১০-১১ নভেম্বর, ২০১৫



১০ নভেম্বর, কালীপুজো

একদিনের উৎসব যে মন ভরানোর পক্ষে যথেষ্ট নয় এটা গোড়াতেই বুঝে দুর্গাপুজোওয়ালারা পাঁচদিনের ব্যবস্থা করেছিলেন। দিওয়ালিওয়ালারা বোঝেননি, এখন তার খেসারত দিচ্ছেন। আগেপিছে টেনেটুনে, গোঁজামিল দিয়ে বাড়াতে হচ্ছে। গতকালই অফিস থেকে সবাইকে ড্রাই ফ্রুটের বাহারি বাক্স ধরানো হয়েছে। সবার ডেস্কে ডেস্কে ঘুরে, দরজা ঠেলে ঢুকে হ্যাপি দিওয়ালির শুভেচ্ছা জানানো হয়েছে।

আসল মজাটা অবশ্য হবে আজ, যেদিন আমাদের কালীপুজো আর ওদের ছোটি দিওয়ালি। আজ খাওয়াদাওয়া হবে, খেয়েদেয়ে উঠে তাম্বোলা খেলা হবে। তাম্বোলামাম্বোলা আমি আগে জানতাম না, এই অফিসে চাকরি করতে এসে জেনেছি। একটা কাগজের টুকরো দেবে আপনার হাতে, তাতে কাটাকুটি ঘর কাটা, প্রতিটি ঘরে একটা করে নম্বর ছাপা আছে। আপনাকে শুধু মনে করে একটা পেন নিয়ে খেলতে বসতে হবে। ভুলে গেলেও অসুবিধে নেই। খেলার ঘরের বাইরেই কর্তৃপক্ষের তরফের একজনের ডেস্ক, যাঁর দায়িত্ব খাতা পেন পেনসিলের খাঁই মেটানোর। নিজের ডেস্ক পর্যন্ত হেঁটে না গিয়ে ভুলোমনেরা সবাই তাঁর ডেস্ক থেকে টপাটপ পেন তুলে নেবেন, এক দুপুরে অফিসের পেনের স্টক অর্ধেক

খেলার নিয়মটা মোটামুটি সোজা। টেবিলের মাথায় দাঁড়িয়ে একজন মাতব্বর চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে একেকটা নম্বর বলবেন, আর আপনি সেই নম্বরটা নিজের চিরকুটে খুঁজবেন। যদি না পান তাহলে তো হয়েই গেল, পেলে পত্রপাঠ টিক দেবেন। এইবেলা একজন জিজ্ঞাসা করবেন, আচ্ছা ক্রস দিলে চলবে না? চলবে। ক্রস, গোল্লা, হার্ট সাইন, স্বস্তিকাচিহ্ন, সব চলবে। যার চিরকুটের একটা পাশাপাশি বা লম্বালম্বি বা কোণাকুণি সারির সবক'টা নম্বরে দাগ পড়ে যাবে, সে জিতবে। একটা সারি ফুরোলে একরকম প্রাইজ, দুটো সারি ফুরোলে তার থেকে বেশি প্রাইজ, আর যার পাশাপাশি, লম্বালম্বি, কোণাকুণি মিলে চিরকুটের সব সংখ্যার গায়েই দাগ পড়ে যাবে, তিনি চ্যাম্পিয়ন। খেলা শুরু হবে। বা হওয়ার উপক্রম হবে। সারা ঘর নিঃশব্দ, সকলের ঘাড়ের রোঁয়া ফুলে উঠেছে, রিফিলের ডগা চিরকুটের ওপর কাঁপছে। চাই মুখ হাঁ করেছেন, "সেভ্‌

"ওয়েট, সো..."

