যত্ন ও যতীন


হাঁটতে হাঁটতে একটা বইয়ের কথা মনে হল। বাড়ি ফিরে দুটো বুককেসের আনাচকানাচ খুঁজলাম। পেলাম না। চিন্তা হল। তারপর সন্দেহ হল। কিন্ডলে নেই তো?

চিন্তা কমার বদলে বাড়ল। কিন্ডলটা কোথায়?

প্যান্ডেমিকে সোশ্যাল লাইফের থেকেও বেশি চোট খেয়েছে আমার গল্পের বই পড়ার লাইফ। এত রকম দুর্ভাবনা জেঁকে বসেছে যে পড়া উঠেছে মাথায়। আগে খুব ডাইনে বাঁয়ে জাজ করতাম তাদের যারা বলত পড়ার সময় নেই। কে যেন দাবি করেছিল যে বই পড়া আসলে মানসিক যোগব্যায়াম। আমি যে ধরণের বই যেভাবে পড়ি, যোগব্যায়ামের সঙ্গে তুলনা করতে চাইলে তাকে স্রেফ শবাসনের সঙ্গেই করা যায়। কাজেই সে ব্যায়ামে কারও আপত্তি কেন থাকবে মাথায় ঢোকেনি। করোনা এসে ঢোকালো। প্যান্ডেমিকে শবাসনে শুয়ে থাকতেও বুকের পাটা লাগে। ক্ষণে ক্ষণে লাফ মেরে উঠে ঘর জুড়ে পায়চারি করতে হয়।

মোদ্দা কথা গল্পের বই পড়ার জন্য একটা মিনিমাম প্রসন্নতা লাগে চিত্তে, যেটা এ বাজারে আক্রা।

যেটুকু পড়তে বাধ্য করেছি নিজেকে বেশিরভাগই কাগজের বই, যা দু'হাতে ধরলে বেশ একটা খড়কুটোর মতো ঠেকে। কিন্ডলের মতো গোটাটাই আমার সুবিধের জন্য বানানো নয়, নিজস্ব কিছু দাবিদাওয়া আছে। পাতা দুমড়োনো অ্যালাউড নয়, দাগানোর প্রশ্ন ওঠে না। তেমন স্বাস্থ্যবান হলে খাটে নিয়ে গড়াগড়ি খাওয়া অসুবিধেজনক।

যে পাঁচটা সম্ভাব্য জায়গায় থাকতে পারে ভেবেছিলাম, দ্বিতীয়টা থেকে কিন্ডলটা বেরিয়ে পড়ল। চার্জারটাও।

ভাবলাম দিনটা ভালো যাচ্ছে।

নীল মলাট উল্টে দেখি ব্যাটারির আউটলাইন, মধ্যে একটি বিস্ময়চিহ্ন।

আশা কর কী করে যে এতদিন অবহেলার পরেও আমাকে জ্যান্ত পাবে!

দমলাম না। চার্জে দিলাম। ভাবলাম গরম হওয়ার সময় দেওয়া যাক।

গরম হতে দেওয়াটেওয়া শুনে আমিও হাসতাম একসময়। তিনপ্রজন্ম ধুদ্ধুড়ে ট্রানজিস্টর রোদে দিতে দেখে হাসতাম। টিভি দেখতে বসার আগে 'ডাণ্ডাটা কই গেল?' চিৎকার শুনে মাথা নাড়তাম। আমাদের অস্কার টিভির তখন শ্বাস উঠেছে, আর মেরেকেটে তিন মাস। তক্তপোষের ওপর টিভি দেখতে বসা হত সামনে রুটি আলুভাজার থালা আর বাঁপাশে ডাণ্ডা নিয়ে। বেশ লম্বা ডাণ্ডা। টিভি অন করার পর পাঁচ মিনিট লাগত গরম হতে, তারপর ছবি ফুটত। এবং প্রতি চার মিনিট অন্তর কাঁপতে শুরু করত। তখন লম্বা ডাণ্ডাখানা তুলে মাপমতো জোরে টিভির মাথায় মারলে আবার চার মিনিটের জন্য সব যেমন হওয়া উচিত তেমন।

