স্বামীস্ত্রীতে ঝগড়া লেগেছে। কুরুক্ষেত্র। হোয়াটসঅ্যাপে ভেসে ভেসে খবর এসেছে। তা বলে ভাসা ভাসা আসেনি। কবে লেগেছে, কী নিয়ে লেগেছে - আঁতিপাঁতি খুঁটিনাটি। স্ক্রিনশট। প্রেরকঃ বন্ধুবান্ধব। পাড়াপড়শি। আত্মীয়স্বজন।
সেটাই এক্সপেক্টেড। এই দিনগত পাপক্ষয়ে অন্যের জীবনের খোরাকই খড়কুটো। আনএক্সপেক্টেড হচ্ছে মেন রোলদের পাঠানো স্ক্রিনশট। নিজেদের কেচ্ছার খতিয়ান নিজেরাই বিলিয়ে বেড়ানো। অপ্রত্যাশিত ও কৌতূহলোদীপক। যেচে নিজের যন্ত্রণার কথা হাটেবাজারে কেন বলছেন? যখন জানাই আছে যে বাকিরা তার থেকে আনন্দ ছাড়া আর কিছু পাবে না?
হয়তো সেই সুপ্রাচীন প্রবাদে বিশ্বাস করেছেন। পেটের কথা বললে মন হালকা হয়। সেই দুরাশায় ডানবাঁ ওপরনিচ স্ক্রিনশটের হরির লুট দিচ্ছেন। বছরকয়েক আগে হলে সম্ভবতঃ একজনই দিতেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় #রিয়েলমেনক্রাই স্লোগ্যান ওঠার পর অন্যজনও স্টেপ আপ করেছেন।
আমাদের ভালোই। ডবল খোরাক।
ট্যালারা গুলিয়ে ফেলছে স্ক্রিনশটের পারম্পর্য। কোন নীল বাক্সে কে কথা বলছে। নন-ট্যালারা চোখ ঘুরিয়ে হাতা গুটিয়ে নেমেছে। হোয়াটসঅ্যাপে গোপন গ্রুপ। সেজমাসিকে বিজয়ার ফোন করার সময় হয়নি, এদিকে নব্বই ঘণ্টার ওয়ার্ক উইক থেকে সময় বার করে গ্রুপে রেফারেন্স, ক্রস-রেফারেন্স, ভেতরের খবর, বাইরের খবর, আসল খবর। টাইমলাইনে চিরুনি। ব্যাংককের বিচে ঘাড় বেঁকিয়ে সেলফি তোলা হচ্ছিল যখন, ভেতরে ভেতরে এই সব চলছিল। একে অপরকে সাবধান করা। ফেসবুকে, গ্রামে যা দেখছিস সব ঝুট হ্যায়। মাধ্যমিকে বাংলায় লেটারহোল্ডার - কারও নাম না করে ফেসবুকে রচনা নামিয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়া আশীর্বাদ না অভিশাপ? সোশ্যাল মিডিয়া ছিল না যখন সবাই কত বই পড়ত, ডিম কেমন সুন্দর অর্ধেক করে খাওয়া হত, স্নেহময়ী দিদিভাইরা কেমন ইউনিফর্মের ব্লাউজ আর শায়ার মাঝখানে মাংস দেখা গেলে ডটপেন ঢুকিয়ে ঘুরিয়ে দিতেন। লাইকের বন্যা।
গ্রুপ থাকলেই সাবগ্রুপ। একটা সাবগ্রুপ বলছে সব এর দোষ, ওই গ্রুপ বলছে উনিও কিছু কম যান না। কাউন্সেলর মুচকি হাসছেন। অশিক্ষিতরা ও রকমই বলে। দোষ কারও নয় গো মা।
না মানে, গত ছ’মাস ধরে আমি রাত এগারোটা সাতচল্লিশে মেসেঞ্জারে . . .
কাউন্সেলর চোখ বুজে মাথা নাড়ছেন। ওটা উপসর্গ। কারণ নয়। ঠাকুর বলে গেছেন কারণসন্ধানী হও।
সিরিয়াসলি? সার্ধশতবর্ষ পরে মেসেঞ্জারে কে বসে কাকে নিজের কবিতাখানি কাকে লিখছে সেই সিচুয়েশন নিয়েও ঠাকুর বলে গেছেন? এর পরেও বেস্ট বাঙালির কনটেস্টে ফার্স্ট হতে দিল না ব্যাটারা। এত হিংসুটে, মাগো।
না না, ওই ঠাকুর না। ইনি অনুকূল ঠাকুর। দমে গেলেন নাকি? অনুকূল আনকুল? আচ্ছা আপনি না হয় ফ্রয়েড ঠাকুরের মূর্তি মনে করুন। উনিও একই কথা বলেছেন, তাও ডয়েশে। ফ্রয়েড জানেন নিশ্চয়? কার্ল ইয়ুং? পশ্চাতে রেখেছ যে শ্যাডোরে, সে তোমারে পশ্চাতে টানিছে?
