খালি বয়ামের খেলা


বাস্তবের কুন্তলা আর আমার স্বপ্নের মিনিম্যালিস্ট কুন্তলার মধ্যে যদি দুর্লঙ্ঘ্য বাধা কেউ বা কারা থেকে থাকে তারা হল বয়াম। খালি বয়াম। ছোট বয়াম, বড় বয়াম। প্লাস্টিকের বয়াম, কাঁচের বয়াম। সরু গলা বয়াম, মোটা মুখ বয়াম। লাল ঢাকনা বয়াম, হলুদ ছিপি বয়াম।

সে সব বয়ামের মধ্যে একটাই কমন ব্যাপার। তারা কেউ হোম সেন্টার জাতীয় দোকান থেকে - যেখানে পয়সা ফেললেই আপনার হাউসকে ইন্সটাগ্রামের হোম বানানোর প্রতিশ্রুতি থাকে আর সে প্রতিশ্রুতি রক্ষার্থে তাক ভরে সারি সারি সুদৃশ্য অবিকল একে অপরের মতো দেখতে বয়াম সাজানো থাকে এবং যে বয়ামগুলো বাড়িতে যতগুলো লাগবে ততগুলো কিনতে গেলে পকেট চোট খায় (অন্ততঃ আমার খায়) - কিনে আনা নয়।

তারা সকলেই অন্য কোনও সূত্রে বাড়িতে এসেছে।

জ্যামের বয়াম। জেলির বয়াম। বাদামভাজার বয়াম। কফির বয়াম। বছরে একবার বিরিয়ানি খাওয়ার চালের বয়াম। তবে এই বয়ামগুলোও সময়ে সময়ে অপ্রতুল প্রমাণিত হয়। মুড়ি চিঁড়ে ছাতু মারি বিস্কুট রাখার জন্য আরেকটু বড় বয়াম বেটার। মুদির দোকানে যেগুলোতে ভিক্স আর পালস লজেন্স রাখা থাকে, সেই সাইজ আইডিয়াল।

দিল্লিতে আমার একার প্রথম ভাড়াবাড়িতে প্রথম দিককার অতিথি ছিল রাহুল। বাকি দু'চারজন সমসাময়িক অতিথির মতো পার্কমুখো বারান্দাটার প্রতি মুগ্ধতা প্রকাশ করে, রান্নাঘর দেখতে ঢুকে থমকেছিল।

'এখানে একটা এক্সপেরিয়েন্সড লোকের হাত পড়েছে।'

মায়ের সঙ্গে প্রথম বার বাজারে গিয়েছিলাম। মুড়ি চিঁড়ে ছাতু কেনা হলে মা বলেছিলেন, 'এবার এগুলো রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।' মাকে আশ্বাস দিয়েছিলাম, 'ঘাবড়াও মৎ, যতখানি লাগে নিয়ে বাকিটুকু গার্ডার পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে রেখে দেব।' 'ভ্যাট, ও রকম করে কেউ রাখে নাকি। চল আমার সঙ্গে।' বলেছিলেন মা তারপর চার নম্বর মার্কেটে গিয়ে দোকানের কাউন্টারে লজেন্সের বয়ামের দিকে আঙুল দেখিয়ে স্পষ্টাস্পষ্টি জিজ্ঞাসা করেছিলেন, 'এই সাইজের খালি বয়াম আছে?' আমি ভাবছিলাম দোকানি বুড়োটা নির্ঘাত বলবে, 'এটা কি হোম সেন্টার পেয়েছেন যে খালি বয়াম বিক্রি হবে? এখানে যে কেবল বয়ামের ভেতরের জিনিস বিক্রি হয় দেখতে পাচ্ছেন না? চোখে কি ন্যাবা?'

ওই দোকানে জীবনে ওই একবারই গিয়েছিলাম, কিন্তু ভদ্রলোকের মুখটা স্পষ্ট মনে আছে। এত শান্ত আর ঠাণ্ডা আর ধীরস্থির যে খুব জোর করে তাকিয়ে না থাকলে ঘাড় নাড়াটা মিস হয়ে যেত। 'আছে।' মা বললেন, 'কত দাম?' ভদ্রলোক তিন সেকেন্ড ভাবলেন, 'আট টাকা পিস।' মা বললেন, 'দিন দেখি পাঁচটা।'

চাল ডাল মুড়ি চিঁড়ে ছাতু। গুছিয়ে দিয়ে মা বলেছিলেন, 'এক মাসের মধ্যে যদি সব শেষ করতে পারিস তাহলে শান্তি পাব। এবার আমাকে শান্তি দিবি নাকি তোর বিবেচনা।'

মা নেই, বয়াম আছে। সেই কবেকার কেনা আট টাকা পিসের পাঁচটা, পাঁচটাই আছে। একটুও টসকায়নি। তারপর আরও বয়াম এসেছে। জ্যামজেলি, কফি, পোস্টের শুরুতে আরও যা যা জিনিসের নাম করলাম সে সবের সঙ্গে সঙ্গে। সে সবে আমি মশলাপাতি রেখেছি, গাছ পুঁতেছি, এখন চলছে ডাল রাখার পালা।

ইদানীং মাথায় ঢুকেছে যে শুধু মুগ মুসুর জীবনে যথাযথ পুষ্টি জোগাতে অক্ষম তাই জগতে যতরকম ডাল আছে সব অর্ডার করেছি। অড়হর, মাসকলাই, কুলত্থকলাই, রাজমা, লোবিয়া। অর্চিষ্মান বলেছিল, 'রাখবে কোথায়?' আমি বলেছিলাম, 'দেখই না।' শিফট করার সময় একটা কার্ডবোর্ডের বাক্স ভরে খালি শিশিবয়াম ভর্তি করতে দেখে যে চোখ ঘুরিয়েছিল সেটা মনে করালাম না। তারপর মনের সুখে বয়াম খুলে ডাল ভরে ভরে রাখলাম।

