দুটি পাঁচতারা পাঠ




Lincoln in the Bardo/ George Saunders



সেকেন্ড চান্স বিশেষ দিই না আমি কাউকে। কিন্তু সবসময় সেটা যে ভালো কথা নয় তা নতুন করে প্রমাণ করলেন জর্জ সন্ডার্স।

প্রভূত প্রশংসা পড়ে জর্জ সন্ডার্স-এর ছোটগল্প সংকলন ‘টেনথ ডিসেম্বর’ খুলে বসেছিলাম এবং ছিটকে গিয়েছিলাম। একটাদুটো গল্প শেষ করতে পারিনি, সত্যি বলতে। রিভিউ পড়ে জেনেছিলাম জর্জ সন্ডারসের অনুরাগীদের ওই গল্পগুলোই নাকি অসামান্য লেগেছে। পাঠক লেখকের যে মেলবন্ধন ঘটলে পাঠের আরাম ঘটে, আমার দিক থেকে সেটা সম্পূর্ণ অধরা থেকে গিয়েছিল।

তবু যে আমি ‘জয় মা’ বলে জর্জ সন্ডার্সের প্রথম উপন্যাস ‘লিংকন ইন দ্য বার্ডো’ নিয়ে বসলাম সে জন্য নিজের পিঠ নিজেই চাপড়াচ্ছি। সেকেন্ড চান্স অনেকসময় যে পাচ্ছে তার থেকেও কখনও কখনও যে দিচ্ছে তার পক্ষে বেশি জরুরি। সন্ডার্স তো জীবনের প্রথম উপন্যাস লিখে বুকার পেয়েই গেছেন, আমার সেকেন্ড চান্স দেওয়া না দেওয়ায় তাঁর মাথার একটা চুলও এদিকওদিক হবে না। কিন্তু আমি যদি ‘টেনথ ডিসেম্বর’-এর অভিজ্ঞতা পুষে 'লিংকন ইন দ্য বার্ডো’ না পড়তাম, তাহলে আমার এ বছর এবং শুধু বছর কেন গোটা পাঠজীবনের নিরিখেই, অন্যতম একটি শক্তিশালী রচনা না-পড়া থেকে যেত।

লিংকন ইন দ্য বার্ডো-র বীজ একটি সত্য ঘটনা। আঠেরোশো বাষট্টি সালে, প্রেসিডেন্ট লিংকনের তৃতীয় পুত্র, কেউ কেউ বলেন প্রিয়তম পুত্র, উইলিয়াম মারা যায়। মাত্র এগারো বছর বয়সে। কথিত আছে উইলকে সমাধিস্থ করার পরও কিছুদিন অ্যাব্রাহাম লিংকন শোকে অধীর হয়ে সমাধিস্থলে আসতেন এবং সন্তানের সংরক্ষিত মৃত শরীর আলিঙ্গন করতেন। এক আত্মীয়ের মুখে এ কথা শুনে সন্ডারসের মাথায় আইডিয়া খেলে গেল। সারা জীবন লেখা শেখানোর অধ্যাপনা চালিয়ে, ছোট গল্প, ছোটদের গল্প,  কলাম, নভেলা লিখে, বহু সম্মান এবং পুরস্কার জিতে,  অবশেষে তিনি জীবনের প্রথম পূর্ণাঙ্গ উপন্যাস লিখতে বসলেন। দু’হাজার সতেরো সালে সে উপন্যাস প্রকাশ পেল এবং জর্জ সন্ডারসের মুকুটে জুড়ল ম্যান বুকার।

লিংকন এবং তস্যপুত্র উইলকে ঘিরে ঘটনা হলেও এই উপন্যাসের মুখ্য চরিত্র এঁরা নন। মুখ্য চরিত্র হচ্ছেন  “আ বাঞ্চ অফ ঘোস্টস।”  এই ভূতেরা বাস করে সেই কবরখানায় যেখানে লিংকনপুত্র উইল সদ্য সমাধিস্থ হয়েছে। বার্ডো শব্দটি বৌদ্ধধর্ম থেকে ধার নেওয়া, যদিও আমাদেরও এই কনসেপ্ট আছে। বার্ডো হল মৃত্যু এবং পুনর্জন্মের মাঝামাঝি অঞ্চল। বার্ডোর পরিবেশ বিষণ্ণ এবং বিপদসংকুল। সেখানে বারো ভূত ঘুরে বেড়ায়। এরা বেশিরভাগই চাইলেই অন্যপারে চলে যেতে পারে, কিন্তু যায় না।  অন্যপারের অনিশ্চয়তার প্রতি গভীর সন্দেহাকুল হয়ে এবং ফেলে আসা জীবনের স্মৃতিলাঞ্ছিত হয়ে বার্ডোর আধিভৌতিক মাটি আঁকড়ে পড়ে থাকে। 

