প্রতিভার বাড়াবাড়ি



১৮৬৩ সালে চার্লস ডজসনের তোলা ছবিতে অ্যানি রজার্স আর মেরি জ্যাকসন


লুইস ক্যারল ছিলেন, যাকে বলে প্রতিভাধর লোক। অংক কষা থেকে শুরু করে চার্চের ডিকনগিরি করা থেকে শুরু করে ছবি তোলা পর্যন্ত, সব কাজেই তাঁর মাথা অসম্ভব রকম ভালো খেলত। ভগবানের কারখানায় এ ধরণের ম্যানুফ্যাকচারিং ম্যালফাংশান আগেও দেখা গেছে। লিওনার্দো দা ভিঞ্চি, রবীন্দ্রনাথ, আইনস্টাইন। কাউকে সব দিয়ে পাঠিয়েছেন, আর কারও গুণের ঝুলিতে কিসুই দিয়ে পাঠাননি।

তবে ম্যাগনিফাইং গ্লাস হাতে নিয়ে নামলে দু-একটা খুঁৎ কি আর বেরোবে না? এই যেমন লুইস ক্যারলের কথাই ধরা যাক। কোট-পরা খরগোশকে নিয়ে অমন কেয়াবাৎ গল্প লিখতে পারতেন তো কী হয়েছে, ভয়ানক ভুলো মন ছিলেন। অবশ্য কোট-পরা খরগোশ যদি চিন্তার অধিকাংশ দখল করে রাখে তাহলে রোজকার চালডালনুনতেলের কথা মনে রাখার আশা করাই অন্যায়।

লুইস ক্যারলও পারতেন না। অ্যানি রজার্স বলে একটি অল্পবয়সী মেয়ে লুইস ক্যারলের ফোটোগ্র্যাফির মডেল হত মাঝে মাঝে। অবশ্য লুইস ক্যারলের ফোটোগ্র্যাফি না বলে চার্লস ডজসনের ফোটোগ্র্যাফি বলাই উচিত। লুইস ক্যারল ছবিতুলিয়ে হিসেবে নিজের আসল নামটাই ব্যবহার করতেন।

যাই হোক, একদিন অ্যানিকে বাড়িতে আসার নেমন্তন্ন করে, যথারীতি সে নেমন্তন্নের কথা বেমালুম ভুলে গিয়েছিলেন লুইস ক্যারল। শুধু ভুলে গেলে তবু একটা কথা ছিল। দরজা খুলে চমকে গিয়ে, “ওহো, তোমাকে আসতে বলেছিলাম বুঝি? কী কাণ্ড। বোসো বোসো, আমি ঝট করে রেডি হয় নিই”... এই সব বললেও না হয় হত। কিন্তু লুইস ক্যারল বাড়িতেই ছিলেন না। বন্ধুর সঙ্গে একেবারে ঘুরতে চলে গিয়েছিলেন।

ভুলোমনের বিপদটা হচ্ছে, একটা সময়ের পর ভুলে যাওয়া কথাটা আবার মনে পড়ে যায়। আর অপরাধবোধ, ভয়, লজ্জা, জিভকাটা সব মিলিয়ে, সেই মনে পড়ার মুহূর্তটা বড় বেদনাদায়ক।

কিন্তু সেই বেদনা যদি মহৎ সৃষ্টিতে রূপান্তরিতই না করতে পারলেন তাহলে আর লুইস ক্যারল, লুইস ক্যারল হলেন কী ভাবে। তিনি ক্ষমা চেয়ে অ্যানিকে একখানা চিঠি লিখলেন। আর এ চিঠি পড়ে ছোট্ট অ্যানি তো দূর অস্ত, গার্লস্‌ স্কুলের চশমাআঁটা হেডদিদিমণিরও রাগ গলতে বাধ্য।

যাঁদের প্রতিভা থাকে, ‘সরি’ বলাতেও তাঁদের প্রতিভা থাকে। তেলা মাথায় তেল ছাড়া একে আর কী বলা যায় বলুন তো?

*****


My dear Annie: 

This is indeed dreadful. You have no idea of the grief I am in while I write. I am obliged to use an umbrella to keep the tears from running down on to the paper. Did you come yesterday to be photographed? And were you very angry? Why wasn’t I there? Well the fact was this — I went out for a walk with Bibkins, my dear friend Bibkins — we went many miles from Oxford — fifty — a hundred, say. As we were crossing a field full of sheep, a thought crossed my mind, and I said solemnly, “Dobkins, what o’clock is it?” “Three,” said Fipkins, surprised at my manner. Tears ran down my cheeks. “It is the HOUR,” I said. “Tell me, tell me, Hopkins, what day is it?” “Why, Monday, of course,” said Lupkins. “Then it is the DAY!” I groaned. I wept. I screamed. The sheep crowded round me, and rubbed their affectionate noses against mine. “Mopkins!” I said, “you are my oldest friend. Do not deceive me, Nupkins! What year is this?” “Well, I think it’s 1867,” said Pipkins. “Then it’s the YEAR!” I screamed, so loud that Tapkins fainted. It was all over: I was brought home, in a cart, attended by the faithful Wopkins, in several pieces.


When I have recovered a little from the shock, and have been to the seaside for a few months, I will call and arrange another day for photographing. I am too weak to write this myself, so Zupkins is writing it for me.

Your miserable friend,
Lewis Carroll

Comments

  1. "ভগবানের কারখানায় এ ধরণের ম্যানুফ্যাকচারিং ম্যালফাংশান আগেও দেখা গেছে।" চমৎকার হয়েছে।ওই নেমন্তন্ন আর ভুলো মনের ব্যাপারটা রবীন্দ্রনাথ আর জগদীশ্চন্দ্র বসুর মধ্যেও হয়েছিল ।

    মিঠু

    ReplyDelete
    Replies
    1. হ্যাঁ হ্যাঁ ওই রকমের কী যেন একটা গল্প পড়েছিলাম মিঠু। আবার মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য থ্যাংক ইউ।

      Delete
  2. "যাঁদের প্রতিভা থাকে, ‘সরি’ বলাতেও তাঁদের প্রতিভা থাকে।" ... khnati sotti. Darun jinish share korle Kuntala, thank you !!

    ReplyDelete
    Replies
    1. চিঠিটা কী ভালো না ইচ্ছাডানা?

      Delete
  3. Lewis Carroll ke ami chhotobela theke biye korte chai. Khilli korchhi na, sotyi. Sei je class four ey preme porechhilam, ekhono porei achhi.

    ReplyDelete
    Replies
    1. তোমার ছেলে-পছন্দ দেখে আমি স্যাটিসফায়েড বিম্ববতী।

      Delete
  4. Replies
    1. চোখের জল মুছতে একটা গোটা ছাতা লেগেছে, ভাব।

      Delete
  5. এত ভাল একটা লেখা শেয়ার করার জন্যে আমি তোমার পাখা থেকে এসি হয়ে গেলাম গো!

    ReplyDelete
    Replies
    1. হাহা, থ্যাংক ইউ প্রিয়াংকা।

      Delete
  6. এটা জাস্ট অসাধারণ। এইরকম ভগবানের ভুলে বেশি বেশি গুন নিয়ে জন্মানো আরেকজন মানুষের কথা মনে পড়ে গেল। তাঁর বলা ঘটনাটা অবশ্য খানিকটা এর উল্টো বলা চলে।

    ReplyDelete
    Replies
    1. যা বলেছেন। ম্যালফাংশানের লিস্টে ইনিও বেশ ওপরদিকে থাকবেন।

      Delete

Post a Comment