জামা মসজিদ/ করিমস



রবিবার সকালে ঘুম ভেঙে টের পেলাম ঠাণ্ডায় সারা শরীরের রোমকূপ খাড়া, মুখের চামড়ায় টান, খোলা জানালার ধারে রেখে শোওয়া বোতলের জল প্রায় ফ্রিজের মতো ঠাণ্ডা। জানালার বাইরে তখনও ঘুরঘুটে অন্ধকার।

মিনিট দশেক মটকা মেরে ক্লান্ত হয়ে পড়ে উঠে বাথরুম গেলাম। দাঁতটাত মেজে জল খেতে খেতে দেখি বাইরের কালো একটু যেন ফিকে। দরজা খুলে বারান্দায় বেরোনোর সঙ্গে সঙ্গে ঠাণ্ডা হাওয়া জাপটে ধরল। এইবেলা চাদরমাদর বার করতে হবে। কোথায় যে আছে ভগবানই জানে। কাবার্ডে থাকলেই মঙ্গল। নাকি আগের বছর বেশি গোছাতে গিয়ে ডিভানের তলায় তুলে রেখেছি?

বকেঝকে মনকে ডিভানের ভ্যাপসা গুমোট থেকে বার করে নিয়ে এলাম। কোথাও কোনও শব্দ নেই। একটা হালকা মিষ্টি গন্ধ ভাসছে হাওয়ায়। নিচে তাকিয়ে দেখলাম পাঁচিলের বাইরে গলা বাড়ানো শিউলি ডালের নিচে সাদাকমলা কার্পেট। আকাশের দিকে মুখ তুলে দেখলাম নীল আকাশে ফুটে রয়েছে ফ্যাকাশে চাঁদ।

ঘরে এসে অর্চিষ্মানকে ঠ্যালা দিয়ে বললাম, ‘চল কোথাও যাই।’

অর্চিষ্মান ঘুম গলায় ‘সিনেম্‌....’ বলে সবে শুরু করতে যাবে আমি বললাম, ‘যাওয়ার জায়গা খোলামেলা হওয়া চাই, খাওয়াকেন্দ্রিক আউটিং চলবে না, একবেলার মধ্যে ফেরৎ আসতে হবে।’ শর্তের বহর শুনে অর্চিষ্মানের ঘুম ছুটে গেল। চা খেতে খেতে ব্রেনস্টর্মিং হল খুব। আমি বললাম ‘ইন্ডিয়া গেট’, অর্চিষ্মান বলল, ‘দরিয়াগঞ্জ’। তারপর দুজনেই একসঙ্গে বললাম, ‘জামা মসজিদ!’ অর্চিষ্মান মুচকি হেসে বলল, ‘সেই ভালো। ইট’স অ্যাবাউট টাইম।’

অর্চিষ্মানের মুচকি হাসির মানে বোঝাতে গেলে আমাকে একটা স্বীকারোক্তি করতে হবে। সে স্বীকারোক্তি এমন ভয়ানক যে লোকের কাছ থেকে লুকিয়ে রাখতে হয়। বিভিন্ন খেপে দিল্লিতে কাটানো দীর্ঘ আটটি বছরে আমি একটি বারও জামা মসজিদ যাইনি।

আপনারাও নির্ঘাত ততখানিই মুখ হাঁ করেছেন খবরটা প্রথম জেনে অর্চিষ্মান যতখানি হাঁ করেছিল।

‘সিরিয়াসলি?’

‘সিরিয়াসলি।’

‘একবারও না?’

‘আধবারও না।’

‘তার মানে করিমসেও খাওনি?’

মাঝগঙ্গায় কুটো ধরার মতো করে হাঁকপাকিয়ে আমি বলেছিলাম, ‘না না, নিজামুদ্দিনের করিম’সটায় খেয়েছি তো, আফগানি চিকেন আর গুর্দা কলেজি আর . . .’

‘আই মিন, রিয়েল করিম’স-এ?’

লজ্জায় এই বার আমার চিবুক বুকে ঠেকে গিয়েছিল।

মার্কেট টু-র মোড় থেকে অটোতে উঠলাম যখন তখন ঘড়ির কাঁটা আটটা পেরিয়েছেঅর্চিষ্মান আফসোস করল, ‘ইস আর একটু আগে বেরোলে হত, বুঝলে। রোদ উঠে যাবে।’ অর্চিষ্মানের আফসোস শুনতে পেয়েই নির্ঘাত অটোভাইসাব স্পিড তুললেন। ফাঁকা রাস্তায় পক্ষীরাজের মতো ছুটল তাঁর গাড়ি।

এই রাস্তা দিয়েই আমরা রোজ অফিস যাই, তাই বেড়াতে যাচ্ছি ভাবটা মনের মধ্যে ফুটতে একটু দেরি হচ্ছিল। রোজ যে মোড়টা থেকে আমার অটো বাঁদিকে ঘোরে, সেই মোড়টা পেরিয়ে সোজা এগিয়ে আসতেই ফুর্তিতে মন লাফ মারল। এইবার নতুন রাস্তা, নতুন ফ্লাইওভার, ফ্লাইওভারের পাশে নতুন গাছে নতুন ফুল। ফাঁকা ফ্লাইওভারের ধারে দেখি দাঁড় করানো একটি মোটরবাইক, তার হেলমেট পরা মালিক রেলিং-এ ভর দিয়ে দিগন্তের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। মন ভালো হয়ে গেল ঘড়ির মুখে ছাই দিয়ে এখনও তার মানে কেউ মাঝপথে থেমে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে পারে?

