আনরিলেটেবল অতীতচারণা। Happening by Annie Erneux। Scenes from a Childhood by Jon Fosse।


বন্ধু বলল, ফেসবুকের অমুক কবির কবিতা পড়েছিস?

স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার বানান না জানলেও আমরা সবাই যেমন স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের নিচেই থাকি তেমনি ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট না থাকলেও (এবং ফেক থেকে আড়ি পাতায় বহুদিন ক্ষান্ত দিলেও, অন গড ফাদার মাদার) আমরা সবাই আসলে ফেসবুকেই আছি।

কাজেই ভদ্রলোকের কবিতা পড়ার সুযোগ আমার হয়েছে। বা, না পড়ে থাকার সুযোগ হয়নি। লোকে হোয়াটস্‌অ্যাপ বায়োতে সেঁটেছে। মাদার্স ডে আর ছটপুজোয় লাগসই লাইন তুলে ফরওয়ার্ড করেছে। তাদের কিছু কিছু আমিও রি-ফরওয়ার্ড করেছি।

স্বীকার করলাম। পড়েছি রে।  বিশ্বস্ত লোকজনকে ফরওয়ার্ডও করেছি। হাসির চোটে চোখ থেকে নীল অশ্রু ছিটকে বেরোনো ইমোজি সহযোগে।

অনির্বাণ ভট্টাচার্য এক সাক্ষাৎকারে বলছিলেন ভালো অভিনেতা/ পরিচালক হওয়া সত্ত্বেও (ইটালিকসের অংশটা তিনি বলেননি, পরের বাক্যের সঙ্গে সাযুজ্যরক্ষার্থে আমি জুড়েছি) উনি দর্শক হিসেবে জটিল নন। ওঁর সবই ভালো লাগে। আমার আবার ঠিক উল্টো। স্রষ্টা হিসেবে যেমনই হই না কেন ভোক্তা হিসেবে নিক্তি হাতে বসে আছি। মাপ মনের মতো না হলেই নাক কুঁচকে বাতিল করব।

বন্ধুর ভঙ্গিতে কবির কবিতা সম্পর্কে আসন্ন অ্যাপ্রিসিয়েশনের আঁচ পেয়ে আগেভাগে নিজের মনের ভাব প্রকাশ করে দিলাম। যাতে বন্ধু চিটেড ফিল না করেন। মনে না করেন যে সেই অষ্টাশি সাল থেকে একসঙ্গে টিফিন খাওয়া সত্ত্বেও কুন্তলা ফাঁদ পেতে তাস দেখাতে বাধ্য করল? তারপর আমার কবিতার রুচি নিয়ে মুচকি হাসল?

বন্ধু বুদ্ধিমান, সে সব দিকে গেলেন না। আমার সঙ্গে একমতই হলেন। ঠিকই বলেছিস, কাব্যশক্তি কম। ঠিকই বলেছিস, সস্তা আবেগ। ঠিকই বলেছিস, ন্যাকা টু দি পাওয়ার ইনফিনিটি।

তবু কোথাও রেসোনেট করল, জানিস।

ভদ্রলোকের বোধহয় বাঁকুড়া সিরিজের কিছু কবিতা আছে। সে সব কবিতায় বাঁকুড়ার কিছু জায়গার নাম আছে যে জায়গাগুলোতে বন্ধু কুড়ি বছরেরও বেশি আগে চাকরিসূত্রে থাকত। জীবনের প্রথম চাকরি। জীবনে প্রথমবার বাইরে থাকা। কাজেই জায়গাগুলো সম্পর্কে বন্ধুর মনে তলতলে ফিলিং আছে। স্বাভাবিক। মুনিরকা জায়গা হিসেবে যেমনই হোক মুনিরকা নিয়ে কবিতা লিখলে সে কবিতা পড়ে আমার হৃদয়ের কোষে টান পড়ার চান্সও হাই।

বন্ধু ফোন রেখে দিলেন। আমার সন্দেহটায় নতুন করে স্ট্যাম্প মেরে। নস্ট্যালজিয়াকেন্দ্রিক লেখা, লেখা হিসেবে কেমন হচ্ছে যাচাই করা কঠিং। মারাত্মক কঠিং। আমার শৈশবের জাবরকাটা যদি কারও ভালো লাগে সে ভালোলাগার সঙ্গে আমার লেখার অ্যাকচুয়াল গুণপনার সম্পর্ক নেই। যেমন শাহরুখ খানের কামব্যাক সিনেমার হিট হওয়ার সঙ্গে সিনেমার গুণমানের সম্পর্ক নেই। আমি সাধারণতঃ ভালো লাগবে না বা খুব খারাপ লাগবে জেনেও অর্চিষ্মানের সঙ্গে সিনেমায় যাই। ডক্টর স্ট্রেঞ্জ গেছি। অ্যাভেঞ্জারসঃ এন্ডগেম গেছি। যাই একটা সহজ হিসেব কষে। সিনেমাগুলো দেখার অর্চিষ্মানের ভালোলাগা আমার খারাপ লাগার থেকে বেশি। অর্থাৎ সংসারের নেট ভালোলাগা পজিটিভ। একই যুক্তিতে অর্চিষ্মান খবর শোনে কানে ইয়ারফোন গুঁজে। কারণ জোরে জোরে টিভিতে খবর শোনার আমার ডিসইউটিলিটি অর্চিষ্মানের ইউটিলিটির থেকে বেশি। অর্থাৎ সংসারের নেট খারাপলাগা পজিটিভ। প্যালেস্টাইন ধ্বংস হচ্ছে কি না, কারডাশিয়ানদের ইমপ্ল্যান্টে ইনফেকশন ঘটছে কি না, পিয়ানো বাজিয়ে ইউভান পাপা মাম্মাকে (রাজ চক্রবর্তী-শুভশ্রী গাঙ্গুলি ফর দ্য আনইনিশিয়েটেড) প্রাউড করছে কি না, আমার কিস্যু যায় আসে না। যে সব খবরে যায় আসে যেমন কাঞ্চন মল্লিক দ্বিতীয় স্ত্রীকে ডিভোর্সের মূল্য কত ধরে দিয়েছেন (ছাপ্পান্ন লাখ) সে সব আমি উদ্যোগ নিয়ে খোঁজ নিয়ে নেব।

