একটা গোয়েন্দা, একটা প্রেম



Troubled Blood
Robert Galbraith


রবার্ট গ্যালব্রেথ ছদ্মনামে লেখা জে কে রোলিং-এর করমোরান স্ট্রাইক সিরিজের চতুর্থ উপন্যাস 'লিথ্যাল হোয়াইট' পড়ার পর নাককান মুলেছিলাম, ওই রাস্তায় আর যাচ্ছি না বলে। কিন্তু কুড়ি বছরের ওপরের সম্পর্ক, রাতে ঘুমোনোর আগে পড়ার অভ্যেসটা যখন ফিরিয়ে আনা স্থির করলাম, 'ট্রাবলড ব্লাড'-এর কথা মনে পড়ল। রবার্ট গ্যালব্রেথ ছদ্মনামে লেখা জে কে রোলিং-এর করমোরান স্ট্রাইক সিরিজের পঞ্চম এবং নবীনতম উপন্যাস।

ধরতাই হিসেবে বলি, স্ট্রাইক সিরিজের হিরো হচ্ছেন করমোরান স্ট্রাইক, যুদ্ধ ফেরত সৈনিক, একটি পা হাঁটুর নিচ থেকে উড়ে গেছে, আপাতত প্রসথেটিক পা নিয়ে হাঁটেন চলেন। বিখ্যাত রকস্টারের অবিবাহিত গ্রুপির সন্তান। বাবা ছিলেন না কোথাও বেড়ে ওঠার সময়, মা ছিলেন তাঁর সমস্ত নেশাভাং ও বিশৃঙ্খল জীবনযাপন নিয়ে। একপিস প্রাক্তন প্রেমিকা আছেন শার্লট, যথার্থেই একপিস।

করমোরানের সহকারী রবিন এলাকট। ছোটবেলা থেকে গোয়েন্দা হতে চেয়েছিল, মারাত্মক ভালো গাড়ি চালায়, স্ট্রাইকের এজেন্সিতে ব্যক্তিগত সহকারীর পদে যোগ দিয়ে দক্ষতা প্রমাণ করে আপাতত পার্টনার। শৈশব আনন্দময়, কিন্তু কৈশোরে ভুল লোকের সঙ্গে প্রেম, বিয়ে এবং গত চার বই ধরে অকথ্য খারাপ সম্পর্কের মধ্য দিয়ে চলছে। প্রেম উবে গিয়ে আপাতত অধিকারবোধ, প্রতিহিংসা, ঈর্ষা ইত্যাদি ভালো ভালো অনুভূতি রয়ে গেছে।

স্ট্রাইক আর রবিনের মধ্যে কেমন কেমন ভাব গত চারটে বই ধরে চলছে, কেউই কাউকে বলে উঠতে পারছে না। এই বইয়ে পেরেছে কি না সে আমি বলব না, বললে স্পয়লারওয়ালারা খাঁড়া হাতে তেড়ে আসবেন।

'ট্রাবলড ব্লাড' রবিন ও করমোরান গোয়েন্দাদ্বয়ের প্রথম কোল্ড কেস। পাবে বসে স্ট্রাইক ছোটবেলার রেসিস্ট বন্ধুর সঙ্গে অল্প অল্প তর্ক আর বেশি বেশি গল্প করছে আর টের পাচ্ছে তার দিকে আড়ে আড়ে তাকাচ্ছেন দুই মহিলা। স্ট্রাইক বেশ নামকরা গোয়েন্দা হয়ে উঠেছে গত চার বইয়ে, কাজেই তার দিকে লোকজনের দৃষ্টিপাত এমন কিছু অদ্ভুত নয়। পাব থেকে বেরোনোর পর মহিলাদ্বয় স্ট্রাইককে পাকড়াও করেন এবং জানান যে একজনের মা, পেশায় ডাক্তার ছিলেন, সাতের দশক (এক্স্যাক্ট বছরটা ভুলে গেছি) থেকে নিখোঁজ। এখনও তাঁর জীবিত বা মৃত অবস্থায় হদিশ পাওয়া যায়নি। মাকে যদি স্ট্রাইক খুঁজে দেন।

