রিষড়া
একটা সময়ের পর দেখা গেল
আমার সব চেনা লোকেরাই কলকাতায় থাকে। দক্ষিণ কলকাতা। সত্যি কথা বলতে কি, সবাই, বললে
বিশ্বাস করবেন না, সবাই গড়িয়ায় থাকে।
ছোটবেলায় ইয়ার্কি শুনেছিলাম
যে পৃথিবীর যেখানেই যাও না কেন, নবগ্রামে থাকে এমন কারও না কারও সঙ্গে দেখা হয়ে
যাবেই। অন্তত এমন কারও সাথে যার চেনা কেউ না কেউ নবগ্রামে থাকে। ঠিক যেমন পৃথিবীর
সর্বত্র রামকৃষ্ণ আশ্রমের ছাত্রদের দেখা পাওয়া যায়, অনেকটা সেইরকমেরই।
মুশকিলটা হল, আমাদের বাড়ি
থেকে তিনটে গলি পেরোলেই নবগ্রাম। গেঁয়ো যোগী হওয়ার পক্ষে এর থেকে উপযুক্ত পাত্র
খুঁজে পাওয়া শক্ত। কাজেই সে জায়গার এমন মহিমা আমি স্রেফ গাঁজাখুরি গপ্প বলে হেসে
উড়িয়ে দিতাম। কিন্তু গড়িয়া কি না দক্ষিণ কলকাতায়, তাই তার ক্ষেত্রে ব্যাপারটা মেনে
নিতে একটুও কষ্ট হল না।
কোথায় থাকা হয় প্রশ্নের
উত্তরে আমি একটা সাধারণ নিয়ম মেনে চলার চেষ্টা করি। বিদেশের ইউনিভার্সিটিতে
ডাক্তার দেখাতে গিয়ে যখন স্মলটক করতে হত, তখন অম্লানবদনে বলতাম ক্যালকাটায় থাকি। একদিন নার্স মহিলা সামান্য ভুরু কুঁচকে
আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, “ক্যালকাটা...ইউ মিন খ-ও-ল-খা-টা?” আমি ভয়ানক বিব্রত হয়ে
তড়িঘড়ি মাথা নেড়ে বললাম, “হ্যাঁ হ্যাঁ, ওটাই।” ব্যস্, তারপর থেকে আর কোনওদিনও
কোথাও ক্যালকাটা বলিনি।
ভারতের ভূগোল সম্পর্কে
প্রশ্নকর্তার বিন্দুমাত্র ধারণা আছে এ রকম সন্দেহ হলেই আমি পত্রপাঠ বলি যে আমি
হচ্ছি গিয়ে সাবার্বের লোক। অবশ্য অ্যামেরিকার পরিপাটি সাদা বেড়া আর মসৃণ ছাঁটা
সবুজ ঘাসের মসৃণ গড়িয়ে যাওয়া মাঠমণ্ডিত সাবার্বের সঙ্গে আমাদের ভিড়গিজগিজে লোকাল
ট্রেনের হকারশোভিত মফস্বলকে গুলিয়ে ফেলার যে কোনও কারণ নেই, সেটা আর খোলসা করে বলি
না।
আর যদি উত্তর দেওয়ার সময়
একশো গজ ব্যাসার্ধের মধ্যে কোনও কলকাতাবাসীর গন্ধ পাই তাহলে বলি,
-হাওড়া থেকে মেন লাইন,
উত্তরপাড়া ব্যান্ডেল বর্ধমান? সেই লাইনে একটা স্টেশন রিষড়া। আমার বাড়ি হল গিয়ে
সেইখানে। উত্তরপাড়ার নাম শুনেছেন? শ্রীরামপুর? রিষড়া হল ওই দুটো জায়গার মাঝখানের
একটা অজ পাড়াগাঁ।”
আপনি যদি কলকাতার সীমানার
পাঁচমিনিট বাইরের লোকও হন, এবং কলকাতায় থাকে এমন কারও শ্রবণসীমার ভেতর দাঁড়িয়ে
দাঁতের ফাঁক দিয়েও বার করেন যে আপনি কলকাতায় থাকেন, তার পরিণতি আপনি হাতেকলমে
পরীক্ষা করে দেখতে পারেন। তবে আমাকে পরে এসে বলবেন না আগে থেকে সাবধান করিনি কেন।
গড়িয়ায় সব চেনা লোক থাকার
ফলে বিপদ যেটা হয়েছে, এককালে তারা সকলেই একই দোকান থেকে এগরোল খেয়েছে, একই
শ্রীগুরু মিষ্টান্ন ভাণ্ডার থেকে রবিবার সকালে জিলিপি কিনেছে, একই কোচিং ক্লাস
থেকে প্রেম করে ফেরার পথে একই দোকানের চাউমিনের জন্য লাইন দিয়েছে। কাজেই তাঁরা যখন
ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে সে সব নিয়ে উত্তেজিত স্মৃতিচারণ করেন, কোন দোকানের রোল ভালো,
দক্ষিণাপনের এই গেটের ফুচকা ভালো না ওই গেটের, তখন আমার চুপটি করে বসে থাকা ছাড়া
আর কোনও উপায় থাকে না।
রিষড়ার ঝালমুড়িওয়ালা আর
ফুচকাওয়ালা নিয়ে গল্প ফাঁদতে পারি না বলে অবশ্য আমার যে খুব দুঃখ হয় তেমন নয়।
রিষড়ায় থাকা আসলে আমার মত মনোযোগ-লোভী লোকের পক্ষে শাপে বর। রিষড়ার মত ভালো
কনভারসেশন পিস্ আর হয় না। নাকতলা বললে সবাই এক সেকেন্ডে বুঝে নেয় লোকটা কোথায়
থাকে। রিষড়া বললে, তিরিশ সেকেন্ড থামে, তারপর বলে,
-ওহো, ওই মধ্যমগ্রামের
দিকটায়, তাই তো?
