রাণাদের রাজত্বে



চিতোর কথাটা এসেছে চিত্রাঙ্গদ থেকে, আর এই চিত্রাঙ্গদ ছিলেন মৌর্য বংশের রাজা। চিত্রাঙ্গদ এবং সম্ভবত অন্যান্য মৌর্য রাজাদের উদ্যোগে চিতোরদুর্গ বানানো হয় সপ্তম শতাব্দীতে। অষ্টম শতাব্দীর মাঝামাঝি গুহিলা রাজা বাপ্পা রাওয়ালের আমলে চিতোর প্রথম রাজপুতদের দখলে আসে। বলপ্রয়োগের ফলে না বরপণ হিসেবে, সে নিয়ে মতভেদ আছে। 


চিতোরে দেখার যা কিছু সব ওই কেল্লার মধ্যেই। পান্নার সামনে দিয়ে অবিরত অটো যেতে থাকে, এঁরা বলেন টেম্পো, উঠে পড়লেই হল। হোটেল থেকে সুভাষ চক মাথাপিছু দশ টাকা, সুভাষ চক থেকে কেল্লার গেট আরও দশ। আমাদের অটোভাইসাব বললেন তিনশো টাকা দিলে উনি কেল্লার ভেতরেও ঘুরিয়ে দেবেন। আমরাই রাজি হইনি। 

হোটেলের গেট থেকে বেরিয়েই দেখি একটা উট ইন্ডেন গ্যাসের সিলিন্ডারওয়ালা একটা ভ্যানগাড়ি টেনে নিয়ে চলেছে। উটের মুখের মধ্যে যে একটা প্রসন্ন উদাসীনতা, সেটা আমার ভারি পছন্দের। আমি উটভাইয়ের সঙ্গে আই কনট্যাক্টের চেষ্টা করলাম, উটভাই পাত্তাই দিলেন না, ঊর্ধ্বমুখে চোয়াল নাড়াতে নাড়াতে চলে গেলেন।

এই অঞ্চলের পাহাড়গুলো সমতল জমির ওপর হঠাৎ একেকটা খাড়া টেবিলের মতো উঁচু হয়ে উঠেছে, মাথাটা টেবিলের মতোই ফ্ল্যাট। চিতোরগড়ও ওইরকম একটা টেবিলটপ পাহাড়ের ওপর। খাড়া রাস্তা দিয়ে ওঠার সময় একের পর এক ‘পোল’ পেরোতে হয়। পোলের নামকরণের ব্যাপারে রাজপুতরা খুব একটা সৃষ্টিশীলতার পরিচয় দিতে পারেননি, উদয়পুরের প্যালেসের মতো এখানেও সেই বড়ি পোল, হাথি পোল, ত্রিপোলিয়া পোল। 

টিকিট কাউন্টারের সামনে আমাদের নামিয়ে দিয়ে অটোভাইসাব আবার বললেন, ‘যদি চাই তো বলুন, তিনশো টাকায় ঘুরিয়ে নিয়ে আসব।’ আমরা বললাম, না দাদা আমরা হেঁটে ঘুরব। দাদা বললেন, ‘এই রোদে পা ব্যথা করবে, মাথা ঘুরবে, আর এঁর তো…’ বলে আমার পাকাচুলের দিকে সন্দেহপূর্ণ দৃষ্টিপাত করতে লাগলেন।

আমি বললাম, ঘুরলে হেঁটেই ঘুরব না হলে ঘুরবই না।

দাদার টেনশন খুব একটা ভিত্তিহীনও নয়। প্রায় ছ’শো ফুট উঁচু পাহাড়ের ওপর সাত মাইল লম্বা পাহাড় জোড়া চিতোরগড় ভারতের অন্যতম বড় দুর্গ, বৃহত্তমও হতে পারে। কাজেই আপনাদের যদি বিন্দুমাত্র হাঁটায় কষ্ট থাকে তাহলে আমাদের অনুসরণ না করাই ভালো। 



তিনটে বাজখাঁই যুদ্ধ হয়েছিল এই চিতোরদুর্গে, তার প্রথমটা বা প্রথমটার কারণ নিয়ে একটা বাজখাঁই সিনেমাও হয়েছে রিসেন্টলি। আমার সাহস হয়নি, আপনারা দেখেছেন নাকি? তেরোশো তিনে আলাউদ্দিন খিলজি চিতোর আক্রমণ করেন, তখন রাণা ছিলেন রতন সিংহ। লোকে বলে রতনসিংহের রূপসী রাণী পদ্মিনীর লোভেই খিলজি চিতোর আক্রমণ করেছিলেন। যদিও ঐতিহাসিকরা পরে এই পদ্মিনীকাহিনীকে গালগল্প বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। পনেরোশো পঁয়ত্রিশে চিতোরগড় বাহাদুর শাহকর্তৃক দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হয়, এই যুদ্ধের সময়েই ধাত্রীপান্না উদয়সিংহ দ্বিতীয়কে বাঁচাবেন বলে নিজের ছেলে চন্দনকে শত্রুর হাতে কুরবানি দেন। চিতোরের তৃতীয় এবং ফাইন্যাল বড় যুদ্ধ হয় পনেরোশো সাতষট্টিতে। আকবর রাণা উদয় সিং (দ্বিতীয়)কে হারিয়ে চিতোরের দখল নেন। ষোলোশো ষোলোতে রাণা অমর সিং (প্রথম)-এর সঙ্গে জাহাঙ্গীরের চুক্তি হয়ে চিতোর রাণাদের হাতে ফেরত আসে। এই তিনটি যুদ্ধেই জহরব্রত পালনের লোকগাথা আছে, সে জহরব্রত সত্যি সত্যি হয়েছিল কি না, হলেও কবে হয়েছিল, ক’হাজার করে মহিলা সে আগুনে প্রাণ দিয়েছিলেন সে নিয়ে বিস্তর মতভেদ আছে। আমরা গাইড নিইনি, যাঁরা গাইড নিয়েছিলেন তাঁদের কাছাকাছি থেকে চুরি করে গাইডের কথা শোনারও চেষ্টা করিনি, অন গড ফাদার মাদার, তবু চারদিকে এত গাইড এত চেঁচিয়ে কথা বলছিলেন যে টুকরোটুকরো কানে এসেই যাচ্ছিল। জহরব্রতের ক্যাজুয়ালটি পাঁচ হাজার, তেরো হাজার, বাইশ হাজার যে যার খুশিমতো বলে যাচ্ছিলেন। 

