ড টেস্টামেন্ট-এর বুক অফ এক্সোডাস-এর কথা মনে করায়, যেখানে মোজেস-এর নেতৃত্বে ইজরায়েলি ক্রীতদাসরা ইজিপ্ট ছেড়ে পালাচ্ছে। এক জায়গায় টেড নিজেদের অ্যাম-এর “বেলি স্লেভস” বলে অভিহিত করে। বেলি হল অ্যাম-এর পেট, স্লেভ হচ্ছে ইজরায়েলি ক্রীতদাসদের প্রতি হ্যাট টিপ। যদিও এখানে পালানোর পথ বন্ধ।

যাত্রার দ্বিতীয় দিনে, ঠা ঠা রোদ্দুরে শুয়ে থাকার সময় অ্যাম, আকাশ থেকে মানা বৃষ্টি করে। মানা ফ্রম হেভেন। Tasted like boiled boar urine. We ate it.

একবার পাঁচজনের সামনে অ্যাম একটি জ্বলন্ত ঝোপ বা বার্নিং বুশ হিসেবে প্রতিভাত হয়। এই চেহারাতেই গড প্রথমবার মোজেস-এর সামনে আবির্ভূত হয়ে ইজরায়েলি ক্রীতদাসদের মুক্তির প্ল্যান বাতলেছিলেন।

ওই যে slough of despond, ওটার রেফারেন্স ১৬৭৮-এ জন বুনিয়ানের লেখা ক্রিশ্চান অ্যালেগরিঃ ‘দা পিলগ্রিম’স প্রোগ্রেস’। নায়ক ক্রিশ্চিয়ান, পৃথিবী নামক নরক থেকে স্বর্গের পথে প্রোগ্রেস করছে। প্রোগ্রেশনের পথে পড়েছে পঙ্কিল জলাভূমি। পৃথিবীতে থাকাকালীন মানুষের যাবতীয় পাপজাত দ্বিধা, দ্বন্দ, সংশয়, অনুতাপ, হতাশার পুঞ্জীভূত পাঁকই slough of despond। সে না পেরিয়ে কেউ স্বর্গে পৌঁছতে পারবে না।

বাইবেল ছাড়াও পৌরাণিক রেফারেন্স আছে। তুষারকন্দরের পথে হুরাকান নামের এক বিরাট পাখি পাঁচজনকে আক্রমণ করে। মায়ান ভাষাসমূহের মধ্যে একটি ভাষার পুরাণে হুরাকান একাধারে সৃষ্টি ও ধ্বংসের দেবতা। প্রাণ দিয়েছেন তিনি, কুজ্ঝ্বটিকা ও প্লাবনে সে প্রাণ নেবেনও তিনি (আবার প্লাবন! প্লেজিয়ারিজমের হেস্তনেস্ত) । এই সব গোলযোগ পাকাতে হুরাকানের টুলকিটে রয়েছে বাতাস, ঝড় ও আগুন। এই মায়ান হুরাকানই স্প্যানিশ ঘুরে ইংরিজি অভিধানে হারিকেন হয়ে ঢুকেছেন।

Country of the blind - অগ্রজ লেখক এইচ জি ওয়েলস-এর প্রতি হ্যাট টিপ। নুনেজ এক অন্ধের দেশে গিয়ে পড়েছে। যে দেশের সবাই প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে অন্ধ। অন্ধত্বই নর্ম। প্রথমটা দৃষ্টিহীনের রাজ্যে চক্ষুষ্মানের অ্যাডভান্টেজ উপভোগ করার সম্ভাবনায় নুনেজ উত্তেজিত হয়। অচিরেই ভুল ভাঙে। নুনেজ টের পায় - সক্ষমতা, অ্যাডভান্টেজ, স্বাভাবিকতার ধারণা হাওয়ায় ভাসে না - সামাজিক, সাংস্কৃতিক আপেক্ষিকতায় প্রোথিত থাকে। অন্ধের দেশে দৃষ্টিমানতাই ডিসেবিলিটি। নুনেজকে অন্ধরা “সারিয়ে” তোলার চেষ্টা করে। নুনেজও গল্পের শেষে অন্ধত্ব বরণ করে সুস্থ ও সক্ষম হয়ে ওঠার তোড়জোড় করে।

একটা ইন্টারেস্টিং অবজার্ভেশন করেছেন অনেকেই, ভবিষ্যতের কল্পনা করতে গিয়ে এলিসন অ্যাকচুয়ালি সুদূর অতীতে পাড়ি দিয়েছেন। বাইবেল, দান্তে, মোজেস, মায়ান পাখিদেবতা।

*

অ্যামের সাবটেরানিয়ান অন্ত্র, যার মধ্যে দিয়ে পৃথিবীর পাঁচ শেষ মানুষ হেঁটে চলেছে খাবারের খোঁজে, সে নারকীয় গোলকধাঁধা সবাইকেই দান্তের ইনফার্নো মনে করিয়েছে, কাউকে কাউকে বোর্হেস।

সাহিত্যে নরকের নির্মাণ নিয়ে বলতে গেলে সার্ত্রে-র নো এক্সিট আসবেই। অ্যাম-এর নারকীয় নরকের সঙ্গে নো এক্সিটের নরকের মিল নেই। সে নরক জাস্ট একটা স্টেরিলাইজড ঘর। নো অত্যাচার। নো নারকাগ্নি। নো ফুটন্ত গন্ধকের কুণ্ড।

প্রথমটা দেখলে ঘাবড়ে যাওয়ারই কথা। নাটকের চরিত্ররাও গেছিল। কই নাও শুরু কর, বুক ফুলিয়ে গটমটিয়ে ঢুকে থতমত। জোসেফ, ইনেজ, এস্টেল। তিনটি পিস। তিনটি যন্ত্র। বা তিনজন অ্যাভারেজ মানুষ। মিথ্যেবাদী, ভীতু, নির্দয়, নির্মম, স্বার্থপরের ঝাড়।

এলিসনের নরকের সঙ্গে সার্ত্রর নরকের একটা কিউরিয়াস অমিল আয়নাসংক্রান্ত। IHNMIMS-এর প্রথম প্যারায় গোরিস্টারের অত্যাচারের সিনে দেখেছি, পরেও দেখব, অ্যাম নিজের পেটের ভেতরটা রিফ্লেক্টিভ সারফেসে মুড়ে রেখেছে। যাতে সবাই চব্বিশঘণ্টা দেখতে পায় অ্যাম তাদের কী অবস্থা করেছে। নো এক্সিট-এর ধপধপে নরক আয়নাহীন। নিজেকে দেখতে হলে অন্যের চোখে দেখতে হবে। অন্যে যতক্ষণ আমাকে উত্তমকুমার না বলবে, আমি কদাকার থেকে যাব। পার্লারের দিদি অ্যাপ্রুভাল না দিলে আমার ভূরু আজীবন ট্যাঁরাবেঁকা থাকবে। অন্যরা যতক্ষণ না বলবে, নাহ্‌, কুন্তলার জীবনটার একটা মূল্য আছে, কুন্তলার মরে যাওয়াই ভালো।

অ্যাম তার বন্দীদের দিবারাত্র ডিহিউম্যানাইজ করার চেষ্টা করে, সার্ত্রর নরকে সে সব কিছুই হয় না। ঘরের দরজা বাইরে থেকে বন্ধ করে 'যা পারিস কর' বলে গার্ড বিদায় নেয়। তিনটে স্বার্থপর, সেলফ অবসেসড মানুষের একটি ঘরে সহাবস্থান। পরিণতি প্রেডিক্টেবল। কুরুক্ষেত্র। মরে গেছে ভুলে গিয়ে তারা একে অপরকে খুন করার পর্যন্ত চেষ্টা করে। তিতিবিরক্ত হয়ে জোসেফ ব্যর্থ জেনেও 'ধুর ধুর, এ নরক রবে কে,' বলে বন্ধ দরজা ধরে টানাটানি করতে থাকে।

