আপনার অগোচরে


প্রসেনজিতের পার্টি নিয়ে চোখ টাটাচ্ছিল অর্চিষ্মান, একত্রিশ রাতে প্রসেনজিৎই আমাদের পার্টি দিল। এ বাড়ির তিন ভাড়াটে, আর প্রসেনজিতদের কিছু আত্মীয়বন্ধু, সব মিলিয়ে পনেরো জনের বেশি না।

যদিও হোয়াটস্‌অ্যাপের বায়োতে ফার্নান্দো পেসোয়ার লাইন টুকে রেখেছি, Enthusiasm is sheer vulgarity, সেটা খানিকটা আঙুর ফল টকের মতো। এনথুসিয়াস্টিক লোক না থাকলে কাজের কাজ হয় না। প্রসেনজিৎ, কৃষ্ণা, রাজু মিলে বেডকভার টাঙিয়ে দিল্লির উদ্ভট শীতকালীন বর্ষা ও তৎসংলগ্ন ঝোড়ো হাওয়া প্রতিরোধ করল। উপযুক্ত পানীয়ের সঙ্গে বেগুনি, পেঁয়াজি, লংকার চপ, ফিশ ফ্রাই, স্যালাড, শুকনো ঝালঝাল আলুর দম, কড়াইশুঁটির ফুলকো কচুরি, আলু ফুলকপির তরকারি, ভাত, আলুভাজা, পাঁঠা - শিওর দু একটা পদ বাদ পড়ছে - লোহার কড়াইয়ে কাঠকয়লা দিয়ে ধিকিধিকি আগুন। টুসু পাবলো ছুটোছুটি করে খেলতে লাগল, প্রতি কুড়ি মিনিটে ঝগড়া বাধিয়ে কান্নার বান ডেকে পত্রপাঠ বেস্ট ফ্রেন্ড পাতিয়ে ফেলল, আমগাছের ডালে গুটিয়ে রাখা টুসুর দোলনার দড়ির ফাঁসে গোঁজা স্পিকার থেকে লতা গাইতে লাগলেন, তেরে বিনা জিন্দেগি সে কোই শিকওয়া তো নহি/ তেরে বিনা জিন্দেগি ভি লেকিন জিন্দেগি তো নহি।

বন্ধুদের মধ্যে একজনকে এ বাড়ির পার্টিতে আগেও দেখেছি। বাসস্ট্যান্ডের উল্টোদিকের ফুলের দোকান চালান। এই ভদ্রলোকের সঙ্গে আমার হিস্ট্রি আছে। এ বাড়িতে আগের সাক্ষাতের সময় ওঁর কাছেও সে ইতিহাসের উল্লেখ করেছি, অবান্তরেও বাদ রাখিনি। একত্রিশ তারিখেও ভদ্রলোককে আবার যেহেতু কথাটা মনে করালাম, ব্যালেন্স রাখতে অবান্তরেও বলতে হবে। 

অনেক বছর আগে, সাত আট তো হবেই, অফিসফেরতা ভদ্রলোকের দোকানের সামনে উবার থেকে নেমেছি, একটা ফোনের চার্জ জিরো, অন্য ফোনটা উবার চড়ে সাবিত্রী পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। ভদ্রলোকের ফোন ধার নিয়ে অন্ততঃ বারোটা ফোন করে ফোনশুদ্ধু উবার ফেরত আনতে হয়েছিল।

বললাম, আপনি আমার যা উপকার করেছিলেন সেদিন, মনে আছে? উনি প্রত্যেকবারই বলেন, সেদিনও বললেন, আরে মানুষ তো আছেই মানুষের হেল্প করার জন্য। 

লিখতে লিখতে আরও একটা ঘটনা মনে পড়ল। সেটাও অবান্তরে লিখেছিলাম। ইনি একদিন আমাকে ভাড়াবাড়ি ছেড়ে বাড়ি কেনার পরামর্শ দিচ্ছিলেন। তাতে আমি 'ধুস্‌ অনেক ঝামেলা,' প্রতিক্রিয়া দিয়েছিলাম। ভদ্রলোক বলেছিলেন, ঝামেলা ছাড়া জীবন হয় না, দিদি। 

ঠিক। ঝামেলা ছাড়া জীবন হয় না, এখন জানি । এও মনে হয়, ঝামেলাহীন জীবন হয়তো বাঞ্ছনীয়ও নয়। হোয়াটেভার ডাজন'ট কিল ইউ, সত্যি সত্যিই মেকস ইউ স্ট্রংগার।

ভদ্রলোক বললেন, তখন তো আপনারা এই বাড়িতে থাকতেন না। 

থাকতাম না। আমরা তখন থাকতাম . . .