বিজ্ঞান খায় না মাথায় দেয় এখনকার মতো তখনও বুঝতাম না কিন্তু এখনকার মতোই তখনও নিজের প্রাণের থেকে বেশি ভরসা করতাম। ডাণ্ডা মারার সঙ্গে টিভি চলার সম্পর্ক আর যাই হোক বিজ্ঞানসম্মত হতে পারে না। যা ঘটছে স্রেফ সমাপতন এবং সমাপতনে যারা বিশ্বাস করছে সবাই আকাট গণ্ডমূর্খ।

তারপর বুড়ো হয়েছি। ব্যাখ্যার অতীত জিনিসপত্রে বিশ্বাস করতে শিখেছি। বিপদ হলে, যে ঘটনাস্থলে নেই, থাকলেও কী করতে পারত সন্দেহ, এমন লোকের কথা ভাবলে কাজে দিতে দেখেছি। অনেকে ভগবানকে ডাকে, আমি ভীতু মানুষ, এমন কাউকে লাগে যাকে অ্যাট লিস্ট ফোনে পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। বিদেশবিভূঁইয়ে চাবি হারিয়ে বন্ধ দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ঘামতে ঘামতে ভেবেছি মা এখানে না থাকলেও রিষড়ার বাড়িতে তো আছেন, কত আর হাতের বাইরে যাবে পরিস্থিতি। অ্যাপ্রাইজালের দিন ডিরেক্টরের দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে কাঁপতে কাঁপতে নিজেকে সান্ত্বনা দিয়েছি; যদিও অর্চিষ্মানের টিকি দেখা যাচ্ছে না আশেপাশে কিন্তু কোথাও তো নিশ্চয় আছে। আছে যখন, তেমন আতান্তরে পড়ব না।

পড়িনি। কেউ যদি বলতে চায় কাকতালীয়, বলুক। আমি বলছি না।

ক্যান্ডি ক্রাশ খেলতে খেলতে আড়চোখে কিন্ডলের দিকে নজর রাখলাম। দশ মিনিট গেল, পনেরো মিনিট। চার্জ হওয়ার প্রমাণস্বরূপ কমলা আলো জ্বলছে না। অর্থাৎ গরম হচ্ছে না।

জীবনের কোথাও কোনও বিন্দুতে ঠোক্কর খেলেই অর্চিষ্মান গুগল করে। কোড লিখতে বসে গুগল। ট্যাক্স গুনতে বসে গুগল। গ্যাসের সিলিন্ডারে পাইপ গুঁজতে গুগল। চিপসের প্যাকেট অর্ধেক খেয়ে গার্ডার খুঁজতে উঠতে আলস্য লাগলে গুগল। বিনা গার্ডারে প্যাকেট বন্ধ করার এমন কায়দা শিখিয়ে দেবে লোফালুফি খেললেও খুলবে না। কোনদিন অফিস যাওয়ার আগে 'নীল শার্টখানা দেখেছ নাকি গো?' গুগল না করে বসে।

গুগলকে বললাম, ছ'মাস বাদে ড্রয়ার থেকে বেরিয়ে আমার কিন্ডল চার্জ হচ্ছে না। প্রথম দশটা রেজাল্টের দশটাই বলল, অনেকদিন ফেলে রাখলে ব্যাটারি মরে যায়। সঙ্গে যে ছবিটা দেখাল তার সঙ্গে আমার কিন্ডলের (কিন্ডলটা আমার নয়, পরে বলছি)  বিস্ময়চিহ্নওয়ালা ব্যাটারির ছবি অবিকল মিলে গেল।

তারপর জানাল, এই কেস হলে কিন্ডল পুনরুজ্জীবনের আশা ভুলে যান। চাইলে ব্যাটারি বদলাতে পারেন কিন্তু পণ্ডশ্রম। জীবনের যে সব ক্ষেত্রে পুরোনো জিনিস খারাপ হলে ফেলে দিয়ে নতুনকে বরণ করাই একমাত্র পন্থা, এইটা তাদের মধ্যে একটা।

