কিকিরা



প্রথম দু’খণ্ড তেড়েফুঁড়ে শেষ করে তৃতীয় খণ্ড শুরু করতে যাব, ভূমিকায় চোখ আটকাল।  

বিমল কর লিখছেন, "গোয়েন্দা গল্প বলতে যা বোঝায়, কিকিরার গল্প তা নয়। অপরাধমূলক কাহিনী বলা যায়। খুনোখুনি বন্দুক পিস্তল রক্তপাত - এইসব ভয়ংকর ব্যাপার কিকিরার গল্পে নেই; যেটুকু আছে তা আড়ালে, এবং অতি সামান্য। এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। কিকিরাসারকে যাদের ভালো লাগে, এই লেখাগুলি তাদের তৃপ্ত করলে খুশি হব।"

কেলেংকারি। কিঙ্কর কিশোর রায় বা কিকিরা-কে নিয়ে অবান্তরে পোস্ট লেখার পরামর্শ দিয়েছিলেন একজন কিছুদিন আগে। কিকিরা পড়েছি সেই ছোটবেলায়, তাও বছরে একবার পূজাবার্ষিকীতে। মেন চরিত্রদের নাম মনে আছে, দুয়েকটা গল্প পড়া শুরুর পর প্লটও হয়তো ছায়াছায়া মনে আসবে, ব্যস। তাছাড়া তখনকার পড়া, চোখের সামনে ছাপার অক্ষর আছে তাই পড়া। আগামাথা বুঝে, তুল্যমূল্য বিচার করে পড়া নয়। কাজেই কিকিরা নিয়ে আমার মহার্ঘ মতামত দেওয়ার আগে আরেকবার পড়া আবশ্যিক। 

আর সেই পড়তে গিয়ে এই সর্বনাশ। যেখানে লেখক নিজেই বলে দিচ্ছেন যে কিকিরার গল্প গোয়েন্দা গল্প নয়, সেখানে গোয়েন্দা গল্পের মাপকাঠিতে কিকিরাকে মাপা অবিচার নয় কি? 

এ দ্বন্দ্বের দুটো সমাধান হয়, এক, লেখকের কথা মেনে নিয়ে মাপজোক থেকে কিকিরাকে মুক্তি দেওয়া, দুই, লেখককে অগ্রাহ্য করে যা করতে নেমেছিলাম, সেটা করা। লেখার পর সে লেখাতে কোন লেবেল সাঁটা হবে সেটা কে বলবে, লেখক না পাঠক, এ নিয়েও তর্ক হতে পারে। 

এ ছাড়াও একটা ব্যাপার আছে। কিকিরার কাহিনী পড়তে পড়তে মাথার ভেতর পোস্ট ভাঁজতে শুরু করেছিলাম, যা যা লিখব ভেবেছিলাম বেশিরভাগই প্রশংসাসূচক। এইবার যদি কিকিরাকে নন-গোয়েন্দা ধরে নিতে হয়, তাহলে সেই সব প্রশংসাকেও বাতিল করতে হয়।

তা আমি করছি না। বইয়ের ভূমিকায় লেখকের এবং গল্পের স্বয়ং কিকিরার বারংবার ডিসক্লেমার, "আমরা তো ওই ক্লাসের নয়। মানে গোয়েন্দা ক্লাসের। আমরা হলাম, কী বলব - কী বলা যায় - ফেউ ক্লাসের।"  "আমি গোয়েন্দা নই - ম্যাজিশিয়ান।" অগ্রাহ্য করে আমি কিকিরার গল্পদের সম্পর্কে আমার মতামত জানাতে বসলাম। হ্যাঁ, গোয়েন্দা গল্প হিসেবেই। 

*****

কিন্তু তার আগে কয়েকটা কথা বলা দরকার। 

গোয়েন্দা গল্প পাশে এসে বসতে চাইলে সাহিত্যের বাকি ঘরানারা যে নাকে রুমাল চাপা দেয় তার কারণ সবাই জানে। ডেভিড সুশে, যিনি পোয়্যারোরূপে জগৎজয় করেছেন, বলেছেন যে তাঁকে ছোটবেলায় গোয়েন্দা গল্পটল্প পড়ার অনুমতি দেওয়া হত না। বরং এমন জিনিস পড়তে উদ্বুদ্ধ করা হত, যা পাঠক হিসেবে তাঁকে "চ্যালেঞ্জ" করবে। তাঁর ভাবনা এবং রুচি তৈরি করবে। পাঠকের রুচিটুচি নিয়ে গোয়েন্দাগল্পের কোনও দায়িত্ব নেই, অজানাকে জানানো, নিজেকে চেনানো ইত্যাদিতেও গোয়েন্দা গল্প উদাসীন। ট্রেন, বাস, প্লেনের অপেক্ষা করার সময় সে শুধুমাত্র আপনার বোরডমের সঙ্গী হওয়ার প্রমিসটুকুই করে, ব্যস।  