ফুরফুরে মনে চলেছি, হঠাৎ অটো ভাইসাব ঘ্যাঁচ করে ব্রেক কষলেন। আমরা সচকিত হয়ে ‘কেয়া হুয়া কেয়া হুয়া’ করে উঠেই দেখি চৌমাথা জুড়ে মোটা দড়ির বেড়া, বেড়ার ওপাশে সাদা নীল পোশাক পরা পুলিশ ভাইসাব আর তারও ওদিকে ফাঁকা রাস্তা ধরে কিছু লোক হাফ দৌড়চ্ছে, হাফ হাঁটছে। ম্যারাথন! দৌড়বীরদের পরনে সাদা জামা নীল প্যান্ট। তবে ইচ্ছেমতো পোশাকেও লোকজন দৌড়চ্ছেন। একজনকে দেখলাম স্যান্ডোগেঞ্জি পরে দৌড়তে। আমি আর অর্চিষ্মান মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলাম। পেছনে ঠ্যাঙা নিয়ে কেউ তাড়া করেনি, অথচ লোকে দৌড়চ্ছে – এই ঘটনা আমাদের দু’জনের মনে যেমনটি বিস্ময়ের সৃষ্টি করে তেমনটি আর কিছুটি করে না। দৌড়বীরদের একটা বড় ঝাঁক পেরিয়ে যাওয়ার পর পুলিশকাকু আমাদের রাস্তা ছেড়ে দিলেন। চলতে চলতে আরও অনেক দৌড়বীর চোখে পড়ল। রাস্তার ধারে ছোট প্যান্ডেলের সামনে স্বেচ্ছাসেবকরা জলের বোতল ধরা হাত এগিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। আমার বেশ কিছুক্ষণ থেকে মনটা খুঁতখুঁত করছিল। হঠাৎ সামনে এক প্রতিযোগীকে দেখে সে খুঁতখুঁতানি হাওয়া হয়ে গেল। এই তো! এক, দুই, তিন, চার . . . মহিলা ম্যারাথনার। পুরুষ প্রতিযোগীদের সিন্ধুতে তাঁরা বিন্দু, তবুও তাঁদের উদ্দেশ্যে মনে মনে জয়ধ্বনি দিলাম।

শুনেছি এই দিল্লির তলায় নাকি আরও ছ’ছটা দিল্লি চাপা পড়ে আছে। একটা দিল্লিকে আক্রমণ করে মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছে বহিরাগত শত্রুর দল, সে ধ্বংসস্তুপের ওপর আরেকটা দিল্লি তৈরি হয়েছে। সে দিল্লির ওপর হা রে রে রে করে এসে পড়েছে আরেকদল গুণ্ডা, দিল্লি আবার নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। কিন্তু দাঁড়িয়েছেও আবার মাথা তুলে। আবার পড়েছে, আবার উঠেছে, আবার পড়েছে, আবার উঠেছে। এই করে করে সাত নম্বর বারের যে দিল্লি, সেই দিল্লিতেই ঘুরছি ফিরছি অফিস করছি ফুচকা খাচ্ছি আমি আর অর্চিষ্মান।

কিন্তু এই সাত নম্বর দিল্লির মধ্যেও কি অনেকগুলো দিল্লি ঘাপটি মেরে নেই? কালীমন্দির আর মাছের বাজার থেকে শুরু করে সাউথ দিল্লির দৈত্যাকার ফ্লাইওভারের নেটওয়ার্ক পেরিয়ে এই যে এখন লুৎইয়েনস সাহেবের দিল্লির পথ দিয়ে ছুটছে আমাদের অটো – চেহারা, হাবভাব দেখলে কি বোঝার জো আছে যে এরা একই শহর? গম্ভীর, ছায়াচ্ছন্ন তিলকমার্গের দু’পাশে বন্ধ হয়ে পড়ে আছে প্রাসাদোপম বাড়ি, তার ধপধপে সাদা গায়ে সময়ের ছোপ। বাড়ির আশেপাশে জমির পরিমাণ দেখে আমাদের চোখ কপালে। কত দাম হবে? মধ্যবিত্ত কল্পনাকে যতদূর প্রসারিত করা যায় করে স্থির হল, ‘মিনিমাম একশো কোটি তো হবেই, বল?’

একশো কোটি টাকা কেমন দেখতে হতে পারে সেই ভাবতে ভাবতে খানিক দূর এগিয়ে দেখি খাঁ খাঁ রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে এক ভদ্রলোক। পরনে ন্যাতাকানি, মাথাভর্তি চুল, মুখভর্তি দাড়িতে কত পোষা উকুন কিলবিল করছে কে জানে। কিন্তু সে সব অগ্রাহ্য করে ভদ্রলোক গম্ভীর মুখে ট্র্যাফিক কন্ট্রোল করছেন। আমাদের অটো দেখেই প্রবল বেগে হাত ঝাঁকিয়ে রাস্তা দেখালেন।

ভদ্রলোকের দেখানো রাস্তায় খানিকটা যেতেই দিল্লির স্কাইলাইনে বড় বড় গম্বুজ দেখা দিতে শুরু করল। গম্বুজের মাঝে মাঝে মিনার। আকাশ থেকে মাটিতে দৃষ্টি নামিয়ে দেখি ফুটপাথ ছেয়ে গেছে বইয়ে। নতুন পুরোনো, আস্ত, ছেঁড়া, পাঠ্য অপাঠ্য। দরিয়াগঞ্জের বইয়ের বাজার তখনও ভালো করে বসেনি। বইওয়ালারা তখনও উবু হয়ে বসে বই সাজাচ্ছেন। আমাদের উঁকিঝুঁকির বহর দেখে অটো ভাইসাব জিজ্ঞাসা করলেন, ‘উতরনা হ্যায়?’ আমরা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম, ‘নাহ, যেখানে যাব মন করে বেরিয়েছি সেখানেই যাওয়া যাক।’

‘বহোৎ আচ্ছা’ বলে অটো ভাইসাব একটা গলির সামনে এনে অটো থামালেনআমরা টাকা মিটিয়ে অটো থেকে নামলাম আর আমাদের চোখের সামনে ফুটে উঠল এক্কেবারে নতুন আরেকটা দিল্লি।