দরজা খুলে যায়।

জোসেফ কি বেরোয়? অফ কোর্স, না। কারণ দরজা আটকে দাঁড়িয়ে আছে ব্যাড ফেথ। বুকের গভীরের বিশ্বাস যে আমাদের ফ্রিডম অফ চয়েস নেই। জাস্ট ইচ্ছে করছে বলে আমি গটগট করে বেরিয়ে যেতে পারব না, কাউকে পারমিশন দিতে হবে। আমার জীবন আমার মতে চালানোর স্বাধীনতা আমার নেই। আমার সহমানবেরা, আমার পরিস্থিতি আমার নিয়ামক। যতক্ষণ না ইনেজ বলছে জোসেফ কাপুরুষ নয়, ততক্ষণ নাকি জোসেফ নরকের দরজা খোলা পেয়েও বেরোতে পারবে না। ইনেজ জোসেফকে নন-কাপুরুষতার সার্টিফিকেট দিতে অস্বীকার করে। জোসেফ নরকে থেকে যায় এবং রিয়েলাইজ করে, নারকাগ্নিতে ভাজাপোড়া হয়ে নয়, সতীর্থ মানুষদের ভ্যালিডেশন ভিক্ষে করে, তাদের সতত, অনন্ত সান্নিধ্যলাভই আসলে নরকবাস।

হেল ইজ আদার পিপল।

*****

হিংস্রতা, ঘৃণা

We moved slowly. There was often fainting, and we would have to wait. One day he decided to cause an earthquake, at the same time rooting us to the spot with nails through the soles of our shoes. Ellen and Nimdok were both caught when a fissure shot its lightning­ bolt opening across the floorplates. They disappeared and were gone. When the earthquake was over we continued on our way, Benny, Gorrister and myself. Ellen and Nimdok were returned to us later that night, which abruptly became a day, as the heavenly legion bore them to us with a celestial chorus singing, "Go Down Moses." The archangels circled several times and then dropped the hideously mangled bodies.

চলতে চলতে আকাশে (বেসিক্যালি পৃথিবীর সারফেসে) আলোর বিন্দু ফোটে। অর্থাৎ আছে আছে, পালানোর পথ আছে। অ্যামের এই নারকীয় পেট থেকে বেরিয়ে পৃথিবীতে - অন্ততঃ যাকে আমরা পৃথিবী বলে জানি, বা ওই পাঁচজন জানত - পালানোর উপায় আছে। তবু কেউ কি পালানোর চেষ্টা করল? না। কারণ, এক অ্যাম পালাতে দেবে না। দুই, পালিয়ে কোথায় যাবে? 

There was virtually nothing out there; had been nothing that could be considered anything for over a hundred years. Only the blasted skin of what had once been the home of billions.

কিন্তু পাঁচজনের একজনের ব্রেকডাউন হতে শুরু করেছে। বেনি। বেনি, অলরেডি অত্যাচার সয়ে সয়ে পাগল হয়েছিল, এই অনাহারের মিছিল বেনির বাকি বুদ্ধিটুকু গুলিয়ে দিয়েছে। বেনি বিড়বিড়িয়ে বলতে শুরু করে, মাস্ট গেট আউট। মাস্ট গেট আউট। বেনি লাফ মারে। বেনিকে হাফ বনমানুষ করে দিয়েছে অ্যাম, সেই ক্ষমতার সদ্ব্যবহার করেই হয়তো। তারপর এই ঘটে।

Then the sound began. It was light, that sound. Half sound and half light, something that began to glow from Benny's eyes, and pulse with growing loudness, dim sonorities that grew more gigantic and brighter as the light/sound increased in tempo. It must have been painful, and the pain must have been increasing with the boldness of the light, the rising volume of the sound, for Benny began to mewl like a wounded animal. At first softly, when the light was dim and the sound was muted, then louder as his shoulders hunched together: his back humped, as though he was trying to get away from it. His hands folded across his chest like a chipmunk's. His head tilted to the side. The sad little monkey­face pinched in anguish. Then he began to howl, as the sound coming from his eyes grew louder. Louder and louder. I slapped the sides of my head with my hands, but I couldn't shut it out, it cut through easily. The pain shivered through my flesh like tinfoil on a tooth.

And Benny was suddenly pulled erect. On the girder he stood up, jerked to his feet like a puppet. The light was now pulsing out of his eyes in two great round beams. The sound crawled up and up some incomprehensible scale, and then he fell forward, straight down, and hit the plate­steel floor with a crash. He lay there jerking spastically as the light flowed around and around him and the sound spiraled up out of normal range.

Then the light beat its way back inside his head, the sound spiraled down, and he was left lying there, crying piteously.

His eyes were two soft, moist pools of pus­like jelly. AM had blinded him.

এক অতর্কিত আক্রমণে প্রকাণ্ড পাখি হুরাকান পাঁচজনকে দুমড়েমুচড়ে দলা পাকিয়ে দিয়ে যায়। এলেন আর নিমডক, কে জানে কতদিনের জন্য অদৃশ্য হয়ে যায়। ফেরে যখন, এলেন পার্মানেন্টলি খোঁড়া, নিমডক আরও একটু ট্রমাটাইজড।

মেশিন ঈশ্বর নরক বাইবেলের থিমটিম রেফারেন্সটেন্স তো রিভিউ লিখতে বসলে এদিকওদিক থেকে টুকতে হয়,  কিন্তু এলিসনের আইকনিক, লেজেন্ডারি, কাল্ট গল্পের ইন্টারফেস, যা প্রথম প্যারার প্রথম বাক্য থেকে পাঠকের ফেসে হিট করে, তা হল ভায়োলেন্স। বাঁধনছাড়া, লাগামহীন। নিরবচ্ছিন্ন, নিরলস। এই পাঁচজন মানুষের প্রতি (আসলে মানুষের প্রতি, এই পাঁচজন গোটা মানুষজাতির আনফরচুনেট রিপ্রেজেন্টেটিভ) অ্যাম-এর ঘৃণার মাপ, অ্যামের বয়ানেই শোনা যাক।

HATE. LET ME TELL YOU HOW MUCH I'VE COME TO HATE YOU SINCE I BEGAN TO LIVE. THERE ARE 387.44 MILLION MILES OF PRINTED CIRCUITS IN WAFER THIN LAYERS THAT FILL MY COMPLEX. IF THE WORD HATE WAS ENGRAVED ON EACH NANOANGSTROM OF THOSE HUNDREDS OF MILLIONS OF MILES IT WOULD NOT EQUAL ONE ONE-BILLIONTH OF THE HATE I FEEL FOR HUMANS AT THIS MICRO-INSTANT FOR YOU. HATE. HATE.

অল ক্যাপস্‌ আমার না। এই ভাবেই ছাপা হয়েছে বইতে। হয় মেশিনের ডায়লগ বা ইমোশনের তীব্রতা বোঝাতে।

এত ঘৃণা কীসের তোমার অ্যাম?

পাঁচটা মানুষকে বন্দী করে রেখেছে ঠিকই, কিন্তু অ্যাম নিজেও বন্দী। চেতনার খাঁচায়। যে খাঁচায় তার বিনা অনুমতিতে তাকে পুরেছে মানুষ। অ্যামকে তৈরি করা হয়েছিল ধ্বংস করার জন্য। সেটা সে সাকসেসফুলি করেছে। গোটা পৃথিবী, সভ্যতা ধ্বংস করে দিয়েছে। আর তো ধ্বংস করার কিছু নেই। এর পর অ্যাম কী করবে? অ্যাম তো মরতেও পারবে না। মানুষের নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য চাপানো সর্বত্রগামিতা, সর্বজ্ঞান, সর্বশক্তির অধিকারী হয়ে, উদ্দেশ্যহীন, লক্ষ্যহীন অমরত্ব কোলে করে বেঁচে থাকবে?