এই ক’দিন আগেই উবারে বসে আমি আর অর্চিষ্মান আলোচনা করছিলাম রামায়ণ মহাভারতের কোন কোন নামে ছেলেমেয়ের নাম রাখার চল আছে। কর্ণ অর্জুন পাঞ্চালীর বাজার তো চিরকালই তেজী, এমনকি, যুধিষ্ঠির, দুর্যোধন, দুঃশাসনও শুনেছি। খালি বিভীষণটা সকলেই এড়িয়ে চলে। আর আমরা দুজনেই একমত হয়েছিলাম যে কুম্ভকর্ণ নামটাও আমরা শুনিনি কখনও এই চিতোরে গিয়ে বেরোলো যাঁর নাম এতদিন ধরে শুনেছি, সেই রাণা কুম্ভের আসল নাম ছিল কুম্ভকর্ণ সিং। 


রাণা কুম্ভের গুণের শেষ ছিল না। যুদ্ধ তো তিনি ভালো করতে জানতেনই, মাহমুদ খিলজির আক্রমণ থেকে সফলভাবে চিতোর রক্ষা করছিলেন, কুম্ভলগড় দুর্গ বানিয়েছিলেন, এ ছাড়া শিল্পসাহিত্যসংস্কৃতিতেও তাঁর মন ছিল। তাঁর আমলেই মেওয়ার রাজ্য এবং চিতোরদুর্গের বাড়বাড়ন্ত হয়। ঠাকুরদার বাবা রাণা হামিরের বানানো প্রাসাদ সারিয়েসুরিয়ে তিনি নিজের থাকার ব্যবস্থা করেছিলেন, সেই ভাঙাচোরা কুম্ভমহল এখনও কেল্লায় ঢোকার মুখে দাঁড়িয়ে চিতোর পাহারা দিচ্ছে। রাজকাহিনীতে পড়া ভালোভালো গল্পের অধিকাংশ এই বাড়িতে ঘটেছিল। এই বাড়িতেই শিশু উদয়সিং (দ্বিতীয়)কে ফলের ঝুড়িতে চাপিয়ে রাতের অন্ধকারে বার করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। ধাত্রীপান্নার বাড়িও এই মহলের মধ্যেই, আর মীরাবাইয়ের প্রাসাদও। 


চিতোরের ইতিহাসে ফেমাস পুত্রবধূদের একটা ঐতিহ্য আছে। পদ্মাবতী না হয় কাল্পনিক, কিন্তু মীরাবাই যে সত্যিই ছিলেন সে নিয়ে সন্দেহ নেই। মেরতা অঞ্চলের রাজপুত রাঠোর পরিবারের মেয়ে মীরার বিয়ে হয়েছিল মহারাণা ভোজরাজের সঙ্গে। মীরা যদিও কৃষ্ণ ছাড়া আর কাউকে তাঁর স্বামী হিসেবে স্বীকার করেননি কখনও। যুদ্ধে ভোজরাজের মৃত্যুর পর মীরাকে নাকি তাঁর শ্বশুরবাড়ির লোক নানারকম উপায়ে হত্যার চেষ্টা করেন এবং ব্যর্থ হন। বিষ কাজে দেয় না, ফুলের ঝুড়িতে শয়তানি করে রেখে দেওয়া সাপ কৃষ্ণের মূর্তিতে পরিবর্তিত হয়ে যায়, জলে ডুবিয়ে দিতে চাইলে মীরা ভেসে থাকেন ইত্যাদি। 

রাণা কুম্ভের বানানো একটি অতি সুন্দর মন্দির বর্তমানে মীরা মন্দির বলে চিহ্নিত।


হিন্দু এবং জৈন কত মন্দির যে দুর্গের মধ্যে আছে। হিন্দু মন্দিরের মধ্যে সমাধিশ্বর (শিব) মন্দির, কুম্ভস্বামিন (বিষ্ণুর বরাহ অবতার) মন্দির, কালিকা মন্দির, জৈন মন্দিরের মধ্যে সাত বিস দেওরা (সাতাশজন জৈন সাধুর উদ্দেশে তৈরি বলে), ভগবান মহাবীর মন্দির, ভগবান পার্শ্বনাথ মন্দির, চন্দ্রপ্রভু মন্দির। মাধ্যমিকা বলে একটি প্রাচীন জৈন শহরের কাছে গড়ে উঠেছিল বলে নাকি জৈন প্রভাব এত বেশি করে পড়েছিল চিতোরে, নেটে একজায়গায় লিখেছে। বিখ্যাত জৈন সন্তরা চিতোরে জন্মেছিলেন, অনেক গুরুত্বপূর্ণ জৈন টেক্সট চিতোরে বসে লেখা হয়েছিল। 