ব্যাপারটা যতটা মসৃণ শুনতে লাগল বাস্তবে ততটাও হয়নি। শিশিগুলোর মাপ সমান নয়। কয়েকটায় গোটা প্যাকেটের ডাল ধরে গেল, কয়েকটায় ধরল না। গার্ডার পেঁচিয়ে রেখে দিতে হল।

একটা কাজ জমা দেওয়ার ছিল। কাজ শেষ করার থেকে বরং ডালের অর্গানাইজেশনের তত্ত্বাবধান করা যাক ভেবে রান্নাঘরে ঢুকলাম। আগের দিনই ভাজা মুগ ডাল না কী রান্না হল, মুগডালের বয়ামটা অর্ধেক খালি হয়েছে। প্লাস্টিকে রাখা বাকি মুগডালটুকু ঢালব বলে কাবার্ড হাতড়ে হলুদ ছোট ছোট ডালের গার্ডার পেঁচানো প্যাকেটটা খুলে বয়ামের ওপর কাত করলাম।

ছোট ছোট হলুদ অড়হর হড়হড় করে মুগডালের মধ্যে মিশে গেল।

*

হতভম্ব ভাবটা কাটতে তিরিশ সেকেন্ড লাগল। তারপর দুটো গল্প মনে পড়ল।

প্রথম গল্পটা ঠাকুমার। কত হবে তখন, বছর পনেরো বয়স। আমার না, ঠাকুমার। একবছর আগে বিয়ে হয়ে কলকাতা এসেছেন। মানপাশায় পুকুরের ওপর ঝুঁকে পড়া তালগাছে জড়িয়ে শুয়ে থাকা জীবনের বদলে খিদিরপুরের রেল কোয়ার্টারের গাদাগাদি জীবন। সে জীবনে একদিন খুশির ঢেউ উঠল। মানপাশা থেকে ঠাকুমার বড়দা আসছেন। আগে থেকে খবর দিতে পারেননি, কলকাতায় কী একটা কাজে এসেছেন, ফিরে যাওয়ার আগে বিকেলবেলা বোনের শ্বশুরবাড়ি ঘুরে যাবেন, বোনের সঙ্গে দেখা করে।

শ্বশুরবাড়ির লোকেরা বউয়ের জীবন যে উৎসাহে ঝালাপালা করে রাখতেন, ততোধিক উৎসাহে বউয়ের বাপের বাড়ির লোককে আপ্যায়ন করতে কোমর বাঁধলেন। দৌড়ে পায়েসের মালপত্র কিনে আনা হল, পনেরো বছরের বউকে হুকুম দেওয়া হল দাদার জন্য পায়েস রাঁধতে বসার। ঠাকুমা পায়েস বসালেন, দাদা এসে গেলেন। হইহই করে দাদার অভ্যর্থনা হল সামনের ঘরে, দাদার সঙ্গে বসে গল্প করার তাড়ায় আমার পনেরো বছরের ঠাকুমা চালের সঙ্গে সঙ্গে চিনিটাও ফুটন্ত দুধে ঢেলে দিয়ে প্রতীক্ষায় বসলেন।

যাঁরা পায়েস রেঁধেছেন বা রাঁধার নিয়ম জানেন, পরিণতি বুঝে গেছেন। চালের একইসঙ্গে চিনি দিয়ে দিলে চাল ফুটতে মারাত্মক সময় লাগে। (সত্যি সত্যি লাগে কি না আমি জানি না, কিন্তু আমাকে তেমনই বলা হয়েছে এবং আমি জীবনে যে সাড়ে তিনবার পায়েস রেঁধেছি সর্বদা চাল সেদ্ধ হওয়ার পরেই চিনি দিয়েছি। না দিয়ে সত্যাসত্য বিচার করে দেখার বৈজ্ঞানিক বেন্ট অফ মাইন্ড আমার নেই, কখনও ছিল না।)

বাইরের ঘরে খুব জমিয়ে গল্পের হাঁড়ি খুলে বসেছিল সবাই। মাঝে মাঝে দাদা হাঁক পাড়ছিলেন, 'কই বু, একবার আয়, দেখি।' বাড়ির লোকেরা হেসে হেসে বলছিল, 'আহা বোন শখ করে দাদার জন্য পায়েস রাঁধছে।' ঠাকুমা, আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি, দুই হাঁটুর ওপর হাতের পাতা, পাতার ওপর চিবুক রেখে বসে ছিলেন কখন চাল নরম হবে। কখন পায়েস হবে। কখন দাদার কাছে মানপাশার গল্প শুনবেন।

*

দ্বিতীয় গল্পটা আমার মায়ের। হিসেবমতো গল্পের সময়ে মা, ঠাকুমার গল্পের ঠাকুমার তুলনায় বেশ বড়, পঁয়ত্রিশ ছত্রিশ বছর বয়স। অফিস থেকে ফিরতে মায়ের সেদিন এক্সট্রা তাড়া। মায়ের জীবনের নিরন্তর মাথাব্যথাটির পরদিন মান্থলি টেস্ট। ক্লাস টু-এর মান্থলি টেস্ট, কিন্তু সে তথ্যটা কেন মায়ের তাড়া কমাতে পারেনি নাসেটা বলতে গেলে কিছু অতীত ঘাঁটার দরকার আছে।