আড়চোখ ঘড়িতে। পঁয়তাল্লিশ মিনিটের সেশন, দু’হাজার টাকা। পনেরো মিনিট গন। অ্যাপ্রক্স সাতশো টাকা - কাব্যচর্চায়। কাউন্সেলর বুদ্ধিমান, উৎসাহের পারদপতন মিস করেননি। গলা খাঁকরে পয়েন্টে ফিরেছেন।
কী হয়ে গেছে সে নিয়ে কথা বলার সময় নয় এটা। এটা সামনে তাকানোর সময়। রিবিল্ড করার সময়।
আমি তো সেটাই বলছি। যাক যা গেছে তা যাক। ডোন্ট ক্রাই ওভার স্পিল্ট মিল্ক। লেট’স মুভ অন। ও ছাড়ছে না। লেবু কচলে যাচ্ছে। সকালবিকেল আমার রাত এগারোটা সাতচল্লিশ থেকে পাঠানো মেসেজগুলো জোরে জোরে রিডিং পড়ছে। কানে আঙুল দিলে ধমকাচ্ছে ইউটিউবে অডিও চ্যানেল খুলে পড়বে। তারানাথ তান্ত্রিকের মোনোপলি মাটিতে মিশিয়ে দেবে।
হুমম। টেক্সটবুক নার্সিসিস্ট।
ও এক্স্যাক্টলি একই কথা বলছে। আমি নাকি নার্সিসিস্ট। টক্সিক গ্যাসলাইটার।
ওটা প্রোজেকশন। আমার আপনাকে ঠিক নার্সিসিস্ট বলে মনে হচ্ছে না। আপনি হচ্ছেন ফিয়ারফুল অ্যাভয়েড্যান্ট। সঙ্গে দু’গ্রাম কমপ্লেক্স পি টি এস টি-র গন্ধ পাচ্ছি। ছোটবেলায় কেউ জোরে ধমকেছিল? বাড়িতে? স্কুলে? আপনি তো আবার মফঃস্বল। ভালো স্কুল হয় ওখানে?
স্কুলে তেমন কিছু হয়নি। তবে বাড়িতে বাবা . . .
জানতাম। বেল্টের বাড়ি, সপাং সপাং?
নাহ্। একবার রেগে গিয়ে মাকে বলেছিল, ওর দ্বারা কিছু হবে না।
ঝাড়া পঁচাত্তর সেকেন্ড লাগে কাউন্সেলরের কথা বলতে।
শুনুন। যা বলছি খুব মন দিয়ে শুনুন। ডোন্ট মেক মি রিপিট মাইসেলফ। এই দরজা দিয়ে বেরিয়ে ডান দিকে রিসেপশন? যেখান থেকে আপনার নাম ডাকা হল? যে ডাকল, টাবলু? রাইট, যে বসে বসে চাইনিজ ফোনে রিপাবলিক চ্যানেল দেখছে? বাড়ি যাওয়ার আগে টাবলুর থেকে আমার প্রাইভেট চেম্বারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেবেন। এ সব দাতব্য ক্লিনিকের দৌড় টুকটাক টকিং থেরাপি। আপনার চাই রিগোরাস হিলিং। সিরিয়াস চিকিৎসা, দীর্ঘ প্রসেস। পুরোনো পার্সোন্যালিটি দুমড়ে নতুন ব্যক্তিত্ব রিকনস্ট্রাক্ট করতে হবে। এ জন্মের যত ট্রমা ব্রেনের খাঁজ থেকে টেনে বার করতে হবে। তেমন বুঝলে, আমাকে তো চেনে না, পাস্ট লাইফ রিগ্রেশন করে পূর্বজন্মের ট্রমাও বার করে দেব।
ভাববেন? কী ভাববেন? ভাবার কী আছে? আজ পর্যন্ত ভেবে কোন রাজকার্যটা করে উঠেছেন? ওই মাথা আর খাটাবেন না। টাবলুর কাছে হিলিং সেশনের অ্যাডভান্স দিয়ে যান, যাতে ভেবে মাইন্ড চেঞ্জ করে ফেলতে না পারেন। এ টি এম? পে টি এম আছে তো? তাহলে আবার এ টি এম কোথায় জানার দরকার কী?
টিং। টেবিলে রাখা ফোন অ্যালার্মে কেঁপে ওঠে। পঁয়তাল্লিশ মিনিট শেষ। দু’হাজার টাকা গন।
উশুল হল?