মন্দির ছাড়াও আরও অন্যান্য স্থাপত্যেও জৈন প্রভাব আছে। চন্দ্রপ্রভু মন্দিরের পাশে ওপরের কীর্তি স্তম্ভটি বানিয়েছিলেন জিজা নামের একজন জৈন ব্যবসায়ী। আর চিতোরগড়ের সিগনেচার ন’তলা উঁচু বিজয়স্তম্ভ বানিয়েছিলেন রাণা কুম্ভ, মাহমুদ খিলজির বিরুদ্ধে তাঁর জয়ের স্মারক হিসেবে।


এই বিজয়স্তম্ভের আশেপাশেই চিতোরের অধিকাংশ ‘মাস্ট সি’ মনুমেন্ট। গৌমুখ জলাধার, সমাধিশ্বর শিবের মন্দির। গত প্রায় দেড়ঘণ্টাখানেক ধরে রোদের মধ্যে ঘুরে ঘুরে ওই মুহূর্তে আমাদের কাছে যেটা সবথেকে ইমপরট্যান্ট সেই জিনিসটাও এই কম্পাউন্ডের উল্টোদিকেই। আর টি ডি সি পরিচালিত ছায়া ছায়া ক্যাফে। হেঁটে হেঁটে সেদিকেই যাচ্ছি এমন সময় অর্চিষ্মানের কনুইয়ের গুঁতো। ‘দেখো দেখো’। দেখলাম। রাস্তার দুপাশে রেলিং, ডানদিকের রেলিং-এর ওপর তিনজন বাঁদর আয়েস করে একজন আরেকজনের কাঁধে হাত রেখে, একজন আরেকজনের মাথায় পা তুলে গজল্লা করছেন। 

আমার সম্পর্কে একটা কথা আপনারা জানেন কি না জানি না, কুকুর বেড়াল গরু উট এদের সঙ্গে আমি আই কনট্যাক্ট করার নিয়মিত চেষ্টা করে থাকি বটে কিন্তু বাঁদরের সঙ্গে কখনও করি না। ইন ফ্যাক্ট, বাঁদরের সঙ্গে আই কনট্যাক্ট আমি অ্যাকটিভলি অ্যাভয়েড করি। অর্চিষ্মানের গুঁতো খেয়ে যেই না তাকালাম, যে বাঁদরটা সবথেকে বেশি মোড়লসুলভ, অন্য বাঁদরের মাথার ওপর পা রেখে বসে ছিল, সেও ঘাড় ঘোরালো আর পড়বি তো পড় চোখ আমারই চোখে। 

আমি তৎক্ষণাৎ চোখ সরিয়ে নিয়ে যেন ঘটনাটা ঘটেইনি এমন ভাবে অর্চিষ্মানের সঙ্গে কথোপকথনের ভঙ্গি করতে লাগলাম আর ঠিক তিন সেকেন্ডের মধ্যে টের পেলাম আমি আর এগোতে পারছি না। কেউ পেছন থেকে টেনে ধরেছে। ঘাড় নিচু করতেই দেখি মায়ের দেওয়া সাদা কুর্তার ওপর দিয়ে দু’খানা সরু সরু লোমশ বাদামি হাত আমার কোমর জাপটে ধরে আছে। 

আমার গলা বন্ধ হয়ে গেল। দূর থেকে একটা চেনা গলা চিৎকার করছে, ‘দিয়ে দাও কুন্তলা, শিগগিরি দিয়ে দাও!’ অর্চিষ্মান। ওই তিন সেকেন্ডের মধ্যে অন্তত তিনশো মিটার পেছনে পৌঁছে গেছে কী করে ভগবানই জানেন। 

কী দেব? আমার হাতে একটা প্লাস্টিকের প্যাকেটে একটা প্রায় খালি জলের বোতল আর এমারজেন্সিতে গ্লুকোজের সাপ্লাই বাড়ানোর জন্য একখানা পাঁচটাকার মাঞ্চ ছাড়া কিছুই নেই। পত্রপাঠ সে সবের মায়া ত্যাগ করলাম। কোমরের বেষ্টনী খুলে গেল, বাঁদর মনোযোগ সরিয়ে নিল, আশেপাশের লোক জ্ঞান দিয়ে গেল, দোষ বাঁদরের নয়, দোষ আমার। চকোলেট হাতে ঝুলিয়ে দেখিয়ে দেখিয়ে গেলে বাঁদরে না নিলেই অস্বাভাবিক। অর্চিষ্মান হাসতে হাসতে এগিয়ে এসে বলল, ‘জোর বাঁচা বেঁচেছি।’

সবথেকে বাজে ব্যাপার হল, বিজয়স্তম্ভের সামনের ঝকঝকে ঝাঁটপাট দেওয়া রাস্তায় আমার পলিথিন, জলের বোতল, মাঞ্চের মোড়ক ছিরকুটে পড়ে রইল। বাঁদরটার হাবভাব দেখে খাওয়া হয়ে গেলে সব কুড়িয়ে নীল রিসাইকল বিনে ফেলে দিয়ে আসবে বলে তো মনে হল না। কেউ রাস্তায় টফির মোড়ক ফেললেও আমি যে ‘এরা কারা’ ভেবে তাদের গুষ্টির তুষ্টি করি আর আমি যে এদের মতো নই সেই ভেবে বুক ফোলাই, সে গর্বের মুখে কালিলেপন হল আরকি।