ডি ব্লকে। আমাদের পুরোনো বাড়ির এক্স্যাক্ট নম্বর বলে দিলেন ভদ্রলোক। 

আপনি জানেন? 

জানব না কেন। এ জানতে আর কী লাগে। 

আমি সর্বদা সবাইকে বলি, চোদ্দ বছর সি আর পার্কে আছি, অথচ কোনও প্রতিবেশীকে চিনি না। প্রতিবেশী বলে ব্যাপারটাই নেই। অন্ততঃ আমি প্রতিবেশী বলতে যে জিনিসটা দেখে শুনে জেনে বড় হয়েছি সেই প্রতিবেশী এখানে নেই। অল্প আফসোসের সঙ্গেই বলি। অথচ এই ভদ্রলোক আমাদের নাড়িনক্ষত্র জেনে বসে আছেন। আমার অভিধানে পারফেক্ট প্রতিবেশী। 

আমাদের ট্র্যাজেডি এটা নয় যে কেউ আমাদের খোঁজ রাখে না। আমাদের ট্র্যাজেডি হল আমরা জানতেই পারি না কত মানুষ আমাদের খোঁজ রাখে। 

সবাই বেশ খুশি হয়ে উঠেছে, আমগাছের ডাল থেকে কিশোরকুমার গাইছেন, 'রাত নশিলি মস্ত সমা হ্যায়/ আজ নশে মে সারা জাহাঁ হ্যাঁয়,' ভদ্রলোক চোখ বুজে হাঁটু নাচাতে নাচাতে বলে বসলেন, আমার দোকানটাকে আমি আমার ফ্যামিলির থেকেও বেশি ভালোবাসি।

ভদ্রলোকের স্ত্রী পাশেই বসে, একটু আগে ভিডিও কলে ছেলেকে ফোন করে কী খেয়েছ জিজ্ঞাসা করেছেন ভদ্রলোক নিজে। সবাই চুপ করে গেল। অস্বস্তিতে হতে পারে। আবার এও হতে পারে, সবাই চুপ করে সেই জিনিসটার কথা ভাবল যেটাকে তারা পাশে বসা ফ্যামিলির থেকেও বেশি ভালোবাসে। 

নাকতলার মায়ের বাপের বাড়ির দিকের এক বুদ্ধিমান গুরুজন অতিথি সম্বন্ধে যা বলেছিলেন পার্টি সম্পর্কেও সেই কথা খাটে। আইলেও ভালো, গেলেও ভালো।

আটানব্বই শতাংশ পার্টি নারকীয়। যে দু'শতাংশ ভালো - যেমন এই পার্টিটা - সেগুলোও শেষ হলে এক ধরণের স্বস্তিই হয়।

বারোটায় হ্যাপি নিউ ইয়ার-এর কোলাকুলি সেরে বারোটা দশে ঘরে ঢুকে দরজায় চাবি ঝুলিয়ে, জুতো, আংটি, দুল, টিপ খোলার হোমকামিং রুটিন সম্পন্ন করছি, রিংকু পিসির হ্যাপি নিউ ইয়ার হোয়াটসঅ্যাপে ঢুকে গেছে। রিংকু পিসি হলেন আমার পিসিশাশুড়ি যাকে বিয়ের দিন আমার সঙ্গে আলাপ করাতে গিয়ে অর্চিষ্মান নার্ভাস হয়ে বলেছিল, কুন্তলা ইনি আমার কাকিমা। কত লোক দেখলাম, পয়সা রোজগার করতে জানে, স্কুবা ডাইভিং করতে জানে, এমনকি ভূস্বর্গ ভয়ংকর-এর রিসেন্ট চিত্ররূপ ভালো লেগেছে এমন পাবলিকও বেরিয়েছে, কিন্তু বাঁচতে জানে যে আড়াই জনকে দেখেছি তাদের এক জন রিংকুপিসি।