এমন সময় এঁদের জীবনে আসে উইল। ছোট্ট উইল। বার্ডোবাসীরা বিষণ্ণ হয়। এই বীভৎস পরিবেশ একটি শিশুর পক্ষে অনুপযুক্ত। সবাই মিলে উইলকে বলে, এবার এইখানেই মানিয়েগুছিয়ে নাও। যদি অন্যপারে চলে যেতে চাও চলে যেতেও পারো (কারণ থেকে যাওয়ার জন্য যে ফাইট দেওয়ার দরকার, রোমহর্ষক সে ফাইটের রুদ্ধশ্বাস বর্ণনাও আছে গল্পে, তা ওইটুকু বালকের থেকে আশা করা অনুচিত।)

গম্ভীর বালকটি পা ঝুলিয়ে বসে থাকে নিজের সমাধিপ্রস্তরের ওপর। বলে, আমি কোথাও যাব না। আমার বাবা আমাকে নিতে আসবেন। 

ভূয়োদর্শী ভূতেদেরও মন দ্রব হয়। ম্লান হেসে বলে, আসবে তো বটেই, কপাল ভালো হলে কবরে বছরে একবার করে ফুল দিতে আসবে কেউ কেউ। গোড়ার দিকে প্রত্যেক বছর আসবে, তারপর এক বছর বাদে বাদে বাদে। একদিন সেটুকুও ঘুচবে। তারপর সমাধি জুড়ে ঘাস, মাকড়সার জাল আর বিস্মৃতি। বলে নিজেদের সমাধির দিকে হাত ঘুরিয়ে দেখায়।

বালক অনড়। আমার বাবা আসবেন। কথা দিয়েছেন। আর আমার বাবা কথার খেলাপ করেন না। 

বার্ডোবাসীরা সবে বালকের ছেলেমানুষিতে মাথা নাড়তে যাবে এমন সময় এক দূত ভূত হাঁপাতে হাঁপাতে এসে হাজির। কেউ আসছে। সঙ্গে কোনও কফিন নেই, মিছিল নেই, একলা একটা লোক। লোকটা ক্রমে দৃষ্টিগোচর হয়। দীর্ঘ, মেদহীন শরীর ঝুঁকে পড়েছে। কদাকার মুখের খাঁজে খাঁজে শোকের শিকড়। ধীর অচঞ্চল পায়ে হেঁটে এসে লোকটা উইলিয়াম ওয়ালেস লিংকনের (?) সমাধিকক্ষের ভেতর ঢুকে পড়ে, এবং ভিড় করে দাঁড়ানো স্তম্ভিত ভূতকুলের মুখ থেকে বেরোনো বিস্ময়সূচক অস্ফূট আর্তনাদ অগ্রাহ্য করে, কফিনের ঢাকনা খুলে প্রাণহীন দেহটিকে কোলে তুলে নিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে। 

বার্ডোর কে জানে কত বছরের ইতিহাসে এ জিনিস আগে কখনও ঘটেনি। সকলে স্তম্ভিত হয়ে যায়। লিংকন খানিকক্ষণ পর শান্ত হয় ছেলেকে আলিঙ্গনমুক্ত করে কফিনে ফের শুইয়ে দিয়ে চোখ মুছে চলে যান এবং পরের রাতে আবার ফিরে আসেন। বার্ডোতে হইহই পড়ে যায়। তাদের মনে পড়ে,

“…we had been considerable. Had been loved. Not lonely, not lost, not freakish, but wise, each in his or her own way. Our departures caused pain. Those who had loved us sat upon their beds, heads in hand; lowered their faces to tabletops, making animal noises. We had been loved, I say, and remembering us, even many years later, people would smile, briefly gladdened at the memory.” 

শেষ করার পর বইটাকে ফাইভ স্টার দিলাম এবং ভাবতে বসলাম লিংকন ইন দ্য বার্ডো কেন আমাকে এমন মন্ত্রমুগ্ধ করল আর কেনই বা টেনথ ডিসেম্বর করল না। শেষমেশ এটাও একটা ‘এক্সপেরিমেন্টাল’ উপন্যাস। সন্ডার্সও সন্ডার্সই আছেন, অন্য লেখক হয়ে যাননি। তাঁর ম্যানারিজম ‘টেনথ ডিসেম্বর’এও যা ছিল, বার্ডোতেও ভরপুর আছে। তাছাড়া লেখার ফরম্যাটিং-এও প্রচুর নভেলটি। থিয়েটারি ঢঙে সংলাপের পর চরিত্রের নাম। সাধারণ গল্পউপন্যাসে যে রকম ডায়লগ ট্যাগের সঙ্গে আমরা অভ্যস্ত সে রকম নয়। 