হল কি না জানতে হলে আগে জানতে হবে ঘাড় কীসে পাতা হয়েছিল। আমার কাজ, প্রথম দিনেই কাউন্সেলর জানিয়েছিলেন, আপনার বিয়ে সামলানো নয়। চরিত্র সংশোধন তো নয়ই। দ্যাট শিপ হ্যাজ সেইলড। ছোটবেলায় গোপাল রাখাল ভুবন পড়িয়ে যখন হয়নি আর হওয়ার আশা নেই।
কাউন্সেলিং-এর কাজ হচ্ছে রেফারিগিরি। রোজকার চেঁচামেচিতে ফুঁ দিয়ে ষাট ষাট বলা। যুদ্ধশেষে শিবিরে ফিরে এলে ক্ষতে বোরোলিন লাগানো। জুলাইমাসের বৃষ্টিহীন লোডশেডিং-এর রাতে হাতপাখা দোলানো।
সে দিক থেকে দেখলে উশুলের বেশি হয়েছে। ঝগড়া মিটবে কি না বোঝা যাচ্ছে না, বিয়ে টিকবে কি না সেও না কিন্তু অ্যাট লিস্ট শিওর হওয়া গেছে আপনি নার্সিসিস্ট নন। অর্থাৎ, আপনি যা সন্দেহ করেছিলেন সেটাই সত্যি, নার্সিসিস্ট অন্য পক্ষ। আরও একটা মস্ত লাভ - এতদিন ফ্যামিলি ট্রি জুড়ে কেবল উদরী সান্নিপাতিক হাঁপানি হুপিং কাশি অর্শ মৃগী গনোরিয়া গেঁটেবাত। অবশেষে প্রজন্মের পাপ থেকে মুক্তি। দাঁতের ডগায় শব্দগুলো আলতো ছুঁয়ে দেখেন। জিভে টাকরায় ধ্বনিদের নিয়ে সতর্ক লোফালুফি। ফি আর ল ফু। অ্যা। ড। ভ। ন্ট। ডি পি সি টি।
কী সুন্দর। কী সফিসটিকেটেড।
দরজার বাইরে চেয়ারে একজন রোগী। আপনার চেনা। খুবই চেনা। একই বাড়িতে থাকেন। গাড়িভাড়া বাঁচাতে একই উবারে এসেছেন। ভাড়া বাঁচাতে একই উবারে ফিরবেন। দুর্বাসাদৃষ্টি হেনে ঘরে ঢুকে যাচ্ছেন। বিয়ে বাঁচাতে গেলে - নো গ্যারান্টি অফ কোর্স, জন্ম মৃত্যু বিয়ে তিন বিধাতা নিয়ে - থ্রিপ্রংগড অ্যাটাক লাগবে। জয়েন্ট কাউন্সেলিং-এর সঙ্গে সঙ্গে ইন্ডিভিজুয়াল কাউন্সেলিং। এমন কোথাও লেখা নেই যে সব কাউন্সেলিং একই কাউন্সেলরের থেকেই নিতে হবে, তবে ভালো ফল চাইলে ইন্ডিভিজুয়াল সেশনগুলোও ওঁর কাছেই নিলে সম্ভবতঃ ভালো। কমপ্লিট পিকচারটা ওঁর কাছে থাকবে।
কেই বা খারাপ ফল চায়? কাজেই সপ্তাহে তিনটে করে সেশন চলছে। অসুবিধে নেই, অফিস থেকে রিইমবার্স করবে।
দৃষ্টিপথে টাবলু ভেসে ওঠে। টাবলুর নেয়াপাতি ভুঁড়ি। টাবলুর ঘাড়ে আসন্ন কুঁজের কুঁড়ি। টাবলু ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে। আপনি টাবলুর দিকে হাঁটছেন। বুকের ভেতর হিলিং-এর কলিং। শুধু এ জন্মের নয়, পূর্বজন্মের ট্রমা! ঘুটঘুটে ঘর। এলানো চেয়ার। তীক্ষ্ণ টর্চ কনীনিকা থেকে কনীনিকায় ঘুরছে। মুকুউউউল। মুকুউউউল।
ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি ফুটল। আছে আছে, কাউন্সেলিং-এর ক্ষমতা আছে। চ্যাটবাক্স চিচিংফাঁক হওয়ার পর এই প্রথম বুকের পাথর নড়ছে। মগজের কুয়াশা ফুঁড়ে বিবাহবহির্ভূত জীবনের আচমকা ঝলক। ক্যান্টিনের কোণের টেবিল। খোলা টিফিনবাক্সে চিঁড়ের পোলাও, চাউমিন, রুটি বাঁধাকপি। কী বা কাকে বর্ণনা করতে গিয়ে আপনি বললেন, অরডিনারি নেহি, এক্সট্রাআর্ডিনারি। অপেক্ষা করলেন। উল্টোদিকের চেয়ারে শুভজিৎ রুটি বাঁধাকপি খেয়ে যেতে লাগল। আপনি আবার বললেন, অরডিনারি নেহি, এক্সট্রাআর্ডিনারি। গট ইট?