দেজা ভু। একই গলা, একই মুখ। আগের বছরও ঠিক একই সময় বাগড়া দিয়েছিল। ইনি নিয়মটা বোঝেননি। টাইম সিরিজ গুলে খেয়েছেন, কিন্তু কাটাকুটি খেলার রহস্যভেদ করতে পারেননি।

অবশেষে খেলা শুরু হবে। নিয়মিত ইন্টারভ্যালে ঠাসা ঘরের এ কোণা ও কোণা থেকে চিৎকার উঠবে, মিল গয়া। একে একে একেকটা সারির ওপর দখল কায়েম করবে আমার একেকজন সহকর্মী। ইনটার্ন কেউ প্রাইজ পেলে সারা ঘর হাততালিতে ফেটে পড়বে, ডিরেক্টর পেলে সাবোটেজের নালিশ উঠবে।

এদিকে আমার চিরকুটের মোটে তিনটে খোপে দাগ পড়েছে, তাও তিনটে আলাদা আলাদা সারিতে। আমি কোনওদিন এইসব লটারিমার্কা খেলায় জিতিনি। জিতি না। অবশ্য এই যে বললাম "আমি জিতি না", এটা না জেতার একটা কারণ হতে পারে। প্রথমবার তাম্বোলা খেলতে বসার আগে আমাদের অফিসের একজনকে বলতে শুনেছিলাম, "আই নো আই উইল উইন সামথিং। বিকজ আই অলওয়েজ উইন।" তিনি সেবছর জিতেছিলেন। পরের বছরও জিতেছিলেন। তার পরের বছরও। আমার তাম্বোলা খেলার ইতিহাসে আমি ওঁকে কখনও হারতে দেখিনি।

কিন্তু আমি উনি নই। আমি যতবার খেলি ততবারই হারি, হেরেছি। পরের বারও যে হারব যে সে নিয়ে আমার কোনও সংশয় নেই। লোকে বলবে সেই ভয়েই হয়তো আমি আজ অফিস গেলাম না। মুখ লুকিয়ে ঘরে বসে থাকলাম।

কিন্তু সেটা সত্যি নয়। তাম্বোলায় হারের ভয়ে নয়, আমি অফিস গেলাম না কারণ আজ অর্চিষ্মান একটা ঝটিকা সফর সেরে বাড়ি ফিরবে। প্রথমে ঠিক ছিল যে ও সোজা এয়ারপোর্ট থেকে আমার অফিসে যাবে, সেখান থেকে কোথাও একটা খেয়ে আমরা বাড়ি ফিরব। আজ প্রাক-দিওয়ালি উপলক্ষ্যে অফিস তাড়াতাড়ি ছুটি হবে, কাজেই নো প্রবলেম। কিন্তু সকালে উঠে আমার মহা কুঁড়েমি লাগল আর মনে পড়ল যে আজ অফিসে কেবল হইচই, খাওয়াদাওয়া আর তাম্বোলা আর হার আর অপমান, কাজেই আমি কুঁড়েমিকে প্রশ্রম দিয়ে বাড়িতে বসে রইলাম।

বসে থাকতে থাকতে মনে পড়ে গেল ফ্রিজারে পাঁচশো গ্রাম মুরগি আছে, রেঁধে ফেলা যাক। রেসিপি অতি সিম্পল। টক দই, আদারসুন দিয়ে মাংস মেখে রাখব। তারপর একটু খবরের কাগজটাগজ পড়ে, গাছে জলটল দিয়ে আবার রান্নাঘরে যাব। আলু ভাজব। অল্প লাল লাল হলে তুলে রেখে পেঁয়াজ ভাজব। আজ স্পেশাল অকেশন মুরগি, তাই তরিবৎ করে কম আঁচে পেঁয়াজ ভাজা হবে। লাল হবে, অথচ পুড়বে না। তারপর তিনটে ছোট এলাচ, তিনটে লবঙ্গ, একটা এককর লম্বা দারচিনি। তারপর নুন, হলুদ, কাঁচালংকা চেরা, লংকাগুঁড়ো (জানেন কি, লংকাগুঁড়ো যদি সামান্য তেলে মিশিয়ে কড়াইয়ে ছাড়েন তাহলে বেশি রং ছাড়ে?) দিয়ে নেড়েচেড়ে দইওয়ালা মাংস দিয়ে হাই আঁচে ভাজাভাজা করে গরমজল আর ভাজা আলু দিলেই রান্না শেষ। জলের মতো সোজা।