ভেবে ভেবে আমি বার করেছি, এই ভিন্ন প্রতিক্রিয়ার জন্য বিষয়বস্তুর থেকেও রচনার দৈর্ঘ্য দায়ী। ছোটগল্পের পরিসরে আমার পক্ষে লেখকের স্টাইলের অভিনবত্বটাই ছোঁয়া সম্ভব হয়েছিল। বলা বাহুল্য, ইমপ্রেসড হইনি। টেনথ ডিসেম্বর-এর একটি বিরল নেগেটিভ রিভিউতে আমার অতৃপ্তির প্রতিফলন পেয়েছিলাম যখন সমালোচক জিজ্ঞাসা করেছিলেন, "হোয়্যার ইজ দ্য হার্ট?” কিন্তু লিংকন ইন দ্য বার্ডো-তে সে হৃদয়হীনতা (বা সে হৃদয়ের খোঁজ আমার না পাওয়াটা) বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। তিনশো তেতাল্লিশ পাতা জুড়ে জর্জ সন্ডার্স এক অভিনব দুনিয়া গড়েছেন, চরিত্রদের বুনেছেন, তাদের প্রতি আমাদের ভালোলাগা, অনুরাগ, বীতরাগের এমন জন্ম দিয়েছেন যাতে উপন্যাসের রুদ্ধশ্বাস অন্তে তাঁদের, হ্যাঁ ভূতেদেরই, বাঁচামরা নিয়ে আমরা নখ কামড়াচ্ছি। প্রাণপণে প্রার্থনা করছি ভূতের রাজার কাছে ওর, আর ওর, আর ওই যে দূরে দাঁড়িয়ে আছে  ওরও, যেন কোনও ক্ষতি না হয়।

শোক, আশা, স্মৃতি, মায়া, আক্ষেপ, আকুলতা, ক্লিশের একেবারে বাইরে গিয়ে এমন ভাবে যে লেখা যায়, ভাবা যায় না। চন্দ্রহীন রাতে কুয়াশার ভেতর হাঁটতে হাঁটতে যখন ভূতেরা ফেলে আসা জীবনের প্রতি তৃষিত দৃষ্টিতে তাকাবে, আপনার বুক হু হু করবে। সন্তানহারা পিতার শোকে আপনি আর্ত হবেন। উইল যখন বাবার পাশে দাঁড়িয়ে দেখবে আদরের অপেক্ষায় চুপটি করে কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা সত্ত্বেও তাকে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে বাবা কেমন ওই ওর শরীর চুরি করে শুয়ে থাকা ওই ফাঁপা, ঠাণ্ডা মড়াটাকে জাগানোর আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন তখন বাবার মনোযোগ কাড়ার মরিয়া প্রচেষ্টায় সে বাবার শরীরের মধ্যে অর্ধেক প্রবেশ করবে, আর আতংকিত হওয়ার বদলে গোটা পরিস্থিতির অসহায়তায় আপনার হৃদয় আর্দ্র হবে।

অসামান্য ট্যালেন্ট এবং অপরিমেয় প্র্যাকটিস ছাড়া ভাষা দিয়ে এমন ছবি আঁকা যায় না। 

অচিরেই কানাঘুষোয় প্রকাশ হয়ে পড়ে যে যিনি আসছেন তিনি একলুফেকলু নন, স্বয়ং প্রেসিডেন্ট অফ দ্য স্টেটস। এই নিয়ে গোড়ায় প্রভূত সংশয়ের সৃষ্টি হয়, কারণ বুড়োহাবড়া ভূতও তো কম নেই, তাঁদের কাছে প্রেসিডেন্টের পরিচয় সম্পূর্ণ আলাদা। লিংকন ইন দ্য বার্ডো-র আরেকটি দিকের কথা উল্লেখ না করলে অবিচার হবে, তা হচ্ছে জর্জ সন্ডার্সের রসবোধ। অসামান্য রসবোধ। উপন্যাসে বার্ডোর বাইরেরও কিছু দৃশ্য আছে। হোয়াইট হাউসের প্রকাণ্ড পার্টির বর্ণনা, গুরুত্বপূর্ণ রাজনীতিকদের মিটিং ইত্যাদি। সে সময়ের রাজনীতি এবং অ্যামেরিকান রাজনীতিতে লিংকনের প্রভাবের প্রসঙ্গও অবশ্যম্ভাবী ভাবেই ওঠে। কিন্তু আমার কাছে লিংকন ইন দ্য বার্ডো ‘ঐতিহাসিক’ নয়। আমার কাছে লিংকন ইন দ্য বার্ডো-র জয় সেখানেই। ইতিহাসের হলেও এ গল্প ইতিহাসলাঞ্ছিত নয়, আগাপাশতলা ভূতের গল্প। ভুতেদের গল্প। 

বইটার অনেক জায়গাই আপনাদের শোনাতে ইচ্ছে করেছিল কিন্তু একটা জায়গাই তুলে দিচ্ছি। বার্ডোর শত শত বাসিন্দাদের মধ্যে যে কয়েকজনের সঙ্গে পাঠকের পরিচিতি গভীরতর হয় তাঁদের মধ্যে একজন যুবক ভূত মিস্টার রজার বেভিনস।

"…One afternoon, a day or so after a particularly frank talk, in which Gilbert stated his intention to henceforth “live correctly,” I took a butcher knife to my room and, after writing a note to my parents (I am sorry, was the gist), and another to him (I have loved, and therefore depart fulfilled), I slit my wrists rather savagely over a porcelain tub. 

