গোয়েন্দাগল্পে প্রেক্ষাপট




উৎস গুগল ইমেজেস

অবান্তরের একটা পুরোনো পোস্টে আমি দাবি করেছি, যদিও গোয়েন্দাগল্প প্লটপ্রধান, তবু গোয়েন্দাগল্পের সার্থকতা/সফলতার প্রধান উপকরণ প্লট (অর্থাৎ খুন, চুরি, কিডন্যাপ, ক’টা খুন, কী চুরি, কে কিডন্যাপ) নয়, বরং গল্পের নায়ক অর্থাৎ গোয়েন্দার চরিত্র। বলাই বাহুল্য এখানে গোয়েন্দার নৈতিক চরিত্রের কথা বোঝানো হচ্ছে না (তাহলে ফাদার ব্রাউন কোকেনখোর হোমসের থেকে অনেক বেশি জনপ্রিয় হতেন), বরং তার ‘ক্যারেকটার’ হয়ে উঠতে পারার ক্ষমতার কথা বলা হচ্ছে। অর্থাৎ সে বাদবাকি পাঁচটা লোকের থেকে যথেষ্ট পরিমাণে আলাদা কি না, বই শেষ করে উঠে খুনির নাম ভুলে গেলেও তাকে মনে থাকবে কি না ইত্যাদি। 

সম্প্রতি একেনবাবুর সম্পর্কে লিখতে গিয়ে আরও একটা জরুরি বিষয়ের কথা মনে পড়ল। প্রেক্ষাপট বা ওয়ার্ল্ড বিল্ডিং। চরিত্রগুলোর সঙ্গে সঙ্গে চরিত্রদের চারপাশটাকেও জীবন্ত করে তোলা। লিটারেরি বা সাই-ফাই বা ইয়ং অ্যাডাল্ট ঘরানার সাহিত্যের ক্ষেত্রে এ ব্যাপারটার প্রয়োজন সকলেই স্বীকার করবেন। হ্যারি পটারের প্রতিভার কারিকুরি পাঠকের কোনও কাজেই লাগত না যদি না অমন নিখুঁত একখানা হগওয়ার্টস তৈরি করতেন জে কে রোলিং। ঠিক তেমনি মিস মার্পলের কিচেন সিংকের মতো মগজেও মরচে ধরে যেত যদি না সেন্ট মেরি মিডের মতো একখানা গ্রামকে তিনি চারণভূমি হিসেবে পেতেন। বা বলা যেতে পারে, সেন্ট মেরি মিড-ই হচ্ছে মিস মার্পলের কিচেন সিংকের মতো মগজের আসল মিস্তিরি। সেন্ট মেরি মিডের ভিক্টোরিয়ান স্পিনস্টারের দল, ভিকারেজ, ভিকারেজে প্রতি বৃহস্পতিবারের গসিপসহ চায়ের আড্ডা। মিস মার্পলের ভাইপো রেমন্ড ওয়েস্ট যাকে ডোবার পচা, স্থবির জলের সঙ্গে তুলনা করেছেন কিন্তু আসলে যা অণুবীক্ষণের তলায় ধরা ডোবার জলের মতোই ঘটনাবহুল, বিচিত্র।

শার্লক হোমসের উদাহরণও দেওয়া যেতে পারে। ডিডাকশন, বেহালা, কোকেনটোকেন মিলিয়ে ভদ্রলোক নিজে যথেষ্টই ‘ক্যারেকটার’, কিন্তু তাঁর ক্যারেকটারের একটা বড় অঙ্গ হচ্ছে লন্ডন -  "that great cesspool into which all the loungers and idlers of the Empire are irresistibly drained." শার্লকের অসংখ্য অমানুষিক গুণের মধ্যে একটা হচ্ছে এই গ্রেট সেসপুলের নাড়িনক্ষত্র শিরাধমনী রন্ধ্রে রন্ধ্রে চেনা। শুধু লন্ডনের গলি বেশি চেনেন বলেই অনেক সময় অনেক অপরাধীদের তিনি ধরে ফেলেছেন। 

তবে মিস মার্পল আর শার্লক হোমস গোয়েন্দা গল্পে প্রেক্ষাপটের গুরুত্ব বোঝানোর জন্য খুব একটা ভালো উদাহরণ নন। কারণ লোকে দাবি করতে পারে ‘আ মার্ডার ইস অ্যানাউন্সড’-এর মতো ধুন্ধুমার প্লট কিংবা শার্লক হোমসের মতো চরিত্রের ক্যারিশমাই এই সব গোয়েন্দার সাফল্যের আসল কারণ। প্রেক্ষাপটটা ফাউ। সেটা বাজে হলেও এঁরাব বিশ্ববিখ্যাত হতেন। কাজেই সে সব গোয়েন্দার দিকে নজর ফেরানো যাক, যাদের প্লট কিংবা ক্যারিশমার দিকে অত ঝোঁক নেই, যারা প্রেক্ষাপটপ্রধান। 