বাংলা গোয়েন্দা গল্পের বিরুদ্ধে এ সবের ওপরে আরও একটা বিষয়ে অভিযোগ থাকে। যেটাকে আমি বলি 'ঝাড়া', আমার থেকে বেটার বাংলা জানা লোকেরা বলেন "কুম্ভীলকবৃত্তি"। বাংলা গোয়েন্দাসাহিত্যের বেশিরভাগ গল্পউপন্যাসের রহস্য সমাধানের প্রক্রিয়া, গোয়েন্দার চরিত্র, গোয়েন্দার সঙ্গে স্যাটেলাইটের ডায়নামিক্স, - একটা বিশেষ ধারার বিলিতি গোয়েন্দাগল্পের অনুকরণে। ফর্মুলেইক। আমার তাতে অসুবিধে হয় না, আমি নিজে ফর্মুলা গল্প পড়তেই ভালোবাসি এবং বেশিরভাগ ফর্মুলাভাঙা গল্প পড়েই হতাশের হদ্দ হই। 

বাংলা ভাষার গোয়েন্দা গল্পের লেখকরা ফর্মুলা পর্যন্ত গিয়ে থামলেও একটা কথা ছিল, তা তাঁরা থামেননি। আনাড়ি ডেবিউট্যান্ট নন, রীতিমত প্রতিষ্ঠিত লেখক, বিলিতি গল্প প্লটকে প্লট নামিয়ে দিয়েছেন। এবং নিজের গল্পের মুড়োপেটিল্যাজা কোত্থাও উৎস স্বীকার করেননি। কেন স্বীকার করেননি সেটা অ্যাকচুয়ালি কেন চুরি করেছেন তার থেকে আমার কাছে বেশি রহস্যজনক। 'অমুক গল্পের অনুপ্রেরণায়', 'তমুক গল্পের ছায়াবলম্বনে' লিখে দিলেই হত। গরিমা তো কমতই না, বরং বাড়ত। যতবার দেখি, ‘শুভ মহরৎ’-এর শুরুতে যেই না পর্দায় ফুটে ওঠে, "...সেই সব মিস মার্পলদের...' তাতে মনে প্রসন্ন ভাবই জাগে মনে, অজান্তেই একটা পক্ষপাত তৈরি হয়। 

কিকিরা তিন খণ্ড পড়ে মন ভালো হয়ে গেল এই দেখে বাংলা গোয়েন্দারা যে সব স্টক গোয়েন্দার ছাঁচে ঢেলে তৈরি হন, কিকিরা সেই ছাঁচের নন। অন্তত আমার পড়া কোনও দেশিবিলিতি গোয়েন্দার সঙ্গে আমি কিকিরার মিল খুঁজে পাইনি। 

কিকিরা সিরিজের প্রথম গল্প 'কাপালিকেরা এখনও আছে' শুরু হয় তারাপদকে দিয়ে। তারাপদ বেকার, বটুকবাবুর মেসে থাকে, টাকাপয়সার মারাত্মক টানাটানি। এমন সময় একটা চিঠি আসে যেখানে লেখা আছে তারাপদর একজন মিস্টিরিয়াস পিসে তাঁর বিপুল সম্পত্তি তারাপদকে দিয়ে যেতে চান। তারাপদ আর তারাপদর বেস্ট ফ্রেন্ড চন্দন ট্রেনে চেপে রওনা দেয়। আনরিজার্ভড বগি, মারাত্মক ভিড়। হাত পা যথাসম্ভব ছড়িয়ে না বসলে নিজের জায়গা বাঁচানো যায় না।

"এমন সময় এক অদ্ভুত ধরনের ভদ্রলোক এসে কামরায় উঠলেন। টিয়াপাখির মতন নাক, তোবড়ানো গাল, গর্তে বসা চোখ। চেহারাটি রোগাসোগা, গায়ে সেই আদ্যিকালের অলেস্টার, মাথায় কাশ্মীরি টুপি ডান হাতে একটা সুটকেস ঝুলছে, বাঁ হাতে খয়েরি বালাপোশ। ভদ্রলোক এতই রোগা যে গায়ে অলেস্টার চাপিয়েও তাঁকে মোটা দেখাচ্ছে না। গলায় মোটা মাফলার জড়ানো।" 

তারাপদ, তারাপদর জীবনের সমস্যা, তারাপদর বন্ধু আর ট্রেনের ভিড়ে এইভাবে কিকিরা প্রথম পাঠকের সামনে আসেন। নিতান্ত নিরীহ মুখে, 'একটু সাইড দেবেন দাদা'' ভঙ্গিতে। ক্রমে, অতি ধীরে তাঁর একটা ছবি ফুটে ওঠে। বছর পঞ্চাশ বয়স, শহরের সস্তা পাড়ায় ঘুপচি ফ্ল্যাটে সহায়ক বগলাকে নিয়ে বাস।

