অখাদ্যকুখাদ্য



নাও, কী খাবে বল, অর্চিষ্মান জানতে চাইলে বলি, কী আর। করুণাদির মোমো, কাবলিদার ঝালমুড়ি, দাদুর চপ, অন্নপূর্ণার উল্টোদিকের ছেলেটার আলুকাবলি আর ফুচকা (শওয়ার্মার উল্টোদিকের ভদ্রলোকের ওপর আমার রাগ নেই, কিন্তু ভদ্রলোকের ফুচকার জলে পুদিনার গন্ধ ম’ ম’ যেটা ডিস্টিংক্টলি নন-বাঙালি ফুচকার বৈশিষ্ট্য বলে আমার বিশ্বাস), অন্নপূর্ণার লর্ড চমচম আর সিঙাড়া…

ফুচকা দিয়ে শুরু করব তো জানাই, শেষ করে চপের দিকে এগিয়ে দেখি দাদু পাটিসাপটাও বানাচ্ছেন আজকাল। ফাঁকিবাজি না, রীতিমত ষণ্ডা, নারকেলের পুর ফাটোফাটো। খেতে না খেতে আমারও সেই দশা হল।

অর্চিষ্মান বলল, এই যে এম এল এ ফান্ডিং-এর বেঞ্চ। বসে পড়।

সারকাজমের সুরটা ভালো লাগল না। এম এল এ ফান্ডিং দিয়ে ক্যাডারদের কালীপুজো স্পনসর না করে আমার মতো চোখের খিদের খাউনিদের রেস্ট নেওয়ার জন্য বেঞ্চ বানানো কাজের।

খাওয়ার সঙ্গে তো ঠিক খিদের সম্পর্ক নেই। যখন ফুচকা খাচ্ছি তখন কি ফুচকা খাচ্ছি? খাচ্ছে আসলে উনিশ বছরের মেয়েটা কলেজের গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে, রোজ। ওই মেয়েটা আমাকে চেনে না। আমি কোথাও নেই ওর চেতনায়। সেটা আমাকে কষ্ট দেয়। মনে হয় দেখুক একবার চোখ তুলে। উল্টো সন্দেহও হয়। ওই মেয়েটা কি সত্যি ছিল? প্রমাণ করার উপায় নেই। বাইশ বছর পার করে ছুঁয়ে দেখার রাস্তা নেই। মেয়েটার সঙ্গে কিছুই কমন পড়ে না আর। সম্ভবতঃ ফুচকার প্রতি প্রেমটা ছাড়া। ঝাল হবে?র উত্তরে ঘাড় নাড়াটুকু ছাড়া।

তারপর ধরা যাক, চপ যখন খাচ্ছি। আসলে রোববার রাতে মায়ের সঙ্গে ফিরছি গানের ক্লাস থেকে। মায়ের দুর্বল “বাড়ি গিয়ে রুটি খাব না বললে কিন্তু”কে “বলব না, প্রমিস” (যা আমিও জানি মাও জানেন মিথ্যে) দিয়ে উড়িয়ে রোগা কনুই ধরে টানছি চপের ঝুড়ির দিকে। পাশের ঝুড়িটা জিলিপির, যেটাও নেওয়া হবে ঠোঙায় ভরে একশো গ্রাম। রুটিতরকারির কপাল খারাপ।

দু'নম্বর মার্কেটে জিলিপি ভাজেন না কেউ, এটা শোকের।

সেই যুক্তিতে মা তারা-তেও খেতেই হত। মা তারা আমাদের বহু পালাবদলের সাক্ষী। যেমন আমরাও মা তারার বিবিধ ভোলপাল্টানোর। যখন এসি ছিল না, ঠেলা দরজা ছিল না, এখন যে ‘এল’ শেপের হাতা যেটার নাম ছিল বাবু দোসা বা বাবু সাউথ ইন্ডিয়ান ফুড বা ওইরকমই কিছু এবং যে দোকানে একবার দোসা খাওয়ার ভুল আমরা করেছিলাম সেই হাতা ছিল না, ফ্ল্যাটস্ক্রিন টিভি ছিল না, পরিবেশকদের মাথায় পরিবেশের পিণ্ডি চটকানো প্লাস্টিকের ডিসপোজেবল ক্যাপ ছিল না, আমরা ছিলাম।

আমরা তো থাকবই, আমরা ইন্টারনেটের আগেও ছিলাম।

আইকনিক শব্দটা যেখানেসেখানে যখনতখন লাগিয়ে দেয় লোকে, মা তারা আইকনিক। যখনই গেছি, যতবার, আশেপাশের টেবিলে এমন একটা গ্রুপ থেকেছে যাদের একজন সি আর পার্কের বাঙালি, বা অন্য কোনওখানের, মোদ্দা কথা এন সি আর-এর, তার বাঙালি অতিথি কিংবা অবাঙালি বন্ধুদের বাঙালি খাবার খিলাতে নিয়ে এসেছে। ওহ ক্যালকাটা!-য় যায়নি, বঙ্গভবন যায়নি, মা তারা-য় এসেছে। যে দোকানে পাড়ার লোকেরাও রান্না করতে ইচ্ছে না হলে এসে খেয়ে যায়।

সেদিনও ছিল। একটি বাঙালি মেয়ে আর তার বন্ধু একজোড়া অবাঙালি প্রেমিক। স্বভাবতই তাদের  টুরিস্ট অর্ডার। ভাত, ভেটকি পাতুরি, চিংড়ির মালাইকারি, মাটন কষা, মিষ্টি দই, থামস আপ।

