ভালো ডাক্তার



আমার আর অর্চিষ্মানের সারাদিনের সবথেকে ব্যস্ত সময় কোনটা? অন্য কাউকে আন্দাজ করতে বললে তারা হয়তো বলবে, সকাল সাতটা থেকে আটটার মধ্যের সময়টাই হবে। অফিসে যাওয়ার আগের তাড়াটাই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ তাড়া। যারা কোনওদিন অফিসে যায়নি তারাও এ তাড়ায় ভুগেছে। যেমন আমার ঠাকুমা। অফিস যাওয়া নিয়ে কেউ মাসল ফোলাতে এলে ঠাকুমা বলতেন, আমরা অফিস যাই নাই তো কী হইসে, আমরা অফিসের ভাত দিসি। যে তাড়া শুধু ব্যক্তির নয়, গোটা বাড়ির গায়ে যার আঁচ লাগে, তার থেকে বড় তাড়া কি হতে পারে কিছু? 

হতে পারে। আমরাই তার প্রকৃষ্ট প্রমাণ। সকালের ওই সময়টা আমাদের দেখলেই সেটা স্পষ্ট হয়ে যাবে। চায়ে চুমুক দিচ্ছি যেন বিলম্বিত ধামার, আঁকশি দিয়ে মগজের কোণাঘুঁজি থেকে টেনে এনে কথা বলছি তো বলছিই। কবে কোথায় কী হয়েছিল, স্কুলের স্পোর্টসে কবে ব্যান্ড বাজিয়েছিলাম, সেই বিট মনে করে বিস্কুটের প্যাকেটের ওপর বাজিয়ে শোনাচ্ছি। যা এখনও হয়নি, হবে, ছাব্বিশে জানুয়ারির ছুটিতে বেড়াতে যাব, কত মজা হবে, সেই নিয়ে লেবু কচলাচ্ছি। কথা না থাকলে টিভি আছে। কিছু না পেলে নাপতোল। ন’শো নিরানব্বই টাকার জুসারনিষ্পেষিত কমলার রসে চুমুক দিয়ে ঘোষকের শিহরণ দেখছি হাঁ করে। 

এ সবই আসলে নিজের মনকে চোখ ঠারানোর চেষ্টা। আর কিছুক্ষণের মধ্যে যে বধ্যভূমির দিকে রওনা দিতে হবে সেই হুমকিটার মুখে বুক চিতিয়ে থাকার একটা অন্তিম আয়াস। তা সে যতই জোয়ারের মুখে বালির বাঁধ হোক না কেন। 

আমাদের তাড়া যদি দেখতে চান তাহলে আমাদের বাড়িতে আপনাকে আসতে হবে সন্ধ্যেবেলা। যখন আমরা অফিস থেকে বাড়ি ফিরব। চাবি ঘুরিয়ে ঘরে ঢুকে, ব্যাগ রেখে, জামা পালটিয়ে, খাবার খুঁজে খেয়ে, বাসন তুলে, দাঁত মেজে, রান্নাঘর, গ্যাসের নব, গিজারের সুইচ বন্ধ করে, বন্ধ হয়েছে কিনা একশোবার চেক করে দৌড়ে এসে লেপের তলায় সেঁধোবো। এ সব কাজ করার সময় আমাদের তাড়া দেখার মতো। কারণ এ কাজগুলোর ওপারেই রয়েছে ইন্টারনেটের অপার সমুদ্র। যত তাড়াতাড়ি এদের সারা যাবে, তত তাড়াতাড়ি সে সমুদ্রে ডুব দেওয়া যাবে। 

ওই সময়টা আমাদের সারাদিনের সবথেকে তাড়াহুড়োর, সবথেকে আনন্দের। এবং আতংকেরও। কারণ আমাদের বাড়ির যত অ্যাকসিডেন্ট সব এই সময়েই হয়েছে। কেউ কাউকে জায়গা না ছেড়ে সরু দরজা দিয়ে পাশাপাশি পাস করতে গিয়ে টক্কর লেগে একজনের হাত থেকে ভর্তি ডালের বাটি, অন্যজনের হাত থেকে টইটম্বুর ঝোলের কড়াই ছিটকে গেছে, মসৃণ মার্বেলে পিছলে পড়ে থুতনি থেঁতলে গেছে, লোহার টুল মেঝের বদলে পায়ের পাতার ওপর নামিয়ে রেখে কড়ে আঙুল ডিসলোকেট হয়ে গেছে।

