বাঘের মুখে/ পর্ব ২





সুলতানকে দেখার পর আমার পার্সপেকটিভটাই কেমন বদলে গেল। বাঁদরগুলোকে নিতান্তই বাঁদুরে মনে হতে লাগল, সম্বরগুলোর কেমন যেন গরু-গরু হাবভাব, ময়ূর ভালো, কিন্তু এতগুলো একসঙ্গে দেখলে তার আর মাহাত্ম্য থাকে না, তাই না গো?

সোজা কথায় বাঘ ছাড়া সবই তখন আমার চোখে নিরামিষ ঠেকছে।

আমরা চোখ খোলা রেখে চললাম। কিন্তু বাঘ আর দেখা গেল না। বাঘের অভাব ঘোচাতে ড্রাইভারজী তাঁর গল্পের ঝুলি খুলে বসলেন। রণথম্ভোরের বাঘ একসময় প্রায় নিশ্চিহ্ন হতে বসেছিল পোচারদের কল্যাণে। এখন প্রশাসন নড়েচড়ে বসায় পরিস্থিতি ঘুরেছে। বনকর্মীর সংখ্যা বেড়েছে, বাঘ বেড়েছে, বেড়েছে ফরেনার ভ্রমণার্থী। আমরা জানতে চাইলাম রণথম্ভোরের বাঘ কখনও মানুষকে আক্রমণ করেছে কি না। ড্রাইভারজী জানালেন, মোটে দু’বার। একবার বনে কিছু একটা কাজ চলছিল। মজুররা সব কাজ করতে এসে দেখে একটু দূরে ঝোপের মধ্যে বাঘ বসে বিশ্রাম নিচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই তারা কাজ করতে অস্বীকার করল। তখন কন্ট্রাকটর বললেন, ‘আরে তুম সব ইধার রুকো, ম্যায় উসকো ভাগাকে আতা হুঁ।’

ক্যান্টরশুদ্ধু লোকের চোয়াল মেঝেতে ঠেকে গেল। আমার মুখ থেকে তো সশব্দে বেরিয়েই গেল, ‘ছাগল নাকি?’

অর্চিষ্মান এমন বীতশ্রদ্ধ মুখ করে আমার দিকে তাকাল যেন আমি একটি আস্ত ইনসেনসিটিভ, মৃত মানুষকে কুকথা বলছি। আমি তড়িঘড়ি বললাম, ‘আরে আমি ভদ্রলোককে ছাগল বলিনি। আমি বলতে চেয়েছি উনি কি বাঘটাকে ছাগল ভেবেছিলেন যে ‘ভাগাতে’ গিয়েছিলেন?’

দ্বিতীয় দুর্ঘটনাটা ঘটেছিল সংরক্ষিত অঞ্চলের সীমানার বাইরে। বাঘেদের নিয়ে এই একটা সমস্যা। মানুষ কেমন লক্ষ্মণরেখা টেনে দিয়েছে ওদের জন্য, রাজত্ব করার জন্য সাড়ে তিনশো বর্গ কিলোমিটারেরও বেশি জায়গা নিঃশর্ত লিখে দিয়েছে ওদের নামে, তবু ওরা মাঝে মাঝেই সে সীমারেখার বাইরে বেরিয়ে আসে। পরদিন সকালে অন্য একজন ড্রাইভার ভাইসাব একটি ছোট পুকুর দেখিয়ে বলেছিলেন, ওঁর বত্রিশ বছরের জীবনে ওই পুকুরের ধারেই নাকি উনি সবথেকে বেশিবার বাঘের দর্শন পেয়েছেন। উদাস মুখে বসে বসে ল্যাজ নাড়িয়ে মাছি মারছে। এদিকে সংরক্ষণ উদ্যানের সীমানা খাতায়কলমে শুরু হয়েছে সেই পুকুরের অন্তত হাফ মাইল দূর থেকে। উদ্যানের ভেতর পুকুরেরও অভাব নেই, সে সব পুকুরের জলও সমান ঠাণ্ডা, তাদের ধারেও সমান নধর সম্বরেরা চরে বেড়ায়। তবু বাঘমামার ওই বাইরের এঁদো পুকুরটিই পছন্দ। যাই হোক, এই দ্বিতীয় বাঘটি সীমানা থেকে বেরিয়ে কাছের একটি জনবসতিতে চলে গিয়েছিল। মানুষ খুন করা তার উদ্দেশ্য ছিল না, সে গিয়েছিল গরুমোষ কিছু পাওয়া যায় কি না দেখতে। একজন গ্রামবাসী জানোয়ার পাহারা দিচ্ছিলেন, তাঁর প্রাণটি বেঘোরে গিয়েছিল।