আর এ রকম গোয়েন্দা গল্পের সবথেকে ভালো উদাহরণ হচ্ছে ব্রিটিশ লেখক অ্যান ক্লিভস-এর গল্প। গল্প বলার ধরণে একেবারেই না থাকলেও আগাথা ক্রিস্টির সঙ্গে তাঁর দুটো গুরুত্বপূর্ণ মিল আছে। এক নম্বর মিল, ক্রিস্টির মতো ক্লিভসও প্রায় একইরকম জনপ্রিয় দুটি গোয়েন্দা চরিত্রের সৃষ্টি করেছেন। দু’নম্বর মিল, সে দুটি গোয়েন্দাচরিত্রের একজন পুরুষ, অন্যজন মহিলা। পুরুষ গোয়েন্দা জিমি পেরেজ, মহিলা গোয়েন্দা নাম ভেরা স্ট্যানহোপ। চরিত্রের দিক থেকে পেরেজ এবং স্ট্যানহোপ দুজনেই স্বাতন্ত্র্যে উজ্জ্বল। কিন্তু তাঁদের থেকেও উজ্জ্বল তাঁদের গল্পে তাঁদের নিজ নিজ জুরিসডিকশনের প্রকৃতি এবং মানুষের ভূমিকা। জিমি পেরেজ-এর জুরিসডিকশন হচ্ছে শেটল্যান্ড আর ভেরা স্ট্যানহোপের নর্দাম্বারল্যান্ড। পেরেজ-এর গল্প পড়ার আগে পর্যন্ত আমি জানতাম না শেটল্যান্ড খায় না মাথায় দেয়, ভূগোলে আমার মতো গোল যদি অবান্তরে আরও কেউ থেকে থাকেন তাহলে তাঁদের সুবিধের জন্য বলে দিচ্ছি। শেটল্যান্ড হচ্ছে স্কটল্যান্ডের উতরে একটি সাবআর্কটিক দ্বীপপুঞ্জ। একশোরও বেশি দ্বীপ নিয়ে তৈরি এই দ্বীপপুঞ্জ পৃথিবীর অন্যতম নির্জন লোকবসতির মধ্যে একটি। আর্কটিক সাগর ঘেরা এই ধূসর দ্বীপপুঞ্জের সবক’টি দ্বীপ মিলিয়ে বাসিন্দা এখন মোটে হাজার তেইশ,  দু’হাজার ছয় সালে পেরেজ সিরিজের প্রথম গল্প ‘রেভেন ব্ল্যাক’ প্রকাশিত হওয়ার সময় কত ছিল কে জানে। এখানে মানুষ মাইনরিটি, প্রকৃতি প্রবল। পনেরোশোঁ মাইল ভাঙাচোরা তটরেখা ঘেরা শেটল্যান্ডের যে বিন্দুতেই আপনি থাকুন না কেন সমুদ্রের নাগাল থেকে পালাতে পারবেন না। গ্রীষ্মে শেটল্যান্ডের বিস্তীর্ণ মাঠ ঘাস আর বুনোফুলে ঢেকে যায়, কিন্তু সে মাত্র কয়েকটা মাসের জন্য। বছরের বাকি সময় সবুজের চিহ্নহীন বরফের মরুভূমি। মেয়েকে স্কুলে পৌঁছে ফেরার পথে এক শীতের এক সকালে সেই সাদা মরুভূমির মধ্যে দূরে একটুকরো লাল রং দেখতে পায় ফ্র্যান হান্টার (শেটল্যান্ড সিরিজের পরের গল্পগুলোতে ফ্র্যানের ভূমিকা আরও গুরুত্বপূর্ণ হবে)  আর দেখে তার ওপর গোল হয়ে ভেসে বেড়াচ্ছে কুচকুচে কালো তিনটে বিন্দু, ব্ল্যাক র‍্যাভেনের দল। ওই সাদা, লাল, কালো রঙের অদ্ভুত বিন্যাস নিমেষে অ্যান ক্লিভসকে গোয়েন্দা গল্পের আকাশে তারার জায়গা দিয়েছিল। এই বইটির জন্যই ক্লিভস 'ডানকান লরি ড্যাগার অ্যাওয়ার্ড' পেয়েছিলেন। অ্যান ক্লিভস-এর গল্পে সাসপেন্স আছে, চরিত্রদের টানাপোড়েন আছে, প্লটের কারিগরি আছে, আর এই সবকে নিখুঁত সুতোয় বেঁধেছে ক্লিভসের গল্পের অকুস্থল।

