দ্যুতির বিয়ে খেতে কলকাতা গেলাম। বৃহস্পতিবার আমি দিল্লি থেকে রিষড়া পৌঁছলাম, শুক্র রাতে অর্চিষ্মান ঢাকা থেকে নাকতলা ঢুকল। এয়ারপোর্ট থেকে ফোন করে বলল, শোনো, তুমি যদি কাল সকাল সকাল নাকতলা এসে যাও আমরা দুপুর দুপুর উপহার কিনে সন্ধে সন্ধে বিয়েবাড়ি চলে যেতে পারি।
অর্ধেক গিফট দিল্লিতে কেনা হয়েছে। বাকি অর্ধেক কোথা থেকে কেনা হবে সে নিয়ে কথা হয়েওছে, আবার হয়ওনি। অর্চিষ্মান আভাস দিয়েছে আমি যদি দিল্লি থেকে কিনে নিয়ে যাই তাহলেই বেস্ট হয়। আমি আভাস দিয়েছি ওয়ার্কশপ তো বিকেলেই শেষ হয়ে যাবে, তারপর যদি অর্চিষ্মান ঘুরতে ঘুরতে বাজারের দিকটায় যায়, অর্ধেক পূর্বপ্রজন্মের ভিটের ওমও নেওয়া যাবে, এই রাস্তা দিয়ে একসময় বুদ্ধদেব বসু হাঁটতেন ভেবে রোমাঞ্চিতও হওয়া হবে, তারপর রোমাঞ্চটোমাঞ্চ ফুরোলে টুক করে একটা দোকানে ঢুকে উপহার কিনে নিলেই সব দিক সুষ্ঠুভাবে রক্ষা পায়।
আভাস দেওয়াদেওয়ি ঘটেছে অর্চিষ্মান ঢাকা যাওয়ার আগে। আভাস যদি বিবাহের স্ট্র্যাটেজির তূণের একনম্বর ব্রহ্মাস্ত্র হয়, দু'নম্বর হচ্ছে সংযম। আভাস দিয়ে যদি থেমে যাওয়ার সংযম না দেখাতে পারা যায় তাহলে আভাস ধক হারায়। আমরা দু'জনেই সে সংযম দেখিয়েছি। মাঝখানের সাত দিন দু'পক্ষই নীরব থেকেছি। ঘাপটি মেরে থেকেছি কার পলক আগে পড়ে। বিয়ে বা জীবনের বাকি অনেক যুদ্ধই আসলে কার চোখের পলক আগে পড়বে-র রকমফের। স্রেফ অপেক্ষা দিয়ে কত প্রতিপক্ষকে যে কুপোকাত করা যায়।
*****
নাকতলার পথে উবারদাদা হিন্দি সিনেমার প্রেমের গান চালালেন। সব ষাটসত্তরের দশকের। একটা গান শুরু হতে বললেন, এটা আমার মিসেসের ফেভারিট গান, ম্যাডাম। গানটা আগে শুনিনি। পোস্টে লিখব বলে মনে করে রেখেছিলাম কিন্তু ভুলে গেছি। দ্বিতীয় হুগলী সেতু থেকে নেমে, চিড়িয়াখানা পেরোতেই দু’দিক দিয়ে শোঁ শোঁ করে তিনচারটে বাইক বেরিয়ে গেল। বাইকের পেছনের সিটে পেছন ফিরে বসে থাকা যুবকদের হাতে সিরিয়াস ক্যামেরা। সিগন্যাল এল, সিগন্যাল গেল। বাইকরা স্পিড বাড়িয়েকমিয়ে আমাদের ঘিরে ডি এন এ-র মতো এঁকেবেঁকে চলতে লাগল। উবারদাদাও স্পিড বাড়িয়েকমিয়ে বাইকদের গা ঘেঁষে চলতে লাগলেন। প্রায় দেড় কিলোমিটার অতিবাহিত হওয়ার একটা সাদা এস ইউ ভি হইহই করে আমাদের ঘাড়ে এসে পড়ল, আমি সামনের সিট খামচে ধরলাম, এস ইউ ভি-র ড্রাইভারের পাশের জানালায় কনুই রেখে অর্ধেক বডি বার করে একটা লোক দাদাকে প্রচণ্ড ধমকে ওভারটেক করলেন। ঘটনার আকস্মিকতা ও তীব্রতায় আমি থতমত খেলাম। উবারদাদা রিয়ারভিউ মিররে চোখে চোখ রাখলেন।
কী হয়েছে বুঝলেন তো?
বোঝাই যাচ্ছে দাদা আমাকে জীবনে প্রথমবার দেখছেন।
শুটিং হচ্ছে। চেজ সিন। বন্ডের বইতে যেমন থাকে। বন্ড জানেন তো?
এটা জানি। দাদা কি বলতে চাইছেন কলকাতা শহরের বুকে কোনও বাঙালি বন্ডের চেজ সিনের শুটিং-এর মধ্যে আমরা পড়েছিলাম?
