হোয়াট টু ডু হোয়েন আই অ্যাম গন


বালিশ তুলে, চাদরের এদিকটা আমি, ওদিকটা ম্যাট্রেসে গুঁজতে গুঁজতে অর্চিষ্মান প্রশ্নটা করল।

সরাসরি নয়। ডিসক্লেমার দিয়ে।

এখানে তো তাও প্রশ্নের শুরুতে ডিসক্লেমার দিয়েছে, অনেক সময় বক্তব্যের মাঝখানেও ডিসক্লেমার দেয়। জীবনে যে তিনটে মজার ঘটনা (ডিসক্লেমারঃ ঘটনাই, জোকস নয় কারণ অর্চিষ্মান জোকস বলে না) যা অর্চিষ্মানের হাস্যোদ্রেককারী লেগেছে এবং মনে হয়েছে হয়তো কুন্তলারও হাস্যোদ্রেককারী লাগতে পারে, সেই তিনটে ঘটনাও বলতে বলতে তিনবারই থেমেছে।

আচ্ছা শোনো, ব্যাপারটা অত হাসিরও কিছু না, বুঝলে তো। আমার তখন হাসি পেয়েছিল, তোমার মনে হয় পাবে না।

সেদিনের প্রশ্নটা অবশ্য মজার ছিল না। এবং ডিসক্লেমারের হয়তো দরকারও ছিল। সেদিনের প্রশ্নটা ছিল সেই জাতের যেগুলো মাথার ভেতর ভক্ত প্রহ্লাদ, ভোকাল কর্ড ল্যারিংক্স ফ্যারিংক্স বেয়ে আলোবাতাসে পড়লেই নৃসিংহ অবতার।

আচ্ছা, তুমি কি এখনও কাকিমাকে মিস কর? 

চাদর গোঁজা শেষ। রান্নাঘরে কফিও সম্ভবতঃ রেডি। সেদিকে হাঁটি।

অর্চিষ্মান সাহস পেয়ে কথা বাড়ায়। মানে বলতে চাইছি তোমার এই মুহূর্তের দিনরাতে তো কাকিমার তো কোনও ইমপ্যাক্ট নেই, যেমন ধরো ফোনে কথাটথা বলা বা অন্যান্য সুবিধে যেমন হাতে ব্যথা হলে চুল আঁচড়ে দেওয়া, পেটে ব্যথা হলে ইনো, জ্বর হলে জলপট্টি, ক্যান্ডি ক্রাশ খেললে বকুনি - কোনওটাই তো কাকিমা প্রোভাইড করেন না, তাহলে কী মিস কর? কাকিমা একসময় ছিলেন, সেই স্মৃতিটাকে?

অর্চিষ্মানের কাপে অর্ধেক আমার কাপে অর্ধেক কফি ঢেলে এসে বসি। অর্চিষ্মান রিমোট খুঁজে টিভি চালায়। পডকাস্ট চলছে। এক অভিনেত্রী বলছেন, সারাজীবন ভালো রোল পাইনি তো কী হয়েছে, মানুষের মনে জায়গা তো পেয়েছি।

অর্চিষ্মান কফিতে চুমুক দিল। তারপর বলল, আমরা যাঁদের মিস করি তাঁদের সবারই শুধু স্মৃতিকেই কি মিস করি না? আর কোনও রকম মিস করা কী সম্ভব? কারণ তাঁরা না থাকলেও তো কিছুই আটকাচ্ছে না। তাঁদের ফাঁক তো ভরাট হয়েই গেছে। পৃথিবীর বাকি সব ফাঁকের মতোই।

*****

বাড়ি থেকে বেরিয়ে অর্চিষ্মান টাটা বলে বাঁদিকে বেঁকলো, আমি টাটা বলে ডানদিকে। হাঁটতে হাঁটতে ভাবলাম।

মা এখন ঠিক কোথায়? কোনখানটায়? কোন ফাঁকটায়?

ভাবতে ভাবতে বইটার কথা মনে পড়ল। আসলে মনে পড়ল অপরাজিতার কথা কারণ অপরাজিতাই বইটা দিয়েছিল।

What to Do When I'm Gone: A Mother's Wisdom to Her Daughter/Suzy Hopkins (Author), Hallie Bateman (Illustrator)

*****

হ্যালি বেটম্যান, পেশায় চিত্রকর। বেশ কম বয়সেই, কুড়ির শুরুর দিকে, এক রাতে শুয়ে শুয়ে হ্যালির মনে পড়ল, মা একদিন মরে যাবে।।

I went even further: I imagined the next day, and the day after that. The earth would continue to spin, and I’d be left in a world without her. My map would be gone. The ground beneath my feet would be gone.।

Who could I call to ask how to cook a potato? Who would listen to me talk about my work for more than five minutes? Who would tell me everything? Who would forgive me for everything? How could I possibly navigate this world without the person who brought me into it?