সমস্ত রকম অসাফল্যের সম্ভাবনা মাথায় রেখে স্ট্রাইক কেস নিতে রাজি হয়।

অসাফল্যের কারণ প্রভূত। অর্ধেক বা তারও বেশি কুশীলব মরেঝরে ভূত। যারা আছে তাদের স্মৃতির ওপর ভরসা করা যায় কি না কে জানে। রাস্তাঘাট বদলে গেছে। তদন্তকারী পুলিস অফিসাররা হাওয়া। এক সিরিয়াল কিলার, মহিলা নিখোঁজ হওয়ার আশপাশের সময়ে একাধিক মহিলা যৌনকর্মীকে অত্যাচার ও খুন করে আপাতত যাবজ্জীবনের জন্য জেলে পচছে। নিখোঁজ ডাক্তারও এরই শিকার হয়েছিলেন এমন একটা জোর হাওয়া ঘটনা ঘটার পর বাতাসে বইছিল, কিন্তু কিছু প্রমাণ করা যায়নি।

প্রথমে অসুবিধের কথা বলি। ট্রাবলড ব্লাড প্রচণ্ড বড়। অপ্রয়োজনীয় বড়। কে কী বলবে আমার জানার দরকার নেই, গোয়েন্দা উপন্যাসের পক্ষে ন’শো চুয়াল্লিশ পাতা টু মেনি। এটা রোলিং-এর প্যাটার্ন যে উনি একবার গল্প প্যাঁচাতে শুরু করলে আর থামতে পারেন না। সিরিজের প্রথম দিকের বইগুলোতে তবু সামান্য সাবধানতা থাকে, কনফিডেন্স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সে সাবধানতা চুলোয় যায়। হ্যারি পটারেও তাই হয়েছিল, করমোরান স্ট্রাইকেও তাই হচ্ছে। এবং পাতা বাড়ে রহস্যের খাতিরে নয়। রহস্য তো হল। সঙ্গে স্ট্রাইকের মাসি ক্যান্সারে মারা যাচ্ছেন, হল। বদ বাবা যোগাযোগ করতে চাইছেন, হল। রবিনের বৈবাহিক সমস্যা হল। শার্লট এস এম এস করল। রবিনের ভাইয়ের বাচ্চা হল। এজেন্সিতে নতুন রিক্রুটের রবিনের প্রতি আপত্তিজনক অ্যাডভান্স, সেও হল। এজেন্সির চারটে আরও চলতে থাকা তদন্ত নিয়ে চারটে মিনি উপন্যাস হল।

মুখ্য চরিত্রদুজনকে রক্তমাংসের করে তোলার জন্য একটু আধটু ব্যাকস্টোরি প্রয়োজন হয় মানছি। তা বলে এত? স্ট্রাইকের টিনএজার বোনপো চরিত্রের যতখানি রূপায়ণ করেন রোলিং, শারদীয়া উপন্যাসে প্রোটাগনিস্টও অত ফুটেজ পায় না। আমি কিছু কিছু প্যারা প্রায় বিবেকানন্দের স্পিডে পড়েছি, কারণ না পড়ে উপায় ছিল না।

এলমোর লেনার্ড বলে একজন খিটমিটে লেখক ছিলেন; সাফল্যের সিক্রেট জানতে চাওয়ায় চাঁচাছোলা বলেছিলেন, "I try to leave out the parts that people skip." এই সাজেশন মনে রাখলে আমার মতে রোলিং-এর ষষ্ঠ উপন্যাস আরও বেটার হবে।

পাঁচ নম্বর উপন্যাসের যে ব্যাপারটা আমার ভালো লেগেছে সেটা হচ্ছে যে পার্সোন্যাল প্যাঁচাল যেমন আছে, রহস্যের জালও বহুদূর বিস্তৃত হয়েছে। লিথ্যাল হোইয়াইট-এর তুলনায় এই রহস্যটা উচ্চমানের, রোলিং বুনেছেনও বেটার। প্রচুর সন্দেহভাজন। বৈচিত্র্যমণ্ডিত ঘটনাপরম্পরা। কেবলই ইংরেজ সাহেব নয়, ভারতীয় ডাক্তার থেকে শুরু করে অভিবাসী ক্লিনিং লেডি থেকে নিউরোডাইভার্সিটি - সবই রেখেছেন রোলিং। তদন্ত করতে নেমে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলা পুলিস অফিসারের প্রলাপমণ্ডিত নোটবুক। ইন্টারেস্টিং কথোপকথন। দীর্ঘ, কিন্তু একঘেয়ে নয়। জ্যোতিষচর্চার একটা বড় ভূমিকা আছে, তবে ও বিষয়ে আলোচনা আরেকটু কম থাকলে ভালো হত। মোদ্দা কথা, প্রভূত ঘোরপ্যাঁচ।