Feeling nauseous at the quantity of blood and its sudden percussive redness against the whiteness of the tub, I settled myself woozily down on the floor, at which time I - well, it is a little embarrassing, but let me just say it: I changed my mind. Only then (nearly out the door, so to speak) did I realize how unspeakably beautiful all of this was, how precisely engineered for our pleasure, and saw that I was on the brink of squandering a wondrous gift, the gift of being allowed, every day, to wander this vast sensual paradise, this grand marketplace lovingly stocked with every sublime thing: swarms of insects dancing in slant-rays of August sun; a trio of black horses standing hock-deep and head-to-head in a field of snow; a waft of beef broth arriving breeze-borne from and orange-hued window on a chill autumn - 

…Knowing that my only hope was to be found by one of the servants, I stumbled to the stairs and threw myself down. From there, I managed to crawl in the kitchen - 

Which is where I remain. 

I am waiting to be discovered (having come to rest on the floor, head against the stove, upended chair nearby, sliver of an orange peel against my cheek), so that I may be revived, and rise and clean up the awful mess I have made (Mother will not be pleased), and go outside, into the beautiful world, a new and more courageous man, and begin to live! Will I follow my predilection? I will! With Gusto! Having come so close to losing everything, I am freed now of all fear, hesitation, and timidity, and, once revived, intend to devoutly wander the earth, imbibing, smelling, sampling, loving whomever I please; touching, tasting, standing very still among the beautiful things of this world, such as, for example: a sleeping dog dream-kicking in a tree-shade triangle; a sugar pyramid upon a blackwood tabletop being rearranged grain-be-grain by and indiscernible draft; a cloud passing ship-like above a rounded green hill, atop which a lone of coloured shirts energetically dance in the wind, while down below in town, a purple-blue day unfolds (the muse of spring incarnate), each moist-grassed, flower-pierced yard gone positively mad…."

জর্জ সন্ডার্সের ‘লিংকন ইন দ্য বার্ডো’তে হার্ট আছে। বিপুল, বিস্তৃত হৃদয়। আর সে আছে সেই হৃদয়কে এমন গভীরতায় ছোঁয়া, যা কেবল জিনিয়াসেই পারে। 

***** 

Early Indians: The Story of Our Ancestors and Where We Came From/ Tony Joseph


এ মাসের দ্বিতীয় পাঁচতারা বইটি আমাকে পড়ানোর কৃতিত্ব প্রথমতঃ, অর্চিষ্মানের। দ্বিতীয়তঃ, আজকাল বই পড়ার বিবিধ আধুনিক প্রকরণের। জগরনট প্রকাশনীর অ্যাপে এই অমূল্য বইখানি পাওয়া যাচ্ছিল মাত্র আশি টাকায়, কাজেই ইচ্ছে হওয়ামাত্র যে জোগাড় করে বইটা পড়ে ফেলা গেল তার একটা কৃতিত্ব অনলাইন পড়ার অ্যাপগুলির প্রাপ্য। 

সূচনা, উপসংহার ছাড়া আর্লি ইন্ডিয়ানস বইটি চারটি পরিচ্ছেদ আছে। দ্য ফার্স্ট ইন্ডিয়ান, দ্য ফার্স্ট ফারমারস, দ্য ফার্স্ট আরবানাইটসঃ দ্য হরপ্পানস, দ্য লাস্ট মাইগ্রেন্টসঃ দ্য ‘আরইয়ানস’।  মডার্ন হিউম্যানদের আফ্রিকা থেকে যাত্রার সূচনা এবং হাজার হাজার বছর ধরে তাঁদের পৃথিবীর নানান প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ার ধরতাই দিয়ে টোনি জোসেফ অধুনা ভারতবর্ষ নামধারী ভূখণ্ডে প্রথম ভারতবাসী বা ফার্স্ট ইন্ডিয়ানস-দের পা রাখার গল্পে চলে এসেছেন, যারা কিনা কমবেশি পঁয়ষট্টি হাজার বছর আগে উত্তরপশ্চিম কোণা দিয়ে ঢুকে সারা ভারতে ছড়িয়ে পড়েছিল। 

প্রশ্ন উঠবে, তার আগে কি ‘মানুষ’ ছিল না অধুনা ভারত নামের ভূখণ্ডে? অবশ্যই ছিল। নন-সেপিয়েন্স এবং সেপিয়েন্স ’হোমো’ প্রজাতির লোকেরা ভারতবর্ষের ভূখণ্ডে রয়েছে বহু বছর ধরে। বছর তিনেক আগে আমি আর অর্চিষ্মান তাদের প্রমাণও দেখে এসেছি। ভোপালের ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে, প্রাণী ও উদ্ভিজ্জসম্পদে পরিপূর্ণ, প্রকৃতিনির্মিত গুহাঘেরা ভিমবেটকা।

"In the world of early humans, this must have been the equivalent of a much sought-after luxury resort. Ever since it was first occupied some 100,000 years ago, it has never lain vacant for too long, and it is easy to imagine there having been a long waiting list to get in. A place so well liked that millennia after millennia, one or the other Homo species, including our own ancestors, the Homo Sapiens lived and hunted and painted and partied there."

