থিয়াগোর জন্মদিনে



অফিসকাছারিতে জন্মদিন পালন আমার মতে খুব একটা সুবিধের ব্যাপার না। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে অফিসের লোকদের থেকে জন্মদিন লুকোনো শক্ত। অফিসের নিজস্ব ওয়েবসাইটে আমার নামের পাশে যোগ্যতা, উচ্চতা, জন্মদাগ ইত্যাদি আবোলতাবোল তথ্যের সঙ্গে সঙ্গে জন্মদিনটাও ফলাও করে ঘোষণা করা থাকে। উৎসাহীরা সেখান থেকে টুকে জন্মদিনের এক্সেল শিট বানিয়ে রাখেন। তাতে দিন বুঝে কার্ড, কেক ইত্যাদি নিয়ে নবজাতকের ওপর চড়াও হতে সুবিধে হয়। আমার চেনা কিছু লোক আছেন জানি, যাঁরা নিজের জন্মদিন লুকোতে এইচ আরের সঙ্গে রীতিমত মারপিট করেছেন। অত ঝামেলা আমার পোষায় না বলে বছরবছর অফিসে আমার জন্মদিন পালন হয়। একদিনের তো ব্যাপার---এই ভেবে আমি উদাসীন হয়ে থাকি।

এখানে জন্মদিন পালনের হিড়িক দেখার মতো। ক্লাবে যাওয়া, নাচানাচি, ক্যারাওকে। হাতের কাছে ক্লাব না পাওয়া গেলে হোটেলের ঘরেই টেকিলার বন্যা, কনফেটির বৃষ্টি।

বেচারা থিয়াগোর কপাল খারাপ, ওর জন্মদিন পড়বি তো পড় এমন সময়ে পড়েছে যখন দল ছিটকে গেছে চারিদিকে। থিয়াগো আবার রিও দে জেনেইরোর ছেলে। সে শহরে শুনেছি নাইটক্লাবের রোশনাইয়ে চাঁদের আলো রাতভর চাপা পড়ে থাকে। থিয়াগোকে মলিন মুখে ঘুরতে দেখে আমাদের সকলেরই মায়া হল। বিশেষ করে ওর মতো যাদের প্রোজেক্ট স্টাডি প্যারিসে পড়েছে। আমরা বললাম, কুছ পরোয়া নেই থিয়াগো, তিরিশজন নেই তো কী হয়েছে, আমরা তিনজনেই এমন পার্টি করব যে চাইলেও তুমি এই দিনটাকে ভুলতে পারবে না।

থিয়াগোর ছেলেমানুষ চোখ চকচক করে উঠেছিল। জিজ্ঞাসা করেছিল, রিয়েলি! ইউ উইল কাম উইথ মি টু ডান্স? বেগতিক দেখে আমি তাড়াতাড়ি বলেছিলাম, আরে ফুঃ, নাইটক্লাব আবার একটা জন্মদিন পালনের জায়গা হল? কত কোটি ক্লাব আছে বলতো পৃথিবীতে? আমরা তোমার জন্মদিন পালন করব এমন জায়গায় যার জুড়ি বিশ্বে আর একটিও মিলবে না।

জন্মদিন অর্থাৎ রবিবার ভরদুপুরে আইফেল টাওয়ারের নিচে দেখা করা স্থির হল। শনিবার সন্ধ্যেবেলা বসে গুগল ম্যাপ খুলে আমি বাড়ি থেকে আইফেল টাওয়ারে পৌঁছনোর সমস্ত রকম রাস্তা মুখস্থ করে ফেললাম। প্যারিসের পাবলিক ট্রান্সপোর্ট বলতে তিনরকম---মেট্রো, বাস আর RER (Le réseau express régional d'Île-de-France), বেসিক্যালি রিজিওন্যাল ট্রেন তিনের দোষগুণ তুল্যমূল্য বিচার করে আমি মেট্রো নেওয়াই সাব্যস্ত করলাম।

