কালপ্রিট



অনেকদিন বাঁচলে কিছু জিনিসের জন্ম ও মৃত্যু দুইই দেখতে পাওয়ার সুযোগ হয়। আমাদের পাড়ার ছোট্ট পার্কটি জন্মেছিল আমার চোখের সামনে, ধ্বংসও হল আমার চোখের সামনে। এবার গিয়ে দেখছি স্লিপ, ঢেঁকি, নাগরদোলা সব নিশ্চিহ্ন, পার্ক বেড় দিয়ে বাঁধানো রাস্তা, বসার বেঞ্চি হাওয়া। বদলে উঠছে জলের ট্যাংক। বাবা ইম্প্রেসড গলায় মিটারে দৈর্ঘ্যও জানিয়েছিলেন, ভুলে গেছি। মিটার ম্যাটার করে না। মোদ্দা কথা, পেল্লায়।

ও পার্কে আমার অনেক স্মৃতি। খোলা মাঠে দৌড়তাম, পার্ক হওয়ার পর ঢেঁকি চড়তাম, নাগরদোলায় বসে ঘুরতাম, স্লিপ বেয়ে নামতাম সাঁইসাঁই। নেমেই দৌড়ে আবার লোহার সিঁড়ির দিকে। একটা পয়েন্টের পর অবশ্য সিঁড়ি দিয়ে উঠতে আঁতে লাগত, ওঠানামা সবই হত ওই ঢালু পথ বেয়ে। এই সব করতে গিয়েই সম্ভবতঃ শক্ত মাটিতে আছাড় খেয়ে একখানা দাঁত ছিটকে গেছিল। বোটনদাদা, তার বয়স তখন কত হতে পারে আন্দাজ করে অবিশ্বাস জাগছে, তুলে এনে মাঠের কোণে টিউবকলে ক্রমাগত আঁজলা করে মুখে জল দিয়ে কুলকুচি করিয়ে রক্ত বন্ধ করিয়ে হাত ধরে বাড়ি নিয়ে এসেছিল। রবিবার ছিল সম্ভবতঃ, কারণ মা বাড়ি ছিলেন। বোটনদাদা, খুব শান্ত গলায়, মাকে খবর দিয়েছিল, কাকিমা, সোনার দাঁত পড়ে গেছে।

আমার প্রগতিশীল মা, যিনি মেয়ের চেহারা, রং, দাঁতের পাটির পরিপাটি, চুলের ঘনত্ব ইত্যাদি নিয়ে নিজে কোনওরকম উত্তেজনা পোষণ করতেন না বা করলেও প্রকাশ করতেন না এবং কাউকে করতে অ্যালাউ করতেন না, সেই প্রথম তাঁকে ফোকাসভ্রষ্ট হতে দেখেছিলাম। আমার ওয়েলফেয়ার সম্পূর্ণ বিস্মৃত হয়ে চেঁচিয়ে উঠেছিলেন, সর্বনাশ, ফার্স্ট ব্যাচের গেল নাকি সেকেন্ড ব্যাচের?

ফার্স্ট ব্যাচেরই গেছিল, আপনাদের কারও যদি জানার আগ্রহ থাকে।

এ বার গিয়ে দেখি বুচিদিদিদের তিনতলার ছাদও, যেটাও কি না হয়ে উঠেছিল আমার চোখের সামনেই, হাওয়া। ছাদ তিনতলার না দোতলার? মানুষের প্রথম জন্মদিন শূন্য দিনে নাকি জন্মানোর তিনশো পঁয়ষট্টি দিন পর? দশক সত্তরের না সাতের? এই সব প্রশ্নের সবার মাথায় নিজস্ব উত্তর থাকে। আমি যেমন বুচিদিদিদের ছাদটাকে তিনতলার ছাদই ধরতাম। সম্ভবতঃ সেটা বাড়িটাকে টেনে লম্বা করার ভেস্টেড ইন্টারেস্টে। উঁচু বাড়িতে থাকার তখন আমার দুর্দমনীয় শখ। মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি, সাততলা বাড়িতে থাকলে নির্ঘাত চব্বিশঘণ্টা নাগরদোলার উঁচুতম বিন্দুতে বসে পা দোলানোর আনন্দ পাওয়া যায়। এদিকে আমার বাড়ি একতলা এবং এ জন্মে সাত তো দূর, দোতলা হওয়ার চান্সও ক্ষীণ।

