নিজের হাতে


বাথরুম থেকে বেরিয়ে দেখলাম আমার টেবিলের সামনে নাজিয়া। এদিক ওদিক তাকাচ্ছে।

আপহি কো ঢুন্ড রহে থে ম্যাম। এসপ্রেসো বনায়েঙ্গে?

প্রশ্নটা বুঝতে দশ সেকেন্ড গেল। ব্লু টোকাই-এর নতুন স্ট্র্যাটেজি হচ্ছে এনগেজমেন্ট। দোকানের বাইরের চাওয়ালা, বইয়ের দোকানের মালিক, দর্জি - কমিউনিটির অন্যান্য সদস্য, নেবারহুডের বাকি প্রতিবেশীদের নিজেদের কর্মকাণ্ডের অংশ করতে উঠে পড়ে লেগেছে ব্লু টোকাই। প্রতিবেশীদের ছবিসম্বলিত ব্যানার রাখা হয়েছে দোকানের সামনে, অ্যাডভার্টাইজমেন্ট তৈরি হয়েছে যা দোকানের ভেতর ঝোলানো তিনটে টিভির একটায় লুপে চলছে।

বাইরের প্রতিবেশীদের এনগেজ করা ভালো ব্যাপার। ভেতরের পাপীরা যাতে ভেসে আসার ফিলিং না পায় সেদিকেও নজর দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। আশপাশের পাড়ার ম্যাপ - এত প্রফেশনালি আঁকা যে অ্যামেচারিশের আশ্বাস দেয় - টাঙিয়ে সবাইকে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে প্রিয় পাড়া সম্পর্কে নিজের অনুভূতি পোস্ট ইট-এ লিখে সাঁটতে। ম্যাপটা হচ্ছে একটা পিন বোর্ড। বাথরুমের জন্য যে দেওয়ালের পাশে লাইন পড়ে, বোর্ড স্ট্র্যাটেজিক্যালি সেই দেওয়ালেই টাঙানো হয়েছে। অপেক্ষা করতে করতে রেগে না উঠে গল্প লিখুন, সাঁটুন, পড়ুন। রেগুলাররা প্রায় সকলেই গল্প সেঁটেছে। আমি আমার চরিত্রের প্রতি সম্পূর্ণ লয়্যাল থেকে লিখেও, কী দরকার ভেবে পোস্ট ইট ঘুচিমুচি করে ফেলে দিয়েছি। গল্পের নিচে অনেকেই নাম লেখেনি। বাকিরা গল্প পড়ে ডিডিউস করার চেষ্টা করছে লেখকের পরিচয়।

আমাকে এসপ্রেসো বানানোর আহ্বান এই উদ্যোগের অংশ।

মনে পড়ল, কয়েক সপ্তাহ আগে বী, মাথায় জাল পরে কাউন্টারের ওপার থেকে হাতে এককাপ ক্যাপুচিনো নিয়ে বেরোচ্ছিল বটে। তোমাকে ভেতরে অ্যালাউ করল? পাঁচবার জিজ্ঞাসা করেছিলাম। পাঁচবারই রহস্যময় হাসি হেসে এড়িয়ে গেছিল।

নাজিয়া বলল, উস দিন ক্যাপুচিনো ডে থা। বী-সার ক্যাপুচিনো প্রিপেয়ার কিয়ে থে। আজ এসপ্রেসো ডে হ্যায়, আপ অগর চাহো তো . . . 

নাজিয়ার আগে আগে দৌড়ে গেলাম। দেওয়ালে সাঁটা পাত্র থেকে জাল তুলে মাথায় পরলাম, যেমন ওদের পরতে দেখি রোজ। তারপর আগের বারের ব্যবহৃত পোর্টাফিল্টার মেশিন থেকে খুলে, কফি গুঁড়ো ফেলে, প্রেশার স্প্রে দিয়ে গায়ে লেগে থাকা শেষ বিন্দু কফির গুঁড়ো সাফ করে, কফি বিন গ্রাইন্ড করে, ডোজ মেপে পোর্টাফিল্টারের পরিষ্কার বাস্কেটে পুরে, বাস্কেট থাবড়ে কফির গুঁড়োর ডিস্ট্রিবিউশন সমান করে, ট্যাম্পারের সাহায্যে সমতল এবং কম্প্রেসড ‘পাক’ বানিয়ে, শেষমেশ লক অ্যান্ড ব্রু। গ্রুপ হেডের দুটি নল বেয়ে সোনালি বাদামি উজ্জ্বল ক্রেমা গড়িয়ে পরে আগে থেকে গরম করা ডেমিটাস ভরিয়ে তুলল।