মায়েদের পরিবার ছিলেন রিফিউজি। ঠাকুমা এবং ঠাকুমার মতো আরও মিলিয়ন বিলিয়ন মহিলাও রিফিউজিই একরকম, কিন্তু মায়েরা ছিলেন মুড়ির টিন আর পিঁড়ি আর প্রাণ নিয়ে ভারতের তীরে সাঁতরে এসে ওঠা সরকারি সিলমোহর মারা রিফিউজি। মা জন্মেছিলেন সে ঝড়ের বেশ কয়েকবছর পর, ততদিনে মাথার ওপর ছাদ হয়েছে, দাদু একটা সরকারি চাকরি পর্যন্ত জুটিয়ে নিয়েছেন।

কিন্তু উদ্বাস্তু হওয়ার ট্রমা কয়েক প্রজন্মে কাটে কি না সন্দেহ, কয়েক বছর তো তুশ্চু। গোটা ছোটবেলা জুড়ে মায়েদের রন্ধ্রে, শিরায়, ধমনীতে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছিল, যে যা গেছে তা যদি পুনরুদ্ধার করতে হয় তার জন্য পুরুষকারের থেকেও বেশি লাগবে শিক্ষা। বাঙালিরা তখন যাকে গভীর শ্রদ্ধায় বলত "এডুকেশন।" যে জন্য বড়ছেলেকে সারাদিন চাকরির পর নাইট স্কুলে যেতে বাধ্য করা হয়েছিল, প্রতিটি কলেজ যাওয়ার বয়সী মেয়েকে কলেজে পাঠানো হয়েছিল। তারা কলেজে নিজেদের পড়াশোনা করার সঙ্গে সঙ্গে গেঁড়িগুগলি ভাইবোনেরা ঠিক মতো পড়তে বসছে কি না আর পরীক্ষায় ঠিক ঠিক উত্তর লিখে আসছে কি না সে নিয়ে পাড়া মাথায় করে রাখত।

মোদ্দা কথা, স্কুলকলেজের শিক্ষাকে বিপত্তারণ ভাবার বদভ্যেস আমার মায়ের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে গিয়েছিল। সবাই ভাবছে ক্লাস টু-এর মান্থলি টেস্টের নম্বর, দু'দশ কমবেশি হলেই বা কী, মা ভাবছেন, শুধু ভাবছেন না, বিশ্বাস করছেন যে ওই একেকটা নম্বর আসলে একেক কণা মাটি, যা জমে জমে আগুন আর খাদ আর হড়কা বানে ভর্তি এই নিষ্ঠুর পৃথিবীটায় তাঁর সোনার পায়ের তলার জমি তৈরি করবে।

কাজেই মা দৌড়ে বাড়ি এসেছেন।

অন্যান্য দিনের মতোই সামনের ঘরে টিভির সামনে সবাই মন্ত্রমুগ্ধ। মা ঢুকে কোমরে আঁচল পেঁচিয়ে রান্নাঘরে ঢুকলেন এবং আবিষ্কার করলেন মাছের থলে।

কোনও কোনও দিন আমাদের ডিনারে রুটি তরকারি খাওয়া বাড়িতে রাতে মাছভাত হত। বিশেষ করে ইলিশ মাছের সিজনে। সেদিন তাও তাড়াতাড়ি এসেছিল। অনেক দিনই সে ইলিশ রাত সাড়ে ন'টার সময় আসত কারণ বাজারে মাছের সঙ্গে সঙ্গে আড্ডাটাও ভালো জমত। আর মাছ সাড়ে সাতটাতেই আসুক বা সাড়ে ন'টাতেই, সেদিনই রান্না করা হত কারণ আমাদের বাড়িতে কেউ ফ্রিজের খাওয়া পছন্দ করত না। একটাই তো জীবন, সে কি বাসি খাওয়ার জন্য?

একটা কথা পরিষ্কার করে নেওয়া দরকার। মা বলতেই পারতেন যে আমি রাঁধব না। একদিন বললেই, বলা যায় না, হয়তো মাঝরাতে মাছ আনা বন্ধ হয়ে যেত। কিন্তু মা তো কোনওদিন বলেননি যে তিনি রান্না করতে পারবেন না। একটা লোক যদি মুখ ফুটে না-ই বলে যে তার আর মার খেতে ভালো লাগছে না, তাহলে যে মারছে সে জানবে কী করে যে এবার মার বন্ধ করতে হবে?

মাছ ধুয়ে কেটে, দুটো গ্যাসে দুটো পাত্র বসালেন মা। বাঁদিকের হাঁড়িতে ভাতের জল বসালেন, ডানদিকের কড়াইতে তেল দিলেন, মাছ ভেজে তুলে নিয়ে ফোড়ন দিয়ে ঝোলও হল। ঝোল গবগবিয়ে ফুটতে শুরু করল, পাশের হাঁড়িতে বগবগিয়ে জল। চাল ধুয়ে রেডি হলেন মা, সামনের ঘরে টিভিতে কী একটা হাসির সিনে হোহো হেসে উঠল সবাই, মা ধোয়া চালটা ঢেলে দিলেন, বাঁদিকের হাঁড়িভর্তি জলের বদলে ডানদিকের কড়াইভর্তি ঝোলে।

*

কী করবেন? করতে পারতেন? ঠাকুমা সেদ্ধ না হওয়া পায়েসের হাঁড়ি লাথি মেরে উল্টে গটগটিয়ে গিয়ে দাদার সঙ্গে গল্প করতে বসতেন? মা প্রথম মুহূর্তক'টার শক কাটিয়ে উঠে একটিও কথা না বলে গ্যাস নিভিয়ে ছাদে গিয়ে আমগাছের ছায়ার অন্ধকারে রেলিং-এ শরীরের ভার ন্যস্ত করে অপেক্ষা করতেন কখন সবটুকু রাগ, ক্রোধ, হতাশা জল হয়ে গলে শরীর থেকে বেরিয়ে যাবে, মাথার দপদপানি শান্ত হবে, নিঃশ্বাসপ্রশ্বাস স্বাভাবিক হবে, তারপর তিনি নেমে এসে পরবর্তী কার্যপদ্ধতি ঠিক করবেন?