অর্চিষ্মান বলেছিল, শোনো আমি তো পাঠান হলে দেখতে যাব। পাঠান রিলিজ করবে খবর পাওয়া ইস্তক এই মুহূর্তটার অপেক্ষায় আঙুলে টিকটিকি করে বসে ছিলাম। কিন্তু অর্চিষ্মান সাধে আমার সোলমেট না। বলল, একাই যাই বুঝলে। তুমি তো এমনিতেই হলে গিয়ে এইও আপনি কথা বলছেন কেন, এইও আপনি আমার সিটে লাথি মারলেন কেন মূর্তিতে থাকো। পাঠানের হলে যা চলবে তোমার ব্রেকডাউন হয়ে যাবে।

আমি বললাম, অ্যাবসলিউটলি। পাঠান এবং পাঠানের হল এনজয় তো দূর, সহ্য করার পূর্বশর্ত শাহরুখ খানের প্রতি কাছাখোলা আবেগ। সে আবেগ আমি ওঁর প্রতি কোনওদিন বোধ করিনি। অত সপ্রতিভ লোকের প্রতি আবেগ আমি সাধারণতঃ বোধ করি না। অর্চিষ্মান করে। যদিও ওর পার্টনার নির্বাচন সে বিচারে কৌতূহলোদ্দীপক। অর্চিষ্মান পাঠান হলে দেখতে গেল। জওয়ান গেল না। নেটফ্লিক্সে দেখল। হোয়াটস্‌অ্যাপ গ্রুপে রাহুল ডানকি দেখতে যাওয়ার জন্য জপাল যখন লিখল, না বস্‌ হেবি খারাপ রিভিউ, আমি যাচ্ছি না। মনে মনে মুচকি হাসলাম।

একই যুক্তিতে স্মৃতিচারণামূলক সাহিত্যের মান পাঠকের রিঅ্যাকশন দিয়ে বিচার করা টাফ। ধরা যাক আমি নিচের লেখাটা লিখলাম।

হাওড়া, হালুয়া, লিলুয়া, বেলুড়, বালি, উত্তরপাড়া, হিন্দমোটর, কোন্নগর, রিষড়া।

হালুয়া শব্দটা হয়তো কারও স্মৃতিতে কিছু ঝিকিয়ে তুলবে। দীর্ঘ ঘর্মাক্ত দুপুর। দমবন্ধ ভিড়। প্যাচপেচে ঘাম। বলা নেই কওয়া নেই তিনটে ট্রেন ক্যান্সেলের পর তারকেশ্বর ঢুকছে তিনে। হয়তো লেখাটা পড়ার সময় পাশের ট্যাবে ট্যাক্স ফাইল খোলা। সেই মুহূর্তের আবেগে হয়তো তাঁর আমার লেখাটাও মাস্টারপিস মনে হবে। তিনি এসে লেখার নিচে লিখে যাবেন, মাসিমা আপনার লেখাটা ছুঁয়ে গেল।

এ পর্যন্ত সব ঠিকই থাকবে। কাউকে আঘাত না দিয়ে নিজের মত প্রকাশে ভুল থাকতে পারে না। ভুল হবে এই সব কমেন্ট পড়ে যদি মাসিমা সন্দেহ করতে শুরু করেন অ্যাকচুয়ালি তিনি মন্দ লেখেন না। এত ভালো লেখা সত্ত্বেও যারা মাসিমার লেখা পড়ছে না তারা হয় হিংসুটে নয় নিরক্ষর। মারাত্মক ভুল হবে। মারাত্মক স্যাডও।

*****

সিদ্ধান্তে পৌঁছলাম শিল্পের মানবিচারে রিলেটিবিলিটি সুবিধের থেকে অসুবিধে বেশি পাকায়। একটা স্মৃতিচারণামূলক সৃষ্টি তখনই সন্দেহাতীত উতরোয় যখন তা পাঠকের রিলেটিবিলিটির বাইরে থাকে। যেমন ধরা যাক, অক্ষয় মালবেরি। ওই শৈশবকৈশোরের সঙ্গে আমার শৈশবকৈশোরের আকারেপ্রকারে কোনও মিলই নেই। অক্ষয় মালবেরি আমার বুকের ভেতর কোনও চেনা ছবির জন্ম দেয় না। তবু অক্ষয় মালবেরি পড়ে আমি আকুল হই। শব্দচয়নে, বাক্যগঠনে, দৃষ্টিপাতে অক্ষয় মালবেরি আমার রন্ধ্রে রন্ধ্রে বয়। আমাকে ছুঁয়ে যায়।