কিন্তু টোনি জোসেফের বইয়ের ফার্স্ট ইন্ডিয়ানস বলতে এঁদের বোঝানো হচ্ছে না। বোঝানো হচ্ছে তাঁদের, যাঁদের ‘ডিরেক্ট অ্যানসেস্ট্রি’র প্রমাণ এখনও বর্তমান ভারতবর্ষে বসবাসকারীদের মধ্যে জ্বলজ্বলে। 

"When we say ‘first modern humans in India’ we also often mean to say the earliest direct ancestors of people living in India today. …Who successfully settle down and leave behind a lineage of people still found in India."

এই মানুষগুলো  ভারতবর্ষে এসেছিলেন প্রায় পঁয়ষট্টি হাজার বছর আগে। দেড়শো-দুশোজন সাকুল্যে, কুড়ি পঁচিশজনের দল বানিয়ে ভারতের উত্তরপশ্চিম প্রান্তে এসে বাসা বেঁধেছিলেন। বর্তমান ভারতবর্ষের বিরাট সংখ্যক মহিলার শরীরে এই দলে আসা নারীদের ডি এন এ থাকার সম্ভাবনা প্রবল (প্রায় পঁয়ষট্টি শতাংশ)। এর থেকে বেশি থ্রিলিং কোনও থ্রিলার হতে পারে কি না আমার জানা নেই।

বইটা পড়তে পড়তে যেটা সবথেকে বেশি  আমাকে মুগ্ধ করেছে তা হল মানবসভ্যতার ইতিহাস খুঁজে বার করার প্রক্রিয়াটা কী ভীষণ গোয়েন্দাগল্পের মতো। ডি এন এ-র প্যাঁচ, হাঁড়ির মুখের কল্কা, কবরের ভেতর ধনসম্পদের রকম, মূর্তির খোঁপার ডিজাইন এই সব আমাদের প্রজাতির ইতিহাসের রহস্য উন্মোচনে মারাত্মক জরুরি ক্লু। এছাড়াও নদীর চলন, খাদ্যাভ্যাস, ফসলের প্রসার, রোগের ছোঁয়াচ, মুদ্রার ডিজাইন, ভাষার মিল, শব্দের মিল ইত্যাদির লেজ ধরে হাজার হাজার মাইল দূরের দুটি সভ্যতার মধ্যে সাঁকো স্থাপন করা সম্ভব। আর এত সব করতে হয় বলেই, প্রত্নতত্ত্ব, জিনতত্ত্ব, ভাষাতত্ত্ব, চিকিৎসাবিদ্যা, কৃষিবিদ্যা, অভিবাসনের চর্চা ইত্যাদি সমস্ত বিষয়ের সহযোগ ছাড়া আমাদের এই পৃথিবীতে ক্ষণস্থায়ী কিন্তু ঘটনাবহুল সভ্যতার মোড়ক খোলা সম্ভব নয়।

টোনি জোসেফ অত্যন্ত পটুত্বের সঙ্গে এই সমস্ত বিষয়ের দৃষ্টিকোণ থেকে ভারতে আধুনিক মানুষের বসতি স্থাপন থেকে শুরু করে আর্যদের আগমন পর্যন্ত সময়টির ওপর আলো ফেলেছেন। বইটির ভাষা এতই সাবলীল যে আমার মতো পাঠকরা যারা এ সব বিষয়ের কিছুই জানে না, জানার দুর্মর আগ্রহও বোধ করেনি কোনওদিন, তারাও রসাস্বাদন করতে পারবে। একটি সার্থক 'পপুলার' গবেষণাধর্মী নন-ফিকশন বইয়ের সমস্ত বৈশিষ্ট্য 'আর্লি ইন্ডিয়ান্স'-এ বিদ্যমান। সবথেকে ভালো ব্যাপার পপুলার হওয়া সত্ত্বেও বইটিতে কোনওরকম শর্টকাট নেওয়ার চেষ্টা করা হয়নি। প্রশ্ন উঠতে পারে, আমি যেহেতু কোনও বিষয়টাই জানি না, তাই লেখক শর্টকাট নিয়েছেন কি না সে সম্পর্কে নিশ্চিত হচ্ছি কী করে। একটা আভাস তো মেলে। অতি খারাপ ছাত্ররাও টের পায় কোন দিদিমণি খেটে পড়াচ্ছেন আর কে ফাঁকি দিচ্ছেন। আমি সে রকম কিছু টের পাইনি।

আর্লি ইন্ডিয়ানস-এর দ্বিতীয় অধ্যায়ে জোসেফ জাগ্রোস কৃষিজীবীদের ভারতে আগমন এবং সভ্যতা স্থাপনের আলোচনা করেছেন, তৃতীয় অধ্যায়ে বিশ্লেষণ করেছেন সেই কৃষিসভ্যতা থেকে হরপ্পান নগরসভ্যতার উদ্ভব। হরপ্পা মহেঞ্জোদারো আমরা তো সেইক্লাস ফাইভ থেকে পড়ে আসছি, চেনা ছবিগুলো দেখলেই মন ভালো হয়ে যায়। বালা পরা হাত কোমরে রেখে দাঁড়িয়ে থাকা ওই মেয়েটি, ওই গরুর গাড়িটি, ওই দাড়িওয়ালা লোকটার মুখটা আমার  সেই কবেকারচেনা।

এই হরপ্পা সভ্যতা আমাদের পূর্বসূরীদেরই সভ্যতা কাজেই তাকে নিয়ে গর্ব করলে দোষ নেই। হরপ্পার সবথেকে মনকাড়া বৈশিষ্ট্যটি আমার মতে ছিল এর public infrastructure-এর প্রতি মনোযোগ, not private palaces.