থামস আপ-টা আমাদের টুকে। যেই না আমাদের টেবিলে রেখে গেছে অমনি হাত নেড়ে পরিবেশকের কানে ফিসফিস। নিন্দে করছি না, আমরাও নিত্যি লোকের টুকে অর্ডার দিই। আমরা নিয়েছিলাম শুক্তো, ধোঁকা, বেগুনি, অর্চিষ্মানের মুরগি কষা। লাস্টে মিষ্টি দই। আর থামস আপ। না হলে ভাত হজম হবে না।

আমি ধোঁকার বিরোধী ছিলাম। ফুলকপি বোরিং, মোচার ঘণ্ট ইচ্ছে করছিল না, আলুপোস্তও বাড়িতে হয়েছে আগের রাতেই। বলেছিলাম, কালোজিরে ফোড়ন না দিতে। বাড়িতে ফোড়ন ছাড়া পোস্ত হত, সেই নস্ট্যালজিয়ায়। মা তারার পোস্ত ওকে মাত দিতে পারবে না। মা তারায় "আজকের সবজি"র একটা ফান্ডা আছে। খোঁজ নিতে জানা গেল সেদিনের তরকারি আলুসয়াবিন। আগ্রহভরে অর্চিষ্মানের দিকে তাকাতে হাত থেকে মেনু কেড়ে নিয়ে চেনা ছেলেটাকে "ধোঁকা আনো, প্লিজ" বলে দিল। বুঝলাম এ বিষয়ে আলোচনা এখানেই শেষ।

পাড়ার বলে নয়, দিল্লিতে অথেনটিক বাঙালি খাবারের বেঞ্চমার্ক বলেও নয়। মা তারা-য় দুজনেই খেতে পছন্দ করি অন্য কারণে। টিভিতে বাংলা সিরিয়াল দেখা যায়, জোরে কথা বললে পাশের টেবিল থেকে "কোথাকার গাঁইয়া" ভ্রুকুঞ্চন ভেসে আসে না, হাসির কথা হলে হো হো হাসা যায়। পাশের বাঙালি টেবিলে আড়ি পাতার অসামান্য এন্টারটেনমেন্ট। অর্চিষ্মান পেটের দায়ে ভারতবর্ষের বিভিন্ন রাজ্যের পাইস থেকে পাঁচতারা হোটেলে খেয়েছে। এবং সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে যে মা তারা গোত্রের দোকানগুলোয়, যে সব দোকানে সানমাইকার টেবিল, নীলকমলের চেয়ার, টিউবলাইটের আলোয় দেওয়ালে ঝুলন্ত  লাইটওয়েট সিংহাসনে ঈশ্বর এবং গুরুদেব জ্বলজ্বল, কুইজিন নির্বিশেষে ভূভারতের শ্রেষ্ঠ খাবার পরিবেশিত হয়। 

গুরুদেবের পাশের ছবিটা নির্ঘাত মা তারার মালিকের বাবামায়ের। দুজন চড়াইপাখির আয়তনের মানুষ, পাশাপাশি চেয়ারে বসা। কী গম্ভীর মুখ দেখেছ? কিছু একটা দেখে কমেন্ট না করে থাকা আমার পক্ষে কষ্টকর।

যখনকার ছবি তখন ছবি তোলা সিরিয়াস ব্যাপার ছিল, হ্যা হ্যা হাসার নয়। অর্চিষ্মান বলল।

না এক্সপোজারের ব্যাপারও আছে। চোখ টিপলাম। যাঁদের বেশি ছবি তোলা হত তাঁরা হয়তো এতটা আড়ষ্ট থাকতেন না।

লাগসই ওয়ার্ডপ্লে অগ্রাহ্য করল অর্চিষ্মান। তোমার মুণ্ডু। রবীন্দ্রনাথের তো গুচ্ছ ছবি তোলা হয়েছে, তিনি হাসেননি কেন?

হাতের বেগুনি হাঁ মুখের সামনে থমকে গেল। হাসেননি মানে কী। আলবাত হেসেছেন। টিস্যুতে হাত মুছে ইমেজ সার্চ মারলাম। সারি সারি গোমড়াথেরিয়াম রবীন্দ্রনাথ ভেসে উঠলেন।

স্যালাডের প্লেটের কাঁচালংকা সন্তর্পণে সরিয়ে গাজরের টুকরো মুখে পুরল অর্চিষ্মান। রবীন্দ্রনাথ যে কখনও ছবিতে হাসেননি এটা একটা বহুচর্চিত ব্যাপার। তোমার কানে যায়নি কেন রহস্য।

গুগল ইমেজ রেজাল্টের পাঁচ পাতা পর্যন্ত গিয়েও যে রবীন্দ্রনাথের একটাও হাসিমুখ পাওয়া গেল না তাতে যত না, রবীন্দ্রনাথ যে সত্যি সত্যিই কখনও হেসে ছবি তোলেননি সেই সম্ভাবনায় যত না, ঢের বেশি বিচলিত হলাম আমি রবীন্দ্রনাথ হাসলে কেমন দেখাত সেটা কল্পনা করতে অপারগ হয়ে। অদেখা মুখ মানুষ কল্পনা করতে পারে না এ ফান ফ্যাক্ট শোনা ছিল, কিন্তু যে মুখ আজন্ম মুখস্থ, তার হাসি কল্পনা না করতে পারাটা অস্বস্তিজনক।