বা সামার অফ সিক্সটিনাইন। উনিশশো পঁচাশি সালে রেকর্ড হয়ে বেরোনোর পর থেকে সারা পৃথিবীতে যত মিলিয়ন লোক সামার অফ সিক্সটি নাইন শুনেছেন এবং আরও যত মিলিয়ন লোক শুনবেন ও উদ্বেলিত হবেন তাঁদের ক'জন উনিশশো ঊনসত্তর সালে কয়েকটি ক্যানাডিয়ান ককেশিয়ান কিশোরকিশোরীর সঙ্গে জুটে গানের দল খোলার সঙ্গে রিলেট করতে পারেন? ব্রায়ান অ্যাডামস নিজেও পারেন না। উনিশশো ঊনসত্তরে অ্যাডামসের বয়স ছিল দশ। প্রেম করা, ব্যান্ড খোলার বয়সে পৌঁছতে তাঁর নিজেরই কয়েক বছর দেরি। কাজেই নিশ্চিত হয়ে বলা যায় সামার অফ সিক্সটি নাইন একটি সত্যিকারের ভালো গান।

*****

দুটো স্মৃতিধর্মী বই যা আমার কাছে আগাপাশতলা আনরিলেটেবল অথচ আমাকে ছুঁয়ে গেছে, তাদের কথা বলে পোস্ট শেষ করব।

Happening
Annie Erneux

স্থান, ক্যাথলিক ফ্রান্স। কাল ১৯৬৩। অ্যাবরশন আইনসিদ্ধ হতে তখনও চার বছর। পাত্র তেইশ বছরের অ্যানি। অ্যানি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাহিত্যের ছাত্রী। অ্যানি আবিষ্কার করেছে অ্যানি প্রেগন্যান্ট। উলের কাঁটার সাহায্যে নিজেই ব্যাপারটা ডিল করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে অ্যানি লোক খুঁজতে বেরিয়েছে। এমন লোক যে অ্যানিকে হেল্প করবে “টু গেট দিস থিং আউট অফ মাই বডি।”

সবাইকে অ্যাপ্রোচ করা যায় না; যাদের অ্যানি সাহস বা বিশ্বাস করে অ্যাপ্রোচ করে কেউ ঘৃণায় শিউরে ওঠে, কেউ বলে স্যালুট কমরেড, কেউ অ্যানিকে একটা বিশেষ টাইপ ভেবে নিয়ে উৎসাহিত হয়। অবশেষে একজন ডাক্তারের খোঁজ পাওয়া যায়। প্রপার ডাক্তার। গাইনোকলজিস্ট। অ্যানির মাবাবা গ্রামে মুদির দোকান চালান। অ্যানি শুধু প্রথম জেনারেশন না, চোদ্দগুষ্টিতে ইউনিভার্সিটির মুখ দেখা প্রথম ইন্ডিভিজুয়াল। বন্ধুর কাছ থেকে ফিজের টাকা ধার করে অ্যানি ডাক্তারের চেম্বারে যায়। ডাক্তারবাবু বলেন আমি তো তোমার গর্ভপাত করবই না, এমন কারও খোঁজও দেব না যে করবে। অ্যানি উঠে চলে আসছে, প্রেসক্রিপশন টেনে ওষুধ লিখে দেন ডাক্তার। এটা তোমার পিরিয়ড ফেরাতে হেল্প করবে। অ্যানি ওষুধ খেতে শুরু করে। পিরিয়ড ফেরে না। অ্যানি খোঁজ নিয়ে জানে ওষুধটা গর্ভস্থ ভ্রুণকে শক্তিশালী করার।

অবশেষে একজন হাতুড়ের খবর আসে। মহিলা হাতুড়ে। গলির ভেতর ক্লিনিক খুলে পাইকারি রেটে অ্যাবরশন করেন। কেসপিছু আকাশছোঁয়া দাম নেন; যে কোনও দিন জেলে যাওয়ার আগে লুটেপুটে কামিয়ে নেওয়ার আশায়। অ্যানি আবার টাকা ধার করে গলির ক্লিনিকে যায়। বাকি কথাবার্তার আগে মহিলা টাকা গুণে পকেটে পোরেন। জানতে চান, সঙ্গে কেউ নেই? নেই, বলে অ্যানি স্টিলের স্ল্যাবে শুয়ে পড়ে। মহিলা যা করার করেন। বেসিক্যালি, অ্যাবরশন ইনডিউস। বাড়ি যাও, যা হওয়ার হয়ে যাবে। বলে নেক্সট রোগীর জন্য প্রস্তুতি শুরু করেন। অ্যানি হোস্টেলে ফিরে আসে। কিছুই হয় না। অ্যানি আবার মহিলার কাছে যায়। আবার স্টিলের স্ল্যাব। আবার মহিলা যা করার করেন। এতে কাজ না দিলে আর কিছুতেই দেবে না।