নাজিয়া পুরো প্রসেসটা গাইড করল, বিজয় ফোন বাগিয়ে আমার ভিডিও বানালো।

এসপ্রেসো হাতে তুলে বললাম, অব কেয়া করনা হ্যায়?

পি লিজিয়ে।

ভাবা যায়? একে ওদের অত দামি দামি যন্ত্রপাতি ঘাঁটার সুযোগ তায় লাঞ্চের পর ফ্রি এসপ্রেসো?

সিটে ফিরে এলাম। বী তক্ষুনি ঢুকছিল। ডাকলাম। এই দেখো আমি আজ এসপ্রেসো বানিয়েছি। সবাই বলেছে আগের সপ্তাহের তোমার ক্যাপুচিনোর থেকে এক কোটিগুণ বেটার হয়েছে।

গোটা অভিজ্ঞতার কথা খেলিয়ে লিখে, আমার বানানো এসপ্রেসো মাস্টারপিসের ছবি পাঠালাম অর্চিষ্মানকে। অর্চিষ্মান চ্যাটবাক্সেই চোখ ঘোরাল। হেউ। কফির ছবি দেখে কী হবে, তোমার ভিডিওটা বিজয়ের থেকে জোগাড় কর।

যাতে ও আমার মৃত্যুর দিন পর্যন্ত সেটা চালিয়ে হেসে গড়াগড়ি খেতে পারে।

আপনারা সে রকম নন এবং আমার নিজের হাতে বানানো এসপ্রেসো দেখতে উৎসাহী হবেন জেনে ছাপালাম।





Comments

  1. ছবির জিনিসগুলো দেখে, ছোটোবেলার একটা ব্যাপার মনে পড়লো - স্কুলে রচনা লিখতে দিতো - "একটি পেনসিলের আত্মকথা" - এরকম ধরণের। আপনি যখন ছবির জিনিসগুলোদের ফেলে রেখে দিয়ে নতুন কফি বানিয়ে আনতে চলে গিয়েছিলেন, তখন কত অবহেলায় সময় কাটছিলো ওদের, এই নিয়ে একটা রচনা লিখতে দিতেই পারতো আমাদের সেই ক্লাসে।

    কিন্তু টপিক হচ্ছে এসপ্রেসো। এবং এসপ্রেসো নিয়ে আমার জ্ঞানের পরিধি একদম শূন্য। এসপ্রেসো বানানোর পেছনে এত কসরত থাকে জানা ছিল না। আমার নিজের কফির ব্যবহার হচ্ছে একদম ফ্রিজের ঠান্ডা দুধে ইনস্ট্যান্ট কফি গুলে কোল্ড কফি বানিয়ে খাওয়া। এটা রোজই খাই। আমার বোন আবার কফি নিয়ে শৌখিন, আমার ইনস্ট্যান্ট কফির ভালোবাসা দেখে সে নাক কোঁচকায়। বেশ কয়েকবার এদিক ওদিক থেকে কী সব ভালো কফি এনে আমার কফির উপলব্ধিতে উন্নয়ন ঘটানোর চেষ্টা করেছিল, কিন্তু সে গুড়ে বালি, আমি সেই ব্যাক টু নেসক্যাফে ক্লাসিক গুলে কোল্ড কফি।

    ReplyDelete
    Replies
    1. আপনি জলে গুলে ইন্সট্যান্ট নেসক্যাফে চালিয়ে যান, রাজর্ষি। আমার ঘোর বিশ্বাস, আর দুয়েকবছরের মধ্যে এই এসপ্রেসো ডোপিও মাচা লাটের ঠেলাঠেলিতে সেটাই হবে কুল থিং। আমরা এখন মাঝে মাঝে ইন্সট্যান্ট নেসক্যাফে সাধ করে বানিয়ে খাই। রাত চারটের সময় ম্যাগি বানিয়ে খাওয়ার সময় বলাবলি করি, নেস্ক্যাফে খাবে? সে একেবারে কাপের মধ্যে কফি নিয়ে ঘটাঘট গুলে গরম জল ঢেলে বানানো কফি। অসামান্য লাগে।