কিন্তু ব্যাপারটা অত সহজ হল না। বেশি ভালো করে রাঁধব বলে বেশি দই দিয়ে ফেলেছিলাম, দেখি মাংসের ঝোলের বদলে মাংসের আচার হয়ে গেছে। টোকো ভাব কমাতে গিয়ে নুন দিলাম। নোনতা হয়ে গেল। চিনি দিলাম। মিষ্টি হয়ে গেল। তখন যা থাকে কপালে বলে এক খাবলা নুন আর একমুঠো ধনেপাতা দিয়ে লাস্টবারের মতো ফুটিয়ে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এলাম।

অর্চিষ্মান এল। প্লেনে খেয়ে এসেছে কাজেই খাওয়ার তাড়া নেই। আমরা আরাম করে চা নিয়ে বসলাম। অফিসের উপহারের সদ্গতি করা হল।


বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ খিদে পেয়ে গেল। মাংসভাত খেয়ে আমরা বেড়াতে বেরোলাম। মাংসটা নুনচিনিদই মিলিয়েমিশিয়ে উতরে গিয়েছিল। বেরিয়ে দেখি ওইটুকু দু'নম্বর বাজারে দু'খানা পুজো হচ্ছে। একটা ফিশ অ্যান্ড ভেজিটেবল মার্কেটের। অন্য প্যান্ডেলটার গায়ে কোনও নাম ছিল না। কিন্তু যেহেতু প্যান্ডেলটা একেবারে দাদুর চপের দোকানের সামনে তাই আমরা ধরে নিলাম যে ওটার মুখ্য স্পনসর দাদু ছাড়া আর কেউ নন।


এরপর যেটা হল শুধু সেটার জন্যই ২০১৫ কালীপুজো আমার কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। টুকটাক জিনিস কেনার ছিল, চেনা মুদির দোকানে ঢুঁ মারলাম। চাল, রিন সাবান, আদা লজেন্স। তারপর গত দুমাস ধরে অভ্যেসমতো আবৃত্তি করা লাইনটা বললাম। "ম্যাগি এসেছে, দাদা?" উত্তরটা জানাই ছিল, কাজেই সেটার অপেক্ষা না করে পেছন ফিরে চলে আসতে উদ্যত হয়েছি, এমন সময় দোকানদার বললেন, “হ্যাঁ, এসেছে তো।

ম্যাগি যখন বন্ধ হয়ে গেল, তখন আমাকে যাঁরা চেনেন তাঁদের কেউ কেউ আমাকে পরামর্শ দিয়েছিলেন ব্যাপারটা নিয়ে অবান্তরে লিখতে। আমি লিখিনি। জীবনের কিছু কিছু ঘটনা বা দুর্ঘটনা থাকে, যেগুলো নিয়ে কাব্য বা সাহিত্য করা বা ব্লগ লেখা যায় না। বিশেষ করে আমার মতো লোকের পক্ষে, যে মনে করে দুঃখ শেয়ার করলে বাড়ে বই কমে না। ম্যাগির বন্ধ হয়ে যাওয়া নিয়ে তাৎক্ষণিক কোনও প্রতিক্রিয়াই আমার মনে জন্মায়নি, কারণ আমি শোকে পাথর হয়ে গিয়েছিলাম। খাবার হিসেবে আমি ম্যাগিকে দেখে আসিনি কখনও। ম্যাগি আমার দুঃখে সান্ত্বনা, আমার নির্ঘুম মাঝরাতের সঙ্গী ছিল। আমার বারো টাকা ভিজিটের ইনস্ট্যান্ট থেরাপি। আমার টু মিনিটস সিপ্রালেক্স।