ঠিক যেমন ভেরা স্ট্যানহোপের জুরিসডিকশন ইংল্যান্ডের উত্তরপূর্ব কোণের নর্দাম্বারল্যান্ড। সমুদ্র অ্যান ক্লিভসের খুব পছন্দের বোঝা যায় কারণ নর্দাম্বারল্যান্ডও উত্তর সাগরের তীরে। ছবির মতো সেই উঁচু ক্লিফ ধরে যখন সত্যের সন্ধানে ছুটে চলে ভেরা স্ট্যানহোপের দানবিক, কুৎসিত ল্যান্ড রোভার তখন চোখ ফেরানো যায় না। যদিও প্রেক্ষাপটের সঙ্গে সম্পর্ক নেই তবু ভেরা প্রসঙ্গে একটা মজার কথা আপনাদের না বলে পারছি না। ভেরা স্ট্যানহোপ সিরিজের প্রথম উপন্যাস 'দ্য ক্রো ট্র্যাপ’ যখন লিখছিলেন অ্যান ক্লিভস, তখন তাঁর কল্পনায় ভেরার ছায়ামাত্র ছিল না। ইন ফ্যাক্ট, গল্পে রহস্য থাকবে, সাসপেন্স থাকবে, সাইকোলজি থাকবে, রহস্য থাকবে, কিন্তু রহস্যভেদী থাকবে না, এমনই একটি অভিনব ফন্দি নিয়ে ক্রো ট্র্যাপ লিখতে শুরু করেছিলেন ক্লিভস। কিন্তু লিখতে লিখতে গল্প আটকে গেল। কিছুতেই আর এগোয় না। তখন অ্যান ক্লিভস-এর গোয়েন্দা গল্পের মাস্টারমশাই রেমন্ড চ্যান্ডলারের একটা কথা মনে পড়ল। "If you are stuck with a book, have a guy burst through a door with a gun." "মহাজ্ঞানী মহাজন যে পথে করে গমন…” ইত্যাদি মনে করে ক্লিভস ফের গল্পে ঝাঁপ দিলেন। মার্ডারকে স্বাভাবিক মৃত্যু বলে চালিয়ে দিয়ে দিব্যি চার্চে ফিউনেরাল হচ্ছে এমন সময় চার্চের দরজা প্রায় ভেঙে ফেলে ঢুকে এলেন, না বন্দুক হাতে ফিলিপ মার্লো নন, বরং a large woman, big bones amply covered, a bulbous nose, man-sized feet…Her face was blotched and pitted. গায়ে একখানা অন্তত তিনসাইজ বড় কোট। দেখলে মনে হবে ন্যালাখ্যাপা ঠাকুমা, কিন্তু আসলে তিনি ডি সি আই ভেরা স্ট্যানহোপ।

প্রেক্ষাপট যে অ্যান ক্লিভস-এর গল্পে কতখানি গুরুত্বপূর্ণ সেটা বোঝা যায় তাঁর দুটি গোয়েন্দা সিরিজেরই টেলিভিশন সংস্করণের জনপ্রিয়তা দেখে। স্ট্যানহোপ এবং পেরেজ দুটোরই টিভি সিরিজ হয়েছে এবং সেগুলো দৃষ্টিনান্দনিকতার দিক থেকে অসামান্য। আপনারা না দেখে থাকলে দেখতে পারেন।

ঐতিহাসিক গোয়েন্দাকাহিনিরও মেরুদণ্ড প্রেক্ষাপট। খুনখারাপি নিয়ে ভাবলেই শুধু হবে না, যারা খুন করছে বা হচ্ছে, তারা কী পরত কী খেত কী ভাবত সব নিয়ে ভালো লেখক ভাববেন। এ প্রসঙ্গে কিছুদিন আগে আলোচনা করা ক্যালেব কার-এর 'দ্য এলিয়েনিস্ট' গল্পের কথা মনে করা যেতে পারে। দেহব্যবসায় লিপ্ত বালকের খুনের ব্যাপারটা টাইমলেস। তখনও ওটা হাই রিস্ক প্রফেশন ছিল, এখনও আছে। এখনও আমাদের চারপাশে যথেষ্ট সংখ্যক উন্মাদ ঘুরে বেড়াচ্ছে যারা মনে করে দেহব্যবসায়ীদের ধরে মারলেই বোধহয় সমাজটা শুধরে যাবে। কাজেই ক্যালেব কার যদি শুধু ওইটুকু নিয়ে গল্প ফাঁদতেন সেটা অভিনব কিছু হত না। এলিয়েনিস্ট অভিনবত্বের পুরোটাই ওই সময়টাকে অত ছবির মতো বইয়ের পাতায় তুলে আনাটা। সেই সময়ের বৃহত্তর সমস্যা, দৃষ্টিভঙ্গি, রাজনৈতিক ওঠাপড়া যেমন এসেছে, তেমনি ছোটছোট আঞ্চলিক ঘটনাও বাদ পড়েনি।  

এলিয়েনিস্ট যারা পড়েছেন জানবেন, তখন স্বচ্ছ ভারতের মতো স্বচ্ছ নিউ ইয়র্ক আন্দোলন চলছিল। আন্দোলনটা ছিল মূলত স্বেচ্ছাসেবীচালিত। সারারাত ধরে তারা শহরের রাস্তাঘাট পরিষ্কার করে বেড়াত, কোনও পথচারী গুটকার প্যাকেট ফেললে তাকে দল বেঁধে ঠেঙাত। এলিয়েনিস্ট-এর গোয়েন্দাবাহিনী যখন গভীর রাতে উন্মাদ দুষ্কৃতীকে ধরতে রাস্তায় রাস্তায় টহল দিয়ে বেড়াচ্ছে, তখন এই সব দুর্দান্ত স্বেচ্ছাসেবীর সঙ্গে দুয়েকটা দৃশ্যে আমাদের দেখা হয়। না হলেও কিছু ক্ষতি হত না। প্লটে কোনও হেরফের হত না। কিন্তু দেখা যে হল, সেটা গল্পটা কে একটা আলাদা মাত্রা দিল। আর পাঁচটা দেহব্যবসায়ী খুনের গল্পে পর্যবসিত হল না।