অফ কোর্স, না। তারা মুখ বুজে হাঁড়ির দিকে তাকিয়ে বসে থাকবেন। প্রাণপণে প্রার্থনা করবেন, বউ যে বাপের বাড়ি থেকে পায়েসে চিনি দেওয়ার টাইমিংটুকুও জেনে আসেনি সেই পর্দাটা যেন অ্যাট লিস্ট দাদার সামনে ফাঁস না হয়। এ ভাত যে চাল অবস্থায় একবার মাছের ঝোলে সাঁতার কেটে উঠেছে, সেই কেলেংকারিটা যাতে কেউ আসার আগেই চাপা দিয়ে ফেলা যায় সে জন্য প্রতিবর্ত প্রতিক্রিয়ার 'যাঃ'টুকুও গিলে ফেলে ছাঁকনি দিয়ে প্রত্যেকটা চাল ঝোল থেকে তুলবেন, ধোবেন এবং চূড়ান্ত সতর্কতা অবলম্বন করে এবারের বার ঠিক হাঁড়িতে সেগুলোকে পাঠাবেন।

মেয়ের মান্থলি টেস্টের চিন্তাটা অবশ্য মাথা থেকে বার করে দিতে হবে।

আর এই পুরো প্রক্রিয়াটা চালানোর সময় যদি কান্না পায়, রাগ ধরে, দুজনেই নিজেকে মনে করাবেন যে এইসব হিংস্র অনুভূতির অধিকার তাঁদের নেই কারণ দোষটা আসলে তাঁদেরই।

*

ডালের কেলেংকারির দোষটা সর্বতোভাবেই আমার। প্রথমতঃ পাঁচশো রকমের ডাল কেনারই দরকার ছিল না, কিনলেও সে ডাল এ বয়াম থেকে ও বয়ামে জাগলিং-এর ম্যাজিক দেখাতে না নামলেও চলত।

নামলেও, কেলেংকারিটা ঘটে যাওয়ার পর রাষ্ট্র না করার সংযমটা দেখানো যেতই।

চ্যাটবাক্স খুললাম। 'শুনছ? মুগডাল অড়হরডাল মেশামেশি হয়ে গেছে' শিফট আর বিস্ময়চিহ্নের কি-দুটো টিপে ধরে থাকলাম, সাঁইত্রিশখানা মতো বিস্ময়চিহ্ন পড়লে পর থামলাম।

এক সেকেন্ড রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষা। চ্যাটবাক্স নিরুত্তর।

'কী গো, শুনতে পাচ্ছ কী কাণ্ড হয়েছে? মুগডালের বয়ামে অড়হরডাল ঢেলে ফেলেছি।' আবার শিফট + বিস্ময়চিহ্ন। এবার সাতান্নটা। 'কী করব?'

অবশেষে সামওয়ান টাইপিং।

'ওরে বাবা কুন্তলা, যা প্রাণে চায় কর, ফেলে দাও টান মেরে, (বসের নাম) ফোন করছে, টা টা।'

আদার পার্টি হ্যাজ লেফট দ্য চ্যাট।

*

বলে কী? দিব্যি ভালো টাটকা তাজা পুষ্টিকর ডাল ফেলে দেব? এক কাজ করা যায়, একরকমের ডালের থেকে পাঁচরকম মিলিয়ে ডাল বানালে নাকি পুষ্টি পাঁচগুণ হয় শুনেছি, যদি ভান করি গোটাটাই ইচ্ছাকৃত আর মুগ আর অড়হরডাল একসঙ্গে রেঁধে ফেলি?

দুটোর একটাকেও সম্ভাব্য অপশন বলে ভাবিনি। কারণ জানতাম কী করব।

সময় লাগবে জানতাম। বাড়িতে কেউ থাকলে যে বেটার লাগত তাও। তবু ঘাবড়ালাম না। যার কেউ নেই তার সুমনের গান আছে। তাঁকেই স্মরণ করলাম। বললাম, 'খান কুড়ি গান চট করে গেয়ে দিন দেখি। একা আপনার গলা ব্যথা করাব না, মাঝে মাঝে আমিও ধুয়ো ধরব, কথা দিচ্ছি।'

মহা ফুর্তিতে সাতানব্বই মিনিট কেটে গেল। একশিশি মিক্সড ডাল থেকে অড়হর আর মুগ বেছে আলাদা করে ফেললাম।

