এ মাসের বই/ সেপ্টেম্বর ২০১৭/১/ রাগ'ন জোশ



উৎস গুগল ইমেজেস


‘ধর’ শুনে প্রথমে খুব লাফিয়েছিলাম, কিন্তু শীলা আসলে বিবাহসূত্রে কাশ্মীরী পণ্ডিত ‘ধার’, বাঙালি ‘ধর’ নন। শীলার কোনওকালেই বাঙালিদের সঙ্গে কোনও সংস্রব ছিল না, কারণ ধার হওয়ার আগে তিনি ছিলেন মাথুর কায়স্থ। 

শীলা ধারের লেখা রাগ’ন জোশ বইটি পাঁচটি ভাগে বিভক্ত। হোম (তখনও তিনি ধার হননি, মাথুর কায়স্থ জয়েন্ট ফ্যামিলিতে বড় হচ্ছেন), মিউজিশিয়ানস (বিভিন্ন বিখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ ও শিল্পীর সঙ্গে লেখকের ব্যক্তিগত আলাপ পরিচয়ের গল্প), আদার পিপল ( এখানে মূলত স্বামী পি কে ধারের ইন্দিরা গান্ধীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করার সময় সেখানকার ঠাটবাট চলনবলন, এবং ভারত সরকারের পাবলিকেশন ডিভিশন লেখকের চাকরির সময়কার মানুষজন, অভিজ্ঞতার  কথা জায়গা পেয়েছে) দ্য কুকিং অফ মিউজিক অ্যান্ড আদার এসেজ (এই চ্যাপ্টারে রয়েছে রাগ রাগিণী সম্পর্কিত টেকনিক্যাল প্রবন্ধ), এবং পরিশিষ্টে শীলা ধারের দুখানি অবিচুয়ারি। 

আমার মতে বইটির সবথেকে চমকপ্রদ এবং উপভোগ্য অংশ হচ্ছে প্রথম এবং দ্বিতীয় অংশদুটি। শীলা ধার অত্যন্ত প্রিভিলেজড বাড়িতে জন্মেছিলেন। তাঁর ঠাকুরদা ব্যারিস্টার অ্যাট ল ছিলেন, এবং সিভিল লাইনস-এ প্রাসাদোপম অট্টালিকা বানিয়েছিলেন। তাঁর প্রতিপত্তি এমনই ছিল যে ‘সাত নম্বর’ কানে শুনতে ভালো লাগে বলে বাড়ির নম্বর সাত রাখা হয়েছিল, আগেপিছে ছয় কিংবা আটের চিহ্নমাত্র না থাকা সত্ত্বেও। শুধু সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠা ছাড়াও মাথুররা ‘কালচার্ড’ও ছিলেন বলাই বাহুল্য। তাঁদের বাড়িতে সঙ্গীতের মহামহোপাধ্যায়দের মিছিল লেগেই থাকত, বইতে সে সব তথ্য ছড়িয়ে আছে।

এই রকম বাড়িতে জন্মালে দৃষ্টি নষ্ট হওয়ার একটা বিপদ সবসময় থেকে যায়। আমি বড় বাড়িতে জন্মানো সেলেব্রিটিদের আত্মজীবনী পড়ে দেখেছি, তাঁদের সবসময়েই চেষ্টা থাকে এই প্রিভিলেজ, এই এলিটিজমকে ছদ্ম তাচ্ছিল্যের চোখে দেখার, কারণ আফটার অল যারা বইটা কিনবে তারা সবাই ছাপোষা মধ্যবিত্ত সাধারণ মানুষ, তাদের চোখে নিজেকে ‘রিলেটেবল’ প্রতিপন্ন না করতে পারলে বই বিক্রি হবে না। কাজেই তাঁরা যথেষ্ট পরিমাণে নিজেদের ব্যাকগ্রাউন্ডের নিন্দেমন্দ করলেও সে নিন্দের মধ্যে একটা প্রশ্রয়ের ভাব প্রকট থাকে। 

শীলা ধারের লেখায় সেটা এক্কেবারে অনুপস্থিত। অন্তত আমার তাই মনে হয়েছে। এর একটা কারণ হতে পারে নিজের মায়ের সঙ্গে শীলার গভীর সংযোগের সম্পর্ক, এবং সেই মায়ের প্রতি ওই বড় বাড়ির লোকজনদের ভয়াবহ আচরণ। 