অটোর হর্নে, রিকশার ভেঁপুতে, মানুষের কলরবে গমগম করছে সে দিল্লি। রাস্তার দু’পাশে জমে উঠেছে বাজার। ঠ্যালাগাড়ির ওপর চূড়ো করে রাখা টি-শার্ট, পাজামা, হাওয়াই চটি নেড়েচেড়ে পরখ করে দেখছে কিনিয়ের দল। ঝলমলে জামা পরে বাবামায়ের হাত ধরে হাঁটছে শিশু, ইস্কুল যেতে না হওয়ার ফুর্তি ফুটে বেরোচ্ছে তার প্রতিটি পদক্ষেপে। ‘মেশিন কা ঠাণ্ডা পানি’ লেখা স্টিলের চৌকো ভারি গাড়ি ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে দু’জন। যে রেটে হাওয়া ঠাণ্ডা হচ্ছে, এদের ব্যবসার আয়ু আর বেশিদিন নেই। সামনের মাস থেকেই অন্য রাস্তা দেখতে হবে। ফুটপাথের বিরিয়ানির দোকানে ভিড় দেখলে কে বলবে সকাল ন’টা বাজতে এখনও ঢের দেরি। মশলাদার বিরিয়ানির গন্ধে গোটা এলাকা ম'ম' করছে। হঠাৎ সে সুবাসের আস্তরণ ফুটো করে নাকে হুল ফোটালো আরেকটি গন্ধ। ‘ওঁরে বাঁবা, এঁ আঁবার কোঁত্থেকে আঁসছে গোঁ’ রুমালের চাপার ভেতর থেকে কোনওমতে অর্চিষ্মানকে জিজ্ঞাসা করতে যাচ্ছি এমন সময়ে চোখের সামনে উৎস সশরীরে আবির্ভূত হলেন। কী দেমাক, ক্ষুরে ক্ষুরে কী রাজকীয় ঠমক, কৃষ্ণকালো পশম গায়ে আলোর সে কী পিছলানি! এঁকে যারা বোকাপাঁঠা বলে তাদের বুদ্ধির দৌড় নিয়েই আমার সন্দেহ হয়। পাঁঠা মহোদয়ের উচ্চতা তো দেখার মতোই, পিঠে চেপে বসলে আমার পা মাটি পাবে না, তার থেকেও দেখার মতো হচ্ছে তাঁর কানের দৈর্ঘ্য। লতপত লতপত করে সে কান দুলিয়ে তিনি আমাদের পথ আটকে ধীরেসুস্থে চললেন। এমন রাজকীয় পাঁঠাকে ‘হ্যাট হ্যাট’ বলার প্রশ্নই ওঠে না, এদিকে রুমালের চাপায় দমবন্ধ হয়ে মরার উপক্রম, কাজেই আমরা কোনওমতে ‘এক্সকিউজ মি’ বলেটলে তাঁর পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে এলাম।

একটু পরেই চোখের সামনে এই দৃশ্য উদ্ভাসিত হয়ে উঠল।


মসজিদ-এ-জাহাঁ-নুমা। শাহজাহানের ইচ্ছেয়, ছ'হাজার শ্রমিকের পরিশ্রমে, ষোলশো পঞ্চাশ থেকে ষোলোশো ছাপ্পান্ন খ্রিষ্টাব্দ - ছ'বছর ধরে তৈরি হওয়া জামা মসজিদ।

ওই দূরে দেখা যাচ্ছে লাল কেল্লা।

চটি হাতে মসজিদের চত্বরে আমরা ঘুরতে লাগলাম। দলে দলে সাহেবমেমেরা গাইডের পিছু পিছু ঢুকতে লাগলেন। সাহেবদের কোমরে লুঙ্গি জড়িয়ে, মেমসাহেবদের গায়ে জোব্বা চড়িয়ে, সব্বার জুতোয় কাপড় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। মসজিদের চত্বরের মাঝখানে ছোট্ট বর্গাকার পুকুর। অগভীর কিন্তু কানায় কানায় টলটল করছে। মরীচিকার মতো। এর দিকে তাকিয়ে দ্যাশের কথা মনে পড়ত কি মরুভূমি থেকে আসা মানুষদের?

মাথার ওপর যেই না সূর্যের তেজ বাড়ল, পেটের ভেতর যেই না ব্রেকফাস্টের অভাব স্পষ্ট হয়ে উঠল, অমনি ইতিহাসটিতিহাস থেকে আমার মন উঠে গেল। আমার শাশুড়িমা সম্প্রতি হাজারদুয়ারি বেড়িয়ে এসে একটা গল্প বলেছিলেন, সেটা মনে পড়ে গেল। হাজারটা দরজা যে বাড়ির তার সাইজ তো আন্দাজ করাই যাচ্ছ, সে বাড়ির আনাচকানাচ ঘুরে দেখতে দেখতে মায়েরা ক্লান্ত হয়ে পড়লেন। এক জায়গায় দাঁড়িয়ে তাঁরা বিশ্রাম নিচ্ছেন এমন সময় মা শুনলেন পাশে প্রাসাদের বারান্দায় বসে একজন মহা বিরক্ত গলায় বলছেন, ‘এই যা বানাইয়া থুইসে, দ্যাখনের আর শ্যাষ নাই।’ আমার মনের ভাবটাও অনেকটা সেই রকম হল। আমি পত্রপাঠ মনের ভাব প্রকাশ করে ফেলতে অর্চিষ্মান বলল, ‘খিদে পেয়েছে তো খেলেই হয়।’ আমি বললাম, ‘কোথায় খাব? কত দূর যেতে হবে?’ অর্চিষ্মান বলল, ‘বেশি নয়, ওই তো ওই গলিটার ভেতর।’