যাই হোক, দুলটুল খুলতে খুলতে ভাবছি প্রোক্র্যাস্টিনেশন ছাড়ার গুপ্ত রেজলিউশনটার কথা মাথায় রাখলে এক্ষুনি পিসিকে হ্যাপি নিউ ইয়ার উত্তর দেওয়া উচিত এমন সময় অর্চিষ্মান বলল, দাঁড়াও আমার তোমার একটা নিউ ইয়ারের ছবি তুলে রাখি। বলে জুতোর বাক্সের ওপরের ডিম্বাকৃতি আয়নায় ফোন তাক করল।

রাজধানীর স্পিডে দুল পরলাম, টিপ পরলাম। ক্যামেরায় আসবে না জেনেও আংটি পরলাম। ক্যামেরা না জানলেও আমি তো জানব। বললাম, নাও, তোলো।

প্রথম ছবিতে আমি এদিকে অর্চিষ্মান ওদিকে তাকিয়ে, দ্বিতীয়টায় আমাকে যেমন দেখতে এক্স্যাক্টলি তেমন দেখতে লাগছে, তৃতীয় ছবিতে অর্চিষ্মানকে নাকি যেমন দেখতে তার থেকে এক কোটি গুণ খারাপ দেখতে লাগছে, চার নম্বর ছবিতে দু'জনেই আয়নার দিকে তাকিয়ে আছি, আমাকে আমার থেকে ভালো, অর্চিষ্মানকে অর্চিষ্মানের মতো দেখতে লাগছে। ওই ছবিটাই ফাইন্যাল হল। অর্চিষ্মানের এক হাত নিচে আমি দাঁড়িয়ে হাসছি। দু’হাজার পঁয়তাল্লিশের পয়লা জানুয়ারি গুগল ফোটোজের মেমোরিতে আসবে যখন দু'জনে মিলে অবাক হব। 

এত ছোট ছিলাম আমরা?

পয়লা জানুয়ারি সকাল হল। সারা দেশের মতো এবার দিল্লিতেও হুলিয়ে শীত। অর্চিষ্মান ঋতুপযোগী পোশাকআশাক পরে আর আমি মাঞ্জা দিয়েছি বলে সোয়েটার ছাড়া বুক ফুলিয়ে কফি শপে চললাম। মেলা গ্রাউন্ডের গেটের সামনে সোমনাথদার সাইকেল দোকানে থেমে চা খেলাম। বাড়ি থেকেও চা খেয়েই বেরিয়েছি, কিন্তু এই ঠাণ্ডায় পনেরো মিনিট চা কফি ছাড়া থাকার মানে হয় না। চা নিয়ে অটো স্ট্যান্ডের দিকে হাঁটতে হাঁটতে উল্টো ফুটে দেখলাম ভদ্রলোক ফুলের দোকান খুলছেন। রাতে আড়াইটে অবধি পার্টি চলেছে শুনতে পেয়েছি শুয়ে শুয়ে, তারপর উনি গাজিপুর মান্ডি থেকে ফুল এনে ন'টার সময় দোকান খুলছেন। ভালোবাসা ছাড়া হয় না। এদিকে ব্রহ্মদেব যাদব কুলচা পরাঠা মটরের ঠেলা খুলছে। ব্রহ্মদেবকে হ্যাপি নিউ ইয়ার বলে আমরা কফি শপে চলে এলাম।

কাজল প্যাসিভ অ্যাগ্রেসিভ হেসে বলল, ফাইন্যালি আপ আ হি গয়ে, ম্যাম।

নভেম্বরের পনেরো তারিখ থেকে কাজল যাদবের কৌতূহল আমি পয়লা জানুয়ারি কফিশপে আসব কি না। অর্চিষ্মানকে বলেছিলাম, মনে হয় কিছু ফ্রি দেবে। অর্চিষ্মান বলেছিল, ফ্রি-তে ফিডব্যাক নেবে। দু'জনেই একমত হয়েছিলাম, যেটাই হোক, ভালোই হবে, খারাপ না।

কাজলকে আমি পছন্দ করি। কাজ করে, প্রফেশনালিজম বজায় রেখে কথাবার্তাতেও উৎসাহী। বাবা মারা গেছেন, মা সরকারি চাকরি পেয়েছেন, ভাই আই টি আই করছে। ও এখন বারিস্তা, ইচ্ছে এয়ার হোস্টেস হওয়ার। আমাকে শাড়িতে দেখে একদিন বলেছিল, ম্যাম, স্পেশাল অকেশন হ্যায় কেয়া?