ভালো আর খারাপ গোয়েন্দাগল্পের মধ্যে একটা প্রধান তফাৎ আমার মতে, খারাপ গোয়েন্দাগল্পের শেষে পাঠকের মনে হয় যে মাঝখানের গোলমালগুলো অরগ্যানিক্যালি জন্মায়নি, শুধু ঘুলিয়ে দেওয়ার জন্য রাখা হয়েছে। এটা এর থেকে ভালো করে ব্যাখ্যা করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়, কী বললাম আশা করি বুঝতে পেরেছেন। যে ফিলিংটা ক্রিস্টির গল্প পড়ে কক্ষনও হয় না, কিন্তু ট্রাবলড ব্লাড পড়ে অল্প অল্প হয়েছে। লোকে আমাকে মারতে আসতে পারে, কোথায় ক্রিস্টির এরোপ্লেন-রিডিং মিস্ট্রি আর কোথায় এই মাপের লিটারেরি উদ্যোগ, কিন্তু আমি পিছু হটছি না। ভালো গোয়েন্দা গল্প হচ্ছে ভালো গোয়েন্দা গল্প। লিটারেরি, নন লিটারেরি।

নিন্দেমন্দই বেশি করলাম মনে হল বটে, কিন্তু ট্রাবলড ব্লাড আমার খারাপ লাগেনি। ভালোই লেগেছে। পাঁচে সাড়ে তিন। হাতে যদি অঢেল সময় থাকে, পড়ে দেখতে পারেন।




Simple Passion

Annie Ernaux, translated by Tanya Leslie



নোবেলটোবেল, বুকারটূকার ঘোষণা হওয়ার আগে একটা ঘুসঘুস ফুসফুস চলতে থাকে যে এবার কার কার জেতার চান্স হাই। বুকারটুকারে তো লং লিস্ট, শর্ট লিস্ট ইত্যাদি বেরোয় কাজেই বাজি ধরাটা পূর্বনির্ধারিত লেখকদলের মধ্যে সীমিত থাকে, নোবেলে সম্ভাব বিজয়ীর পুলটা আরেকটু বিস্তৃত।

আবার বিস্তৃত নয়ও। যারা এসব খবর রাখেন, চর্চা করেন তাঁদের একটা আন্দাজ থাকেই যে কার ভাগ্যে শিকে ছিঁড়তে চলেছে। আমি খবরও রাখি না, চর্চাও করি না, কিন্তু যারা রাখেন তাদের ঘাপটি মেরে নজর রাখি।

এ বছর নোবেল পাওয়ার লিস্টে একজন লেখকের পালে হাওয়া জোর ছিল। ফরাসি লেখক অ্যানি আরনো। দুয়েকজন ওঁর লেখা 'সিম্পল প্যাশন' বইটির আলোচনা করছিলেন শুনে গেলাম বইয়ের খোঁজ নিতে। উনিশশো একানব্বই সালে ফরাসি ভাষায় প্রথম প্রকাশ। সম্ভবত তিরানব্বইতে টানিয়া লেসলির ইংরিজি অনুবাদ প্রকাশিত হয়।

গল্পের বিষয় প্যাশন এবং গল্পটি সিম্পল। অনাদি অনন্ত অবৈধ প্রেম। সিমপ্লিসিটির জায়গাটা যতখানি বিষয় থেকে আসে ততখানিই আসে ভাষা থেকে। গল্প বলার ধরণ থেকে। অ্যানি আরনো পাঠককে শুরুতে সোজাসুজি জানান, "From September last year, I did nothing else but wait for a man."