ততদিনে চশমা এঁটে দূরদর্শী হয়েছিলাম, বুঝেছিলাম দোতলার আনন্দ উপভোগ করতে গেলে পরের ওপর ভরসা করা ছাড়া গতি নেই। বুচিদিদিদের বাড়িটা পুরো না হলেও সিকি আমারই, যে পরিমাণ সময় আমি ওখানে কাটাই। তাছাড়া মফঃস্বলের পর আপনের হিসেবটা সামান্য আলাদা। ও সব পাড়ায় বাড়ি, ছাদ, ফুলগাছ, টেলিফোন, অতিথি এলে বাড়িতে রান্নার মেনু ও মিষ্টির পছন্দ আসলে সমষ্টির, ব্যক্তির নয়। তার প্রমাণ এবার বাড়ি গিয়েও পেয়েছি। কিন্তু সে গল্প পরে করব, না হলে এ পোস্ট আজ বের করা যাবে না।

সেই শখ মেটানোর জন্যই আমি মনে মনে নিজেকে বুঝিয়েছিলাম ওটা তিনতলার ছাদ। এখন বোঝা বদলে গেছে। জানি ওটা দোতলার ছাদই। তিনতলা থাকলে ওটা হত তিনতলার মেঝে। আমার চক্ষুরুন্মীলনের কারণ এই সব টেকনিক্যালিটিস পরিষ্কার হয়ে যাওয়া নয়। ইচ্ছেটা ঘুরে যাওয়ার। এখন আমার ইচ্ছে করে একতলা বাড়িতে থাকতে, চারপাশে বেড় দিয়ে থাকবে কাঁচা মাটির বাগান। বৃষ্টি হলে কেন্নোর বাচ্চা উঠে আসবে বারান্দায়, আমি শক্ত কাগজ দুটুকরো করে দুদিক দিয়ে সেটাকে সাবধানে তুলে বাগানে ছেড়ে দেব আবার।

মোদ্দা কথা বুচিদিদিদের তখনকার তিনতলার এবং এখনকার দোতলার ছাদে আমার অনেক সুখের মুহূর্ত কেটেছে। বিকেলবেলা ওই ছাদই হয়েছে ডাকাতকিলবিলে ঘন অরণ্য, আমি আর বুচিদিদি পালকি কাঁধে হুমহাম করতে করতে চলেছি। পালকির ভেতর কে সে জানার কৌতূহল কখনও হয়নি সে একটা আশ্চর্যের ব্যাপার বটে, কিন্তু তার থেকেও বেশি আশ্চর্যের হচ্ছে নিজেরা পালকি চড়ে বনপথ দিয়ে ভ্রমণের আরামের লোভ কখনও করিনি। অ্যাসপিরেশন সর্বদা পালকি কাঁধে ঘামতে ঘামতে চলায় আটকে থেকেছে। কৃচ্ছ্রসাধনের এখানেই শেষ না। একটু পরেই ডাকাত পড়বে, প্রাণপণ সংগ্রাম হবে আর রাত্তিরে খাওয়া জুটবে না।

এই যে অকথ্য যন্ত্রণাময় জীবন, এর আকাঙ্ক্ষা অনেক শিশুরই থাকে। এখন কাপড় কাচা হওয়া আর ভাঁজের মধ্যে তিনদিন আরামসে ঢুকে যায়, ছোটবেলার সাদাকালো চৌকো ছবিতে প্রমাণ আছে, ভালো করে বুলি ফোটেনি এদিকে ছোট একটা বালতিতে ন্যাতা ডুবিয়ে মেঝে মুছছি প্রাণপণ। আবার অনেক শিশুর থাকে না। তারা ব্যতিক্রম বলেই আমার বিশ্বাস। ইউনিভার্সিটিতে এক বন্ধু ছিল, যে এই ব্যতিক্রমীর দলে পড়ত। ছোটবেলায় পিসতুতো বোনের সঙ্গে খেলতে তার ভারি অস্বস্তি হত, কারণ বোনের খেলায় কেবল জঙ্গলের ভেতর পাতায় ছাওয়া কুটির আর দিনের মধ্যে চোদ্দবার নদী থেকে জল তুলতে যাওয়া। বন্ধু বলেছিল, এত হ্যাপায় না গিয়ে কুটিরটাকে পাকাবাড়ি করে দিলেই হয়, যেখানে কলে তিনবেলা জল আসে।