কাজ দেয়। এক রাতে হোস্টেলের বাথরুমে তিনমাসের ভ্রূণ অ্যানির শরীর থেকে নির্গত হয়।

জায়গাটা পড়ে বই বন্ধ করে খানিকক্ষণ বসে থাকতে হয়েছিল।

শিল্পের ক্ষেত্রে একটা কথা চালু আছে, কনটেন্ট যত বেশি পার্সোন্যাল বা লোক্যাল হয় অ্যাপিল তত ইউনিভার্সাল হবে। কারণ পরিস্থিতি, প্রতিষ্ঠান, প্রথা ভিন্ন ভিন্ন হলেও ইমোশনের স্তরে দেশকালরংলিঙ্গ ব্যাতিরেকে মানুষ একইরকম আচরণ করে। অ্যানি আর্নো ব্যাপারটাকে ইমোশনাল স্তরে ছাড়ার রিস্কও নেন না। 'আ গার্ল'স স্টোরি'তে হলিডে ক্যাম্পে প্রেমহীন পুরুষের সঙ্গে জীবনের প্রথম যৌনতার অভিজ্ঞতা, সিম্পল প্যাশন-এ অবৈধ প্রেমিকের সঙ্গে প্রেমপূর্ণ যৌনতার বর্ণনা আর্নো যেভাবে দেন, 'হ্যাপেনিং'-এ মাঝরাত্তিরে একা হোস্টেলে গর্ভপাতের বর্ণনাতেও আর্নো একই জায়গা থেকে দেন। শরীরের। উনিশশো তেষট্টির ক্যাথলিক ফ্রান্স রিলেট করতে পারবি না? পরিবারে প্রথম উচ্চশিক্ষার (মধ্যশিক্ষাও টু বি ফেয়ার) মুখ দেখা মেম্বার হওয়ার রিলেট করতে পারবি না? প্রিম্যারিটাল সেক্স, অবাঞ্ছিত গর্ভের লজ্জা, একঘরে হওয়ার আতংক, জেলে যাওয়ার বাস্তবের সঙ্গে রিলেট করতে পারবি না? অঙ্গপ্রত্যঙ্গের সঙ্গে রিলেট না করে যাবি কোথায়।

বই হিসেবে বেরোনোর একুশ বছর পর 'হ্যাপেনিং' চলচ্চিত্র হয়ে মুক্তি পায়। একজায়গায় দেখলাম লিখেছে "অ্যাবরশন ড্রামা"। সিনেমার ঘরানাবিভাজনের ভাষায় জিনিসটা ড্রামা হতে পারে, জানি না, কিন্তু অ্যানি আর্নোর নামের পাঁচশো মাইলের মধ্যে ড্রামা শব্দটা শুনলে অস্বস্তি লাগে। আমার পড়া সবথেকে নন-ড্রামাটিক লেখক অ্যানি আর্নো। একেবারে বিগতস্পৃহ ভাষায় যাহা ঘটিয়াছে তাহা লিখে দিলে যে কী আশ্চর্য ভিসুভিয়াসের জন্ম দেওয়া যায় আর্নোকে আবিষ্কারের আগে আমি জানতাম না।

কুণাল সেনের ‘বন্ধু’ -র রিভিউ করতে গিয়ে এই 'হ্যাপেনিং' থেকেই একটা প্যারাগ্রাফ কোট করেছিলাম। সেই প্যারাটা আবার তুলে দিচ্ছি।

When I write, I must guard against lyrical outbursts such as anger or pain. I would not want crying and shouting to feature in this text because they barely featured in my life at the time. Above all I wish to capture the impression of a steady row of unhappiness, conveyed by a pharmacist’s inquisitive attitude or the sight of a hairbrush by a steaming basin of water. The distress I experience on recalling certain images and on hearing certain words is beyond comparison with what I felt at the time: these are merely literary emotions; in other words they generate the act of writing and justify its veracity.

শুধু গর্ভপাতের সিনটাই বই মুড়ে চোখ বুজে বসে থাকতে বাধ্য করেনি, আরেকটা দৃশ্যও করেছিল। দ্বিতীয়বার গর্ভপাত ত্বরান্বিত করার প্রক্রিয়া শেষে অ্যানি স্টিল স্ল্যাব থেকে উঠে পড়ে বেরোনোর জন্য রেডি হচ্ছে। হাতুড়ে মহিলা অ্যানিকে জিজ্ঞাসা করছেন আজও সে একা এসেছে কি না। অ্যানি ঘাড় নাড়ছে। মহিলা হাতের জিনিসপত্র নামিয়ে বলছেন, চল। বলে অ্যানির সঙ্গে স্টেশন পর্যন্ত হেঁটে হেঁটে আসছেন। টুকটাক কথা হচ্ছে। কোনওটাই অ্যানির অনগোয়িং সমস্যা নিয়ে নয়। স্টেশন এসে যাচ্ছে। মহিলা অ্যাবাউট টার্ন করে বাড়ি চলে যাচ্ছেন।

পাঠক জানেন এই মহিলার সঙ্গে অ্যানির আর কোনওদিন দেখা হবে না। পাঠক এও জানেন গর্ভসঞ্চারের পরও অ্যানিকে নিয়মিত বাড়ি যেতে হয়েছে এবং তাঁর যে ঋতু হচ্ছে না সেটা নিজের মায়ের কাছ থেকে লুকোনোর জন্য অ্যানির অ্যাংক্সাইটি কতখানি আকাশ ছুঁয়েছে। এত সব জানাজানির পর পাঠকের চোখে দুজনের ওই স্টেশন অবধি একসঙ্গে হেঁটে আসার দৃশ্যটা নানারকম রঙে প্রতিভাত হতে পারে। আমারও হয়েছিল। গর্ভপাতের রক্তাক্ত দৃশ্য এবং এই নিরীহ হাঁটার দৃশ্য, দুটোই আমার মধ্যে ইমোশনের জন্ম দিয়েছিল। কিন্তু সে সব ইমোশন আমার মগজের নিজস্ব কলকাঠি ও কন্ডিশনিং, অ্যানি আর্নো তাদের দায় নেবেন না।