চারটে ম্যাগি কেনা হল। প্যাকেটের ওপর চোখে পড়ার মতো করে ছাপা 'কমিটমেন্ট' আর 'ট্রাস্ট' শব্দগুলো। দরকার ছিল না, কারণ ম্যাগির প্রতি আমার কমিটমেন্টে কোনও টান পড়েনি। ম্যাগির প্রতি আমার ট্রাস্ট তখনও অবিচল ছিল, এখনও আছে, চিরকাল থাকবে।

এমন নয় যে এই কমাস আমি ইন্সট্যান্ট নুডল ছাড়া থেকেছি। থাকার কোনও কারণ ছিল না। বাজারে হাজার হাজার ব্র্যান্ড আছে। ইপ্পি, টপ রমেন। সেগুলো পেট ভরায় ঠিকই কিন্তু একইসঙ্গে ম্যাগির অভাবকে আরও বেশি করে মনে পড়ায়। ম্যাগি বানালাম, যত্ন করে। শুকনো নয়, ঝোলঝোল নয়। নামানোর আগে দেওয়ার পর রেড চিলি ফ্লেকসের একটা প্যাকেট উপুড় করে দিলাম। বাটিতে ঢেলে সামনের ঘরে টিভির সামনে এসে বসলাম। পুণ্য অমাবস্যা তিথিতে আকাশে গ্রহতারারা নির্ঘাত সব এক লাইনে দাঁড়িয়েছিল, হবি তো হ' সেই সময়েই সোনি আটে 'সি আই ডি কলকাতা ব্যুরো' শুরু হল। আমি ম্যাগি খেতে লাগলাম, টিভির পর্দায় সিনিয়র ইন্সপেক্টের রণজয় সাঙ্গপাঙ্গ ও হুংকারসহ লাফালাফি করতে লাগলেন, বারান্দার‍ রেলিঙে তিরতির করে মোমবাতির আলো কাঁপতে লাগল।

১১ নভেম্বর, দিওয়ালি

পরপর দুদিন ছুটি থাকলেই খালি শনিরবি বলে ভুল হয়। অথচ আজ রবিবার নয়, বৃহস্পতিবার বুধবার। আজ দিওয়ালি। আজ আমাদের দুজনেরই ছুটি। সেটা সেলিব্রেট করার জন্য আমরা যাব সিনেমা দেখতে।তিতলিদশটা পাঁচে, সাকেতের ডি এল এফ প্লেস মলে ডিটি সিনেমাহলে শো।

রাস্তায় বেরিয়ে মন ভালো হয়ে গেল। মাঝ নভেম্বরের রোদে আকাশবাতাস চকচক করেছে। শুধু আলো আছে, তাপ নেই একটুও। মলে পৌঁছে দেখি একটাদুটো দোকানের কাঁচ ঘষামোছা চলছে, বেশিরভাগেরই শাটার পাটে পাটে বন্ধ। চারদিকে ফোয়ারা, বেলুন। আলো দিয়ে বানানো একটা ঘোড়ায় টানা মস্ত রথের মতো দেখলাম। এখন জ্বলছে না, সন্ধ্যেবেলা জ্বলবে। তখন এই জায়গাটা লোকের ভিড়ে কেমন সরগরম হবে ভাবতেই গায়ে কাঁটা দিল। দিওয়ালি সজ্জার অংশ হিসেবে আরেকটা নতুন জিনিস দেখলাম। বুদ্ধদেবের একখানা বাজখাঁই মূর্তি। নিমীলিত চোখে, পদ্মাসনে সৌম্যমূর্তি ভগবান বুদ্ধ বসে আছেন, তাঁর পায়ের তলায় গোটা গোটা চনমনে ফন্টে লেখাগো শপিং!