সার্থক প্রেক্ষাপটওয়ালা ঐতিহাসিক গল্পের আরেকটা চমৎকার উদাহরণ হবেন জেসন গুডউইন-এর গোয়েন্দা ইয়াশিম টোগালু। ইয়াশিম টোগালু তৎকালীন ইস্তানবুলের রাজপরিবার এবং অন্যান্য প্রভাবশালী লোকজনের সান্নিধ্যভোগী একজন মানুষ। আঠেরোশো ছত্রিশ সালের ইস্তানবুলে সে ঘোরেফেরে, ডাক পড়লে ( রহস্য সমাধানের) রাজবাড়িতে যায়, না হলে নিজের খুপরি ঘরে বসে রান্না করে। ইয়াশিম-এর গল্পে সে সময়ের ইস্তানবুলের ছবি এত চমৎকার ফোটে, যে মনে হয় আমি ওই শহরটাতে বসে আছি। এ প্রসঙ্গে বলে রাখি, ঐতিহাসিক গল্পে লেখক সে সময়ের বা সমাজের যে ছবিটা আঁকছেন সেটা ঠিক কিনা সে বিচার করার ক্ষমতা আমার নেই। আমি সে চেষ্টাও করছি না। দুহাজার ষোলোর ইস্তানবুল কেমন সে সম্পর্কেই আমার কোনও আইডিয়া নেই, আঠেরোশো ছত্রিশের ইস্তানবুল তো ছেড়েই দিলাম। তবে ছবিটা ভালো আঁকা হয়েছে না দায়সারা সেটা সব পাঠকই বোঝে। পড়লেই পরের ছুটিতে ইস্তানবুল বেড়াতে যেতে ইচ্ছে করছে কি না সেটাই লেখকের সবথেকে বড় পরীক্ষা।

আমি যে শহরে থাকি ঐতিহাসিক গল্প ফেঁদে বসার জন্য সেও উপযোগিতায় কিছু কম যায় না। সে দরকারি কাজটা করেছেন মধুলিকা লিডল। এঁর গোয়েন্দার নাম মুজফফর জং, আর তাঁর চারণভূমি সপ্তদশ শতাব্দীর শাহজাহানের দিল্লি। যদিও দুঃখের বিষয় এঁর প্রথম বই (এবং বেস্টসেলার), দ্য ইংলিশম্যান’স ক্যামিও ছাড়া মুজফফর জং-এর আর কোনও গল্প আমার পড়া হয়নি। দ্রুত এই ভুল সংশোধন করা দরকার।

সবসময় যে প্রেক্ষাপট নৈসর্গিক বা নাগরিকই হতে হবে এমন কোনও কথা নেই। প্রেক্ষাপট অনেক সময় হতে পারে শ্রেণী বা ক্লাসভিত্তিক। আর যে দেশে একসময় ক্লাসের রমরমা ছিল সে দেশের গোয়েন্দা গল্পে যে এর প্রমাণ থাকবে তাতে আশ্চর্য কী। ডরোথি সেয়ার্স-এর লর্ড পিঁটার উইমসি যেমন। ব্রিটেনের প্রাচীন বংশের উত্তরাধিকারী, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ থেকে ফিরে এসে শেল-শকড, পয়সা রোজগারের চিন্তা নেই, আপাতত রহস্য সমাধান করে বেড়ান। সাধারণ সমাজের খুনখারাপিও সমাধান করেন তবে তাঁর সব গল্প জুড়েই তাঁর লর্ড,  লেডি, ডিউক, ডাচেস আত্মীয়বন্ধুদের ভিড় লেগে থাকে। বিশেষ করে ‘ক্লাউড অফ উইটনেস’ গল্পে, যেখানে তাঁর নিজের দাদা, ডিউক অফ ডেনভার, স্বয়ং অপরাধী বলে অভিযুক্ত হন সেই গল্পে তো ছবিটা খুবই স্পষ্ট। উইমসি-র আরেকটা গল্প ‘গডি নাইট’-এ সমাজের একটা খুব ইন্টারেস্টিং, শ্রেণী নয়, গ্রুপই বলা ভালো, তার ছবি আছে। এ গল্পে গোলমাল ঘটছে অক্সফোর্ডের মহিলামহলের ভেতর। ডরোথি সেয়ার্স নিজে অক্সফোর্ড পাশ ছিলেন, আর সে সময় সমাজের ওই শ্রেণীটিকে, অর্থাৎ উচ্চশিক্ষিত মেয়েদের রীতিমত সন্দেহের চোখে দেখা হত। তাদের মধ্যে যদি একটা খুনখারাপি হত তখন আলোচনাটা শুধু আততায়ী ভিকটিমে সীমাবদ্ধ থাকত না, একগাদা রাজনৈতিক, সামাজিক প্রশ্ন উঠে পড়ত। গডি নাইট-এ সেসব প্রশ্ন চমৎকার তুলে এনেছেন সেয়ার্স। বইটা যদি পড়ার সুযোগ না পান তাহলে চিত্রায়ণটা দেখে নিতে পারেন। ইউটিউবে আছে।