      আপনার রচনার আইডিয়াটা ভালো। তবে আমার সন্দেহ আমি টেবিল ছেড়ে উঠে গেলে আমার খাতাপত্র কীবোর্ড আমার নামে খুব পি এন পি সি করে।

      Delete
  2. aajkaal dokane giyeo nijer haate coffee baniye khete hochhe? shotti ki din kaal porlo

    ReplyDelete
    Replies
    1. হাসল্‌-এর জমানা, ভাই। তোমাদের ওই টেবিলে বসে বসে এই লাও সেই লাও আর চলবে না। দিগন্তে রাঙা সূর্য উঠল বলে।

      Delete
  3. Areeee! Eto to darun byapar!. Kolkatar Blue Tokai ei offer dile amio korbo :) Khub bhalo post.

    ReplyDelete
    Replies
    1. হ্যাঁ, এই পোস্টগুলো সত্যি ভালো সায়ন। আমার লিখে খুব তৃপ্তি হয়। পাঠকরাও বেটার রিসিভ করেন। আপনার কাছের ব্লু টোকাইতে খবর নিন, এদের ড্রাইভগুলো সম্ভবতঃ সারা ভারতে একই সঙ্গে ফ্লোট করে, নিশ্চয় কলকাতাতেও করেছে।

      Delete
  4. কালকে কমেন্ট করলাম, আজ তার কিছু রিপ্লাই এসেছে কিনা দেখতে উঁকি মেরে দেখি সেটা পাবলিশড ই হয়নি। কি কান্ড!
    যাইহোক, আরেকবার ভাগ্য ট্রাই করি।
    আমি ব্লু টোকাইতে জীবনেও যাইনি। খুব নিকট ভবিষ্যতে যাব বলে মনেও হচ্ছে না। আমি কফিশপে খুব একটা যাইনা এবং কফিশপে যাঁরা যান তাঁদের বেশ ভয় ভয়ই পাই।
    তবে আমরা খুব কফি ভক্ত এবং অবশ্যই ফিল্টার কফি! প্রথমে বিয়ালেত্তি মোকা পট কিনেছিলাম, ওটাতেও খুব ভালো হত। কমাস আগে একটা ভালো কফি মেশিন কিনেছি। রোজ সকালে আমরা ফ্রেশ কফি বিনস গুঁড়ো করে এসপ্রেসো বানিয়ে খাই... সকাল বেলায় আমার ঘরে এলে CCD র ambience আর বাঙাল বাড়ির আন্তরিকতার ফিউশন পাওয়া যাবে।
    ব্লু টোকাই কি কফি বানানোর লোক নেবে?

    ReplyDelete
    Replies
    1. আমি যে জীবনে কত ঘণ্টা বিয়ালেত্তির লিংক খুলে তাকিয়ে বসে থেকেছি। দোকানে গিয়ে হাতে তুলে, নামিয়ে, আবার তুলে, আবার নামিয়ে রেখেছি। কিনিনি কারণ জানি উৎসাহ উবে যেতে বেশিক্ষণ লাগবে না। আপনার কমেন্ট পড়ে আবার বুকের মধ্যে একটা উৎসাহের নড়াচড়া টের পাচ্ছি। দেখা যাক।

      "রোজ সকালে আমরা ফ্রেশ কফি বিনস গুঁড়ো করে এসপ্রেসো বানিয়ে খাই" - স্যালুট।

      ব্লু টোকাইতে তিন মাসের ট্রেনিং হয়। নিতে পারেন। কড়া ট্রেনিং। নাজিয়া বলেছে আমাকে, খুবই টেকনিক্যাল ব্যাপারস্যাপার শেখানো হয়। অত রকম কফির রেসিপি মনে রাখতে গেলেই আমি পাগলা হয়ে যাব।

      Delete

Post a Comment