সিনেমাহলেও ছুটির মেজাজ। প্রচুর অল্পবয়সী ছেলেমেয়ে, এরা সাধারণত খাবারদাবার বিক্রি করার জায়গায় থাকে, কিংবা টিকিট কাউন্টারে, আজ সকলেই সেজেগুজে এসেছে। দল বেঁধে সেলফি তুলছে। পপকর্ন আর কোকের সঙ্গে অন্যদিন গোমড়া মুখ ফাউ পাওয়া যায়, আজ একগাল হাসির সঙ্গে "হ্যাপি দিওয়ালি" পাওয়া গেল। বোঝা গেল নতুন জামা, জুতো, সেট করা চুল আর মেকআপ ভেদ করে উৎসবটা বুকের ভেতর গিয়ে পৌঁছেছে। মন ভালো হয়ে গেল।

জীবনে এই প্রথমবার আমরা একটা সিনেমা দেখলাম যেখানে হলে আমরা ছাড়া আর কেউ ছিল না। এর আগে আমরা চারপাঁচজন দর্শকওয়ালা হলে বসে সিনেমা দেখেছি, এই দিল্লিতেই, কিন্তু শুধু আমরা দুজন এই প্রথম। এবং গোটা সিনেমাটা আমরা দুজনেই দেখলাম, আর কেউ এল না। তবে হল ফাঁকা ছিল বলে এটা ভাববেন না কিন্তু তাতে 'তিতলি'র কোনও দোষ আছে। আমার সিনেমাটা খুব ভালো লেগেছে। বিশেষ করে রণবীর শোরে চমৎকার।

ফাঁকা হলে সিনেমা দেখে মিশ্র অনুভূতি হল। ব্যাপারটার অভিনবত্বে বেশ মজা লাগল কিন্তু এটাও বুঝতে পারলাম যে ভরা হলের একটা আলাদা আকর্ষণ রয়েছে। হলে গিয়ে সিনেমা দেখার মজা শুধু বড় পর্দায় আর পপকর্নের গামলায় নেই, আশেপাশের ননস্টপ ফিসফাসে, চেয়ারের পেছনের ইতস্তত লাথিতে, ফোন তুলে "রাইট নাউ আই অ্যাম ইন আ সিনেমা, উইল কল ইউ লেটার'" গোছের আপৎকালীন ঘোষণাতেও আছে। বোরের হদ্দ হয়ে যাওয়া শিশুর চিৎকারে আছে। বা যারা অতটাও শিশু নয়, মাবাবার কোল থেকে স্লিপ খেয়ে নেমে পড়ে যারা হলময় ঘুরে বেড়াচ্ছে, এবং আমার কর্নার সিটের হ্যান্ডেল ধরে হাঁ করে আমার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে ভাবছে, "আন্টিকি নোজ বিলকুল মাশরুম জ্যায়সি" তাদের সেই অবাক দৃষ্টিতে আছে।

ভেবেছিলাম হল থেকে বেরিয়ে খেয়ে ফিরব। কিন্তু দেখা গেল আধ গামলা করে পপকর্ন আর কোকা কোলা খেয়ে আমাদের গলা পর্যন্ত ভরে গেছে। অটোতে আসতে আসতে জোম্যাটো খুলে 'নিয়ার বাই' ফিল্টার দিয়ে যে অত সার্চ করা হল, সব মাঠে মারা গেল। মনের দুঃখে ফিরতি অটো ধরলাম। সান্ত্বনা পুরস্কার হিসেবে এক নম্বর মার্কেটে নেমে রাজুর চায়ের দোকানে মসালা লেমন টি খাওয়া হল। জিনিসটা খেতে যেমন ভালো, তার থেকেও ভালো বানানোটা দেখা। রাজুবৌদি কত কিছু যে দিলেন। বিটনুন, চিনি, হজমিগুলি, তেঁতুলের ক্বাথের মতো একটা জিনিস, লেবুর রস। দারুণ হয়েছিল খেতে।