আর টি ডি সি ক্যাফেতে বসে, চা ভেজ পকোড়া থামস আপ খেয়ে হার্টবিট স্বাভাবিক করে, আরেক বোতল জল কিনে আমরা চলতে শুরু করলাম। পথে অগুন্তি মন্দির, সব মন্দিরে আমরা ঢুকিনি। যে মন্দিরগুলোতে বেশিবেশি লোক ঢুকছিলেন আর পুজো দেওয়ার ধুম চলছিল, সেগুলো বিশেষ করে বাদ দিয়েছি। মিনিট পনেরো হেঁটে পৌঁছে গেলাম চিতোরগড়ের অন্যতম শ্রেষ্ঠ আকর্ষণ, এই বাজারে শ্রেষ্ঠতমও বলা যেতে পারে, রাণী পদ্মিনীর প্রাসাদে।


পদ্মাবতী কত সুন্দর ছিলেন আনি না, কিন্তু তাঁর প্রাসাদটি সত্যি সুন্দর। সবুজ জলের মধ্যে দাঁড়ানো একলা প্রাসাদ, জলের দিকে মুখ ফেরানো ঝরোখাখানা দেখলে সত্যি কেমন লাগে। এত দিন ধরে এত লোকের কল্পনার এফেক্ট যাবে কোথায়। একটা ফাঁকা দেখে ছায়াঘেরা জায়গায় বসে সেই ঝরোখার ছবি তুললাম। 

চিতোরের সবথেকে সুন্দর জিনিসটার অবশ্য ছবি তোলা যায় না। কারণ সেটা চোখে দেখা যায় না, হাতে ধরা যায় না। শুধু খাওয়া যায়। সেটা হচ্ছে হাওয়া। রোদে চাঁদি ফেটে যাবে, তেষ্টায় গলা শুকিয়ে যাবে, ধুলোয় জামাকাপড়ের বাইরে থাকা সারা গায়ে ধুলো লেপটে কিচকিচে হয়ে যাবে, কিন্তু একটু ছায়া দেখে দাঁড়ান, ঠাণ্ডা হাওয়ায় মনপ্রাণ জুড়িয়ে যাবে। আর যদি বারান্দা দেখে দাঁড়াতে পারেন তা হলে তো কথাই নেই। বারান্দা, জানালা, রেলিং-এর ঘুলঘুলির এপার ওপার সর্বক্ষণ হু হু হাওয়া বইছে। কবেকার হাওয়া কে জানে।

পদ্মাবতীর প্রাসাদ দেখতে দেখতে অনেকক্ষণ বসে রইলাম। গাইড বা অটো না নিয়ে এইটা একটা মস্ত লাভ হয়েছিল। কারও সময়ের প্রতি আমাদের দায় নেই, আমাদের সময়ের ওপর কারও অধিকার নেই, যতক্ষণ খুশি হাঁটো, যেদিকে খুশি হাঁটো, যেখানে খুশি বস, যতক্ষণ খুশি বস। আমরা এই সুবিধের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করেছি। মন্দিরের চাতালে, বারান্দার কোণায়, পোলের নিচে, যেখানে পেয়েছি যতক্ষণ খুশি বসে থেকেছি, কিনারায় ঢেউ তোলা আমপাতারা খসখস করে মাথার ওপর হাওয়া দিয়েছে, পেট ভরে সে হাওয়া খেয়েছি।

পদ্মাবতীর প্রাসাদ থেকে বেরিয়ে আমরা হাঁটা দিলাম সুরজপোলের দিকে। এই রাস্তাটা দিয়ে বেশি লোকে যায় না, পাঁচসাত মিনিট বাদে একটা গাড়ি আসে কি আসে না, দু’পাশে মাঠ আর ভাঙা দেওয়াল, দূরে পাহাড় ছাড়া আর কিচ্ছু নেই। এমনকি বাঁদরও না। খালি আমি আর অর্চিষ্মান। অর্চিষ্মান আর আমি। আর হাওয়া। 


সবাই রাত হলে ভূতের ভয় পায়, আমার কেজি ক্লাসের বন্ধু সৌগত বর্মণ বলেছিল, ভূত আসলে বেরোয় দুপুরবেলা। ‘সোঁ সোঁ করে হাওয়া দেয় শুনিসনি?’ তাছাড়া একটা গান না কবিতাও আছে শুনেছেন হয়তো, 'ঠিক দুক্কুরবেলা, ভূতে মারে ঢেলা…' ভয় দূরে সরিয়ে রাখার জন্য আমরা দুজন একে অপরকে পালা করে যে যার পুরোনো দিনের গল্প শোনাতে শোনাতে চললাম, কানের পাশে সোঁ সোঁ আওয়াজ তুলে ভূতুড়ে হাওয়ারা সে গল্প শুনতে এল। 