মনীষীরা একে একে মগজে ভেসে উঠলেন। বিবেকানন্দ হাসলে কেমন হতেন, সারদা মা, বেগম রোকেয়া, দেশবন্ধু, রামমোহন। আশ্চর্য, বিদ্যাসাগরের হাসিমুখ চকিতে মাথায় এসে গেল। তারপর বুঝলাম মুখটা বিদ্যাসাগরের নয়, পাহাড়ী সান্যালের। এ অ্যালাউ করা যায় না। তাছাড়া বিদ্যাসাগরের হাসিমুখ কল্পনাও করতে চাই না। তার থেকে অনেক স্বস্তিদায়ক এমন একজনকে কল্পনা করা, পৃথিবীর রকমসকম দেখে যাঁর মাথায় সর্বদা রক্ত উঠে আছে। কোন আগুনটা আগে নেভাবেন স্থির করতেই অস্থির হচ্ছেন। বিদ্যাসাগর আমার কাছে চিরকালীন, আদিঅকৃত্রিম অ্যাংরি ম্যান।

হাল ছেড়ে খাবারে ফেরত গেলাম। শুক্তো এত ভালো লাগে। আগে ততোধিক খারাপ লাগত। কাঁচকলা, পেঁপে, করলা, লাউ - সবকটা প্রাণঘাতী তরকারির এমন মেলবন্ধন, বড় এবং হোঁৎকা না হলে ভালো লাগার কথা নয়। দুটোই হয়েছি তাই শুক্তো খেয়ে মুগ্ধ হই।

থালার ওপর বডি ফেলে বাটির শেষ ভাতটুকু ঢেলে দেওয়া আটকালাম। আমার অতিপ্রতিক্রিয়ায় বরাবরের মতো চোখ ঘুরিয়ে বাটির মুখ নিজের প্লেটের দিকে ফিরিয়ে অর্চিষ্মান বলল, ও নাকি অবশেষে ধরে ফেলেছে ওর মধ্যের বাঙালিতম ট্রেট কোনটা।

সেদিন একজন ফেসবুকে ফরমান দিচ্ছিলেন ট্রেটকে ট্রেইট লিখতে হবে, মেল কে মেইল, ফেসকে ফেইস, কেসকে কেইস। তারপর দেখলাম তিনি নো এবং নো-র মধ্যেও পার্থক্য মেন্টেন, থুড়ি, মেইন্টেন করেছেন। নেতিবাচক নো-কে নো লিখেছেন- আর সবজান্তাবিষয়ক নো-কে ন্যো। অন গড ফাদার মাদার। সেই থেকে আমি বারংবার ন্যো উচ্চারণের চেষ্টা করে যাচ্ছি। অর্চিষ্মান আড়ালে থাকলে জোরে জোরে, অর্চিষ্মান আড়ালে গেলে নীরবে, মুখ গোল করে। একবারও সফল হইনি। মফঃস্বলের চার টাকা মাইনের বাংলা মিডিয়াম জিভে সম্ভবত হওয়ারও নয়। আপনারা কেউ পারলে জানাবেন।

আমার সবথেকে বাঙালি ট্রেটে কোনও রহস্য নেই। পরিশ্রমবিমুখতা।

অর্চিষ্মান বলল, ওর সবথেকে বেশি বাঙালিত্ব নাকি ভাত খাওয়ার ক্ষমতায়। ও নাকি অসম্ভব পরিমাণে ভাত খেতে পারে। ভাত জাতীয় যে কোনও জিনিস। ভাত, খিচুড়ি, বিরিয়ানি। ভেবে মুড়িও যোগ করল। ছোটবেলায় নাকি ও অবিশ্বাস্য রকমের মুড়ি খেতে পারত। ওর কার্বোহাইড্রেট খাওয়ার ক্ষমতার সঙ্গে ওর চেহারার দুইয়ে দুইয়ে চার করতে না পেরে নাকি রেগুলারলি অফিসের লোকজন কমেন্ট পাস করে।

কার্ব খেলে ওজন বাড়ে কি না এই নিয়ে সোপবাক্সে উঠতে পারি, উঠছি না। একলাইন লিখে ক্ষান্ত দিচ্ছি। বাড়ির দুয়োরানি ভাত পায়ে ঠেললাম এদিকে সিনেমা দেখতে গিয়ে এক বালতি বাটার পপকর্ন উইথ লোডেড নাচোসের ফুর্তি, ওজন বাড়বে। সে বাড়ার ভার কার্বের ঘাড়ে দিয়ে বিবেক পরিষ্কার রাখতে চাইলে রাখবেন, কী আর করা।

অর্চিষ্মানের চেহারা মেন্টেন্যান্সেও রহস্য নেই, অন্তত আমার কাছে। ট্রিকটা হচ্ছে - ট্রিক বলা অন্যায়, কারণ এর থেকে যুক্তিযুক্ত কার্যকারণ পৃথিবীতে হয় না - খিদে না পেলে না খাওয়া। রিয়েল খিদে। চোঁ চোঁ খিদে। যে খিদের অনুভূতি, দায়িত্ব নিয়ে বলতে রাজি, অধিকাংশ লোকেই ভুলে মেরেছে। আমরা অভ্যেসে খাই, আবেগে খাই, বোর হলে খাই, খাওয়ার সময় হয়েছে বলে খাই। খিদে পেলে খাওয়ার দিন অস্ত গেছে।

কাউন্টারের বাটির মৌরি এক চামচ মুখে ছুঁড়ে দিল্লির শেষ বসন্ত রোদ্দুর শুষে বাড়ি ফিরলাম। ফিরতে ফিরতে বললাম, আমার আলসেমি না, তোমার ভেতোপনাও না। আমরা যে ভাত খেতে খেতে রবীন্দ্রনাথ নিয়ে চর্চা করি, সেটাই আমাদের বাঙালিত্বের সব থেকে বড় প্রমাণ।