আমাদের ক্যান্টর ততক্ষণে এসে পৌঁছেছে জোন টু-র ‘বেস্ট’ স্পটে। আপাদমস্তক ধূসর একটা জঙ্গলে হঠাৎ লাল পলাশের এমন মেলা দেখে চোখ কেমন ধাঁধিয়ে যায়। শুনলাম গরমকালে এখানেই বাঘ দেখতে পাওয়ার সম্ভাবনা সবথেকে বেশি। আশেপাশে প্রচুর জিপ, ক্যান্টর অপেক্ষা করছিল। জিপ নেওয়ার এটি আরেকটি সুবিধে। আপনি যতক্ষণ খুশি জলের ধারে বসে থাকতে পারেন। কেউ তাড়া দেবে না। আমরা খানিকক্ষণ দাঁড়ালাম। দারুণ লাগছিল। পাহাড়ের ওপারে সূর্য তখন পাটে বসবে বসবে করছে। গরম আছে, কিন্তু হাওয়াও কম নেই। হাওয়া, ফুল, জল, জলে ঝাঁপাঝাঁপি করা সম্বরছানা দেখে মনটা ভালো হয়ে গেল।



কিন্তু বাঘ এল না।

আলো কমে আসছিল। ড্রাইভারজীও তাড়া দিচ্ছিলেন। হয়তো সুলতান এখনও শুয়ে আছে সেই পাথরের খাঁজে। ওকেই না হয় আরেকবার দেখে ফিরে যাব। এইসব ভেবে সকলে মিলে ফেরার সিদ্ধান্ত নেওয়া হল।

অতদূর যেতে হল না। মাঝপথে পৌঁছতে না পৌঁছতেই ড্রাইভারজীর হাত হঠাৎ শূন্যে হাওয়ায়। কী ব্যাপার, এখানে তো কোনও জিপ/ক্যান্টর দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে না, তার মানে বাঘও নিশ্চয় নেই?

কল হ্যায়।

কল?

হাঁ। শুনাই নহি দে রহা?

ট্যাঁ ট্যাঁ করে একটা কী যেন চেঁচাচ্ছে। তারস্বরে।

টাইগার হ্যায় আসপাস।

বলে কী? ক্যান্টরশুদ্ধু লোক দাঁড়িয়ে উঠেছে। সূচীভেদ্য নীরবতা। এমন সময় বিচ্ছু শিশুদের দিদিমা হঠাৎ চিৎকার করে উঠলেন, ‘তেয়াঁ ছে!’

কী আশ্চর্য, এবার আর আমার দেখতে দেরি হল না। দিদিমার চিৎকারের সঙ্গে সঙ্গে আমার চোখ চলে গেল। ডানদিকের বনে কী একটা নড়ছে। ধূসর ডালপালার ফাঁকে ফাঁকে ঝিকিয়ে উঠছে তার উজ্জ্বল হলুদকালো ডোরা। সুলতানের ঘুম ভেঙে গেছে। সুলতান চলেছে জলের সন্ধানে। সুলতানের ঘাড়ের দুটো হাড় পালা করে উঠছে আর নামছে। বেশি না, এই হাত চল্লিশ দূরে।

ক্যান্টরের ওপর যে কী শুরু হল সে ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। গুজরাতি ভয় পেয়ে ওড়িয়াকে জাপটে ধরল, ওড়িয়া বাঙালির পা পাড়িয়ে দিল, বাঙালি গিয়ে পড়ল মারাঠির ঘাড়ে, মারাঠি আধেক ব্যথা আধেক উত্তেজনায় চেঁচিয়ে উঠল, ‘আ-আ-ই-ই-ই...’

ড্রাইভারজী এদিকে ক্যান্টর ব্যাক করাতে শুরু করেছেন। সুলতানকে যতক্ষণ নজরে রাখা যায়। ক্যান্টর মাঝগঙ্গায় নৌকোর মতো দুলছে। অর্চিষ্মান আমার হাত শক্ত করে ধরে রেখেছে, গলা ভয়ংকর সিরিয়াস। ‘কুন্তলা, এক্সাইটেড হয়ে বাইরে পড়ে যেও না।’ আমাদের পেছনে একটা ক্যান্টর, আর একটা জিপ এসে জুটেছে ততক্ষণে। তাদের ছাদেও সমান পাগলামি শুরু হয়েছে। রেলিঙের ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়েছে নানারঙের মানুষ। বন্দুকের মতো বাগিয়ে ধরেছে লম্বাবেঁটে ক্যামেরার লেন্স।

সুলতান দিক চেঞ্জ করল। সুলতান ওপর দিকে উঠতে শুরু করেছে। আমাদের দিকে।

সত্যি বলব? ভয় লাগে। সাংঘাতিক ভয়। কারণ কাছ থেকে দেখলে বোঝা যায় যে আমি একটা পিঁপড়েকে যেমন টিপে মারতে পারি, ও আমার ঘাড়ে একটা থাবা মেরে আমাকে তেমনি সাবাড় করতে পারে। আপনি যদি ধর্মেন্দ্র না হন, তাহলে ও জিনিসের নাগাল থেকে বেঁচে ফেরার সম্ভাবনা নেগেটিভ।