No contemporary civilization, whether Egyptian, Mesopotamian or Chinese, had anything similar on offer when it came to public conveniences for residents or guests. ব্যবসাবাণিজ্যেও আমরা উন্নতি করেছিলাম। If there were an ‘ease of doing business’ ranking in the third millennium BCE, the Harappans would have been front runners, along with the Egyptians perhaps, who also had a similar, standardised weighing system. 

হরপ্পানদের সঙ্গে আমাদের মিলের অন্ত নেই। Perhaps the most important distinction of the Harappan Civilization was its sheer size - at its height, it may have covered almost a million square kilometres, more than the Mesopotamian and Egyptian civilisations combined. The Harappan Civilisation is also likely to have had the largest population of any contemporary civilisation - which is not surprising, considering that we were the largest modern human population even as far back as 20,000 years ago, …. South Asia being the centre of modern human population is not a new phenomenon - it is just an ancient track record that we continue to maintain. 

সঙ্গত কারণেই, বইয়ের সবথেকে আলোচিত এবং রোমহর্ষক অধ্যায় হচ্ছে চতুর্থ এবং শেষ অধ্যায়। ‘দ্য লাস্ট মাইগ্রেন্টসঃ দ্য ‘আরইয়ানস’। পূর্ব এবং মধ্য ইউরোপ থেকে এই পশুপালক গোষ্ঠী ভারতবর্ষের সীমানায় উপস্থিত হওয়ার অনেক আগেই  জলবায়ুগত অসুবিধের কারণে হরপ্পা সভ্যতার পাততাড়ি গুটিয়েছিল। প্রত্নতাত্ত্বিক এবং জিনতাত্ত্বিক দু’রকম  প্রমাণ থেকে তাদের রুট আন্দাজ করা যায়।  আবার বসতিস্থাপনের উপযুক্ত পরিবেশের খোঁজে হরপ্পানরা দক্ষিণে সরতে শুরু করে। এই যাত্রাকেই সম্ভবতঃ অগস্ত্যযাত্রার সঙ্গে তুলনা করা যায়। যে সব ফার্স্ট ইন্ডিয়ানরা অলরেডি দাক্ষিণাত্যে বাসা বেঁধেছিল, তাদের সঙ্গে উত্তর থেকে নেমে আসা হরপ্পানরা মিশে গিয়ে তৈরি হয় ‘অ্যানসেস্ট্রাল সাউথ ইন্ডিয়ানস’ আর উত্তরে ফার্স্ট ইন্ডিয়ানস, জাগ্রোস কৃষিজীবী, হরপ্পান নগরজীবী আর আর্য পশুপালকজীবীদের মিশ্রণে তৈরি হয় ‘অ্যানসেস্ট্রাল নর্থ ইন্ডিয়ানস’।

মোদ্দা কথা, 

"By the time the last migrants, the ‘Aryans’ arrived sometime after 2000 BCE, Indians in the subcontinent were already one of the largest modern human populations on earth (if not the largest); had already led an agricultural revolution and then an urban revolution leading up to the creation of the largest civilisation of its time; and were spearheading an agricultural transition in almost every region, in the north, south, east and west. It would be accurate to say that the very foundation of India as we know it was laid during the period of the Harappan Civilisation."

এইখানে এসেই এই বিস্ময়কর বইটি বিতর্কিত বইতে পরিণত হয়। কারণ বইটি ভারতীয় সংস্কৃতিসভ্যতায় আর্যদের প্রভাব, অবদান এই নিয়ে আমাদের মনগড়া ধারণাটার মূলে আঘাত করে। ভারতীয় সভ্যতাসংস্কৃতির ওপর সংস্কৃত, বেদবেদান্তর জমিদারি নিয়ে প্রশ্ন তোলে। জানতে চায়,  বেদে কী ছিল সেই নিয়ে চিল্লিয়ে আমরা গলার শির ফোলালাম, অথচ বেদেরও আগে যে কতকিছু ছিল সে নিয়ে মাথাই ঘামালাম না কেন? পূর্বসূরী বাছতে বললে কেন আমরা কালোকোলো, বোঁচানাক, কৃষিজীবী, নগরজীবী সভ্য মানুষের বদলে প্রত্যেকবার খাড়ানাক ফ্যাকাসে চামড়া ধূলিধূসরিত ভ্যাগাবন্ড পশুপালকদের বাছি এবং গর্বে আত্মহারা হই?