কিছু কিছু খাবারের লিস্ট অর্চিষ্মান রেডি রাখে। কোথায় নাকি দুরন্ত কফি খেয়েছে, কোথায় দুর্মদ পরাঠা। সে রকম একটা খাবারের গল্প শুনছি বহুদিন থেকে। দু'নম্বর মার্কেটের শরবতের ঠেলা। নতুন খুলেছে। মোহিতো থেকে ব্লু লেগুন থেকে পিনা কোলাডা। বলা বাহুল্য, সবই ভার্জিন ভ্যারাইটির। উড়ে যাচ্ছে গেলাসের পর গেলাস।

মোমোর বংশপরিচয় ধ্বংস করে তন্দুরি মোমো, কুরকুরে মোমোতে ছেয়ে গেছে বাজার। সে মোমো খেতে হবে না, রং দেখলেই তোমার চোঁয়াঢেঁকুর উঠবে, বলেছে অর্চিষ্মান। প্রত্যেকদিন দোকানের পাশ দিয়ে পাস করার সময়েই অজান্তেই যেই না চোখ পড়ে ওর, মুহূর্তে অম্বল, যা সামলাতে ওকে লাইন দিতে হয় পাশের শরবতের ঠেলায়।

অজুহাত। শরবত অর্চিষ্মানের অন্যতম প্রিয় ফুড গ্রুপ। মাজা আর গোল্ড স্পট চিরকালের সফট স্পট। ছোটবেলার প্রিয়তম বেড়াতে যাওয়ার বাড়ি ছিল তাঁদের যাঁরা গেলেই সবুজ কিংবা হলুদ কিংবা কমলা স্কোয়াশ খেতে দিতেন কাচের গেলাসে। যত মিষ্টি কিটকিটে, যত রঙিন কটকটে তত ভালো।

শরবতের ঠেলার সামনে দাঁড়িয়ে মেনু পড়ে আমি যখন মসালা থামস আপ অর্ডার করলাম, ও মোহিতো, জানি এ অর্ডার বদলাবে। যে মুহূর্তে ওর খেয়াল কাড়বে কাউন্টারে রাখা নিওন সবুজ গ্রিন অ্যাপলের বোতল।

পড়লও। "সরি সরি, মোহিতো ক্যান্সেল, গ্রিন অ্যাপল প্লিজ," চেঁচিয়ে উঠল অর্চিষ্মান আর মনে মনে ভগবানকে ধন্যবাদ দিলাম। ভাগ্যিস শরবত আর সঙ্গী পছন্দের ক্রাইটেরিয়া এক নয় ওর।

আগের পোস্টেও লিখেছিলাম বোধহয়, আমাদের দাম্পত্যের একটা নিয়ম হচ্ছে ভালো লাগবে না জেনেও, অগুন্তি ঠেকে শিখেও, একে অপরের অর্ডার চেখে দেখা। অর্চিষ্মানের বাড়ানো গ্লাসের গ্রিন অ্যাপলে চুমুক দিলাম। নেহাত আড়াই বছর বয়স পেরোলে মুখের খাবার বার করে দেওয়া যায় না তাই গিলতে হল। এ সিরাপের কারখানার চোদ্দশো মাইলের মধ্যে গ্রিন আপেলের গ ছিল না। অর্চিষ্মান ঝুঁকে পড়ে আমার গ্লাসের মশলা থামস আপে চুমুক দিল। থামস আপ খেয়ে কারও যে মাথায় এসেছে যে এ জিনিসে লেবু বিটনুন গুলে খেলে হয়, এই নিরবচ্ছিন্ন উন্নতির প্রচেষ্টাই মানবসভ্যতাকে টিঁকিয়ে রাখবে।

শরবত নিয়ে এম এল এ বেঞ্চে বসলাম। দৃষ্টিপথে চা-দাদা ফাঁকা দোকানে দাঁড়িয়ে ফোনের দিকে তাকিয়ে দাঁত বার করে আছেন।

প্রথম দিনের লেবু চা খাওয়ার উল্লেখ করেছিলাম আগের পোস্টে। সেই যে ভিড় ছিল অনেক, চক্ষুলজ্জায় লেমন টি বলেই চম্পট দিচ্ছিলাম, তারপর দাদা কেমন আমাকে চিনতে পেরে বললেন, একটা চিনি ছাড়া হবে তো, আর আমি অভিভূত হয়ে পড়লাম?

পুরো গল্পটা বলিনি। চায়ে চুমুক দিয়েই রন্ধ্ররন্ধ্র নেচে উঠেছিল, আনন্দে মাথা দুলিয়েছিলাম। খুচরো ফেরত দিতে দিতে দাদা বলেছিলেন, চা ঠিক ছিল দিদি?

অসামান্য, অদ্ভুত, অভূতপূর্ব। দাদা মুচকি হেসেছিলেন। আমি অল্প একটু চিনি দিয়েছিলাম।

ওহ্‌, ছাড়া কিছু বলার ছিল না, বলিওনি।

শরবত যদিও তখনও বাকি, কিন্তু চা তো খাবই। যা ঘটবেই সেটা ঠেকিয়ে রেখে লাভ নেই। দৌড়ে গেল অর্চিষ্মান, ফাঁকা দোকানের সুযোগ নিতে। এক হাত কোমরে, অন্য হাত চিবুকে, দোকানের ছাদ ছুঁয়ে মাথা, ঠোঁট নড়ছে। চায়ের বায়না করছে নির্ঘাত। শোনার প্রশ্ন নেই। ওর গলা অনেকসময় খাটের এপাশ থেকে শুনতে পাই না, অ্যাঁ অ্যাঁ করি। অর্চিষ্মান দাবি করে যে ওর কণ্ঠস্বরের ক্ষীণত্বের থেকেও আমার কানের খাটোত্বটাই নাকি প্রধান কালপ্রিট।

এমন সময় অর্চিষ্মানকে অগ্রাহ্য করে দাদা সোজা আমার দিকে তাকিয়ে চেঁচালেন, কালকের মতো অল্প চিনি দেব তো?