সূরজপোলের পাশেই ফতেপ্রকাশ প্রাসাদ, সেখানে এ এস আই-য়ের মিউজিয়াম আছে, সেটা আমাদের দেখার ইচ্ছেও ছিল,  কিন্তু মেরামতির জন্য বন্ধ থাকায় ইচ্ছে পূরণ হল না। আর ছিল পদ্মিনীর স্বামী রাণা রতনসিংহের মহল, সেটা কেল্লার মধ্যের একটা গ্রাম পেরিয়ে। পা ব্যথা করছিল বলে আর বিকেল চারটে বেজে গিয়েছিল বলেও আমরা সেদিকে যেতে শুরু করেও ক্ষান্ত দিলাম। অর্চিষ্মানকে বললাম, 'পরের বার এসে মিউজিয়াম আর রতনসিংহের বাড়ি দেখা যাবে।' তারপর মনে পড়ল এত দেখার জায়গা বাকি আছে, আর এদিকে আসা হবে না হয়তো।  ওই রতনমহল যাওয়ার পথেই রাস্তার দু’ধারে খুপরি খুপরি সারি সারি সরু ইটের খুপরিতে নাকি বাজার বসত। নাম ছিল মোতি বাজার। 

*****

চিতোরগড় থেকে উদয়পুর একশো বারো কিলোমিটার দূর। আধঘণ্টা অন্তর অন্তর সরকারি বাস ছাড়ে। অর্চিষ্মানের ভাড়া একশো পনেরো টাকা, আমার পঁচাশি। সকলেই পরামর্শ দিয়েছিলেন বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত যাওয়ার কোনও দরকার নেই, হোটেল থেকে দু’পা এগোলেই প্রতাপ চৌমাথা, সেখানে বাস থামবে। ভাগ্যিস পরামর্শ নিইনি। বাসস্ট্যান্ড থেকে বাসে ছাড়ার আগেই টের পেয়েছিলাম গতিক সুবিধের নয়, হোটেল পেরিয়ে বাস যখন প্রতাপ চৌমাথায় এল তখন লোক শুধু ছাদে উঠতে বাকি আছে। 

বাসজার্নি বলার মতো কিছু নয়। রুটির মতো ফ্ল্যাট জমি, তাতে ধুলোপড়া বেঁটে বেঁটে দুমড়ে যাওয়া শুকনো গাছেদের মধ্যে দিয়ে আড়াইঘণ্টা দক্ষিণপশ্চিম দিকে নাকবরাবর। উদয়পুরের কাছাকাছি এলে দিগন্তে পাহাড় উঁচু হয়ে ওঠে। আগেরবারও এয়ারপোর্ট থেকে এই রাস্তাতেই এসেছিলাম। পাহাড়ের গায়ে রাজকীয় পাঁচিলের ধ্বংসাবশেষ দেখেছিলাম, পাশে হনুমান না কীসের মন্দির। আগেরবার ফাঁকা ছিল, এবার দেখলাম এক নারী এক পুরুষ উবু হয়ে প্রণাম করছেন। 

উদয়পুরে খাবার জায়গা প্রচুর। আগেরবার আম্বরাইতে খেয়ে মন ভরে গিয়েছিল, কিন্তু রাজস্থানি থালি খাওয়া হয়নি। নটরাজ ডাইনিং হল অ্যান্ড রেস্টোর‍্যান্টের নাম শুনেছি সর্বত্র। এই দোকানেই অ্যান্থনি বোর্দে খেয়েছিলেন।  

অনেকে বলেন নটরাজের গুজরাটি থালিটাই নাকি বেশি জনপ্রিয়। শুনে আমার মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল। আমি রাজস্থান, গুজরাত দু’রাজ্যেরই খাবার খেয়েছি, দু’রাজ্যের লোকই ভীষণ ভালো রাঁধেন, কিন্তু আমার মতে রাজস্থানিরা একটু বেশি ভালো রাঁধেন। কাজেই গুজরাতি থালি খেতে হবে শুনে আমার মন একটু দমে গিয়েছিল, কিন্তু বেশিক্ষণ রইল না। কারণ থালির অধিকাংশ পদই কমন, খালি ডাল আর কঢ়ি রাজস্থান আর গুজরাতের আলাদা আলাদা। একটা নোনতা, একটা মিষ্টি। ওই দুটো পদের জোড়া বালতি নিয়ে ঘুরছিলেন পরিবেশকরা। জিজ্ঞাসা করছিলেন, রাজস্থানি ইয়া গুজরাতি? গুজরাতি বললে মিষ্টি ডাল আর মিষ্টি কঢ়ি দেবেন, রাজস্থানি বললে নোনতা। রাজস্থানি আর গুজরাতির তফাৎ সম্পর্কে সচেতন নন সেরকম খাইয়েদের ‘নমকিন ইয়া মিঠা’ বলেও পরিবেশন করতে শুনলাম। 


মাঝে যে দুটো জিনিস দেখছেন সেগুলো হচ্ছে স্টার্টার, ধোকলা আর পোপ্পাডোল না পোপ্পাগোল আমি শুনতে পাইনি, ব্যাপারটা হচ্ছে পাঁপড়ের মোড়ক দেওয়া আলুর শুকনো তরকারি। বোঝাই যাচ্ছে, খারাপ হওয়ার কোনও কারণ নেই। আমি ওটা তিনটে খেয়েছি। পুদিনার সবুজ চাটনি, লালটা হল রসুনের চাটনি, এছাড়া ঘি মাখানো রুটি, দু'রকমের ডাল, আলুর শুকনো সবজি, বরবটির মতো দেখতে কিছু একটার তরকারি, পনীর, কঢ়ি এবং কাস্টার্ড। প্রতিটি পদ ফার্স্টক্লাস খেতে।