খবরের কাগজের দু'প্রান্তে দু'রকম ডালের আলাদা আলাদা ঢিবির দিকে তাকিয়ে ভাবলাম সময় কেটে গেলে শেষমেশ সব গল্পের এন্ডিং-ই কি হ্যাপি হয়ে ওঠে? ঠাকুমার পায়েসে তড়িঘড়ি চিনি দিয়ে ফেলার গল্পটা হাসির গল্প বা নতুন রাঁধুনিদের পায়েস রান্না শেখাতে গিয়ে সতর্কতামূলক গল্প হিসেবেই শুনেছি। মাছের ঝোলে চাল ঢেলে দেওয়ার গল্পটা মা যখন বলেছিলেন তখন দগদগে ক্ষত নিয়ে বলেছিলেন বলে তো মনে পড়ছে না। তবে গল্পটা হাসির না কান্নার না রাগের সেটা যে শুনছে শেষমেশ তার সিদ্ধান্ত। একই গল্প একজনের কাছে হাসির, অন্যজনের কাছে দুঃখের প্রতিভাত হতে পারে বারংবার দেখেছি। যেমন গল্পটা ঠাকুমা হেসে হেসে বললেও গল্পটা যে হাসির নয় সে নিয়ে আমার কোনওকালে সন্দেহ ছিল না। মায়ের গল্পটাকে তো হাসির মনে করার প্রশ্নই ওঠে না। যে পারিপার্শ্বিকে ঘটনাটা ঘটতে পেরেছিল সেটার প্রতি জাতক্রোধ জন্মাতে আমার আর বছরকয়েক মাত্র লেগেছিল কাজেই ও গল্প শুনে আমোদ আমি কখনওই পাইনি।

কিন্তু আমার আমোদ, বিরক্তি, ন্যায়বিচারের দাবি জরুরি নয়। কারণ গল্পগুলো আমার নয়। যাদের গল্প তাঁদের কাছে গল্পগুলো শেষমেশ সহনীয় হয়ে উঠতে পেরেছিল কি না সেটাই আসল কথা। হয়তো পেরেছিল। হয়তো সময় বুকে মাথা টেনে নিয়ে 'ষাট ষাট' বলে দিয়েছিল।

সত্যি সত্যি দিয়েছিল কি না জানা আমার পক্ষে সম্ভব নয়, তবে তাই যেন হয়ে থাকে মনে মনে শুধু সেটুকু চাইতে পারি।

দু'রকম ডাল দুই বয়ামে ঢেলে, বয়ামের খেলার এইখানেই ইতি টানব নাককান মুলে নিজেকে কথা দিয়ে রান্নাঘরের লাইট নিভিয়ে বেরিয়ে এলাম। দেখা যাক কতদিন মনে থাকে।


Comments

  1. ha ha.. maa aar thakumar golpogulo ekdom e mojar na.. sotti.. bhableo sara shorir juRe ekta khub baje raag hoy.. tai na?

    aami recently ekdin dimer dhoka (kono dorkar chilo na bananor, keu boleni, aami dim khete bhalobasi na, sudhu bongmom er recipe try korte haat nishpish korchilo tai) banate gechilam. 6 ta dim pathiye, mosla mishiye, tometo pneyaaj kuchi kuch kore kete, phnetiye, steam korte dite giye, haat phoske somosto ta gas er 4 burner er upor ulte gelo.. aamaar literally daak chere knadte icche hocchilo.. khubi boyesh hoyeche mone hoy.. poro muhurtei dekhlam proshkar korte arombo korechi.. tarpor burner gulo dimer coating peye aar jwalchilo na.. kono rokom e ekta khnuchiye chalu korlam.. tarpor jed kore aaro 6 ta dim phatiye, mosla, sobji te shortcut mere aabaar rnadhlam.. besh baje khete hoyechilo.. khub min min kore feedback elo - kichudin dim na rnadhai bodh hoy bhalo hobe.. :) :) oboshyo consolation hiseb e aamaar bhaijhi yummy yummy kore kheye phello.. kom moshla howay or subidhe hoye gelo.. :) :)

    tobe aami bodh hoy daal beche alada korte paartaam na.. aapni otyonto bhalo aar perfectionist o.

    aamaar ek meshomoshai loadshedding e, munger e (bohu din aage), bari shuddho loker jonne bhaat bosate giye hnarite gom diyechilen.. tarpor aar ki?.. sobai khidey oshthir, edike bhaat aar hoy na.. ondhokar e byaparta bujhte onek somoy legechilo.. :) :)

    thank you soo much etto sundor lekhar jonne.. aar sumoner gaan shunte utsaho debar jonne.. aaj e shunchi

    ReplyDelete
    Replies
    1. আপনার গল্পটা একইসঙ্গে মচৎকার এবং মারাত্মক, ইন্দ্রাণী। ডাক ছেড়ে কান্নার ইচ্ছেটা একেবারে অক্ষরে অক্ষরে সত্যি। তবে আপনার ভাইঝি যে মর্যাদা করে খেয়েছে সেটা কেমন ভালো ব্যাপার বলুন। কারও সর্বনাশ, কারও পৌষমাস। সম্প্রতি মিক্সির ঢাকনা উড়ে গিয়ে আরেকটা পর্ব ঘটেছে, আপনার গল্প পড়ে সেটাও বলতে ইচ্ছে করছে, দেখি সামনের কোনও পোস্টে লিখব।

      লোডশেডিং-এ চালের বদলে গম দিয়ে ভাত রাঁধতে যাওয়ার গল্পটাও দুর্দান্ত। আর ঘটনাটা যে ঘটেছিল মুঙ্গেরে, এটা আমার কেন যেন দারুণ মানানসই মনে হচ্ছে। এই সব ইন্টারেস্টিং ঘটনা মুঙ্গেরে ঘটবে না কি মধ্যমগ্রামে? এইটাই মনে হচ্ছে বারবার।