প্রেক্ষাপট যে শুধু গল্পের কাজে লাগে তা নয়, প্রেক্ষাপট যদি তেমন ভালো হয় তাহলে প্লটের খামতি তা দিয়ে ঢাকা যেতে পারে। উদাহরণ হিসেবে আমি শার্লক হোমসের 'দ্য হাউন্ড অফ দ্য বাস্কারভিলস'-এর নাম করব। আপনাদের সকলেরই গল্পটা মনে আছে তবু আরেকবার ঝালিয়ে দিই। ডেভনশায়ারের ডার্টমুর বংশের এর বাস্কারভিল বংশের প্রাচীন অভিশাপ হল যে রাক্ষুসে হাউন্ডের কবলে পড়ে সবাই মরবে। স্যার হেনরি যখন মারা গেলেন তখন তাঁর মৃতদেহের পাশে রাক্ষুসে হাউন্ডের পায়ের ছাপ দেখে বাস্কারভিলদের হিতৈষী প্রতিবেশী ডাক্তার মর্টিমার এলেন শার্লক হোমসের কাছে পরামর্শ চাইতে। হেনরির উত্তরাধিকারী চার্লস আসছেন কানাডা থেকে, বাস্কারভিল হলের দায়িত্ব নিতে। হোমসকে তাঁর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে দিতে হবে। স্যার চার্লস লন্ডনে পৌঁছনোর পর সেখানেই এমন সব কাণ্ডকারখানা ঘটতে লাগল যে বোঝা গেল সেসবের পেছনে নরকের হাউন্ডের থেকে মর্ত্যের মানুষের কেরামতিই বেশি।

ওয়াটসনকে চলনদার করে শার্লক হোমস স্যার চার্লসকে পাঠিয়ে দিলেন ডার্টমুরে। সেখানে পৌঁছে নানারকম রোমহর্ষক কাণ্ডকারখানা হল, খানচারেক রেড হেরিং আর একখানা প্রেম আর একজন পলাতক অপরাধীর আমদানি ঘটল, ঘটনার ঘনঘটায় ওয়াটসন এবং পাঠক যখন গলা পর্যন্ত ডুবে আছে, তখন শার্লক হোমস হাসতে হাসতে সিনে ঢুকে বললেন, সেকী, বুঝতে পারোনি খুনি কে? ওই তো অমুকে। (হ্যাঁ, এইরকমের গোয়েন্দাকাহিনিও বাস্তবে হয়, 'হুডানইট'-এর বদলে যেগুলোকে বলা হয় 'হাউক্যাচদেম'। যেখানে গোড়াতেই আপনি বুঝে যান কে খুন করেছে, তারপর শুধু অপেক্ষা গোয়েন্দা খুনিকে কী করে ধরে সেই দেখার। আমি আর অর্চিষ্মান ইদানীং এই গোত্রের একটা গোয়েন্দা টিভি সিরিজ দেখছি, পরে কখনও সে বিষয়ে লেখার ইচ্ছে রইল। হাউন্ড অফ দ্য বাস্কারভিলস সে জাতের গল্প বলে আমার মনে হয় না। ) এ যেন ঠিক জটায়ুর কায়দায় রহস্য সমাধান। আগে খুনি ঠিক হয়ে গেল, তারপর তার ঘাড়ে চাপল মোটিভ, মিনস আর অপরচুনিটির জোয়াল। কিন্তু শার্লক হোমস কী করে ওই বেচারাকে চিহ্নিত করলেন তার কোনও আভাস গল্পে নেই। একটি ছেলেকে দিয়ে খোঁজখবর আনানোর কাজে রাখা হয়েছিল, হয়তো সে-ই খবর এনে দিয়ে থাকবে। যদি তাও হয়, তাহলে সেটাও ঘটেছে পাঠকের চোখের আড়ালে। গোয়েন্দাগল্পের যে কটা টেক্সটবুকে যত নিয়ম আছে, সবেতে কাটা গোল্লা। 

কিন্তু গল্পটা পড়ার সময় (বা সানডে সাসপেন্স-এ মিরের হাড়হিম করা গলায় শোনার সময়) ওসব নিয়ম আপনার মনেই আসবে না। তখন কেবলই মনে পড়বে বিস্তীর্ণ ধূসর জলাভূমির কোণে কোণে একটা হ্যাংলা হাউন্ড জিভ লকলক করে ঘুরে বেড়াচ্ছে, পাথরের আড়ালে ঘাপটি মেরে আছে কোনও জেলপালানো খুনে, আর দূরে পাহাড়ের মাথায় প্রস্তরযুগের মানুষের বানানো পাথরের বাড়ির গায়ে ঠাণ্ডা চাঁদের আলোয় ফুটে উঠেছে অজ্ঞাতচারীর ছায়া। তখন স্রেফ ঘাড়ের রোঁয়া খাড়া হয়ে ওঠা ছাড়া আর কোনও প্রতিক্রিয়া হবে না কারও। 