এরপর প্রসঙ্গ ওঠে আত্তীকরণের। শুরুশুরুতে নিজের স্বাতন্ত্র্য রক্ষা করার যে মরণপণ সংগ্রামটা থাকে, তা ক্রমে ঝিমিয়ে পড়ে এবং অন্যদের আচারবিচার ভালোমন্দ স্বাভাবিক নিয়মেই ঘরের ভেতর ঢুকে আসে। হরপ্পায় যে ফ্যালিক সিম্বল মারাত্মক প্রচলিত ছিল, ঋকবেদে সেই ‘শিশ্নদেবতা’র প্রতি বিদ্বেষ এবং বারণ উপনিষদে পৌঁছতে পৌঁছতে অ্যাকসেপ্টেন্সে পরিণত হয়েছে। ভাষার মধ্যে দিব্যি হাত পা ছড়িয়ে বসেছে দ্রাবিড় ভাষাগোষ্ঠীর অভিধান থেকে আসা বহু শব্দ। সর্বাধিক ব্লাসফেমি, আমাদের বৈদিক ‘ইয়োগা’ যা এক্সপোর্ট করে আমরা জগতসভায় শ্রেষ্ঠ আসন লব এবং আবারও ভোটে জিতব, তার কোনও উল্লেখ ঋকবেদে ছিল না। ছিল অনেক পরের কথা উপনিষদে। এ ছাড়া আর কোথায় যোগা ছিল বলুন দেখি? ঠিক ধরেছেন, হরপ্পান সিলমোহর আর মূর্তির বিভঙ্গে।

বলা বাহুল্য, লোকে নিজের চোখে দেখা জিনিসের একেকরকম সত্যমিথ্যে ঠাওরায়, এ তো হাজার দু’হাজার পঁয়ষট্টিহাজার বছর আগের কথা। আমরা যেহেতু কেউ পঁয়ষট্টি হাজার কেন, দুহাজার বি সি ই-তেও বেঁচে ছিলাম না, কাজেই কী হয়েছিল, কে কার আগে এসেছিল, কে এসে কাদের মেরে তাড়িয়েছিল নাকি তারা স্বেচ্ছায় গিয়েছিল সে সব নিয়ে বহুধাবিভক্ত মত থাকবেই। টোনি জোসেফ যে সব বই, পেপারের রেফারেন্স দিয়েছেন, ঠিক তার উল্টো দাবি করা বই, পেপারও লিখেছেন অনেকেই। জোসেফ সেগুলো কার্পেটের তলায় চাপা দেননি। সেগুলোর উল্লেখ করেছেন এবং প্রমাণ দিয়ে সে দাবিগুলো খণ্ডনও করেছেন। 

টোনি জোসেফ আর্লি ইন্ডিয়ানস লিখে একটা ব্যক্তিগত উপকারও করেছেন আমার আর অর্চিষ্মানের, তা হল প্রাচীন “ভারতীয়” সভ্যতা সম্পর্কে আমাদের উত্তেজিত করে তোলা। পড়ে থেকে ভাবছি ভিমবেটকাটা আরেকবার যাই। আগেরবার যাকে আঁকিবুকিওয়ালা গুহা বলে চিনেছিলাম , এবার সেটাকে প্রাচীন মানুষদের যৌবনের উপবন, বার্ধক্যের বারাণসী হিসেবে জানব। গরমটা একটু কমলে ঢোলাভিরা যাব। আমেদাবাদ থেকে সোজা রাস্তা, দুপাশে নুনের মরুভূমির মাঝখান দিয়ে। হিসেব কষা রাস্তার দুপাশে মাপজোক আঁটা শহরপরিকল্পনার চিহ্ন দেখে চমৎকৃত হব। পূর্বপুরুষদের অবিমৃষ্যকারিতায় যদি মাথা নাড়ি, ভাবি এ রকম জায়গায় বাড়িই বানাবে না কেউ আর তাঁরা নাকি সভ্যতা ফেঁদে বসলেন, নিজেদের মনে করাব এ আজকের কথা নয়। তবেকার কথা যখন এই নোনাস্তর মাটির শতশত মিটার গভীরে ছিল।  

শেষমেশ একটা কথাই বলার। ভারতবর্ষের সংস্কৃতি, আর্য প্রভাব, বেদ এবং তার অনুষঙ্গের শ্রেষ্ঠত্ব সংক্রান্ত যে একটা আমরা-তোমরার সৃষ্টি হয়েছে ইদানীং, এই বইটি অত্যন্ত স্পষ্টভাবে তার একটা পক্ষ অবলম্বন করে। আপনি যদি বিরোধীপক্ষের লোক হন তাহলে আপনার এ বই পোষাবে না।

কিন্তু আপনি যদি সে পক্ষের না হয়ে থাকেন, আপনার যদি নিজেকে বহিরাগত ভাবতে অসুবিধে না থাকে, আপনি যদি বেদকে ভারতীয় সভ্যতাসংস্কৃতির শুরু এবং শেষ বলে মেনে না নেন, ভারতবর্ষের অরণ্যচারী আদিবাসী মহিলাটিকে নিজের পূর্বপুরুষের আসনে বসাতে যদি আপনার মাথা কাটা না যায়, তাহলে টোনি জোসেফের ‘আর্লি ইন্ডিয়ানস’ বইখানা পড়ে দেখতে পারেন। ভালো লাগবে।


Comments

  1. Besh bhalo laglo.

    Sotyi kotha bolte ki, Lincoln in the Bardo bohubar library-r tak theke tule, nerechere, ek-dui pata pore, pata ulte, chena format er dekha na peye, abar tak-ei rekhe diyechhi. Sahos kore ekbar jhapabo bolchhen??

