সত্যিমিথ্যে



আজ সকালে মাকে আবার একটা মিথ্যে কথা বললাম। অকারণেই। একটা কাজ করব বলে অনেকদিন আগে ঠিক করে রেখেছিলাম, সেই খবরটা এমন ভাবে দিলাম যেন এই এক্ষুনি মাথায় এল। কথাটা অতি সামান্য কিন্ত ভয় হয়েছিল শুনলেই বুঝি না করে দেবে। আমার ভয় মিথ্যে প্রমাণিত করে বাবামা অত্যন্ত স্বাভাবিক মানুষের মতো আচরণ করলেন এবং আপত্তির ধারপাশ দিয়ে গেলেন না। মিথ্যে বলার মানসিক চাপটা আমি অকারণই নিলাম।

চাপ বইকি। মনের জোর কম বলেই হোক, অথবা স্মার্টনেসের অভাব – মিথ্যে বলতে গেলে এখনও কথা জড়িয়ে যায়, ফোন কানে পায়চারির গতিবেগ বাড়ে, গলা মুদারা ছেড়ে উদারায় নেমে যায়। অথচ আমি মোটামুটি নিয়মিত মিথ্যে কথা বলে থাকি। সবথেকে বিরক্তিকর ব্যাপারটা হচ্ছে, যে বিষয়গুলো নিয়ে আমি মিথ্যে বলি সেগুলো এতই হাস্যকর রকমের ছেঁদো যে পরে ভেবে দেখলে নিজেরই হাসি পায়।

এমপিরিক্যাল কাজকর্ম করে থাকি, ডেটা আমার শালগ্রাম শিলা। সার্ভে করে দেখেছি, আশেপাশের সবাই মিথ্যে বলার ব্যাপারটা স্বীকার করেছে। কিন্তু স্ট্রিক্টলি মহৎ উদ্দেশ্যে। মৃত্যুপথযাত্রী বাবাকে কারগিল যুদ্ধে সন্তানের মৃত্যুর খবর দেওয়ার সময় অথবা দাঙ্গা চলাকালীন সংখ্যালঘুকে বাড়ির ভেতর লুকিয়ে রাখার সময় ছাড়া নো মিথ্যে।

দেখেশুনে আমি খুবই দুঃখিত হয়ে পড়েছি। বাকিদের যুদ্ধ দাঙ্গা ইত্যাদির তুলনায় আমার মিথ্যে বলার পরিস্থিতিগুলো, একশো কোটি বলিউডি সিনেমার তুলনায় টাইগার হিলের সামনে দাঁড়িয়ে ওয়েবক্যামে তোলা ফ্যামিলি ভিডিও।

তবু কেন যে মিথ্যে বলি কে জানে। ছোটবেলা থেকে চরিত্রগঠনের যে পাঠগুলো পাখিপড়া পড়ানো হয়েছে তার মধ্যে একনম্বর নিঃসন্দেহে ‘সদা সত্য কথা বলিবে’। গুরুজনকে শ্রদ্ধা করা, কানাকে কানা খোঁড়াকে খোঁড়া না বলা, নিজের থেকে সাইজে বড় সবার পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করা ইত্যাদিও সত্যি কথা বলার সঙ্গেই মুখস্থ করানো হয়েছিল। আজীবন প্র্যাকটিসও করেছি, খালি সত্যবচনটাই যে কেন বাদ পড়ে গেল জানি না।

কোথায় যেন পড়েছিলাম, টানা বারো বছর মিথ্যে না বললে মানুষের ভেতর এমন ক্ষমতা জন্মায় যে সে যা বলে তাই ফলে। কী সাংঘাতিক ক্ষমতা! এর লোভে কি মিথ্যে কথা বলা ছাড়া যায়? অবশ্য সে ক্ষেত্রে মিথ্যে না বলার মধ্যে সত্য গোপন, ইতি গজ গোছের সংলাপ ইত্যাদিও ধরা হবে। মাঝে কিছুদিন চেষ্টা করেছিলাম মিথ্যে না বলে থাকার। মারাত্মক ভাবে ফেল করেছি। সদা সত্যি কথা বলাও আমার এ জীবনে হল না, আরও অনেক কাজের মতো।

মিথ্যে কথা যখন বলতেই হবে তখন কী করে মিথ্যে বলেও ধরা না পড়া যায়, এবার থেকে সেটাই প্র্যাকটিস করব বরং, আজ থেকে।

    

  

Comments

  1. Ki sanghatik! Bhagyis ami mithye boli! Oi khamota ta ki sanghatik bhebe dekhechhen? Hoyto bachchake galpo shonachchhen, "Tarpor haloom kore ekta bagh ese amader ghor-e dhuke poRlo." Tar porer drishyota bhebe dekhun! Tar cheye amar 12 bachhor kashto korbar o dorkar nei, kotha fole jawar khamotar-o proyojon nei.

    ReplyDelete

Post a Comment