উচ্চারণের উদাসীনতাটা খেয়াল করুন। স্বীকারোক্তিটিকেও হেলাছেদ্দা করবেন না। করলেও অসুবিধে হবে না কারণ এর পরের আশি পাতার ফিনফিনে নভেলে লেখক শুধু এই অপেক্ষার বর্ণনাই দেবেন। সে বর্ণনায় বাগড়া দেওয়ার জন্য মহিলার বন্ধু থাকবে না, বান্ধবী থাকবে না, পুরুষটির সাংসারিক জীবন ও সে জীবনজনিত জটিলতা থাকবে না। মহিলার দুই সন্তানের কথা আলগোছে আসবে, কিন্তু আলগোছেই। এমনকী মহিলা যে কেন পুরুষটির প্রেমে পড়েছেন তার আধলাইন ব্যাখাও থাকবে না। খালি এই উচ্চারণ থাকবে, "Everything about him is precious to me - his eyes, his mouth, his penis, his childhood memories, his voice and the decisive way he took hold of things."

আর এইখানেই, মানবসভ্যতার সমান জীর্ণ বিষয় নিয়ে লেখা হলেও সিম্পল প্যাশন-এর দৃষ্টি এতখানি আনকোরা। সত্যিই কি একটা লোকের কোনও বিশেষ কিছু দেখে আমরা প্রেমে পড়ি? প্রেমে পড়ার জন্য আমাদের মন মগজ শরীর রেডি হয় এবং আমরা হাতের কাছের কারও একটা প্রেমে পড়ে যাই। আপনি বলবেন অত আলটপকাও নয়, একটা প্যাটার্ন থাকেই। আমি বলব নাও থাকতে পারে। আমি যদি প্রেমে পড়ার উপযুক্ত অবস্থায় থাকি এবং আমার সামনে একজন ঝকমকে এম বি এ ও আরেকজন ন্যাতপেতে কবি বসে থাকে, আপনি হয়তো ঝড়াকসে দুজনের মধ্যে কার প্রেমে পড়ার আমার চান্স বেশি গেস করে বসবেন, হয়তো সে গেস ঠিক প্রমাণও হবে, কিন্তু তাতে আপনার অন্তর্দৃষ্টি কিছু প্রমাণিত হবে না। উল্টোটাও হতেই পারত। কিছুই বলা যেত না। প্রেমিকের প্রিয় বই কী, সে কী খেতে ভালোবাসে,  থার্টি সিক্স কোয়েশ্চেনস টু নো ইয়োর সোলমেট ইত্যাদি হাবিজাবি, হাবিজাবিই। প্রেমে পড়ার জন্য প্রেমিকের গুণপনা অবান্তর; আমার প্রস্তুতিই শেষ কথা।

A (প্রেমিকের নামটাও পাঠককে জানানোর প্রয়োজন মনে করেন না লেখক। কেউ বলতে পারে আত্মজৈবনিক লেখা কাজেই গোপনীয়তার খাতিরে হ্যানাত্যানা, কিন্তু সে সব কিছু নয়। প্রয়োজন মনে করেন না কারণ প্রয়োজন নেই) সম্পর্কে যে কয়েকটা বিষয় আমরা জানতে পারি সেটা হচ্ছে লোকটি পূর্ব ইউরোপিয়ান, বিবাহিত, কাজের সূত্রে প্যারিসে আসে মাঝে মাঝে। সেই সব অবসরে লেখকের সঙ্গে সাক্ষাৎ এবং শারীরিক সংসর্গ হয়। লোকটির সঙ্গে লেখকের কথোপকথনও নেই বললেই চলে, যেটুকু আছে অর্ধেকের বেশি ফোনে। 'হ্যালো', 'অমুক দিনে দেখা করা যাবে নাকি' গোছের। 