"মানুষটির সঙ্গে এই ঘরটির অদ্ভুত মিল। বিচিত্র ছাঁটের, আর বেয়াড়া রং-চং-অলা এক আলখাল্লা-পরা কিকিরাকে বাড়িতে যেমনটি দেখায় এই ঘরটিও সেইরকম অদ্ভুত দর্শন। এ-ঘরে কী নেই? কিকিরার সিংহাসন-মার্কা চেয়ার ছাড়াও যত্রতত্র বিচিত্র সব জিনিস ছড়ানো। পুরনো দেওয়ালঘড়ি, চিনে মাটির জার, বড়-বড় পুতুল, কালো ভুতুড়ে আলখাল্লা, চোঙাঅলা সেকেলে গ্রামোফোন, ম্যাজিকওয়ালার আই বল, ফিতে জড়ানো ধনুক, পাদরিসাহেবের টুপি, ম্যাজিক ছাতা আর তলোয়ার, পায়রা-ওড়ানো বাক্স, টিনের চোঙ - কোনটা নয়! তার সঙ্গে এক-দু'মাস অন্তর জমানো ম্যাজিক-মশাল, গাঁজার কলকে, বাহারি মোমদান - এ-সব তো জমেই যাচ্ছে দিনের পর দিন।"

“ব্যাকগ্রাউন্ড" দিয়ে কিকিরাকে মাপতে গেলে অসুবিধে হবে, কারণ সেটা নন-এক্সিস্টেন্ট। কিকিরার বাবা স্বাধীনতাসংগ্রামী ছিলেন নাকি আদর্শবাদী মাস্টারমশাই, মায়ের দিকে কেউ জমিদার ছিল কি না, এই সব কোনও তথ্য বিমল কর পাঠকের কাছে ফাঁস করেননি। বরং কিকিরা সারাজীবনে নিজ উদ্যোগে কী কী করেছেন সে জানতে চান, ইন্টারেস্টিং উত্তর পাবেন। ম্যাজিশিয়ান ছিলেন, হাতে চোট পেয়ে তাঁর পেশাদার ম্যাজিশিয়ান হওয়ার স্বপ্ন কেঁচে যায়। এখন কিকিরা ম্যাজিকের বই লিখবেন ভাবেন, ছোকরা ম্যাজিশিয়ানদের টিপস দেন, তাদের ম্যাজিকের যন্ত্রের নকশা করে দেন,সঙ্গে করে নিয়ে যান চেনা মিস্ত্রির দোকানে। রহস্য সমাধানে হাতযশের কথা জেনে চেনাপরিচিতরা কেউ কেউ কিকিরার দিকে দুয়েকটা রহস্য চালান করেন, তার সমাধান করেও হাতে কিছু আসে। 

কত আসবে তার কোনও নিশ্চয়তা নেই। কিকিরা হেসে বলেন, কে জানে কত দেবে, যা ইচ্ছে তাই দেবে। 

তা বলে কিকিরা একেবারে কাছাখোলাও নন। ব্যাংকে তাঁর সামান্য কিছু টাকা আছে, সেটা শেষ হয়ে গেলে যে পেটে টান পড়বে সেটা কিকিরা জানেন এবং জেনে তাঁর মন খারাপও হয়। 'তদন্ত করে মন না ভরলে টাকা দিয়ে কী হবে' এই ধরণের গ্র্যান্ড কথাবার্তা কিকিরা বলেন না, কারণ, এক, টাকার মর্ম তিনি জানেন, দুই, গ্র্যান্ড কথা বলার চরিত্রই নয় কিকিরার। পোশাকআশাক রংচঙে হলেও কিকিরা আদতে মারাত্মক মাটির মানুষ, জেরার সময় (যদি সেটাকে আদৌ জেরা বলা যায়) অভদ্রতা হবে ভয়ে অনেক জরুরি প্রশ্ন করার আগেও থমকান, অনেকসময় কারও সঙ্গে প্রথমবার কথা বলেই নিশ্চিত হয়ে যান, লোকটা ভালো, এ দুষ্কৃতী হতেই পারে না। 

কিকিরার এক্সট্রাকারিকুলার গুণ প্রচুর। রামপ্রসাদ থেকে নিধুবাবু গাইতে পারেন, মাথা থেকে বার করে নানারকম রান্না করেন। কিসমিসের পকৌড়া, মুলতানি আলুর দম। 

কিকিরা অন্যের ইংরিজি নিয়ে হাসেন না কারণ এক, উনি যে জগতে চলাফেরা করেন সেখানে কেউ ইংরিজি বলে না, দুই, কিকিরার নিজের ইংরিজিও তথৈবচ। তিনি চন্দনকে স্যান্ডেলউড বলে ডাকেন, নাক ডাকার ইংরিজি করেন নোজ কলিং, তাঁকে যে হ্যান্ড বার্নিং করে খেতে হয় সে নিয়ে আফসোস করেন। কিকিরার ইংরিজি নিয়ে তারাপদ চন্দন, কিকিরা নিজেও হাসেন। সে হাসিতে কোনও পক্ষের তাচ্ছিল্য বা কুণ্ঠা জড়িয়ে নেই। কিকিরা কুকুর ভয় পান, এবং চন্দন তারাপদ সেই নিয়ে হাসলে বলেন, গোয়েন্দারা সাহসী হয়, আমি ম্যাজিশিয়ান। 