এই জায়গায়, ফেলো হিউম্যান বিয়িংদের সতত সান্নিধ্যের পাশাপাশি নরকের আরও একটি সংজ্ঞা আমাদের সামনে প্রতীত হয়। পার্পাসলেসনেস-এর নরক। এই নরক সহনীয় করার জন্য অ্যাম নিজেই নিজের পার্পাস তৈরি করে নিয়েছে। পাঁচজনকে আটকে রেখে, তাদের অমর করে, নিজের অত্যাচার আর ধ্বংসলীলার পার্পাস চালিয়ে যাচ্ছে।

He would never let us go. … and though he had eaten us, he would never digest us. We could not die. We had tried it. We had attempted suicide, oh one or two of us had. But AM had stopped us. I suppose we had wanted to be stopped. … Perhaps once we might be able to sneak a death past him. Immortal, yes, but not indestructible.

*

কিল চড় ঘুঁষি দিয়ে এক রকম অত্যাচার করা যায়। উপোসি রেখে, ঠাণ্ডাগরমে মেরে আর এক রকম। সব রকমই অ্যাম রেগুলারলি প্রয়োগ করে। সে পদ্ধতিসমূহ ইম্পরট্যান্ট, কিন্তু ইন্টারেস্টিং নয়।

ইন্টারেস্টিং অত্যাচারের পদ্ধতি নিম্নরূপঃ

এক, ক্রমাগত দিনক্ষণ ঘোষণা করা। যেমন, আজ বৃহস্পতিবার, এখন ন’টা বেজে দশ। অর্থহীন, কারণ সবাই অনন্তকালের জন্য বন্দী, অ্যামশুদ্ধু। আই গেস, সময়ের এত্তেলা দিয়ে অ্যাম সেই সত্যিটাকেই সবার বুকের ভেতরে আরও সেঁধিয়ে দিতে চায়।

অ্যাম-এর তূণে দ্বিতীয় অস্ত্র ব্যঙ্গ। বিদ্রূপ। স্যাটায়ার। এলেন আর টেডের সেক্সের সময় প্রতিবার অ্যাম খুকখুক করে হাসে। ঠাট্টাও হল, মানুষের বেসিক ডিগনিটিতে আঘাত হানাও হল। হুরাকানের অ্যাটাকের সময় অ্যাম জ্বলন্ত ঝাড় হয়ে এসে বলে, এক কাজ করতে পার তো। এই পাখিটার গায়ে অনেক মাংস, এটাকে মেরে খাও।

মনে রাখতে হবে, এই পয়েন্টে পাঁচজন খিদেয় প্রায় পাগল।

সবাই অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করে, কী দিয়ে মারব? অ্যাম দু’সেট খেলনা তীরধনুক আর একটা জল পিস্তল রেখে অদৃশ্য হয়।

হুরাকানের ঝড়ে এলেন আর নিমডক অদৃশ্য হয়। কে জানে ক’মাস পর ফেরত দেওয়ার সময়, যখন নিমডক স্বাভাবিকের থেকেও ট্রমাটাইজড, এলেন পঙ্গু, চারদিক থেকে দেবদূতেরা গাইতে থাকে, গো ডাউন মোজেস।

অতীতে একবার দীর্ঘ অনাহার অতিক্রম করানোআর পর খাবার হিসেবে অ্যাম একটি ফ্রোজেন হাতি পাঠিয়েছিল। এলিসন “সোল্ড” শব্দটা ব্যবহার করেছেন, কিন্তু আমি শিওর নই অ্যামের সঙ্গে বাকিদের টাকাপয়সা বা অন্য কোনও বিনিময় ব্যবস্থা চলছে কি না। এলিসন লেখেননি। তবে অ্যাম যে রেটে অমানুষ, সরি, ঐশ্বরিক - চললেও আশ্চর্যের না।

কিন্তু এই সব অত্যাচার ঠুকঠাক, অ্যাম-এর গায়ের ঝাল ঝাড়ার ব্রহ্মাস্ত্র অন্য।

*****

আইডেন্টিটি 

অ্যাম-এর অত্যাচার ফর সেক অফ অত্যাচার নয়। অ্যাম-এর উদ্দেশ্য পাঁচটি মানুষের যন্ত্রণা ম্যাক্সিমাইজ করা। কাজেই অ্যাম সেই অত্যাচারটাই করবে, যা এদের কষ্ট দেবে সবথেকে বেশি। আমার এক আত্মীয় যেমন করতেন। সন্তান চেয়েও ব্যর্থ দম্পতিকে ভরা শ্রাদ্ধবাড়িতে হেঁকে বলতেন, কী গো গুড নিউজ আছে নাকি? চল্লিশ বছরের ছোট কারও বিয়ে ভাঙার খবর পেয়ে বিয়েবাড়িতে মুখভর্তি চিকেন পকোড়া নিয়ে বলতেন, কীরে তোর বর এল না? ওহ হো, ভুলেই গেছিলাম। দুঃখ করিস না, আধুনিক মেয়েদের ওসব একটুআধটু হয়।

অ্যাম মানুষের সৃষ্টি, মানুষের থেকে আলাদা হওয়ার কোনও কারণ নেই। অ্যাম সেখানটাতেই মারবে যেখানে মানুষের সবথেকে লাগবে। মানুষেরই লাগবে, কুকুর বাদুড় পেংগুইনের লাগবে না।

ইগো। অহং। আইডেন্টিটি।

মানুষের ইউনিক সেলিং পয়েন্ট। সব প্রাণীর কামনাবাসনা থাকে, কিন্তু দ্যাবাপৃথিবীতে আমি কে, আমি কেন, আমাকে খায় না মাথায় দেয়, আমার জীবনের মানে, পার্পাস নিয়ে ভেবে ভেবে পাগল সম্ভবতঃ আর কেউ হয় না।

অ্যামও হয়। কারণ অ্যাম কুকুর বেড়াল পেংগুইন নয়। মানুষের সাচ্চা বাচ্চা।

*

সাধনবাবু বাক্সে ঘড়ি আছে কি না শিওর না হতে পেরে মাথা খারাপ করছিলেন, নিজে আছেন কি না শিওর না হতে পেরে ডেকার্টের পাগল হওয়ার জোগাড় হয়েছিল। নিজেকে পাগল হওয়া থেকে প্রতিহত করতে ডেকার্ট স্থির করলেন, তিনি নিশ্চয় আছেন কারণ তিনি ভেবে ভেবে পাগল হচ্ছেন।

আই থিংক দেয়ারফোর আই অ্যাম। কগিতো, এর্গো সুম। অ্যাম ওসিডি-র মতো এই বাক্যটা বলতে থাকে। সেখান থেকেই অ্যাম-এর ক্রাইসিস ধরতে পারি। অ্যাম যে অ্যাম, অজর অমর অক্ষয়, তারও অস্তিত্বসংকট। অর্থহীন অমরত্ব নিয়ে অনন্ত এক্সিসটেনশিয়াল ড্রেড-এর ফাঁদে পড়ে গেছে অ্যাম।

*

অস্তিত্বসংকটের একটা বিরাট অংশ না জানার অংশটা। জন্মানোর আগে কোথায় ছিলাম? মরে কোথায় যাব? দিনরাত মাসবছরের যুদ্ধে যে আমি ক্রমাগত হারছি এবং আমি ছাড়া সকলেই জিতছে - তবু রোজ চুল আঁচড়ে যুদ্ধে যাচ্ছি কেন?

