জানা কথা


বাচ্চা দেখলে কী করেন আপনি?

নিজের বাচ্চাকে নিয়ে যা খুশি করুন। প্রশ্ন হচ্ছে পরের বাচ্চা দেখলে আপনি কী করেন।

ধরা যাক একটা মোটাসোটা গাবলু বাচ্চা দিব্যি আঙুল চুষতে চুষতে ঠেলাগাড়ি কিংবা কারও কোলে চেপে চলেছে। আপনি কি ঝাঁপিয়ে পড়ে নানারকম দুর্বোধ্য সাংকেতিক ভাষায় বাচ্চার মনোরঞ্জনের চেষ্টা করেন? নাকি গর্বিত মাবাবা যখন বাচ্চাকে আপনার কোলে ওঠাবেনই মনস্থ করে বলতে থাকেন, “আরে নিয়েই দেখ না, ও একটুও কাঁদে না”, তখন কাঁচুমাচু মুখে বোঝানোর ব্যর্থ চেষ্টা করেন যে পরীক্ষার দরকার নেই, আপনি অলরেডি বাচ্চার না কাঁদার প্রতিভায় চমৎকৃত।

এই দুই দলের বাইরে আরেক দল আছেন, যাঁদের নিয়ে আজকের অবান্তর।

আমাদের এই তৃতীয় দল পরীক্ষা নিতে ভালোবাসেন। বুলি না ফোটা কোলের বাচ্চাদের প্রতি এঁদের বিন্দুমাত্র উৎসাহ নেই। কিন্তু কথা বলতে পারা বা স্কুলে যাওয়া বাচ্চার দেখা পেলে আর রক্ষা নেই। অন্তর্নিহিত পরীক্ষকসত্তা নিমেষে চাগাড় দিয়ে উঠবে।

-নাম কী?

-বাবার নাম কী?

-বাবা না মা, কাকে বেশি ভালোবাস?

-কোন সাবজেক্ট পড়তে সবথেকে বেশি ভালোলাগে?

-গান শিখছ? বাঃ শোনাও দেখি একটা গান, কেমন শিখছ দেখি।

এইসব প্রশ্নের বেশিরভাগেরই কোনও উত্তর হয় না, এবং বেশিরভাগ বাচ্চাই সেটা বোঝে। এইবার কে কীভাবে এইসব পরীক্ষক বড়দের মোকাবিলা করবে সেটা সম্পূর্ণ নির্ভর করে বাচ্চার ব্যক্তিত্বের ওপর। শান্তিপ্রিয় বাচ্চা চুপ করে থাকে, বিচ্ছু বাচ্চা মুখ ভ্যাংচায়, তেমন রাগি বাচ্চা হলে তেড়ে কামড়াতে যেতেও দেখেছি।

কোনও কোনও বিরল শিশু যুক্তিপ্রয়োগ করে।

আজ থেকে বেশ কিছু বছর আগে এক বসন্ত বিকেলে এ রকম একটি বিরল প্রতিভাবান শিশুকে চাক্ষুষ করার সৌভাগ্য হয়েছিল আমার। মনোরম বিকেলে পাড়াশুদ্ধু সবাই মুক্ত বাতাস সেবন করতে রাস্তায় বেরিয়েছে। ছোটরা সাইকেল শিখছে, ছেলেরা মোড়ের মাথায় জটলা করে মেয়ে দেখছে, মেয়েরা মন্দ্রাক্রান্তা ছন্দে সেই মোড়ের সামনে দিয়ে বারংবার পায়চারি করছে। বুড়োরা মুদির দোকানে দাঁড়িয়ে কেচ্ছাচর্চা করছেন, বুড়িরা বারান্দা থেকে বারান্দায় বাতের ব্যথার টোটকা দেওয়ানেওয়া করছেন।

সোজা কোথায়, পৃথিবী ঠিক যেমনটি চলার তেমনটি চলছে।

এমন সময় আমাদের শিশুটিও তার মা’র কোলে চেপে ঘুরতে বেরিয়েছিল। অচিরেই এক প্রাপ্তবয়স্ক প্রতিবেশীর সঙ্গে দেখা। প্রাথমিক সৌজন্য বিনিময়ের পর মা আক্ষেপ করে বললেন,

-দেখুন না, স্কুলে ভর্তি করতে হবে, কিন্তু মেয়ে কিছুতেই কথা বলতে চায় না।

ব্যস, আর যাবে কোথায়। হিতৈষী প্রতিবেশীর মাথায় বজ্রাঘাত হল।

-কথা বলে না! সেকি? আচ্ছা দাঁড়াও, এক্ষুনি কথা বলাচ্ছি।

তোমার নাম কী, বাবার নাম কী, বলত আমি কী রঙের জামা পরে আছি ইত্যাদি কোটি কোটি প্রশ্নবাণ হেনে আমাদের বড়মানুষটি ক্লান্ত হয়ে পড়লেন কিন্তু খুকি স্রেফ মুখ টিপে গম্ভীর মুখে তাঁর দিকে তাকিয়ে রইল।

মা লজ্জায় মাটিতে মিশে গেলেন। সত্যি তো, এমনি সময় মুখে খই ফোটে আর কাজের সময় এ কী দুষ্টুমি। মা খুকির মুখ নিজের দিকে ফিরিয়ে মনের রাগ মনে চেপে আদর করে জিজ্ঞাসা করলেন,

-বল মা, তোমার নাম কী?

খুকি শান্ত স্বরে শুধু বলল,

-তুমি তো জান।

জানা কথা একশোবার করে পুনরাবৃত্তি না করার অসম্ভব দামি নিয়মটা যদি আমরা সবাই মেনে চলতে পারতাম। 


Comments

  1. :-) :-) Ekdom Sibram mone eshe gelo

    ReplyDelete
  2. Bong mom, aami sommanito........

    ReplyDelete
  3. ufff..darun.....akebare thik likhechho...infact amio hoeto ogyanoto tomar tinte dolei shamil hoe gachhi..jokhon ma hoini tokhon khub birokto lagto...akhono lage..kintu ki jani ojantei kokhono na chaiteo meyer boyoshi bachha dekhle tar ativities na jigysha kore thakte parina....pore bhishon birokto lage...kintu...............

    ReplyDelete
  4. Hahaha, everything apart golpo ta darun laglo. Ki oshombhob shotti kotha boleche bachcha ta "tumi to jano" I have to agree with bong mom, very Sibram like. Kudos to you.

    ReplyDelete
  5. Kamalika, chap neben na. gyaanpapii howata amader moulik adhikaarer moddhye poRe. ja praaNe chay tai kore jan.

    Raka, dhonyobaad. bolo bachchata fatafati kina.....

    ReplyDelete
  6. Amar Shibram na, Satyajit Ray'r "Compu" galpota mone poRe gelo. Tobe ami kintu dwitiyo doler lok... bachcha dekhlei ulto dike palai. Nehat jodi bachcha ebong bachchar baba ma photo tulte day taholei amake sekhane atke rakha sambhab.

    ReplyDelete
  7. ar bachhader baba ma der adhikkheta niye kichu likho ...bapre baap..fb vore vore aj dat khicholo, kal bichana vejalo dubar itayadi..

    ReplyDelete

Post a Comment