উনিশশো তেষট্টিতে ফ্রান্সে গর্ভপাত নিষিদ্ধ ছিল। দু'হাজার সালে 'হ্যাপেনিং' বই হয়ে বেরোনোর সময় লোকে ভুলেই গেছে বেআইনি গর্ভপাত খায় না মাথায় দেয়। কাজেই প্রশ্ন উঠেছে এই বিষয়ে এখন এত ঘটা করে লেখার মানে কী? যখন বিপদ কেটেই গেছে তখন সেই নিয়ে সাহিত্যচর্বণ ফিয়ারমংগারিং-এর পর্যায়েই পড়বে না কি? অ্যানি আর্নো একটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, গর্ভপাত লিগ্যাল হয়ে গেছে বলেই আরও বেশি করে এই কথাগুলো বলা দরকার। বিপদ কেটে গেলেই বিপদের মাত্রাটা অধিকাংশ সময় ঠিক মাপা যায়।

তাছাড়া এতদিনে নিশ্চয় আর কারও বুঝতে বাকি নেই যে বিপদ আসলে কখনই কাটে না। ঘাড়ের ঠিক পেছনে দাঁড়িয়ে ঠাণ্ডা নিঃশ্বাস ফেলতে থাকে। সে জন্যই বিপদের চেহারা চেতনায় দগদগ করা দরকার।

******

Scenes from a Childhood

Jon Fosse


গার্ডিয়ান পত্রিকা (অনলাইন) আমার মতো পাঠকদের জন্য ‘হোয়্যার টু স্টার্ট উইথ’ নামের একটা সিরিজ চালায়। ২০২৩ সালে সাহিত্যে নোবেলজয়ের পর সেখানেই ফস সম্পর্কে খোঁজ নিতে গেছিলাম। বহুদিন ধরেই ভদ্রলোক নোবেলের লাইনে ছিলেন। অবশেষে শিকে ছিঁড়েছে। ভদ্রলোক নাটক লিখেছেন প্রচুর। উপন্যাস, প্রবন্ধ, কবিতাও বাদ দেননি। গার্ডিয়ান প্রায় ছাত্রবন্ধুর মতো করে ‘এনট্রি পয়েন্ট’, ‘ইফ ইউ ওনলি রিড ওয়ান’, ‘ ইফ ইউ আর ইন আ রাশ’ পয়েন্ট করে করে ইয়ন ফসের সৃষ্টিসম্ভারের সঙ্গে পাঠকদের পরিচয়ের পথ সুগম করে দিয়েছে।

একটাও বই না পড়ে মাত্র একটাই বই পড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া অসম্ভব। তাড়ায় আছি দাবি করাটাও মিথ্যাচার হবে। কাজেই এন্ট্রি পয়েন্ট দিয়েই শুরু করলাম। গার্ডিয়ান পত্রিকার মতে, ফসের এন্ট্রি পয়েন্ট হল সিনস্‌ ফ্রম আ চাইল্ডহুড। উনিশশো সাতাশি থেকে দু’হাজার তেরোর মধ্যে ফসের লেখা পাঁচটি রচনার সংকলন। সংকলনটি প্রথম ছেপে বেরিয়েছিল ১৯৯৪ সালে। গোড়াতে শুধুমাত্র লেখকের শৈশবকৈশোরের কতগুলি দৃশ্য নিয়েই তৈরি হয়েছিল বইটি। পরে আরও কিছু রচনা যোগ হয়।

তাদের মধ্যে একটি নভেলা ‘অ্যান্ড দেন মাই ডগ উইল কাম ব্যাক টু মি’। নভেলাটা একজন মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষের দৃষ্টিকোণ থেকে লেখা, যা আমার প্রিয়। সুস্যান ক্লার্কের 'পিরানেসি' এই দৃষ্টিকোণের একটি চমৎকার উদাহরণ। যদিও পিরানেসি অনেক বেশি খেলানো, অনেক বেশি সালংকারা। ফসের প্রোটাগনিস্টের ভয়েস অনেক বেশি খণ্ডিত, চাঁচাছোলা। সংকলনের আরেকটি লেখা ‘ড্রেম্‌ট্‌ ইন স্টোন’ও এই একই ভয়েস ব্যবহার করে লেখা।

তবে সংকলনের সেরা লেখাগুলো, অনেক লোকের সঙ্গে আমিও একমত, সিনস্‌ ফ্রম আ চাইল্ডহুড। এই লেখাগুলোর একেকটা চ্যাপ্টার একেকটা দৃশ্য। ফসের শৈশবকৈশোরের কতগুলো র‍্যান্ডম দৃশ্য। একটা চ্যাপ্টার/দৃশ্য যদি তিন লাইনের তো অন্য চ্যাপ্টার/দৃশ্য দু’পাতার। দৃশ্যগুলো কতখানি র‍্যান্ডম বুঝতে পারবেন চ্যাপ্টারের নাম দিয়ে। মাই গ্র্যান্ডমাদার ইজ লাইং ইন বেড। ইট হ্যাজ স্টপড স্নোয়িং। এভরিবডি প্রব্যাবলি নোজ দ্যাট। একটি দৃশ্যের সঙ্গে পরের দৃশ্যের কোনও সংযোগ নেই। কাল পরম্পরা মেন্টেন করা নেই। কেন যে ওই দৃশ্যটা ফসের মনে থাকল সেটার যুক্তিগ্রাহ্য কারণ নেই।  যেমন ধরুন একটা চ্যাপ্টার হচ্ছে,

BICYCLE AND GUITAR CASE

Asle was riding around on the roads on his mother’s old bicycle, he’d repainted it blue. He almost always had a guitar case in his hand. As he rode the bike his long hair fluttered behind him.