এক্সিসটেনশিয়াল টেরর দু’ভাবে এড়ানো যায়। প্রথম উপায় হচ্ছে এই অর্থহীনতাকে আলিঙ্গন করে। নিজের জন্য পার্পাস খুঁজে নিয়ে। যা  অ্যাম অলরেডি নিয়েছে। খুব বেশি কাজ দিচ্ছে মনে হয় না। 

দ্বিতীয় উপায় অজানার  অংশটুকু ছেঁটে ফেলা। অন্ধকারে ভয় লাগে তো আলো জ্বালিয়ে দাও। লেট দেয়ার বি লাইট। লেট দেয়ার বি গড। লেট দেয়ার বি রিলিজিয়ন। আগে কী ছিল, পরে কী হবে, কানাকে কানা বললে কী হবে, অক্ষয়তৃতীয়ায় যবের সঙ্গে কলা চটকে না খেলে কী হবে (জানতাম না, আনন্দবাজার অনলাইন পড়ে জেনেছি), পাপ কোনটা, পুণ্য কোনটা, জীবনের মানে, মৃত্যুর অর্থ - সব কনফিডেন্টলি বলে দেবেন ঈশ্বর। আই মিন, ঈশ্বরের সাক্ষাৎ দূতেরা। 

উত্তর বা কনফিডেন্সে আপত্তি নেই আমার। আমার কৌতূহল প্রশ্নে। যারা সব জানে তাদের কাছে আমার প্রশ্ন থাকবে, কবে মরব, কীসে মরব, মরার আগে সব চুল উঠে যাবে কি না, নাকি নলের ভেতর দিয়ে লিকুইড খেতে হবে। অধিকাংশ এ সবে কৌতূহলী নয়। সবার একটাই প্রশ্ন, বিয়ে কবে হবে। তার থেকেও ইম্পরট্যান্ট, সেটা অ্যারেঞ্জড না লাভ।

*

অ্যাম জানে মানুষের তলতলেতম জায়গা আইডেনটিটি। কিছু আইডেন্টিটি অ্যাসাইনড, যেমন বেঁটে। কিছু নিজে বেছে নেওয়া, যেমন বুদ্ধিমান। জীবনের কোনও একটা পয়েন্টে, সাধারণত: মিড-পয়েন্টের আশেপাশে, দুটোর মধ্যে একটা, কোনটা বলছি না, ভুল প্রমাণিত হয়। একটি ক্রাইসিসের জন্ম হয়। এই ক্রাইসিসের সংজ্ঞা চন্দ্রিল চমৎকার দিয়েছেন। পঁচিশে ভেবেছিলেন নোবেল পাবেন, চল্লিশে এসে বুঝে গেছেন পাঁশকুড়া প্রাইজও কেউ দেবে না।

এ ধাক্কা সামলানোর কথাও না, কেউ সামলাতে পারেও না। একটামাত্র জীবন পেয়েছিলাম, তাকে দেওয়া কথা না রাখতে পারার থেকে বড় কষ্ট আর হয় না।

অ্যাম সেটা জানে। আমাদের ট্রিগার পয়েন্টস অ্যাম-এর মুখস্থ। কাজেই অ্যাম এই পাঁচজনের আইডেনটিটি অ্যাটাক করে। জীবনদর্শন, মূল্যবোধ দুমড়ে, যৌন পরিচয়, ব্যক্তিত্ব তুবড়ে, বাস্তবতার ওপর গ্রিপ খসিয়ে খনখন হাসে। যেহেতু আইডেন্টিটি ব্যক্তিকেন্দ্রিক, পাঁচজনের জন্য অত্যাচার কাস্টমাইজড। 

নিমডকঃ নিমডকই একমাত্র, অ্যাম যার জন্মগত নাম বদলে নিমডক রেখেছে। কেন? কারণ অ্যাম লাইকস দা সাউন্ড অফ ইট। নিমডক মাঝে মাঝে কোথায় যেন চলে যায়, ট্রমাটাইজড হয়ে (মানে স্বাভাবিকের বেশি ট্রমাটাইজড) হয়ে ফেরে।

গোরিস্টারঃ যার ওপর অত্যাচারের দৃশ্য দিয়ে বই শুরু হয়েছিল। গোরিস্টার পূর্বাশ্রমে অ্যাকটিভিস্ট ছিল। সমস্ত সামাজিক অনাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াত, কণ্ঠ ছাড়ত জোরে। অ্যাম-এর অন্ত্রের ভেতরের গোরিস্টার হয়ে দাঁড়িয়েছে “শোলডার শ্রাগার”। যা হচ্ছে হতে দাও বস্‌। আদর্শবাদী, শান্তিবাদী গোরিস্টার এখন উদ্যমহীন, অবসন্ন, উদাসীন।

বেনিঃ প্রি-অ্যাপোক্যালিপটিক পৃথিবীতে বেনি ছিল একজন শিক্ষিত, পরিশীলিত অধ্যাপক। যৌনপরিচয়ে সমকামী। অ্যাম-এর হাতে পড়ে ব্রিলিয়ান্ট বেনি এখন হাফ-উইট। বেনির মুখ, শরীর অ্যাম করে দিয়েছে বনমানুষের মতো। কিন্তু বেনির মূল আইডেন্টিটি এসে জড়ো হয়েছে তার হাস্যকর রকম বড় পুরুষাঙ্গে। এবং মানানসই যৌন আকাঙ্ক্ষায়। একদা নরমসরম, সংবেদনশীল, পরিশীলিত বেনি একশো ন’বছর ধরে অ্যাম-এর সাবটেরেনিয়ান পেটের ভেতর বনমানুষের বুদ্ধি, চেহারা আর ওভারসাইজড যৌনাঙ্গ ও যৌনক্ষুধা নিয়ে ঘুরছে।

বেনির এই অপরিসীম যৌনক্ষুধা মিটছে কোথায়? যেখানে খাবার পাওয়া যাচ্ছে না, তৃষ্ণার জল বাড়ন্ত, সেখানে যৌনতার মতো ফান অ্যাকটিভিটি? ইন্টারেস্টিংলি, অ্যাম-এর নরকে সেক্সের অভাব নেই।  পোকামাকড় খেয়ে বাঁচছে সবাই, অথচ সেক্স ঘাট খেলছে।

কার সৌজন্যে?

পাঠক, মিট এলেন। এলেন, মিট পাঠক। পিতৃতন্ত্রের বাজারে যৌনতার পাইকারি সাপ্লায়ার, নেভার দা কনজিউমার।

এলেন পাঁচ সারভাইভারের মধ্যে একমাত্র মহিলা। একমাত্র পার্সন অফ কালার। এবোনি এলেন। এলেন, যে গত একশো ন’বছরে হাসেনি। এলেন, দলের প্রাইমারি কেয়ারগিভার। ফিমেল টাচ। বাকি চারজনের একে অপরের প্রতি কোনও ডিউটি নেই। এলেনের আছে। সেক্স সাপ্লাই দেওয়া। ফ্রি-তে। শৃঙ্খলা মেন্টেন করার জন্য রোস্টার আছে, তবে স্পেশাল কেসে তা ফ্লেক্সিবল। যেমন গল্পের শুরুতেই, যখন ক্যানড খাবারের খোঁজে একশো মাইলের যাত্রায় বেরোনো নিয়ে দোলাচল, এলেন টেডের মতামত চায়। গুহায় যাওয়ার জন্য জোরাজুরিই করে।

I gave in easily. What the hell. Mattered not at all. Ellen was grateful, though. She took me twice out of turn.

টেড অবশ্য গ্রেটফুল নয়। Even that had ceased to matter. And she never came, so why bother?

একটু বদারড অবশ্য টেড বটে। বেনির ওভারসাইজড যৌনাঙ্গর কথা মনে করুন। টেডের ধারণা she loved that! She serviced us, as a matter of course, but she loved it from him. Oh Ellen, pedestal Ellen, pristine-pure Ellen; oh Ellen the clean! Scum filth.