গট ইট?
নো রেসপন্স। গবাদি চোখমুখ মেলে শুভজিৎ রুটিবাঁধাকপি চিবিয়ে গেল। অবশেষে হার মানলেন আপনি। বানান করে বুঝিয়ে দিলেন। শুভজিৎ কাঁধ ঝাঁকাল। ও, আচ্ছা।
একটা শিহরণ না। রোমহর্ষণ না। ভারতবর্ষের সব থেকে বুদ্ধিমান, প্রগতিশীল, সংস্কৃতিবান, খাদ্যরসিক প্রজাতির এক্সক্লুসিভ মেম্বার হওয়ার গৌরব না।
এত অশিক্ষিত লোকে হয় কী করে?
আপনার কাঁধ আর একটু সোজা হয়, লিনোলিয়ামে বাটার বুটের আওয়াজ আরও একটু আত্মবিশ্বাসী। আপনি হেঁটে যান। টাবলু ঘাড় না ঘুরিয়েই বিলবই বার করে।
*****
পোস্ট পড়ার পর অর্চিষ্মান মাথা নাড়বে। মুখে কিছু বলবে না। শুধু মাথা নাড়বে। মুখে বললে ব্যাপারটা দন্ত্যমূল, বাগযন্ত্র, গলনালী, ফুসফুস, জিহ্বাগ্র, ল্যারিংক্স, ফ্যারিংক্সে মিটে যায়। মুখে না বললে মাথার চুল, পায়ের নখ, কানের লতি, গোড়ালি, ভুরুর ভাঁজ, কণ্ঠার কোল - গোটা শরীর ও অস্তিত্ব থেকে ডিসঅ্যাপ্রুভাল ঝরে পড়ে।
যদি মুখ খোলেও, বলবে, ছি ছি ছি, কুন্তলা। শেষমেশ সাইকোথেরাপি নিয়ে বাজে স্যাটায়ার? জেন্ডার স্টিরিওটাইপিং? কর্পোরাল পানিশমেন্টের গ্লোরিফিকেশন? থেরাপি নিয়ে হাসাহাসি? আমাদের সময় সিসিটিভি ছিল না, পিডোফাইলও ছিল না, শৈশব সেফ ছিল - এই হাইপোথেসিস দিয়েছিল বলে একটা বাংলা সিনেমা নিয়ে নাক বেঁকিয়েছিলে না? তুমি যে রেটে চলেছ কোনদিন বলবে আমাদের সময় থেরাপি ছিল না তাই মানসিক সমস্যাও ছিল না।
অধোবদন হব। পোস্টটা অরিজিন্যালি যেভাবে লিখেছিলাম সেখানে এ সব ছিল না। রিভিশন রোটেশনে এই সব বেরিয়ে এল। ভেতরে ছিল তার মানে। আর ভেতরে থাকলে বেরোবেই।
কাউন্সেলিং/থেরাপি নিয়ে আমার মিক্সড ফিলিংস। আমি নিজে সমস্যা নিয়ে কাউন্সেলরের কাছে গেছি এবং উপকার পেয়েছি। কিন্তু পরিচিত মানুষের - যারা পেশায় কাউন্সেলর - সঙ্গে ব্যক্তিগত আলোচনায় এও টের পেয়েছি যে আমার কাউন্সেলরের আমার সঙ্গে ট্রিটমেন্ট আপাদমস্তক নন-কাউন্সেলরসুলভ। কাউন্সেলররা কখনওই নাকি এটা করো সেটা করো বলেন না। বলতে পারেন না। বইতে লাল কালি দিয়ে বারণ করা আছে। কাউন্সেলরের কাছে আমি যদি গিয়ে আমার সমস্যা জানাই, জানিয়ে সাহায্য চাই, কাউন্সেলর উত্তরে শুধু বলতে পারেন, আপনার কী মনে হয়? আপনি বলুন। আপনাকে আমি কী ভাবে সাহায্য করতে পারি?
আমার কাউন্সেলর সে রাস্তায় হাঁটেননি। আমার কাউন্সেলর আমাকে স্পষ্ট, সংক্ষিপ্ত, সহজ ইন্সট্রাকশন দিয়েছেন। এটা করবে। ওটা করবে না। অ্যাবসলিউটলি না। হ্যাঁ, কষ্ট তো হবেই। ভীষণ কষ্ট হবে। হোক। সহ্য করবে। বাচ্চা নাকি? কষ্ট সহ্য করতে পারবে না?