আমার বাড়ি হচ্ছে দুটো মেট্রো স্টেশনের ঠিক মধ্যিখানে। রবিবারের রোদঝলমল সকালে রাস্তা দিয়ে হাঁটতে বেশ লাগছিল। জার্মানির মতো এখানেও রবিবারে বেশিরভাগ দোকানের ঝাঁপ বন্ধ। ব্যতিক্রমী কিছু রেস্টোর‍্যান্টের সামনে তখন সবে চেয়ার পাতা হচ্ছে, ছাতা মেলা হচ্ছে। প্যারিসে যা বুঝেছি সময় নিয়ে লোকে অত উত্তেজিত নয়। শনিবার রাতে পাসপোর্ট নিয়ে যেতে ভুলে গেছি বলে ফোনের সিম কিনতে পারিনি। জিজ্ঞাসা করেছিলাম আগামীকাল কখন দোকান খুলবে। তাতে দোকানি বেশ বিপদে পড়ে গিয়ে মাথা চুলকে বলেছিলেন, এগারোটায়ও খুলতে পারে আবার বারোটায়ও খুলতে পারে। ভাব দেখে মনে হচ্ছিল এই বুঝি বলে বসবেন, একেবারে নাও খুলতে পারে, কিন্তু সেটা আর তিনি বলেননি।

যে কোনও নতুন মেট্রোতে চড়তে গেলে যে ব্যাপারটায় আমার সবথেকে বেশি আতংক হয় সেটা হচ্ছে টিকিট কাটা। মানুষের খরা-লাগা এসব দেশে কাউন্টারে জ্যান্ত মানুষ বসা বন্ধ হয়ে গেছে অনেকদিন। তার জায়গা নিয়েছে মেশিন। জ্যান্ত মানুষ ভাষা না বুঝুক, আরও নানারকম করে, নেচেগেয়ে হেসেকেঁদে তাকে নিজের মনের কথা বোঝানোর তবু একটা আশা থাকে, মেশিনের কাছে ওসব ট্যাঁফো চলে না। আমি যত এটা ঘোরাই সেটা নড়াই, লালের পরে হলুদ আর হলুদের পরে সবুজ বোতাম টিপি, সে কেবল প্যাঁ প্যাঁ আওয়াজ করে জানান দেয়, ভুল ভুল ভুল, সব ভুল হচ্ছে। এ অসম রণে ভঙ্গ দিয়ে একটু দূরে গিয়ে দাঁড়িয়ে ভাবছি কী করা যায়, এমন সময় আমার বজ্জাত মেশিনটার পাশের মেশিনে এক সাহেব এসে দাঁড়ালেন।

কিছু কিছু লোকের মুখে দেখেই বোঝা যায় না, যে এর ওপর উপদ্রব করলে এ কিছু মনে করবে না? এই সাহেবের মুখটা ঠিক সেইরকম ছিল। আমি আর কালবিলম্ব না করে সাহেবের পায়ে পড়ে গেলাম। অতি স্পষ্ট চাঁচাছোলা দাবি, আপনার হয়ে গেলে আমার টিকিট কেটে দেওয়ায় একটু যদি সাহায্য করে দেন তো বর্তে যাই। সাহেব দেখলাম যা ভেবেছিলাম তার থেকেও নরম। বললেন, আহা আবার হয়ে গেলে কেন, আগে আপনারটাই কেটে দিচ্ছি আসুন। কাটতে গিয়ে বোঝা গেল আমার মেশিনটায় সত্যিই গোলমাল আছে। দেখে আমি ভীষণ শান্তি পেলাম এই ভেবে যে যাক তার মানে আমি এক্সট্রা বোকা নই, আর সাহেব কে জানে কেন ভীষণ লজ্জা পেলেন। ততক্ষণে পাশের মেশিন ফাঁকা হয়ে গিয়েছিল। সেখান থেকে অবশেষে টিকিট কাটা হল। আমি ভদ্রতা করে বললাম, ইস্‌ আপনার কত দেরি করিয়ে দিলাম। তাতে সাহেব মিষ্টি করে হেসে বললেন, আরে দেরি আবার কীসের, আজ তো রোববার।

ব্যস্‌, সেই যে গানটা মাথার মধ্যে বাজতে শুরু করল আর থামায় কে। ‘ধরা যাক আজ রোববার’ গুনগুন করতে করতে বাকি রাস্তাটা নির্ঝঞ্ঝাট পেরিয়ে গেলাম। মাঝে একবার মেট্রো বদলের ব্যাপার ছিল, কিন্তু বদলের নির্দেশাবলী অতি স্পষ্ট করে স্টেশনের চারদিকে লেখা আছে, কাজেই কোনও অসুবিধে হল না। সবথেকে মজা হল যখন গন্তব্যের ঠিক আগের স্টেশনটায় মেট্রোটা পাতাল থেকে মাটির ওপর বেরিয়ে এল আর অমনি চোখের ওপর লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়ালো, সুন্দরী সেনের তীরে আকাশছোঁয়া আইফেল টাওয়ার।