ব্যস। দীপাবলী শেষ। এই পোস্টও। তবে শেষ করার আগে আমাদের এবছরের দিওয়ালি বাম্পার শপিং দেখাই আপনাদের। আমাদের বাড়ির পাশের আনন্দ-এর দোকানে একটা চমৎকার ডিল চলে সারাবছর। আপনি যে দামের বই কিনবেন, তার একটা অনুপাতের মূল্যের বই ফ্রি পাবেন। সবথেকে ভালো ব্যাপারটা হচ্ছে সেই ফ্রি বইগুলোর পছন্দও আপনার। আমরা কিনলাম রানী চন্দের 'পথে ঘাটে', সুকুমার সেনের 'ক্রাইম কাহিনীর কালক্রান্তি' আর শরদিন্দু সমগ্রের তিন নম্বর খণ্ড যেটাতে ঐতিহাসিক উপন্যাসগুলো আছে। ঐতিহাসিক উপন্যাসের কালেকশনটা কলকাতায় আছে, কিন্তু দিল্লিতেও একটা থাকা দরকার। ফ্রি বই হিসেবে আমরা নিলাম অবনীন্দ্রনাথের 'খাতাঞ্চির খাতা' আর জ্যোতিভূষণ চাকীর 'বাগর্থকৌতুকী'


আমি আর অর্চিষ্মান এখন কাড়াকাড়ি করে 'ক্রাইম কাহিনীর কালক্রান্তি' পড়ছি। মারকাটারি বই। জানেন কি, বাকি আর কিছু থাকুক আর না থাকুক, গোয়েন্দাগল্প সত্যি সত্যিই 'ব্যাদে' ছিল? কিন্তু সে প্রসঙ্গ এখন থাক, পরের কোনও পোস্টে হবে।




Comments

  1. Ufff, daroon ketechhe toh tomar Kalipujo/Diwali! :) Happy Diwali/ Shubho Kalipujo, Kuntala. Samner bochhor ta khuuuub bhalo katey jano.

    ReplyDelete
    Replies
    1. তোমাকেও শুভ কালীপুজো, হ্যাপি দিওয়ালি, বিম্ববতী।

      Delete
  2. Replies
    1. থ্যাংক ইউ, থ্যাংক ইউ।

      Delete
  3. 11 tarikh budhbar chilo. Mane friday the 13th er sequence ta na bhangte 11 tarikh ke brihospotibar e ante debo na. :D

    ReplyDelete
    Replies
    1. হাহা, ঠিক করে দিলাম। অনেক ধন্যবাদ, অর্পণ।

      Delete
  4. Happy Diwali! Aapni je pujotar chhobi diyechhen seta amrao dekhe elam! My first time in CR Park = 'Fish and Vegetable Market' Samitir Pujo + Kalibari Dorshon + Lunch @ Madly Bangalee ar oi Pujo panadal er pasher magazine stall theke Anandamela kena :D

    ReplyDelete
    Replies
    1. কী সাংঘাতিক, রণদীপ, তুমি তো একেবারে আমার পাড়া থেকে ঘুরে গেলে। প্যান্ডেলের পাশের ম্যাগাজিন স্টলটা থেকে আমি নিয়মিত দেশ কিনি, ম্যাডলি বাঙালি থেকে অবশ্য বেশি খাই না (কোনও কারণ নেই, এমনিই হয় না আরকি)। প্রথম দর্শনে সি আর পার্ক তোমাকে বেশি হতাশ করেনি আশা করি (একটু করলে কোনও অসুবিধে নেই।)

      Delete
    2. CR Park definitely feels a bit different from rest of the NCR. The fella at the magazine store was very nice; we did'nt have change and he said something like "Don't worry, give me next time when you come. It's ok even if next is 6 months later :)".