আমি তো বুঝেই স্পিড বাড়িয়েছি। বাইকগুলোর কাছাকাছি থাকছিলাম দেখছিলেন না। চিন্তা করবেন না, আমরা ক্যামেরায় এসে গেছি। আয়নায় দাদার দাঁত ফুটে উঠল।
প্যানিক থামাতে হোয়াটসঅ্যাপ খুলে রিংকুপিসিকে হাই লিখলাম।
*****
সত্যনারায়ণ থেকে ডান দিকে ঢুকে এদিকওদিক বেঁকে মাঠ পেরিয়ে বাঁ, ডান, বাঁ, ফাইন্যাল ডানে বাঁক নিয়েই সাঁচিস্তুপ গেট এসে গেল। ফলকে 'মিত্র'। দোতলায় ডাইনিং টেবিল ঘিরে লোকজন বসে ছিল। ফাঁকা চেয়ারটায় বসলাম। বাবা ঢাকা দেওয়া বাটিটা আমার দিকে স্লাইড করলেন। এই নাও, কুন্তলা। আমি ঢাকনা তুলে চামচে করে রাবড়ি মুখে পুরলাম।
অর্চিষ্মান বলল, অত তরিবৎ করে খাওয়ার টাইম নেই কুন্তলা, বেরোতে হবে।
মা বললেন, তরিবৎ আবার কী? কথাটা তরিজুত। তরুজুতও অ্যালাউ করা যেতে পারে। ব্যস।
মাকে হাই ফাইভ দিলাম।
*****
অর্চিষ্মান ঢাকা থেকে উপহার কিনে এনে আমার ইচ্ছেপূরণ করল না, আমি দিল্লি থেকে খালি হাতে নাচতে নাচতে উপস্থিত হয়ে অর্চিষ্মানের ফ্যান্টাসি আনফুলফিলড রেখে দিলাম। বদলে এখন দুজনে কলকাতা থেকে উপহার কিনতে বেরোব। যে বলেছিল বিয়ে মানেই কম্প্রোমাইজ, তাকে নোবেল দেওয়া উচিত।
বিয়ে মানে সত্যিই কম্প্রোমাইজ। কখনও কখনও কম্প্রোমাইজের গুপ্তবেশে বর।
অর্চিষ্মানের সঙ্গে অটো চড়ে দিল্লির রাস্তায় টোটো কোম্পানি করি, সিনেমাহলে কনুইয়ে কনুই গলিয়ে বসি, কফিশপে টেবিলের ওপর ঝুঁকে পড়ে গুজগুজাই - কিন্তু এ সবের থেকে আমার ভালো আর রোমাঞ্চকর লাগে শহরের রাস্তায় দু'জনে পাশাপাশি হাঁটতে। অবাধ্য অটো, বেপরোয়া বাস, গায়ে পড়া ভিড় বাঁচিয়ে দু'জনে হাঁটছি, কেউ তাকাচ্ছে না, পাত্তা দিচ্ছে না, দেবেই বা কেন কেউ জানেই না আমরা এক্সিস্ট করি। পৃথিবীর কাছে আমরা অদৃশ্য, আমাদের কাছে পৃথিবী।
ওয়েল, অর্চিষ্মানের মুখে কথা বসানোর দরকার নেই, আমার কাছে অদৃশ্য।
বাড়ি থেকে রিকশায় রামগড়। রামগড় থেকে অটোয় এইট বি। এইট বি থেকে অটোয় সাউথ সিটি শপিং মল। শপিং মলের সিঁড়ির নিচে ছাউনিতে গমগম স্টোভ, সসপ্যানে কানায় কানায় খলখল চা, চায়ে রুপোলি অ্যালুমিনিয়ামের মগ ডুবছে উঠছে, ডুবছে উঠছে।
আভাস বা অপেক্ষা - কোনওটারই দরকার নেই। যুদ্ধনীতির সম্পূর্ণ সমাপতন। সঙ্গী বন্দীর মুভ নিয়ে সব বন্দীই ডিলেমাহীন।
কাগজ না খুরি? খুরি। দশ না পাঁচ? পাঁচ। অর্চিষ্মান বলল, বিস্কুট খাবে? উঁহু। কিন্তু অন্য একটা জিনিস খাব। বিক্রেতার অনুমতি নিয়ে ঢাকনা খুলে একটা বাপুজি কেক বার করলাম। তুমিও খাও? অর্চিষ্মান মুখ ছ্যাতরালো। সবুজ কাগজ ছিঁড়ে কামড় দিলাম। ঠোঁটের এদিকে ওদিকে গুঁড়ো লেগে গেল। আমি হাসলাম, অর্চিষ্মান হতাশ মাথা নাড়ল।
আমিও মাথা নাড়লাম, তবে সুখে। এমন নয় যে অনেক বছর পর খাচ্ছি। রিষড়ায় ফ্রিজের ওপর ডজনখানেক রাখাই থাকে। দু'সপ্তাহে অন্ততঃ তিন বার, চায়ের সঙ্গে বাপুজি দিয়ে ব্রেকফাস্ট সারেন। বাড়ি গেলে আমিও ঘুরতেফিরতে খাই। আগেরবারও খেয়েছি। পরেরবার এসেও খাব।
দামি নয়, তুলতুলে নয়, কাজুকিসমিস আমন্ড আখরোটঠাসা নয়। বাপুজি কেক ফ্যান্সি নয়, ফ্যামিলিয়ার।
একটা ফ্যামিলিয়ার ছবি ভেসে ওঠে। পুরোনো বাড়ির রান্নাঘরের সাইডে পাতা ডাইনিং টেবিলে চেয়ারে বসে আমি চিকেনমটন সাঁটাচ্ছি, সমকৌণিক চেয়ারে মা দুঃখী বাটিতে দুধরুটি খাচ্ছেন।
দুঃখীটা খানিকটা অনুপ্রাস, খানিকটা আমার চিকেনমটনের উল্লাসকে আন্ডারলাইন করার জন্য। মায়ের জন্যও, অফ কোর্স, মাছমাংস ছিল, ইচ্ছে বা খিদের অভাবজনিত কারণে মা খাচ্ছিলেন না। দুঃখিত হয়ে তো খাচ্ছিলেনই না। আমার মা আগের জন্মে বেড়াল ছিলেন হাইলি। দুধ দেখলেই চোখমুখ চকচক করে উঠত।
সেদিনও মা সুখী সুখী মুখে দুধ এবং দুধের সঙ্গে নিমিত্তমাত্র কিছু একটা খাচ্ছিলেন, খেতে খেতে মায়ের সুখের আড়ালে একটা নির্দিষ্ট (এবং আমার হদ্দ ফ্যামিলিয়ার) ফিলিং জড়ো হয়ে উঠছিল। অবশেষে সংযম ভাঙল। খাবি সোনা? কী ভালো খেতে লাগছে। দেব একটু বাটিতে করে?