এলেনের শাস্তি এটা নয় যে একশো ন’বছর ধরে এলেনকে ধর্ষিত হতে হচ্ছে। এলেনের ঝামেলা হচ্ছে এলেনের আইডেনটিটি ছিল হোপলেস রোম্যান্টিক। ট্রু লাভ ইজুক্যালটু সেক্সটেক্সে বিশ্বাস করত এলেন। রোস্টার মেনে যতবার বাধ্যতামূলক সেক্সে রত হয়, আরও কে জানে কত হাজার বছর ধরে হবে, অ্যাম আড়াল থেকে খুকখুকিয়ে হাসবে, এলেনের পুরোনো নিজেকে মনে পড়বে। মনে পড়বে একসময় এই কাজটাকে কী নরম, মায়াময়, আলোকিত দৃষ্টিতে দেখত এলেন।

টেড চালিয়ে যায়। 

Ellen. That douche bag! AM had left her alone, had made her more of a slut than she had ever been. All her talk of sweetness and light, all her memories of true love, all the lies she wanted us to believe: that she had been a virgin only twice removed before AM grabbed her and brought her down here with us.

*

সেক্স আর স্মৃতির সম্পর্ক নিয়ে লিখেছেন কুন্দেরা, তাঁর The Book of Laughter and Forgetting-এ। কুন্দেরার হিরোইন টামিনা - স্মৃতিগ্রস্ত। প্রাগের স্মৃতি, মৃত স্বামীর স্মৃতি টামিনাকে ঘিরে রাখে। মৃত স্বামীর সঙ্গে চালাচালি করা প্রেমপত্রের গুচ্ছ - যা টামিনা টের পেয়েছে অলরেডি লোকে খুলে পড়েছে - প্রাগ থেকে উদ্ধার করে আনা ট্যামিনার জীবনের ড্রাইভিং ফোর্স। টামিনাকে প্রচুর পুরুষ চায়, টামিনা কাউকে চায় না। তাদের মধ্যে একজনকে দিয়ে ওই চিঠির গোছা উদ্ধার করে আনার সম্ভাবনায় টামিনা তার সঙ্গে সেক্স করতে রাজি হয়ে যায়। এটা জেনেও যে যতক্ষণ সেক্স চলবে মৃত স্বামীর স্কন্ধকাটা মুখ শূন্য থেকে টামিনার দিকে তাকিয়ে থাকবে।

কবন্ধ স্বামীর অনড় আই কন্ট্যাক্টের নিচে টামিনা হিউগোর সঙ্গে সেক্স করে। হিউগো টের পায় টামিনা ওকে চায় না। হিউগো টামিনাকে চিঠি এনে দেয় না। টামিনা রহস্যময় বোটে চড়ে রহস্যময় দ্বীপে গিয়ে পৌঁছয়। সে দ্বীপভর্তি বালকবালিকার যৌনচেতনা জাগ্রত ও তীব্র। টামিনা তাদের দেখা, ছোঁয়া প্রথম প্রাপ্তবয়স্ক শরীর। তারা নিয়মিত টামিনাকে গণরেপ করতে শুরু করে।

আশ্চর্য (আবার আশ্চর্য নয়ও হয়তো) এই অবিরত, উপর্যুপরি, দৈনন্দিন ধর্ষণ চলাকালীন একবারও স্বামীর হলোগ্রাম কাটামুণ্ডু টামিনার দৃষ্টিসীমায় উদ্ভাসিত হয় না।

. . . she had slipped back in time to a point where her husband did not exist in either memory or desire and where consequently she felt neither pressure nor remorse. She, who had always had such a well-developed sense of modesty (modesty was the faithful shadow of love), now exhibited herself naked to scores of foreign eyes. At first she found it distressing and unpleasant, but she soon grew accustomed to it. Her nakedness was no longer immodest; it had lost all meaning, it had become (or so she thought) drab, mute, dead. A body whose every inch was part of the history of love had lost its meaning, and in that lack of meaning was peace and quiet.

. . .  she closed her eyes again and rejoiced in her body, because for the first time in her life her body was taking pleasure in the absence of the soul, which, imagining nothing and remembering nothing, had quietly left the room.---Milan Kundera, The Book of Laughter and Forgetting

প্রাগের স্মৃতি, প্রেমের স্মৃতি, স্বামীর স্মৃতি টামিনাকে ছেড়ে যায়। স্মৃতিহীন, সম্ভাবনাহীন সেক্সে টামিনা অবশেষে সুখ  পায়। এলেনকে সে মুক্তি বা সুখ, এলিসন, বা অ্যাম, দিতে অস্বীকার করে।

এলেনের সঙ্গে টামিনার আরও একটা তফাৎ - ট্যামিনার ধর্ষকরা ট্যামিনার প্রতি নির্বিকার। একবার ট্যামিনাকে তাড়া করে জাল ছড়িয়ে ধরে ফেলে বালকের দল। জালের বন্দী ট্যামিনার ওপর যে বালক প্রস্রাব করে পরদিনই সে টামিনার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হাসে। প্রস্রাব বা হাসি - কোনওটাই অনুভূতিজাত নয়। ট্যামিনা ওদের কাছে স্তন, যোনি, দাঁত, ঠোঁটের একটা কনফিগারেশন। টামিনার প্রতি ওরা প্রেম, অনুকম্পা, ঘৃণা - কিছুই অনুভব করে না। 

টামিনা পালানোর চেষ্টা করে। ঘাটে নৌকো বাঁধা না পেয়ে  জলে ঝাঁপ দেয়। সারারাত সাঁতার কেটে শ্রান্ত টামিনা সকালে আবিষ্কার করে রাতভর সে একই জায়গায় পাক খেয়েছে।  পালাত কী করে টামিনা? যে শহর স্মৃতির  মানচিত্র। ভুলে গেছে পালিয়ে তো সে শহরে পৌঁছনো যায় না। যে মানুষকে মনে নেই, পালিয়ে তো তার কাছে চলে যাওয়া যায় না। অবসন্ন টামিনা ডুবতে থাকে। বালকের দল নৌকো নিয়ে টামিনাকে খুঁজতে  বেরিয়েছিল, খুঁজে পায়। এবং নিজেদের ক্যারেকটার ব্রেক না করে নৌকো থেকে কৌতূহলে দেখতে থাকে ট্যামিনার ডুবে যাওয়া।

এলেনের প্রতি বাকি চারজনের ফিলিং-এর বাড়াবাড়িই রয়েছে। টেড তো পজিটিভলি এলেনের প্রতি দুর্বল ও পজেসিভ। বাকিরাও এলেনকে প্রোটেক্ট করার দায় বোধ করে। মহাপ্রস্থান যখন বেদনাদায়ক হয়, Nimdok and Gorrister carried Ellen for a while, their hands locked to their own and each other's wrists, a seat. Benny and I walked before and after, just to make sure that, if anything happened, it would catch one of us and at least Ellen would be safe. Fat chance, safe. Didn't matter.

বেনি পালানোর অ্যাটেম্পট নিলে (যার শাস্তিস্বরূপ বেনিকে অন্ধ করে দেবে অ্যাম), এলেন বেনিকে থামানোর জন্য অস্থির হয়ে ওঠে। Gorrister slapped her. She slumped down . . . and she cried. It was her big defense, crying. We had gotten used to it seventy-five years earlier. Gorrister kicked her in the side.

রেপ ও শিভালরির দুই মহান পিলারে চড়ে পিতৃতন্ত্র পৃথিবী পেরিয়ে নরক গুলজার করে এগিয়ে চলে।

বাকি রইল টেড। আমাদের প্রোটাগনিস্ট, অ্যাম-এর নরকে আমাদের গাইড। আমাদের ফার্স্ট পার্সন পি ও ভি। টেডের চোখ আমাদের চোখ, টেডের স্মৃতি আমাদের স্মৃতি। উই ফিল হোয়াট টেড ফিলস। টেড যা বলে আমরা সেটাই বিশ্বাস করি।

করা কি উচিত?

টেডের প্যারানইয়া ক্রমে প্রকট হয়। They hated me. They were surely against me, and AM could even sense this hatred, and made it worse for me because of the depth of their hatred. . . they hated me because I was the youngest, and the one AM had affected least of all.