ক্যামেরায় যদি গন্ধ বন্দী করে আনার টেকনোলজি থাকত তাহলে এই গলির গন্ধটা আমি আপনাদের শোঁকাতামই শোঁকাতাম। সেঁকা মাংস, ঘি চপচপে বিরিয়ানি, তন্দুর, সব মিলিয়েমিশিয়ে সে এক অবর্ণনীয় ব্যাপার। গলিতে ঢুকে খানিকটা গিয়ে বাঁদিকে আরেকটা গলি, সেই গলিতে ঢুকে একটা ছোট চত্বর, চত্বর ঘিরে কয়েকটা ঘর, প্রতিটি ঘরের মাথায় লেখা করিম’স। বেশির ভাগ ঘরেরই ঝাঁপ বন্ধ, যেটার খোলা সেটার সামনে অন্তত সাতআটজনের একটা লাইন। লাইনে দাঁড়ালাম। অর্চিষ্মান অভিজ্ঞ গাইডের মতো আমাকে বলল, ‘ভিড়ের সময় এই সবগুলো ঘরই খোলা থাকে।’ আমি চোখ কপালে তুলে বললাম, ‘সকাল দশটার সময় মাংসরুটি খাওয়ার জন্য লাইন পড়েছে, এর থেকে আর কত বেশি ভিড় হবে?’ শুনে অর্চিষ্মান আমার দিকে তাকিয়ে এমন একখানা করুণার হাসি দিল যে আমি চুপ করে গেলাম।

এদিকে লাইনে চাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে। আমাদের সামনে হিপস্টারদের একটা বড় দল, তাদের সকলেরই গায়ে চে গুয়েভারা মার্কা গেঞ্জি, সকলেরই পরনে আকাচা জিনস, সকলেরই পায়ে স্ট্র্যাপছেঁড়া হাওয়াই চটি, সকলেরই কাঁধে ঝোলা ব্যাগ, সকলেরই মাথায় ঝুঁটি। ভাবভঙ্গি দেখে বোঝা গেল এরা এ পাড়ায় বেশ আসেটাসে, জানেটানে। একজন অস্থির হয়ে বার বার লাইন ছেড়ে রান্নাঘরের দিকটায় গিয়ে উঁকিঝুঁকি মারছিল আর ফিরে এসে বন্ধুদের বলছিল, ‘আরে প্যাক করা লেতে হ্যায় ইয়ার, ওহাঁপে খতম হো রহা হ্যায়।’ অর্চিষ্মান ফিসফিস করে আমাকে বলল, ‘নাহারি খতম হয়ে যাওয়ার কথা বলছে।’ আমি বললাম, ‘নাহারি কী?’ অর্চিষ্মান বলল, ‘করিম’স-এর ইউ এস পি। লিজেন্ড বলে, তুমি এখন যে নাহারিটা খাবে, যদি অ্যাট অল খেতে পাও, সেটা উনুনে চাপানো হয়েছে কাল বিকেল চারটের সময়। আমি বললাম, ‘অ্যাঁ! সে জিনিস খেতে না পেলে তো মহা লস্‌। চল চল, হাম ভি প্যাক করা লেতে হ্যায়।’ উত্তেজনায় আমার মুখ থেকে রাষ্ট্রভাষা বেরিয়ে পড়ল। অর্চিষ্মান দ্বিধান্বিত মুখে এদিকওদিক তাকাচ্ছে এমন সময় একজন উর্দি পরা পরিবেশক দোকানের ভেতর থেকে বেরিয়ে এসে চেঁচিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘দো লোগ হ্যায় কোই?’ আমরা মহোল্লাসে ‘হ্যায় হ্যায়!’ বলতে বলতে হিপস্টারদের টপকে দোকানে ঢুকে পড়লাম।

মেনুর অনুরোধ জানাতে পরিবেশক জিজ্ঞাসা করলেন, ‘নাহারি ইয়া পায়া?’ বাঃ, বাছাবাছির ঝামেলা নেই দেখা যাচ্ছে। আমরা একটা নাহারি নিলাম, একটা পায়া, আর রুটি। একটু পরে খাবার এসে গেল। একটা গোটা প্লেট জুড়ে রুটি, জ্বাল দেওয়া দুধের মতো গায়ের রঙে মাঝেমাঝে বাদামি ফোসকা, বেশিরভাগই ছোট, দুয়েকটা ফুটবলের মতো ফুলে উঠেছে। পাশের প্লেটে লাল তেলের দিঘির মধ্যে নাক ভাসিয়ে আছে কয়েক টুকরো গাঢ় কালচে বাদামি মাংসের টুকরো। তেল দেখে বুক অলরেডি ধুকপুক করছিল। আমি অল্প একটুখানি রুটি ছিঁড়ে সেই তেলে ডুবিয়ে মুখে পুরলাম . . .

. . . আর অমনি মায়ের হাতের গুড়ের পায়েস, মেজমামির হাতের ক্ষীরের পাটিসাপটা, জেঠী/জেঠতুতো দিদির হাতের তেতোচচ্চড়ির পর আমার লিস্টে চার নম্বর খাবার যোগ হল যেটা খেয়ে চুপ করে থাকা যায় না, চোখ বুজে মাথা নেড়ে ‘হায় হায়! উমদা উমদা! নাজুক নাজুক!’ বলে চেঁচিয়ে উঠতে হয়।