সুলতান নিজের গতি একটুও না কমিয়ে (বা বাড়িয়ে, কী ভাগ্যিস) রাস্তায় উঠে এল। আমাদের ক্যান্টরের পাশ দিয়ে নয়, আমাদের পরের ক্যান্টরটার পাশ দিয়ে। একটু থেমে, সতর্কভাবে মাথা ঘুরিয়ে একবার জরিপ করে নিল পরিস্থিতি, শত্রুর অবস্থান ও সামর্থ্য, তারপর ক্যান্টর আর জিপের মাঝখানের খালি জায়গাটা দিয়ে সুলতানের মতোই হেঁটে গিয়ে ওদিকের বনে অদৃশ্য হয়ে গেল।



গেটের বাইরে বেরিয়ে এসে অপেক্ষারত চারপাঁচটা জিপ ও ক্যান্টরের জটলাকে উদ্দেশ্য করে আমাদের ড্রাইভারজী হাঁক পাড়লেন, ‘আরে গণপত, সাইটিং হুয়া কেয়া?’ বুদ্ধিমান লোক। খবর কীভাবে ছড়াতে হয় জানেন। বোকার মতো, ‘বাঘ দেখেছি, বাঘ দেখেছি’ বলে চেঁচান না। জানেন তাতে মর্যাদাক্ষুণ্ণ হয়। ঘুরিয়ে জিজ্ঞাসা করতে হয়, ‘আপনিও কি লেখেনটেখেন নাকি?’

অন্যদিক থেকে প্রশ্নের পর প্রশ্ন ধেয়ে এল আমাদের দিকে। বাঘ দেখেননি তাঁরা। বাঘের বদলে আমাদের দেখছেন। ‘ডিড ইউ সি ইট?’

‘আরে দেখা না। হামারা ক্যান্টর কে একদম পা-আ-আ-স সে গয়া। যাতে যাতে মুণ্ডি ঘুমাকে হামারা তরফ দেখা ভি। দুম ভি হিলায়া।’ আমরা সমর্থনে সজোরে মাথা নাড়লাম। উনি যদি বলতেন ‘হাই ফাইভ ভি দিয়া’ তাহলেও মাথা নাড়তাম। কারণ চল্লিশ হাত দূর থেকে বন্য বাঘ দেখার বন্ডিং তখন আমাদের বেঁধে ফেলেছে। আমাদের মধ্যে আর ভেদাভেদ নেই। রোগা-মোটা, ফর্সা-কালো, শিবাজী-নেতাজী, জুম লেন্স-কিট লেন্স---কিচ্ছু না। এখন শুধু ওরা আর আমরা। ওরা যাদের সাইটিং হয়নি, আমরা যাদের সাইটিং হয়েছে। ওরা যারা অভাগা, আমরা যারা ভাগ্যবান। ওরা যারা কিস্যু পায়নি, আর আমরা যাদের মাথায় দক্ষিণরায় স্বয়ং সস্নেহ থাবা রেখেছেন।

*****


এর পর আর কিছু বলার থাকে না, তবু বলতে হয়। কারণ পরের দিন ভোরে আমাদের আবার সাফারির টিকিট কাটা আছে। আমরা ভোর ভোর উঠে গলায় ক্যামেরা ঝুলিয়ে রেডি হয়ে বসে আছি, কিন্তু ক্যান্টর আসার আগেই বৃষ্টি এসে গেল। ওরে বাবা সে কী বৃষ্টি। আমি আশা ছেড়ে রিসেপশনের সোফায় ঘাড় হেলিয়ে ঘুমিয়েই পড়লাম। কিছুক্ষণ পর দেখি অর্চিষ্মান ঠেলছে, ‘ওঠো ওঠো ক্যান্টর এসে গেছে।’ ধড়মড়িয়ে উঠে দেখি ক্যান্টর এসেছে ঠিকই, ক্যান্টরের মাথায় বসে আছে হাতে গোনা পাঁচটা লোক। সেকী, কাল বিকেলে তো জায়গাই হচ্ছিল না প্রায়। দু’ সেকেন্ড পর ঘুম খানিকটা কাটতেই অবশ্য কারণটা পরিষ্কার হয়ে গেল। বৃষ্টি তো কমেইনি, বরং বেড়েছে। তোড়ে সাদা হয়ে গেছে চারপাশ। আমি হাঁ করে অর্চিষ্মানের দিকে তাকাতেই অর্চিষ্মান বলল, ‘ম্যানেজার বলছে ক্যান্সেল করে দুপুরেরটায় যাওয়া যাবে না। ক্যান্সেল মানে একেবারে ক্যান্সেল।’