চেঁচিয়ে দূরঅস্ত, সামনে থাকলেও না করতে পারতাম না। বাজারে আমার চিনি ছাড়া লেবুচায়ের দিন ঘুচল।

মুড়ি খেলাম কাবলিদার, দু'দিন। আলুকাবলি বাদ পড়ে যাচ্ছিল, অর্চিষ্মান একদিন অফিস থেকে ফেরার পথে নিয়ে এল।

এক দুপুরে পিৎজা খেলাম, এক রাতে গেলাম কোরি’জ-এ। কোরিয়ান খাবারের দোকান। আগে সফদরজং-এ ছিল, এখন আরও কাছে জি কে ওয়ানে শাখা বিস্তার করেছে। দুজনে মিলে এক থালা নিরামিষ কিমবাপ, আমি নুডল সুপ, বেসিক্যালি কোরিয়ান ম্যাগির সুপ, অর্চিষ্মান পর্ক কাটলেট, ভালো নাম কাটসু, খাওয়া হল। লাস্টে পুর ভরা গোল পিঠে যার নাম উচ্চারণ করতে গেলে প্রলয় ঘটবে, সেটাও হল।

স্টেট ভবনে যাওয়ার প্ল্যান ছিল। কিন্তু রাতে ছাড়া যাওয়ার সুবিধে নেই, তাই সব কূল রেখে সি পি-র রাজস্থালী বাছা হল। ধোকলা, মিনি শিঙাড়া, রসুন, লংকা, বাদাম আরও কীসের চার রকমের চাটনি, দু'রকমের আচার, মশলা মাখানো গোটা লংকা, স্যালাড, ডাল বাটি চুরমা, ফুলকো রুটি, মশলা পরোটা, জোয়ারের রুটি (ঘি ছড়ানো), ডাল, শাক, আলুর শুকনো তরকারি, গাট্টার ঝোল, কঢ়ি, পনীর, পোলাও, খিচুড়ি (ঘি ছড়ানো), আমরস আর মুগডালের হালুয়া। নিশ্চিত তিন চারটে বিষয় বাদ পড়ে গেল। সবই যত খুশি, যত বার খুশি। আমি আর অর্চিষ্মান খালি রসুনের চাটনিটা দ্বিতীয়বার নিয়েছি, আর কিছুর সেকেন্ড হেল্পিং চাইছি না তাতে ভাইসাবরা অনুযোগ করলেন। কাজেই আলুর তরকারিটা অল্প করে নিতে হল আরেকবার। এত রকম তরকারির প্রতিটি আলাদা রঙের, আলাদা স্বাদের, আলাদা গন্ধের। ফলের গন্ধ অপছন্দ, কাজেই আমরস নিয়ে সন্দিগ্ধ ছিলাম। অকারণেই। কারণ এ জিনিস ফলের গন্ধ নয়, আসল ফল। চোখ বুজে মাথা নেড়ে উঠতে হল হালুয়ার চামচ প্রথমবার মুখে পুরে। অহো। আহা। প্রাচুর্য ও পরিমিতির এমন মিশেল মানুষের মধ্যে হয় না কেন গো। মুখচোখ লক্ষ করছিলেন ভাইসাবেরা, অনুমতির অপেক্ষায় না থেকে, "এ আম বম্বে থেকে আনানো," আরও দুই দুই চামচ আমরস ও হালুয়া ঢেলে দিয়ে গেলেন।

অর্চিষ্মান বলবে, ওগো, অত বিগলিত হোয়ো না। ওঁরা ট্রেনড এটা করার জন্য। হতে পারে। কিন্তু ট্রেনিং অনেকরকম হয়, অনেককেই ট্রেনিং দেওয়া হয়। সব ট্রেনিং সমান কাজের হয় না। সবাই সমান ভালো করে সেটা প্রয়োগ করতে পারে না। রাজস্থালীতে গেলে মনে হয় বাড়ির লোক চেপে ধরে খাওয়াচ্ছেন। আমার অভিজ্ঞতায় বিরল। আর দাম? সরকারি খাওয়া/থাকার দাম দেখলে যেমন মনখারাপ হয়, মনে হয় আরেকটু দর বাড়ালে হয়তো কদরও বাড়ত, তারপর নিজেকে বোঝাই, সরকারি জিনিসের দাম সবার জন্য কাজেই এইরকম দামই ঠিক - রাজস্থালীর দাম দেখেও এই সব ভাবনা খেলল। এ তো সরকারি দোকানও নয়, মুনাফাখোঁজি ব্যবসা। দুজনের ওই মারকাটারি থালির দাম পড়ল, সাতশো। সাতশো সাতশো চোদ্দশো না, শুধু সাতশো। টিমটিম ঘরে হারলে ডেভিডসন ঝুলিয়ে, ডেথ মেটাল চালিয়ে, মাইক্রোওয়েভে গরম করা পিৎজা খাইয়ে গলা কেটে নিয়ে গেছে কত কুল চিটিংবাজে, মনে পড়ল। রাজস্থালী, জিভের পথ দিয়ে আমার মরমে সেঁধিয়েছে। আবার যাব। বার বার যাব।