অবশেষে আমরা ঠেকে শিখেছি। ওই সময়টা আমরা খুব সাবধানে চলাফেরা করি। এমন কিছু করি না যাতে মনঃসংযোগ বিঘ্নিত হয়। একে অপরের সঙ্গে বাক্যালাপ, ইয়ার্কিফাজলামি মিনিমাম রাখি। কারও স্পিড বিপজ্জনকরকম বেড়ে যাচ্ছে দেখলে বা কেউ ফুর্তি চেপে না রাখতে পেরে হানি সিং গেয়ে উঠছে দেখলে চেঁচিয়ে সাবধান করি।  

সামলে! কিছু একটা হয়ে গেলে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে কিন্তু! 

অমনি সাপের মাথায় ধুলো পড়ে, গাড়ির মুখে স্পিডব্রেকার। কারণ ছিটকে পড়া ডাল পরিষ্কার করার থেকেও, ফাটা থুতনি আর নড়ে হাওয়া আঙুলের ব্যথা সহ্য করার থেকেও আমরা ডাক্তারের কাছে যেতে খারাপ বাসি। 

আপনি বলবেন, কে-ই বা ভালোবাসে? ট্রেনের জন্য অপেক্ষার থেকেও অকথ্য হচ্ছে ডাক্তারের চেম্বারের বাইরে বসে থাকা। প্ল্যাটফর্মে তবু মেজাজের ভ্যারাইটি মেলে, কেউ হাসছে, কেউ ভুরু কুঁচকোচ্ছে, কেউ কান চুলকোচ্ছে, কেউ হাই তুলছে। ডাক্তারের চেম্বারের বাইরে যারা অপেক্ষা করছে তাদের সবারই মুখ হাঁড়ি, সকলেই তিতিবিরক্ত। 

কিন্তু আমাদের খারাপ লাগাটা রোগীদের মুখভঙ্গির বৈচিত্র্যের অভাবসংক্রান্ত নয়। জন্মে থেকে আমরা দুজনেই অগুন্তি ডাক্তারের কাছে গেছি, গড়পড়তা বাঙালি যেমন যায়, যেতে যেতে দুজনেরই ডাক্তারের কাছে যাওয়াটা জলভাত হয়ে গেছে। ডাক্তারখানা যেতে আমাদের ভালো না লাগলেও খারাপ লাগে না।

আমাদের অ্যালার্জি স্বয়ং ডাক্তারে। বেখাপ্পা সময়ে, ধরা যাক রাত আটটায়, গুরুতর কিছু ঘটলে, যেমন থুতনি ফাটলে, আমাদের যে ডাক্তারবাবুর কাছে যেতে হয়, তাঁর কাছে যেতে আমরা ভালোবাসি না। ইন ফ্যাক্ট, তাঁর কাছে যাওয়ার কথা মনে পড়লেই আমাদের গা জ্বালা করে। 

অথচ জ্বলার কোনও কারণ নেই। কারণ যখনই গেছি, যতবারই গেছি, তিনি আমাদের সব সমস্যার সমাধান করেছেন। ফাটা থুতনি জুড়ে দিয়েছেন, বেঁকা আঙুল সোজা করে দিয়েছেন। তবু, অনেক চেষ্টা করেও আমরা তাঁর প্রতি এককুচি কৃতজ্ঞতাও জোগাড় করে উঠতে পারি না। প্রতিবার ওঁর চেম্বার থেকে বেরিয়ে দুশো গজ রাস্তা পেরিয়ে বাড়ির দিকে হাঁটতে হাঁটতে ওঁর গুষ্টির তুষ্টি করি। একটা স্প্রে দিতে পাঁচশো টাকা নিয়ে নিল, দেখলে? ডাকাত কোথাকার।