বাপুজি কেক খেতে খেতে এবং মুখ থেকে গুঁড়ো ঝেড়ে নিজেকে সভ্য শহরের যোগ্য রাখতে রাখতে আমার ভেতরেও একটা ফিলিং পাকিয়ে উঠল। চোদ্দই ডিসেম্বর বাঙালি শহরে ঘুরতে বেরিয়ে বাঙালি খুরিতে বাঙালি চা খাচ্ছি। পাশে বাঙালি বর। পিঠের রোদ্দুরটাও সামহাউ বাঙালি। জীবনে যে পঁচাত্তরটা আগুন দাউদাউ জ্বলছে একটাও নেভেনি কিন্তু এই মুহূর্তে একটার আঁচও গায়ে লাগছে না।
সব মিলিয়েমিশিয়ে একটা অসামান্য, অনির্বচনীয় সুখ আমাকে ছাপিয়ে উঠল। একটা দুশ্চিন্তাও। অর্চিষ্মানও কি এই সুখটা পাচ্ছে? পাওয়া উচিত কারণ শহর খুরি চা রোদ্দুর - সুখের এই সব এলিমেন্টই কমন। তিনটে ছাড়া। এক, ওর পাশে বরের বদলে বাঙালি বউ, ওর চায়ে চিনি, আর ওর নো বাপুজি কেক। প্রথম দুটো বদলানোর দরকার নেই বা না বদলালেই ভালো, তৃতীয়টার ব্যবস্থা সহজেই করা যায়।
যদিও একবার সেধেছি হয়তো আর একবার সাধিলেই খাইবে? প্রথমবার না বলে হয়তো মনে মনে আফসোসই করছে?
বললাম, কেকটা ভালো খেতে কিন্তু। একটা খাবে? অর্চিষ্মান নঞর্থক ঘাড় নাড়ল। আমি বললাম, আচ্ছা, গোটা না খাও, এই অর্ধেকটা টেস্ট করো, আমি আর খাব না।
অর্চিষ্মান বলল, হুগলী জেলার লোকেদের বাপুজি কেক ফেভারিট, তাই না?
চায়ের খুরি ডাস্টবিনে তাক করে ছুঁড়ে মলে ঢুকে গেলাম।
*****
আরও একটা ক্ষেত্রে আমাদের যুদ্ধনীতির সম্পূর্ণ সমাপতন ঘটে - তা হল শপিং। দুজনে বসে বসে নিজেদের গায়ে আস্তে আস্তে চিমটি কাটতে রাজি হব দ্যান দোকানে দোকানে ঘুরতে। অর্চিষ্মানের কেন খারাপ লাগে বলতে পারব না, আমার কথা বলতে পারি।
একদিক থেকে দেখলে খারাপ লাগার কিছু নেই কারণ শপিং করতে গিয়ে আমার এমন কিছু লোকের সঙ্গে দেখা হবে যাদের সঙ্গে আমার চাহিদাজোগানের সম্পর্ক। আমি চাইব, ওঁরা জোগাবেন কাজেই আমরা পরিপূরক। আবার অন্য দিক থেকে ঘোর অপরিপূরক কারণ আমি টাকা খরচ করতে চাইব না, ওঁরা আমার টাকা খরচ করাতে চাইবেন। আমি টাকা খরচ না করলে ওঁরা হতাশ হবেন, আমি একটা সস্তা শাড়ি কিনব বলে সাতটা দামি শাড়ি নামিয়ে দেখলেও হতাশ হবেন। যে ক'টা সপ্তাহ বাকি আছে জীবনের তাতে আমি আর কাউকে হতাশ করতে চাই না। আরও একটা ব্যাপার আছে। "বেচা" ব্যাপারটার মধ্যে আমি নিজে তো পড়তে চাইই না, কেউ পড়েছে দেখলেও আমার সেকেন্ড হ্যান্ড 'ধরণী দ্বিধা হও' ফিলিং হয়।
কিন্তু বেচতেও হয়, কিনতেও হয় - সাচ ইজ লাইফ। খারাপ লাগা এড়িয়ে জীবনের মধ্য দিয়ে চলা যায় না। যা করা যায় তা হল মিনিমাইজ। শপিং আমাদের কাছে মিনিমাইজেশন অনুশীলন। আমাদের অবজেকটিভ ফাংশান দোকানের দরজা দিয়ে ঢোকা এবং উদ্দিষ্ট বস্তু হাতে নিয়ে বেরিয়ে আসার মাঝের সময়। আমাদের লক্ষ্য এই সময়টার মিনিমাইজেশন। বিবাহিত অবিবাহিত মিলিয়ে গত পনেরো বছরে আমরা এই এক্সারসাইজটিকে প্রায় পারফেকশনের পর্যায়ে নিয়ে গেছি।