হ্যালির হাত পা ঠাণ্ডা, হৃদপিণ্ড হাতে। হ্যালি কেঁদে ভাসালেন। পরদিন সকালে কফি পাউরুটি বা যা ওঁরা খান - রেডি করতে করতে হ্যালি মাকে রাতের ভয়ের কথা বললেন। বললেন, মা একটা ছাত্রবন্ধু, কন্যাবন্ধু বলাই সংগত হবে, লিখে দাও, স্টেপ বাই স্টেপ, ডে বাই ডে। যা ফলো করে আমি তুমিহীন জীবনটা চালাতে পারি।

হ্যালির মা সুজি হপকিন্স, লেখক। মেয়ের কথা শুনে হাহা হাসলেন। তারপর রাজি হলেন। সুজি লিখলেন, হ্যালি ছবি আঁকলেন। মা-হীন মেয়েদের ম্যানুয়াল লেখা হল। (ছেলেরাও মোস্ট ওয়েলকাম কারণ ইন্সট্রাকশনগুলো লিঙ্গনির্বিশেষে চমৎকার।)

নামকরণ হল। নিতান্ত কেজো কারণ বইটা কাজের। জলরং ছবির সঙ্গে ইন্সট্রাকশন। ইন্সট্রাকশন যেমন হওয়া উচিত - সংক্ষিপ্ত। টু দা পয়েন্ট।

আবার টু দা পয়েন্ট নয়ও। ইউটিউব শর্টসে ঠিকই বলে - জীবনে ঠিক উত্তর পাওয়ার থেকেও জরুরি হচ্ছে ঠিক প্রশ্ন করা। অধিকাংশ মেয়েই জানে না আসলে তাদের প্রশ্নটা কী। উত্তর দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মাকে মেয়ের প্রশ্নটাও গুছিয়ে দিতে হয়। 

আবার অনেক সময় মেয়েদের প্রশ্ন শুধু প্রশ্ন নয়। রেড ফ্ল্যাগের মিছিল। মাকে সে মিছিলও অ্যাড্রেস করতে হয়।

যেমন, অনেক বছর আগে আমি ফোনে মায়ের মালপো ভাজার প্রক্রিয়া জানতে চেয়েছিলাম। মৌরি থেকে শুরু করে চিনির সিরার ঘনত্ব - মা-সুলভ নিশ্ছিদ্রতা ও বৈজ্ঞানিকতায় বলে, শেষে একটা লাইন জুড়ে দিয়েছিলেন মা।

কেন সোনা, কিনে খেলে হয় না?

ইউটিউব শর্টে যে বলে, মাধ্যমিক উচ্চমাধ্যমিক জয়েন্ট জীবন বদলায় না, বিয়ে বা ব্রেক আপে জীবন মচকায় না, জীবন আসলে দোল খায় মুহূর্তে, আধলাইন চ্যাটে আর একঝলক তাকানোয় - ঠিকই বলে।

মায়ের মালপোর রেসিপি আমার জীবন বদলে দিয়েছে। গোটা রেসিপিও না। রেসিপির নিচের ওই আলগা বাক্যটা। দৃষ্টির প্রিজমটা পার্মানেন্টলি বেঁকিয়ে দিয়েছে। 

সে দৃষ্টি ঠিক হতে পারে বা ভুল। কিন্তু দৃষ্টিই দেখিয়ের পারসেপশন ও শেষমেশ রিয়েলিটি নির্ধারণ করে। জীবনকেও, কারণ আমাদের দেখাই আমাদের জীবন। সব চোরেরই মনে হয় পৃথিবীটা চোরছ্যাঁচড়ে ভর্তি। সব মিথ্যুকেরই মনে হয় কেউ সত্যি কথা বলছে না।

যেমন বেঁচে থাকতে আমার প্রাণ বেরোচ্ছে বলে আমি ভাবি সবারই বেরোচ্ছে। অর্চিষ্মানকে কনফার্ম করতে গিয়েছিলাম, ফোন দেখতে দেখতে হুঁ হাঁ করেছিল, ধরে নিয়েছিলাম একমত হচ্ছে। তারপর আনন্দবাজার অনলাইনকে দেওয়া ইন্টারভিউর থাম্বনেলে দেখলাম শিলাজিৎ বলেছেন, জীবন মানেই যন্ত্রণা, আমারটা কাকে বলব? 

ব্যস, কনফিডেন্স পেয়ে ক্রন্দনরত বান্ধবীকে সান্ত্বনা দিতে গেলাম যে চাপ নিস না, বেঁচে থাকা মানেই কষ্ট, সে গাল মুছে বলল, কষ্ট কীসের? কই আমার তো কষ্ট হচ্ছে না?