আমার মতে, ডাক্তারের সাফল্যের পুরোটাই রোগ সারানোর ওপর নির্ভর করে না। খানিকটা রোগীর বুকে সাহস আর ভরসা জাগানোর ওপরেও করে। কার লেখাতে যেন পড়েছিলাম, ডাক্তার নীলরতন সরকারকে দেখলেই নাকি লোকের অর্ধেক রোগ সেরে যেত। আমি বিশ্বাস করি ওই গুণটা ভালো ডাক্তার হওয়ার একটা আবশ্যিক শর্ত। আপনি বলতে পারেন ডাক্তারদের সম্পর্কে আমি মন্তব্য করার এত অধিকার পেলাম কোত্থেকে? তাহলে বলতে হবে কৃতিত্ব আমার নয়, মায়ের। আমার মা আমাকে ছোটবেলা থেকে অনেক ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেছেন। অনেকসময় আমাকে যেতেও হয়নি, ডাক্তাররা যেচে এসে আমাকে দেখেছেন। যেমন ট্রেনে একদিন একজন সুবেশা আমার উল্টোদিকে বসেছিলেন। অনেকক্ষণ ধরেই তিনি আমাকে নজরে রেখেছিলেন। লিলুয়া ছাড়িয়ে ট্রেন যখন হাওড়ায় ঢুকবে ঢুকবে করছে,তখন তিনি আর থাকতে পারেননি। ব্যাগ থেকে ফস করে একটা প্রেসক্রিপশনের প্যাড বার করে তাতে ব্রণ সারানোর পাঁচখানা ওষুধ লিখে দিয়েছিলেন। আমি অবশ্য সেগুলো কিনে লাগাইনি, কারণ যেচে করা ডাক্তারির মূল্য নেই। যাই হোক, আমি বলতে চাই যে গত ছত্রিশ বছরে বহু ডাক্তার আমার পেট টিপে, কান টেনে, চোখের পাতা তুলে, গলায় টর্চ ফেলে পরীক্ষা করেছেন এবং এই প্রক্রিয়ায় নিজেরাও আমার দ্বারা পরীক্ষিত হয়েছেন। সে সব পরীক্ষার পর আমি সিদ্ধান্তে এসেছি যে শুধু রোগ সারালেই ডাক্তার ভালো হয় না।

অবশ্য আমার ভালোর সংজ্ঞাও অনেকের সঙ্গে না মিলতে পারে। ভালো ছেলে কাকে বলা হবে সেই নিয়ে একজনের সঙ্গে আমার কথোপকথন প্রায় তর্কের দিকে যাচ্ছিল। দোষের মধ্যে আমি কেবল বলেছিলাম যে বাইরে থেকে দেখে ফস করে কার ছেলে ভালো কার মেয়ে খারাপ এসব সিদ্ধান্তে পৌঁছোনোটা গোলমেলে হতে পারে। তাতে তিনি রেগে গিয়ে তাঁর এক কলিগের ছেলের উদাহরণ দিলেন, আই আই টি থেকে পাশ করে মাসে দেড় লাখ টাকার চাকরি বাগিয়েছে। “তুমি একে ভালো ছেলে বলবে, নাকি একেও ভালো ছেলে বলবে না?” আমি মেনে নিয়ে বললাম, “হ্যাঁ, এই হচ্ছে ছেলের মতো ছেলে।” তখন তিনি খুব খুশি হলেন, আর আমি যে ভালো মেয়ে, ওঁর এ বিশ্বাসটা ভাঙতে ভাঙতেও ভাঙল না। 

