জয় জয় দেবি….


পশ্চিমবঙ্গের শতশত বালিকা বিদ্যালয়ের হাজার হাজার ছাত্রীর আজ মহোৎসব।
ক্লাস ওয়ানের কন্যার আজ প্রথম শাড়ি পরার দিন। বাসন্তীরঙের শাড়ি, মাথার প্রায় অদৃশ্য চুলে হলুদ ফিতের মস্ত ফুল, আর দুহাতে গোলাপি চুড়ি পরে গর্বিত পায়ে সে মায়ের সাথে হেঁটে হেঁটে গিয়ে রিকশায় উঠবে। সবকিছুর রঙ ম্যাচিং করে পরাটা যে চূড়ান্ত ব্যাকডেটেড এবং বোকাবোকা, এটা বুঝবার জন্য তার কোনো ফ্যাশন গুরুর টিপসের দরকার নেই।
ক্লাস সেভেনের মেয়েটিও হাতে স্বর্গ পেয়েছে আজ। স্কুলের পূজোর তোড়জোড়ে এবছর তার প্রথম প্রবেশাধিকার। ক্রাফট রুমে মস্ত গামলা ঘিরে বসে কড়াইশুঁটি ছাড়াতে ছাড়াতে তার মন আর চোখ পড়ে থাকে ঘরের অন্যপ্রান্তে। যেখানে রমাদিদিভাইয়ের নেতৃত্বে ক্লাস নাইন টেনের মেয়েরা রঙিন কাগজ, শোলা, ফেভিকলের শিশি, কাঁচি নিয়ে প্রতিমার চালচিত্র বানাতে মগ্ন। সেই ভিড়ের মধ্যে সবথেকে উজ্জ্বল সুতপা। পড়াশোনায় ভাল, বিতর্কসভার অবিসংবাদিত ফার্স্ট প্রাইজ, ‘চিত্রাঙ্গদা’র অর্জুন। আমাদের মেয়েটি কড়াইশুঁটি ছাড়ায় আর চেয়ে চেয়ে দেখে, কী ভাল, কী সুন্দর। হঠাৎ মন খারাপ হয়ে যায় তার।
সুতপা আর তার বন্ধুদেরও উত্তেজনার শেষ নেই। বহু বছর দূর থেকে অপেক্ষার পর, অবশেষে সবকিছুর কেন্দ্রবিন্দুতে তারা আজ। গত কয়েকদিন ধরে প্রতিমা কেনা, হলঘরের পুরনো আলপনায় নতুন করে রঙ বোলানো, আশেপাশের স্কুলগুলোতে পুজোর নেমন্তন্ন নিয়ে যাওয়া, ছুতোনাতায় স্টাফরুমে যাতায়াতের অবাধ অধিকার। সেভেন এইটের বিশ্বপাকা মেয়েগুলোকে দেখে রাগের বদলে মায়াই বেশি হয় ওদের এ’কদিন। এত ছোট ওরা।
আজ সকালে সূর্য ওঠার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই স্কুলে এসেছে ওরা। মায়ের আলমারি থেকে সবথেকে পছন্দসই শাড়িটা বেছে নিয়ে। মা অবশ্য অন্য একটা পরতে বলেছিল। সারাদিন যেটা পরে থাকতে অসুবিধে হবে না। গরম লাগবে না। কিন্তু মায়ের কথা শোনবার দিন নয় আজ।
বিরাট দুর্গের মত পাঁচিল ঘেরা হলুদরঙের স্কুলবাড়িটার আজ মহা আনন্দের দিন। সবুজ লোহার গেট আজ সারাদিন খোলা। পাঞ্জাবিশোভিত বাহাদুরভাইয়ের চেয়ার পেরিয়ে আজ যে কেউ ঠাকুর দেখতে আসতে পারে, লাইন দিয়ে বসে খিচুড়ি আলুরদম, চাটনি পাঁপড় লেডিকেনি খেতে পারে। যে কেউ। এমনকি ছেলেরাও।
গুনে দেখলাম, এ উৎসবের প্রবেশাধিকার ফুরিয়েছে আমার এই নিয়ে ১৩ বছর। যদিও ভাবতে বসে কালকের দিনটার চেয়ে ওই সকালটা আমার বেশি স্পষ্ট মনে পড়ল।

Comments

  1. :) ki sundor :) ekdom thik..ami jehetu boRo hoye kolkataye khub ekta thakini, tai oi boRoder dike takiye "ishh ami ki choto" bhaab tai amar chena, ebong ekhono khub i sposhto :)

    amader paRaye ajker din e radhabollobhi, cholar daal aar mishti hoto raat e. tar pore video chalano hoto... tokhon cinema e jaoar eto chol chilo na, tai ei video dyakhata hoto pujo r sob theke uttejok muhurto. kintu protibaar i climax er agei Baba ghaR dhore baRi niye giye shuie dito :( ki opoman :(

    ReplyDelete
  2. Daarun, daarun! Ami Allahabad e thaktum... school e to pujo hotona. Kothao kothao pujo hoto amra anjali dite jetam. Dupure Bharat Sebasram Shanghe bose khichuRi bhog. Ar raate koRaishNutir kochuri bNadha. Bhuleo boi chhNowa hotona e din... ar bachhore prothom kul khetam.

    ReplyDelete
  3. সুমনা, আমি যখন ক্লাস থ্রি, তখন আমার জীবনের লক্ষ্য ছিল ক্লাস এইটের দিদিদের মত বড় হওয়া। আর নির্ভুল বলেছ, ঠিক জায়গা থেকে ভুল সময়ে তুলে নিয়ে আসাতে আমার বাবামাও চ্যাম্পিয়ন ছিলেন একসময়।

    সুগত, আমাদের বাড়িতে আজ পরোটা আলুরদম হয়েছে :(...।

    ReplyDelete
  4. Aamar moton illiterate ebaar tomaar posts gulo ki kore podbe?! :-(

    ReplyDelete
  5. ei re Pree, dNaRao dekha jak kii kora jay :(....sorry sorry.

    ReplyDelete

Post a Comment