গোয়েন্দাসুলভ ঘুঘুপনার ছিটেফোঁটা নেই কিকিরার। বিপন্ন লোকজনের প্রতি তাঁর মায়া প্রায় কর্তব্যবোধের পর্যায়ে। তারাপদকে ঘোর বিপদ থেকে বাঁচাতেই তিনি যেচে আলাপ করেন, তাছাড়াও পরের বিভিন্ন গল্পে ক্রমাগত কিকিরার এমন সব ক্লায়েন্ট আসতে থাকে, ঠিক ক্লায়েন্টও না, আসন্ন বা ঘটমান কোনও বিপদ থেকে নিজেকে বাঁচানোর যাদের ক্ষমতা নেই। যারা ভীতু, অসহায়। কিকিরা তাদের সহায়।  

কিকিরার গল্পের রহস্যসমাধানে কিকিরাই প্রধান, তারাপদ আর চন্দন একেবারেই ফেউ, কিন্তু এই তিনজনের মধ্যে একটা নির্মল বন্ধুত্বের সম্পর্ক আছে। তারাপদ আর চন্দনের প্রতি কিকিরার আছে স্নেহ, আর কিকিরার প্রতি আছে ওই দুজনের শ্রদ্ধা এবং দায়িত্ববোধ। চন্দন ডাক্তার কিকিরার স্বাস্থ্যে অবহেলা নিয়ে সর্বদাই চিন্তিত। এমন যদি পরিস্থিতির উদয় হয় যে কিকিরাকে দিয়ে কেউ কাজ করিয়ে নিচ্ছে কিন্তু টাকা দিচ্ছে না, তাহলে দুই বন্ধুই বিচলিত হয়ে পড়ে এবং উক্ত পার্টিকে গিয়ে শাসিয়ে আসার প্ল্যান ভাঁজে। তিনজনের সম্পর্কের আরও একটা ভালো ব্যাপার হচ্ছে তারাপদ চন্দনের কিকিরার প্রতি মুগ্ধতার অনুপস্থিতি। এটা সম্ভবত থার্ড পার্সনে গল্প বলার সিদ্ধান্তের ফল। (বিমল কর মাঝে মাঝে হেড হপিং করেননি যে তা নয়, হঠাৎ হঠাৎ এক প্যারা কিকিরা কী ভাবছেন বা উল্টোদিকের লোকটার কেমন নার্ভাস লাগছে, লোকটার মাথার ভেতর থেকে তার পাঁচ লাইন বর্ণনা, কিন্তু সেগুলো ওই এক দু'প্যারাই। মোটের ওপর গল্পগুলো থার্ড পার্সনে লেখা।) যেহেতু তারাপদ বা চন্দন গল্প বলছে না তাই কিকিরা যে কত মহান, কত বুদ্ধিমান, কত জ্ঞানী - কোনও ভক্ত বা অনুরাগীর চোখ দিয়ে পাঠককে দেখতে হয়নি। যা দেখাতে হয়েছে সবই কিকিরার কাজ আর আচরণের মাধ্যমে দেখাতে হয়েছে। 

আমার মতে বাকি সব বাঙালি বিখ্যাত গোয়েন্দাদের সঙ্গে কিকিরার সর্বপ্রধান অমিল হচ্ছে তাঁর 'সার্কল'। কিকিরার চষা-বসা "পঞ্চাশ রকমের ব্যবসা”ওয়ালা লোকজনের সঙ্গে। কেউ দাঁতের মাজন বিক্রি করে, কেউ চুলের কলপ, কেউ খুচরো ম্যাজিশিয়ান, কারও ফলের দোকান। বারোয়ারি বাথরুমওয়ালা খুপরি ঘরের পাড়ায় তারা থাকে। কিকিরার চেনাপরিচিত বা ক্লায়েন্টকুলের মধ্যে দু'চার ঘর জমিদার যে খুঁজলে পাওয়া যাবে না তেমন নয়, কিন্তু তাদেরও ঝড়তিপড়তি দশা, খাটপালঙ্ক বেচে দিন গুজরান হয়। কিকিরা নিজে কলকাতাতে থাকেন কিন্তু সে কলকাতা ঐতিহ্যহীন, নন-ফোটোজেনিক, নস্ট্যালজিয়া-রহিত। ক্যাথলিক দক্ষিণী, অ্যাংলো, হাফ চাইনিজ, কবে কোথা থেকে কলকাতায় এসেছিল এখন পদবীতে শুধু অ-বাঙালিত্বের ছাপ লেগে আছে, সে সব মানুষেরা থাকে কলকাতার সে সব পাঁচমেশালি পাড়ায়। কিকিরা তাদের মাঝখানে থাকেন, তাদের সঙ্গে ওঠেনবসেন। 