ডাক্তারের ভালোমন্দ নিয়েও আমার সঙ্গে লোকের মেলে না। আমার ছোটবেলায় দেখা দু’জন ডাক্তারের একজন ছিলেন চক্রবর্তী, একজন ছিলেন সেনগুপ্ত। চক্রবর্তীর পসার সেনগুপ্তর থেকে কম ছিল। চক্রবর্তী চিকিৎসা করতেন পাড়ায়, সেনগুপ্তের ক্লিনিক ছিল স্টেশনের কাছে। চক্রবর্তী সাইকেল চেপে রোগীর বাড়ি বাড়ি যেতেন, সেনগুপ্ত কীসে চড়ে যেতেন আমি জানি না, আমাদের বাড়িতে কোনওদিন ওঁকে হাউসকল দেওয়া হয়নি, তবে সেই আমলেই ওঁর একটা লাল টুকটুকে মারুতি আটশো ছিল। সবাই বলত সেনগুপ্ত চক্রবর্তীর থেকে ভালো ডাক্তার। কঠিন অসুখ হলে বলত, এ কেসটা চক্রবর্তীর হাতে ফেলে রাখা হবে উচিত না, সেনগুপ্তর কাছে নিয়ে যাও। আমার মা আমাকে নিয়ে একবার সেনগুপ্তর কাছে গিয়েছিলেন। খানপঁচিশ লোক লাইন দিয়ে বাইরে বসে ছিল, ঘণ্টাখানেক পর আমাদের ডাক পড়ল। চক্রবর্তী কেমন হেসে হেসে কথা বলতেন, কোন ক্লাসে পড়, বড় হয়ে কী হবে ইত্যাদি জানতে চাইতেন, আর সেনগুপ্ত মুখের দিকে তাকালেন পর্যন্ত না। ওই একবারই সেনগুপ্তর কাছে যাওয়া হয়েছিল, তারপর থেকে আমরা আবার চক্রবর্তী ডাক্তারকে দেখাতে শুরু করলাম। এখনও দেখাই। চক্রবর্তী ডাক্তার এখন সাইকেল ছেড়ে স্কুটার ধরেছেন। সেনগুপ্ত অনেক দিন আগে মারুতি আটশো ছেড়ে এস ইউ ভি তে প্রোমোশন নিয়েছেন। এখন তাঁর চেম্বারের জায়গায় পাঁচতলা নার্সিংহোম। এবার গিয়ে দেখলাম নার্সিংহোমের পাশে একটা স্কুলও খোলা হয়েছে। ওটা মিসেস সেনগুপ্ত দেখেন। স্কুলের নাম আমার মনে নেই, টাইনি টটস্‌ বা মামা’জ প্রাইড, দুটোর মধ্যে যে কোনও একটা হবে। শিক্ষা ও চিকিৎসা, এই দুই মহান আদর্শের ঘাড়ে ভর দিয়ে সেনগুপ্ত সাম্রাজ্য হইহই করে বিস্তৃত হচ্ছে। আর চক্রবর্তী স্কুটার চেপে রোগীর বাড়ি বাড়ি দৌড়োচ্ছেন। কে ভালো ডাক্তার এ নিয়ে কারও মধ্যেই কোনও সন্দেহ নেই, ঠিক যেমন আমার নিজের মনেও সন্দেহ নেই যে আমার বা আমার প্রিয়জনের অসুখ হলে আমি কার কাছে যাব।