এদিকে ফোন বেজে উঠল। বার্থডে বয় সহ বাকিরা অন্তত একঘণ্টা লেটে আসবেন, কাজেই আমি যেন ততক্ষণ নিজের মনোরঞ্জনের ব্যবস্থা নিজেই দেখে নিই। জার্মানির বাইরে পা রাখা মাত্র লোকের পাংচুয়্যালিটির কী হাল। বাঁধা গরু ছাড়া পাওয়ার পরিণতি আরও একবার প্রত্যক্ষ করলাম। অবশ্য ভালোই হল একদিক থেকে। নিজের মনে টাওয়ার আর টাওয়ারের চারপাশটা তদন্ত করে দেখার একটা সুযোগ পাওয়া গেল।

আইফেল টাওয়ার সেনের লেফট ব্যাংকে আর এই হচ্ছে সেনের রাইট ব্যাংক। ওই বারান্দাগুলো থেকে রোজ সকালে আইফেল টাওয়ার দেখতে পাওয়া যায়।

আর এই হচ্ছে লাভ লক। তালায় যাদের নাম খোদাই করা আছে, তারা নিজেদের ভালোবাসায় তালাচাবি মেরে চাবি ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে গেছে নদীর জলে। যাতে ভালোবাসা এই তালাচাবির ভেতর সারাজীবন আটকা পড়ে থাকে। মারাত্মক আইডিয়া, সেটা মানতেই হবে।

রাইট ব্যাংক থেকে আইফেল

আইফেল টাওয়ার আমার কেমন লাগল? প্যারিসসংক্রান্ত নো রিজারভেশনস্‌ এপিসোডগুলোর একটায় অ্যান্থনি বোর্ডেন বলেছেন যে তাঁর মতে, দু-তিনদিনের জন্য ঝটিকাসফরে প্যারিস বেড়াতে গেলে সময় বাঁচানোর সবথেকে সোজা এবং ন্যায্য উপায় হচ্ছে দেখার লিস্ট থেকে সর্বপ্রথম আইফেল টাওয়ার বাদ দেওয়া। বোর্ডেনের মতো অত চাঁচাছোলা কথা বলা আমার ধাতে নেই, কিন্তু উনি কথাটা কেন বলেছেন সেটা আইফেল টাওয়ার দেখার পর বুঝতে অসুবিধে হওয়ার কথা নয়।

টাওয়ারের গায়ে বাহাত্তর জন বিখ্যাত ফরাসির নাম লেখা না থাকলে সত্যি বলছি বোঝার কোনও উপায়ই থাকত না যে ওটার সঙ্গে ফ্রান্সের (প্যারিসের কথা তো ছেড়েই দিলাম) কোনও সম্পর্ক আছে। গিজগিজ করছে টুরিস্ট। আইফেল টাওয়ারের সস্তা সোনালি রেপ্লিকা নিয়ে ঘোরাঘুরি করছে গরিব দেখতে ফেরিওয়ালারা। ফুটপাথে কীসব তাসের খেলা চলেছে। অন্যায্য রকমের বেশি দামের আইসক্রিমের গাড়ির আশেপাশে জঞ্জাল ছিটোনো। প্যারিসের স্থানীয় লোকদের টিকিটির দেখাও পাওয়া যাবে না ত্রিসীমানায়।