এই সবে সময় নষ্ট না করে লেখক নিজের প্রেমের অনুভূতিকে জায়গা ছেড়ে দিয়েছেন। রুদ্ধশ্বাস প্রেম। সর্বগ্রাসী প্রেম। জীবনের দুটো বছরের প্রতিটি দিন, ঘণ্টা, মিনিট, সেকেন্ড তিনি লোকটির কথা ভেবেছেন, লোকটির প্রতীক্ষায় ভাজাভাজা হয়েছেন। ভিক্ষা দিয়েছেন প্রেমিক ফোন করুক এই মানত করে। লোকটির ভাষা শিখবেন স্থির করেছেন, লোকটির জলখাওয়া গ্লাস আধোয়া রেখে দিয়েছেন, সঙ্গমের চিহ্ন শরীরে যতক্ষণ পেরেছেন ধারণ করেছেন, প্রার্থনা করেছেন আর যদি কোনওদিন দেখা না হয়, দুর্ঘটনায় যেন মরে যান তিনি।

ট্র্যাজেডি লেখা কঠিন, কমেডি লেখা আরও কঠিন, অনেকে অনেক রকম বলে; আমার নিজের মত হচ্ছে কঠিনের কমপিটিশনে এদের কারও থেকে কম যাবে না শারীরিক সংসর্গের বর্ণনা লেখা। লেখার দোষে ব্যাপারটা হাস্যকর, অশ্লীল, ছেঁদো যে কোনও দিকে অতি সহজে ধাবিত হতে পারে এবং রেগুলারলি হয়। এ গল্প সেখানেও উজ্জ্বল উদ্ধার। অকপট, ভড়ংহীন। শরীরের বর্ণনায় যে এতখানি মন ঢেলে দেওয়া যায়, এ আমি বেশি দেখিনি। আমার দ্বারা হবে না বলেই আমার বিশ্বাস, তবু যদি কোনওদিন শরীর লেখার সাহস করি, অ্যানি আরনো নিঃসন্দেহে আমার আলোকবর্তিকা হবেন।

বইখানা যে ভালো এটা বুঝতে বেশিক্ষণ লাগার কথা নয়, লাগেওনি, কিন্তু সিম্পল প্যাশন আমাকে মাত করেছে লাস্ট পাতায় (বা লাস্টের আগেরও হতে পারে) এসে। যখন উন্মোচন হয়েছে যে এমন প্রেমও ফুরিয়েছে। ফ্ল্যাশব্যাকে গিয়ে শেষ সাক্ষাতের বর্ণনা দিচ্ছেন লেখক। দীর্ঘ বিরহের পর একদিন ফোন আসে। উল্টোদিকের গলা শুনে লেখক কাঁপতে শুরু করেন। বার বার নাম ধরে ডাকেন। সাক্ষাৎ হয়। তিনদিন বাদে লোকটি চলে যায়। “ফোন করব” বলে। 

“I have the impression that this last visit never took place … Yet it is that surreal, almost non-existent last visit that gives my passion its true meaning, which is precisely to be meaningless, and to have been for two years the most violent and unaccountable reality ever.”


প্রেমের প্রতি কতশত বিশেষণ খরচ করেছে কত লোকে। একটা অত্যন্ত জরুরি এবং লাগসই বিশেষণ অধিকাংশই মিস করে গেছে।


সব প্রেমের গল্পই আসলে হিংস্রতার গল্প। ধুমজ্বরের তীব্রতায় সে আসে, বুকের ভেতর যুদ্ধক্ষেত্র ফেলে রেখে নেমে যায়।

হিংস্রতার জায়গাটা এই যুদ্ধক্ষেত্রে নেই। আছে সেখানে, যেখানে সে যুদ্ধক্ষেত্রের দিকে তাকিয়ে আপনি টের পান, এ ধ্বংসলীলার কোনও তাৎপর্য নেই, গুরুত্ব নেই। "And the fact that all this is gradually slipping away from me, as if it concerned another woman..."

আপনার বেঁচে থাকার মতোই এই মর্মান্তিক অভিজ্ঞতাও আসলে মিনিংলেস। অর্থহীন।

এ উপলব্ধির থেকে নির্মম, হিংস্র কিছু হতে পারে কি না আমার জানা নেই। এই সত্যি কথাটা আন্ডারলাইন করে দেখানোর জন্য সিম্পল প্যাশন আমার কাছে পাঁচে একশো। 

 

Comments


  1. আপনার বেঁচে থাকার মতোই এই মর্মান্তিক অভিজ্ঞতাও আসলে মিনিংলেস। অর্থহীন।

    Shudhu ei upolobdhi tar jonnoi hoyto ei boita pore dekhbo....