আমি বালিশের মতো নরম রুটি ছিঁড়ে ছিঁড়ে ঝোলে ডুবিয়ে ডুবিয়ে মুখে পুরতে লাগলাম। উষ্ণ, রগরগে ঝোল আমার খাদ্যনালী জ্বালিয়েপুড়িয়ে নিচে নামতে লাগল। কবিরা যে বলেন ‘এমন জ্বালায় জ্বলে মরণও ভালো’, নির্ঘাত এই রকম জ্বালার কথাই বলেন। ‘আহা, রুটি দিয়েই পেট ভরিয়ে ফেলবে দেখছি, মাংস খাও’ এই না বলে অর্চিষ্মান আমার প্লেটে মাংস তুলে দিল। কাল বিকেল চারটে থেকে গুমে গুমে সে মাংস তখন এলিয়ে পড়েছে, চামচ দিয়ে কেটে জিভের ওপর রাখতেই মাখনের মতো মিলিয়ে গেল। আমি আরেকবার চোখ বুজে চেঁচিয়ে উঠলাম, ‘কেয়া বাত কেয়া বাত’।


নাহারির পর পায়া, পায়ার পর ফিরনি। সবই ভালো, কিন্তু নাহারি এতই ভালো যে তার পাশে সব ফিকে।

বেড়ানো শেষ। এবার বাড়ি ফেরার পালা। গলির মুখ থেকে রিকশায় চড়ে বললাম, ‘চাঁদনি চক মেট্রো স্টেশন চলিয়ে ভাইসাব।’ রিকশা হেলেদুলে চলল। গলি গলি তস্য গলি। গলির ওপরের চিলতে আকাশ ফর্দাফাই করা ইলেকট্রিক তারের কালো জটা। গলির সাইজ দেখলে বোঝা যায়, এ গলি যখন বানানো হয়েছিল তখন স্করপিও বা প্যাজেরোর কল্পনাও কেউ করেনি। গিজগিজ করছে লোক। থিকথিক করছে দোকান। বিরিয়ানি, বাসনকোসন, মণিহারি। উবু হয়ে বসে কাগজের প্যাকেট থেকে সস্তা ওজন মেশিন বার করছে পাখির মতো রোগা একটা লোক। রামলাল চুন্নুপ্রসাদ জেনেরাল স্টোরসের বারান্দায় চাল ডাল আটার বস্তার ঢিপির মাথার ওপর বনবন করে ঘুরছে ছোট্ট ফ্যান। এরা কারা? ছোটবেলার বন্ধু? দেশভাগের সময় ওপার থেকে এসে শূন্য থেকে শুরু করা প্রতিবেশী? রামলাল চুন্নুপ্রসাদের উৎস সম্পর্কে নানারকম থিওরি আলোচনা করতে করতে আমরা দিল্লি সিক্সের উঁচুনিচু গলি দিয়ে ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে চললাম। একে অপরকে সাবধান করলাম, ‘শক্ত করে ধরে বোসো।’ অবশ্য এখানে পড়ে গেলে বেশি ব্যথা লাগবে না। কারণ মাটিতে পড়ার জায়গা নেই, পড়লে কারও একটা ঘাড়ে পড়তে হবে।

ভাগ্যিস রবিবারের বাজারে মেট্রো ফাঁকা ছিল, চাঁদনি চক থেকে উঠেই দুটো বসার সিট পেয়ে গেলাম। বসে বসে আলোচনা করছি কেমন সুন্দর ঘোরা হল, এমন সময় পরের স্টেশন থেকে একটা মেয়ে ট্রেনে উঠল। দেখি মেয়েটার গেঞ্জির বুকে নম্বর সাঁটা। ম্যারাথন দৌড়ে এসেছে! মুখেচোখে ক্লান্তির চিহ্নমাত্র নেই, দিব্যি পা ছড়িয়ে বসে চিপস খাচ্ছে। অর্চিষ্মানকে চ্যালেঞ্জ করে বললাম, ‘তুমি পারতে ম্যারাথন দৌড়ে মেট্রো চেপে বাড়ি ফিরতে?’ অর্চিষ্মান হার মেনে নিয়ে বলল, ‘পাগল? সোজা ট্যাক্সি ধরতে হত।‘ আমি বললাম, ‘তাও ভালো। আমার মিনিমাম স্ট্রেচার লাগত।’ এই না বলে নিজের রসিকতায় নিজেই হেসে গড়াগড়ি খাচ্ছি এমন সময় রাজীব চক ঢুকে গেল।



Comments

  1. Bohuuuuujoog agey khawa ek plate raan er shaad mone koriye diley :)

    ReplyDelete
  2. Darun darun.... But ake akhon lunch er time...tai tor roti nahari,paya ar firni dekhe amar ruti ar fulkopir torkari khete iche korche na....Ami otai khabo..... Mousumi bhattacharya....

    ReplyDelete
    Replies
    1. ওরে ভট্টা, তুই তো তাও ফুলকপির তরকারি, আমার তো রোজ শুকনো স্যান্ডউইচ। নাহারি পায়া কি আর রোজ হচ্ছে রে?

      Delete
  3. Anyay eita!
    Ei bhar dupure Umda khadyer barnona ......

    Lekhata Naazzzuuk!

    ReplyDelete
    Replies
    1. থ্যাংক ইউ, কৌশিক। আরে আমিও স্মৃতিচারণ করে মন ভালো রাখার চেষ্টা করছি আরকি।

      Delete
  4. Amar Dillir priyotomo paratitey giyechhile dekhchhi! Majhe majhei giye Karim's er burra kabab na kheye ele amar besh mon kamon kore ajkal. Ar tomar jodi Karim's er khabar bhalo lage, tahole tomay ekbar Ramzan er somoye Delhi Food Walk ey jetei hobe! Amra giyechhilam eibar. Purani Dillir sobcheye sundor khabargulo sob kheye eshechhi. Oi olitey golitey ghure ghure jutor shuktola khuiye eshechhi. Ei dyakho Delhi Food Walks er link. Oboshyi article tay actual khabargulor onekgulor naam-i day ni. Porer baar nishchoi jeo:

    http://www.sunday-guardian.com/young-restless/from-sehri-to-iftar-a-gastronomic-walk-through-old-delhi-during-ramzan

    ReplyDelete
    Replies
    1. থ্যাংক ইউ, থ্যাংক ইউ, বিম্ববতী। লিংকটা পড়ে খুব ভালো লাগল। পরের বার নিশ্চয় যাওয়ার চেষ্টা করব।

      Delete
  5. এই লেখাগুলি পড়লে পর আর বলা যাবে না, দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া / ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া --------- । আর খাওয়া? ছবি দেখে আর বর্ণনা পড়ে সুড়ুৎ করে জিবের জল টানা ছাড়া কিইবা করার আছে?