গোয়েন্দাগল্পের ক্ষেত্রে প্রেক্ষাপট যে কতখানি গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে সেটা বোঝার জন্য অবশ্য এত বিদেশবিভূঁইয়ে ঘুরে মরার দরকার নেই। আমাদের হাতের কাছেই একজন আছেন। তিনি কোকেন খান না, সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্মাননি, দুহাতে অব্যর্থ বন্দুক চালাতে পারেন না, দু’বার মাত্র পড়ে গোটা দেবতার গ্রাস মুখস্থ করার কথা তো ছেড়েই দিলাম। স্ত্রী পুত্র সংসার নিয়ে লেপটে থাকা বাঙালি বলতে যা বোঝায় তিনি হচ্ছেন তাই। তাঁর ভাবনাচিন্তার সঙ্গে যেটুকু পরিচয় হয়েছে তাতে তাঁর প্রগতিশীলতাও যে সময়ের তুলনায় বিরাট কিছু এগিয়ে ছিল বলে তো মনে হয় না। বরং সময়ে সময়ে মহিলাজাতির প্রতি তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি হজম করা রীতিমতো শক্ত। তবু তাঁর মৃত্যুর পঁয়তাল্লিশ বছর পরেও হিট সিনেমা বানাতে গেলে টালিগঞ্জে তাঁকে নিয়েই টানাটানি পড়ছে। কী করে এরকম হয় সেটা নিয়ে আমি অনেক ভেবেছি। আর যতবারই ভেবেছি একবার করে বুককেস থেকে ব্যোমকেশ সমগ্রটা নামিয়ে পড়েছি। আর যতবারই নামিয়েছি যতক্ষণ পড়ব ভেবেছি তার থেকে অনেক বেশি সময় চলে গেছে। একটা অদ্ভুত টানে হুড়হুড় করে পাতার পর পাতা উল্টে গেছি। টানটা কীসের? চরিত্রের? কিন্তু  শুরুতেই তো প্রমাণ হয়ে গেল, চরিত্রটা অসাধারণ নয়। প্লটের? লোকে যতই ডায়াগ্রাম এঁকে বুঝিয়ে দিক না কেন আমার সেটাও মনে হয় না।

এখন মনে হয় টানটা আসলে অজিতের গল্প বলার কায়দাটার। পাতার ওপর কলম ছোঁয়ালেই সমসাময়িক কলকাতা শহরটার সশরীরে চোখের সামনে এনে দাঁড় করানোর ক্ষমতার। ওই সত্যবতী, খোকা, স্বামীস্ত্রীর খটাখটি, দেওর বৌদির খুনসুটি নিয়ে এমন একটা চেনা, আশ্বাসময়, আরামদায়ক ঘেরাটোপের সৃষ্টি করার যার ভেতর পা রাখলে আর ফেরার উপায় থাকে না। টানটা আসলে প্রেক্ষাপটের।
    


Comments

  1. অন্বেষা সেনগুপ্তApril 27, 2016 at 5:17 PM

    আহ, কি মচতকার লিখেচেন মশাই, দিল একেবারে খুশ হয়ে গ্যালো|
    অ্যান ক্লিভস-এর বইটা ইন্টারনেটে আছে ?

    ReplyDelete
    Replies
    1. হাহা, থ্যাংক ইউ। মনে হয় না, অন্বেষা। বড্ড রিসেন্ট। তবে আমার কাছে শরীরী কপি ছিল বলে আমি খুঁজিনি। আপনি খুঁজে দেখতে পারেন।

      Delete
  2. প্রেক্ষাপটের ব্যাপারে একজন গোয়েন্দার কথা মিস করেছেন। খুঁত ধরা উচিত নয়, কিন্তু এনার কথা বলা উচিত। কিকিরা ওরফে কিংকরকিশোর রায়। বাংলাদেশের নিম্নমধ্যবিত্ত বা নিম্নবিত্তদের সাধারন রহস্য নিয়ে এমন লেখা আমি অন্তত আর কোথাও পড়িনি। গোয়েন্দাগল্প হিসেবে খুব উচ্চমানের নয়, কিন্তু প্রেক্ষাপটটা অভিনব।
    -শুভরূপ

    ReplyDelete
    Replies
    1. ধন্যবাদ, শুভরূপ। কিকিরা আমি ছোটবেলায় পড়েছিলাম। এখন প্রায় কিছুই মনে নেই। আপনি যখন বললেন তখন নিশ্চয় আবার পড়ে দেখব। অনেক ধন্যবাদ।

      Delete
    2. গোয়েন্দা গল্পের ব্যাপারে আপনার আর আমার মতের বেশ মিল। তাই আপনাকে একটা অনুরোধ-
      পুচকি সিগারেট ফোঁকা, ছোটোখাটো চেহারা, বোলার হ্যাট পরিহিত, এপ্রিল মাসেও ওভারকোট-মাফলার পরা, পেটেন্ট লেদারের জুতো, ডিম্বাকৃতি মাথা, অতুলনীয় মোম-মাখানো গোঁফ ও সর্বোপরি মস্তিষ্কের ছোট্ট ধূসর কোষের অধিকারীকে নিয়ে কিছু লিখুন।

      আমার তো ধারণা উনি সর্বকালের সেরা গোয়েন্দা। আর ওই লেখিকার প্রসঙ্গেই একটা প্রশ্ন। "Why didn't they ask Evans?" বইটি সম্বন্ধে আপনার কি মতামত?