বেসিক্যালি, আমার কাউন্সেলর আমাকে বকেছেন। এবং বকুনিটা আমার কাজে লেগেছে। সবার নাও লাগতে পারে। আমার লেগেছে।
লেগেছে বলেই, হয়তো বেইমানের মতোই, আমার আজকাল মনে হয়, আমার কি কাউন্সেলিং-এর দরকার ছিল? নাকি শুধু বকুনিটা হলেই চলত? কান ধরে (ফিগারেটিভলি) উচিত অনুচিত, ঠিক ভুল, স্যানিটি ইনস্যানিটির তফাৎ বুঝিয়ে দেওয়ার লোক থাকলে হয়তো কাউন্সেলরের কাছে যেতে হত না।
বা হত। কারণ হয়তো একটা বয়সের পর বকুনি খেতে হলেও অচেনা কাউন্সেলরের কাছেই যেতে হয়। কেউ বকুনি দেওয়ার থাকে না।
*****
সেদিন একজন গলাবাজি করলেন। একটা গোটা জেনারেশন তৈরি হচ্ছে - স্বার্থপরের ঝাড়। শুধু ইন্সট্যান্ট গ্র্যাটিফিকেশন। কোনওদিন নিজের ভুল স্বীকার করবে না, শুধু জাস্টিফিকেশন খুঁজে যাবে। আর দায় সরানোর জন্য উপযুক্ত ঘাড়। কারও কোনও অ্যাকশনের দায় আর নিজেদের নয়। সব অন্যের।
মডার্ন সাইকোথেরাপি হচ্ছে এদের আলটিমেট এনাবলার।
বললাম, হওয়ারই ছিল। গুলতি এদিকে যতদূর গেছিল ওদিকে আবার ততদুর যেতে দিতে হবে। আমি আপনি আটকানোর কে? এতদিন ফাঁকা মাঠ জুড়ে কর্মফল দৌড়েছে। যত হাসি তত কান্না। অ্যাজ ইউ সো, সো ইউ রিপ। জ্যায়সি করনি ওয়সি ভরনি। পাপ আর প্রায়শ্চিত্ত ছাড়া কোনও কথা নেই। গোটা সমাজটাকে শাস্তির ওপর দাঁড় করিয়ে রাখার জন্যে সবাই হন্যে। ডান হাতে প্লেজার গুণছে, বাঁ হাতে প্রায়শ্চিত্ত অ্যালট করছে। প্রতি ফোঁটা প্লেজারের মূল্য চোকা। প্রায়শ্চিত্ত কর। প্রায়শ্চিত্ত করতে করতে ইহলোক নরক করে তুলতে হবে। ইহলোক নরক না হলে পরলোক স্বর্গ হওয়ার চান্স জিরো।
বন্ধুর মুখ ঘনিয়ে উঠল। বললাম, ঘাবড়াবেন না, কর্মফলের দিন আবার ফিরবে। পেন্ডুলাম ওদিকে গেছে যখন এদিকে ফিরতেই হবে। আর কোনও দিকে যাওয়ার অপশন নেই।
এই যে বললে গুলতি?
ওই হল।
বন্ধু আমার মত জানতে চাইলেন। আমি কোনটাকে বেশি গুরুত্ব দিই? কারণ না কর্মফল?
বাকি সব মতের মতোই এ বিষয়েও আমার মত মাঝামাঝি। সব বর্তমানের যেমন অতীত ও ভবিষ্যৎ থাকে, সব সিদ্ধান্ত বা চয়েস বা অ্যাকশনের কারণ ও কনসিকোয়েন্স থাকবে। পটকার প্যাকেটে আগুন একটা নির্দিষ্ট দেশলাই ধরিয়েছে যেমন সত্যি, এই তীব্রতায় ফেটেছে যখন পটকা নিয়মিত সকালবিকেল রোদে দেওয়া হচ্ছিল সেটাও সত্যি। সব টেকেন ফর গ্র্যান্টেড সম্পর্কেই যেমন দেওয়া হয়ে থাকে। আবার পটকা ফেটেছে যখন ফাটার পর চারদিকে পোড়া কাগজ ছড়িয়ে থাকবে, সালফার ডাই অক্সাইডে বাতাস ভারি হবে। আটকানো যাবে না। এমনকি যখন বিস্ফোরণ বিস্মৃতি, বিকট শব্দের রেশও মিলিয়ে গেছে, সেই নৈঃশব্দ ও শান্তিতে একএকদিন টের পাওয়া যাবে, বুকের ভেতর পোড়া বারুদের ঝাঁজটা রয়ে গেছে। হয়তো থাকবে আরও অনেকদিন।
কে বলতে পারে, হয়তো কখনও যাবে না।
আবার পটকা কোথা থেকে এল? এই তো বললে পেন্ডুলাম।
ওই হল।