কিন্ডল ফৌত হওয়ার দুঃখর থেকেও অন্য একটা গ্লানি জোরদার হল।

কিন্ডলটা আমার নয়। অর্চিষ্মানের। এ অফিস ছেড়ে ও অফিসে যাওয়ার সময় 'টাটা বাইবাই/আবার যেন দেখা পাই' বলে সহকর্মীদের দেওয়া অ্যামাজন গিফট কার্ড ভাঙিয়ে কেনা। বাড়িগাড়িশাড়ির ব্যাপারে নির্মোহতার কম্পিটিশনে আমি মেডেল পেতে পারি,  কিন্তু অফিস থেকে আসা টুকিটাকি, হাবিজাবির প্রতি আমার নির্লজ্জ লোভ। সেই যে মা বাবা অফিসে জানুয়ারি মাসে ডায়রি পেয়ে আমাকে দিতেন, সেই থেকে নোলা বেড়ে গেছে। অর্চিষ্মান অফিস থেকে নোটপ্যাড থেকে ইউজ অ্যান্ড থ্রো পেন থেকে অফিসের লোগো আঁকা কাপ যাই আনে, এমন জুলজুলে চোখে সেটার দিকে তাকাই আর গায়ে হাত বোলাই যে অতি পাষণ্ডও অধিকার ছেড়ে দেবে, অর্চিষ্মান তো আদ্যোপান্ত ভদ্রলোক। কিছু কিছু ক্ষেত্রে অবশ্য অর্চিষ্মান উদ্যোগ নিয়ে অফিসের গিফট আমার হাতে তুলে দিয়েছে। কে যেন বুদ্ধি খাটিয়ে সিস্টেম করেছিল যে জন্মদিনে সোনার জলের ক্যালিগ্রাফিতে নামপদবী পেনের গায়ে ছেপে বিতরণ করা হবে। জন্মদিনের দিন অফিস থেকে ফিরে অর্চিষ্মান সেই পেন আমাকে গছিয়ে হাঁফ ছেড়েছিল। ওর নাকি নিজের নাম লেখা পেন দিয়ে লিখতে লজ্জা করবে।

তার ক'দিন আগেই আমাদের অফিসে আরেকরকম কাস্টমাইজড উপহার চালাচালি হতে দেখেছি। সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য বললাম, তবু তো পেন, ভাবো যদি তোমার একগাল হাসিমুখের ছবি ছাপা কফির মগ উপহার দিত? আর তুমি সকালবিকেল সেই মগে করে কফি খেতে?

দৃশ্যটা কল্পনা করে অর্চিষ্মান শিউরে শিউরে উঠতে লাগল আর আমি পেট চেপে গড়াগড়ি খেতে লাগলাম। 

মোদ্দা কথা,  অর্চিষ্মানের গিফট কার্ড দিয়ে কেনা হলেও অর্চিষ্মান শেষ কবে ও কিন্ডল ছুঁয়ে দেখেছে দুজনের কেউই মনে করতে পারব না।

সেই কিন্ডল আমি অযত্ন করে ড্রয়ারে ফেলে রেখে খারাপ করে ফেললাম।

অযত্নের কথা উঠল আর আমার সুকুমার রায়ের সেই গল্পটার কথা মনে পড়ে গেল।

*

সুকুমার রায়ের গল্প মনে পড়ার প্রধান কারণ স্থানকালপাত্র নির্বিশেষে মনে পড়ে গিয়ে হোহো হাসিয়ে বেকায়দায় ফেলার। বারংবার আমাকে এই ঝামেলায় ফেলেছে 'কালাচাঁদের ছবি'। গল্পে কালাচাঁদ একটা ছবি এঁকেছিল, নাম রেখেছিল খাণ্ডবদাহন। এদিকে কেউ সেটা খাণ্ডবদাহন বলে চিনতে পারছিল না। পারছিস না পারছিস না, চুপ করে যা, কিন্তু সুকুমার রায়ের গল্পের চরিত্ররা মারাত্মক ফরওয়ার্ড, গায়ে পড়ে নানারকম পরামর্শ দিতে লাগল। তেমন স্পষ্ট যখন হয়নি ব্যাপারটা, খাণ্ডবদাহনকে সীতাহরণ করে দাও না কেন? এইখানে থামলে তবু একরকম, পদ্ধতিও বাতলে দেওয়া চাই। "জন্মেজয়ের সর্পযজ্ঞ কর না কেন? ঐ রথটা হবে জন্মেজয় আর কৃষ্ণকে জটা-দাড়ি দিয়ে পুরুতঠাকুর বানিয়ে দাও। সুদর্শন চক্রটা হবে ঘিয়ের ভাঁড়। যজ্ঞের আগুনের মধ্যে তিনি ঘি ঢালছেন।" ওই জায়গাটা আচমকা মনে পড়ে ভরা ক্যান্টিনে অট্টহাস্য হেসে উঠেছিলাম। কী ভাগ্যিস তক্ষুনি একজন হোমরাচোমরা লোক নারীবিদ্বেষের আঁশটে গন্ধওয়ালা একটা চুটকি বলে উঠেছিলেন তাই সে হাসি বাকি অট্টহাসির মধ্যে আত্মগোপন করতে পেরেছিল।