      Ar 'Dry Fuits' e high five. I received the same box with same items :)

      Delete
    3. অ্যাঁ, একেবারে সেম বক্স! হাই ফাইভ!

      Delete
  5. পোষ্টটা দিব্যি লাগলো। ড্রাই ফ্রুটের বাহারি বাক্স আগের আপিসে দিত, নতুন আপিস হারকেপ্পন, একটা লাড্ডু অবধি ঠেকায় না।
    শুধু দুজনে মিলে সিনেমাহল্‌-এ গিয়ে সিনেমা দেখাটা বেশ অভিনব, শুনে খুব মজা লাগলো।
    বইগুলোও জম্পেশ। ফ্রি বইয়ের কনসেপ্টটা আনন্দের কলেজ স্ট্রীটের দোকানটাতেও আছে অবশ্য। মুম্বইতে কেন যে 'আনন্দ' একটা দোকান খোলে না, কে জানে!
    শুভ কালীপুজো আর হ্যাপি দিওয়ালি। :)

    ReplyDelete
    Replies
    1. Eta amaro dukhyo, kintu amar mone hoy C R Parker moto Bangali potti Mumbai te nei

      Delete
    2. অরিজিত, তিন্নি, আপনারা সবাই মিলে পিটিশন লিখুন আনন্দ-র কাছে, মুম্বইতে দোকান খোলার জন্য, তারপর লক্ষ লক্ষ বাঙালি সেলিব্রিটির কোনও একজনকে দিয়ে উদ্বোধন করান, হই হই করে চলবে দোকান।

      আপনাকেও আমার তরফ থেকে শ্রী শ্রী শ্যামাপূজার অনেক শুভেচ্ছা ও প্রীতি জানাই, অরিজিত।

      Delete
  6. oshadharon ekta lekha dile didibhai,onek onek shubechcha tomake aar tomar bor ke kalipujar...10th November er lekhatar sesh ta just zata...mon ta kanay kanay bhore gelo..besh goosebump tump holo kintu..mairi bolchi..

    oi tambola khela ami konodin e kheli na..nijeke younger bhabar ekta excuse bolte paro..jato kaka jethi rai dekhechi oi kheleta khele..kothao kothao lotto o bole...okhan thekei mone hoy super lotto lottery naam eseche..jinni bokta mane jinni number tulchen..tar bolar upor besh ekta bepar thake..jemon dharo..16 utheche..tini bolben ..ei je sweet sixteen..ba dharo 1 utheche..bolben ei je ese gelo khidirpur er bus..13 te ki bolben se to jana..etao kintu ekta art,ami ekojn kaku ke dekhechi aar ki..ekti family picnic e..

    tomar je doi chiken ranna amar o ek e upokoron tobe aro quick...no alada bhaja bhaji..no marination..sob mal eksathe korai te chapao(piyaj ta bata..eitai tofat)..full jol diye 2 ghontar janyo ekebare low heat e ..bapar ta bhule jao..namanor samay pachando moto jhol er poriman..

    jag ge,etto bhalo ekta lekha upohaar deoar janyo dhanyobad once again

    ReplyDelete
    Replies
    1. হাহা, ঠিকই বলেছ প্রসেনজিৎ। খেলাটার মধ্যে একটু বয়স্ক গন্ধ আছে। তোমার রেসিপিটা ট্রাই করে দেখব নিশ্চয়, শুনে তো ভয়ানক নির্ঝঞ্ঝাট মনে হচ্ছে। লেখাটা তোমার ভালো লেগেছে জেনে খুব খুশি হলাম। আমার দীপাবলীর শুভেচ্ছা জেনো।

      Delete
  7. "Aunty ki nose bilkul mushroom jaisi" - ei ta darun .
    Delhi giye majhe Kerala bhaban er samriddhi canteeen er khaoa chekhe Elam. :)

    ReplyDelete
    Replies
    1. আরে তাই নাকি, ভেরি গুড। হাতিটার সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তুললেন নাকি?