সেই থেকে শুধরে গেছি। আমার বেঁচে থাকা যেমনই হোক, বাকিদের হয়তো কেকওয়াক। 

ভুল হোক ঠিক হোক দুম করে নিজের প্রিজম বদলে ফেলা যায় না। সন্দেহ একটা থেকেই যায়। ইউটিউবে যখনই ঠাকুমাদিদিমার হারিয়ে যাওয়া অমূল্য সব রেসিপি দেখানো হয়, মন কুডাক ডাকে। কে জানে রেসিপির নিচে খুদে খুদে অক্ষরে লেখা ছিল কি না - ওরে নিজে রাঁধতে যাস না। কাউকে দিয়ে রাঁধাস, নয় কিনে খাস।

*****

শুধু খাটনি কমাতে মালপো ভাজতে বারণ করেছিলেন বলে হাইন্ডসাইটে মনে হয় না আমার। মালপো ভাজা যতক্ষণ মালপো ভাজা, একরকম। কিন্তু মা জানতেন মালপো ভাজা অনেকসময়, মেবি অধিকাংশ সময়েই, মূল্য প্রমাণ। তাতেও অসুবিধে নেই, গোটা জীবনটা আসলে মূল্য প্রমাণ (আমার জীবন, হতেই পারে আপনার জীবন নয়)। কিন্তু মূল্য যদি প্রমাণ করতেই হয়, মালপো ভাজার থেকে অনেক বেটার রাস্তা আছে। ভুক্তভোগী মাত্রেই জানেন। আর মায়েরা ভুক্তভোগের ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়ন।

*****

হ্যালি মাকে বলেছিলেন, মা মরে যাওয়ার পরের জীবনের ইন্সট্রাকশন ম্যানুয়াল লিখে দিতে। ডে ওয়ান থেকে শুরু করে। 

সুজি জানতেন ডে জিরো একটা থাকে। যেদিন মা মারা যাচ্ছেন। বা জাস্ট গেছেন। পৃথিবীর আট বিলিয়ন মাইনাস ওয়ান লোকের কাছে সে যাওয়া দিবালোকের মতো উজ্জ্বল, সিঁড়িভাঙার মতো সরল। একমাত্র যার গেছে তার কাছে ছাড়া। সে তখনও বুঝে ওঠার চেষ্টা করছে কী ঘটেছে। যা ঘটেছে আদৌ কি ঘটেছে? এক অর্থে পৃথিবীর বাকি সবাই তাকে খবরটা দিচ্ছে।

হ্যালো, হ্যাঁ? শুনতে পাচ্ছিস? শুনলাম তোর নাকি মা মরে গেছে?

কী করে মরল?

কিচ্ছু টের পাসনি?

কী আর করবি। কপালে ছিল।

শ্রাদ্ধ কবে? অবশ্য যদি করিস। না, তোদের তো আবার . . .

হ্যালি ছবির প্রথম প্যানেল আঁকলেন। ফোন বাজছে। ক্রিং ক্রিং ক্রিং। মেয়ে ফোন তুলছে। শি ইজ ডেড।

ক্রিং ক্রিং ক্রিং। ইয়েস, শি ইজ ডেড।

ক্রিং ক্রিং ক্রিং। ইয়েপ, শি ইজ ডেড।

সুজি তাঁর প্রথম নির্দেশ লিপিবদ্ধ করলেন । স্টেপ অ্যাওয়ে ফ্রম দা ফোন।

*****

মৃত্যুর মতো ব্যাপার দু’ভাবে ডিল করা সম্ভব। এক, মারাত্মক গুরুত্ব দিয়ে। ফোলা চোখ, থমথমে মুখ। ভুলে মুখ হাসিহাসি হয়ে গেলে পাশের হিতৈষীকে রামচিমটি দেওয়ার কিউ দেওয়া আছে। পোশাক ধপধপে সাদা না হয় কুচকুচে কালো। ডেসিবেল ফিসফিস। ভাষা সংস্কৃত, সংগীত রবীন্দ্র। আছে দুঃখ আছে মৃত্যু। মরণ রে তুঁহু মম শ্যাম সমান।

নতুবা একেবারে খেলাচ্ছলে। প্যারাশুট না নিয়ে এরোপ্লেন থেকে লাফাও, রোজ সোমনাথদার দুধ চায়ের সঙ্গে অন্নপূর্ণার সিঙাড়া একটা করে সাঁটাও। কাল মরার বদলে আজই মর। তাছাড়া মরলেই বা কী? কিচ্ছু থামবে না। গাছের একটি পাতা এদিক থেকে ওদিক হবে না।