    ReplyDelete
    Replies
    1. থ্যাংক ইউ, মালবিকা। লেখা ভালো লেগেছে জেনে খুশি হলাম।

      Delete
  6. আমি লাঞ্চ এর আগে কেন পড়লাম ! এইসব ছবি আর কি description ... !!!!

    ReplyDelete
    Replies
    1. থ্যাংক ইউ, ঊর্মি।

      Delete
  7. amar shei golpo tar katha mone porey gelo jetate gorib bhai borolok bhai er khabar er gondho shuke shuke nijer nun r bhaat khachhilo... amar ajker lunch pauruti r palong shaak. :-(
    -Ramyani.

    ReplyDelete
    Replies
    1. পাঁউরুটি আর পালং শাক কম্বোটা বেশ ইন্টারেস্টিং মনে হচ্ছে তো, রম্যাণি। চিন্তা কোর না, আমিও রোজ গরিব ভাই হয়েই থাকি।

      Delete
    2. Hahaha... etar poshaki naam spinach-corn sandwich. :-)
      -Ramyani.

      Delete
    3. ওহ। নাম শুনে এবার বেশ সুস্বাদু জিনিস বলে বোধ হচ্ছে।

      Delete
  8. amar dilli jaoar karon to berei choleche :) chabigulo khub sundar !- tinni

    ReplyDelete
    Replies
    1. তবে আর বলছি কি। শিগগিরি ট্রেনে চেপে চলে আয়।

      Delete
  9. কয়েকদিন সিকিম এ ঘোরাঘুরি করে কাল ফিরলাম |
    এসব পড়ে আবার দিল্লি ঘুরতে যেতে ইচ্ছা করছে |

    রাতে বাড়ি ফিরে ভাত মাছের ঝোল দেখে বেজায় মন খারাপ হয়ে গেল |

    ReplyDelete
    Replies
    1. আরে আত্মদীপ, সিকিম ঘুরে এলেন? কী মজা! দারুণ ভালো লাগল নিশ্চয়? আমারও খুব সিকিম যাওয়ার শখ। যাওয়ার আগে আপনার থেকে টিপস নিয়ে যাব।

      Delete
  10. Replies
    1. ঘনাদা, এ সব পোস্ট পড়ে ভুলবেন না। নিত্যি আমিও উনো পেটে থাকি, মাঝে মাঝে বরাত খুললে মাংসমিঠাই জোটে।

      Delete
    2. uno pet kathata darun :) - tinni

      Delete
    3. মায়ের মুখে একটা কথা শুনেছি - উনো পেটে দুনো বল। সেই থেকে শব্দটা মাথায় গেঁথে গেছে।

      Delete
  11. কুন্তলাদি, অনেকদিন পর কমেন্ট করছি। মাঝে কনফারেন্স, টক, পোস্টার, প্রেজেন্টেশন, গ্রেডিং ইত্যাদি জঘন্যতম উতপাতের ঠ্যালায় কিছুদিন ডুব মেরেছিলুম। তালেগোলে একটা কুইজ ফসকে যাওয়ায় একেবারে মরমে মরে আছি।

    এই লেখাটা পড়ে অনেকদিনের পুরোনো একটা আফসোস আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠল। বছর আটেক আগে প্রায় দিনকুড়ির জন্য দিল্লী যাওয়ার সুযোগ মিলেছিল, জীবনে ওই একটিমাত্র বার। কিন্তু গরম আর পেটখারাপের গুঁতোয় লালকেল্লা, জামা মসজিদ কোনটাই দেখা হয়নি। আর সেইসঙ্গে আর কি মিস করেছি সেটা আজ আবার মনে করিয়ে দিলেন। আমার আবার আজ ডিনারে ম্যাগি। ধুর ধুর !

    ReplyDelete
    Replies
    1. পিয়াস, যদিও বেজায় লেট হয়ে গেছে, তবু আমার তরফ থেকে তোমাকে শুভ বিজয়ার অনেক অনেক প্রীতি, শুভেচ্ছা আর ভালোবাসা জানাই। ডুব মারার জন্য একেবারেই লজ্জা পেও না, তুমি যদি অন্য কোনও ব্লগের মোহে ভুলে অবান্তরকে অবহেলা করতে তা হলে আমি সত্যি বলছি কষ্ট পেতাম, কিন্তু তুমি নিজের কাজের ব্যস্ততায় এ পাড়ায় আসতে পারনি জেনে আমি একটুও দুঃখ পাচ্ছি না। কুইজ আরও অনেক হবে, তুমি তাতে আরও অনেক অনেক নম্বর পাবে, এ বিশ্বাস আমার আছে।

      তুমি এর পর কখনও দিল্লি আসার সুযোগ পেলে বল, আমি গাইড হয়ে তোমাকে দিল্লি ঘুরে দেখাব। মানে আমি যতটুকু নিজে দেখেছি ততটুকু আরকি।

      Delete
    2. কুন্তলাদি, আপনাকেও বিজয়ার অনেক শুভেচ্ছা আর ভালবাসা ! আমার দুঃখ ভোলাতেই তবে তাড়াতাড়ি আরেকটা কুইজ দিয়ে ফেলুন, অনেকদিন সিনেমা বা গান নিয়ে কিছু হয়নি, 'সুমনের'টাও ডিউ আছে !
      আপনি যে প্রমিসটা করেছেন, আমি কিন্তু ওটার প্রিন্টআউট নিয়ে বাঁধিয়ে রেখে দিলাম। এরপর যখন সত্যি সত্যি দিল্লী পৌঁছে যাব, তখন কিন্তু কাটিয়ে দিতে পারবেন না ! :-)
      আরেকটা কথা: আপনার বছরখানেক পুরোনো কিছু পোস্ট পড়তে গিয়ে দেখি সমস্ত ছবি উধাও হয়ে গেছে। ওগুলো আবার ফিরিয়ে আনা যায়না?