হাজব্যান্ড’স বার্থডে।

যে টেবিল থেকে উঠে অর্ডার দিতে গেছি, অর্চিষ্মান ল্যাপটপ খাটিয়ে বসে আছে। ওই টেবিলে মুখোমুখি বসে থাকা অবস্থায় কাজল আমাদের অন্ততঃ আড়াইশো বার দেখেছে আগে। এক কার্ডে কফি অর্ডার হয়েছে অন্ততঃ পঁচানব্বই বার। তবু কাজলের চোখ আমার টেবিলের দিকে গেল না। দোকানের কোণে তিনজন পলিতকেশ ভদ্রলোকের দিকে গেল।

বললাম, ওয়াইফ ম্যায় হুঁ। হাজব্যান্ড ইধার হ্যায়।

অর্চিষ্মানকে পাঁচ সেকেন্ড দেখল কাজল। তারপর আমার দিকে চোখ ফিরিয়ে জিজ্ঞাসা করল, লাভ ম্যারেজ?

যাই হোক, এই একত্রিশ তারিখ কাজল আমাকে বলল, ফাইন্যালি আপ আ হি গয়ে, ম্যাম। তারপর কোর্টাডোর সঙ্গে একটা ফর্ম আর পেন নিয়ে এল। অর্চিষ্মান মুচকি হাসল। দিলাম ফিডব্যাক। হাত খুলেই লিখলাম। আমার সামনেই সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়ল। কারণ ওরা আমাকে চেনে। আমি কী লিখতে পারি সে নিয়ে ওরা নিঃসংশয়। আই অ্যাম নাথিং ইফ নট প্রেডিক্টেবল।

যেটা প্রেডিক্ট করিনি সেটা হল পড়তে শুরু করার আগেই সবাই বলল, ওয়াও, আপকি রাইটিং ইজ সো পেয়ারি, ম্যাম।

যেন পূর্বজন্ম থেকে দমকা বাতাস।

কফিশপের টেবিলের উল্টোদিকে অর্চিষ্মানের ল্যাপটপ আর অর্চিষ্মান - আজকাল আমার প্রিয় ভিউ। একসঙ্গে জেগে থাকার একটা বিরাট অংশ আমরা ব্লু টোকাই-তে কাটাই। কাজ করব বলে যাই, গিয়ে ইউটিউব দেখি আর আড়ি পাতি। সবটাই ঐচ্ছিক নয় - লোকে কিছু চেঁচিয়ে কথা বলে, বস্‌। ইচ্ছে বা অনিচ্ছেয় সেগুলো শুনে শুনে আমরা চ্যাট বিনিময় করি। বাইরে থেকে দেখলে দুটো লোক গম্ভীর মুখে ইউটিউব দেখছে আর টাইপ করছে, আসলে দু'জনের মধ্যে অবিরাম ধারাবিবরণী ও জাজমেন্ট পাস চলছে।

পয়লা জানুয়ারি আমাদের পাশের টেবিলে একটি বাবা মা ছেলে মেয়ের পরিবার ব্রাঞ্চ করছিল। বাবা মায়ের জিম করা শরীর, পরনে অ্যাথলেজার পোশাকআশাক। দু'জনেরই বিদেশি ইউনিভার্সিটির লোগো দেওয়া সোয়েটশার্ট। স্টিরিওটাইপ এমনি এমনি স্টিরিওটাইপ হয় না। বোঝা গেল ব্রাঞ্চটি মোটিভেশনাল। বাবা মা মিলে ছেলেমেয়েকে পজিটিভ থিংকিং, হাউ টু বি উইনার, মেডিটেশন, ডিসিপ্লিন, ফেলিওর ইজ নট অ্যান অপশন বোঝালেন। এ সব দোকানপাট এমনিই সেলফ হেল্প, প্রোডাক্টিভিটি আর হাউ টু-র চারণক্ষেত্র। তবু আমি আর অর্চিষ্মান শিউরে শিউরে উঠছিলাম। কারণ প্রাপ্তবয়স্করা নিজেদের ছাগল আড়ে কাটবে না বহরে কাটবে আমরা কেয়ার করি না। কিন্তু বালকবালিকাদের ব্যাপারে একটু ভেবেচিন্তে এগোনো দরকার বলেই মনে হয়। বাবামায়ের ইনটেনশন ভালো নিশ্চয়, কুসন্তান যদি বা হয় কু-বাবামা কদাচ নয়, অন্ততঃ যতক্ষণ না সে সব সন্তান থেরাপিস্টের চেম্বারে উপস্থিত হচ্ছে। যাই হোক, আমার ব্যক্তিগত মতে উইনার বানানোর থেকে লুজার বানানো বেশি দরকার। হাউ টু যদি জানতেই হয়, হাউ টু বি হেরো জানা উচিত। শুধু জিততে শিখলে যখন হার শুরু হবে, যা হবেই, উইনাররা কেঁদে কূল পাবে না। যারা হারতে জানে সে বিপদে পড়বে না। 