আমি ঝান্ডা তুলে পিসতুতো বোনের পক্ষে, বাই দ্য ওয়ে। শৈশবের খেলাতেও যারা গায়ের আরাম খোঁজে তাদের কাঁথায় আগুন।

ছাদের একটা মজা ছিল ছবি তোলার। হট শট-এর উচ্চমার্গের ক্যামেরা তখন জেঠু ছাড়া সম্ভবতঃ পাড়ায় আর কারও ছিল না। কাজেই মাঝেমাঝেই আমাদের ফোটশ্যুট হত। পুজোর সময় নতুন জামা হলেটলে। একবার আমার আর বুচিদিদি দুজনেরই প্যান্ট আর টি-শার্ট হয়েছিল, সেই প্রাপ্তিযোগের ক্ষণ অমর করে রাখতে জেঠু ক্যামেরা বার করলেন। বললেন আফটারনুনের আলোটা ভালো। কাজেই বেলা চারটের সময় আমি আর বুচিদিদি, গলায় পর্যাপ্ত নাইসিল মেখে দাঁড়ালাম। আরও একটা ব্যাপার কমন পড়েছিল। বুচিদিদির কিছুদিন আগে মাথা মুড়োনো হয়েছে, কচিঘাসের মতো কালো চুলে ঢেকে গেছে ন্যাড়ামাথার সংকোচ, আমার মাথা মুড়িয়েছে অপেক্ষাকৃত সদ্য, হয়তো তার দিন পাঁচেক আগেই বাবা সাইকেলের সামনে বসিয়ে সেলুন থেকে ফিরেছেন। বুচিদিদি অল্প বড়, তাছাড়া চিরকাল ক্যামেরা কনশাস, চোখে এসে পড়া রোদ্দুরের চোখে চোখ রেখে মুচকি হেসে দাঁড়িয়ে আছে। আমি হয়তো চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু সক্ষম হইনি। প্রবল নাকচোখ কুঁচকে তাকিয়ে আছি রোদ্দুরের দিকে। ভাবছি জেঠু আরেকটু তাড়াতাড়ি করলেই তো পারে।

সেই ছাদ, এবার গিয়ে দেখলাম, হাওয়া। মানে ভেঙে দিয়ে যায়নি কেউ, ছাদ যেমন থাকার তেমন আছে, কিন্তু আমার মতে ছাদের থাকা না থাকার বিচার হবে সে ছাদে উঠে কী কী দেখা যায়, যা মাটিতে দাঁড়িয়ে দেখা যায় না, তাই দিয়ে। আমার বাড়ির ছাদে উঠলে আমি আশেপাশে একটা দৃশ্য দেখি জ্ঞান হওয়া ইস্তক, সেই দৃশ্যটা না থাকলে আমাদের বাড়ির ছাদটা থাকবে না। আজকাল মাকেও দেখি, রেলিঙে বসে চুল আঁচড়াচ্ছেন, কিংবা লোডশেডিং-এর বাজারে শুয়ে আছেন মাদুর পেতে হাতপাখা নাড়তে নাড়তে। এইগুলো দেখা যেদিন বন্ধ হয়ে যাবে সেদিনও ছাদটা আর থাকবে না। কুমারঢুবির মুখার্জিজেঠুদের পুরোনো জমিদারবাড়ির ছাদের পূর্বদিকের পাঁচিল ধরে দাঁড়ালে বয়ে যেত বরাকর, পশ্চিমের পাঁচিলে রোজ সন্ধেবেলা সূর্য ডুবত, যে সূর্যাস্তের তুলনা এই পৃথিবীর কোনও সূর্যাস্তের সঙ্গে চলে না, আমি মুখার্জিকাকুর সঙ্গে একমত।