      Delete
    3. আরে পিয়াস, ছবির কথা আর বোলো না। এমন দুঃখ হয়। আমার এত সাধের ছবি। কিন্তু আমি জানি না ওগুলো কী করে ফেরৎ আনতে হয়। মানে বসে বসে আবার রিইনসার্ট করলে হবে আমার ধারণা কিন্তু অত খাটুনির কথা মনে পড়লেই আমার কান্না পাচ্ছে। এখন তাই প্রতি পোস্টের ছবি এক দুই তিন নম্বর দিয়ে রাখছি যাতে উড়ে গেলে বেশি পরিশ্রম না করতে হয়।

      আমার প্রমিসের টেঁকসইত্ব পরীক্ষা করার জন্যই না হয় একবার দিল্লি এস, ঠকবে না, কথা দিচ্ছি। সুমনের কুইজটার কথা মনে করিয়ে ভালো করলে।

      Delete
    4. This comment has been removed by the author.

      Delete
    5. ইশ এ কি সাংঘাতিক কান্ড ! গুগলের সার্ভারে ব্যাক-আপ থাকেটাকে না? ওদের ইমেল করে দেখুন না। একান্তই না হলে রোজ অন্তত একটা করে পোস্টের ছবি মেরামত করতে থাকুন। আপনার সেই ইউরোপ ভ্রমণের ছবিগুলো বিশেষ করে - ওগুলো আমি মাঝেমধ্যেই ফিরে ফিরে দেখতাম যে ! :-(

      দিল্লি তো যাবই। নারায়ণ সান্যালের বইটা পড়া ইস্তক দিল্লি আর আগ্রা ঘুরে ঘুরে দেখার প্রবল সাধ আমার !

      Delete
  12. hehe sei jonye vabi tumI kano amay asol karims chhere nijamuddiner dikeI thelchho.. ami oboshyo khuje pete asol ta tei geslam.. sworgo jodi kothao thake tahole..

    ReplyDelete
    Replies
    1. সেই, নিজে যেখানে যাইনি সেখানের রেকো কী করে দিই বল অনির্বাণ? যাক, করিমস তোমার ভালো লেগেছে জেনে খুশি হলাম।

      Delete
  13. didigo!!! sokal sokal monta kharap hoye gelo!! oi je delhi ekta delhi r modhye onekgulo delhi lukiye ache..khub khati kotha...bisheshoto jama masjid -lalkella chottore darale mone hoy mughal amol theke aj porjonto flavour ta eki roye geche..hoto manushgulor poshak ashak chal cholon somoyer sathe bodleche..tobu somoy okhane goriye chole...ar ekta khub mojar jayga lage..chabri market..thik amader borobajar..sar sar diye boi er dokal wala ekta goli ache..bhishon MG road college streat ermoto mone hoy...tahole ki ekta shohor ar arekta shohorer modhuye narir taan roye geche ajo...boddo bhalo laglo....dsher dokkhin tomo prante boshe oi himel haoa ta buk bhore tene nilam..ha dilli te sheet porlo bole....

    ReplyDelete
  14. ar ha, nijer chobitay matha tehke hatta ki shorano gelo na..uff tomake niye ar parine bapu!!!

    ReplyDelete
    Replies
    1. ওহ, ওটা পাছে রোদ্দুর লেগে রং কালো হয়ে যায় সেই ভয়ে, পারমিতা।

      তুই তো দিল্লিতে থেকেছিস, দিল্লির মজার ফার্স্ট হ্যান্ড অভিজ্ঞতা আছে। চাওড়ি মার্কেট আর চাবড়ি মার্কেট কি একই?

      Delete
  15. Tomar pujo'r postgulo mon bhore porechi kintu comment korte parini bole "sorry" bolchi. Eto bhalo lagchilo pore, mone hocchilo tomader shathe amio Kolkata e pujo katachhi.
    Tumio Shubho Bojoya'r onek bhalobasha o shubheccha jeno Kuntala.
    Ar eyi post ta pore amar Delhi berano'r icche ta aro beshi kore jaagche. Especially oi nihari khawar jonne, Mughal architechture dekha ekhon amar list e second e neme gelo. :-)

    ReplyDelete
    Replies
    1. এই মেরেছে, শর্মিলা, আবার সরিটরি কীসের? দিল্লি ভালো, দিল্লির স্থাপত্য ভালো, দিল্লির খানাও ভালো। একবার ঘুরেই যাও না হয়।

      Delete
  16. Ama laptop er key board almost vije gechilo.. ses moment e surut kore tene nilam... ar apni hazarduari dekhnni??? amader bari chole asun.. personally guide hoye tour koriye debo.. Dilli er moto kichu noi jodio kintu e banglai er cheye boro palace ar nei.