      Delete
  2. "একটা কথা পরিষ্কার করে নেওয়া দরকার। মা বলতেই পারতেন যে আমি রাঁধব না। একদিন বললেই, বলা যায় না, হয়তো মাঝরাতে মাছ আনা বন্ধ হয়ে যেত। কিন্তু মা তো কোনওদিন বলেননি যে তিনি রান্না করতে পারবেন না। একটা লোক যদি মুখ ফুটে না-ই বলে যে তার আর মার খেতে ভালো লাগছে না, তাহলে যে মারছে সে জানবে কী করে যে এবার মার বন্ধ করতে হবে?" ekdm sotyi ! exploitation je kothay lukie thaake :(

    daal beche alada korar dhoirjo -ke kurnish ! ami holey dutoke eksathe pressure-e diye seddho kore, chatti tel nun diye kheye feltam ;)

    ReplyDelete
    Replies

    1. ওটাই একমাত্র বুদ্ধির কাজ হত অন্বেষা। আমার আসলে সময় নষ্ট করার দরকার ছিল আর যেনতেনপ্রকারেণ মা ঠাকুমার কাছে 'আমি তোমাদেরই লোক' প্রমাণ করারও, তাই এই হাঁদামি করলাম।

      এক্সপ্লয়টেশন প্রসঙ্গে বলি, এই যে লোকজনের সত্যি সত্যি বুঝতেই না পারাটা যে তারা একটা সুসংবদ্ধ, সুপ্রতিষ্ঠিত শোষণযন্ত্রে দিবারাত্র শোষকের ভূমিকা পালন করছে, গোটা ব্যাপারটার সবথেকে হাহতোস্মি অংশ সেটাই।

      Delete
  3. আপনারা পাঁচমিশেলী ডাল খাননা? আমাদের বাড়িতে খুব হত। এখন একটা বয়ামে ঝাড়তি পড়তি ডাল হামেশাই মিশিয়ে রাখি।

    আমার দাদু সাঁওতাল গ্রামে গেছিলেন সরকারী ডিউটিতে। মাস্টারমশায়ের আতিথ্য করতে গ্রামে সেদিনের স্পেশাল ছিল লালভাত। ভাত যখন ফুটে প্রায় হয়ে এসেছে, তখন একটা জ্যান্ত সাপের (কি সাপ জানি না) মাথা কেটে হাঁড়ির উপর টাঙিয়ে ফোঁটা ফোঁটা রক্তে ভাতকে অতিরঞ্জিত করে হয়েছিল লালভাত। কিন্তু গপ্পটা এটা নয়।

    গপ্প হল: মা ঠাকুমাদের গল্পগুলো পড়ে আমার মায়ের গল্প মনে পড়ে গেল। আমার মা চা প্রেমী। দিনে Uncountable বার চা খান। ভাতের হাঁড়ি, চায়ের জল পাশাপাশি, ভাত প্রায় হয়ে এসেছে, মা চা পাতা ভাতের হাঁড়িতে দিয়ে দিলেন। আমরা সেদিন সাঁওতালদের মত লাল ভাত খেয়েছিলাম।
    আর না, মা বাছেনি। ফ্যান গালার সময় যেটুকু গেল, সেটুকু ছাড়া বাছবে সে, খাবে যে। ☺️

    ReplyDelete
  4. অধিকন্তু না দোষায়: লেখা দারুণ লেগেছে।

    ReplyDelete
    Replies
    1. থ্যাংক ইউ, চন্দ্রচূড়। সাপের রক্তের লালভাতের গল্পটা কি সাংঘাতিক। তার থেকে চা-জনিত লালভাতের গল্পটা ঢের ভালো। আপনার মায়ের এই সিস্টেমটা জীবনে প্রয়োগ করার মতো কিন্তু, যে খাবে সে বাছবে। থ্যাংক ইউ।

      Delete
  5. Bhobishoter jonno : https://m.tarladalal.com/panchmel-dal-4790r
    Eta khoob easy aar tasty hoe.

    -Parama

    ReplyDelete
    Replies
    1. আরে থ্যাংক ইউ, পরমা। আমার বাড়ির বর্তমান ডাল পরিস্থিতির জন্য এই রেসিপি একেবারে উপযুক্ত।

      Delete
  6. ইশ কি সুন্দর করে লিখেছ পায়ের তলার জমি তৈরি হওয়ার কথা টা.. ঠাকুমার গল্প টা তো দুঃখের ই.. কাকীমার গল্প টা রাগেরও.. ওই situation এ বলতে ইচ্ছে করছে কাকীমা ওটাই মাছের ঝোল মাখা ভাত একসঙ্গে রান্না করে দিন খেয়ে নেব.. বুঝতেই
    পারছি 30 বছর আগে কেমন অবস্থা হতে পারত ... আমি এই কয়েকমাস আগে একদিন গাজরের হালুয়া ভুল করে চিনির বদলে পাশের কৌটো থেকে নুন দিয়ে করেছিলাম.. তার উত্তরে- হাহা এটা কি করে বানালে? সত্যি? খেয়ে দেখি? একি সত্যি নুন তো? যাঃ ফেলে দিতে হবে? এখন আর চিনি দিলে হবেনা না? এইসব শুনে নিজেই হেসে গড়াগড়ি খেলাম... আগেকার এই গল্প শুনলে মনে হয় আমরা অনেক সহজ জীবন পেয়েছি..
    তোমার লেখার শেষ টা একদম ভাবতে পারিনি.. ভেবেছিলাম mixed ডাল এর কোনো রেসিপি পাবো.. তোমার ধৈর্য্য কে নমস্কার. .. inspiration পাই যেন..
    আর একটা কথা অবান্তর এর পাঠক দের কমেন্ট পড়ার ও দারুণ মজা আছে...