কিন্তু এ সবই হচ্ছে আইফেল টাওয়ার দেখার পরের অনুভূতি। দিল্লির লাড্ডু খাওয়ার পরের অভিজ্ঞতা। তাছাড়া সারা পৃথিবী থেকে এই যে একটা জিনিসের টানে ছুটে এসেছে কত লোক, সেই ব্যাপারটার একটা চার্ম নেই? ঘণ্টাখানেক ঘোরাঘুরি করে এসে টাওয়ারের সামনের কংক্রিটের বাক্সগুলোর একটার ওপর বসে বসে কতরকম লোক যে দেখলাম। কেউ রসুনের মালা গলায় পরে ঘুরছে। কেউ সারা শরীর সবুজ কাপড়ে মুড়ে স্ট্যাচু অফ লিবার্টি সেজেছে। লাইন দিয়ে থুত্থুড়ে দাদুদিদিমার দল লাঠি হাতে ঠুকঠুকিয়ে এসেছেন আইফেল টাওয়ার দেখতে। আইসক্রিমের গাড়ির দিকে আঙুল দেখিয়ে গলা ছেড়েছে প্র্যামে বসা শিশু। কমবয়সী দম্পতি তাদের বাচ্চা মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে এসেছে। মা মেয়ে আইফেলের সামনে পাশাপাশি পোজ দিয়ে দাঁড়িয়েছে ফোটো তুলবে বলে। জিনের কী অদ্ভুত লীলা। দাঁড়ানো, হাসি, ঘাড় কাতের ভঙ্গিমাটা পর্যন্ত দু’জনের হুবহু এক। ফোনের ক্যামেরায় গর্বিত বাবা আজীবনের মতো এই আনন্দময় মুহূর্তটুকু বন্দী করছেন। একহাজার তেষট্টি ফুট উঁচু একটা গলানো লোহার জাফরিকে ছুতো করে প্রতিদিন, প্রতি ঘণ্টা মিনিট সেকেন্ডে কে জানে কত প্রজন্মের স্মৃতি তৈরি হচ্ছে, সেটা কি চাইলেই হেলাফেলা করা যায়, না করা উচিত?

মাঝখানে বার্থডে বয় থিয়াগো, বাঁদিকে ফাউজি। এই ফাউজিই কুছ কুছ হোতা হ্যায়-এর সব গান গেয়ে এবং নেচে দেখাতে পারে।

Palais de Chaillot

টাওয়ার দেখা শেষ করে আমরা খাবারের সন্ধানে বেরোলাম। টাওয়ারের উল্টোদিকেই Palais de Chaillot। এই প্যালেসের ছাদে দাঁড়িয়েই লোকে আইফেল টাওয়ারের মাথাটাথা ছুঁয়ে ছবি তোলার কায়দাকানুন করে। আমাদের দলের কারও কারও ইচ্ছে ছিল ওরকম ছবি তোলে, কিন্তু ততক্ষণে সবার এত খিদে পেয়ে গেছে যে তারা মনের সাধ মনেই রয়ে গেল। এই প্যালেসের পুবদিকের হাতায় হচ্ছে City of Architecture and Heritage নামের পৃথিবীর সর্ববৃহৎ স্থাপত্যের কেন্দ্র। তার ক্যাফেটেরিয়ায় বসে আমরা লাঞ্চ করলাম। ফাউজি পাস্তা খেল, আমি স্যামন মাছের একটা স্যান্ডউইচ আর কোক জিরো খেলাম, বাকিরা কে কী খেল ভুলে গেছি। আমার স্যান্ডউইচটা খেতে খুব ভালো ছিল, দেখতেও। রুটির সারা গায়ে তিল ছড়ানো। ছবি তুলে আনিনি কেন? সে কি আর সাধে? ছবি তোলার ইচ্ছে আমার ছিল খুবই, কিন্তু ফাউজি সঙ্গে করে ওর এক বন্ধু ভদ্রলোককে এনেছিল। ভদ্রলোক আমাকে চেনেন না, আর চেনার সুযোগও নেই। কাজেই তিনি যাতে আমাকে এই একবেলা দেখেই বদ্ধ উন্মাদ না ভেবে বসেন, সেই জন্য স্যান্ডউইচের ছবি তোলার ঝুঁকিটা আর নিলাম না।

Comments

  1. টাওয়ারের ওপরে ওঠনি কেন?

    ReplyDelete
    Replies
    1. টাওয়ারের ওপর থেকে যে প্যারিসের ভিউ দেখা যায় তাতে আইফেল টাওয়ার থাকে না বলে।

      সরি ফর দ্য পি জে---আসল কারণ নানাবিধ। সবাই লেটমেট করে এসেছিল, খিদে পেয়ে গিয়েছিল ইত্যাদি প্রভৃতি। পরে একবার ওঠা যাবে না হয়।

      Delete
    2. যাচ্চলে, আমারটা কমেন্টটাও একটা জোক থেকে ... মানে ওই যাকে বলে অনুপ্রাণিত।
      ভানুর ক্যাসেটের মত। যদি আইফেল টাওয়ারে উঠে থাক, তাহলে দু'খান কথা আছে, নইলে কোনো কথা নেই।

      উঠলে তো জানতে পারব। তহন জিগায়ে নেব।

      Delete
  2. khub bhalo laglo porey. tumi parle ekta weekend versailles ghure esho. aar jedin bastille dekhte jabe (bangali bastille dekhbe na seta to hoyna....jodio kichu nei ekta column chara) shedin oi paray le tarmac bole breakfast joint achey ota try korte paro.