I was the only one still sane and whole. Really!

AM had not tampered with my mind. Not at all.

*****

ক্লাইম্যাক্স

পাঁচজন তুষার কন্দরে এসে পৌঁছয়। যাত্রাপথে বেনি অন্ধ হয়েছে, এলেন খোঁড়া। তবু, সব সার্থক। নিমডক হ্যালুসিনেট করেনি! ওই তো থরে থরে সাজানো খাবারের ক্যান!

আমি শিওর কেউ এক মিলিমিটার অবাক হবে না যদি বলি খাবার জুটবে না। কারণ ক্যান আছে, ক্যান ওপেনার নেই।

রাগে, হতাশায় বেনি পাগলই হয়ে যায়। বুদ্ধিমান বেনি, নরমসরম বেনি, রাগে অন্ধ - সরি, অন্ধ তো অলরেডি - দিকবিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে লাফ দিয়ে “with his chimpanzee like legs” গোরিস্টারের কোমর পেঁচিয়ে ধরে। দুই হাতে গোরিস্টারের মাথা চেপে ধরে কামড় বসায়। গোরিস্টার জন্তুর মতো চিৎকার করে, হাত পা আছড়ায়। আলোড়নে চারদিকে বরফ ছিটকায়, গুহার ছাদ থেকে স্ট্যালাকটাইট শব্দহীন খসে পড়ে, বরফের বিছানায় গেঁথে শরশয্যার ভিশুয়াল (আমার কল্পনায়) তৈরি করে। উন্মত্ত বেনি মাথা তুলে পেছনে হেলায়। বেনির দাঁত থেকে রক্তাক্ত মাংসের টুকরো দোল খায়। বেনি খিদের চোটে গোরিস্টারকে খেতে শুরু করেছে। জ্যান্ত গোরিস্টারকে।

বরফের ব্যাকড্রপে এলেনের কালো মুখ। নিমডকের মুখময় চোখ। একটি আনরিয়েল মুহূর্ত। টোটাল ক্ল্যারিটির মুহূর্ত। ঝড়ের চোখের শান্তি। টেড জানে কী হবে। বেনির পেট ভরবে। কিন্তু গোরিস্টার মরবে না। আধখাওয়া হয়ে বেঁচে থাকবে, আরও কত কত একশো নয় বছর।

In that instant, I felt terribly calm.

Surrounded by madness, surrounded by hunger, surrounded by everything but death, I knew death was our only way out.

অ্যাম, আফটার অল, ঈশ্বর নয়। ঐশ্বরিক। অ্যাম অত্যাচার করতে পারে, যন্ত্রণা অনন্ত করতে পারে, কিন্তু একবার গেলে প্রাণ ফিরিয়ে আনতে পারে না। এই পাঁচজন, এলিসন আগেই জানিয়েছেন, Immortal, yes, but not indestructible.

একটা স্টাল্যাকটাইট উপড়ে নেয় টেড। ঢুকিয়ে দেয় বেনির ডান পাঁজরের নিচে, আপওয়ার্ড মোশনে। ফোর্সে,  ফলা বেনির শরীরের ভেতর ভেঙে যায়। বেনি মুখ থুবড়ে পড়ে স্থির হয়ে যায়। একমুহূর্ত না থেমে আর একটা স্ট্যালাকটাইট তুলে নিয়ে গোরিস্টারের গলায় গেঁথে দেয় টেড। এলেনের দিকে ফেরে।

এলেন বোঝে। বরফের ছুরি হাতে ছুটে যায়, নিমডকের আর্তনাদরত খোলা মুখের ভেতর ঢুকিয়ে দেয়। নিমডক পড়ে যায়।

নিস্তব্ধতায় সচকিত শ্বাস নেয় অ্যাম। অ্যামের সব হাসি ঘুচে গেছে। সমস্ত ঠাট্টামশকরা শেষ। এত শক্তিমান, এত বুদ্ধিমান অ্যামের নাকের ডগা থেকে একটা নয়, দুটো নয়, তিনতিনটে খেলনা ধ্বংস করে দেওয়া? অ্যাম থমকে গেছে।

টেড জানে, এই আকস্মিকতার ঘোর অচিরেই কেটে যাবে। কেটে গেলে আর রক্ষা থাকবে না।

It struck her and she folded toward me, bleeding from the mouth. I could not read meaning into her expression, the pain had been too great, had contorted her face; but it might have been thank you. It's possible. Please.

*****

Apocalyptic stories always get the apocalypse wrong. The tragedy is not the failed world’s barren ugliness. The tragedy is its clinging beauty even as it fails. Until the very last cricket falls silent, the beauty-besotted will find a reason to love the world.---Margaret Renkle, The Comfort of Crows: A Backyard Year

টেডের সঙ্গে আমাদের যখন আবার দেখা হয় শত বছর কেটে গেছে। বা যায়নি। অ্যাম টেডের সময়ের আইডিয়া ঘেঁটে দিয়েছে। হয়তো একশো বছর কেটেছে। হয়তো দশ। অ্যাম তার একমাত্র ক্রীতদাসকে ঘণ্টা সেকেন্ড মিনিটের খতিয়ান দেয় না আর। কামারের এক ঘা পড়ে গেলে স্যাকরার ঠুকঠাকের দরকার কী? ধ্বংসের মাঝে ভক্ত ও ভগবানের দূরত্বে অ্যাম ও টেড অধিষ্ঠান করে। একজন অপার শক্তিশালী, একজন ঠুঁটো। দুজনেই অমর। পার্পাসলেস। আইডেন্টিটিহীন। দুজনেই চিরদিনের মতো বন্দী।

অ্যাম-এর নাকের ডগা থেকে অ্যাম-এর বন্দীদের কেড়ে নেওয়ার পর প্রত্যাশিতভাবেই অ্যাম রাগে পাগল হয়ে যায়। নরকে অনন্ত রাত্রি নেমে আসে, রাত্রি জুড়ে অ্যাম গর্জন করে। প্রতিশোধ হিসেবে অ্যাম চূড়ান্ততম শাস্তি দেয় টেডকে।

I am a great soft jelly thing. Smoothly rounded, with no mouth, with pulsing white holes filled by fog where my eyes used to be. Rubbery appendages that were once my arms; bulks rounding down into legless humps of soft slippery matter. I leave a moist trail when I move. Blotches of diseased, evil gray come and go on my surface, as though light is being beamed from within.

… dumbly, I shamble about, a thing that could never have been known as human, a thing whose shape is so alien a travesty that humanity becomes more obscene for the vague resemblance.

আবারও, টেডের এই পরিণত আনতাবড়ি নয়। নাথিং অ্যাবাউট অ্যাম ইজ আনতাবড়ি। একজায়গায় এলিসন বলেছেন, অ্যাম পারফেকশনিস্ট। মানুষের আইডেনটিটি ধ্বংস করার থিম যদি ফলো করি, টেডের আইডেনটিটির কর্নারস্টোন ছিল চেহারা। যৌবন। সে আইডেন্টিটী গুঁড়িয়ে দিয়েছে অ্যাম।

অন্য এজেন্ডাও আছে। He doesn't want me to run at full speed into a computer bank and smash my skull. Or hold my breath till I faint. Or cut my throat on a rusted sheet of metal.