লোকে ভাবে আমরা খেতে যাই। আসলে যাই না। আসলে টো টো করতে যাই। খাওয়াটা ছুতো, রাস্তায় রাস্তায় ঘোরাটা উদ্দেশ্য। একা রাস্তায় বেরোলেও মন ভালো হয়। বা মন খারাপ করা যায় না। হিল্লিদিল্লি দরকার নেই, মাঠ পেরিয়ে দু'নম্বরে গেলেও। সামনের রাস্তাটা পেরোনোর সময় উড়ে আসা টোটো, ছুটে আসা অটো, ধেয়ে আসা হানি সিং বালেরো যাবতীয় মহাজাগতিক দুঃখবিলাসকে কুলোর বাতাস দেয়, জীবনের প্রতি মায়া হুড়হুড় করে বাড়ে, সমস্ত চেতনা এসে জোটে এই একটিমাত্র প্রাণকে বাঁচিয়ে কী করে ওপারে পৌঁছনো যায় তার সাধনায়। অসম্ভব সম্ভব হয়, অক্ষত ওপারে পৌঁছই। বেঁচে থাকার প্রতি প্রেমে, কৃতজ্ঞতায় নতুন করে ভেসে যাই, গালের ব্রণর মতো ছত্রাকার বসে থাকা পালোয়ান কুকুরদের উদাসীনতাতেও দুঃখ পাই না, ভালোবাসতে ইচ্ছে করে।

সেই পথে বেরোনোর যখন সঙ্গী হয় অর্চিষ্মান, অন্যরকম কিছু ঘটে। আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে আমরা ঘোরতর বরবউ হয়ে যাই, বন্ধুবান্ধবদের সামনে দুজনার মধ্যবর্তী বন্ধুত্ব পেখম মেলে। কিন্তু যখন আত্মীয়বন্ধু নেই আশেপাশে, ভিড়ের মধ্যে আমি আর অর্চিষ্মান দোকলা, হাত ধরে দৌড়ে রাস্তা পেরোচ্ছি কিংবা মোড়ের মাথায় একা দাঁড়িয়ে বোকার মতো তাকাচ্ছি এদিকওদিক, আচমকা মুখের সামনে ভুরু নাচাচ্ছে চেনা মুখ, এক সেকেন্ড লাগছে বুঝতে এটা অর্চিষ্মান, এরই অপেক্ষায় ছিলাম আমি এতক্ষণ। সেই মুহূর্তগুলোয় এই হদ্দবুড়ি আমিও প্রতিবার প্রেমিকা হয়ে যাই।

কিছু কিছু বিশেষ অক্ষাংশ দ্রাঘিমাংশে প্রেম প্রকট হয় সহজে, তীব্রতায়। যেমন মালচা মার্গের আমোর বিস্ত্রো-য়। বাড়িয়ে বলছি না, যত ভিড়ই থাকুক, সকালে কিংবা সন্ধেয়, কাচদেওয়ালের পাশে  দুজনার মাপের একটি ছোট্ট টেবিল অপেক্ষায় থাকে। ডানদিকে মালচা মার্গ, পিংক বুথ। সম্মুখে ডিস্ট্রেসড টেবিলটপে বিনীত ফুলদানিতে ফুল। তেল ও ভিনিগারের শিশিবোতল, ইদানীং স্যানিটাইজারেরও। চোখ তুললে অর্চিষ্মানের মুখ। বরের না, বন্ধুর না। প্রেমিকের।

সহ্যসীমা অতিক্রম করে খাওয়া হয়। ওই ভিউটায় যতক্ষণ পারা যায় থাকার জন্য। গল্পেরা স্রোতের মতো আসে। অবশেষে উঠে টের পাই শরীর খারাপ লাগছে। রাত গভীর। পরপর তিনটে উবার, একটা ওলা ক্যান্সেল। এক সেকেন্ডও দাঁড়ানো অসম্ভব, পাথুরে সিঁড়িতে তশরিফ রাখি। রাস্তার ওপারে এক কানে ফোন, এক হাতে ফুলের দোকান গোছান এক ভদ্রলোক। জিপ এসে থামে। ছাদে নিঃশব্দ নীল আলো দপদপ। দরজা খুলে যায়। এসির তুলনায় বাইরের হাওয়ায় আরাম লাগে এমনকি পুলিসেরও। ফাঁকা মাঝরাস্তায় বীরবিক্রমে বসে থাকে একটি স্বাস্থ্যবান নেড়ি।

পেলে?  অদূরে ফোনের দিকে তাকিয়ে দাঁড়ানো অর্চিষ্মানের প্রতি কাতরোক্তি পাঠাই। নেড়ি ঘাড় ঘোরায়, কী ভেবে উঠে এসে, পাশে না, পায়ের কাছে তো না-ই, দু’সিঁড়ি ওপরে স্থিত হয়। অ্যাই তোর নাম কী রে? হাই তোলে। পার্সোন্যাল স্পেসের তোয়াক্কা না করাটা উচিত হয়নি। সোজা তুইতোকারিতে যাওয়াটাও সহবতের হয়নি হয়তো।

আশীর্বাদের মতো ভাইসাব উপস্থিত হন। বহোৎ দূর সে আনা পড়া। ইচ্ছে হয় গালে চুমু খাই, নিদেনপক্ষে একটা স্যালুট। বদলে শুধু ঘাড় ঝুঁকিয়ে বলি, থ্যাংক ইউ থ্যাংক ইউ।