      Delete
    3. WDTAE-এর প্রতি আমার যেটা প্রধান অভিযোগ, সেটা হচ্ছে ক্যারিশম্যাটিক গোয়েন্দার অনুপস্থিতি। অবান্তরের পুরোনো পোস্টে যে কথা হচ্ছিল, যে গোয়েন্দাগল্প ভালো হওয়ার জন্য গোয়েন্দার চরিত্র জোরদার হওয়া জরুরি, সেটা এখানে মিসিং। (বাই দ্য ওয়ে, WDTAE-এর যে টিভিরূপ হয়েছে, সেখানে এই খামতি ঢাকার জন্য মিস মার্পলের চরিত্র গোঁজা হয়েছে, যাতে অভিনয় করেছেন জুলিয়া ম্যাকেনজি।) তাছাড়াও ফ্র্যাংকলি বলছি, ওই ফ্র্যাংকি চরিত্রটা যতবার পড়ি আর দেখি, গা জ্বলে যায়। ববিকে গোয়েন্দা হিসেবে মেনে নিতে যদিও বা পারতাম, তার সঙ্গীটি, একপিস। এই ধরণের ওভারকনফিডেন্ট, ম্যানিপুলেটিভ মহিলাচরিত্রের প্রতি আগাথা ক্রিস্টির দুর্বলতা ছিল মনে হয়। সিটাফোর্ড মিস্ট্রির এমিলি ট্রেফিউসিস তার আরেক প্রমাণ। আরও আছে, কিন্তু তাদের সবাইকে নিয়ে বিষোদগার করতে বসলে আমি আর থামতে পারব না, তাই ক্ষান্ত দিচ্ছি।

      বুঝতেই পারছেন, এত খুঁত ধরছি যখন তখন গল্পটা পড়ে বিশেষ মজা পাইনি। কিন্তু আমার বিশ্বাস, দোষটা গল্পের নয়। প্লটটা যথেষ্ট ঘোরালো, সাসপেক্টরাও বর্ণময়। পোয়্যারো-হেস্টিংস-জ্যাপ কিংবা মার্পলের আরামটা থাকলে গল্পটা আমার নিশ্চিত ভালো লাগত।

      আপনার সঙ্গে মত মিলল?

      পোয়্যারোকে নিয়ে লেখা যায়, তবে আমার ধারণা আমার থেকে অনেক অনেক ভালো লেখা ওঁকে নিয়ে অনেকে লিখে ফেলেছেন। তবু আপনি যখন বলছেন চেষ্টা করে দেখব একবার।

      Delete
    4. Manipulative,overconfident মহিলা চরিত্রের প্রতি যে Agatha Christie-র দুর্বলতা ছিল সেটা অস্বীকার করার উপায় নেই। তার আরেকটা উদাহরণ হল Seven Dials Mystery-র Bundle. আমি ওই বইটার (WDTAE) কথা এই জন্যই বললাম যে ওরকম মাঠ ঘাট থেকে তুলে আনা হঠাৎ রহস্য আমার খুব ভাল লাগে।

      Delete
    5. আরেকটা প্রশ্ন। আমাকে কয়েকজন ইংরেজি গোয়েন্দা সিরিজের খবর দিতে পারেন? আগাথা ক্রিস্টি পড়া শেষ হয়নি এখনও, কিন্তু একটু অন্য কারুর লেখা পড়তে ইচ্ছে হচ্ছে। Dorothy Sayers নয়। ওই পিটার উইমসি-র আগেই আমি রহস্য সমাধান করে ফেলি। :)

      Delete
    6. আপনি রুথ রেন্ডেল পড়েছেন? ওঁর ইন্সপেক্টর ওয়েক্সফোর্ড সিরিজটা পড়ে দেখতে পারেন। পি ডি জেমস-এর Dalgliesh, Ngaio Marsh-এর ইন্সপেক্টর Alleyn সিরিজটাও মন্দ না। আর জোসেফাইন টে-র অ্যালান গ্রান্টও পড়তে পারেন। তবে আপনি যখন বলেইছেন যে আপনার সঙ্গে আমার গোয়েন্দারুচি মেলে তাহলে সাবধান করে দিই, এঁরা কেউই কিন্তু পোয়্যারোর মতো জমকালো নন। আর এঁরা সকলেই একটু পুরোনো দিনের। তবে আপনার যদি পোয়্যারো ভালো লাগে তাহলে সেটা সমস্যাজনক হবে না আশা করি।

      Delete
  3. এই লেখাটায় একদম আমার মনের কথাটা বলেছেন কুন্তলা। গোয়েন্দাগল্পে প্রেক্ষাপটের গুরুত্বটা খুব ভালভাবে তুলে ধরেছেন। :)
    আরো একটা লাভ হল লেখাটা থেকে - অনেক নতুন লেখক আর গোয়েন্দার কথা জানতে পারলাম। :)

    ReplyDelete
    Replies
    1. ধন্যবাদ, অরিজিত।

      Delete
  4. aamake sweekar korte hobe aami goyenda golpo aami sudhui porechi.. etota bhebe dekhini.. khub khub bhalo laglo lekha.. ann cleeves aar jason goodwin porini.. siggir porbo.. aar porbo madhulika liddle.. onek onek thanks ei intro gulor jonne..