    JKR-er byapaar e ekmot . ( Hobaari kotha). Detective novel 800 900 pata hotey pare na...ek nishwash e porte na paarle aar ki holo?

    10-15 din ontor holeo ke abantor e notun kichhu portr parchhi ei byapar ta ei muhurte amaar kachhe khub bhaalo byapar. Shetar jonno thanks dichhi na jodio

    ReplyDelete
    Replies
    1. একদম দেবে না, অর্পণ। কারণ আমিও সরি বলছি না। অবান্তরের বন্ধুরা যদি না বোঝে তাহলে পৃথিবীর কেউ বুঝবে না যে আমি শখে অবান্তরকে অবহেলা করছি না, আমি সত্যিই নিরুপায়। কিন্তু দিস টু শ্যাল পাস। গুজর যায়েগা, গুজর যায়েগা, ওয়ক্ত্‌ হি তো হ্যায়, গুজর যায়েগা। আর যাবে যখন, আবার আমরা হইহই করে অবান্তরে আড্ডা মারব।

      সিম্পল প্যাশন পোড়ো।

      Delete
  2. মূল ব‌ই একটাও পড়িনি, কিন্তু আপনার রিভিউ ভালো লেগেছে। Trouble blood এ মনে পড়ল The girl with the dragon tattoo এরকমই অনেক আগে ঘটা রহস্যের সমাধান নিয়ে লেখা কিন্তু যাকে বলে মারকাটারি।

    ReplyDelete
    Replies
    1. হ্যাঁ ওটাও কোল্ড কেস, ঠিকই বলেছেন, নালক। আমার খুব প্ৰিয় নয় বইটা, কারণ লেখার স্টাইলটা আমার প্ৰিয় নয়, তবু ভালো বই নিঃসন্দেহে।

      Delete
    2. এত্ত ভালো করে রিভিউ লেখার জন্য তোকে অনেক অনেক ভালোবাসা।
      অনেক গুলো লাইন অনেক ভাবনার সঞ্চার করলো। তোর লেখায় সহজ গতি টানে। শুরু থেকে শেষ অব্দি । বইটা পড়ার ইচ্ছে জমে রইলো।

      Delete
    3. পড়িস। ভালো বই। আর এত প্রশংসা করলি বলে থ্যাংক ইউ। 😁

      Delete
  3. আপনার রিভিউটার অপেক্ষায় ছিলাম। ট্রাবলড ব্লাড বইটা বড্ড বড়, তাই ধরতে সাহস হচ্ছিলনা। কোল্ড কেস বললেই ফাইভ লিট্ল পিগস মনে পড়ে। এমনিতে আমার ভাল লাগে, কিন্তু ৯০০ পাতা টানাটা মুশকিল। দেখা যাক শীতের ছুটিতে পারি কিনা। আপাতত আপনার রেকোমেন্ডেশনের আরেকটা বই জোগাড় করেছি, এখনও শুরু করে উঠতে পারিনি। ম্যাগপাই মার্ডার্স।

    ReplyDelete
    Replies
    1. আরে ম্যাগপাই মার্ডার্স পড়ে ফেলুন, তারপর দেখা যাক মত মিলল কি না। ফাইভ লিটল পিগস আমারও প্রিয়। হাই ফাইভ।

      Delete
    2. শেষ পর্যন্ত পড়া হল, শীতের ছুটিতে নয়, গরমের ছুটিতে। ভাল লাগল খুবই, কিন্তু এটা অনায়াসে ৫০০ পাতায় নামতে পারত। আপনি C B Strike টিভি সিরিজটা দেখেছেন কি?

      Delete
    3. দেখেছি, কিন্তু এত বিস্মরণীয় যে দেখেছি ভুলে গেছিলাম। আপনার কমেন্ট পড়ে আবার দেখতে বসে মনে পড়ল। আবার দেখব যদিও। টাইমপাস। মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য থ্যাংক ইউ।

      Delete
  4. Darun laglo review poRe.. duto boi e poRar icche thaklo.. dwitiyota beshi..