*****

কিন্তু হায়, এই মহামিলনের মাঠে নারীর জায়গা হয়নি । তিন খণ্ডের আঠেরোটি গল্পে মহিলাদের পার্টিসিপেশন নিম্নরূপ।

কোনও এক চরিত্রের পূর্ণিমা নামে বোনের এক লাইন রূপের প্রশংসা।
মায়াদি নামের নার্সের ভাইকে বিপদ থেকে বাঁচানোর জন্য চন্দনের কাছে দু'লাইনের তদবির।
বছর পাঁচেকের বাচ্চা মেয়ে ফুটফুটি, যে গল্পে আসে এবং কিকিরার হাত থেকে চকোলেট নিয়ে দৌড়ে পালায়।
মুদিদোকানে ধারে জিনিস কিনতে এসে খেদানি খাওয়া গরিব বাচ্চা মেয়ে। 

ও হ্যাঁ, আরেকটা গল্পে রহস্য সমাধান করতে দীঘা বা কাছাকাছির সমুদ্রতটে যেতে হয়েছিল, বিচে ঘুরতে ঘুরতে কিকিরারা দেখেছিলেন উল্টোদিক থেকে "একটা ছেলে তার বউ আর মেয়েকে নিয়ে" হেঁটে হেঁটে আসছে।

ব্যস। নিজের হাতে তৈরি করা বর্ণময় বিচিত্র এই পৃথিবীতে আর কোনও মহিলার স্যাম্পল বিমল কর দেখে উঠতে পারেননি যিনি তাঁর গল্পের প্লট বা থিম বা আরও যা সব মেসেজটেসেজ, তাতে কণামাত্র অবদান রাখতে পারেন। 

'বাংলা গোয়েন্দাসাহিত্যে নারী' শীর্ষক সেমিনার হলে ফার্স্টসেকেন্ড বয়রা যে রেটে গোল খেতে শুরু করবেন, তাতে আন্ডারডগ কিকিরাকে এই নিয়ে বেগ দেওয়ার মানে হয় না। বরং "তখন ওই রকমই হত" বলে মুভ অন করে যাওয়াই ভালো।

*****

কিকিরার রহস্যসমাধান পদ্ধতিতে প্রত্যাশিতভাবেই ম্যাজিক রয়েছে। গোড়ার দিকের বেশ কিছু রহস্যের সমাধানে কিকিরার ম্যাজিশিয়ান হওয়ার অভিজ্ঞতা ক্রুশিয়াল হয়ে দাঁড়ায়। সবসময় রহস্য উন্মোচনের জন্যও নয়, অনেকসময় উল্টোদিকের লোকটাকে খানিকটা ব্যাকফুটে ফেলে দেওয়ার জন্য বা জাস্ট রসিকতা করার জন্যও কিকিরা ছোটখাট হাতসাফাই করেন। 

যা নেই তা হল ক্লু, রেড হেরিং, এইসব। কিকিরার মেথড নিয়ে আলোচনাও রয়েছে গল্পের ভেতর।

"জঙ্গুলে যুদ্ধ করার টেকনিক আলাদা।…চন্দন বলল, " ঝোপে লাঠি মারতে হয়।"
"মানে?"
"মানে ঝোপেঝাড়ে লাঠি মেরে যাও, যদি সাপের মাথায় লাগে। এই যেমন আপনি?"
"আমি? আমি কি বাপু ঝোপেঝাড়ে লাঠি মেরে যাচ্ছি?"
"যাচ্ছেন বইকি! আপনার রঘুপতি, ওই আগুনের খেলা, একটা লোক খুন হওয়া - এঁর কোনোটারই কোনো সুতো আপনি ধরতে পারছেন না - জানেনও না, বৃথাই ঝোপেঝাড়েলাঠি ঠুকে যাচ্ছেন?"
কিকিরা বললেন, "দেখো স্যান্ডেল উড, গল্পের গোয়েন্দারা বড় - বড় লাফ মারতে পারে, তাদের প্র্যাকটিস আছে! আমি গোয়েন্দা নই - ম্যাজিশিয়ান। আমি হাত সাফাই করি, ভেলকি দেখাই।"