প্রথম স্টেপ হচ্ছে লিস্ট বানানো। বাজারে যাব, গিয়ে দেখব কী পাওয়া যায়, তারপর দেখব কোন দোকানে সে জিনিস পাওয়া যায় - এই সব করলে হবে না। উবারে নির্দিষ্ট দোকানের ডেস্টিনেশন সেট করতে হবে, অটো থেকে নেমে গাল ফুলিয়ে দম নিয়ে দৌড়ে দোকানের দরজা দিয়ে ঢুকতে হবে, আমাদের উদ্দিষ্ট দ্রব্য দোকানের কোন তলার কোন শেলফে রাখা আছে জানা থাকলে দৌড়ে সে শেলফের সামনে উপস্থিত হতে হবে। নিজেদের মধ্যে ফিসফাস হাসাহাসি মিনিমাম রাখতে হবে, ইন্টারেস্টিং কিছু দেখলে চোখে চোখে একে অপরকে জানিয়ে রাখতে হবে - মনে রেখো, বেরিয়ে বিলাবিলা করব। শেলফের সামনে পৌঁছে দ্রব্য উল্টে স্টিকারের দাম দেখে, পোষালে ভেরি গুড বলে মূল্য চুকিয়ে প্যাক করিয়ে বেরিয়ে আসতে হবে। না পোষালে খোঁজ নিতে হবে এর থেকে সস্তা কিছু আছে কি না। কর্তৃপক্ষ হয় হ্যাঁ বলবেন, নয় না। 'হ্যাঁ' বললে ভেরি গুড বলে মূল্য চুকিয়ে প্যাকেট নিয়ে বেরিয়ে আসতে হবে, 'না' বললে ভেরি গুড বলে। এতক্ষণের বন্ধ করে রাখা দম ফোঁস করে ছেড়ে, চা কফির আশায় এদিকওদিক তাকাতে হবে। চা কফি জুটিয়ে তাতে চুমুক দিতে দিতে বলতে হবে, দোকানে লোকটাকে দেখলে? এরা কারা?
মলের দরজা দিয়ে ঢুকে বোর্ডে পুরুষালি বিভাগের পাশে আঁকা তীরচিহ্ন ফলো করে দোতলায় উঠলাম। কালো জামাপ্যান্ট পরা দেড়শো যুবক ঘিরে ধরলেন। কী চাই শোনার পর একশো ছেচল্লিশ জন পিছু হটলেন, বাকি চারজনের দুজন আমাদের আগে আগে, দুজন পেছন পেছন কাউন্টারের গোলকধাঁধা পেরিয়ে এঁকেবেঁকে চললেন। অদূরে, আমরা যে জিনিসটা কিনব ঠিক করেছি তার কাউন্টার। কাউন্টারে কালো পোশাকের যুবক অপেক্ষা করছেন। হাসি হাসি চোখ আমার চশমায় ফেভিকল দিয়ে সাঁটা।
যে বিপদটার আতংকে ছিলাম সেটাই ঘটল।
না, ভদ্রলোক আমার সঙ্গে বাংলাতেই কথা বললেন। আগেও দেখেছি, আমাকে দেখে এমনকি সাউথ ক্যালকাটার শপিং মলের কর্মীরাও বাংলা বলে ওঠেন।
বলুন ম্যাম, কী দেখাব?
সেন্ট আছে?
অর্চিষ্মান আলতো গলা ঝাড়ল।
ও সরি, পারফিউম। আছে?
অফ কোর্স, ম্যাম। কী ধরণের দেখাব? অ দা কোলন ? অ দা পারফিউম? অ দা টয়লেট?
আর কেউ গলা ঝাড়ছে না। আমি বোকার মতো চুপ করে দাঁড়িয়ে আছি। সেন্ট (বা পারফিউম, হোয়াটেভার) বলতে আমি দু'রকম বুঝি। এক রকম, যেটা মেখে কেউ ঘরের এ প্রান্তের দরজা দিয়ে ঢুকলে ও প্রান্তের লোককেও "কে রে ভাই" বলে ঘাড় ঘোরাতে হয়। দ্বিতীয় রকম হচ্ছে যেটা মেখে কেউ এ প্রান্তের দরজা দিয়ে ঢুকলে ও প্রান্তের লোক তো নিজের কাজ করে যেতেই পারে, এ দিকের লোকও, অস্বস্তিপ্রদ সন্নিকটে অগ্রসর না হলে সে গন্ধ পেতে অক্ষম হয়।
আমার এই দ্বিতীয় রকম সেন্ট পছন্দ। অর্চিষ্মান বলছে ওরও এক্স্যাক্টলি এই রকমের সেন্টই পছন্দ। সেন্ট, পারফিউম, অ দা কোলন। হোয়াটেভার।
ভদ্রলোকের ঠোঁট বাঁ দিকে প্রসারিত হল। অনেকটা হাসির মতোই। নো প্রবলেম। একটা কাগজের স্টিকে স্যাম্পল বোতল থেকে স্প্রে করে কাগজটা হাওয়ায় দু'বার নাড়িয়ে অর্চিষ্মানের দিকে এগিয়ে দিলেন।
এটা উডি।
অর্চিষ্মান শুঁকল। শুঁকে আমাকে কাগজটা হ্যান্ডওভার করল। আমি শুঁকলাম। ততক্ষণে ভদ্রলোক অন্য একটা কাগজের স্টিকে আর একটা স্যাম্পল স্প্রে করে অর্চিষ্মানের হাতে দিয়েছেন।
এটা মাস্কি।
অর্চিষ্মান শুঁকল। আমিও শুঁকলাম।
পরেরটা ফ্রুটি। তার পরেরটা ফ্রেশ। ক্রমে আমরা শুঁকলাম ক্রিস্প, ক্রিমি, জেস্টি, ভেলভেটি, স্মোকি, সিডাকটিভ, ক্রিমি, স্পাইসি, সুয়াভ, রোবাস্ট, রাগেড, পলিশড, ডিসটিংগুইশড, এলিগ্যান্ট ও ক্ল্যাসিক।
ভদ্রলোক অর্চিষ্মানকে বললেন, বলুন স্যার, কোনগুলো দেব? অর্চিষ্মান আমাকে বলল, কী গো, কোনটা নেবে?