আসলে এইসব ছাদটাদগুলোর নিজস্ব জীবন তো থাকে না, বা থাকলেও তার অস্তিত্ব উপলব্ধি করার মতো সূক্ষ্ম চেতনার অধিকারী কম থাকে। আমি পড়ি না তাদের মধ্যে। আমার গোদা চেতনার রংই আমার কাছে শেষ কথা। খেলা শেষে সিঁড়িঘরে হাওয়াইচটির ফটাফট ইকো তুলে নেমে আসার পর সে ছাদ কী করে, বাঁচা গেল বলে হাঁফ ছাড়ে নাকি পরের দিন কবে সোনা আবার খেলতে আসার অপেক্ষা করে, নাকি আমার কথা ভাবেই না, নিজেই নিজের ওপর হাত পা মেলে শবাসনে শুয়ে তারা গোনে, আমি জানি না। জানতে চাইনি কখনও। আমি খালি পালকি-পালকি ডাকাত-ডাকাত খেলেছি, নারকেল গাছের মাথার ভিড় পেরিয়ে তিন নম্বর জলের ট্যাংকের দিকে তাকিয়ে থেকেছি। তারও ক’বছর পর একটা নির্দিষ্ট সময়ে, খেলা যতদিনে পায়চারিতে পর্যবসিত হয়েছে, বিকেলের একটি বিশেষ সময়ে পুবদিকের পাঁচিলের কাছে এসে দাঁড়িয়েছি। কোনওদিন দশমিনিট কোনওদিন সাত মিনিট, কোনওদিন সাতাশ মিনিট বাদে নিচের রাস্তা দিয় একটা টিংটিঙে ছেলেকে নিয়ে প্রবল বেগে একটা সাইকেল উড়ে গেছে। গোটা ব্যাপারটা ঘটতে লেগেছে প’নে তিন সেকেন্ড, তার জন্য কোনওদিন দশ, কোনওদিন সাত, কোনওদিন সাতাশ মিনিটের (অ্যাকচুয়ালি অহোরাত্রির) অপেক্ বাড়াবাড়ি ঠেকেনি কখনও।

সব অপেক্ষার নটে গাছ মুড়িয়েছে। বাড়ির পেছনের ফাঁকা জমি নিয়ে শরিকি বিবাদ অবশেষে মিটেছে। বিবিধ ইস্যুতে লড়ে যাওয়া শরিকের দল মাঠ বদলে মানি হাতানোর ঐকমত্যে পৌঁছেছেন একনিমেষে। সে মাঠে জি + ফোর ফ্ল্যাট উঠেছে। আর কিছুই দেখা যাবে না ওই ছাদ থেকে আর কোনওদিন, দেখতে হলে দেখতে হবে কার বড়ির রান্নাঘরের একজস্ট ফ্যান। এতদিন স্টেশনের আশেপাশে গজাচ্ছিল, এবার সোজা পাড়ায় ঢুকে পড়েছে ফ্ল্যাটবাড়ি। রিষড়া ইজ ফ্লারিশিং।

আমার কাছে ছাদটার আর কোনও মানে নেই। ছাদটাও মরে গেছে। যাদের কাছে এনার্জি অবিনশ্বর, তারা বলবে, কই, ওই জি + ফোর-এর ছাদটা হল যে। সে ছাদে উঠে কেউ গালে হাত দিয়ে ট্যাংকের দিকে তাকিয়ে থাকবে না, ধরে নিচ্ছ কেন?

একদমই ধরে নিচ্ছি না। কারণ কেউ না কেউ থাকবে। জি + ফোরের ওপরের তলার ছাদটা পাঁচতলার ছাদ না ছ’তলার মেঝে এই নিয়ে মাথা চুলকোবে, এক পাঞ্জায় গুনে ফেলবে দ্রুত লুপ্ত হওয়া নারকেলগাছের বংশ, তাকিয়ে থাকবে তিন নম্বর ট্যাংকের অভ্রংলিহ উদাসীনতার দিকে, ঝুঁকে দেখবে অনেক নিচ দিয়ে হেঁটে চলেছে গোটা পৃথিবী, কিন্তু সবাইকে বাদ দিয়ে অপরাহ্ণের যাবতীয় রোদ্দুর পড়েছে কেবল একটি মুখেই।