আমরা ক্যান্টরে উঠে পড়লাম। ব্যাগ থেকে কে. সি. পাল বার করে মেলে ধরলাম ঢালের মতো করে। সাইটিং-এর প্রশ্ন নেই কাজেই নিয়মরক্ষা সাফারিতে ক্যান্টর ছুটে চলল ঝড়ের বেগে। জলের ছাঁট আর ঝোড়ো হাওয়ার যুগ্ম আক্রমণে বেয়ে কে. সি. পাল প্রায় উড়ে যায় যায়, রাস্তার দু’পাশের গাছের ডাল ঝপাং ঝপাং ছাতায় বাড়ি মারতে লাগল। অর্চিষ্মান ছাতার হ্যান্ডেল ধরে রইল শক্ত করে, আমি একদিকের কাপড়টা ধরে প্রায় ঝুলে পড়লাম, যাতে ছাতা উল্টে গিয়ে ভেঙে না যায়। সত্যি বলছি, আমি চিরকাল মহেন্দ্র দত্ত ক্যাম্পের, অর্চিষ্মানের কে. সি. পালের প্রতি আমার একরকম নাকউঁচু তাচ্ছিল্যের ভাবই ছিল, কিন্তু শনিবারের পর আমি কে. সি. পালের ফ্যান হয়ে গেছি। ভেতো বাঙালি হয়ে রাজপুত ঝড়বৃষ্টির সঙ্গে কী ফাইটটাই না দিল। আমাদের সর্বাঙ্গ যদিও ভিজে গোবর হয়ে গিয়েছিল, কিন্তু দুটো মাথা আর ক্যামেরার ব্যাগটাকে কে. সি. পাল রক্ষা করেছে, নিজের প্রাণসংশয় করেও।

জঙ্গলে ঢোকার পরই কিন্তু বৃষ্টিটা ধরে গেল। আকাশ পরিষ্কার হয়ে আলোও ফুটল। আমরা তখন খালি বলছি, ‘দেখেছ, যদি না আসতাম, কী আফসোসটাই না হত।’ যারা আসেনি তাদের উদ্দেশ্যে একটু হাহাহিহিও হল। চিকেন-হার্টেড কোথাকার। আর তারপর যেটা হল সেটা আপনারা বিশ্বাস করবেন না।

ব্যাঘ্রগর্জন। একবার, দু’বার, তিনবার। চারবার। পাঁচবার।

আমাদের ক্যান্টরটা সবে একটু দম নিচ্ছিল, গাইডজী মাথাটাথা ঝাড়ছিলেন, ড্রাইভারজী গায়ের জামাটামা নিংড়োচ্ছিলেন। তিনি ‘আরে ত্তেরি...’ বলে দিলেন ছুট। সদ্য বৃষ্টি থামা সকালের আলোয় দেখলাম দূরে রক্তজমানো হুঙ্কার লক্ষ্য করে রণথম্ভোরের উঁচুনিচু প্রান্তর জুড়ে সারি দিয়ে ক্যান্টর আর জিপ ছুটে চলেছে, শব্দভেদী বাণের মতো। সে দৃশ্য আমার অনেকদিন চোখে লেগে থাকবে।

সেই সকালে আমরা বাঘ দেখতে পাইনি, খালি হুঙ্কার শোনাই সার হয়েছিল। আমাদের গাইড বললেন, ওটা নাকি টি-নাইনটিন নামক বাঘিনীর হুঙ্কার। টি-নাইনটিনের মাসদুয়েক আগেই চারচারটে ছানা হয়েছে, আর তার সুবাদে আন্তর্জাতিক ব্যাঘ্রমহলে রণথম্ভোরের রেপুটেশনও বেড়েছে ঝপাং করে অনেকটা। এক বিরাট তালাওয়ের পারে বাঘের আশায় বসে বসে আমরা ভাবতে লাগলাম, হুঙ্কারের অর্থ কী হতে পারে। হয়তো টি-নাইনটিন ছানাদের শাসন করছে। ছানারা হয়তো ঘ্যানঘ্যান করে বলছে, ‘চল না মা, দিঘির ওপারেই তো ঝাঁক বেঁধে হাঁদাগুলো দাঁড়িয়ে আছে, থাবড়া মেরে একটাকে ধরে নিয়ে আসি। বৃষ্টির দিনে খাওয়াটা জমবে ভালো।’ মা হয়তো তখন ছানার মাথায় একটা আলতো চাপড় মেরে বলছেন, ‘ছিঃ ও কথা বলতে নেই। ওরা ভালো, ওরা বিনেপয়সায় আমাদের ছবি তুলে দেয়। ওদের মারলে শেষে সেলফি তুলে কাটাতে হবে সারাজীবন। সেটা কি ভালো হবে?’ তারপর হয়তো বলছেন, দু’পেয়েগুলোর সামনে যাওয়ার আগে যেন ছানারা যেন চুলটুল ভালো করে আঁচড়ে নেয়, ছবি ভালো উঠবে।

*****


বাঘের গল্প এখানেই শেষ। এরপর যেটুকু বাকি থাকে সে গল্পটা রণথম্ভোর দুর্গের। যে দুর্গটা সেদিন বিকেলে আমরা দেখতে গিয়েছিলাম। নাগবংশের উত্তরসূরিরা যে দুর্গের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন দশম শতাব্দীতে। যে দুর্গের সঙ্গে পৃথ্বীরাজ চৌহান, রানা হাম্বীর, রানা উদয়সিংহের নাম জড়িয়ে ছিল। দুর্গের ভেতর এখনও একটি ত্রিনেত্র গণেশের মন্দির আছে। তিনি নাকি ভীষণ জাগ্রত। টাটা সুমো বোঝাই হয়ে স্থানীয় লোকেরা গণেশঠাকুরের পুজো দিতে আসেন।