হাঁ করলাম, আওয়াজ বেরোল না। কারণ ততক্ষণে আমার সারা শরীরে একটি প্রাচীন ট্রমা উন্মুক্ত হয়েছে।
(চলবে)
দারুন শুরু হলো। পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম।
ReplyDeleteশপিং করা সত্যি বিরক্তিকর। অদরকারি জিনিস , পরে বিচ্ছিরি লাগা জিনিসে জীবন ভরিয়ে ফেলা। আর সব জিনিসে যে কি পরিমাণ ধুলো জমতে পারে, সেটা দেখে আবার অবাক হওয়া।
পারফিউম নানারকম গন্ধ শুঁকতে খুব ভালো লাগে অবশ্য। সাসপেন্স এ থাকলাম যে আপনারা কি কিনলেন। অন্যের জন্য গন্ধ কেনা শক্ত নয়?
ভালো থাকবেন
ইন্দ্রানী
এইটাতে হাইও নয়, হায়েস্ট ফাইভ, ইন্দ্রাণী। অদরকারি, এবং পরে বিচ্ছিরি লাগা। একটা হলিউড সিনেমার দৃশ্যে স্যান্ড্রা বুলক বলেছিলেন, জামাকাপড় দোকানের তাকে/ ওয়েবসাইটেই বেস্ট দেখতে লাগে। আমি ঝাণ্ডা উড়িয়ে একমত। যে জিনিসটা দোকানেই অবান্তর, সে বাড়িতে ঢুকে কী পরিমাণ ইউজলেস হবে ভাবা যায়?
Deleteএটা অবশ্য শুধু জিনিস নয়, সম্পর্কটম্পর্কের ক্ষেত্রেও খাটে। চন্দ্রিল ভট্টাচার্যের একটা প্রাচীন লেখায় একটা বাক্য ছিল, "নববধূ শ্বশুরালয়ে ধীরে কথা কয়।" কারণ সেটা নববধূর সারভাইভ্যাল ইন্সটিংক্ট থেকে আসে। ওই একই ইন্সটিংক্ট থেকে নতুন শাশুড়িও ঘন ঘন বধূর চিবুকে চুমু খান। বস,, এমপ্লয়ি, বাড়ির লোক, বাড়ির কাজের লোক, কফি শপের কাস্টমার, কর্তৃপক্ষ, প্রেমিক প্রেমিকা, স্বামী স্ত্রী- আমরা সবাই নতুন অবস্থাতেই বেস্ট। কারণ নতুন অবস্থাতেই আমরা সবাই যে যার বেস্ট বিহেভিয়ারে থাকি। সময় যদি আমাদের ভেতর থেকে নতুন কিছু বার করে আনতে পারে, সেটা দাঁতনখ। নাথিং এলস।
পারফিউম প্রসঙ্গে - আপনি আমাকে বেশি ক্রেডিট দিয়ে ফেলছেন। লোকের 'সিগনেচার' পারফিউম থাকে শুনেছি। যেমন, শাহরুখ খানের নাকি ডিপটিক কোম্পানির টাম ডাও, মেরিলিন মনরো শ্যানেল পাঁচ নম্বর। আমি শিওর আরও অনেকের আছে। আমি এগুলো তথ্য হিসেবে জানি, কিন্তু এ তথ্যগুলো আমার কনশাসনেসে সামহাউ প্রবেশ করে না। আমি সেন্ট বলতে এখনও এসেনশিয়ালি বুঝি যা পাঁচটা চল্লিশের অফিসফেরত তারকেশ্বর লোকালের গন্ধ চাপা দিতে পারে। কাজেই আমি সবাইকে আমার পছন্দ (এবং সামর্থ্যের নাগালের) পারফিউম গিফট করতে থাকি। ছোটবেলায় আত্মীয়দের দেওয়া পুজোর জামার মতো। ফ্রি সাইজ।
চমৎকার হয়েছে। পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম। আমি শপিং করা খুব অপছন্দ করি। মানে আমার কিছুই প্রয়োজনীয় মনে হয়না, ফলে অন্যের জন্যেও কিনতে গেলে প্রয়োজনীয় কিছু খুঁজে পাইনা৷
ReplyDeleteবাপুজি কেক হল লাইফ সেভার। কাচের বয়ামের কেক ভালো বটে, কিন্তু প্রয়জনে বাপুজির মতো বাঁচাতে আর কেউ পারেনি!