তাছাড়া একটা পার্সপেকটিভের ব্যাপারও তো আছে রে বাবা। অনির্বাণ ভট্টাচার্য একটা ইন্টারভিউতে বলছিলেন, আজকাল প্রত্যেকের জীবন একটা প্রোজেক্ট হয়ে গেছে। আমি একমত। জীবনকে একটা ভেজা গামছার স্তরে নামিয়ে আনা - হাতে পেলেই নিংড়ে খটখটে করে নিতে হবে - দুঃখজনক। তাতে জীবনের চেহারাটাও তো খুব সুবিধের দাঁড়ায় বলে মনে হয় না। এ প্রসঙ্গে পেসোয়ার একটা প্যারা মনে পড়ল। 

Why is art beautiful? Because it is useless. Why is life ugly? Because it is all aims and purposes and intentions. All its roads are intended to go from A to B. If only we could be given a road built between a place that no one ever leaves and another that no one ever goes to! If only someone were to dedicate their life to building a road beginning in the middle of a field and ending in the middle of another, and which, if extended, would be useful, but which remained sublimely, simply, the middle of a road. 

The beauty of ruins? The fact that they were no longer of any use. 
                                                                                        --- Fernando Pessoa, The Book of Disquiet

মোটিভেটেড পরিবার উঠে চলে যান। আবার অন্য কেউ এসে বসেন। আমি অর্চিষ্মানকে বা অর্চিষ্মান আমাকে লেখে, খিদে পাচ্ছে না একটু একটু? পাশেই নোমাড। ফ্যান্টাস্টিক পিৎজা। যেটা বাজে সেটা হচ্ছে ওঁরা হাফ অ্যান্ড হাফ করেন না। নিলে পুরোটা ভেজ নিতে হবে নয় পুরোটা নন-ভেজ। অর্চিষ্মান স্যাক্রিফাইস দিয়ে বছর শুরু করে। মাশরুম উইথ ট্রুফল অয়েল অর্ডার করা হয়। ও চিকেন বারিটো বোল না কী একটা খায়। খেয়ে আবার কফি শপে ঢুকি। প্রসেনজিৎ নববর্ষের ছুটি নিয়েছে, বাড়ি যাওয়ার তাড়া নেই। যে সব কাজ শেষ না করে যুদ্ধক্ষেত্র ছাড়ব না ঠিক করেছিলাম, একটাও শেষ হয় না। তবু, সারাদিন একে অপরের মুখোমুখি বসে থাকা হয়। লৌকিকতার এনার্জিক্ষয় এড়িয়ে উদযাপনের অবজার্ভার হয়ে ওঠা যায়। আশেপাশের হাসির কথা শুনে একে অপরকে হাসির ইমোজি পাঠানো যায়। আমার চালাক টিপ্পনি পড়ে অর্চিষ্মান তিনটে অশ্রুময় অট্টহাসি - তাও আবার কাত হওয়া - পাঠায়। মুখ তুলে দেখি ওর রিয়েল মুখ হাতপা বেঁধে কাঁটার চাবুক দিয়ে পেটালে যেমন হতে পারে ঠিক তেমন। 

পয়েন্ট আউট করতে অর্চিষ্মান মারাত্মক কনফিউজড। তুমি যখন যা ইমোজি পাঠাও তার সঙ্গে তোমার সেই মুহূর্তে মুখের মিল থাকে নাকি? আমি বললাম, অবিকল না থাকলেও একেবারে উল্টো নিশ্চয় হয় না। মনে করে রাখলাম। পরের বার ইমোজি পাঠানোর সময় নিজের ওই মুহূর্তের মুখ খেয়াল করব। অনলাইনের মানুষ মিথ্যে হয় জানতাম, ইমোজিও যে ডাহা মিথ্যে শুনে অল্প দুঃখই হল। 