রহস্য সমাধানের জন্য কিকিরার অস্ত্র একটাই, যে কোনও লোকের সঙ্গে মিশে যাওয়ার ঈশ্বরদত্ত ক্ষমতা। কিকিরা যাকে পান তার সঙ্গেই আলাপ জমান, টুক করে ম্যাজিক দেখিয়ে মন জয় করেন। কিকিরার কথা বলার ভঙ্গি এতই অগোয়েন্দাসুলভ, নন-থ্রেটনিং, যে অনেক সময় দুষ্কৃতীরা তাঁর সঙ্গে কথা বলতে বলতেই দোষ স্বীকার করে ফেলে। তাতে গোয়েন্দাগল্পের অন্যতম যে আরাম, নিজে মাথা খাটিয়ে ধাঁধা সমাধান করার (বা আমার মতো অলস পাঠকের ক্ষেত্রে নিজের মাথা অফ করে অন্য কাউকে ধাঁধা সমাধান করতে দেখার), সেটা পাওয়া যায় না। তাছাড়া কিকিরার গল্পে রোমহর্ষণের ভাগটাও একটু কমের দিকে। মারামারিকাটাকাটি এড়ানোর চেষ্টা করেছেন বলেই হয়তো গল্পে খুব বেশি দুষ্টু লোক দেখাতে পারেননি বিমল কর। বড়জোর সম্পত্তি নিয়ে বিবাদ। বংশের একজন হারিয়ে গিয়েছিল বা মরে গিয়েছিল বলে ধরে নেওয়া হয়েছিল, সে ফিরে এসে সম্পত্তির জন্য ঝামেলা পাকাচ্ছে। লোকাল গুণ্ডা শাসাচ্ছে ইত্যাদি।

যথেষ্ট রোমহর্ষক নয় এমন রহস্য নিয়েও অনেক দূর যাওয়া যায় না তেমন নয়, কিন্তু যাওয়ার পথে আরও একটি কাঁটা ফুটিয়ে রেখেছেন বিমল কর। এমন এলানোছড়ানো গল্প বলা, চট করে মনে করতে পারছি না শেষ কবে পড়েছি। যে তথ্যগুলো পাঠকের জানা জরুরি সেগুলো দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যে তথ্যগুলো পাঠকের কোনও কাজে লাগবে না, বা না বলে দিলেও সবাই বুঝে নিতে পারবে সেগুলোও যত্ন করে, ধরে ধরে লিখে গেছেন। 

যেমন, 
দুই বন্ধু ছাতা নিয়ে বেরিয়েছে, তাই তৃতীয় জন ছাতা নিয়ে বেরোয়নি। 
তারাপদ আর চন্দন টর্চ নিয়ে বেরিয়েছে তাই কিকিরা আর টর্চ নেননি।
বগলা চন্দন আর তারাপদকে সিঙাড়া পরিবেশন করল। কিকিরাকেও বাদ দিল না। 

(তিনটে উদাহরণই সত্যি সত্যি বইতে আছে, আমি বানাচ্ছি না।)

কিকিরার গল্পকে আর যে ডুবিয়েছে সে হল ডায়লগ। বিমল কর খুবই রিয়েলিস্টিক ডায়লগ লিখতেন। তিনি নিজে সে বিষয়ে সচেতন ছিলেন বলেই আমার বিশ্বাস, না হলে কেউ অত সংলাপ লেখে না। আড্ডা আমি আপনি সবাই মেরেছি, কাজেই রিয়েলিস্টিক আড্ডা কেমন হয় সেটা ব্যাখ্যা করে বলার দরকার নেই। কিকিরা তারাপদ এবং চন্দন ক্রমাগত আড্ডা মারে, ঠাট্টা ইয়ার্কি স্মৃতি রোমন্থন, কবে কোন চেনা লোক কী মজার কথা বলেছিল সেই সব ঠাসাঠাসি আড্ডা। অত হাসিঠাট্টা এবং রিয়েলিস্টিক কথোপকথনের মধ্যে ক্লু ইত্যাদি সূক্ষ্ম ব্যাপার তো ভুলেই যান, গল্পের মূল সুতোর খোঁজ রাখাও শক্ত হয়ে পড়ে। 

এই অন্তহীন কথোপকথন পড়তে পড়তে আপনার কী হয় আমি জানি না, আমার চোখ পিছলে যায়। সড়াৎ করে যেখানে গিয়ে থামে সেখানে হঠাৎ একটা নাম। মোহিত। সেরেছে, মোহিত আবার কে? মূল চরিত্র কারও নাম মোহিত বলে তো মনে পড়ছে না। ছাপা বইয়ে কন্ট্রোল এফ কবে যে আবিষ্কার হবে। তখন আবার পাতা উলটে পাঁচপাতা পেছনে, এই তো মোহিত। কিকিরাকে যিনি রহস্য সমাধানের বরাত দিয়েছিলেন তাঁর ভায়রাভাই। মোহিত ডাক্তার। অমুক হাসপাতালে প্র্যাকটিস করে।

আচ্ছা। গল্পে মোহিতের অবদান? 