হ্যাঁ হ্যাঁ, বাপুজিই বেস্ট। তাছাড়া আমার ওই ক্রিম দেওয়া মহার্ঘ কেকপেস্ট্রি লজিস্টিক্যালিও অসুবিধে লাগে। খেয়ে হাত মোছার জন্য এদিকওদিক তাকাতে হয়। সত্যিকারের ব্যস্ত মানুষজনের জন্য, বেসিক্যালি আমি, খটখটে বাপুজিই বেস্ট।
Deleteপ্রয়োজনের অভাবটা খুবই প্রয়োজনীয়, প্রদীপ্ত।
তাহলে বলছেন আপনাকে সিনেমায় দেখতে পাবার একটা সম্ভাবনা আছে?
ReplyDelete"পৃথিবীর কাছে আমরা অদৃশ্য, আমাদের কাছে পৃথিবী।" - এটা আমার প্রিয় এই লাইনগুলো মনে করিয়ে দিলো: ".... The world forgetting, by the world forgot. Eternal sunshine of the spotless mind! ...."। কবিতাটা পুরো পড়িনি, কিন্তু সিনেমাটা ভালো লেগেছিলো।
বাপুজি কেক ছোটবেলায় অনেক খেয়েছি। টিফিনেও থাকতো কখনো কখনো।
"হয়তো আর একবার সাধিলেই খাইবে" - মানুষকে বারবার সাধা নিয়ে আমি নিজের মতো একটা ফর্মুলা বানিয়ে নিয়েছি: তিনবারের বেশি কাউকে কিছু সাধি না। প্রথিন দুবার মোটামুটি পরপর। শেষ সাধাটা খানিকটা সময়ের পর। আমার এখন ধারণা, কেউ মন থেকে রাজি হবার থাকলে, এর মধ্যেই রাজি হয়ে যাবে। আর সুযোগ পেলেই এই ফর্মুলাটা মানুষকে বোঝাই, মনে মনে এই আশা করে যে এটা অন্তত আমার জন্য যেন মনে রাখে, তিনবারের বেশি যেন সাধাসাধি না করে কখনো।
শপিংএর এলগোরিদমটা দারুন - এলগোরিদম ১০১ এর প্রথম ক্লাসের জন্যে পারফেক্ট।
পরের অংশের অপেক্ষায় রইলাম।
আহ্। ইটারন্যাল সানশাইন। চেনা সব বুদ্ধিমানের প্রিয়, কাজেই নিশ্চয়ই ভালো সিনেমা। কিন্তু সিনেমাটার প্রতি আমার একটা নি-জার্ক, ইমোশন্যাল/সেন্টিমেন্টাল প্রতিক্রিয়া আছে। প্রতিক্রিয়াটা, অফ কোর্স, প্রেমসংক্রান্ত। সমস্যাটা অধুনা নয় কারণ অধুনা আমি বিবাহিত আর বিবাহ ও প্রেম মিউচুয়ালি এক্সক্লুসিভ।
Deleteকিন্তু চিরদিন এমন ছিল না। এমন সময় ছিল যখন আমার জীবনে প্রেমের দরকার ছিল। এবং একটাও পাওয়া যাচ্ছিল না। আমি অবভিয়াস কারণসমূহের ওপর সে অভাবের দায় চাপাচ্ছিলাম। এই সময় ইটারন্যাল সানশাইনের সঙ্গে সাক্ষাৎ। আরও বেশ কিছু প্রিয়জনের সঙ্গে। সহদর্শকেরা সবাই সিনেমা দেখে উঠে স্মৃতি, নিয়তি, কনশাস সাবকনশাস সম্পর্কে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি আবিষ্কার করল, আমি আবিষ্কার করলাম আমার প্রেম না পাওয়ার প্রকট কারণগুলোর পেছনে প্রচ্ছন্ন কারণও কিছু থাকতে পারে।
লোকে আসলে ক্লেমেন্টাইনের মতো মেয়েকে পছন্দ করে। ষোল আনা ছিটগ্রস্ত এবং যাকে নিয়ে সমাজে চলাফেরা করা যায় না। আমার মতে, অবশ্যই। ওই সিনেমাটার পরপরই আমি চুংকিং এক্সপ্রেস দেখি এবং আমার থিওরি কংক্রিট ঢালাই হয়ে যায়। চুংকিং এক্সপ্রেসের দ্বিতীয় গল্পটি মনে করুন। একটি মেয়ে, প্রেমে পড়ে, প্রেমের পাত্রের অনুপস্থিতিতে, বিনা অনুমতিতে, তার বাড়ির তালা খুলে ঢুকে নাচছে গাইছে ম্যাগি বানিয়ে খাচ্ছে।
আমার চেনা প্রায় সব মানুষ চুংকিংকে রোম্যান্টিক সিনেমা/শিল্পের তুঙ্গ মনে করে। অর্চিষ্মান আমার বর বলেই হয়তো সান্ত্বনা দেওয়ার পরিশ্রম করে। কুন্তলা, ওটা সিনেমা। রিয়েল লাইফে আমার বাড়িতে কেউ উইদাউট পারমিশন চাবি খুলে ঢুকলে আমি পুলিসে যেতাম। চুংকিং যাদের ভালো লাগে সবাই যেত। ট্রাস্ট মি।