ডাক্তারের ভালোমন্দ সম্পর্কে আরও একটা খুব ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হচ্ছে যিনি যত নাগালের বাইরে তিনি তত ভালো ডাক্তার। ভালো ডাক্তারের নমুনা দিতে গিয়ে কেউ বলে না, উনি আমার বা আমার চেনা কাউকে সারিয়ে দিয়েছেন। বলে বাপরে, উনি স্বয়ং ভগবান, বিকেল তিনটেয় দেখাতে গেলে সকাল চারটে থেকে লাইন দিতে হয়। এর পরেও ডাক্তারবাবুর ক্ষমতা সম্বন্ধে সন্দেহ থাকলে আপনি পাগল। এরকম একজন ডাক্তারবাবুর কাছেও মা আমাকে নিয়ে গিয়েছিলেন। সকাল আটটায় গেলাম, পালা এল বিকেল সাড়ে তিনটেয়। ভারি দরজা ঠেলে ঢুকে তাঁর চেম্বারের বিশালত্ব, সজ্জা এবং স্বয়ং ডাক্তারবাবুর গাম্ভীর্য দেখে মুগ্ধ হয়েছিলাম। তবে সবথেকে মুগ্ধ হয়েছিলাম ডাক্তারবাবুর চেম্বারের প্রশাসনিক দক্ষতায়। আপনি ডাক্তারবাবুর চেম্বারের চৌকাঠ পেরোনোর মুহূর্ত থেকে আবার চৌকাঠ ডিঙিয়ে এপারে আসা পর্যন্ত আপনার প্রতিটি পদক্ষেপ, নিঃশ্বাসপ্রশ্বাস মাপার জন্য পাহারাদার আছেন। তিনি প্রায় আপনার কনুই ধরে নিয়ে গিয়ে চেয়ারে বসাবেন, নিজের সমস্যার বর্ণনা শুরু করার আদেশ দেবেন এবং এও বলে দেবেন যে এবার থামুন, ডাক্তারবাবু বুঝে গেছেন, আর বলার দরকার নেই। ডাক্তারবাবুর দামি সময়ের একবিন্দুও যাতে নষ্ট না হয় সে দিকে নজর রাখাই এঁর কাজ। খুবই জরুরি কাজ, কারণ ইনি থাকতেই এবং নিজের কাজ এমন দক্ষতার সঙ্গে সম্পন্ন করতেই সকাল আটটায় আসা রোগী বেলা তিনটেয় ঢুকতে পারছে, ইনি না থাকলে সেটা নির্ঘাত পরদিন সকাল আটটায় দাঁড়াত। 

এতদিনের অভিজ্ঞতায় আমি বুঝেছি যে ডাক্তারের ভালোমন্দ নিয়ে প্রত্যেকের নিজস্ব একটা ধারণা আছে। অন্যের কাছে ভালো ডাক্তার কীসে হয় আমার জানা নেই, আমি কাকে ভালো ডাক্তার বলি শুধু সে কথাই আমি অবান্তরে বলতে পারি। এক, ডাক্তারকে ডাক্তারের মতো দেখতে হতে হবে। ডাক্তারকে কেমন দেখতে হওয়া উচিত জিজ্ঞাসা করলে আমি উত্তর দিতে পারব না, তবে কর্পোরেটের সি ই ও-র মতো দেখতে যে নয় সেটা বলতে পারি (আমাদের রাত আটটার আপৎকালীন ডাক্তারবাবুকে অবিকল ও’রকম দেখতে)। দুই, ডাক্তারকে অতিব্যস্ত হলে চলবে না। মানে আমার কথা, তা সে যতই বোকাবোকা কিংবা অপ্রয়োজনীয় হোক না কেন, শোনার সময় তাঁর থাকতে হবে। তিন, ডাক্তারবাবুর সঙ্গে ওইসব জায়গার সংস্পর্শ না থাকলেই ভালো হয় যেখানে ন’হাজার ন’শো নিরানব্বই টাকায় হোল বডি চেকআপ প্যাকেজ হয় আর প্যাকেজে কর্নফ্লেক্স আর দাগ লাগা কলাওয়ালা ব্রেকফাস্ট ফাউ থাকে। আমার চতুর্থ এবং শেষ শর্ত হচ্ছে ডাক্তারবাবুর হাতে আংটি আর দেওয়ালে সত্য সাঁইবাবা কিংবা মা সারদা বিরাজ না করলেই ভালো। ডাক্তারের কাছে গেছি মানে আমি নিজেই যথেষ্ট ভয় পেয়ে আছি, এমন কারও কাছে আমি যেতে চাই না যিনি আমার থেকেও বেশি ভয় পেয়ে আছেন। 