*****
স্ক্রিনশটের সুনামি কমের দিকে। আমার ফাইন্ড দা ক্যাট-এর লাইফ শেষ। হোয়াটসঅ্যাপ বারবার রিফ্রেশ করেও নো আনরেড মেসেজ। জিরো স্ক্রিনশট।
হেউ।
কমপ্লেন করছি না। আমার লাইফ শেষ বলে আমার বিনোদনের দায়িত্ব নিতে লোকে নিজেরা ঝগড়া করবে নাকি? তাছাড়া ঝগড়া করতে প্রভূত এনার্জি লাগে। দীর্ঘসময় ধরে সেটা সাসটেন করা অসম্ভব। কাজেই, আমার বিনোদন হোক না হোক, ঝগড়া থামারই ছিল।
জানতাম থামবে। প্রতিটি সম্পর্ক একটা পার্টিকুলার পার্পাস সার্ভ করার জন্য পৃথিবীতে আসে।। মাবাবা আসেন বাঁচিয়ে রাখার জন্য। শিক্ষকরা শিক্ষা দিতে। প্রেম আসে প্রথম ছ'মাস ডাহা মিথ্যে বলে সেলফ এস্টিমের গ্যাসবেলুন ওড়াতে, সপ্তম মাস থেকে সে বেলুনে সেফটিপিন ফুটিয়ে আত্মবিশ্বাস মাটির ছ’ফুট নিচে পুঁতে দিতে। সে কবর, দুই হাতে খুঁড়ে, সূর্যালোকের মুখ দেখতে আবার মিনিমাম দু'বছর।
বিয়ের পার্পাস আমার মতে, সহ্য করতে শেখানো। পৃথিবীতে আর কোনও সম্পর্ক পনেরো বছর ধরে ‘আজ রাতে কী রান্না হবে?’-র উত্তর দেওয়ার রেজিলিয়েন্স নিয়ে জন্মায়নি। বিয়ে শেখায় টিঁকিয়ে রাখতে। টিঁকে যেতে।
যদি নাও শেখায়, অসুবিধে নেই। নিউ ইয়র্ক শহরে মহার্ঘ ডিভোর্স লইয়ার, জেমস সেক্সটন, পডকাস্ট সেলেব্রিটি, বলেছেন, সব বিয়ে ফুরোয়। হয় ডিভোর্সে, নয় ডেথে। কাজেই অত লাফানোর কিছু হয়নি। ঘাবড়ানোরও না। বিয়ে না থাকলেও মৃত্যু থাকবে। বিয়ে টিঁকলেও সবাই মরবে, না টিঁকলেও সবাই মরবে। বর বউ শ্বশুর ভাসুর শাশুড়ি ননদ পুরুত রেজিস্ট্রার কাউন্সেলর টাবলু - সব চিতায়, সবাই চিতায়। পুড়েঝুরে ফর্সা। ফয়লা। ফরফরে।
এত কথা কেউ জিজ্ঞাসা করেনি তাই বলতে যাইনি। তাছাড়া বললে ভাবত আমি ইয়ার্কি করছি। ওদের সমস্যা নিয়ে হাসছি। ওদের কষ্টকে তুচ্ছ করে দেখছি। কারণ কষ্ট হচ্ছে সেটা সত্যি। আর কষ্ট যখন হয় মনে হয় এত কষ্ট আমার আগে কারও হয়নি, আমার পরেও কারও হবে না। এত অন্যায় পৃথিবীতে আমার আগে আর কারও সঙ্গে হয়নি, আমার পরে কারও সঙ্গে হবে না।
কাজেই মুখে বড়া দিয়ে আছি। কাউন্সেলর কারণ খুঁজছেন, গুরু কর্মফলের ছপটি লাগাচ্ছেন, আমি ফলো করছি ঝগড়াটা।
আমি ঝগড়া ফলো করছি কারণ আমি ঝগড়া নিয়ে ফ্যাসিনেটেড।
আমি ঝগড়া নিয়ে ফ্যাসিনেটেড কারণ আমি ঝগড়া করতে পারি না।
*****
জানি ওপরের বাক্যটা কেমন শুনতে লাগছে। ইন্টারভিউর অন্তে কর্তৃপক্ষ যখন জানতে চান হোয়াট ইজ ইয়োর বিগেস্ট উইকনেস? আর প্রার্থী বলেন, আর বলবেন না সে যা উইকনেস, কাজ ডেডলাইনের মধ্যে জমা না দিয়ে থাকতেই পারি না, ঘুম নেই, নাওয়াখাওয়া বন্ধ, অথচ আমি কাজ করে চলেছি, কান্ট স্টপ মাইসেলফ, অবশেষে ডেডলাইনের একসপ্তাহ আগে ডেলিভারেবলস্ জমা দিয়ে শান্তি।
আরও একটা মারাত্মক উইকনেস আমার, ক্রেডিট না নেওয়া। ধরুন আকাশপাতাল এক করে পেপার লিখলাম আর আপনি এসে ফার্স্ট অথরশিপ চাইলেন। গ্ল্যাডলি মেনে নেব। কারণ আমি বিশ্বাস করি নাম দিয়ে কিছু হয় না। প্লেজার ইজ ইন দা প্রসেস।