সে রোদ্দুরের স্মরণসভা আমিও লিখেছি, তাকেও লিখতে হবে।

তবু সে আমি নয়। তার ছাদ আমার ছাদ না। তার অপেক্ষা নয় আমার প্রতীক্ষা।

(বাই দ্য ওয়ে, সেই টিংটিঙে ছেলেটির সঙ্গে দেখা হয়েছিল, বছর কয়েক আগেই। দেখা হয়েছিল মানে লেভেলক্রসিং পেরোতে গিয়ে আমি দেখে ফেলেছিলাম, সে আমাকে দেখেনি। ভাগ্যিস। হাতে ছাতা ছিল, অ্যাংগলটা সামান্য বদলেদ স্যাট করে সরে গেছি। ভারভার্তিক হয়েছে, সর্বার্থে। সম্ভবতঃ রিষড়ায় থাকে না আর। ক্কচিৎ কদাচিৎ পৈত্রিক বাড়িতে ভিজিট দেয়। লেভেল ক্রসিংএ গাড়ির ভেতর বসে ছিল গম্ভীর মুখে। সময় নষ্ট করছিল না তাই বলে, টাইম ইজ মানি, কানে গোঁজা কায়দার হেডফোনে কথা বলে চলেছিল। সেই থেকে ভয়ে ভয়ে থাকি পাছে আবার চোখ পড়ে যায়।)

কথা হচ্ছে এ সব ঘটছে কেন। এত দ্রুততায়? আমি পরিবর্তনের পক্ষে কিন্তু এই রেটে সব বদলাতে শুরু করলে তো তাল রাখা মুশকিল।

সবাই বলবে, কই রেট তো বাড়েনি কিছুই। পরিবর্তন একটা চলমান প্রসেস, সে চলছে নিজের রেটে নিজের মনে। তুমি যখন দেখছ না সে তখনও থামছে না, চলছে অবিরাম।

কিন্তু আমার মন মানছে না। আমার একটা বিশ্রী সন্দেহ হচ্ছে। সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়ের একটা লেখায় পড়েছিলাম, ছোটবেলায় কেউ তাঁকে, তোর বাড়িশুদ্ধু সবাই এত সুন্দর অথচ তোকে এত বিটকেল দেখতে কেন রে, বললে তিনি নাকি তাঁর নিজস্ব চিরায়ত কুমিরছানাটির ঘাড়েই বন্দুক রাখতেন। মুখ করুণ করে বলতেন, আসলে আমার মা ছোটবেলায় মরে গেছে তো তাই। আমারও মনে হচ্ছে এই যে লেফট অ্যান্ড রাইট আমার ছাদ মরে যাচ্ছে, পাড়ায় ফ্ল্যাট ঢুকে যাচ্ছে, প্রেমিকদের ভুঁড়ি হয়ে যাচ্ছে, এ সবের পেছনে একটাই কালপ্রিট। আমার চল্লিশ বছর বয়স হয়ে গেছে।/div>

ডিপ্রেসিং-এর চূড়ান্ত।

মরে যাওয়া পার্কটার দিকে তাকিয়ে এইসবই ভাবছিলাম। সত্যি বলতে কি ও পার্ক মরে গেলে আমার কিছু যাওয়াআসার কথা নয়। ও পার্ক আমার কাজে লাগা বন্ধ হয়ে গেছিল বহুদিন। তবু চোখের সামনে একটা জিনিসের নেই হয়ে যাওয়া দেখতে ভালো লাগে না। বিশেষ করে যেটা আমার চোখের সামনে জন্মেছিল। তাই বোধহয় একমুহূর্তের জন্য অন্যমনস্ক হয়ে গেছিলাম, যখন বাবা জলের ট্যাংকের হাইট বলছিলেন।

Comments

  1. তবু চোখের সামনে একটা জিনিসের নেই হয়ে জাওা দেখতে ভালো লাগে না..

    Tao nei hoye jaye...jinish...shomoy..manush...

    ReplyDelete
    Replies
    1. সেই। কত কিছু যে ছিল, আর নেই। এত, এত অনিত্য সব? তখন ওই লাইনটা পুনঃপুনঃ আবৃত্তি ছাড়া গতি নেই।

      "ছিল, নেই, মাত্র এই।"

      যতিচিহ্ন ভুলভাল দিলাম নির্ঘাত।

      বাই দ্য ওয়ে, আমি জাওা বানানটা ওইটাই ছেপেছিলাম বটে শুরুতে, তোমার লাইনটা দেখে জিভ কেটে ঠিক করে দিয়ে এলাম। থ্যাংক ইউ।

      Delete

Post a Comment