'হোয়াট টু ডু হোয়েন আই অ্যাম নট হিয়ার' মধ্যপন্থী। প্র্যাগম্যাটিক। মায়েদের মতো। গাল ফুলিয়ে ব্রহ্মসংগীত গাওয়ারও নয়, হ্যাহ্যা করারও নয়। মৃত্যু সত্য। পৃথিবীর সব সত্যের মতোই স্ট্রেঞ্জ। ভেরি ভেরি স্ট্রেঞ্জ। জানাই ছিল হবে, তবু মনে হচ্ছে কেন হল? না হলে মারাত্মক কাণ্ড হত কিন্তু হয়েছে যে সেটা কিছুতেই মেনে নেওয়া যাচ্ছে না।

সুজি দিন ধরে ধরে ইন্সট্রাকশন লিখলেন। প্রত্যেক দিনের না, প্রত্যেক দিনের লিখলে আবার মেয়ে খেঁকিয়ে উঠবে। মা তুমি না বড় বেশি কথা বল। বাবার মতো অল্প কথায় সারতে পার না?

কাজেই সুজি চার নম্বর দিনের জন্য একটা টোটকা দিলেন, আবার চারশো নম্বর দিনের। চারশো চল্লিশতম দিনের জন্য একটা পরামর্শ আবার পাঁচশো সাঁইত্রিশ। কিছু কিছু নির্দেশ একেবারে কেজো। সময়োপযোগী। যেমন চতুর্থ দিনের ইন্সট্রাকশন। রাইট মাই অবিচুয়ারি।

It used to be that obits were free and written by journalists. They included basics about your family, schooling, career path, contributions to your community.

Now most are sent in by family members who can’t write very well and focus on obscure highlights: “She was devoted to her beloved dachshund, Dinky, with whom she shared so many joyous years.”

If I had planned better, and died later, I might have written it myself. But obviously I ran out of time. So get together with the people who knew me best, talk for a while, and realize how little you actually know about my life.

ন’হাজার নম্বর দিনে পেনসিল কাটো। পাঁচশোতম দিনে, চিনে বা জাপানে যেখানে খুশি যেয়ো, আপাতত চানে যাও, শুনে দেখো মা’র কথা। কুকুরটার লোম আঁচড়ানো আর নিজেকে চিমটি কাটার মাঝখানে ব্রাউনি বেক করো বা ফাহিতাজ রাঁধো।

চারশোতম দিন সকালে উঠে ম্যানুয়াল খুলে দেখি, আই মিন হ্যালি দেখেন, মা লিখে গেছেন, রিপ্লেস মি।

রক্তপাত হয়। যতটা না মাকে রিপ্লেস করে উঠতে হবে সেই কল্পনায়, তার থেকে বেশি এই বাস্তবটা টের পেয়ে যে চারশো দিন অ্যাকচুয়ালি লাগেনি - তার আগেই মা রিপ্লেস হয়ে গেছেন।

মা কি অলরেডি জানতেন নাকি যে এ রকম হবে? ছি ছি ছি। না জানি কী মনে করলেন।

কিছু কিছু ইন্সট্রাকশন চিরন্তন। পাঁচশো পঞ্চাশতম দিনে মা যখন বলছেন, মেক আ ডিসিশন। বা ছ'শোতম দিনে গেট সাম পার্সপেকটিভ, এক হাজারতম দিনে টেক আ রিস্ক - তখন মা কোনও পার্টিকুলার পরিস্থিতির জন্য পরামর্শ দিচ্ছেন না - গোটা জীবনের জন্য পেনসিলবাক্সে পেনসিল আর তূণে তীর গুছিয়ে দিচ্ছেন। ঝুঁটিতে লাল ফিতে বেঁধে গায়ে কবচকুণ্ডল পরিয়ে টাটা করছেন।

বা তিনশো কুড়ি দিনে - স্টপ ডুয়িং স্টাফ ইউ হেট টু ডু। যা ভালো লাগে না, শুধু ফাঁক ভরানোর জন্য, বোর না হওয়ার জন্য সেটা করিস না।

হৃদয়ের কোষে টান পড়ে যখন চারহাজারতম দিনে বই খুলে দেখি মা বলেছেন - আমার কথা ভাব। থিংক অফ মি আনএক্সপেক্টেডলি। আচমকা, হুড়মুড় করে মা চলে আসেন।

কোন জায়গাটায় আসেন সেটাও পিনপয়েন্ট করতে পারি। দু'নম্বর মার্কেট থেকে সোজাও আসা যায় (অর্চিষ্মান যে রাস্তাটা সর্বদা নেয় কারণ ওটাই মেন রাস্তা, ওটাতে অনেকক্ষণ হইচইয়ের মধ্যে থাকা যায়) আবার বাঁদিকে বেঁকাও যায়। আমি সর্বদা বেঁকে যাই, কারণ এটাও বড় রাস্তা হলেও অর্চিষ্মানের রাস্তাটার মতো বড় না। এখানে আকাশের দিকে তাকিয়ে হাঁটলে এস ইউ ভি পিষে দিয়ে যাবে না।