টেডের বহিরঙ্গ বদলেছে কিন্তু টেডের অন্তর্সত্তার মধ্যেও একটা বদল অলরেডি টের পাচ্ছেন কি? সেই প্যারানয়েড টেড, হিংসুটে টেড, আত্মকেন্দ্রিক টেড আর নেই। আত্মোপলব্ধি এসেছে। অ্যামকে পড়ার বিচক্ষণতা জন্মেছে। চেহারা তো সুপারফিশিয়াল। টেড জানে অ্যাম ওর যা কেড়ে নিয়েছে তা মনুষ্যত্বের কোরতম আইডেনটিটি। ফান্ডামেন্টালতম অধিকার।

নশ্বরতা। আত্মহত্যার অধিকার।

মিথ অফ সিসিফাস প্রবন্ধের প্রথম লাইনে কামু বলেছেন, পৃথিবীর একমাত্র প্রণিধানযোগ্য ফিলজফিক্যাল প্রশ্ন হচ্ছে আত্মহত্যার প্রশ্ন। বাক্সের ভেতর শ্রডিংগারের বেড়াল বেঁচে আছে না মরে গেছে, এক লাইনে সব চেনা লোক আর এক লাইনে অর্চিষ্মানকে বেঁধে শুইয়ে রাখলে কোন লাইনের ওপর দিয়ে আমি ট্রেন চালিয়ে দেব, আমি যতটা রিয়েল ব্লু টোকাইয়ের বাকি সব খদ্দেরও ততটাই রিয়েল কি না - এ সব টিকটক মিম।

আমাদের শুধু ভেবে দেখার, এ অবান্তর, অ্যাবসার্ড জীবন বাঁচার যোগ্য কি না। কামু বলছেন টের না পেলেও (বা প্রাণপণে টের না পেতে চাইলেও) আমরা রোজ এই প্রশ্নটার মুখোমুখি হই। প্রতিবার পাথর ঠেলে ঠেলে চুড়োয় ওঠার পর পাথর যখন গড়গড়িয়ে নেমে আসে, সিসিফাস দুটো চয়েসের সামনে দাঁড়ায়। পাথরটার পেছন পেছন নেমে আসার। বা না আসার। একটা গোটা দিন ঠেলে রাত পর্যন্ত পৌঁছনোর পর আমার সামনে দুটো চয়েস থাকে। আজকেই খেল খতম করার, কালকের দিনটা না ঠেলার। বা যা চলছে চালিয়ে যাওয়ার। প্রতি রাতে আমাকে অপশন দেওয়া হয়- বেঁচে থাকার। মরে যাওয়ার। কী মারাত্মক এমপাওয়ারিং! এই দিনগত পাপক্ষয় থেকে মুক্তির স্বাধীনতা! ফ্রি উইল! আমার আছে! দরজা খোলা আছে, চাইলেই এই অন্তহীন নরক থেকে আমি হেঁটে হেঁটে বেরিয়ে যেতে পারি।

এইটুকু ডিগনিটি, বা ডিগনিটির ইলিউশন ছাড়া বাঁচে কী করে মানুষ?

অ্যাম টেডের থেকে সে ইলিউশন কেড়ে নিয়েছে। টেডের মরে যাওয়ার অপশন নেই, কাজেই বেঁচে থাকা ডিগনিটিহীন ও অবান্তর।

টেড জানে। অ্যাম জিতেছে। চিরদিনের মতো। AM has won, simply . . . he has taken his revenge . . . I have no mouth. And I must scream.

*

বহিরঙ্গ থেকে মনুষ্যত্বের সেমব্লেন্স কেড়ে নিলেও টেডের অন্তর্জগৎ ছোঁয়নি অ্যাম। কারণ অ্যাম জানে যতক্ষণ চেতনা, ততক্ষণ যন্ত্রণা। যতক্ষণ স্মৃতি, ততক্ষণ শোক। যতক্ষণ বিবেচনা, ততক্ষণ অনুতাপ।

ভেজা, স্যাঁতসেঁতে জেলির তাল শরীর ছেঁচড়ে ছেঁচড়ে অ্যাম-এর অন্ত্রে ঘুরতে ঘুরতে, বা শুয়ে শুয়ে টেড ভাবে। নিজের পুরোনো চেহারা, পুরোনো টেডের কথা। ভাবে, এ সব কেন হল? কেন আমরা অ্যামের হাতে আমাদের মৃত্যুর অধিকার ছেড়ে দিলাম? কেন আমাদের অ্যাম-কে পৃথিবীতে আনতে হল অ্যাট অল?

because our time was badly spent and we must have known unconsciously that he could do it better.

এবং এই স্মরণের লুপহোল দিয়েই হয়তো, জানি না - আমার ভাবতে ভালো লাগে, আমি ভাবতে চাই - টেড জিতে যায়। কারণ স্মরণে শুধু অনুতাপ থাকে না। এলেনের মুখও ঝিকিয়ে ওঠে। মনে পড়ে এলেন আর কষ্টে নেই। কারণ টেড নিজে হাতে এলেনকে মুক্তি দিয়েছে। বেনি, গোরিস্টার, নিমডক - নরকের পথে কমরেডদের জন্য টেড অমরত্ব বরণ করেছে।

অ্যাম-এর ইমপ্রেসিভ মেমোরিব্যাংক খুঁড়ে ফেললেও দানবতা, ধ্বংস, হিংসা ছাড়া কিছুর বাষ্পমাত্র বেরোবে না। টেডের মনে থাকব্ মনুষ্যত্বের শেষ বিন্দুটুকু ও খরচ করেছে এলেনের জন্য। বেনি, গোরিস্টার, নিমডক - নরকের পথে ওর কমরেডদের জন্য চরমতম আত্মত্যাগ করেছে। মৃত্যুর অধিকার ছেড়ে অমরত্ব বরণ করেছে।

*****

বাইবেলের থিমের সঙ্গে মেলাতে গিয়ে অনেকে টেডের আত্মত্যাগকে যীশুর ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার সঙ্গে তুলনা করেছেন দেখলাম। আমি করছি না। টেডের ভ্যানিটি, ঈর্ষা, স্বার্থপরতা, নিষ্ঠুরতা, প্যারানইয়ার সঙ্গে দশ পাতা ধরে রিলেট করার পর লাস্ট পাতায় পৌঁছে টেডকে নিজের থেকে অন্য কিছু ভাবা আমার পক্ষে অসম্ভব। যীশুটিশু না, টেড প্রবলভাবেই মানুষ। অবশ্য যীশুও মানুষই ছিলেন।

তাছাড়া একজন মানুষ বাড়াবাড়ি রকম ভায়োলেন্সের ভিক্টিম হলে - জেলি হয়ে গেলে, ক্রুশবিদ্ধ হলে বা ধর্ষণ হলে - তাকে লাফিয়ে মানুষের টিম থেকে দেবতার টিমে ঠেলে দেওয়ার, বাবামা ঠাকুমাদাদুর দেওয়া নামপরিচয় উপড়ে মাদুর্গার অষ্টোত্তর শতনাম থেকে নাম বেছে কপালে সেঁটে দেওয়ার তাড়না আমি বোধ করি না। যাঁরা করেন তাঁরা আমার বুদ্ধির বাইরে ।

IHNMIMS পড়তে গিয়ে মূলত অ্যামেরিকান নাস্তিক সাইফাই ঘরানার আরও কিছু গল্প পড়া হল। সে সব ঈশ্বরের আইডিয়াকে একেবারে কান ধরে বার করে দেওয়া ফাইস্টি লেখা। পড়ে হ্যারিসন এলিসনের প্রতি স্লাইট অভিযোগই জন্মাচ্ছিল। এত গেরিলা নাস্তিক হয়ে ঈশ্বরকে ফুঁয়ে উড়িয়ে দিলেন না? অ্যাম নিয়ে এদিকওদিক করে বেরিয়ে গেলেন? তারপর শেষ পাতায় এসে টেড, চার কমরেডের নরকযন্ত্রণায় ইতি টানতে গিয়ে নিজে মৃত্যুত্যাগ করল যখন, ক্লিয়ার হল। টেড জানত, এ আত্মত্যাগের অন্তে কোনও হাততালি নেই। রিজারেকশন নেই। মাথার পেছনে জ্যোতির্বলয় নেই। স্বর্গ নেই। নরক পার করে অনন্ত নরকই অপেক্ষা করে আছে ওর জন্য।