যেত কি? আমি পুরো শিওর নই। সিনেমায় তো লাস্টে জোয়েলও ক্লেমেন্টাইনকে আবার ভালোবেসে ফেলে, চুংকিং-এ প্রেমিককে আসছি বলে রেস্টোর্যান্টে বসিয়ে রেখে হিরোইন একবছরের জন্য ধাঁ হয়ে যায়। কিছুই টসকায় না, প্রেমিক এক বছর ধরে হাঁ করে বসে থাকে। এক বছর ফিরে এলে বলে, হাত ধরে তুমি নিয়ে চল সখী, গেয়ে ওঠে।
একটা ব্যাখ্যা হতে পারে, ছিটফিট ম্যাটার করে না। প্রচ্ছন্নফচ্ছন্ন কিছু না, প্রকটই সব। ক্লেমেন্টাইন যদি কেট উইনস্লেটের মতো দেখতে হয় আর চুংকিং-এর প্রেমিকা যদি চুংকিং-এর ওই অভিনেত্রীর মতো চেহারার হয় তাহলে ছিট বা তালা ভাঙাভাঙি পদ্মপাতায় জল। পাড়ার বুচি ট্রেনে বাসে ও রকম গায়ে পড়লে রেপুটেশনের আর রক্ষা থাকত না। প্রেম দেখিয়ে তালা ভেঙে বাড়িতে ঢুকলে রেস্ট্রেনিং অর্ডার বার করা হত।
অর্চিষ্মান মানতে চায় না। গোঁ ধরে থাকে সিনেমা সিনেমা, বাস্তব বাস্তব। সিনেমাতেই পাগলামিকে প্রেম মনে হয়। বাস্তবে পাগলামিকে এক্স্যাক্টলি পাগলামিই মনে হয়।
অর্চিষ্মান ভুল জানে। সিনেমাও দেখেছি। রক্তমাংসও দেখেছি। সিনেমার থেকে অনেক বেশি। এবং জেনেছি যে মুখে যা-ই বলুক না কেন, আসলে লোকে ঝঞ্ঝাট পছন্দ করে। ঝঞ্ঝাট। ড্রামা। ডিফিকাল্টি। যা অসুবিধেয় ফেলে না, তা আমাদের কাম্য নয়। সেটাই স্বাভাবিক। মধ্যশিক্ষা পর্ষদের অংক বইয়ের অংক করার থেকে কেশব নাগ সলভ্ করার স্যাটিসফ্যাকশন অনেক বেশি।
মোদ্দা কথা হচ্ছে, ইটারন্যাল সানশাইন দেখলে, বা ইটারন্যাল সানশাইনের উল্লেখ ছিটকেছুটকে কানে এলেও আমার একটা সেনসিটিভ জায়গায় পা পড়ে যায়। আর কমেন্টে এত কথা উগরে দিতে হয় ।
সাধাসাধির থাম্বরুল একটা থাকা ভালো। আপনি আমার থেকে বেটার মানুষ, পৃথিবীটাকে অনেক মায়ার চোখে দেখেন। তাই আপনার সাধার সংখ্যা তিন হওয়াই স্বাভাবিক। আমি ওটা শূন্য, বড়জোর একে নামিয়ে আনার চেষ্টায় আছি (শেষ অপশনটা পৃথিবীতে দু'জনের জন্য)।
আর ওই যে বললেন, আশায় থাকেন যে আপনার লোকের সঙ্গে ব্যবহার দেখে লোকে আপনার সঙ্গে কীভাবে ব্যবহার করতে হবে তার হিন্ট পাবে - সেটার ফল কেমন পাচ্ছেন জানার কৌতূহল রইল।
'চুংকিং এক্সপ্রেস' দেখা ছিল না, দেখে নিলাম। ২০ বছর আগে হলে পাইরেসি করতে হতো, এখন MUBI তে পেয়ে গেলাম! তবে আমার তো ওটাকে কোনো ভাবেই "রোম্যান্টিক সিনেমা/শিল্পের তুঙ্গ" বলার মতো লাগলো না। এর থেকে 'দ্যা রিডার', 'লাভ মি ইফ ইউ ডেয়ার', 'তিন ইয়ারি কথা', চারুলতা, তিতলি, ইত্যাদি, অনেক সিনেমা মনে এসে গেলো, যেগুলো অনেক বেশি রোম্যান্টিক লেগেছে আমার। কে জানে, হয়তো কম বয়েসে দেখলে আরো বেশি রোম্যান্টিক মনে হতো এটাকে।
Delete'ইটারন্যাল সানশাইন' আপনার সেনসিটিভ জায়গা জানার পর, নিচের দুটো প্যারাগ্রাফ লিখবো কিনা এই ভেবে একটু ইতস্ততঃ করছিলাম, কিন্তু আপনি যখন এতটা ভেবেই ফেলেছেন আর লিখেওছেন, তাই লিখেই ফেললাম।
সিনেমার নায়িকাদের মতো ওই ধরণের ছিটগ্রস্ত চরিত্র আমাকেও আকর্ষণ করেছে, আর তার অন্তত একটা কারণ এই মনে হয়েছে, যে ওটায় একটা সাহসী স্বাধীনতার ছবি দেখা যায়, যে স্বাধীনতা আমরা সবাই কখনো না কখনো, বা হয়তো সারাজীবন, খুঁজি, যে স্বাধীনতাটা সমাজে থাকলে পাওয়া যায় না। ওই চরিত্র আমার থেকে অনেক বেশি স্বাধীন, সাহসী, সমাজের শিকল আমার থেকে অনেক কম বাঁধতে পেরেছে তাঁকে। তাছাড়া, সিনেমার ওইরকম চরিত্রে একটা শিশুসুলভ সরলতার ইঙ্গিতও থাকে, যে সরলতাটা বয়েসের সাথে হারিয়ে ফেলেছি বলে ওটা আরো আকর্ষণ করে। তবে এগুলো কারো প্রতি প্রথম মনোযোগ আনার কাজে লাগতে পারে, কিন্তু প্রেম ভালোবাসার ভিত হতে পারবে কিনা সে নিয়ে সন্দেহ আছে।