    ReplyDelete
    Replies
    1. আরে অর্ণব, দিল্লির মতো হাজারদুয়ারি না হতে পারে, কিন্তু হাজারদুয়ারির মতো, দিল্লি কেন পৃথিবীর আর কোথাও কিছু নেই। আমি অনেক ছোটবেলায় হাজারদুয়ারি দেখেছিলাম। সেই যে বার বহরমপুর রবীন্দ্রভবনে চার্লি চ্যাপলিনের সিনেমা দেখেছিলাম, সে বারই। আরেকবার দেখার সময় হয়ে গেছে। এবার গেলে তোমার বাড়ি ঘুরে আসব।

      Delete
  17. লেখা, ছবি, সবই খুব সুন্দর হয়েছে। আসলে আমি এই লেখাটা কালই পড়তে বসেছিলাম। এবার হলো কি, আমি এমনিতেই ইদানিং ডায়েট করছি বলে সারাক্ষণ ক্ষিদে-ক্ষিদে পায়। তার ওপর কাল আমার জন্মদিন ছিল তাই রাতে বাইরে খেতে যাওয়ার একটা প্ল্যান করেছিল ল্যাবমেটরা, সেটা তারপর নানা কারণে বানচাল হয়ে গেল। তাই মেজাজটা একটু খারাপ ছিল। আপনার লেখা পড়তে পড়তে খাবারের জায়গাটায় এসে বর্ণনা আর ছবি দেখে এইসান রাগ ধরল যে ট্যাবটা বন্ধ করে দিয়ে কাজে ফিরে গেলাম। সিরিয়াসলি!

    আপনার জামা মসজিদ না দেখার মতন বোধহয় সবারই নিজের শহরে কিছু না কিছু না দেখা থেকে যায়। আমি যেমন ৫ বছর নিউ ইয়র্কে থেকেও এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিং-এর মাথায় উঠিনি আর লিবার্টি আইল্যান্ডে যাইনি, যে দুটো জিনিস লোকে এক দিনের জন্য নিউ ইয়র্ক গেলেও করে। MoMA তেও যাওয়া হয়নি কোনোদিন। আবার আমার চেনা যত লোক ডিসিতে থাকে তাদের প্রায় কেউই লাইব্রেরি অফ কংগ্রেস দেখেনি, অথচ আমি প্রথম বেড়াতে এসেই ওটা দেখেছিলাম।

    ReplyDelete
    Replies
    1. ঠিক যেমন কলকাতায় মার্বেল প্যালেস আর পরেশনাথ মন্দির। যতবার পাশ দিয়ে যাই মনে মনে প্রমিস করি, নেক্সটবার আসবই আসব।

      আপনার জন্মদিন খুব ভালো কেটেছে আশা করি। খাওয়া বানচাল হওয়াটা উইকএন্ডে পুষিয়ে নেবেন। অবান্তরের সবার পক্ষ থেকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা রইল।

      Delete
  18. darun hoeyeche lekhata :)

    ReplyDelete
    Replies
    1. থ্যাংক ইউ, থ্যাংক ইউ।

      Delete
  19. সেই প্রাগৈতিহাসিক যুগে জামা মসজিদের পেছনের বাজার থেকে আমার সাপ্তাহিক মাছ আসত! মনে পড়ে গেল। মনে পড়ল পরাঠা গলিও। ইস, কতদিন দিল্লি যাই নি!

    ReplyDelete
    Replies
    1. ওহ, তুমি কাছাকাছি থাকতে বুঝি অদিতি? আমি পরাঠা গলিও যাইনি কখনও। আমাকে এবার দিল্লি থেকে কান ধরে বার করে দেবে।

      Delete
  20. আহা, লেখা-ছবি সব মিলিয়ে একটা অনাবিল আনন্দ হল। অসাধারণ। :)

    ReplyDelete
    Replies
    1. থ্যাংক ইউ থ্যাংক ইউ, অরিজিত।

      Delete
  21. eta ki hoche kuntala di? shonibarer sokale konomote khan dui waffle kheye din shuru korchi, hothat shobdo-gondho-swad somet karim's niye ele?? erom chobi keu tole? erom lekha keu lekhe? dhur dhur mon ta bhoyanok mushre poreche..
    amra nahari khete gechilam se aro bhor e, sokal 5 tay.. archisman da ra bodhoy tokhon pass kore geche.. sedin ato sokale pouche chilam je karim's tokhono kholei ni, amra age pasher dokan theke gorom gorom kachuri torkari kheye breakfast korlam, tarpor karim's khultei nahari.. ahhh..tarpor jama masjid e giye sobai chottore i shuye ghumiye porlo.. ami koto kore bolchilam minar e uthbo (oi minar guloy otha jay, jano to?) , lal quilla jabo, keu kornopat i korlo na :(

    ReplyDelete
    Replies
    1. ওয়্যাফ্‌ল্‌ কি এগো ব্র্যান্ডের? আমি খুব এগোভক্ত ছিলাম স্বাগতা। তোমাদের সাতসকালে করিমস অভিযানের গল্প শুনে খুব ভালো লাগল। জামা মসজিদের বারান্দায় শুয়ে ঘুমোনোর গল্প অবশ্য আরও ভালো লাগল। তুমি দুঃখ পেলেও আমাকে বলতে হচ্ছে যে আমিও লালকেল্লা ঠ্যাঙানোর বদলে মসজিদের বারান্দায় শুয়ে ঘুমোনোতেই বেশি উৎসাহিত হতাম।

      Delete
    2. Nah, eta eggo na, central market brand er. local brand, eggo r cheye bhalo.
      emnite ghumote amio bejay utsahi, kintu berate berole amar ghum-tum mote payna. bhishon high energy level hoye jay :)

      Delete
  22. December e dilli jabo bhabchi....dilli govt er tomake tourism officer er maine deoya uchit

    ReplyDelete
    Replies
    1. আরে, গুড গুড রণিতা।

      Delete
  23. Clap, clap Kuntala. Tomar Jama Masjider moto amar Connaught Place. No bocchhor dillite thakar por giyechhi!

    ReplyDelete
    Replies
    1. যাক, আমার মতো আরও একজনকে পেয়ে শান্তি হচ্ছে। থ্যাংক ইউ, রুণা।

      Delete

Post a Comment