জানালার বাইরে রাতের শহর। সামনে লাল, উল্টোদিক থেকে আসা হলুদ আলো ইতিউতি। ঘুমন্ত শ্মশান, সমাধিস্তম্ভ। বেলুনওয়ালা আর কোয়ালিটির ঠেলা ফিরে যাওয়া ইন্ডিয়া গেটের আলোকিত একাকীত্ব। চৌমাথা, ফ্লাইওভার পেরিয়ে গাড়ি বাঁক নেয় গাছভরা রাস্তাটায়, প্রতিবার যে রাস্তাটার নাম আমি মিস করে যাই এবং আজ পর্যন্ত যে রাস্তায় আমি একজন মানুষও দেখিনি। ন্যাচারালসে ভিড়। বিলবোর্ডে হিরেমানিকের ছটা। ভোঁ বাজিয়ে ফাঁকা মেট্রো চলে যায় আকাশ দিয়ে। সিট পেরিয়ে অর্চিষ্মানের আঙুল ছুঁই। কতদিন, কতদিন। একবার মেট্রো চড়ে যাব কোথাও, নিঃশব্দে কথা দিই দুজনে দুজনকে।

অনরারি মেনশনঃ তিনটে চ্যাপ্টার পড়ার থাকলে একখানা পড়ে চলে যাই, প্র-কে মুড়ি মাখতে বলেছিলাম, প্র সর্ষের তেলে কালোজিরে শুকনো লংকা ফোড়ন দিয়ে মুড়ি ভেজে, পেঁয়াজ চানাচুর কাঁচালংকা দিয়ে মেখে আনল। ছাদের সমান লাফ দিয়ে উঠেছিলাম, এ তো মায়ের মুড়ি ভাজা। প্র বলল মাসিমা, যিনি আমাদের ফেভারিটেস্ট বাড়িওয়ালা ছিলেন এবং যার কথা এখনও মনে করে দীর্ঘশ্বাস ফেলি, তিনি নাকি শিখিয়েছিলেন। মা ও মাসিমা, দুজনেই ঢাকার বটে।

আমাদের ফেভারিট মিল? ঢাকার সঙ্গে তার দূরদুরান্তের সম্পর্ক নেই। সে খেতে দোকানে যেতে হয়নি, প্রাণ হাতে করে দু'নম্বরেও না। উবার ওলার পায়ে ধরা দূরঅস্ত।

বাড়িতেই ছিলাম। খাটের ওপর। ভোর চারটে বাজছিল। অর্চিষ্মান ঝড়ের বেগে টাইপ করছিল, আমি ক্যান্ডি ক্রাশ খেলছিলাম। অবস্থাটা চলছিল সেই দশটা থেকে যখন অর্চিষ্মান পনেরো মিনিট বাদে বাদে অনুরোধ জানাচ্ছিল আমাকে শুয়ে পড়ার, আলো নিভিয়ে। বারোটা বাজার পর থেকে পনেরো মিনিট পরপর তাগাদা লাগাচ্ছিলাম, কী গো? ততক্ষণে অর্চিষ্মানের অফারের সময়সীমা অতিক্রান্ত। এই তো, আর আধঘণ্টা। আড়াইটের পর থেকে দুজনেই হাল ছেড়েছিলাম। আমার লাইফ শেষ হয়ে গেল। বাজার থেকে সন্ধেয় কিনে আনা আনন্দমেলার বিশেষ সংখ্যা নাড়লামচাড়লাম। ক্লাস সিক্সের মেয়ের কবিতা পড়ে মুগ্ধ। ক্লাস এইটের ছেলে ক্লাসরুমের প্রতি চিঠি, কতদিন দেখা হয়নি তোমার সঙ্গে। শৈশবের ক্লাসরুমেদের মুখ মনে পড়ে গেল। অর্চিষ্মানকে রিডিং পড়ে শোনালাম।

চারটে ষোলোয় ল্যাপটপের ডালা বন্ধ করে চিৎপাত হল অর্চিষ্মান। মা, মা গো। বাপ রে বাপ রে বাপ, বললাম আমি। অবশেষে ঘুমোতে যাওয়ার সম্ভাবনা উদযাপনের উদ্দেশ্যে চা আনতে রান্নাঘরের দিকে যাচ্ছি, মাঝরাস্তায় চোখাচোখি হয়ে গেল।

কুকুরটার চিৎকার শুরু হল। রোজই হয়, যতক্ষণ না একজন বিশেষ সিকিউরিটি ভাইসাব এসে ধমক লাগান। সানডে সাসপেন্সে শশধরবাবুর আঙুলে মিসিং আংটির দাগ ধরা পড়ল আর আমরা চা আর ম্যাগির বাটি নিয়ে পাশাপাশি বসলাম। অর্চিষ্মান কী ভাবছিল জানি না, আমি ভাবছিলাম এত সুখও ছিল কপালে?

Comments

  1. Uff, ki sundor likhechho Kuntala di. Sotti bolchi golar kachh ta kirom byatha byatha kore uthlo. :)

    (Ebong abishkar korlam je Archismaner songe amar bhaat khaway durdanto mil. Amay jodi diner protita meal e bhaat dewa hoy, amar moto khushi keu hobe na. Bohu ninduker mukhe chhai diye ami luchi, porotar cheyeo bhaat ke dher dher beshi bhalobashi.)

    ReplyDelete
    Replies
    1. থ্যাংক ইউ থ্যাংক ইউ, বিম্ববতী। তোমার ভালোলাগা সর্বদা ভালোলাগা দেয়।

      আমি কয়েকবছর আগে হলেও তোমার আর অর্চিষ্মানের বিরুদ্ধ শিবিরে থাকতাম, কিন্তু এখন ভাজা ময়দা খেলেই অম্বল হয় কি না, তাই আমিও লুচিপরোটা বাদ দিয়ে ভাতের দলে। বেশি কিছু চাই না। মাখন আলুভাজা, কিংবা ঘি আলুসেদ্ধ। সাইডে রাখা কাঁচালংকায় কামড়। উঃ, খিদে পেয়ে গেল। এর মুখোমুখি দাঁড়াতে পারে কেবল গ্যাসের বার্নারের ওপর থেকে সোজা থালায় উড়ে এসে পড়া হাতরুটি, যার অপেক্ষায় অলরেডি রয়েছে বেগুন/আলুভাজা কিংবা গুড়।

      Delete
    2. Ami bhat besi pari na kintu biriyani ar muri koto je khai, ek dine 3 bela dileo kheye nebo, Uttarpara te mangso diye muri khai.. :D lekhata khub bhalo laglo porte..

