পুজো
ইনি হচ্ছেন কলম্বাস, ওহায়োর বেঙ্গলি অ্যাসোসিয়েশনের মা দুর্গা। এঁরই ছুতো করে গত শনিবার আমরা সুটকেস ঘেঁটে তাঁতের শাড়ি, ফ্যাবইন্ডিয়ার পাঞ্জাবি, বাটিকের ডিজাইনার হ্যান্ডব্যাগ আর কোলাপুরি চটি ধুলো ঝেড়ে পরে বেরিয়েছিলাম। আকাশে ঘন কালো মেঘ আর দিনভর ঘ্যানঘেনে বৃষ্টি থাকা সত্ত্বেও।
প্রদীপ জ্বালানোর আগে সলতে পাকানোর যে পর্বটা থাকে, আমদের বেলায় পুজো দেখতে যাওয়ার আগের সেই পর্বটা হচ্ছে চাঁদা নিয়ে দরাদরি। এই অনাদিঅনন্তকাল ধরে চলতে থাকা ছাত্রাবস্থা, বছরের এই সময়টুকুতেই যা একটুখানি মাইলেজ দেয়। গরিব গ্র্যাজুয়েট স্টুডেন্টদের জন্য দয়ালু কর্তৃপক্ষ চাঁদা কম ধার্য করেন। যাতে আমরা দোল বেঁধে গিয়ে মাসরস্বতীর পায়ে বই ঠেকিয়ে আসতে পারি।
চুল বাঁধতে বাঁধতে, শাড়ির কুঁচি ঠিক করতে করতে,
রং মিলিয়ে লিপস্টিক পরতে পরতে আর একখানা পাঞ্জাবি গলিয়েই যাদের সাজ কমপ্লিট সেই
ছেলেছোকরাদের গালি খেতে খেতেই বেলা এগারোটা। ঊর্ধ্বশ্বাসে পুজোর ভেনুতে পৌঁছে দেখি
তক্ষুনি সেকেন্ড ইন্সটলমেন্টের অঞ্জলি জাস্ট শুরু হয়েছে। মাদুর্গাকে মনে মনে মনে
থ্যাংকস দিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে পড়ি।
কলকাতা বা কলম্বাস, পুজো যেখানকারি হোক না কেন, কোনওখানেই মাদুর্গা ও তাঁর পরিবার লাইমলাইটে থাকেন না। দেশে ঝাড়লণ্ঠন আর ঘুঁটের প্যান্ডেল আমাদের মনোযোগ দখল করে রাখে আর এখানে লোক দেখা আর নিন্দে করা। হার্মলেস নিন্দে, অফ কোর্স। কোন কাকুর পাঞ্জাবিটা নির্ঘাত কাকিমার বেনারসী কেটে বানানো হয়েছে গোছের।
আর খাওয়া তো আছেই। বিকেলের স্ন্যাক্সে ঝালমুড়ি
(যেটায় চানাচুর আর মুড়ির অনুপাত হেসেখেলে ১ঃ১০) আর দুটো ক্ষীণকায় তেলেভাজা (ঠাণ্ডা
এবং ন্যাতানো) খাওয়ার জন্য যে রকম উত্তেজনা আমার তার সিকিভাগও থাকলে ডিসার্টেশন
এতদিনে নেমে যেত।
মাদুর্গাকে পাত্তা না দেওয়ার ব্যাপারটা বাদ দিলে
এখানকার আর পাড়ার পুজোর অনেক তফাৎ। ওটা যদি লস্যি হয় এটা তবে পিটুলিগোলা। তাই এই
পুজোতে আসার আগে একশোবার ‘যাব কি না যাব কি না’ ভাবি। শেষ মুহূর্তে সংশয়দীর্ণ
চিত্তে ‘অ্যাটেন্ডিস্’-এর তালিকায় নিজের নামটা ঢোকাই। কী হবে গিয়ে? ‘সেই ব্যাপারটা’ তো থাকবে না। তবু
পুজোর দিন সকালে উঠে মন আপনা থেকেই ভালো হতে শুরু করে। পৌঁছে, অঞ্জলি দিয়ে, প্রসাদ
খেতে খেতে আর মনেও পড়ে না যে না আসার ইচ্ছেটাও কখনও মনে উঁকি দিয়েছিল।
কারণ হয়তো, পুজোর সঙ্গে যে সব ভালোলাগাগুলো
(সোজা কথায় নস্ট্যালজিয়া) জড়িয়ে আছে আমার সে গুলো অতটাও স্থানকালপাত্রনির্ভর নয়।
পুজো মানে যদি বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়া হয় তবে সেটা ম্যাডক্স স্কোয়্যারে বসে
দিলাম নাকি কোনও বিজাতীয় স্কুলের বাস্কেটবল কোর্টে বসে সেটা ইমমেটেরিয়াল। মনের মতো
বন্ধু থাকলেই হল। অথবা যদি ওখানের পুজোয় অঞ্জলি দিতে দিতে কারও সঙ্গে চোখাচোখি
হওয়াটাই পুজোর আসল কথা হয়, তা হলে এখানে আপনি যে টেবিলে বসে প্রসাদ খাচ্ছেন ঠিক
তাঁর কোণাকুণি টেবিলের দিকে তাকিয়ে দেখুন, দেখবেন একজন অপ্রস্তুত হয়ে চোখ সরিয়ে
নেবে।
পুজোয় সবাই নিজের খোলস থেকে বেরিয়ে অন্যরকম। ভালো ছেলেরা বিসর্জনের লরির সামনে নাচবে, ভালো মেয়েরা চোখেমুখে আলো মেখে চারপাশে ভিড় করে দাঁড়িয়ে দেখবে, কাকুরা শিং ভেঙে আবারও একবার ধুনুচি হাতে নামবেন, কাকিমারা সারা গালে সিঁদুর মেখে নৃত্যরত কাকুর দিকে তাকিয়ে বিশ বছর আগের কোনও বিসর্জনের সন্ধ্যের কথা ভাববেন। দাদুরা পাটভাঙা ধুতি পাঞ্জাবি পরে দূরে দাঁড়িয়ে আলোচনা করবেন। তবু তো ছেলেপুলেরা ট্র্যাডিশনটা ধরে রেখেছে।
নাচে, কোলাহলে, ঢাকের শব্দে, ধুনুচির ধোঁয়ায় কাছাকাছি আসবে সবাই। চেনা অচেনা আধচেনা সবাই গায়ে গায়ে ঠেকাঠেকি করে ঠাকুরের পা ছুঁতে যাবে, একে অপরের গালে লাল ছুঁইয়ে দেবে, জড়িয়ে ধরবে। সামনের তিনশো পঁয়ষট্টি দিন আবার একা একা বাঁচতে চাওয়ার অভিনয়ের রসদ পুরে নেবে নিজেদের মধ্যে।
এই নৈকট্য, স্পর্শ, গন্ধ, দৃশ্য সব বুকের ভেতর তুলে রাখবে যত্ন করে। আসছে বছর আবার হবে।
khoob bhalo laglo pore, jibon e prothombar ei bochhor pujo theke door e thekechhi. Pujor kono abhaas e paini eikhane. tomar chhobi gulo dekhe khoob bhalo laglo but I also cannot completely dominate the part of my mind and heart that, for a moment, simmered with envy!
ReplyDeleteThank you.Eirokom hingshe te asubidhe nei.Next bochhor pujo te thakte paarben aasha kori.Shubho bijoyaa.
ReplyDelete