    ReplyDelete
    Replies
    1. নিশ্চয় নিশ্চয় শম্পা। দাঁড়াও লিখে নিই। বাস্তিল যাব এবং টারম্যাকে খাব, প্রমিস।

      Delete
  3. ki bhalo hoyeche lekhata.ar bandhurao besh jompesh hoyeche mone hocche..sandwich er chabi na tolar karanta sune khub haslam :)
    accha aj amio lunchbox dekhlam,motamuti laglo...tobe irfan khan ar nawazuddin darun,tobe oscar na jaoa nie loke je kannakati korche seram kichu laglo na!

    ReplyDelete
    Replies
    1. আমাদের বেঞ্চমার্কগুলো আসলে এত নিচে, সেটাই হয়েছে সমস্যা। বিবাহ-এর থেকে ভালো সিনেমা হলেই অস্কারের নমিনেশন দেওয়া উচিত গোছের হাবভাব। জঘন্য।

      লেখার প্রশংসা করার জন্য থ্যাংক ইউ ভেরি মাচ।

      Delete
  4. আমার অনেকগুলো কথা বলার আছে।

    প্রথমে একটা পি জে : যার নাম শাহরুখ খানের প্রথম টিভি সিরিয়ালের নামে, সে যে কুছ কুছ হোতা হ্যায়-এর গান গেয়ে শোনাবে এতে আর আশ্চর্য্য কি?

    এবার প্যারিস সম্পর্কে বলি, ফরাসীরা অনেকে বলে, "Paris is not France. Paris is surrounded by France." আপনার আইফেল টাওয়ারের বর্ণনাতেও সেই কথার আভাস পেলাম। তবে অনেক ব্যাপারের মতন এই একটা ব্যাপারেও আমার সঙ্গে আপনার মিল: আমি ৫ বছর নিউ ইয়র্কে থেকে যাওয়ার সময় হয়ে গেল, কিন্তু আমি এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিং আর স্ট্যাচু অফ লিবার্টি দুটোর কোনটাই টিকিট কেটে দেখিনি। আর আমায় লোকে যখন জিজ্ঞাসা করে আমি কেন এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিং এর মাথায় উঠিনি, আমি কি বলি জানেন?

    বিল্ডিং এর ওপর থেকে যে নিউ ইয়র্কের ভিউ দেখা যায় তাতে এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিং থাকে না বলে। সিরিয়াসলি। অন গড ফাদার মাদার।

    ওই রেলিঙে তালা ঝোলানোর প্রথাটা এখানে ব্রুকলিন ব্রিজে এমন ভয়াবহ পর্যায় গেছে যে নিয়মিত তালা পরিষ্কার না করলে ব্রিজ ভেঙ্গে পড়বে হয়ত কোনদিন। এই দেখুন আমার তোলা ছবি

    আপনার ছবিগুলো খুব সুন্দর হয়েছে। আমার বাড়িতে লোক এসেছে বলে কয়েকদিন আসা হয়নি, বাকি লেখাগুলো এবার পড়ব।

    ReplyDelete
    Replies
    1. হাহাহা, ফাউজিকে এটা বলতে হবে।

      টাওয়ারের পি জে নিয়ে আমার আর কিছু বলার নেই, মুখ বুজে শুধু হাই ফাইভ দেওয়া ছাড়া।

      তালার ছবিটা কী সুন্দর। কিন্তু ছবি যতই সুন্দর হোক না কেন, কনসেপ্ট অতি বাজে। কি না, এই আমি তোমারআমার প্রেমে তালা মেরে দিলাম। চরম আনরোম্যান্টিকও তো বটে। কীসে যে কার মন মজে, ভগবানই জানেন।

      আরে না না, পড়ার তাড়া নেই, আপনি অতিথিদের সেবাযত্ন করুন, এন ওয়াই সি-র গাইডেড ট্যুর করান। পরে কথা হবে।

      Delete
  5. besh moja laglo lekhata pore...besh kichu Hollywood cinema te oi tala dewa bridge er bepare dekhechi...okhane ki sudhu prem er somporke tala pore?amar to onno tothho jana chilo..r amar besh mon kare tala mere chabi chora beparta...jai bolun.. :P