ওই দুটো রাস্তার মোড়ে।

কখন আসেন তাও। যখন আমি এস ইউ ভি-র জানালা দিয়ে উড়ে আসা গালি না খেয়ে রাস্তা পার হব বলে দাঁড়িয়ে আছি। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাবছি, কোথায় আর্কটিক মহাসাগরে নীল আকাশের নিচে পেঙ্গুইনদের সঙ্গে চিৎসাঁতার দেওয়ার কথা ছিল, সে জায়গায় আঙুল কেটে বসা সিংগল-ইউজ পলিথিনে আমূল টোনড দুধ, টাটা টি, নভরতন মিক্স আর ষোল প্যাকেট ম্যাগি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি।

ঠিক ওই সময় মা আসেন। মায়ের সঙ্গে সঙ্গে আসে ন'শোতম দিনের নির্দেশ। লুক আপ।

আকাশের দিকে তাকা, সোনা। আর্কটিকের অনির্বচনীয় আকাশের মতো, চিৎকুলের চমৎকার আকাশের মতো সি আর পার্কের দু'নম্বর মার্কেটের মোড়ের ওপরেও একটা আকাশ আছে। দুঃখী আকাশ, মলিন আকাশ - কিন্তু আকাশ। তলিয়ে ভাবলে সমান সমীহের। সমান বুককাঁপানোর। সমান মির‍্যাকলের। 

জলরঙে আঁকা সে আকাশের ছবি দেখলে মন ফুরফুরে হতে বাধ্য। 

কিন্তু মামেয়ের সম্পর্ক শুধু ফুরফুরে হয় না। বাবার সঙ্গে সকালবেলা ডাক্তারখানা গিয়ে ফিরে এসে যখন মা দেখেন দশ বছরের আমি, মায়ের কাজ এগিয়ে রাখব বলে টেবিলে মা বাবার খাবার অলরেডি বেড়ে গর্বিত মুখে দাঁড়িয়ে আছি এবং নিম বেগুন থেকে শুরু করে টক দই - প্রতিটি পদ, প্র তি টি পদ - বাবাকে বেশি এবং মাকে কম দিয়েছি, তখন "ওরে বাবা আমাদের সোনা কত বড় হয়ে গেছে" মর্মে যথোপযুক্ত উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে, রাতে অফিস থেকে ফিরে ছাদে শুয়ে আকাশ দেখতে দেখতে সেটা পয়েন্ট আউট করতে হয়।

প্রশ্ন করতে হয়, কেন? 

আর একটু বড় হলে যখন মেয়েবন্ধুদের সঙ্গে ফোনে হেসে ছাদ ফাটাচ্ছি পাড়া কাঁপাচ্ছি আর ছেলেবন্ধুরা ফোন করলেই গলার আওয়াজ বদলে - বলুন আপনার কী সেবায় লাগতে পারি - হয়ে যাচ্ছে সেটা পয়েন্ট আউট করতেও লজ্জা পেলে বা ভদ্রতা করলে চলে না।

কারণ মেয়ে বড় করা, আর যাই হোক, পপুলারিটি কন্টেস্ট নয়।

মাকে জানতে হয় কখনও কখনও ভালোবাসা মানে কঠিন কথা বলা। সমস্ত কবচকুণ্ডল খুলে সত্যির সামনে দাঁড় করানোটাই আসল আদর। বেস্ট প্রোটেকশন।

যে মা দু’হাজারতম দিনে বলেছিলেন এনজয় দিস ড্রিম, আড়াই হাজারতমদিনে সেই তিনিই এসে বলেন, সাফার।

এই মা মাদার্স ডে-র বার্ষিক সান্ত্বনা পুরস্কার পাওয়া মা নন। ইনি সাদাকে সাদা, কালোকে কালো বলতে পারা মা। ঠিক ভুল, উচিত অনুচিত, ভালো মন্দের মধ্যে সোজা লাইন টানতে পারা সিধে মা। মর‍্যালিটি সাবজেকটিভ, আসলে সবই গ্রে - এ সব নড়বড়ে নিড়বিড়েপনাকে ফুৎকারে উড়িয়ে দিতে পারা সেলফ রাইটুয়াস, জাজমেন্টাল মা। যিনি বলবেন যা-ই করো মনে রেখো কনসিকোয়েন্স বলে একটা খাঁড়া মাথার ওপর ঝুলবেই। দুয়ে দুয়ে যতবার যোগ করবি সোনা, চারই বেরোবে। বাইশ না।

আমি থাকি না থাকি, সাফারিং থাকবে। কাজেই মেনে নে। অ্যান্ড সাফার।

*****

একশো তেতাল্লিশ পাতার বই। পড়তে পড়তে, ছবি দেখতে দেখতে কখন সব পাতা বাঁদিকে জড়ো হয়েছে, ডানদিকে মোটে একটা। 

ডে টোয়েন্টি থাউজ্যান্ড। দিবসক্রম কুড়ি হাজার। প্ল্যান ইয়োর ড্রিম ডেথ।

We spend our lives planning weddings, birthday parties, brunches, births, surprise parties, anniversaries, shopping trips, vacations, family reunions, romantic weekends. But why stop there? Spend some time thinking about how you’d really like to die.