কিন্তু সুকুমার রায়ের কোনও গল্প পড়ে যে গম্ভীর হয়ে যেতে হয় এ কেউ বিশ্বাস করবে? আমি হই। যতীনের জুতো গল্পটার কথা যতবার মনে পড়ে। কেন হই সেটা গত এগারো বছরে অবান্তরে বলিনি হতেই পারে না, তবু আবার বলছি।

*

যতীন ছিল একটি ছোট ছেলে। একেবারে ছোট নয়, যে রকম ছোটদের গাল দেখলেই টিপে দিতে ইচ্ছে করে, মুখের ভাষা আপসে আধোআধো হয়ে যায়, প্রাণপণে চুল টানলেও রাগ হয় না, মোটামোটা থাবা দিয়ে টেবিলে রাখা মানিব্যাগ কুকুরছানার সঙ্গে লোফালুফি খেলার আশায় জানালা দিয়ে রাস্তায় ছুঁড়ে ফেলে দিলে কষে কান মুলে দেওয়ার বদলে ভিডিও তুলে বিশ্বশুদ্ধুকে দেখাতে ইচ্ছে করে - তেমন ছোট না।

যতীনের ছোটবেলা গল্পের সময় সেই জায়গায় এসে ঠেকেছে যেখানে বুদ্ধি পাকেনি কিন্তু নষ্টামোও ঘোচেনি। যে বয়সটা  চরিত্রগঠনের আর গার্জেন কলের। শাসনের মধ্যে সোহাগের অংশটুকু  বাঁচিয়ে রাখতে  আশেপাশের বড়দের ঘাম ছুটে যাচ্ছে।

যতীনের মূল অসুবিধেটা আক্কুটেপনার। জামা ফালাফালা, বই লুচিভাজা, কিনে আনতে না আনতে জুতো আর সোল দুদিকে। যাই হোক, গল্পে জিনিসের অযত্নের জন্য যতীন হাড়ে হাড়ে শিক্ষা পেল, তারপর যখন নাকের জলে চোখের জলে, যতীনের দুঃখে পাঠকের চোখে জল আসে আসে, যতীনকে বাঁচাতে আকাশের কোণা থেকে উড়ে এল, কে বলুন দেখি?

যতীনের ঘুড়ি। সে সাঁ করে উড়ে এসে যতীনকে নরকযন্ত্রণা থেকে উদ্ধার করে নিয়ে গেল। ঘুড়িটা বিশেষ সুবিধের লোক ছিল না আমার মতে, কারণ বাঁচানোর সময় কেন বাঁচাচ্ছে সেটা বানান করে বলল। বলল যে যতীন বাকি যাবতীয় যা কিছুকে হেলাচ্ছেদ্দা করলেও ঘুড়িটিকে প্রাণের অধিক যত্ন করত কি না, তাই ঘুড়ি বাঁচাতে এসেছে।

*

সুমনকে সুকুমার রায় ভাবান, আমাকে ভাবায় আমার জীবনের যতীনের ঘুড়ি। আমার রোজকার নিত্যি ছোটখাটো ডোবায় কে বাঁচাবে, আর  শেষমেশ একদিন যখন সিরিয়াস  ডুবব, কে হাত বাড়িয়ে টেনে তুলবে - এ আমার জীবনভরের টেনশন।

বলতে পারেন ওটা গল্প এটা রিয়েল লাইফ। যত্নের সঙ্গে ডোবানোভাসানোর কোনও বিজ্ঞানসম্মত সম্পর্ক নেই। মন মানে না। হতে পারে বিশ্বাস করতে চাই বলে করি, কিন্তু হাতেনাতে প্রমাণও তো কম পাইনি।  যাদের/যেটাকে হেলা করেছি, তারাই/সেটাই আমাকে ডুবিয়ে গেছে। বা না ডোবালেও, ডুবছি দেখে দূরে দাঁড়িয়ে ছুঁড়ে ছুঁড়ে বাদামভাজা মুখে পুরেছে। উল্টোটাও ঘটেছে। অবান্তরকে গত এগারো বছর ধরে অবিশ্রাম অ্যাটেনশন দিয়েছি; যে সব দিনেরাতে ভগবানও হার মেনে যেতেন অবান্তর আমাকে ভাসিয়ে রেখেছে।