তিন্নি আমার রেজলিউশন জানতে চেয়েছিল। লিখেছিলাম
 
১। ভয় পাব না 
...
...
...
১০০। ভয় পাব না

এটা একটা রেজলিউশন যেমন হতে পারে তেমনি জীবনটাকে প্রোজেক্ট না করে তোলার রেজলিউশনও নেওয়া যেতে পারে। সাংস্কৃতিক ও বৌদ্ধিক বনসাইপনা ঘোচানোর আইডিয়াটাও মন্দ না। চুয়াল্লিশ বছর বয়সে ফেলুদা ব্যোমকেশ নিয়ে এতটা হার্ড ড্রাইভ ভর্তি রাখতে আজকাল লজ্জাই করে। 

২০২৫-এর জন্য অফুরান শুভেচ্ছা, ভালোবাসা রইল। আপনি যা ভাবছেন বা বিশ্বাস করছেন তার থেকে অনেক বেশি মানুষ, আপনাকে অনেক বেশি ভালোবাসে, দিবসরজনী ভালোবাসে - এ সত্যি সারা বছর স্মরণে থাক। 

হ্যাপি নিউ ইয়ার। 

Comments

  1. Happy New Year! ki jompesh kuasha charidike, bolun?

    ReplyDelete
    Replies
    1. হ্যাপি নিউ ইয়ার, রণদীপ!!! আরে আমি আজ সকাল ন'টায় বেরিয়ে মেলা গ্রাউন্ডটাকে ভালো করে দেখতে পাচ্ছিলাম না। মনে হচ্ছিল ভোর চারটে। বেশ গা ছেড়ে ঠাণ্ডা পড়েছে। আমার দারুণ মজা লাগছে। অর্চিষ্মান কেঁদে ফেলার আগের স্টেজ।

      নতুন বছর খুব ভালো কাটুক তোমার আর তোমার প্রিয়জনদের।

      Delete
  2. প্রদীপ্তJanuary 3, 2025 at 4:53 PM

    চমৎকার শুরু হয়েছে ২০২৫ বোঝাই যাচ্ছে লেখাটা পড়ে। বাকিদিন গুলোও এমন চমৎকার কাটুক। অন্তত বেশীরভাগ দিন এমন বাকি কয়েকটাদিন একটু কম চমৎকার।
    শেষের কথাটা স্মরণে রাখতে পারি যেন।

    ReplyDelete
    Replies
    1. সেটাই।চমৎকার আর কম চমৎকার মিলিয়েমিশিয়েই কাটূক। শেষ লাইনটা নিজেও মনে রাখতে পারি না। রাখা দরকার।

      Delete
  3. ওয়াও, আপকি রাইটিং ইজ সো পেয়ারি, ম্যাম 😀

    এই পোস্টটা থেকে অনেক কিছু ভালো ভাবনা পেলাম।চমৎকার কাটুক আপনার নতুন বছর।

    ReplyDelete
    Replies
    1. নববর্ষের শুভেচ্ছা, বৈজয়ন্তী। আপনারাও ভালো থাকুন।

      Delete
  4. "আপকি রাইটিং ইজ সো পেয়ারি, ম্যাম" - এইটা দেখে মনে পড়লো, স্কুলের একদম ছোট ক্লাসে, যখন হ্যান্ডরাইটিং বলে একটা পেপার থাকতো, সেই সময় ওটাতেই আমি সবচেয়ে কম নম্বরটা পেতাম।

    ভারী সুন্দর কথা দিয়ে শেষ করেছেন লেখাটা।

    ২০২৫ আপনাদেরও আনন্দে কাটুক।

    ReplyDelete
    Replies
    1. হাতের লেখা ব্যাপারটা আমাকে ফ্যাসিনেট করে, রাজর্ষি। এই জিনিসটা নিয়ে পাগল করে রেখেছিল ছোটবেলায়, বাড়িতে, স্কুলে। অ্যাবসলিউটলি, অনর্থক প্রমাণিত হয়েছে। ২০২৫ ভালো কাটুক।

      Delete

Post a Comment