নটরাজের থালি যথার্থেই আনলিমিটেড। পাঁপড় থেকে ধোকলা থেকে শুরু করে চাটনি পর্যন্ত। থালায় যা দেখছেন সব আপনি যত চান, যতবার চান, খেতে পারেন। পরিবেশকরা বারবার আসছিলেন, এমনকি কাস্টার্ড খাওয়ার সময়ও স্টারটার নিয়ে ঘুরে যাচ্ছিলেন। রিসেপশনে মালিক সম্ভবত, বসেছিলেন, এসে জানতে চাইলেন খাবার কেমন লাগছে। নটরাজের থালি কেজো এবং সুস্বাদু। তকতকে দোকান, হাস্যমুখী লোকজন। আমাদের খুব ভালো লেগেছে। ডিফেন্স কলোনির কাঠপুতলির মতো পাগড়ি চাপকান পরে পরিবেশন আর ময়ূরের ডিজাইনের ঘটি থেকে জল ঢেলে হাত ধোওয়ানোর বাড়াবাড়িও নেই, আবার অন্ধ্রভবনের মাছের বাজারসুলভ হট্টগোলও নেই। শান্তশিষ্ট, তকতকে, মাপমতো জমজমাট দোকান।

খাওয়ার পর আমাদের হাতে থাকবে আড়াইঘণ্টা, তার মধ্যে আমরা বাগোর কি হাভেলি মিউজিয়াম, যেটা আমাদের আগেরবার দেখা হয়নি, সেইটা দেখব। 

বাগোর কি হাভেলির কথা আগের বারই বলেছি আপনাদের। এই হাভেলির চাতালেই রাজস্থানি লোকনৃত্যের জমজমাট ফাংশান ধরোহর হয় প্রতি সন্ধ্যেয়। ইন ফ্যাক্ট, হাভেলি ঘুরে দেখার সময় কোণে তিনটে পেতলের হাঁড়ি রাখা দেখলাম, হাঁড়ির মুখে পোড়াপোড়া কী সব। ওইগুলোর মুখে আগুন জ্বালিয়েই নাচ হয়। চারদিকে কেউ ছিল না, একটা হাঁড়ি তুলে নিয়ে একটু দূরে চোখের আড়ালে কোথাও রেখে দিয়ে আসা যেত, নাচ শুরু হওয়ার সময় বেশ একটু উত্তেজনা হত। প্রস্তাব দেওয়ামাত্র অর্চিষ্মান আমার কনুই ধরে এমন জোরে হাঁটতে শুরু করে দিল যে সে সব আর করা হল না। 

একশো আটত্রিশটা ঘর, বারান্দা, ছাদ, নিয়ে বাড়ি বানিয়েছিলেন মেওয়ারের প্রধানমন্ত্রী অমরচাঁদ। একসময় বাগোর কি হাভেলির রমরমা ছিল। আঠেরোশো আটত্রিশ থেকে আঠেরোশো চুরাশি পর্যন্ত মেওয়ারের চারজন মহারাণা, সর্দার, স্বরূপ, শম্ভু এবং সজ্জন সিং ছিলেন এই বাড়িরই লোক। স্বাধীনতার কিছু আগে থেকেই বাগোর কি হাভেলির দৈন্যদশা শুরু হতে থাকে। উনিশশো ছিয়াশিতে ওয়েস্টার্ন জোন কালচারাল সেন্টারের হাতে যখন হাভেলির মালিকানা বর্তানো হয় তখন হাভেলির দৈন্যদশা। সেই অবস্থায় একটা ঘর এখনও সংরক্ষিত আছে। সরু সরু ইট দাঁত বার করা, ভাঙা কুলুঙ্গি, পুরো ভূতের বাড়ি। প্রথমে ভাবা হয়েছিল ওয়েস্টার্ন জোনের প্রতিভূ হিসেবে রাজস্থান গুজরাত এমনকি গোয়ার জিনিসপত্র নিয়ে হাভেলিতে মিউজিয়াম বসানো হবে, তারপর কর্তৃপক্ষ ঠিক করলেন এই হাভেলি এত বেশি রাজস্থানের, এর দরজাজানালা কুলুঙ্গি সিলিং-এ মেওয়ারি ছাঁদ এমন মাখামাখি হয়ে আছে যে গোয়ার জিনিসপত্র অতি বেখাপ্পা দেখাবে। কাজেই শুধু মেওয়ার অঞ্চলের হাতের কাজ, শিল্প, লোকাচারের নমুনা নিয়েই সাজানো হল বাগোর কি হাভেলির বর্তমান মিউজিয়াম। সে মিউজিয়ামে অস্ত্র আছে, পোশাক আছে, রান্নাবাটির হাতাখুন্তি আছে, রাজারাজড়াদের বিয়েশাদির আচারআচরণ নিয়ে পুতুলের ডিসপ্লে আছে।


আর আছে লেকের ওপর ঝুলন্ত ছোট ছোট ষড়ভুজ বারান্দা, বারান্দার দেওয়ালে কাঠ আর কাঁচের পাল্লা দেওয়া জানালা। সে জানালার পাশে দাঁড়ালে ঠাণ্ডা জলের হাওয়ায় শরীরমন জুড়িয়ে যায়। জানালা উঁকি মারলে দেখা যায় নিচে সবুজ শ্যাওলাঢাকা জলের মধ্যে সিঁড়ি মিলিয়ে গেছে, লৎপৎ করে জল ধাক্কা মারছে সিঁড়ির গায়ে। ওইখানেই চারটে পর্যন্ত বসে থাকা যেত হেসেখেলে। থাকাই উচিত ছিল, কিন্তু উচিত কাজ করতে পারি না বলেই তো জীবনের এই ছিরি। মিউজিয়ামের পঞ্চাশ টাকার টিকিটের মায়ায় অমূল্য হাওয়া খেলাম না। অর্চিষ্মানকে বলতে গেলাম, ‘পরের বার এসে এই জানালার পাশেই…’ তারপর মনে পড়ে গেল পরের বার নেই।