সুখের বিষয়, অন্য অনেক রকম ডাক্তারবাবু দেখলেও সারাজীবন আমি এমন ডাক্তারবাবুদেরও সান্নিধ্য পেয়েছি যিনি আমার সমস্ত শর্ত পূরণ করেছেন। ছোটবেলার চক্রবর্তী ডাক্তারের কথা তো আগেই বললাম, বড়বেলাতেও আছেন ডাক্তার দাস। আমাদের মাম্পস থেকে জন্ডিস সব সারিয়ে দিয়েছেন। ইন ফ্যাক্ট, চেম্বারে ঢুকে ওঁর উল্টোদিকে বসার সঙ্গে সঙ্গেই আমাদের মন থেকে অর্ধেক ভয় চলে গেছে, আমরা নিঃসন্দেহ হয়েছি যে সারাতে পারলে ইনিই পারবেন। হেসে কথা বলেছেন। চেম্বারে, রাস্তায়, রসরাজে মিষ্টি কিনতে কিনতে। যেচে জিজ্ঞাসা করলে বলেছেন, এখন টেস্ট করানোর দরকার নেই, লাগলে আমি বলে দেব। 

আমাদের এখন আফসোস হয়, ডাক্তারবাবু জেনারেল ফিজিশিয়ান হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দাঁত, নাক, কান, চোখ, হাড় এ সব নিয়েও কেন পড়াশোনা করে রাখলেন না। তাহলে আমাদের আর অফিস থেকে ফিরে অত পা টিপেটিপে হাঁটাচলা করতে হত না। 



Comments

  1. etto bhalo lekhatay bangrejite type korte hocche bole sorry . kintu porchi apise faki mere sekhane ar avro pabo kothheke . ar pore fele rakhle pache na kora hoy ( emon hoyeche besh koyekbar) . jai hok daktar babu songkranto sob kota boktobyoi thik , ami apatato je daktarer under e achi take choose korar onytomo karon etai chilo je se hese kotha bolechilo amar sathe :) - PB

    ReplyDelete
    Replies
    1. থ্যাংক ইউ, প্রদীপ্ত। ডাক্তারদের সঙ্গে আসলে এত গোপন কথা শেয়ার করতে হয় যে লোকটাকে পছন্দ না করতে পারলে মুশকিল।

      Delete
  2. একে অপরের সঙ্গে বাক্যালাপ, ইয়ার্কিফাজলামি মিনিমাম রাখি। কারও স্পিড বিপজ্জনকরকম বেড়ে যাচ্ছে দেখলে বা কেউ ফুর্তি চেপে না রাখতে পেরে.....

    paro o tumi...baroi fajil kintu tumi...bere lekha...ami paposh somet horke gechi besh kobar...tai bujhi tomar samaosya ta..:--)

    porsenjit

    ReplyDelete
    Replies
    1. পাপোশ অতি ডেঞ্জারাস জিনিস, প্রসেনজিৎ। বেশ কয়েকবার মৃত্যুর মুখোমুখি হয়ে আপাতত সবগুলো ভাঁজ করে তুলে রেখেছি।

      Delete
  3. খুব ভালো লিখেছো. সারাদিনের ব্যস্ত সময় থেকে কিভাবে ডাক্তারের প্রসঙ্গে চলে গেলে টেরটাও পাওয়া গেলোনা. ঠাকুমার অফিসের ভাত দিসি হলো গিয়ে quote of the day. ভালো ছেলের ব্যাপারেও একমত, এই ব্যাপারে লোকের সাথে হ্যাঁ হুঁ করে কাটিয়ে দেওয়াই ভালো. ডাক্তার ভালো হওয়ার শর্তগুলো একদম ঠিক. যে কোনো সার্ভিস প্রোভাইডার এর ব্যাপারেই সত্যি. আর যেচে করা ডাক্তারির মূল্য নেই সে কথা অহরহ আমার বর এর কাছে শুনতে হয়. হ্যাঁ উনি হলেন সেই লোক যার কাছে কেউ যেতে ভালোবাসেনা. তাই ওর উপদেশ না শুনলেই শুনতে হয় যে ভিসিট দিতে হচ্ছে না তো তাই কোনো মূল্য নেই ডাক্তারি উপদেশের. আর আমি ভিসিট দেওয়া ডাক্তারের কথাও যে শুনিনা সেটা প্রাণপণে বোঝানোর চেষ্টা করি.