রণথম্ভোর দুর্গের ভেতরের ছবি তুলতে পারিনি, কারণ ক্যামেরায় এস ডি কার্ড পুরে নিয়ে যেতে ভুলে গিয়েছিলাম। ভালোই হয়েছে একদিক থেকে। কীসেরই বা ছবি তুলতাম। ওইরকম পুরোনো দুর্গ আপনারা অনেক দেখেছেন। ওইরকম ভাঙাচোরা দেওয়াল, ওইরকম প্রকাণ্ড কাঁটা বসানো সিংদরজা। সিংদরজায় হেলান দেওয়া শহুরে টুরিস্টের ছবি তুলে দিচ্ছে গরিব গাইড। পাথুরে পথের পাশে দাঁড়িয়ে ফোঁৎ ফোঁৎ করে নিশ্বাস ফেলছে আর পা ঠুকছে নোংরা খচ্চর। পাথরের গায়ে খড়ি দিয়ে কেউ লিখে রেখে গেছে, ‘বিকাশ লাভস রোশনি’।

দুর্গের ওপরে একটা নিরালা জায়গা দেখে নিচের জঙ্গলের দিকে তাকিয়ে আমরা বসেছিলাম। বসে বসে দেখছিলাম দিগন্তজোড়া জঙ্গলের মাঝে মাঝে তালাওয়ের জলের ঢেউয়ের মাথায় বেলা চারটের রোদ কেমন দোল খাচ্ছে। চারদিকে কোথাও কোনও শব্দ নেই। কিংবা হয়তো আছে, আমরা এত ওপর থেকে শুনতে পাচ্ছি না। হয়তো আবার ‘কল’ উঠেছে জঙ্গলে। ট্যাঁ ট্যাঁ ট্যাঁ। হয়তো দ্বিপ্রাহরিক ঘুম ভেঙেছে এতক্ষণে কারও, হয়তো কেউ হেঁটে চলেছে জলের দিকে। তার নিঃশব্দ পদচারণের সঙ্গে সঙ্গে চোখঝলসানো হলুদকালো ডোরায় ছাওয়া, ঘাড়ের কাছের দুটো হাড় ঢেউ তুলছে। লেফট-রাইট, লেফট-রাইট। আর জঙ্গল তার নিজস্ব ভাষায় খবর ছড়িয়ে দিচ্ছে ডাল থেকে ডালে, শিকড় থেকে শিকড়ে, তালাও থেকে তালাওয়ে। রাজা আসছেন, যে যেখানে আছ, তফাৎ যাও।

জঙ্গল থেকে অত ওপরে, বিপদের নাগাল থেকে অত দূরে বসেও আমাদের গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠেছিল।


                                                                                                             (সমাপ্ত)
      

Comments

  1. Sudhui darun ... Aar kichhu boltey parchhi na !!! Ekkeybare sawmohimay prottyaborton .....

    ReplyDelete
    Replies
    1. থ্যাংক ইউ থ্যাংক ইউ আত্মদীপ।

      Delete
  2. Replies
    1. সত্যিই আহা শর্মিলা। তবে সবথেকে ভালো হত সে বৃষ্টি জানালার ধারে বসে বসে গরম চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে দেখতে পারলে, নেক্সট টাইম।

      Delete
    2. aha.. ami sei last year theke ei plan ta kore jacchi.. janlar dhare cha khete khete jongoler bristi dekhbo.. Pune theke eirokom plan kora ta kichhui kothin na.. chardike hajar ta jayga achhe.. tobuo keno jani hocchena.. dekhi ei bochhore..

      Delete
    3. আরে চলে যাও অপরাজিতা। বর্ষার সময় তো জঙ্গল দারুণ লাগে শুনেছি। ঘুরে এসে বোলো কেমন ঘুরলে।

      Delete
  3. asambhab bhalo laglo pore..anekdin age Buddhadeb Guhar ekta uponyash porechilam,anandamelay mone hay,'baja tora,raja jay' ,lekhatar katha mone pore gelo :) sabdhani archisman er cheharata kalpona korte parchi :)

    ReplyDelete
    Replies
    1. থ্যাংক ইউ থ্যাংক ইউ তিন্নি। আরে অর্চিষ্মান তো সাবধানে ছিলই, বাঘমামা আমাকে পর্যন্ত সাবধানী করে তুলেছিলেন।

      Delete
  4. ভেবে দেখলাম, ওই বাঘের ছবিটার পর আর কিছুই বলার থাকতে পারেনা। তাই বিশেষ কিছুই বলবনা। তবে মহেন্দ্র দত্তর জন্য হাই ফাইভ। আমি নেওয়ার্কের রাস্তায় ডাকাত ঠেঙাতে গিয়ে মহেন্দ্র দত্ত ব্যবহারে বিশেষ সুফল পেয়েছি। কে সি পাল দিয়ে ঠেঙিয়ে দেখার সৌভাগ্য হয়নি অবশ্য, তাই তুলনা করতে পারলামনা।

    ReplyDelete
    Replies
    1. মহেন্দ্র দত্ত হাই ফাইভ। আপনাদের নেওয়ার্কের ডাকাতের যা গল্প শুনেছি, বাঘের মতোই বিপজ্জনক প্রায়।

      Delete
  5. Ki daroon! Amay bola hoechhe nehaat bhagyobaan na holey keu du-du baar baagh dekhte pay na Ranthamborey. Tumi, othoba Archisman, khub-i bhagyobaan bolte hobe!