    ReplyDelete
    Replies
    1. তোর শেষের বাক্যটার সঙ্গে ছাদের সমান হায়েস্ট ফাইভ, ঊর্মি। আর ডাল বেছে সময় নষ্ট করার ইন্সপিরেশন যেন না পাস সেটাই আমার কামনা। এই সব করার থেকে ঘুমোনো ভালো।

      মিক্সড ডালের রেসিপি দেখ পরমা ওপরে দিয়েছেন। দেখেই মনে হচ্ছে ভালো খেতে হবে। বানিয়ে দেখতে পারিস।

      Delete
  7. Ki mochotkar lelha, ei boyam er prem amar o khub. Ekbar chhoto belay maa jeere r soru mouri mishiye felechhilo! Ami e didi dujone mile bechhe alada korechhilam. Amar maa o kothao bhalo jar ba grohosthali r tuktak dekhte pelei chance chhare na. Jar er lobh e anek apochhonder jinis o kini.

    ReplyDelete
  8. Replies
    1. থ্যাংক ইউ, পাপিয়া। জিরে মৌরিটা তো অড়হর মুগের থেকেও খতরনাক মনে হচ্ছে। জারের লোভে অপছন্দের/অদরকারি জিনিস কেনার সম্ভাবনা আমারও প্রবল।

      Delete
    2. Hya tomar lekha sobsomoy jiboner chhoto ghotona gulo mone koray. Sei 30 yrs er age ghote jaoa kando ekhono reference hisebe bola hoi. : Papiya

      Delete
    3. প্রথম বাক্যটা খুশি হয়ে মনে করে রাখলাম, পাপিয়া। থ্যাংক ইউ।

      Delete
  9. কুন্তলা তোমাকে বাহবা! কিভাবে লেখাটার মোড় ঘুরিয়ে দিলে! পাঠক ভাবলো আমিও তো এই সেদিন আমিও recycled বয়াম ব্যবহার করে চাল ডাল মুড়ি চিড়ে সব গুছোলাম , এ লেখাটার সঙ্গে বেশ identify করতে পারছি! বেশ Marie Condo লাগছে নিজেকে।
    তার পর তুমি পাঠক কে একেবারে অন্য জায়গায় নিয়ে চলে গেলে। সেই সব রান্নাঘরে .. সেই তাদের সঙ্গে যাদের আর নাগালে পাওয়া যায় না...

    ReplyDelete
    Replies
    1. হাহা, থ্যাংক ইউ, কাকলি। লাস্ট লাইনটা পড়ে ভাবছি, সত্যি, সবাই যে যার ভাগের হাসি কান্না অবিচার যন্ত্রণা নিয়ে একেবারে নাগালের বাইরে চলে গেল।

      Delete
  10. "গোটা ছোটবেলা জুড়ে মায়েদের রন্ধ্রে, শিরায়, ধমনীতে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছিল, যে যা গেছে তা যদি পুনরুদ্ধার করতে হয় তার জন্য পুরুষকারের থেকেও বেশি লাগবে শিক্ষা। বাঙালিরা তখন যাকে গভীর শ্রদ্ধায় বলত "এডুকেশন।" যে জন্য বড়ছেলেকে সারাদিন চাকরির পর নাইট স্কুলে যেতে বাধ্য করা হয়েছিল, প্রতিটি কলেজ যাওয়ার বয়সী মেয়েকে কলেজে পাঠানো হয়েছিল। তারা কলেজে নিজেদের পড়াশোনা করার সঙ্গে সঙ্গে গেঁড়িগুগলি ভাইবোনেরা ঠিক মতো পড়তে বসছে কি না আর পরীক্ষায় ঠিক ঠিক উত্তর লিখে আসছে কি না সে নিয়ে পাড়া মাথায় করে রাখত।"


    এটুকু পড়ে আমার শুধু এই গানটার কথা মনে এল, অনেক খুঁজেও ইউটিউবে পেলাম না, শেষে অন্য কোথাও থেকে ।

    https://www.dailymotion.com/video/x3szvfx

    একটা প্রজন্ম দাঁতে দাঁত চিপে লড়াই করে জীবনের মূল্যবোধ যখন সঠিক ভাবে পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে ছড়িয়ে দেন তাদের সন্তান তখন এভাবেই অবান্তর কথার মাঝেও অন্যদের ভাবান , কেন তারা ও ভাবে ভাবতে পারে না ।

    আবার এপাড়ায় নিয়মিত হবার প্রচেষ্টায় |

    ReplyDelete
    Replies
    1. খুব প্রিয় গানটা ম্মে করিয়ে দিলেন। কত প্রজন্মের লড়াইয়ের পর মেয়েরা আজকের জায়গাটা পেয়েছে, ভাবতে গায়ে কাঁটা দেয়।

      Delete
    2. গানটার প্রসঙ্গে আমিও বলি, এই গানটা (এবং এই সংস্করণটা) সেই গোত্রের গানের মধ্যে পড়ে যেগুলো অনেকদিন বাদে বাদে যতবার প্রথম শুনি ততবার নিজের প্রতি মাথা নাড়ি এই ভেবে যে এতদিন ভুলে ছিলাম কী করে। শুনতে শুনতে এখনও সেটাই ভাবছি। থ্যাংক ইউ, আত্মদীপ।

      Delete
  11. কি ভালো লেখা কুন্তলা। সত্যিই বাকরুদ্ধ! আমার মা চাকরি করত, এখন retired, সমস্ত কিছু পুরো ছবির মতন দেখতে পেলাম।
    লেখাটা পড়ার শেষে, প্রথম প্রতিশ্রুতির কথা মনে এলো (বাড়িয়ে বলছি না একটুও)...
    ভালো থাকবেন।