ফসের লেখায় মিউজিক ঘুরে ফিরে এসেছে। এই বইতে তো এসেইছে, রিভিউ পড়ে জেনেছি যে ওঁর সৃষ্টিতে ফিরে ফিরে আসা থিমের মধ্যে সংগীত অন্যতম। অন্যান্য থিমের মধ্যে ধর্মবিশ্বাস, আধ্যাত্মিকতা, স্মৃতির কথা বার বার উঠে এসেছে। সংগীতসংক্রান্ত একটি দৃশ্য বা চ্যাপ্টার 'আই জাস্ট কান্ট গেট দ্য গিটার টিউনড'। ঠিক যা নাম, ঘটনাও এক্স্যাক্টলি তাই। একটা ছোট ফাংশান মতো হচ্ছে। পুকুরপাড়ে-বটগাছের-তলায়-তক্তা-বাঁধা ছোট না, একটাই-ঘরে-নাচিয়ে-বাজিয়ে-দর্শক-সবাই-এঁটে-গেছে ছোট। নাচের দল রেডি। দর্শক রেডি। বাজিয়েরা বাজনা রেডি করছে। প্রধান চরিত্র নিজের গিটার বাঁধছেন। জি স্ট্রিং ঠিক বাজছে না। সেটা টিউন করছেন। করতে গিয়ে তার ছিঁড়ে গেছে। উঠে গিয়ে গিটার কেস থেকে এক্সট্রা তার বার করে এনে, লাগিয়ে, ফের টিউনিং শুরু করেছেন। বাকিরা যে যার নিজের যন্ত্র বাঁধছে। একজন বলছেন, আরেকটু টাইট কর। প্রধান চরিত্র পেগের কান আরেকটু মোচড়াচ্ছেন। আরেএএকটু। বাকি বাজনারা একে একে প্রস্তুত হচ্ছে। ভিড় জমা প্রায় শেষ। প্রধান চরিত্র এখনও টিউন করছেন। বন্ধু বলছেন আরেকটু টাইট দে। সাবধানে দিস। প্রধান চরিত্র সাবধানে টাইট দিচ্ছেন। এবং পটাং করে তার ছিঁড়ে যাচ্ছে। তাঁর নিজের আর এক্সট্রা তার নেই। বন্ধুরও নেই। কারও নেই। বাজনা কী করে হবে? প্রধান চরিত্র ওই জগঝম্পের মধ্যে চিৎকার করে বাকি বাজিয়েদের জিজ্ঞাসা করছেন। কেউ উত্তর দিচ্ছে না, কেউ দিচ্ছে। নেই। প্রধান চরিত্র উঠে আবার ব্যাকস্টেজে যাচ্ছেন। নিজের গিটার কেস খুলে খুঁজে দেখছেন, ম্যাজিকালি যদি একটা তার এসে উপস্থিত হয়। হয়নি। আরেকজন বাজিয়েও ব্যাকস্টেজে। প্রধান চরিত্র তাঁকে বলেন একটু দেখতে যদি একটা এক্সট্রা জি স্ট্রিং থাকে তাঁর। তিনি তাঁর বাক্স হাঁটকান। নেই। কী হবে? কী আর হবে পাঁচটা তার দিয়েই বাজাতে হবে। দ্যাট'ল প্রব্যাবলি ওয়ার্ক, হি সেজ। পিপল আর অলরেডি হিয়ার, আই সে। দ্যাট'ল ওয়ার্ক, হি সেজ।

গল্প শেষ।

গুডরিডস-এ সিনস্‌ অফ আ চাইল্ডহুডের প্রথম রিভিউটাই ওয়ান স্টার। একজন লিখেছেন, এটা আর যাই হোক লেখা হয়নি। এবং যেহেতু নোবেলজয়ীর লেখা ভালো লাগে না বলতে গেলে কনফিডেন্সে টান পড়ে, ডিসক্লেমার দিয়েছেন যে তিনি নিজেকে সিরিয়াস পাঠক বলেই মনে করেন, প্রচুর উচ্চমার্গের লেখা তিনি পড়েছেন কিন্তু এটা ভালো লেখা নয়। বাংলায় ওঁর অনুভূতিটা বলতে গেলে বলতে হয় ওঁর মনে হয়েছে ফস-এর লেখার সাহিত্যমূল্য মুদির দোকানের ফর্দর সমান। উদাহরণ হিসেবে তিনি নিচের চ্যাপটারটা তুলে দিয়েছেন।

ASLE WANTS A DOG OF HIS OWN

On Sundays when he was little Asle and his parents used to go for walks. They used to walk past a little house and the man who lived there had a little white dog with black spots. Whenever they walked past the house the dog leaped over Asle, who patted it and talked to it. Asle wants a dog for himself so badly but his mother says he can’t have one. Asle wants a dog of his own.