তাছাড়া, ক্লেমেন্টাইনের যে চরিত্র দেখানো হয়েছে, সেটা যে জোয়েলকে আকর্ষণ করার জন্যে প্রয়োজন, এমন তো নাও হতে পারে, ওটা হয়তো সংখ্যাগরিষ্ঠ দর্শকদের সহজে আকর্ষণ করার জন্য, হয়তো জোয়েল আর ক্লেমেন্টাইনের চরিত্র সুম্পূর্ণ অন্যরকম হলেও বারবার একই ফলাফল হতো - হয়তো ওদের একে ওপরের প্রতি আকর্ষণটা অন্য কোনো অজ্ঞাত বৈশিষ্ঠে অর্গানিক। কিন্তু সেক্ষেত্রে প্রচুর দর্শকরা সহজে বুঝতে পারতো না কেন এরম হবে।
ঝঞ্ঝাট, ড্রামা, ডিফিকাল্টি - এসব নিয়ে একটা জিনিস বেশ কিছু বছর ধরে মনে হচ্ছে - যে যেকোনো অনুভূতি, কয়েকটা বিশেষ অনুভূতি (উদাহরণস্বরূপ: তিক্ততা, শারীরিক বেদনা, ইত্যাদি কিছু) ছাড়া, আসলে সমৃদ্ধ করে। এবং মানুষ সাধারণভাবে অনুভূতির ক্রীতদাস, তাঁকে যত বেশি অনুভব করানো যায়, তত বেশি নিয়ন্ত্রণও করা যায়। এখন, এই অনুভূতির সূত্র হয় নিজের কল্পনা, নাহয় বহিরাগত ঘটনা। যেহেতু সেরূপ দক্ষ কল্পনার অনুশীলন সাধারণ মানুষের জন্যে সহজ নয়, তাই বহিরাগত জিনিসটাই প্রধান হয়ে যায়। এর থেকে আসে উদ্দীপক ঘটনার প্রতি আকর্ষণ। তবে রিয়েল লাইফে দেখেছি, এইসব আকর্ষণের সঙ্গে থাকে ভয় এবং অবিশ্বাস। কোন সময়ে কোনটা জিতবে বলা কঠিন।
শেষ প্রশ্নটা ওপেনই থাকলো!
আপনার সঙ্গে বিভিন্ন দৈর্ঘ্যের ঝাণ্ডা উড়িয়ে একমত, রাজর্ষি। ছিটগ্রস্তদের ভালো লাগার কারণ হিসেবে প্রথম যে কারণটা লিখেছেন, - স্বাধীন, সমাজের নিগড়ের বাইরে, আমি ঘাড় পেতেছি ওঁরা পাতেননি - মেয়েদের "ব্যাড বয়" ফেটিশের পেছনেও আমি সর্বদা এই কারণগুলোই দর্শিয়ে থাকি। আমরা অনেকেই মনে মনে আসলে ব্যাড, অন্য অর্থে বেপরোয়া, বেতোয়াক্কা হতে চাই। সাহসের অভাবে পারি না। যারা সে সাহস দেখাতে পারে তাদের তো ভালো লাগবেই।
Deleteপ্রচুর দর্শকের বোঝা/আকৃষ্ট হওয়ার যে যুক্তিটা বললেন সেটা আমার পয়েন্টটাকে সমর্থন করল। প্রচুর বা অনেক দর্শক এই ধরণের লোকজন পছন্দ করে। কেন করে সে ব্যাপারেও দু'জনেই মোটামুটি একমত হয়েছি।
লাস্ট বাট শেষ প্যারাটা চমৎকার লিখেছেন। আমরা সত্যিই অনুভূতির পোষা বাঁদর। মরে যাব তবু বোর হব না। আর নিজের মনের মধ্যে নিজেই অনুভূতির মেলা বসিয়ে নিজেকে ভোলানো কঠিং, কাজেই বুলাও এক্সটারনাল সাপ্লাই। যে বা যারা সে সাপ্লাই দেবে তাদেরই ভালো লাগবে। যত তীব্র অনুভূতি, যত ভ্যারাইটির অনুভূতি - ভালোলাগা তত বেশি।
phire ese commentgulo poRe aaro osadharon laglo.. eternal sunshine jokhon dekhehilam, khub bhalo lageni bolei mone hocche.. ekta scene chilo, besh kichu choto chele ekta pairake hatuRi diye maarche (bhul memory o hote paare), setar theke beshi bhoyonkor aami khub kom jinish dekhechi, aar shudhu oitai mone theke geche.. chungking express dekhini, dekhbo.
ReplyDeleteaapnaar aar Rajarshi-r points of view chomotkar laglo.
PS aager comment e naam likhte bhule gechilam.. Indrani :)
ReplyDeleteআরে থ্যাংক ইউ, ইন্দ্রাণী।
Delete