    ReplyDelete
    Replies
    1. আমারও কৌটোয় কৌটোয় জিনিস রাখার অভ্যেস আছে, আর কয়েক মাস আগে আমিও এরকম দুই ডাল আলাদা করেছি, কাকতালীয় কাকে বলে? হাহাহা :)

      Delete
    2. দ্যোতনা, এত লোকের যে আমার মতো কৌটো প্রেম আছে, এটা জানা আমার এই পোস্টটা লেখার অন্যতম পাওয়া।

      আপনার লেখাটা এত ভালো লেগেছে জানাটা তো বটেই। সে ভালোলাগা আমার কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য অনেক, অনেক ধন্যবাদ। আপনিও ভালো থাকবেন।

      Delete
  12. Khub bhalo laglo pore - amrao prothome sob jar e alada alada label diye thik thak jinish rakhtam - akhon sob ulto palta hoye gechhe :)

    Apnar pithe khaoa niye lekha ta khub bhalo laglo, abar mon kharap korao - onek bocchor pithe khaiini :( Banano khub kothin - ar Oh! Calcutta ar Bijoli Grill theke khaoar mane hoyna.

    Cassettes niye lekha ta khub bhalo! Onek purono diner kotha mone pore gelo - Hindi/Bangla cassette er daam jamon hoto 42/35; temni english/international er hoto 125 (besir bhaag i SONY). Erokom akta cassette amar chhilo jetar naam 'Greatest hits' - tate Michael Jackson, Madonna, Boyzone sobar ekta kore gaan chhilo - Otar daam hoyto chhilo 125 - kintu amar kachhe ota chhilo priceless! life changing!

    ReplyDelete
    Replies
    1. থ্যাংক ইউ, রণদীপ। তোমরা তো তবু লেবেলটেবেল দেওয়ার একটা প্রচেষ্টা করেছিলে, আমার গোড়া থেকেই হজমোলার শিশিতে জিরে আর বেকিং সোডার শিশিতে ধনে, এই রকম চলছে। পিঠে খবরদার ওহ! ক্যালকাটা আর বিজলী গ্রিল থেকে কিনে খেয়ো না। পিঠের অপমান আর পকেটেরও। তার থেকে শীতে যদি সি আর পার্কের দিকে আসো, দু'নম্বরের অন্নপূর্ণা মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের পিঠে খেয়ে দেখো, দিব্যি। এক নম্বরের কমলাতেও ভালো পাবে।

      ওই ক্যাসেটগুলো কেমন প্রাণের সমান ছিল না? তোমার ক্যাসেটের বর্ণনাটা শুনেই বুঝতে পারছি ওটা তোমার কত সাধনার বস্তু ছিল। কত কমে খুশি হতাম তখন আমরা। এইটাই আমার ছোটবেলা সম্পর্কে প্রধান নস্ট্যালজিয়া।

      Delete
    2. BTW, grocery/utility dokan theke je khali plastic er boyyam pawa jay seta jene ami hotobak hoye gechhilam! Akbar, XLRi er hostel e ami onno akjon er room e giye dekhi saari saari arokom jar - center fresh/alpenlibe eisob..ami jiggesh korlam 'Kottheke peli?'; uttor elo - 'Kano, oi to canteen er pasher store e!'. Ami doure giye okhane jiggesh korlam - bollo 'Ha! free to - niye jao - akhon khali 5 ta achhe, pore aro debo'.
      Ami obak hoye bhablam je eita ami aage kano bhabini! koto organize kore sob rakha jeto!

      Delete
    3. হাহা, এসব যারা ভাবতে পারে তাদেরই "রিসোর্সফুল" বলা হয়, রণদীপ। যেটা আমি বা তুমি নয় বোঝাই যাচ্ছে। তবে তুমি যে বয়ামগুলো আট টাকা পিসের থেকেও সস্তায়, একেবারে ফ্রি-তে পেয়ে গিয়েছিলে, এটা কাঁটার মতো বিঁধছে।

      দুটো চেনা জিনিসের নাম মনে পড়ে গেল তোমার কমেন্ট থেকে, অ্যালপেনলিবে, যেটা আমার দারুণ ভালো লাগত আর সেন্টার ফ্রেশ, যে যন্ত্রণাটার মধ্য দিয়ে কেন কেউ সেধে যেতে যাবে আজও আমার মাথায় ঢোকেনি।

      Delete
    4. সেন্টার ফ্রেশ এর উপর মন্তব্যটা পড়ে আরেকটু হলে অফিস কাঁপিয়ে হেসে উঠতাম। খুব কষ্টে সামলেছি।

      বি: দ্র: আমার সেন্টার ফ্রেশ খারাপ লাগেনা। 😆😆😆

      Delete
    5. আপনি ধন্য।

      Delete
  13. হাহা। দারুণ লেখা। মাঝে মাঝে ব্লগে উঁকি মারা হয় না নানা কাজে, তারপর সব পড়ি এক এক করে। এইবার একটা অবান্তর সংকলন বের করে ফেলুন। তাহলে দিব্যি আগেরটার মতো রোজ শোয়ার আগে বালিশের কাছে নিয়ে পড়ে নেব বার বার। মনটাও ভালো থাকবে।

    ReplyDelete
    Replies
    1. থ্যাংক ইউ, সুদীপ। দেখা যাক অবান্তরের সেকেন্ড বইয়ের ব্যাপারে।

      Delete

Post a Comment