রিভিউয়ার লিখেছেন, এটা তাঁর আট বছরের ছেলেও লিখতে পারবে। কেন এ কথা মনে হতে পারে বোঝা শক্ত নয়, কিন্তু আমি একমত নই। বোঝাই যাচ্ছে প্রচুর লোকেই একমত নয় কারণ ফস নোবেল পেয়ে গেছেন। নোবেল কোম্পানি ইয়ন ফসের গদ্যকে কাব্যিক বলেছে শুনলে উক্ত রিভিউয়ার বিষম খেতেন নির্ঘাত। কিন্তু আমি নোবেল কোম্পানির সঙ্গে একমত। ফস গদ্যে কবিতা লেখেন। এবং "কাব্যিক" বলতে আমরা যা বুঝি তার একশো মাইলের মধ্যে না গিয়ে। ওই যে বাজিয়ের দল রেডি। নাচিয়ের দল রেডি। দর্শক রেডি। এদিকে আমার গিটারের তার ছিঁড়ে যাচ্ছে একের পর এক। ফসের লেখার আরেকটা মেজর থিম নাকি "the anxiety of the stale-mate of action." অথচ অ্যাংক্সাইটি শব্দটা একবারও দাঁতের ফাঁক দিয়ে বার করেননি ফস গোটা লেখায়। কারণ, তিনি সেই মুহূর্তে থেমে ভাবছেন না যে আমার অ্যাংক্সাইটি হচ্ছে। তাছাড়া শুধু অ্যাংক্সাইটি তো নয়, এটাও তো আমি বুঝতে পারছি যে অবশেষে আমাকে ছ'টার বদলে পাঁচটা তার দিয়েই বাজাতে হবে। এই যে পরিণতি সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা থাকা সত্ত্বেও চেষ্টার অসহায়তা, কোলাহলে বধির পারিপার্শ্বিকতায় নিজের চাওয়া জানাতে জানাতে চারপাশে একাকীত্বের পাঁচিল ক্রমশঃ উঁচু হয়ে ওঠা, এই সমস্ত এক কথায় অপ্রকাশিতব্য অনুভূতির ঘাড় ধরে পাঠকের বুকের ভেতর হাজির করা, এত কম শব্দে, এ জিনিস কবি ছাড়া হয় না।

একজন লেখকের ভয়েসের ব্যক্তিত্ব নিয়ে যদি ভাবি, ফসের লেখা আশ্চর্য রকম একলা, অন্তর্মুখী। সংকলনে 'হাউ ইট স্টার্টেড' বলে একটি রচনার কথা না বলে শেষ করতে পারছি না।এই লেখাটা পড়ে আনরিলেটেবিলিটির ব্যাপারটা প্রথম ঘা দিয়েছিল। বেসিক্যালি, স্থানীয় প্যাস্টরের স্ত্রীর আয়োজন করা ইউথ গ্রুপের পার্টিতে একদল টিনএজার দল বেঁধে গেছে (আনরিলেটেবল)। দলের মধ্যে অল্প প্রেম প্রেম চলছে (আনরিলেটেবল)। এবং একটা পয়েন্টের পর একটা খেলা শুরু হয় যেখানে র‍্যান্ডমলি চোর ডাকাত বাবু পুলিসের কাগজ তোলার স্টাইলে ছেলেমেয়েরা একে অপরকে চুমু খাবে (ইললিগ্যাল)। গ্রুপের মধ্যে একটি মেয়েকে ফসের গোপনে পছন্দ, প্রকাশের প্রশ্নই ওঠেনি (রিলেটেবল)। ফস ধরেই নিয়েছেন সে মেয়ের তাঁকে চুমু খাওয়ার পালা আসবে না। কিন্তু, এল। মেয়েটি ফসের সামনে এসে দাঁড়াল। চুমু খেল। সমুদ্র গর্জন করছে। লোনা হাওয়া বইছে। চুমু শেষ। মেয়েটি সরে যাচ্ছে। পার্টি ভেঙে যাচ্ছে। সবাই বাড়ি ফিরছে। মেয়েটি অন্য একটি ছেলের সঙ্গে কথা বলতে বলতে সামনে সামনে হাঁটছে। একটু পেছনে ফস অন্য একটি মেয়ের সঙ্গে কথা বলতে বলতে হাঁটছেন।

চ্যাপ্টার শেষ। আমি বই বন্ধ করে বসে আছি। অর্চিষ্মানের শেষরাতের ঘুমের দীর্ঘ শ্বাস পড়ছে। আমার সমস্ত শরীর থেকে 'বাবাগো' বেরিয়ে আকাশেবাতাসে মিশে যাচ্ছে।

দু’হাজার সাত সালের সংস্করণের শেষে জোড়া নোটস্‌ ফ্রম দ্য অথর-এ ফস লিখছেন, In writing Scenes from a Childhood, my goal was to write about my own childhood, the way things really happened. That turned out to be impossible for me. What I wrote was similar to my own experience in some ways, but not a single one of these pieces ended up being entirely accurate. I cannot help writing fiction.