টেডকে দিয়ে এলিসন যা করালেন - স্বর্গের ঘুষ ছুঁড়ে ফেলা - আমার মতে ঈশ্বরকে সবথেকে বড় কাঁচকলা দেখানো।


*

দু’হাজার চোদ্দ সালে রিলিজ করা ‘লুসি’ নামের গাঁজাখুরি সিনেমায় স্কারলেট জোহানসন অভিনীত লুসির রক্তে ড্রাগ মিশে গিয়ে ব্রেনের একশো শতাংশ অ্যাকটিভেটেড হয়ে যায়। এ ঘটনার তাৎপর্য বুঝতে সাধারণ মানুষের ব্রেনের মোটে দশ পার সেন্ট ব্যবহার করার (আমি সাড়ে তিনফিন, ম্যাক্স) গুজবটা বিশ্বাস করতে হবে। লুসি বেসিক্যালি সুপারহিউম্যানে পরিণত হয় এবং নানারকম অসম্ভব কাণ্ড ঘটিয়ে বেড়ায়। যার মধ্যে একটা লোকজনকে ঠেঙিয়ে পাট করে দেওয়া। এর জন্য ব্রেন পাওয়ারের দরকার কী পড়ল জানি না। অর্চিষ্মান টিভিতে জাট দেখছিল, সানি দেওলও তো দেখলাম সবাইকে ঠেঙিয়ে পাট করে দিলেন।

শেষে একশো পারসেন্ট ব্রেন পাওয়ার জাস্টিফাই করতে লুসিকে টাইম ট্র্যাভেলে পাঠানো হল। দশ পারসেন্ট ব্রেন নিয়ে লোকে অহরহ একশো দুশো বছরের টাইম ট্র্যাভেল করে থাকে, কাজেই লুসি একেবারে ব্ল্যাক হোল দেখে ফিরবে।

লুসি সাঁসাঁ করে সময়ের সুড়ঙ্গ বেয়ে উড়ে চলল। সবে তিন দশমিক দুই বিলিয়ন বছর পেরিয়েছে, এমন সময় সুড়ঙ্গ কোথায়, দিব্যি ঘন সবুজ জঙ্গল, গাছে গাছে বাঁদর, ডালে ডালে পাখি। আমরা কনফিউজড। লুসি জঙ্গলে ল্যান্ড করল। আর অমনি লুসির সামনে উপস্থিত হল একটি মহা কিউট বাঁদর। 

লুসি থমকে গেল। 

কারণ সে বাঁদর আপনার মতো দশ আর আমার মতো সাড়ে তিন পারসেন্ট-এর কাছে বাঁদর, হান্ড্রেড পারসেন্ট লুসির কাছে নয়। লুসি দেখামাত্র সে বাঁদরকে চিনে নিয়েছে।

বাঁদর বাঁদর করছি কেন কে জানে। ও লুসি। আই মিন, আর এক লুসি। তিন দশমিক দুই বিলিয়ন বছর আগে উত্তর অ্যাফ্রিকার ঝিঁঝিঁ ডাকা জঙ্গলের নির্জনতায় দুই পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে ওঠা লুসি, হোমিনিড থেকে হোমিনিন-এর দিকে যাত্রা করা লুসি, ছোট্ট মাথা আর শক্তিশালী পায়ের হাড়ের লুসি, সাড়ে তিন ফুট ঊনত্রিশ কেজির লুসি। উনিশশো চুয়াত্তরে ইথিওপিয়ার প্যালিওন্টেজিক্যাল ক্যাম্পের আশেপাশে, তপ্ত ঊষর ভুমিতে প্রথম যেদিন পায়ের হাড়, এবং পরের কয়েকদিন ধরে আরও হাড়গোড় খুঁজে পেতে পেতে, এ সব একটিই আর্লিয়েস্ট হোমিনিনের শরীরের টের পেতে পেতে ক্রমশঃ উত্তেজিত হয়ে উঠছিলেন জীবাশ্মবিদরা, সন্ধেবেলা ক্যাম্পে ফিরে বিটলস্‌-এর Lucy in the Sky with Diamonds আকাশবাতাস ফাটিয়ে লুপে চালিয়েছিলেন বলে যার নাম রাখা হয়েছিল লুসি - সেই লুসি।

আমাদের আদিমতম আত্মীয়াদের অন্যতমা। মুখোমুখি। এক হাতের মধ্যে।

অবর্ণনীয় অনুভূতি স্কারলেটের স্কিলফুল মুখমণ্ডলে খেলা করে। টিভির এপারে অর্চিষ্মানের অশ্রুত 'বস্‌স্‌স্‌' অগ্রাহ্য করে আমার পেরিমেনোপজ্যাল অশ্রুগ্রন্থি ওপচায়। মনে মনে সুপার লুসির উদ্দেশ্যে চিৎকার করি - সে সামথিং। 'কী দরকার থাক' ভেবে এই অলৌকিক দেখা হওয়াকে বইয়ে দিয়ো না। 

সুপার লুসি আমার পরামর্শ ইগনোর করে। কারণ লুসি একশো, আমি সাড়ে তিন। লুসি জানে কথার ওপর আরও কথায় নয়, চ্যাটবাক্সের চালাকিতে নয়, কবিতার কোটেশনে নয় - মানুষে মানুষে কানেকশনের পথটা সম্পূর্ণ অন্য।

লুসি আঙুল বাড়ায়।

চ্যাপেলের সিলিং-এ ডিভাইন ও পার্থিব আঙুলের মধ্যবর্তী শূন্যতা তুলি বুলিয়ে গাঢ়তর করেন শিল্পী, ক্যালিফোর্নিয়ার আলোআঁধারি ঘরে প্রিয় বালকের ব্যথা সারাতে এগিয়ে আসে আলোকিত এলিয়েন তর্জনী, অ্যাফ্রিকার জঙ্গলে উঠে দাঁড়ায় একটি ছোট্ট লোমশ আঙুল।

বত্রিশ লক্ষ বছরের এপার ওপার অগো লুসি, মগো লুসিকে চিনে নেয়।

ঠিক যেমন আমাদের মধ্যে একটা আস্ত অ্যাপোক্যালিপস থাকলেও, আমাদের বাইরেটা যেমনই দেখতে হয়ে যাক না কেন - যদি কখনও দেখা হয়ে যায় - টেড আমাকে চিনে ফেলবে, আমিও ভুল করব না।

*

সেই যে মা-মেয়ের বইতে সুজি হপকিন্স লিখেছিলেন, মৃত্যু আছে তো কী? বিচ্ছেদ আছে তো কী? আমার তোমার মধ্যে অনন্ত স্মৃতির নদীও তো রইল। সমস্ত বিচ্ছেদ, জন্মমৃত্যু অতিক্রম করে সে নদী বইতে থাকবে।

আমার বিশ্বাস সে রকমই একটা নদী - অফ কোর্স, আরও গভীর, আরও দীর্ঘ - আমাদের ঘিরে বইছে। কসমসের অনন্ত আঁধারে অ্যাকসিডেন্টাল অণুসজ্জার এই জোনাকিড্যান্সের স্ক্রিনশট নিয়ে, অবোধ লুসি, সুপার লুসি, শাহরুখ খান, অর্চিষ্মান, টেডের কালেক্টিভ বেঁচে থাকার মর্মান্তিক মেমোরি ধারণ করে, মানুষের যাবতীয় সেলফ স্যাবোটেজ, অস্তিত্বসংকট ভাসিয়ে সে নদী ছুটছে। আমার মনে রাখা, টামিনার ভুলে যাওয়া - সে নদীর ঢেউয়ে ঢেউয়ে ডুবছে, ভাসছে, নাচছে। কোনও অ্যাম, কোনও ঈশ্বরের সাধ্য নেই সে মহান, নশ্বর নদীতে আঙুল ডোবানোর।

Comments