কিছুই না। কথাপ্রসঙ্গে বলা। লোকে যেমন বলে। 

আমাদের অফিসে অনেকসময় সেমিনারের অডিওভিডিও রেকর্ডিং করে শান্তি হয় না, পাছে দামি বিশেষজ্ঞের দামি কথা একটাও হারিয়ে যায়, গোটা ব্যাপারটার ট্রানস্ক্রিপশন করা হয়। অক্ষর বাই অক্ষর রিপ্রোডাকশন। 'আম’, ‘উম’, ‘ইয়ে’, ‘মানে’, ‘অর্থাৎ কি না’, ‘বোঝাই যাচ্ছে’ কিচ্ছু বাদ না দিয়ে।

কিকিরার গল্প পড়তে গিয়ে সময় সময় আমার ট্রান্সক্রিপশন পড়ার ফিলিং হচ্ছিল। ওই অন্তহীন কথোপকথনের মধ্যে থেকে কাজের কথা ছেঁকে তুলে আনতে গেলে গোয়েন্দা লাগাতে হবে এবং সেটা কিকিরার মতো ঝোপঝাড়ে লাঠি মারা গোয়েন্দা হলে চলবে না। ফরমুলেইক, মেথডিক্যাল গোয়েন্দা চাই। 

*****

বিমল কর লিখে গেছেন, কিকিরাসারকে যাদের ভালো লাগে গল্পগুলো তাদের ভালো লাগলেই তিনি খুশি হবেন। আমার কিকিরাসারকে ভালো লেগেছে। তালেগোলে গোয়েন্দাগিরিতে নেমে পড়া বর্ণময় বোহেমিয়ান, একই সঙ্গে শান্ত, অনুচ্চকিত, সহজ কিকিরাসারকে আমার মন থেকে ভালো লেগেছে। বাংলা গোয়েন্দাসাহিত্যের তারকাখচিত বাজারে অরিজিন্যালিটি দিয়ে কিকিরা নিজের জায়গা করে নিয়েছেন, সে জায়গা থাকবেও অনেকদিন। অন্তত থাকুক আমার তাই প্রার্থনা। 


Comments

  1. kikira somporke amar mot, kikira ke bhalo lage kintu kikirar goyenda golpoke bhalo lagena

    ReplyDelete
  2. কিকিরা আমার কোনোকালে পোষায়নি। এখন তো পড়তে গেলে কেমন একটা "আমি এগুলো কেন পড়ছি?" গোছের একজিস্টেন্সিয়াল প্রশ্ন জন্মায় মনের মধ্যে। তবে আপনার লেখাখানা যথারীতি অসা। এইভাবে যদি কিকিরা লেখা হত, তাহলে পড়তে বেশ লাগত।

    ReplyDelete
    Replies
    1. ধন্যবাদ, ঋজু। আমার ধারণা কিকিরার মূল সমস্যাটা গল্পগুলো বলার কায়দায়/লেখায়। চরিত্রটরিত্রগুলো বেশ ইন্টারেস্টিং ফেঁদেছিলেন বিমল কর। চেনা রাস্তার বাইরে।

      Delete
  3. Kikira ke niye erokom ekta onobodyo post lekhar jonyo onek dhonyobad Kuntala. :) Khub sundor point-by-point analysis korechhen, Bimal Kar ei lekhata porle khub khushi hoten. :)
    Kikira Sir ke amaro khub bhalo lage, bisesh kore surur diker golpogulo. Chena rahasyer chNache fela jay na golpogulo, tai ektu beshii bhalo lage. Amio kodin age office e bose bose Kikira Samagra gulo pore fellam, besh bhalo laglo abar. :)

    ReplyDelete
    Replies
    1. থ্যাংক ইউ, অরিজিত। আপনার কমেন্ট মন ভালো করে দিল। কিকিরাতে ভালো লাগার মতো অনেক জিনিস আছে, ছোটবেলায় আমার চোখে পড়েনি।

      Delete
  4. Pujobarshiki Anandamelai jokhon beroto tokhon khub agroho niye porini. Kintu apni khub bhalo profiling korechhen. abar porar jonno interest lagchhe.

    ReplyDelete
    Replies
    1. পড়ে ফেলো, রণদীপ। আমরা এই শনিরবি লামা কিচেন যাব ভাবছি।

      Delete
    2. Lama's Kitchen jawa holo ki? BTW amra kichhudin agei Hauz Khas social e gechhilam; Oi jayga ta kintu ager theke onek onek beshi kharap (Unsafe noi hoyto..just kharap) hoye gechhe.. Usher ra jerokom bhabe Puri's panda der moto chheke dhore..

      Delete
    3. আরে রণদীপ, আমরা প্ল্যান বদলে ট্রায়েড অ্যান্ড টেস্টেড ত্রিবেণী টেরাস ক্যাফে তে চলে গেলাম। হজ খাস ভিলেজ সম্পর্কে আমাদেরও এক্স্যাক্টলি এই অভিজ্ঞতা। গত ছ'মাস কি তারও বেশি হবে আমরা ওমুখো হইনি। শেষবার কী একটা কলেজ/ইউনিভার্সিটির ইলেকশন রেজাল্টের দিন গিয়ে পড়েছিলাম, বাপ বাপ বলে পালিয়েছি। সেই দিনটা না হয় গোলমেলে হওয়ারই ছিল, কিন্তু এমনিতেও জায়গাটার পরিবেশ যে খারাপ হয়েছে সে ব্যাপারে সম্পূর্ণ একমত।

      Delete
  5. Khub bhalo hoyechhe lekhata. Kikira proti bochhor pujabarshiki te portam. Besh bhalo lagto aar onnorokom. Kikira ke niye tulonamulokbhabe anek kom alochona hoyechhe. Jodiyo golpogulo aamar kharap laageni. Tabe anaboshyok kothopokothon kichhuta aachhe. Anyway, khub bhalo laglo apnar lekha pore.