কুণাল সেনের ব্লগের একটা পোস্ট মনে পড়ল। কুণাল একবার ভেবেছিলেন ডিজিটাল ডায়রি লিখবেন। লেখা শুরু হল। নতুন দিনের লেখা শুরু করার আগে তাঁর অভ্যেস ছিল আগের দিনের লেখা আরেকবার পড়া। কয়েকদিন পর কুণাল আবিষ্কার করলেন তিনি শুধু পড়ে ক্ষান্ত দিচ্ছেন না। তিনি আগের দিনের লেখাটা সারাচ্ছেন। খুব সাধারণ সারানো। কমা সেমিকোলন। বা একটা শব্দ। বা একটা বাক্য। একটা প্যারা।  বিষয়টার ডেঞ্জারটা যে কোনও দৃষ্টিবান লেখকের মতো কুণাল সেনেরও নজর এড়ায়নি। তিনি শুধু ভাষা এডিট করছেন না, তাঁর স্মৃতি, যা হয়তো সন্দেহজনক টু বিগিন উইথ, এডিট করছেন।

আমরা শুধু গল্প বলতে বা পড়তে ভালো বাসি না। আমরা নিজের জীবনটাকেও গল্প না করে তোলা পর্যন্ত ছাড়ি না।

Comments

  1. কিছুদিন আগের কোনো এক লেখায় আপনার বক্তব্য পছন্দ হয়নি, জানিয়েছিলাম। এবারে পছন্দ হবার কথা ও জানিয়ে গেলাম।
    সাহিত্য র গুনাগুন আর পাঠকের relatability নিয়ে কিন্তু একাডেমিক লেখা যেতে পারে। এমনটা নয় যে কেউ লেখেনি আগে, কিন্তু আপনিও লিখুন না! বেশ অন্যরকম হবে!

    ReplyDelete
    Replies
    1. আমার আশংকা কী বলুন তো, এখানে যেটুকু লিখেছি তার থেকে বেশি লিখতে গেলে চিন্তার ক্ষমতায় টান পড়বে। তবে মাথায় রাখলাম।

      মন্তব্য পেয়ে মন থেকে ভালো লাগল। ভালো থাকবেন।

      Delete
  2. ভীষন ভীষন ভালো লাগলো। দুটো বই পড়ার ইচ্ছে থাকলো।

    অনেকদিন কমেন্ট করা হয়ন। যদিও পড়েছি আর ভালোবেসেছি সবই।

    খুব ভালো থাকবেন

    ইন্দ্রানী

    ReplyDelete
    Replies
    1. আপনি অনেকদিন বাঁচবেন। ইমেল করব করব ভাবছিলাম।

      Delete
  3. Replies
    1. আমারও জেনে ভালো লাগল, শিবেন্দু। থ্যাংক ইউ।

      Delete
  4. শাহরুখ খানের কাঠখোট্টা অনুরাগীদের আমি সুযোগ পেলেই বলি: "উনি একজন সত্যিকারের পটু অভিনেতা, কিন্তু কেউ ওনাকে অভিনয় করার মতো রোলে দেয় না।" এটা আমি সত্যি বলে মানিও।

    অ্যানি আর্নোর সিম্পল প্যাশন পড়েছিলাম, আপনার ব্লগেই ওই বই নিয়ে লেখার থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে। এখানে অ্যানি আর্নোর উল্লেখ পেয়ে ওই বইটা আবার উল্টে পাল্টে দেখতে গিয়ে "স্মৃতিচারণামূলক সাহিত্যের মান" বিষয়ের একটা প্যারাগ্রাফ চোখে পড়লো, যেখানে অ্যানি আর্নো ওনার ওই প্যাশনেট আবেগের মধ্যে থাকার সময়ে বলছেন: "I could not understand why people looked up the date and the history of each painting in their guide book. Such things had nothing to do with their own lives. My approach to works of art was purely emotional. ... The partly erased frescos in Santa Croce moved me because of my story, which would come to resemble them one day. ..."

    অনলাইন গার্ডিয়ান পত্রিকার ‘হোয়্যার টু স্টার্ট উইথ’ সিরিজের কথা জানা ছিল না - এটা বেশ কাজে লাগবে।

    ReplyDelete
    Replies
    1. আমাদের অধিকাংশেরই আর্টের প্রতি অ্যাপ্রোচ ইমোশনাল, রাজর্ষি। সে জন্য নিজে বুঝতে না পারলে মনে হয় আর্ট হয়নি, আঁতলামো হয়েছে।

      Delete
  5. এই মানসিক ভারসাম্যহীনের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে লেখা এই ব্যাপারটা Forest Gump আর হারবার্ট এই দুটি সিনেমার অরিজিনাল ব‌ইতে খুব ভালো লেগেছিল আর সিনেমা দুটির কথা তো বলাই বাহুল্য।

    ReplyDelete
    Replies
    1. আমি ফরেস্ট গাম্পের অরিজিন্যাল বই পড়িনি, নালক। বাকি সব বিষয়ে আপনার সঙ্গে হাই ফাইভ।

      Delete
  6. Khub bhalo likhechhen Kunatala. Onekdin por Abantor e fire duto bhalo boiyer kotha janlam. Khubi agroho hochhe boiguli porar jonyo. Porbo.

    ReplyDelete
    Replies
    1. থ্যাংক ইউ, সায়ন। হ্যাপেনিং-টা সত্বর পড়ে ফেলুন। জোরই করছি ধরে নিন।

      Delete
  7. হুম। দুটোই পড়েছি। কিন্তু ওই আর কি, অনির্বাণের মতোই বলতে ইচ্ছে হয়, আমি ক্রিটিকাল হতেই পারি চাইলে, কিন্তু আমার বেশিরভাগ জিনিসই 'ভালোই' লাগে। মানে, ভা লো ই লাগে।😊

    ReplyDelete
    Replies
    1. এটা যাঁরা পারেন আমার তাঁদের হিংসে হয় সুদীপ। এটা ভালো লাগে কিন্তু ওটাও ভালো লাগিয়ে নিলাম, এটা আমার পক্ষে অসম্ভব। ভালোলাগালাগির ব্যাপারে আমি চরম অস্থিতিস্থাপক।

      Delete

Post a Comment