    ReplyDelete
    Replies
    1. ঠিক ঠিক, বিম্ববতী। আমরা যদিও একটাই বাঘ দু'বার দেখেছি, নিন্দুকেরা হয়তো বলবে, কাজেই টেকনিক্যালি একবারই বাঘ দেখেছি, কিন্তু তাতে আমরা দমছি না। ড্রাইভারজী না বলে দিলে তো আর বুঝতে পারতাম না ওটা সুলতান না টি নাইনটিন।

      Delete
  6. Relished both the write-ups; welcome back!

    ReplyDelete
    Replies
    1. থ্যাংক ইউ থ্যাংক ইউ রণদীপ। লেখা ভালো লেগেছে জেনে খুশি হলাম।

      Delete
  7. atyonto beshi trokomer bhalo laglo, aar rockies e garir thik samne bhaluk eshe jaoar abhiggyota besh taja hoye uthlo. prasangoto janai, ami apnar blog er notun pathika, ei weekend apnar blog abishkar korlam, ebong sei theke tana pore jachhi, aj kajer phnake phankeo phire aschilam. apnar kolom ke anek sadhubad!

    ReplyDelete
    Replies
    1. বাঃ বাঃ, নতুন পাঠক পেয়ে যারপরনাই প্রীত হলাম। অবান্তরে স্বাগতম কাকলি। আশা করি অবান্তর আপনার আরও অনেকদিন ভালো লাগবে। গাড়ির সামনে ভালুক এসে যাওয়া তো রীতিমত রোমহর্ষক ব্যাপার। ভয় লাগেনি? রণথম্ভোরেও ভালু আছে।আমাদের খুব আফসোস রয়ে গেল জানেন, ভালু দেখা গেল না বলে।

      Delete
    2. thik bhoy noy.. ekta romancho type bhab hoyechilo..tinio oi dhir podokhhepe rasta perono theke ghar bnakiye bye bola obdhi sob i korechilen :)
      achha comment ta Banglay lekha jay ki kore?

      Delete
    3. আপনি আপনার কম্পিউটারে অভ্র বলে একটা জিনিস ডাউনলোড করে ফেলুন। এই যে এইখান থেকে। http://www.omicronlab.com/avro-keyboard-download.html
      তারপর আপনার কম্পিউটারে ফোনেটিক্যালি টাইপ করতে পারবেন। মানে maa টাইপ করলে মা লেখা হয়ে যাবে।

      আর যদি অত ডাউনলোডের চক্করে না যেতে চান তাহলে http://www.google.com/inputtools/try/ এইখানে গিয়ে ড্রপ ডাউন মেনু থেকে পছন্দমতো ভাষা (এক্ষেত্রে বাংলা) বেছে নিয়ে টাইপ করতে শুরু করুন। আপনি ইংরিজি স্ক্রিপ্টে টাইপ করবেন, লেখা বাংলায় হয়ে যাবে। সেটা কপি করে কমেন্ট বাক্সে পেস্ট করে দিলেই খেল খতম।

      Delete
    4. আচ্ছা অনেক ধন্যবাদ ! বুকমার্ক করে নিলুম :)

      Delete
  8. আহা দারুণ, মনটা একদম ভরে গেল। :)

    "রাজা আসছেন" পড়ে অনেকদিন আগে পড়া বুদ্ধদেব গুহ'র একটা উপন্যাসের কথা মনে পড়ে গেল, "বাজা তোরা, রাজা যায়" - দারূণ লেগেছিল।

    ReplyDelete
    Replies
    1. আরে অরিজিত, একটু ওপরে তিন্নিও এই বইটার কথাই বলেছে। আমি পড়িনি, পেলে পড়ব নিশ্চয়।

      Delete
    2. ওহো, তিন্নির কমেন্টটা খেয়াল করিনি।
      তবে বইটা পেলে পড়ে নেবেন, বেশ ভাল। :)

      Delete
  9. Tomra to darun lucky Kuntala. Ekebare samna samni bagh mamar dorshon korle! Amar gotobare jokhon Corbett gechhilam tokhon "sudhu tar daak sunechhi". Sultan naam ta nischoi courtsey Satyajit Ray?