    ReplyDelete
    Replies
    1. প্রেম ছাড়াও অন্য সম্পর্কে তালা মারার ফান্ডা আছে নাকি? আমি তো শুধু প্রেমেরই শুনলাম। না না সে মন কাড়তেই পারে সৌমেশ। একেকজনের একেকটা জিনিস ভালো লাগবে সেটাই স্বাভাবিক, না হলেই অদ্ভুত হত।

      Delete
  6. খুব ভালো লাগলো পড়ে। ফাউজিকে দেখেই প্রতিভাবান লোক বলে বোঝা যায়।

    আর আইফেল টাওয়ার দেখে নিয়ে যখন খাবারের সন্ধানে ফিরছিলেন, তখন একবারের জন্য হলেও ঘাড় ঘুরিয়ে দেখেছেন কি? ফাউজির শাহরুখ খানের মত, অগর উও তুঝসে প্যার করতি হ্যায় তো পলটকে দেখেগি?

    যদি একবারও দেখে থাকেন, তাহলে অ্যান্থনি বোর্ডেন সায়েবের কথা ভুল। আর যদি না দেখে থাকেন, তাহলে আপনার আর সায়েবের চরণে শতকোটি প্রণাম।

    ReplyDelete
    Replies
    1. আমি আপনার সঙ্গে একেবারে একমত দেবাশিস, দূর থেকে ঘাড় ঘুরিয়ে আইফেল টাওয়ার দেখলে মুগ্ধ ছাড়া আর কিছু হওয়া দুঃসাধ্য। আমি বলতে চাইছিলাম টাওয়ারের একেবারে পায়ের তলায় গিয়ে পড়লে মনোভাবটা কেমন হয়, মানে আমার কেমন হয়েছিল। সেটা আমার ধারণা আমাদের তাজমহলের ক্ষেত্রেও সত্যি।

      Delete
    2. etai bolte jachilam, Tajmahaler khetreo akdom kache pouche gele kintu besh disappointing, given the hype! kintu fire asar somoy godhuli alor sondhyey, jokhon sob tourist fire asche, tokhon akbar ghar ghuriye dekhle bhalo na bese upaay nei..etao serokom i mone hoche..

      Delete
    3. ঠিকই বলেছ স্বাগতা, তাজমহল, আইফেল টাওয়ার, মানুষ---সকলকেই দূর থেকে আর কাছ থেকে দু'রকম দেখতে। দূরের চেহারাটাই সাধারণত ভালো।

      Delete
  7. আমার প্যারিস ঝটিকা সফরে আইফেল টাওয়ার নয়,কেমন যেন হতাশ লাগছিল মোনালিসা ম্যাডামকে দেখার পর। সে যাই হোক, আমার মন ভরেনি তাই তোমার পোস্ট গুলো খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়ব ।
    মিঠু

    ReplyDelete
    Replies
    1. আমার ধারণা সমস্যা মোনালিসার নয় মিঠু। সমস্যা মোনালিসা নিয়ে হাইপের। প্রায় জন্মে থেকে একটা জিনিসের কথা শুনে আসলে সেটা চোখের সামনে দেখে ইমপ্রেসড হওয়া শক্ত।

      Delete
  8. ইয়ে, ফাউজির গান আর নাচের ভিডিও পাওয়া যাবে? একটু বুঝিয়েসুঝিয়ে যদি...

    ReplyDelete
    Replies
    1. জিজ্ঞাসা করে দেখছি।

      Delete
  9. আমার বেশ হিংসে হচ্ছে তোমাকে। প্যারিস যাওয়ার ইচ্ছে বহুকালের।:(

    ReplyDelete
    Replies
    1. আরে আমি নিশ্চিত প্যারিস যাওয়ার সুযোগ তোমার একবার নয়, বারবার আসবে প্রিয়াংকা।

      Delete
  10. Darun mojar ar jhok jhoke bondhura. Paris ghorar galpo darun kore suru holo, ebar aro chhobi ar aro galper ashai roilam

    ReplyDelete
    Replies
    1. হ্যাঁ, বন্ধুভাগ্য আমার চিরকালই ভালো ইচ্ছাডানা।

      Delete
  11. "Afternoon in Paris" darun hoyeche ..... Evening in Paris er opekkhay roilam.

    ReplyDelete
    Replies
    1. থ্যাংক ইউ রণিতা।

      Delete

Post a Comment