    Bhalo thakben,

    Indrani

    ReplyDelete
    Replies
    1. হাহা ইন্দ্রাণী, আমিও না ভেবে পড়ার পক্ষপাতী। ইন ফ্যাক্ট, আমিও না ভেবেই পড়ি। তবু এইগুলো মনে হল, লিখলাম। খুব বেশি ভাবতে হয়নি, আই প্রমিস। ভাবলে আরও ভালো লেখা হত। বইগুলো যদি জোগাড় করতে পারেন, পড়বেন। মনে হয় ভালো লাগবে।

      Delete
  5. Ami ei sobkota boi jogar kore pore felbo. Felboi felbo. Onek onek dhonnobad ei post ta lekhar jonno Kuntala di.
    Accha KiKiRa ke niye lekhar suggestion amio tomake debo vebechilam. Oi series eo ato sundor prekkhapot bornona ache ki bolbo. Client kivabe joler glass ta dhoreche theke ceiling fan ta kivabe cholche sober emon nikhut bornona je tomar mone hobe tumi oikhane present acho.
    Christie r Miss Marple ar Poirot amar pora hoye gache, ami akhon onno novel gulo dhorechi. Tar modhye sedin porlam Secret of Chimneys. Rohosso guli maro, ato sundor mojar style e lekha je pore mon bhore gelo. By the pricking of my thumbs of khub bhalo legeche amar. Sittaford Mystery niye ami akmot. Osojyo character oi Emily.
    No. 1 Ladies Detective Agency series ta niye kichu idea ache tomar?

    ReplyDelete
    Replies
    1. আছে, কিন্তু আমার খুব একটা ভালো লাগেনি, কুহেলি। মানে ওই নামটা একটু মিসলিডিং মনে হয়েছে। বইয়ের ওপর ডিটেকটিভ এজেন্সি ছাপা থাকলে মনে হয় না, যে এইবার ধুন্ধুমার খুনখারাপি শুরু হবে, আর জাহাঁবাজ গোয়েন্দারা (তিনি মহিলা যখন আরও মজা) সে সব রহস্যের সমাধান করে বেড়াবেন? আসলে বইটা/গুলো সেরকম নয় একেবারেই। খুবই অহিংস সব রহস্য। রহস্য সমাধানের থেকেও বতসোয়ানার ওই সময়কার মানুষ, সমাজের ছবি ফুটিয়ে তোলাই লেখকের উদ্দেশ্য ছিল বলে মনে হয়।

      নাহ কিকিরাটা আরেকবার ঝালিয়ে নিতে হবে। আর আগাথা ক্রিস্টির হিউমার সম্পর্কে আমি তোমার সঙ্গে একমত। মন ভরে যায়।

      Delete
    2. Oh :( nah ohingso rohosse ami akdomi interested noi. tale ota baad.

      Delete
  6. Vera Dekhalm, dekhchhi. Khub bhalo laaglo. Miss Marple er BBC series ta kamon? Aapni to khub bhakto, dekhe thakben. Tai ektu suggestion chaichhi. :)

    ReplyDelete
    Replies
    1. ভেরা ভালো লাগছে? গুড গুড। মিস মার্পলের অনেকগুলো সিরিজ আছে (নামচরিত্রের অভিনেতাভেদে)। তবে মূলত যে তিনটে বাজারে চলে সেগুলো হচ্ছে ১। জোয়ান হিকসন সিরিজ, ২। জেরাল্ডিন ম্যাকওয়ান সিরিজ, ৩। জুলি ম্যাকেনজি সিরিজ। আমার সবথেকে ভালো লাগে জোয়ান হিকসন সিরিজটা। আপনি তিনটেই একটা একটা করে দেখুন না হয় চন্দ্রচূড়, তারপর দেখা যাক আমাদের মত মিলল কি না।

      Delete
    2. Oi Joan Hickson er tai dekhbo. Bhadramahilar wiki te chhobi dekhei bhalo lege gechhe. Rangapisimar biliti version emoni hawa uchit. :P

      Delete
    3. এ প্রসঙ্গে একটা ট্রিভিয়া বলি, জোয়ান হিকসনের কোনও একটি পারফরম্যনস দেখার পর (খুব সম্ভবত 'মার্ডার শি সেড' ছবিতে যেখানে হিকসন একটি ছোট পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করেছিলেন আর মার্পল সেজেছিলেন মার্গারেট রাদারফোর্ড) আগাথা ক্রিস্টি নিজে হিকসনকে বলেছিলেন যে তাঁর মতে হিকসন আদর্শ মার্পল হতে পারেন।

      Delete

Post a Comment