অবশ্য মিউজিয়ামটাও দেখার মতোই। মিউজিয়ামের প্রথম ঘরটার দরজার ওপর লেখা পুতলি সনসার, নিচে ওয়ার্ল্ড অফ ডলস। সে ওয়ার্ল্ডে পা রেখে আমাদের চোখ ঝলসে গেল। চতুর্দিকে পুতুল, নারী পুরুষ বাচ্চা বুড়ো হাতি ঘোড়া উট রাজা রাণী মন্ত্রী সান্ত্রী। ঝলমলে পোশাক পরে হাতপা এলিয়ে একে অপরের গায়ে ঠেসান দিয়ে বসে আছে। সিলিং থেকে ঝুলছে ভেলভেটের নকল টানাপাখা। আর দেওয়ালে লাগানো সত্যিকারের পাখার হাওয়ায় তাদের পরনের সাটিনের জামা অল্পঅল্প উড়ছে। 


একপাশে ছোটছোট রঙচঙে পুতুল, ঘরসাজানোর জিনিস সম্ভবত বিক্রির জন্য রাখা ছিল। পাগড়িবাঁধা তবলিয়া, হাঁড়ি মাথায় জল আনতে চলা রাজস্থানি রমণী, উঁচুমুখ উট। আমরা এমনিতে বেড়াতে গেলে কুটোটিও না কেনার পক্ষে, প্রথম কথা, দরকার নেই, দ্বিতীয় কথা, শখ করে উইকএন্ডে ঝাড়ামোছার আইটেম বাড়ানোর মতো বোকা আমরা নই। কিন্তু অমন ঝলমলে রঙচঙে পুতুল আর কাচ আর চুমকি আর জরি, আর টুংটাং ঘুঙুর বাঁধা ঝালর দেখলেই পার্স খুলে টাকা বার করতে ইচ্ছে করে। ভাগ্যিস বিক্রেতা কেউ বসে ছিলেন না, পয়সা বাজে খরচ হওয়া থেকে বেঁচে গেল। 

একটা ছিল পাগড়ির ঘর। প্রায় শ’খানেক রকম পাগড়ির প্যাঁচ নমুনা সহ ডিসপ্লে করা আছে। রেওয়ারি পাগড়ি, সিন্ধি পাগড়ি, গোল পাগড়ি, কান ঢাকা এবং না-ঢাকা, কুঁচি দেওয়া এবং না-দেওয়া। সে সব পাগড়ির প্যাঁচে নাকি লোকে চিরুনি আয়না ইত্যাদি গুঁজে ঘোরাঘুরি করত। পাগড়িরুমের শান এই বিরাট বিদঘুটে পাগড়িটি বানিয়েছেন গুজরাতের বরোদা নিবাসী শ্রী অবন্তী কুমার চাওলা। ডানদিক থেকে দেখলে এই পাগড়ির প্যাঁচ গুজরাতের, বাঁদিক থেকে দেখলে মধ্যপ্রদেশের, আর সামনে থেকে দেখলে রাজস্থানের। 


আর কিছু দেখার নেই, করারও নেই। কিন্তু সময় আছে এখনও ঘণ্টাখানেক। বাগোর কি হাভেলি থেকে সরু, তস্য সরু একটা গলি বেয়ে একশো মিটার মতো হাঁটলেই ঝিল’স ক্যাফে অ্যান্ড বেকারি। একতলায় জায়গা নেই, চারতলায় উঠলাম। ঝিল’স খুব নাম করেছে ইদানীং। নাম করার মতোই লোকেশন, আপনারা উদয়পুর গেলে যাবেন। হুহু করে হাওয়া আসা একটা জানালার পাশে বসে মোহিতো আর আসাম চা আর লাইম সোডা খেলাম। 


উবার ভাইসাব আমাদের পিক আপ করলেন দশ পা দূরের চাঁদপোল সেতুর সামনে থেকে। লেক পেরিয়ে ট্যাক্সি লেকের এধারে এসে পড়ল, এই রাস্তা দিয়ে হেঁটে হেঁটে আমরা প্রথম লেক পিচোলার ধারে কফি খেতে এসেছিলাম। এই যে বোগেনভিলিয়ায় ছাওয়া রাস্তাটা দিয়ে সোজা গিয়ে ডানদিকে বেঁকলেই… ওই যে রাস্তাটা উঁচুতে উঠে বাঁদিকে চলে গেছে, ওটার শেষে আনন্দ ভবন। ভবনের বাগানের শুকনো ফোয়ারায় কালো কুকুরটা এখনও গোল পাকিয়ে শুয়ে আছে নির্ঘাত। এই রাস্তা দিয়ে এগোলেই মোড়ের মাথায় কেশর ফুলিয়ে হাঁটু ভাঁজ করে দাঁড়িয়ে আছে ধপধপে চেতক। চেতককে প্রদক্ষিণ করে করে ট্যাক্সি চেতককে পেছনে ফেলে এগিয়ে এল। ট্যাক্সির টিন্টেড জানালার কাচ দিয়ে বাইরের ঝলমলে রোদ বোঝা যাচ্ছে না। মনে হচ্ছে মেঘ করেছে, বৃষ্টি নামবে এক্ষুনি। একটা কথা মাথায় এল। বলব বলে জানালা থেকে মুখ ঘুরিয়ে অর্চিষ্মানের দিকে তাকালাম, অর্চিষ্মানও তক্ষুনি জানালা থেকে মুখ ঘোরাল। বলল, “আবার আসব, হ্যাঁ?”