শুধু বাড়ির ক্ষেত্রে নয়, পরবর্তীকালে গানের দুনিয়া নিয়ে লেখার সময়েও শীলা সমান স্পষ্টবাদী। শিল্পীরা বেশিরভাগ সময়েই খুব সুবিধের লোক হন না, তাঁদের হিংসেহিংসি, দলাদলি, একে অপরকে ক্রমাগত তাচ্ছিল্য করার চেষ্টা, সবই শীলা লিখেছেন। হিন্দুস্থানি বনাম কর্ণাটকীর যুদ্ধ, ঘরানা বনাম ঘরানার লড়াই, এই হাস্যকর কিন্তু সত্যি ব্যাপারগুলো ধামাচাপা দেননি। 

আর সবই লিখেছেন গভীর কৌতুকের দৃষ্টিতে। রাগ’ন জোশ-এর আরও একটা রিফ্রেশিং ব্যাপার হচ্ছে বইখানার অশ্রদ্ধামূলক ভঙ্গি। ক্লাসিক্যাল জগতের ওই নাম বলার আগে কান ধরে জিভ কাটার অসহ্য তৈলাক্ত বিনয় নেই শীলার। তিনি বেগম আখতারের ‘ভিকটিম সিনড্রোম’এর কথা অনায়াসে লিখেছেন, নিজের গুরু প্রাণনাথের স্বার্থপরতার কথাও বাদ দেননি। এবং এগুলো লেখার সময় কখনও আমার মনে হয়নি যে তিনি এঁদের কাউকে মন থেকে অপছন্দ করেন। একেবারেই না। শীলা নিজেই লিখেছেন,

“I love and admire the artistes that figure in this book. The eccentricities and frailties I have described do not diminish them in any way. On the contrary, they are intended to enhance the charm of their rich personalities.

অফ কোর্স, রাগ’ন জোশ-এর মূল জোর হচ্ছে গল্প। গল্পের পর গল্প। সে এমন গল্প, সবাইকে ধরে ধরে শোনাতে ইচ্ছে করে। “এই জায়গাটা শোনো” বলে কতবার যে অর্চিষ্মানের কান থেকে হেডফোন খুলিয়েছি আমি।

আপনাদেরও শোনাব ভেবেছিলাম। একটার পর একটা গল্প পড়ছি আর ভাবছি, রিভিউ লেখার সময় এই গল্পটা দেব। কিন্তু কোনটা দেব? সিদ্ধেশ্বরী দেবী প্রথমবার বিলেত যাওয়ার সময় তাঁর এক গুণমুগ্ধ যে ‘দ্য গ্রেট লেডি গোয়িং টু লন্ডন’ এই একটাই লাইন ক্রমাগত পুরিয়ায় গাইতে গাইতে সঙ্গে চলেছিলেন সেইটা? নাকি ফৈয়াজ খানের দর্শনার্থীদের অসীম ধৈর্যের গল্পটা? নাকি প্রথমবার লেখকর রেডিও রেকর্ডিং-এর গল্পখানা, যেটা পড়তে পড়তে হাসির চোটে আমি কি-বোর্ডের ওপর মুখ থুবড়ে পড়ে গিয়েছিলাম আর অবান্তরের সেভ না করা অর্ধেক পোস্ট ডিলিট হয়ে গিয়েছিল?

বলার মতো অসংখ্য গল্পের মধ্যে থেকে আমি শেষমেশ সারেঙ্গী ওস্তাদ বুন্দু খানের গল্পটা বেছে নিলাম। 

“..his visits to us must have been a relief from the noisy and congested environment of his  own large joint family establishment in Suiwalan in the Old City. He was not really concerned about the poor living conditions. What bothered him was having to deal with the world outside music. He once told us that when he was young, he was expected to do errands in the vegetable market for his mother and aunts. ’It seemed to take forever’, he said with a tortured expression. We quite understood that the real hardship for him must have been the time he was forced to be away from music. To get over the problem, he designed a small bamboo sarangi which he could sling over his shoulder unobtrusively and use for practice with the finger of his left hand without making any sound while he went about his extra-musical chores. He added that he would drape a light shawl over the left shoulder to hide the sarangi so that he didn’t have to listen to casual comments from passing busybodies."