-উঁহু।
-আচ্ছা আচ্ছা, জনাই? সেই যে
যেখানে মনোহরা পাওয়া যায়?
-তাও না? ওহ্হ্হ্ মাই
ব্যাড মাই ব্যাড। তারকেশ্বর লাইন। আর বলতে হবে না।
আমি যখন কলেজে পড়তাম তখন
একবার সব বন্ধু মিলে আমাদের বাড়ি যাবে বলে ঠিক করেছিল। বেড়ানো তো নয়, ছোটখাটো
এক্সকারশন যেন।
-আচ্ছা ট্রেনে ডিমসেদ্ধ
বিক্রি হয়, না রে? কচুরি আলুর তরকারিও ওঠে?
একবার একজন আমাকে জিজ্ঞাসা
করেছিল রিষড়ার ক্লাইমেট কেমন। মানে কলকাতার মতই জানুয়ারি মাসে মাংকি টুপি আর মে
মাসে সুতির জামা পরতে হয় কি না।
আর ফোন করতে গেলে কি এস টি
ডি কল করতে হয়?
বুচিদিদিকে কে নাকি একবার
প্রশ্ন করেছিল রিষড়ায় বিজলিবাতি পৌঁছেছে কি না। । বুচিদিদি তাঁকে আশ্বাস দিয়ে
বলেছিল
-পৌঁছয়নি আবার? বললে
বিশ্বাস করবেন না, ট্রেনবাসও চলে। পালকি চেপে ঘুরতে হয় না।
heheh darun hoyeche :-)
ReplyDeleteami boRo hoyechi Barasat bole ekta jaygay, Dum Dum er kache holeo, setake oi "suburb" i bola chole. uff shei jaygay saap dyakha jaye na ki, chor ashle ki bhabe petano hoy, shib mondir e raater byala jaoa jaye ki na, rother melaye ki ki paoa jaye...amar matha kharap hoye gechilo ei shob er uttor dite dite..
tobu tomar climate kemon proshno ta i winner :-)
Hahahahaha.... emon koyekjon loker sathey dekha holey my day would be made, how amusing!
ReplyDeleteAmi kintu garia r kache thaki... tobe amar baba Hindmotor e chakri korechen kichu bochor ar ma Don Bosco Liluah te poriyechen 15 bochor tai rishra kothay ta shudhu jani na onek bar gechio. Amar ma jokhon bolto don bosco te poray lok e assume kore nito park circus, ma jokhon shei bhul dharona metanor jonno bolto liluah, tokhon besh ekta surprised look diye bolto arekta don bosco ache naki? Tumi roj shokale eto door jao?
Shotti kotha bolte ki kupomonduk e duniya ta bhorti- we have to live with them around us forever!
Amio Howrah Bardhhaman Main Line er basinda, ar amar baRi holo Hooghly. Bolai bahulyo amio bideshider ebong anek swadeshider kachheo "Calcutta" bolei chalai. Hooghly bolle amar samasya hoy du dharoner. Ekta holo, Andhra Pradesh e "Hubli" bole ekta jaiga achhe ebong seta nana karone khabore thake. Tai bharatiyo ra anekei Hooghly shunei hoi hoi kore, "HNya hNya jani oi to AP te bole othen." Onyo samosya ta hoy prodhanoto Poshchimbanglar lokeder niye - tNara sobbai janen Hooghly jelar katha, kintu oi naame je ekta shahor achhe seta janenna. Kajei Hooghly shunlei tNara bolen "Hooghly'r kothay?" Chandannagar, ChuchuRa, Bandel theke shuru kore Kamarpukur, Debanandapur, Shingur sobbai chenen, kintu Hooghly shahor achhe setai janenna.
ReplyDeleteTobe Kolkata theke Hooghly te phone korte kintu STD korte hoto amar chhotobelay - ChuchuRa exchange er STD code chhilo 03166. :)
ha ha ha..ami to sheoraphuli r basinda..sthan r nam bollei loke bhabe roj baba taraknath r mathai jol dhali r ki..
ReplyDeleteযা বলেছ, সঙ্গীতা। আসলে কলকাতার লোকদের হাওড়ার ওদিকটা সম্পর্কে আইডিয়া নেই বেশি।
Delete