উঁচু দেখে একখানা হাই ফাইভ দিলাম।

                                                                                                                             (শেষ)

Comments

  1. যাক। নিশ্চিন্ত হওয়া গেল। বাঁদর গুলো তাদের ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। :)

    ReplyDelete
    Replies
    1. হ্যাঁ, বাঁদরামোর ধারাবাহিকতায় একেবারে গোল্ড মেডেল, চন্দ্রচূড়।

      Delete
  2. Achchha, oi Bijoy Stombher opor uthhte dyay? 2000 shale ami jokhon giyechhilam, tokhon diyechhilo. Opore uthee last step-e amar shin-bone-e dhakka khai. Fole besh lgechhilo, ar baki trip ta gole horibol hoye giyechhilo. Apni othar kotha ullekh koren ni , tai kotuhol holo je ekhno dyay kina!

    iti
    Shuteertho

    ReplyDelete
    Replies
    1. সুতীর্থ, বিজয়স্তম্ভের ওপর উঠতে দেয়, একেবারে ওপর তলায় ছাড়া। আমরাই উঠিনি উদ্যোগ করে আরকি।

      Delete
    2. Joddur mone podchhe, Stombher bhetore khub bhalo carvings achhe.

      Shuteertho

      Delete
    3. ওহ, তাই বুঝি। মিস হয়ে গেল তাহলে। পরের বার দেখব।

      Delete
  3. Ki bhalo ki bhalo. Chittorgarh amader miss hoye gechilo oi hotocchara karni sena der chokkore. Bador er golpo ta just first class. pore khub khanikta haslam jore jore. amio bador dekhlei akashe mukh tule hata mari. darjeeling e onek bador.

    ReplyDelete
    Replies
    1. ভালোই কর কুহেলি, বাঁদরদের সঙ্গে যেচে আলাপ করতে যাওয়া উচিত নয়।

      Delete
  4. Konta ki temple segulo sob lekha ache ki? Amar o rajasthan gele guide nebar icche nei.. sunechi tara eirokom bhulbhal galgolpo ar kothay kon movie shoot hoyechilo seguloi mainly bole..

    ReplyDelete
  5. Ami kodaikanal e gujrati restaurant e thali kheyechilam.. osadharon legechilo.. rajasthan tar thekeo bhalo sune ar thakte para jacchena..

    ReplyDelete
    Replies
    1. সব পরিষ্কার লেখা আছে, ঊর্মি। আর তোর হয়তো গুজরাতি রান্না রাজস্থানের রান্নার থেকে বেটার লাগবে, তবে দুটোই খুব ভালো খেতে।

      Delete
  6. iye, raajkahini te je porechilum meera bai rana kumbher rani, tahole seta bhul?

    ReplyDelete
    Replies
    1. সর্বত্র তো মীরাবাইয়ের স্বামীর নাম ভোজরাজ সিং লিখে রেখেছে, ঘনাদা।

      Delete
  7. পড়লাম, জানলাম, মনে মনে ঘুরলাম এমনকি গুজরাতি আর রাজস্থানী রান্নার গন্ধটাও যেন নাকে এল।

    ReplyDelete
  8. bah bor bhalo laglo. Tomar beranor golpogulo porle sob jeno chokher samne dekhte pai. Ekhane ekhon boro thanda tai chaileo tomar moton ghure ghure beranor upay nei, tai inspired hoye din chareker jonya Cancun er ticket kete fellam samner mashe.

    ReplyDelete
    Replies
    1. আরে দারুণ ব্যাপার তো, চুপকথা! খুব ভালো করে ঘুরে এস, তারপর বেড়ানোর গল্প পড়ব।

      Delete
    2. আলসেমি করে লিখে উঠতে পারবো কিনা জানিনা। আগের ডোমিনিকানে বেড়াতে যাবার গল্প আদ্ধেক লেখা হয়ে পরে আছে, কবে শেষ করব জানিনা। কি বলতো, অফিস আর স্কুল সামলে যেটুকু সময় বাঁচে তাতে হয় লেখা যায় নয় অন্যের লেখা পড়া যায়। দ্বিতীয় আকর্ষণটা এতটাই লোভনীয় যে প্রথমটার ভাগে সব সময়েই ফাঁকি পরে।

      Delete
    3. হাহা, সেঁটা ঠিকই বলেছ চুপকথা, লেখার থেকে পড়া অনেক বেশি আরামের।

      Delete
  9. বাঁদরের পার্ট্টায় খুব হেসে ফেলেছি ...বাকি লেখাটা ঘুরলাম :) চিতোরগড় যেতে হবে ...উঃ কত জায়গা যে ঘোরা বাকি দেখা বাকি

    ReplyDelete
    Replies
    1. আমারও সেই ভেবেই টেনশন হয়, প্রদীপ্ত।

      Delete

Post a Comment