একমাত্র একজনের ক্ষেত্রে এই থিওরি নিয়ে সামান্য সন্দেহ আছে আমার। ক্যান্ডি ক্রাশকে প্রাণ দিয়ে যত্ন করেছি। কিন্তু সে আমাকে দরকারে ভাসাবে নাকি অলরেডি ডুবিয়েছে কে জানে।

যেহেতু আত্মকেন্দ্রিকের চরম ঘুরে ফিরে প্রশ্নের তীর সেই নিজের দিকেই ফেরে। একটামাত্র জীবন পেয়েছিলাম, যত্ন করলাম কি? যে তার কাছে প্রতিদান চাইব?

এত সব ভাবাভাবি চলছিল, বলা বাহুল্য, ক্যান্ডি ক্রাশের লাইফ শেষ হয়েছিল বলে। যেই না একটা জমা হল তাড়াতাড়ি খেলা শুরু করতে যাব, একবার চোখ ফেলে দেখি - কী দেখলাম বলুন দেখি?

কিন্ডলের কমলা আলো জ্বলছে।

*

ওই সূচের ডগার মতো আলো,  এককুচি বাড়িয়ে বলছি না, গোটা অস্তিত্ব ঝলমলে করে তুলল। গুগলের সবজান্তাদের কাঁচকলা দেখিয়ে আমার, থুড়ি, আমাদের কিন্ডলের কমলা আলো ক্রমে সবুজ হল। বই খুঁজে পেলাম, পেয়ে অর্ধেক পড়েও ফেললাম।

ড্রয়ারে তুলে রাখার আগে একমুহূর্ত থেমে বললাম, আমার তরফ থেকে এত অযত্নের উত্তরেও তুমি যে আমাকে ক্ষমা করে দিলে এ আমি কোনওদিন ভুলব না। আর কোনওদিন অযত্ন করব না। পড়ি না পড়ি চার্জ দিয়ে রাখব।

স্পষ্ট টের পেলাম বুকের ভেতর থেকে আরেকজন আমার দিকে তাকিয়ে আছে। এই ঝোঁকে তাকে যত্ন করার ব্যাপারটাতেও কমিট করি কি না দেখছে। আই কনট্যাক্টের প্রশ্নই ওঠে না। সে যে আমার উত্তরের জন্য অপেক্ষা করছে এই জানাটুকুতেই আমার বুক ধড়ফড় করতে লাগল আর দু'চোখের কোণে প্যাট প্যাট সূচ ফুটতে লাগল।

তাড়াতাড়ি ক্যান্ডি ক্রাশ খুলে মন ভোলালাম।


Comments

  1. amaro hoyechilo erom ! onekdin fele rakhle gorom hotey time laage :)

    ReplyDelete
    Replies
    1. হাহা, হায়েস্ট ফাইভ, অন্বেষা।

      Delete
  2. মন ভালো হয়ে যায় তোমার এই সব লেখা গুলো পড়লে।

    ReplyDelete
    Replies
    1. থ্যাংক ইউ, প্রদীপ্ত।

      Delete
  3. Ki bhison kaktaliyo.. meye kodin dhore khub Jatiner Juto dekhchhe, sunchhe. Ki bhison genius chhilo ei Ray Babu..: Papiya

    ReplyDelete
    Replies
    1. হ্যাঁ, ওই এক জিনিয়াস। এই সমাপতনটা দারুণ মনে ধরল পাপিয়া। তোমাকে আর তোমার মেয়েকে হাই ফাইভ। বাই দ্য ওয়ে, মেয়ের নাম কী?

      Delete
    2. Amar meye r daknam Esha, bhalo naam Sharon. Se Sukumar Roy e etoi influenced j bhai er daak naam Pagla Dashu rekhechhe! And saying, "Ooo that's why you are carrying this old book with you ! It's so funny and interesting!"