Where are you? What are you wearing? Who are you with? Is there music? What happens next? What do you hope happens next?

ডেথ? এক্ষুনি? মায়ের কি মাথা খারাপ হল? কুড়ি হাজার তো দিন মোটে। নতুন ট্যাব খুলে কুড়ি হাজার বাই তিনশো পঁয়ষট্টি লিখে এন্টার মারি। 

চুয়ান্ন।

অসম্ভব।

আবার কুড়িহাজার টাইপ করে আঙুল দিয়ে একক দশক গুণে, চারটের বদলে তিনটে শূন্য লিখেছি নাকি চোখ সরু করে চেক করে - ডিভাইডেড বাই তিনশো পঁয়ষট্টি।

চুয়ান্ন। অর্ধশতাব্দীরও বেশি।

মুখ থেকে যে শব্দটা বেরিয়ে আসে সেটা তাঁর এত পরিপাটি করে বড় করা মেয়ের মুখ থেকে বেরোচ্ছে, মা শুনলে বিশ্বাস করতে পারতেন না।

মোটে কুড়ি হাজার দিনে একটা প’নে জীবন পার হয়ে যায়? আর এদিকে আমি ফি সপ্তাহে চার দিন করে মনখারাপকে উৎসর্গ করছি? আমার তো আর দশ হাজারও বাকি নেই। নাকি তার থেকেও কম? যদি আর কুড়ি বছরও হেঁটে চলে বেড়াতে পারি তাহলে কুড়ি ইনটু তিনশো পঁয়ষট্টি = সাত হাজার তিনশো।

*****

প্ল্যান করার কিছু নেই। প্রার্থনা করার আছে। কাকে করব জানি না। জীবনটা নিজের ইচ্ছেমতো চালিয়ে মৃত্যুটা কাস্টম মেড করে দাও বললে গাঁট্টা ছাড়া কিছু জোটা উচিত না। 

মরতেই যদি হয় তাহলে সম্পূর্ণ সুস্থ অবস্থায় ঘুমের মধ্যে যেন মরি। অর্চিষ্মান সকালে উঠে আবিষ্কার করবে ফুলের মতো মরে পড়ে আছি।

অর্চিষ্মান বলে, রাতভর ডেডবডির পাশে আর যেই থাক ও শুয়ে থাকতে পারবে না। আমি বলি, আচ্ছা তুমি না হয় ফিল্ডে যাবে তখন। ফিরে এসে দেখবে আমি ফুলের মতো মরে পড়ে আছি।

ফিরে এসে দেখব বিছানায় তোমার ফুলে ওঠা বডি ঘিরে মাছি ভনভন করছে। নোপ। নট অ্যাকসেপ্টেবল।

অর্চিষ্মানের আদর্শ মৃত্যু হচ্ছে হচ্ছে বছরদুয়েক ধরে ঢাকঢোল পিটিয়ে কলকাতায় পাঁচজন ডাক্তার দেখিয়ে, তিনবার ভেলোর গিয়ে, সাতবার আই সি ইউ ঘুরে, শেষ বাহাত্তর ঘণ্টা ভেন্টিলেশনে থেকে মরা।

যে রকম মৃত্যুর খবর শুনে সবাই ফোনে বলবে, ভালোই হয়েছে, যা কষ্ট পাচ্ছিল। 

কথা বাড়ালাম না। মৃত্যু আমার হাতে নেই, অর্চিষ্মানেরও না। সুজি যতই বলুন প্ল্যান, আসলে বলতে চেয়েছেন, ফ্যান্টাসাইজ। অর্চিষ্মান আমাকে যত কষ্ট দিয়ে মারার ফ্যান্টাসিই গোপনে লালন করুক না কেন, আমি সেই জিনিসটা প্ল্যান করে রেখেছি, যেটা অ্যাকচুয়ালি প্ল্যান করা যায়।

ফিউনেরাল।

শ্রাদ্ধ।

প্ল্যান হচ্ছে - নো শ্রাদ্ধ। 

স্মরণসভা তো আরওই না। আমি মরলে যদি অর্চিষ্মান অং বং চং শ্রাদ্ধ ফেঁদে পাড়া ঝেঁটিয়ে ব্রাহ্মণ ধরে এনে ভোজনে বসায়  - যদি বা ক্ষমা করতে পারি, আহা রে, শোকে মাথা খারাপ হয়ে গেছে - স্মরণসভা বসালে কেউ বাঁচাতে পারবে না। মাইক উপড়ে, হারমোনিয়াম আছড়ে, তবলা ফাঁসিয়ে, যারা যারা স্বরচিত কবিতা পড়বে বলে বাড়ি থেকে গার্গল করে গলায় চেক মাফলার জড়িয়ে এসেছে সবার কবিতা ছিঁড়ে ঘরময় উড়িয়ে দক্ষযজ্ঞ বাধাব।

তাহলে কী করব, কুন্তলা? কিছু তো একটা করতে হবে? তুমি মরবে আর আমি চুপ করে বসে থাকব?