    ReplyDelete
    Replies
    1. হাহাহাহা রুণা, রণথম্ভোর ২ (দু'বার দেখেছি বলে) - জিম করবেট ০.৫ (ডাক শুনেছো বলে)। তোমরা এর পরের বার রণথম্ভোর যেও, নিশ্চয় বাঘ দেখতে পাবে। ইন ফ্যাক্ট আমি শুনলাম মধ্যপ্রদেশের জঙ্গলগুলোতে, যেমন কানহা, বান্ধবগড়---বাঘ দেখার সম্ভাবনা সবথেকে বেশি।

      আমি জানতাম সবাই এটাই ভাববে, যে আমি ছিন্নমস্তার অভিশাপ থেকে বাঘের নাম চুরি করেছি। কিন্তু সেটা সর্বৈব মিথ্যে। বাঘটার নাম সত্যি সত্যিই সুলতান ছিল রুণা। অন গড ফাদার মাদার।

      Delete
    2. Hyan ebar toh Ranthambhore plan kortey hochhey! Tarpor dekho amar score! :-)
      Naam ta coincidentally ek holeo, Sultan amader kachhey (maane Feluda pore jara boro hoye chhey) Hazaribagher sei circus theke palano bagh tai!

      Delete
    3. হ্যাঁ হ্যাঁ রুণা, রণথম্ভোর ঘুরে এস। আর সুলতানের ব্যাপারটায় একেবারে একমত। আমি তো ভাবছিলাম, লেখাতে কারান্ডিকারের নামটা কোথাও গুঁজে দেওয়া যায় কি না। তারপর নানারকম ভেবে আর লিখলাম না।

      Delete
  10. আরে বাঘ দেখাটা পুরোপুরি লটারি পাওয়ার মত | আমরা তো কানহা গেছি , যতরকম জীবজন্তু হয় সব গন্ডায় গন্ডায় দেখেছি , শুধু তিনি দর্শন দিলেন না | তার পদচিহ্ন ধরে ধরে আমরা অনেক অনুসরণ করলাম , অনেক "কল" শুনলাম, কিন্তু আশাপুর্ণ হলো না | হোটেলে ফিরে একটা বাঘের মত বড় ছুচো দেখলাম | একেই বলে anti-climax ..........Tilakmama

    ReplyDelete
    Replies
    1. হাহাহাহা তিলকমামা, বাঘের বদলে শেষে ছুঁচো? সত্যি অ্যান্টি ক্লাইম্যাক্স। আমাদের কপালটা সত্যি ভালো।

      Delete
  11. "টি-নাইনটিন " ar tar chhanader kathopokathon darun to :-) . ghurte jabar talikai jog kore rakhlam... dekhi konodino sujog hoi kina .

    ReplyDelete
    Replies
    1. অবশ্য করে যাবেন ইচ্ছাডানা। তবে গরমে আসবেন না, পাগল হয়ে যাবেন। আর যদি যাওয়ার পথে দিল্লি থামেন, তাহলে খবর না দিলে খুবই খারাপ হবে।

      Delete
  12. Lekha ta porar por thekei aamar Tee Nighteen er chaana der sathe khelte icche korche. Bhabo baagher chana der sathe khelte ki moja tai na laagbe.
    Tee Nighteen ke bola hobe je ekta bhat ghum niye nao, totokhon aamra chana der sathe kheli

    ReplyDelete
    Replies
    1. আমি তোমার প্রস্তাবে সম্পূর্ণ সহমত জানাচ্ছি নীলাঞ্জনা।

      Delete
  13. অভিনন্দন অভিনন্দন। পর পর দুবার ব্যাঘ্র নন্দনের সাক্ষাৎ পাওয়া কম বড়ো ব্যাপার নয়।
    ছবি গুলি চমৎকার।
    লেখা নিয়ে আর কি বলবো। :)

    ReplyDelete
    Replies
    1. আহা, কেউ আমার ছবির প্রশংসা করলে আমার বড় ভালো লাগে। থ্যাংক ইউ শঙ্খদীপ।

      Delete
  14. Mushkilta holo bagh dekhar ongshota atoi lomhorshok je durger part ta kal porbo bole dekhe dite holo

    ReplyDelete
    Replies
    1. হাহা, আরে অসুবিধে নেই। বেচারা দুর্গের কপাল খারাপ। দুর্গটা খারাপ নয়, কিন্তু বাঘমামার সঙ্গে পাল্লা আর দেবে কী করে?

      Delete
  15. Kuntala tomar ei lekha ta onno lekha gulo-r matoi anobaddo. du bar bagh dekhte paoya shotti shoubhagyer byapar...ami to Pune Zoor khola jangale ghera bagh dekhei mohit hoye giyechilam :)...jangale jaoyar icche ache ekbar mama-r shathe dekha korte...r hyaan oi bandor posha-r sakh-ta amar-o hoyechilo ekbar,,,ma exactly tomar lekha dialogue ta diye khanto kore diyechilo...
    jano to aaj amar meye-ke tomar byaghro darshon-er galpotai r ektu rang choriye bole breakfast koriyechi...5 mints-e brkfast khatam kono nachanachi charai...dhonnobad,,,erakam r o rashad-er ashay roilam...

    ReplyDelete
    Replies
    1. বাঃ বাঃ, বাঘের গল্প কাজে লেগেছে দেখে খুবই খুশি হলাম দেবশ্রী।

      Delete
  16. ""সুলতান দিক চেঞ্জ করল। সুলতান ওপর দিকে উঠতে শুরু করেছে। আমাদের দিকে।""

    পুরো ছিন্নমস্তার অভিশাপ পার্ট ২!!!