      Delete
    3. হাহা, এষার সাহিত্যে রুচি তো এখনই দারুণ ভালো দেখা যাচ্ছে, পাপিয়া। অভিনন্দন।

      Delete
  4. আমার আবার হয়েছিল এর উল্টোটা। নতুন কিন্ডল কিনলাম, মাস দুয়েক পরে দেড়মাসের জন্য ইউরোপ বেড়াতে যাব, প্রচুর গল্পের বই, সমস্ত হোটেল রিজার্ভেশন, টেনে প্লেনের টিকিট ইত্যাদির পিডিএফ সব কিন্ডলে ভরে প্লেনে উঠলাম (কাগজের প্রিন্ট আউট না নেওয়ার মতন আহাম্মক আমি নই, এটা জাস্ট এক্সট্রা)। প্লেনে গুছিয়ে বসে কিন্ডল খুলে দেখি ব্যাটারি ১০%। তাহলে কি চার্জ দিইনি? বই পড়া আর হলনা। ওখানে পৌঁছে প্রথম সুযোগেই চার্জে বসালাম। চার্জ বাড়তে বাড়তে ১০০% হল। পরদিন আবার দেখি ৫%। বুঝলাম আমার কপালে খারাপ ব্যাটারি জুটেছে। এদিকে তখন আমি নিজের জায়গা থেকে বহুদূরে, পরপর তিনদিন এক শহরে থাকছিনা, ঠিকঠাক ইন্টারনেটও জুটছেনা রোজ, তাই ওটা নিয়ে মাথা ঘামানোর সময় নেই। ও ব্যাগে পড়ে রইল, ভাবলাম আমেরিকায় ফিরে আমাজনকে ফোন করে গাল পাড়ব। আর সত্যি বলতে কি, গল্পের বই পড়ার সুযোগও আসেনি খুব একটা। আমেরিকায় ফিরে আমাজনে রিটার্ন করতে যাব, কি মনে হল, ভাবলাম গুগল করে দেখি। ওমা, দেখি লোকে বলছে ওটা নাকি কিন্ডলের প্রোগ্রামটা হ্যাং হয়ে গেলে হতে পারে। একটা রিসেট করে দিলেই ঠিক হয়ে যাবে। ঠিক তাই, রিসেট করলাম, আবার ব্যাটারি যে কে সেই। কেন যে এটা এতদিন মাথায় আসেনি কেজানে? জঘন্য!
    কালকেই কালাচাঁদের ছবির গল্পটা ভাবছিলাম কি একটা কারণে যেন। আজকেই আপনার ব্লগে এটা পড়লাম।

    ReplyDelete
    Replies
    1. কুম্ভমেলা সিনড্রোম, যাবে কোথায়। যাক আপনার কিন্ডলের ব্যাপারে গুগল মিসলিড করেনি সেইটা ভালো। জেনে রাখলাম, যদি কখনও সেম পরিস্থিতিতে পড়ি কাজে লাগবে।

      কিন্ডল নাকি আর নতুন প্রোডাকশন হচ্ছে না? এখন লোকে কোন ই-রিডার ব্যবহার করছে?

      Delete
    2. ওমা তা তো জানিনা! আমারটা তো কিন্ডল পেপারহোয়াইট, মানে ভিতরে আলো দেওয়া আছে। কিন্ডল ছাড়া একটাই রিডারের নাম জানি, সেটা হোলো বার্নস এন্ড নোবল এর নুক। কিন্ডলটাই বেশি জনপ্রিয়।

      Delete
  5. ভালো লাগলো আপনার লেখা পড়ে। তার চেয়েও বেশি খুশি হলাম শেষপর্যন্ত আপনার kindle টি চালু হওয়ায়। আমার নিজেরটা এখন আগের মতো ব্যবহার না করায় বাঁদিকের ওপর আর নিচের দিকটা হালকা ঝাপসা হয়ে গেছে। আপনার অভিজ্ঞতা শুনে এখন থেকে বেশি করে যত্ন নিতে হবে বুঝতে পারছি। ধন্যবাদ, ভালো থাকবেন।

    ReplyDelete
    Replies
    1. থ্যাংক ইউ, শম্পা। হ্যাঁ, সকলেই মনোযোগ চায়, না দিলেই বেঁকে বসে। আপনিও ভালো থাকবেন।

      Delete

Post a Comment