বসে থাকবে কেন ? চুল্লিতে দিয়ে এসে পেটপুরাণ থেকে বিরিয়ানি অর্ডার করে হইচই চালিয়ে শুয়ে শুয়ে একেনবাবু দেখবে। ফোন সাইলেন্ট করে, কলিং বেলের তার কেটে।

*****

Keep in mind that no matter how many people you’re surrounded by, you die alone. This is really your show.

বুক কাঁপে। যাহ্‌। মায়ের কথা শেষ হয়ে যাচ্ছে নাকি? মা সত্যি সত্যি চলে যাচ্ছেন?

ঘাবড়ানোর কিছু নেই। আমারই মা হন বা হ্যালির মা - অল্প কথায় সারতে পারেন না। এক কথা একশোবার, একশোরকম করে না বললে মায়েদের শান্তি নেই। শেষ ইন্সট্রাকশনটা সবথেকে দীর্ঘ চলে।

In fact, it has been your show all along, long before the day I died.

Even though it comforts you to get my advice  - and trust me, I have no shortage of it - you already know all the answers. In fact, you don't really need this book.

ব্যস, মা আবার আমাকে ওভারএস্টিমেট করছেন।

I was happy to write it with you, but you don't need it. You already have what it takes to carry on without me. You already have it within you to face what's ahead.

মায়ের মাথা খারাপ। মা কিচ্ছু জানেন না। মা ছাড়া আমি অ্যামিবা।

The infinite river of memories we shared still connects us. Let that river flow over you and through you, carrying you forward and beyond.

*****

এবার সত্যি সত্যি বই শেষ। মা চুপ। মা আর কথা বলবেন না।  

যদি না আবার প্রথম পাতা থেকে শুরু করি। যা আরও অনেকবার করব। আফটার অল, জীবন সত্যি, সাফারিং সত্যি, ওই যে মা বললেন, আর আমার আর মায়ের মধ্যে ইনফাইনাইট স্মৃতির অনন্ত নদীও সত্যি। সে নদী প্রতিদিন পারাপার করব, রোজ তাতে অবগাহন করব, মাকে ভুলে গিয়েই। ঠাকুরদা রোজ  মগে করে জল তুলে মাথায় ঢালতে ঢালতে সাতসমুদ্র তেরোনদীর নাম ফুলস্পিডে বলতেন, যাতে তাদের সবার পুণ্যবারি মন্ত্রবলে আমাদের লোহার তোবড়ানো বালতির মধ্যে এসে জড়ো হয়। তেমনি আমি মাকে ভুলে যাই বা মনে রাখি, চানে যাই না যাই, আমাদের মধ্যে অনন্ত স্মৃতির নদী বইতে থাকবে, সে নদীতে আমি আমার একলা নৌকো বাইতে থাকব।

নাকের জলে চোখের জলে হয়ে বই বন্ধ করি। অপরাজিতাকে থ্যাংক ইউ দিই। শম্পাকে বলি, বইটা পোড়ো।

*****

সে সব হয়ে গেছে তিন মাস হল। ছ’মাসও হতে পারে। এখানে দিনের গুণতি জরুরি নয়। যেমন জরুরি নয় মায়ের সব ইন্সট্রাকশন মনে করে রাখা। কারণ মায়ের কথা কেউ মনে রাখে না। লোকে গুরুদেবের কথা মনে রাখে, লাইফ কোচের কথা মনে রাখে, থেরাপিস্টের কথা মনে রাখে। কোনও সেলফ-রেস্পেক্টিং মেয়ে মায়ের কথা চব্বিশঘণ্টা মনে রেখে জীবনের মধ্যে দিয়ে চলে না।
 
জীবনের চড় গালে এসে পড়লে গালে হাত বোলাতে বোলাতে মনে পড়ে, মায়ের ওই কথাটা শুনলে এই চড়টা খেতে হত না।

তাছাড়া আগের দিনই যেমন বললাম, মনে রেখে দেওয়ার থেকে ঢের সুন্দর হচ্ছে মনে পড়া। ভুলে না গেলে যা টেকনিক্যালি অসম্ভব।