    Dwitiyo boiti obosso ekdom notun, porichoy koriye dewar jonyo onek dhonyobad. Porar icche roilo.

    ReplyDelete
    Replies
    1. লাইব্রেরি হলে তো অবশ্যই ঝাঁপান, অরিজিত। খারাপ লাগলেও আফসোস নেই। ভালো লাগতেও পারে। লেখাটা সত্যি ভালো।

      Delete
  2. Replies
    1. আরে থ্যাংক ইউ, অন্বেষা।

      Delete
  3. প্রথম বইটা নিয়ে সবিশেষ আগ্রহী। দ্বিতীয় বইটার বিরুদ্ধে প্রধান আপত্তি কিন্তু হরপ্পাবাসীদের আমাদের পূর্বসূরী বলা নিয়ে নয়, বরং তাতে ইমপোর্টেড আর্য ব্যাপারটা মেশানো নিয়ে। ড্যানিনো একেবারে প্রমাণ করে দিয়েছেন যে আর্য আক্রমণ ব্যাপারটা টোটাল গুল। বরং সিন্ধু-সরস্বতী সভ্যতাই যে আজকের ভারতীয় সভ্যতার জনক, এটা প্রতিষ্ঠা করার জন্যই মুক্তমনা ঐতিহাসিকেরা চেষ্টা করছেন। এতদিনের সরকারি মিথ্যা ভুলে সত্যিকে জানা ও জানানো তো সহজ নয়।
    আলোচনা অসা, যথারীতি।

    ReplyDelete
    Replies
    1. এই রে, এটা আমার বোঝানোর ভুল, ঋজু। আপনি যা বললেন, জোসেফও সেটাই বলেছেন। এক্স্যাক্টলি সেটা। আর্য আক্রমণ এবং জয়ের কোনও গল্পই নেই। হরপ্পা অলরেডি টিমটিম করছিল। আমাদের নর্থ ইন্ডিয়ান মিক্স মূলতঃ ফার্স্ট ইন্ডিয়ানস + জাগ্রোস + হরপ্পা + আর্য। ড্যানিনো কি অন্য কিছু বলছেন?

      Delete
    2. ড্যানিনো দেখিয়েছেন, কীভাবে সিন্ধু-সরস্বতী সভ্যতাই ক্রমে পূর্বদিকে সরে এসে আজকের ভারতীয় সভ্যতার ভিত্তি, এবং অনেক ক্ষেত্রে কাঠামো হয়ে ওঠে। 'আর্য' শব্দের অর্থ আলাদা ছিল। ম্যাক্সমুলর উত্তর ভারতে ওই শব্দের আড়ালে যে ধারণাগুলো বটিকা হিসেবে আমাদের খাওয়ানো হয়, সেগুলোর যে কোনো ভৌগোলিক তথা ঐতিহাসিক ভিত্তি নেই, সেটাই প্রমাণ হয় ড্যানিনো'র বই থেকে।

      Delete
    3. In history, there is no proof. Things change as we learn new things. Also, Danino's thesis is not something any historian or archeologist, Indian or otherwise, considers history. But then in today's Whatsapp age Danino is considered in some circles to be a more trustworthy historian than Romila Thapar ! This thesis of Danino is discussed in an appendix of the Early Indian book and 'proved' to be bunkum. All evidence points to Aryan migration (not called invasion any more) to India from the steppes. What the aryans called Saraswati is more likely to be Harahvaiti in Afghanistan.

      Delete
  4. Duto boi-i khub bhaalo. Dwitiyo boita onekbar Crosswords e dekhechhi. Ebar nite hobe. Duto boi-i porar ichche bariye dilen.

    ReplyDelete
    Replies
    1. হ্যাঁ, আর্লি ইন্ডিয়ানস পড়ে ফেলুন, সায়ন।

      Delete
  5. Early Indians ami porechi. Amar khub bhalo legeche. Er ekto ongsho hoito je boitar mul protipadyo amar biswas er songe mele. Tony Joseph asole ekjon sangbadik, fole take nischoi prochur porishrom kore ei boita likhte hoyeche.
    Aajkaal sob univeristy-i rajyer honorary doctorate dai, Mr. Joseph er
    nischoi ekta pawa uchit. Amar mone hoyeche boitar surute Rabindranath-er
    udhriti dile khub sundor maniye jeto:

    Ronodhara bahi joygaan gahi unmad kolorobe
    vedi morupoth giriporbot jara esechilo sobe
    tara mor majhe sobai biraje keho nohe noye dur
    amar-i sonite hoteche dhwonite tar bichitro sur

    ReplyDelete
    Replies
    1. উদ্ধৃতিটা উপযুক্ত বেছেছেন, ঘনাদা। আমারও বিশ্বাসের সঙ্গে মিলেছে জোসেফবাবুর বিশ্বাস, তাই ভালোলাগাটা নিষ্কণ্টক হয়েছে।

      Delete

Post a Comment