    ReplyDelete
    Replies
    1. থ্যাংক ইউ, সুস্মিতা।

      Delete
  6. tumi khub bhalo likhecho,tobe chotobelay khub akorson chilo na kikirar proti.tobe ek e jinis alada alada time frame e alada moja dey.abar porbo khon.btw kapalik er galpo tar naam ta mone pore gelo.

    prosenjit

    ReplyDelete
    Replies
    1. ek e jinis alada alada time frame e alada moja dey. একমত, প্রসেনজিৎ।

      Delete
  7. কিকিরাকে নিয়ে কোনো আলোচনা বোধহয় এই প্রথম পড়লাম, ভালো লাগলো।বিমল কর আমার খুবই প্রিয় লেখক।

    ReplyDelete
  8. আমার কিকিরাসারকে পছন্দ। আপনার মতন গুছিয়ে-সাজিয়ে লেখা আমার পক্ষে সম্ভব নয়, তবে আনন্দমেলায় যখন বেরোত, অর্জুন-কাকাবাবুর পাশে "একশন" ব্যাপারটা যে বেশ কম সেটা চোখে পড়ত। "আন্পুটডাউনেবল" ব্যাপারটা নেই। কিন্তু পুরোনো কলকাতার পরিবেশ, কিকিরার ঘর আর মেজাজটাকে যেন ধরা যায় গল্পের ধীর গতিবেগের মধ্যে দিয়ে। আমার সেটা বেশ ভালো লাগতো। বিমল কর আমার মামারবাড়ির পাড়ায় থাকতেন বলে একটু পক্ষপাতিত্ব ছিল কিনা জানিনা। খুব ভালো লিখেছেন।

    ReplyDelete
    Replies
    1. আমারও আপনার মতোই ফিডব্যাক ছিল কিকিরা সম্পর্কে, সুগত। আপনার মামাবাড়ি কোন পাড়ায়?

      Delete
    2. সল্ট লেকের বি ডি ব্লকে। বিমল কর আসে-পাশের কোনও একটা ব্লকে থাকতেন, ঠিক মনে নেই, কিন্তু বি ডি মার্কেটে বাজার করতে এসে আমার দাদামশায়ের সঙ্গে দেখা হত প্রায়ই, কথাও হত।

      Delete
  9. আমার মনে হয় কিকিরা এঁর গল্পগুলো ছোটদের (কিশোর) জন্য নয়। কিকিরার গল্প বড় বয়সে এসে বেশি উপভোগ করেছি। যখন আনন্দমেলা হাতে আসত আগে কিকিরা টা পড়ে নিতাম, কারণ বাকি গোয়েন্দা/adventure (আর্জুন, পাণ্ডবগোয়েন্দা আর কাকাবাবু) গল্পের থেকে কিকিরা বেশ বোরিং মনে হত। আপনার কিকিরা কে নিয়ে লেখা তে বেশ সুন্দর হয়েছে।

    প্রমা

    ReplyDelete
    Replies
    1. এটা আমারও মনে হয়েছে প্রমা। বিমল কর বড়দের সামাজিক গল্পের (শারদীয়া পত্রিকায় যে রকম বড়দের গল্প ছাপা হয়) ধাঁচে কিকিরা লিখে গেছেন, আবার পুরোটাও পারেননি কারণ সম্ভবতঃ ব্রিফ ছিল ছোট/কিশোরদের জন্য লিখতে হবে, কাজেই থ্রিল/রহস্যের আমদানি করতে হয়েছে। অ্যাকচুয়ালি সামাজিক উপন্যাস হিসেবে লিখলে কিকিরা আরও সফল হলেও হতে পারত।

      Delete
  10. ছোট বেলায় কিকিরা খুব বোরিং লাগতো । বড় হয়ে পোরে বেশ লেগেছে , অনেকটা বৈঠকি ঢঙে বলা গল্প । তোমার সাথে সহমত , গোয়েন্দা না হয়ে এমনি গল্প হলে বেশী জমতো হয়তো।

    ReplyDelete
    Replies
    1. আমারও তাই ধারণা, প্রদীপ্ত।

      Delete
  11. কিকিরার প্রথম কয়েকটি লেখা ভাল লেগেছিল। তারপর কেমন যেন

    ReplyDelete
    Replies
    1. হাহা, যত সময় গেছে তত আপনার মতো আমারও মনের ভাব ওই কেমন যেনই...অতনু।

      Delete
  12. দারুন লাগে আমার কিকিরা , খুব ভালো

    ReplyDelete

Post a Comment