    ReplyDelete
    Replies
    1. হাহা, ভিজিট না নিলে ডাক্তারির মহিমা কমে যায়, এ আমিও বিশ্বাস করি, অমিতা।

      Delete
  4. বই এর পোস্ট এর কমেন্ট এখানেই করছি. তোমার সেরা চার-এ যে আমার পছন্দের অলিভ কিটরিজ স্থান পেয়েছে তাই কি খুশি হলাম কি বলবো. আমি তো বছরে তিন চারটে বই পড়ি তাই. আর ওই লিস্ট থেকে Stoner নিয়ে এসেছি লাইব্রেরী থেকে. দুঃখ্যের বিষয় Casual Vacancy অনেক আগে পড়েছি আর ভালো লাগেনি. তারপর তোমার রিভিউও পড়েছি. বুঝতে পেরেছি নিশ্চই ভালোই হবে, আমি শুধু উপলদ্ধি করতে পারিনি. তোমার ব্লগ থেকে বই এর খবর অনেক জানতে পারি. তাই অনেক কৃতজ্ঞ.

    ReplyDelete
    Replies
    1. আরে অমিতা, উপলব্ধি করতে পারেননি একেবারেই সত্যি না, কারণ বই অতি অদ্ভুত জিনিস কার যে কোনটা ভালো লাগবে সেটা বোঝা খুব শক্ত। আমারও অনেক বিখ্যাত বই অতি খারাপ লাগে, তা বলে কি বলব আমি সেগুলো বুঝিনি? (একটা চরম সমাপতন হল, এই বই বোঝা না বোঝা নিয়ে একটা পোস্ট অতি সত্বর আসছে অবান্তরে।)

      অলিভ কিটরিজ আমার সত্যি ভালো লেগেছে। এই বইটা নিয়ে সেই মাসের পোস্টেও কথাবার্তা হয়েছিল আপনার সঙ্গে, মনে আছে।

      Delete
    2. স্টোনার পড়ছি, খুব ভালো লাগছে। কিন্তু কি দুঃখের। অলিভ কিটরিজের মতোই বিষণ্ণতায় মোড়া। HBO সিরিজটা দেখেছিলে?

      Delete
    3. আরে কী মজা! পড়ুন পড়ুন, অমিতা। স্টোনার হৃদয়বিদারক। কেমন লাগল জানাবেন কিন্তু প্লিজ। কিটরিজের এইচ বি ও সিরিজ দেখা হয়নি এখনও, আজেবাজে কাজে সময় চলে যাচ্ছে। এ বছরই দেখব। রেজলিউশনের লিস্টে ঢুকিয়ে নিলাম।

      Delete
  5. "আমরা অফিস যাই নাই তো কী হইসে, আমরা অফিসের ভাত দিসি।" Thakuma is the best.

    ReplyDelete
    Replies
    1. হাহা, একমত, তিলকমামা।

      Delete
  6. ishhh.. internet er apar samudre tomar ekta site kom pore, jetate amra roj sagrahe jhapate pari :) tumi nijer site e jhapiye ar ki korbe, sob to agei jana :)

    ReplyDelete
    Replies
    1. আরে না কাকলি, অনেক সময় জানা থাকে না। এক জিনিস লিখতে শুরু করে অন্য জিনিসে পৌঁছে যাই। তাতে আমার আপত্তি নেই অবশ্য, এই বোরিং জীবনে যে কটা চমক থাকে সে কটাই স্বাগত।

      Delete
  7. কেউ ফুর্তি চেপে না রাখতে পেরে হানি সিং গেয়ে উঠছে দেখলে চেঁচিয়ে সাবধান করি। ami kuler dana golaye atke morchilam arektu hole.
    bari fire internet khule bosar tara niye highest of five.

    ReplyDelete
    Replies
    1. হায়েস্ট ফাইভ, কুহেলি। ইন্টারনেট না থাকলে আমি থাকতাম না।

      Delete

Post a Comment