আমি যখন বলছি আমি ঝগড়া করতে পারি না, আমি ওপরের ফিলিংটা জাগাতে চাইছি না। আমি জেনুইনলি বিশ্বাস করি ঝগড়া একটা লাইফ স্কিল। স্কুলে একটানে এশিয়ার ম্যাপ না আঁকিয়ে বা বাড়িতে যে কড়া নাড়ছে তাকেই প্রণাম না করিয়ে, যে শিক্ষাগুলো কাজের হত - অন্ততঃ আমার জন্য - তার মধ্যে টপমোস্ট হচ্ছে ঝগড়া করার শিক্ষা।
ঝগড়ার থেকে কনফ্রনটেশন বললে সম্ভবতঃ বেটার শোনাবে। কনফ্রনটেশনের সঙ্গে আমার সম্পর্ক সঙ্গিন। কনফ্রনটেশন সামলাতে পারিনি বলে আমার প্রভূত ক্ষতি হয়েছে। পেশায়। পার্সোন্যাল জীবনে।
ঝগড়া না করতে জানার সবথেকে বড় অসুবিধে যা আমি টের পেয়েছি - ঝগড়া না করতে শিখলে ঝগড়া মেটানোও শেখা হয় না। এই মুহূর্তে অন্ততঃ সাতটা নাম বলতে পারি যাদের সঙ্গে আমার যোগাযোগ কেটে গেছে স্রেফ ঠিকঠাক একটা ঝগড়া করতে পারিনি বলে। এই সাতের মধ্যে তিনজন, একটা ঠিকঠাক ঝগড়া করতে পারিনি বলে যে আমার জীবনে নেই, কোনওদিন থাকবে না, সেটা আমার রোজ মনে পড়ে আর রোজ আমার মনখারাপ হয়।
*****
আমি ঝগড়া করতে পারি না বললাম বটে, কিন্তু অন্যদের ঝগড়া করতে শুনলে বা স্ক্রিনশট পড়লে বোঝা যায়, বাকিদের অবস্থাও বলার মতো নয়। ঝগড়া একটা বিরল স্কিল। ঝগড়া করতে নেমে লোকে র্যান্ডম, অবান্তর কথা বলতে থাকে। পথে যেতে আসতে জটলা দেখলে বা চেঁচামেচি শুনলে থামি। উঁকিঝুঁকি মারি। পাঁচমিনিট পর যখন হাল ছেড়ে, গোড়ালি নামিয়ে নিজের গন্তব্যের দিকে হাঁটি তখনও বিন্দুমাত্র আইডিয়া থাকে না ঝগড়াটা কী নিয়ে লেগেছে। কারণ দুজনেই বলে যাচ্ছে, জানিস আমি কে? জানিস আমি কে?
আমাদের স্বামীস্ত্রীর ঝগড়াও প্রায় সেই লেভেলের। মুদ্দে পে বার্তালাপ না করে, অন্যের যুক্তি প্রতিযুক্তি দিয়ে খণ্ডন না করে, যে যার কানে আঙুল দিয়ে নিজের কথা বলে চলেছে। বর্তমান সমস্যা ও তার সমাধানে আলোকপাত না করে, গত আট বছরে যা যা অন্যায় মনে হয়েছে এতদিন - বুকে হাত দিয়ে বললে অত অন্যায় মনেও হয়নি, প্রেমের অনাবিল প্রশ্রয়ে সহজেই এড়িয়ে যাওয়া গেছে - সে সব অন্যায়ের জীবাশ্ম স্মৃতি খুঁড়ে তুলে আনছে।
ঝগড়া শুনলে এটাও সন্দেহ হতে পারে যে ঝগড়া মেটাতে উৎসাহী নয় কেউ। আসল উদ্দেশ্য অন্য লোকটাকে ক্রিমিন্যাল ও নিজেকে ভিকটিম প্রমাণ করাতে। মীমাংসা আমাদের মোক্ষ নয়। আমাদের আসল সাধ মজা দেখানোর। শাস্তি দেওয়ার। ঝগড়ার মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে আমি তোমার জন্য এত কিছু করেছি তার পর এই ব্যবহার হয় কী করে। উল্টোজন সঙ্গে সঙ্গে ফেরত আসছেন। আমিও তোমার জন্য অনেক করেছি, স্বার্থপরের ঝাড় না হলে প্রতিদানে কেউ এই ব্যবহার করতে পারে না।
করার লিস্ট নিম্নরূপ - নট ইন এনি পার্টিকুলার অর্ডার।