    বিফোর টাইম ফিরে এসেছেন বলে অনেক হাই ফাইভ।

    ReplyDelete
  17. খুব ভালো লাগলো। পা এখন সুস্থ আশাকরি। আমি এখন যেখানে আছি গত পরশুই একটা থিম পার্ক এর সাফারী তে গিয়ে বাঘ দেখলাম। একটার নাম খান।

    ReplyDelete
    Replies
    1. আরে দারুণ ব্যাপার তো, সুমনা।

      Delete
  18. Ki phataphati laglo. Kobe je jabo!

    ReplyDelete
    Replies
    1. চলে এস, চলে এস শকুন্তলা।

      Delete
  19. আমিও রণথম্ভোরে গিয়ে প্রবল বৃষ্টি পেয়েছিলাম, এবং দুর্ভাগ্যক্রমে কে সি পাল বা মহেন্দ্র দত্ত কেউই সঙ্গে ছিলেন না. মাঝখান থেকে বৃষ্টির তাড়ায় ময়ূরগুলো সব পালিয়ে গেল, শম্বর এবং নীলগাইরা খোলা জায়গা থেকে জঙ্গলের ভেতরে গাছতলায় চলে গেল, এবং বাঘবাবাজি গুহা থেকে বেরোলেনই না. তবে জলে ভেজা ভোরবেলার রণথম্ভোর...আহা!

    ReplyDelete
    Replies
    1. এই রে, ছাতা ছাড়া তো ভীষণ বিপদে পড়েছিলে তার মানে অদিতি? কিন্তু ওইরকম কাকভেজা হওয়াটাও একটা অভিজ্ঞতা, তাই না? জঙ্গল আমি বেশি যাইনি, কিন্তু যাওয়ার ইচ্ছে ক্রমেই প্রবল হয়ে যাচ্ছে।

      Delete
  20. বিপদ ঠিক বলব না, তবে নিরাশ হয়েছিলাম সাংঘাতিক রকম। জঙ্গলে গেলেই বাঘ দেখতে হবে এরকম বায়না আমার নেই (তবে দেখতে পেলে মোটেও নাক উঁচু করে থাকব না), কিন্তু বৃষ্টিতে পাখি টাখি সব ভ্যানিশ হয়ে যায় যে।
    অসম ভুটান সীমান্তে মানস বলে একটা জঙ্গল আছে, তাতে বনদপ্তরের হাতির পিঠে চড়ে দু ঘণ্টা ঘোরা আমার জীবনের একটা অন্যতম সেরা অভিজ্ঞতা। আর বন্দিপুরের দিগন্তবিস্তীর্ণ চিতল হরিণের রাত। শুক্লপক্ষের রাতে জঙ্গলের ভেতর থেকে হাজার হাজার চিতল হরিণ একেবারে ফরেস্ট বাংলোর বারান্দা পর্যন্ত এসে যায়, তুমি চুপ করে বসে বসে শুনবে শুধু ঘাস ছেঁড়া আর চিবোনোর শব্দ, ভুল করে যদি একটু কেশে ফেল অমনি পুরো মাঠটা হঠাৎ নড়ে চড়ে জ্যান্ত হয়ে উঠবে, আর সাবধানী ডাক বেজে উঠবে, টাঁউ, টাঁউ। সারা রাত তুমি ঘরে যেতে পারবে না, ভোরবেলা যখন আস্তে আস্তে আলো ফুটবে, দেখবে বিশাল ডালপালা ছড়ানো পুরুষ চিতলরা তাদের হারেম পিছনে নিয়ে আস্তে আস্তে জঙ্গলের দিকে চলে যাচ্ছে।

    ReplyDelete
    Replies
    1. আরে বা অদিতি, কী ভালো লিখেছ বন্দিপুরের বর্ণনা। এক্ষুনি যেতে ইচ্ছে করছে। চিতল আর চিতলের হারেম দেখতে। মানস অভয়ারণ্য হাই ফাইভ। আমার দেখা সেরা জায়গাগুলোর মধ্যে একটা থাকবে মানস, আজীবন।

      Delete
  21. সব-ই তো হলো কিন্তু বাঘের ছবি তো আর দেখতে পেলুম নি - সবিরাম পাঠক

    ReplyDelete
    Replies
    1. আরে কিছু একটা যান্ত্রিক গোলযোগ হয়েছে মনে হচ্ছে। দেখছি ঠিক করা যায় কি না।

      Delete
  22. osadharon. especially, oi baghini ar chana der songlap er part ta. prothombar pore bejaye hesechilam ar 2-3 bar kore porechilam. khali kono karone photo gulo dekha jacchilo na. ebar dekhlam. tumi sottii vagyoban. khod jongoler majhe bagh babajir dekha peyecho.

    ReplyDelete
    Replies
    1. ভাগ্যবান তো বটেই, কুহেলি। সাইটিং হওয়া পুরোটাই কপালের ব্যাপার। তোমার লেখাটা পড়ে ভালো লেগেছে জেনে খুশি হলাম। থ্যাংক ইউ।

      Delete

Post a Comment