“One Sunday morning Bundu Khan got lost in our house. Dependable old Masoom Ali, my grandfather’s chauffeur, had driven the family dodge to Suiwalan and brought the maestro back in accordance with my father’s standing instructions and deposited him on the veranda. After a few moments my father hurried out of his dressing room to greet him but he was nowhere to be seen. Not in the lavatory, not still in the car, not on the terrace, nowhere. My father’s faithful valet, the smirking Jai Singh whom we all hated, was sent hunting everywhere without result. Half an hour after the panic set in we heard the faint, scratchy sounds of a sarangi. They seemed to be coming from the garden but we could not see anyone there. We followed my father in the direction of the sound and tracked it down to a tall, thick hedge of sweetpeas that divided the huge garden in front of our house into two sections. Ustad Bundu khan was lying in the flower bed on the farther side, his instrument balanced on his chest and shoulder, his eyes closed, completely engrossed in the music he was playing. Even my father who prided himself on courtly manners did not know how to awaken such a great musician from his reverie, or how to call such a revered name aloud. Anyhow, with much fake coughing and embarrassed clearing of the throat, my father managed to catch his attention. Ustad Bundu khan opened his eyes, just a slit, and scrambled on his feet when he saw the concern on the faces of the small assemblage. 

‘It is spring time, and I was playing for the flowers’, he said in complete explanation.

শীলা ধারের রাগ’ন জোশ আমার এ বছরের পড়া অন্যতম সেরা বইয়ের মধ্যে থাকবে।


Comments

  1. কুমারপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়-এর "কুদরত রঙ্গিবিরঙ্গী" মনে পড়ে গেল।

    ReplyDelete
    Replies
    1. ওই বইটার স্কোপটা হয়তো আরেকটু বিস্তৃত, ঋজু, কিন্তু শীলা ধারের রাগ'ন জোশ লেখকের উপস্থিতিতে ঝকঝকে। উৎসাহ থাকলে পড়ে দেখতে পারেন।

      Delete
  2. Ei boita onekdin dhorei porar ichhe. Ebar pore felte hobe :) Khub sundor kore likhechhen boita niye.

    ReplyDelete
    Replies
    1. পড়ে ফেলুন, সায়ন। আমার তো ভীষণ ভালো লেগেছে।

      Delete
  3. Replies
    1. এটা পড়ে ফেল, তিন্নি।

      Delete
  4. ei boitar sombondhe jene darun laglo.. aamaar eirokom boi emnio khub bhalo lage.. aabaar jokhon boi pora shuru korbo, tokhon porar icche thaklo.

    khub sundor review hoyeche..

    Indrani

    ReplyDelete
    Replies
    1. ও হ্যাঁ, আপনার তো বই-উপোস চলছে,ইন্দ্রাণী। কখনও ইচ্ছে হলে পড়তে পারেন।

      Delete
    2. darun bolechen toh - boi-uposh.. dhaar nilum eta

      Delete
    3. হাহা, স্বচ্ছন্দে, ইন্দ্রাণী।

      Delete
  5. Thank you boitar review er jonyo...kenar ichchhe roilo.

    ReplyDelete
    Replies
    1. হ্যাঁ, এই বইটা বেশ ভালো, সুস্মিতা।

      Delete
  6. Ei boita jokhon eto ta bhalo laglo, ar tarpor jokhon Amiya Nath Sanyal-er boi podchhen, tokhon buk thhuke ar ekta recommend korei felchhi. Namita Devidayal-er The Music Room. Raga'n Josh-er hoito ek doshomangsho-r beshi noy, humour pray nei, ek nihshongo shongeet sadhika-r kahini. Dhondutai Kulkarni. Alladiya Khan Saheb, Kesarbai, era shob ghure fire ashen. Mohila gayikader jogot ke ek mohilar chokh diye dekha. Apnar bhalo lagar chance achhe.

    Shuteertho

    ReplyDelete
    Replies
    1. Sorry, aager comment ta ektu ambiguous. Oi boita Dhondutai-er kahini. Alladiya Khan ityadi-ra important character.

      Delete
    2. আমারও ধারণা আমার ভালো লাগার চান্স আছে, সুতীর্থ। রেকমেন্ড করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

      Delete
  7. Ei boita aami anek bochor agey porechilam....amar daroon legechilo. Maa ke "bauwa" bole dakata amar ekhono mone achey. btw, P N Dhar mahasay "emergency" r opore ekta khub bhalo boi likhechen....also worth a read!

    ReplyDelete
  8. sampurno notun notun info dile, r sobi darun interestng. jodio lekhika'r husband sombondhe samanyo background knowledge chilo- Bratati.

    ReplyDelete
    Replies
    1. তাই বুঝি? আমি কিছুই জানতাম না।

      Delete

Post a Comment