রোজ চা করা। অ্যানিভার্সারিতে গয়না দেওয়া। রোজ টিফিন গোছানো। বছরে দু’বার বেড়াতে নিয়ে যাওয়া। কিন্তু প্রত্যেকবার পাহাড়, নো সমুদ্র। রোজ চা করা। প্রতি জন্মদিনে গয়না দেওয়া।
যে করাটা কমন পড়েছে, তা হল স্যাক্রিফাইস। দুজনেই করেছেন। অসীম করেছেন। স্যাক্রিফাইসের লিস্ট, নট ইন পার্টিকুলার অর্ডারঃ নিজের কেরিয়ার। বিছানার সাইড। সমুদ্র। রোজ ঘুম অপূর্ণ রেখে চা করে দেওয়া। কৃতজ্ঞতার আশা না রেখে পকেট পুড়িয়ে গয়না কিনে দেওয়া।
এর মধ্যে কোন জিনিসটার আশায় বিয়ে করে লোকে? পাহাড় না সমুদ্র - কোনটা না পেলে বিয়ে টেঁকে না? গয়না না টিফিন - কোনটা নন-নেগোশিয়েবল? কোনটার জন্য বিয়ে অপরিহার্য? চা না পছন্দমতো বিছানার সাইড - কোনটা না পেলে বিয়ের মতো একটা বেঢপ কনট্র্যাক্টে - যার কেবল শুরু আছে, শেষ নেই, রিনিউয়্যাল নেই, কোনও লিখিত টার্মস অফ কনট্র্যাক্ট নেই - যেচে ঢোকে লোকে?
ঢোকার সময় তো কেউ বলেনি বিয়ে মানে চায়ের বদলে চন্দ্রহার আর পুরীর বদলে পার্টনারশিপ? তখন শুধু দাঁতভাঙা হৃদয়ং মৃদয়ং যদিদং তদিদং। তিনশো লোককে সাক্ষী রেখে আগুনে ঘি ঢেলে শপথ। হেলথে সিকনেসে। সংকটে সম্পদে। জনমে মরণে।
তাছাড়া, আমি এই করেছিলাম বলে তোমার ওই করতে হবে - লজিকের একটা মস্ত বড় বিপদ আছে। যেটা এঁরা ঝগড়ার তোড়ে খেয়াল করছেন না। বা খেয়াল করলেও রাগ দেখানোর ঝোঁকে অস্বীকার করছেন।
ধরা যাক আমি তোমাকে চা করে দিলাম না। তা হলেই তুমি রাত দুটোয় র্যান্ডম লোকের সঙ্গে চ্যাট করবে? চা করে দিই না বলে আমার দুঃখ পাওয়ার বা তোমাকে বাধা দেওয়ার অধিকার থাকবে না?
ধরা যাক আমি তোমাকে বাৎসরিক, সরি, বার্ষিকীতে গয়না দিলাম না। তুমি অমনি গটগটিয়ে পাড়ার পিন্টুদার সঙ্গে রাতভরের পিকনিকে বেরিয়ে পড়বে? স্রেফ গয়না দিইনি বলে আমাকে চুপ করে গিলতে হবে?
মানুষের মাথা, মন কি সত্যিই এভাবে চলতে পারে? চলা সম্ভব? আমার বিশ্বাস হয় না। যারা বলছেন রাগের মাথায় বলছেন। এতখানি গিভ অ্যান্ড টেকে আমরা কেউ বিশ্বাস করি না।
*****
নাকি করি?
নাকি আমরা গিভ অ্যান্ড টেকেই বিশ্বাস করি এবং গিভ অ্যান্ড টেক ছাড়া আর কিছুতেই বিশ্বাস করি না?
আমার বিশ্বাস, এ অবিশ্বাসের পেছনে শয়তানির শতাংশ প্রায় শূন্য। পুরোটাই ইনসিকিওরিটি। আমাদের সেলফ এস্টিম এমন তলানিতে যে আমরা এটা বিশ্বাসই করে উঠতে পারি না, পারিনি কোনওদিন, যে আমি সার্ভিস না দিলেও কেউ আমাকে ভালোবাসা দেবে। আমরা সত্যি সত্যিই চায়ের বদলে একনিষ্ঠতা, বার্ষিক বিদেশ ভ্রমণের বদলে ভয়ে ভয়ে ভালোবাসা চেয়ে গেছি।
আমি নিজেও হয়তো তাই। কিন্তু আমি এ রকম হতে চাই না। আমার জীবনের স্বপ্ন, এক, বিশ্বমানের ঝগড়ুটে হওয়া। দুই, নিজের মূল্য প্রমাণের সমস্ত দায় থেকে মুক্তি পাওয়া। মুচকি হেসে বলতে পারা যে আমি কোনও পরীক্ষাতেই বসব না আর কোনওদিন, তুমি আমাকে এমনি এমনিই ভালোবাসবে।
Comments
Post a Comment