      Delete
    2. Haati?! Tobe ki khub boyes hoye gelo, na khabar er katha bhable dikgyansunyo hoye jai?

      Delete
    3. এই রে, ঢোকার মুখে একটা মস্ত হাতির মূর্তি ছিল তো। আমি আবার সেটার সামনে দাঁড়িয়ে ছবিটবিও তুলেছিলাম। তবে খুব খোঁড়াখুঁড়ি চলছিল মনে আছে, হাতি বেচারাকে উৎপাটিত করেছে কি না কে জানে।

      Delete
  8. Belated happy diwali. Sharadindu Bondyo r Oitihasik uponyas amar khub priyo boi. Class 11-12 e porte Chitrak ar rajkumari Joshodhora r cave adventure porte porte prane shihoron jege uthto. esob porei ami actually olpo boyes theke gollaye gechilam. Baki boi gulo pora to dur, ei prothom nam janlam.

    ReplyDelete
    Replies
    1. hopefully nam gulo thikthak bolechi eibar.

      Delete
    2. ভুল বললেও কিছু না, কুহেলি। অন্য বইগুলোর কথা আমিও জানতাম না, দোকানে গিয়ে দেখে পছন্দ হল তাই।

      Delete
  9. bah, bhabchilam diwalir ekta lekha dillibasir kach theke nischoi pabo, peye gelam :)

    ReplyDelete
    Replies
    1. হাহা, গেসওয়ার্ক একেবারে নিখুঁত, বলতেই হচ্ছে, কাকলি।

      Delete
  10. Abantor ar Maggi dutoi amar comfort zone......happy diwali

    ReplyDelete
    Replies
    1. হাহা, থ্যাংক ইউ, রণিতা। তোমাকেও হ্যাপি দিওয়ালি।

      Delete
  11. অন্বেষা সেনগুপ্তNovember 14, 2015 at 1:19 PM

    'কলকাতা স্পেশাল টি শপ' -এ ' হট চকোলেট মিল্ক - বিট অফ য়্যান অক্সিমোরন ;)
    মাছ-ও-সবজি-বাজার-এর ঠাকুর দেখে দিব্য লাগল| হ্যাপি দিওয়ালি, শুভ দীপাবলী| খুব ভালো থাকুন, উত্সবশেষের ল্যাদ যেন আপনাকে স্পর্শ না করে :P

    ReplyDelete
    Replies
    1. অন্বেষা, এখানে যদি কলকাতা স্পেশাল ইডলি দোসা বলেও দোকান দেয় তাহলেও সেটা মাইলেজ পাবে। আপনার শুভেচ্ছাটা চমৎকার এবং দরকারি। শুভ দীপাবলী।

      Delete
  12. Happy Diwali Kuntala. Deri hoye gelo, kenona chhuti te giyechilam Bengaluru-Pondicherry. Siggir Anandor boier dokanta kothay bolo!

    ReplyDelete
    Replies
    1. তোমাকেও দীপাবলীর অনেক বিলম্বিত শুভেচ্ছা, রুণা। আশা করি তোমাদের ঘোড়া ভালো হয়েছে। পুঁদুচ্চেরি যাওয়ার আমার অনেকদিনের শখ, শুনেছি খুব সুন্দর শহর। আনন্দ-র দোকানটা হল, সি আর পার্কের এক নম্বর মার্কেটের কাছে যে কমলা মিষ্টান্ন ভাণ্ডার, তার গায়েই। তবে দোকানটা ছোট আর বেস্মেন্টে, যদিও নাম বড় বড় করেই লেখা আছে। দেখতে না পেলে লোককে জিজ্ঞাসা করলে দেখিয়ে দেবে।

      Delete
    2. Tahole chinte osubidhe hobe na! Thank you!

      Delete

Post a Comment