    Corman bodh hoy prothom 2to e poRechi.. naki 3 te.. khnuje pete dekhi

    bhalo thakben khub

    Indrani

    ReplyDelete
    Replies
    1. আপনিও, ইন্দ্রাণী। সেকেন্ড বইটার আরেকটা সুবিধে হচ্ছে আয়তনে ছোট। অভ্যস্ত পাঠকের মেরেকেটে দেড় দু ঘণ্টা লাগবে।

      Delete
  5. যাক, অনেকদিন পর বইয়ের আলোচনা আসছে একে একে। অত সময় নেই, তাই রোলিংয়ের গোয়েন্দা গল্প পড়া চাপ। দ্বিতীয়টা লিস্টে ঢোকালাম। সম্প্রতি আ প্যাসেজ নর্থ পড়েছি, পড়তে পারেন। বইয়ে একটাও সংলাপ নেই, ইন্ট্রোশপেক্টিভ লেখা। বুকারে নমিনেশন পেয়েছে, ভাষার ব্যবহার অনন্য হবেই। কিন্তু গল্প না থাকলেও বেশ গতিশীল। সাবলীল ফ্লো।

    ReplyDelete
    Replies
    1. এই বইটার নাম শুনেছি, সুদীপ। নিশ্চয় পড়ব। সাজেশনের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।

      Delete
  6. সিম্পল প্যাশন পড়তেই হবে!! আপনার বই নিয়ে লেখাগুলোর অপেক্ষায় থাকি.. তা এই জন্যই :) নতুন ঘরানার বইয়ের খোঁজ পাবো বলে শুধু নয়, আপনার পড়ার বিস্তৃতি আমাকে নতুন পাঠে উৎসাহিত করে!!

    ReplyDelete
    Replies
    1. এটা উল্টো ভদ্রতা করে বলছি না সায়ন, আপনি আমার অন্তত দেড় কোটিগুণ পড়েন এবং পাঠের বিস্তৃতিও দেড়লাখ গুণ বেশি। সে যাক, সিম্পল প্যাশনের খোঁজে থাকবেন (আক্ষরিক অর্থেও। না হলে বেঁচে লাভ কি বলুন?) পেলেই পড়ে ফেলবেন। ঠকবেন না।

      Delete
  7. Cormoran Strike series e 'The Cuckoo's Calling' tai amar shobcheye bhalo legechhilo.
    Tarpor theke protyek boi er sathe akorshon ta komechhe. Shobotai porechhi jodiyo.
    Aar amaar o etai mone hochhilo je sudhu boi er pristha barate anek kichu bola hochhe.

    Tobe Stieg Larsson er Millennium trilogy ta amar ashadharon legechhe. Amar list er sera mystery boi/series er modhhe ota.

    'Simple Passion' er kotha shune besh koutohol hochhe, porbo hoyto.

    (banan bhul thik korar jonne delete kore abar post korlaam.)

    ReplyDelete
    Replies
    1. আমার এখন স্পষ্ট মনে নেই, রাজর্ষি, হয় কুকু'স কলিং নয় সেকেন্ড সিল্ক ওয়ার্ম টা আমার বেস্ট লেগেছিল। কিন্তু তার পর ক্রমাবনতির বিবরণী। তবে লিথ্যাল হোয়াইট ওয়ার্স্ট, ট্রাবলড ব্লাড তবু খানিকটা সামলে নিয়েছে, আমার মতে।

      আমার খুব আফসোস জানেন, মিলেনিয়াম ট্রিলজি আমার কেন অত ভালো লাগল না সে বাবদে। আমার পছন্দের গোয়েন্দাগল্প পাঠকদের সবারই ওটা প্রিয়। আমি সত্যি সত্যি তাঁদের সঙ্গে একমত হতে চেয়েছিলাম এই জায়গাটায়।

      সিম্পল প্যাশন ভালো। যদি ইচ্ছে হয় পড়ে দেখতে পারেন। মন্তব্য এবং আবার সংশোধিত মন্তব্য করার ঝামেলা নিলেন যে, ভালো লাগল। থ্যাংক ইউ।

      Delete

Post a Comment