      Delete
    3. বিরিয়ানি কত পারব জানি না, তবে ভালো ঝালমুড়ি পেলে ট্রাই করে দেখতে পারি।

      Delete
  2. যদিও বাইরের খাবার যতটা পারি এড়িয়ে চলি কিন্তু নাথিং লাইক খাবারের গল্প তাও আপনার হাতে ও আপনাদের সাথে।

    ReplyDelete
    Replies
    1. হাহাহা, এই কমেন্টটা পড়ে খুব খুশি হলাম, নালক। মুখে না বললেও, অর্চিষ্মানও মনে মনে খুশি হবে আমি শিওর। অন্তরের বিশেষ সংযোগ না থাকলে হাবিজাবি খেয়ে বেড়ানোর সঙ্গী হওয়া যায় না। সেটা যে আমরা আপনার হতে পেরেছি, সেটা জেনে সত্যি ভালো লাগল।

      Delete
  3. ডিনারের আগে এতো খাবারের কথা পড়লে হয়ত স্যুইগ্গিতে (বানানটা বোধ হয় ঘেঁটে ফেলেছি) অর্ডার করেই ফেলতাম কিছু।

    প্রথম অংশটা বেশ মজার। আমার সেরা হাসির লাইনগুলো: "ন্যো উচ্চারণের চেষ্টা" (দুবার চেষ্টা করেও ফেললাম!), "ভাগ্যিস শরবত আর সঙ্গী পছন্দের ক্রাইটেরিয়া এক নয়", "প্রাচুর্য ও পরিমিতির এমন মিশেল মানুষের মধ্যে হয় না কেন" (বেচারা মানুষ!)।
    দেখলাম "এম এল এ বেঞ্চ"টা আগের লেখাতেও উল্লেখ পেয়েছে এবং এটাতেও - বেশ গুরুত্ত্ব পাচ্ছে ওটা।

    তারপর শেষটায় ভারী সুন্দর একটা ঘোরের মধ্যে নিয়ে গেলেন।

    আর দুজনের টোটাল সাতশো দামটা শুনে সত্যিই অবিশ্বাস্য লাগছে! একজনেরও হাজারের কমে তো কোথাওই পাওয়া যায় না আজকাল।

    ReplyDelete
    Replies
    1. আরে থ্যাংক ইউ রাজর্ষি। ভালো লেগেছে জেনে খুশি। হ্যাঁ ওই বেঞ্চটায় বসেছি তো ক'দিন পর পর, পক্ষপাতিত্ব জন্মেছে। রাজস্থালীর দাম দেখে আমরাও চমৎকৃত। ভুল বললাম, খেয়ে চমৎকৃত। দাম সেটাকে অন্য মাত্রায় নিয়ে গেছে।

      Delete
  4. আহা! এটা পড়ে যে কি আরাম হলো!! এই বত্রিশ বছর বয়সে এসে টের পাই, কারুর সঙ্গে অহেতুক তর্ক করতে হচ্ছে না, প্রায় সব বিষয়ে মিল হচ্ছে, সর্বোপরি, বইপত্তর, গান নিয়ে আলোচনা করলে অন্য দিকে তাকিয়ে মাথা চুলকাচ্ছে না, হাই তুলছেনা, এর অন্য রকম আরাম আছে। লোকটা যতই ওষুধ খাওয়া নিয়ে খ্যাক খ্যাক করুক, রাস্তা পেরুবার সময় কনুইয়ের কাছটা ছুঁয়ে থাকাটা বড্ড সুখের, স্বস্তির ও...

    ReplyDelete
    Replies
    1. আহা, বত্রিশ। চমৎকার বয়স, শাল্মলী। হুলিয়ে উদযাপন করে নাও। ওই আরামটাই মাটি করল সব। তোমাদের ভালো হোক।

      Delete
  5. uff ki marattok ekta premer chotogolpo ( uponyash hoy jibon, kintu tate chortogolper sesh hoye hoilo na sesh byaparta thakena)..tumi ki 2 nombor market er kache thako? ami to faak pelei fuchka khete jai ( ha, ei pusa road theke, loke pagol bole tobuo) ..hi five, annapurana r ulto diker fuchkar jonyo...ar ha mach kine sukh pai kolkatar moto..bhal pabda ache niye jaan didi..ei bola gulo shunte jai sref..seta fresh to home e paina bole...ishh fuchka khaoa dui binuni hi power aamar kuntaladi..ishkul r seiiii tumi...mon kharap hoye gelo...

    ReplyDelete
    Replies
    1. এই দেখ, পারমিতা, তুই যে ব্লগপোস্টকে সাহিত্য বললি, এতে আমি যাকে বলে রিয়েল খুশি হলাম। সামনে থাকলে কোলাকুলি করে ফুচকা খাওয়াতে নিয়ে যেতাম। যত খুশি। তারপর চুরমুর, আলুকাবলি, শিঙাড়া, শরবত, যা তোর ইচ্ছে সব।

      Delete
  6. আহা বড় ভালো লাগলো কুন্তলাদি। এভাবেই গরমের সন্ধ্যেবেলার হাওয়ার মত দিন কাটুক তোমাদের।

    ReplyDelete
    Replies
    1. থ্যাংক ইউ, প্রদীপ্ত।

      Delete

Post a Comment