মাকেই ভুলে গেছি , মায়ের সব ভালো ভালো কথা ভুলে গেছি, সুজির নির্দেশাবলী তো ভুলে যাবই। কিন্তু সব ভুলে যাওয়াই থাকে ব্রেনের গভীরে। অর্চিষ্মানের প্রশ্নে সেই গভীর থেকে একটা টপাক করে মাথা তুলল।

দিবসক্রম সাড়ে চারশো। ডে ফোর হান্ড্রেড ফিফটি। লুক ইন দা মিরর অ্যান্ড সি ইয়োরসেলফ দা ওয়ে আই স ইউ।

আয়নার দিকে তাকা, সোনা। আমার চোখে নিজেকে দেখ।

*****

অর্চিষ্মান বলে, আমাদের দুঃখ কষ্ট প্রেম ভালোবাসা, সব আসলে নিজেদেরই জন্য। অনুভূতি যত তীব্র, স্বার্থপরতা তত বেশি। ঠিকই বলে।

নাহ্‌। মাকে মিস করি না। রেঁধেবেড়ে খাওয়ানো, রাত জেগে জলপট্টি দেওয়া, হাত ব্যথা হলে বিনুনি বেঁধে দেওয়া, পেট ব্যথা হলে ইনো, অফিস যাওয়ার আগে তেত্রিশ কোটি কাজের মধ্যে ধেড়ে মেয়েকে টানা চার বছর ধরে শাড়ি পরিয়ে দেওয়া - কোনওটার জন্যই মাকে মিস করি না। এ সব কাজ অন্য কেউ করে দিতে পারত। এ সব কাজ একটু খারাপ করে করলেও এমন কিছু মহাভারত অশুদ্ধ হত না।

যেটা পৃথিবীর আর কেউ পারত না, সেটা হচ্ছে আমাকে ওই চোখে দেখতে। আমার দিকে তাকালে মায়ের চোখে যে আমিটা ফুটে উঠত, সেলফ এস্টিম বাড়িয়ে চাঁদ ছুঁয়ে ফেললেও আমি নিজেকে সে চেহারায় দেখতে পারব না।

কারণ সেই আমিটা আর নেই।  কোথাও নেই। লস্ট।

অর্চিষ্মান ইজ রাইট। আমাদের যত কাঁদুনি শুধু নিজেদেরই জন্য। মাকে মিস করি না। মিস করি ওই কুন্তলাকে, সেই সোনাকে, মায়ের চোখের মণির সঙ্গে সঙ্গে যে রিষড়া শ্মশানের চুল্লিতে ছাই হয়ে গেছে।

Comments

  1. Suzy Hopkins er lekha boi ta porbo ki na jani na...na porleo khoti nei. tomaar lekha ta porlami.
    Tobe office-e boshe pora ta was not a wise decision

    ReplyDelete
    Replies
    1. পৃথিবীর সব মা-হারা ছেলেমেয়েরা এক হও।

      Delete
  2. Issssh. Aha re !

    ReplyDelete
  3. এই লেখাটায় নিজেকে, নিজের মেয়েকে এবং নিজের মা কে খুঁজে পেলাম। গলার কাছ টা একটু দলা পাকিয়ে উঠলো। বড্ড সুন্দর লিখেছো কুন্তলা দি।

    ReplyDelete
    Replies
    1. আরে থ্যাংক ইউ, বিম্ববতী। তুমিও তো ছোট্ট মেয়ের মা এখন। ইরাকে আমার অনেক আদর দিয়ো।

      Delete
  4. আমার দিকে তাকালে মায়ের চোখে যে আমিটা ফুটে উঠত, সেলফ এস্টিম বাড়িয়ে চাঁদ ছুঁয়ে ফেললেও আমি নিজেকে সে চেহারায় দেখতে পারব না। - eta boddo satty. lekha ta khub e bhalo laglo.

    ReplyDelete
    Replies
    1. ধন্যবাদ, শিবেন্দু। আমারও ভালো লাগল।

      Delete
  5. Eyi ekta bishoye niye eto bhalo tumi chara ar keu likhte parbena Kuntala. Amar bapi chole geche aaj 9 bochor holo. Ekhono mone hoye jodi bhule jete partam koshto ta komto ektu. Eyi muhurte sasuri ma ventilator e. Boi ta porbo. Tumi bhalo theko. Eyi bhabe e likhe jeo.

    ReplyDelete
    Replies
    1. Anonymous post korlam karon logged in noi. ---- Sharmila (kitchene kichukhonn)

      Delete
    2. শর্মিলা, তুমি নাম না লিখলেও তোমার বাপির কথা শুনে তোমাকে চিনতে পারতাম। খুবই চিন্তার মধ্যে আছ এখন, বুঝতে পারছি। আশা করি সব ভালো হবে।

      Delete

Post a Comment