মান্থলি কাটতে গিয়ে



ফরফরিয়ে ইংরিজি বলতে পারার দেমাকের মোক্ষম দাওয়াই হচ্ছে প্যারিস। ব্যাকরণ মেনে ব্রিটিশ উচ্চারণে ইংরিজি বলে আপনি কলকাতার (সাউথ) বাঙালিদের কাৎ করতে পারেন, প্যারিসের লোকদের সামনে আপনি স্কেজিউলই বলুন কি শিডিউলই বলুন কি পাঁজি দেখে বিশুদ্ধমতে শেডিউলই বলুন---উত্তরে শীতল, কঠিন, বোবা দৃষ্টি ছাড়া আর কোনওরকম পিঠচাপড়ানির আশায় থাকলে কপালে দুঃখ আছে।

জঁ নে পাহ্‌লে পা আংলে

গতকাল সকালটা অনেক কারণে স্মরণীয় হয়ে থাকতে পারত। ডাইনিং টেবিলে বসে চায়ের কাপ হাতে নিয়ে অবান্তরের কমেন্টের উত্তর লিখতে লিখতে হঠাৎ একমুহূর্তের জন্য অন্যমনস্ক হয়ে দেখেছিলাম  জানালার ফিনফিনে সাদা পর্দার ওপার থেকে ঝকঝকে রোদ এসে পুরোনো কাঠের মেঝেতে গ্রিলের আলপনা নিখুঁত ফুটিয়ে তুলেছে। মেট্রোস্টেশনের প্রায় সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে টের পেয়েছিলাম, এই প্রথম একটিবারও রাস্তার নাম লেখা বোর্ডের দিকে না তাকিয়ে গোটা পথ নির্ভুল পেরিয়ে এসেছি আমি---অফিসে আমার প্রথম টিম মিটিং-এর কথা ভাবতে ভাবতে, সামনের শনিরবি কোথায় বেড়াতে যাব সেই প্ল্যান ছকতে ছকতে। কিন্তু এ সবকিছু ছাপিয়ে যে ঘটনাটা কাল সকালের মধ্যে নাক ভাসিয়ে জেগে রইল সেটা হচ্ছে মান্থলি টিকিট কাটার অভিজ্ঞতা। শুধু কাল সকাল কেন, আমার ধারণা আগামী অনেক বছর প্যারিস কথাটা কানে এলে আইফেল টাওয়ার আর মুলা রুঁজের সঙ্গে সঙ্গে গতকাল সকালটাও ছবির মতো আমার মাথার ভেতর ফুটে উঠবে।

অথচ এ’রকমটা যে হতে পারে সে সম্পর্কে একটা আন্দাজ আমার ছিল। তাই গোলমাল কমানোর জন্য মান্থলির দামের শেষ পয়সাটুকু পর্যন্ত খুচরো প্যান্টের পকেটে আলাদা করে নিয়ে বেরিয়েছিলাম। যাতে কাউকে দরকারের বেশি একটি ইংরিজি শব্দ আমার জন্য খরচ করতে না হয়। আলটপকা মেট্রোচারীর দ্বারস্থ না হয়ে বড় বড় করে ইংরিজিতে “ইনফরমেশন” লেখা কাউন্টারে গিয়ে লাইন দিয়েছিলাম। তাতেও শেষরক্ষা হল নানাকাল হওয়ার সবগুলো পদক্ষেপ বানান করে না লিখে শুধু এইটুকু বলি, ঝাড়া পঁয়তাল্লিশ মিনিট পর মান্থলিকার্ড হাতে নিয়ে যখন মেট্রো স্টেশন থেকে বেরিয়ে অফিসের দিকে হাঁটছি, তখন আমার চোখ থেকে প্যারিস সম্পর্কে মোহাঞ্জনের শেষ বিন্দুটুকুও উবে গেছে। 

অফিসে ঢুকে, হাতে এককাপ ধোঁয়া ওঠা চা আর কানে নিখিল ব্যানার্জি গুঁজে ঘণ্টাখানেক বসে থাকার পর অবশেষে আমার মেজাজ ঠাণ্ডা হল। চম্পট দেওয়া পারসপেকটিভ আবার নিজের জায়গায় ফেরৎ এল। আর ঠিক তক্ষুনি আমার মনে পড়ল সিংগল স্টোরির কথা।  

প্যারিসের সিংগল স্টোরি কী? প্যারিসিয়ানরা রুড, আনহেল্পফুল। ইংরিজি জানে কিন্তু বলবে না। ইচ্ছে করে ফ্রেঞ্চ না জানা লোকদের নাকাল করবে। আগে থেকেই কানায়ঘুষোয় শোনা ছিল, জার্মান কোলিগরা তাতে আরও ধোঁয়া দিয়েছে। মুখ টিপে হেসে বলেছে, “ইউ আর গোয়িং টু প্যারিস? বিওয়্যার অফ ফ্রেঞ্চ পিপল।” আজ সকালের ঘটনাটা দেখলে এই স্টোরিটা বিশ্বাস না করার কোনও কারণ নেই। কিন্তু অন্য গল্পও তো অনেক আছে। নিজের চোখে দেখা। আজ সকালেই যে ভদ্রমহিলা আমাকে সাহায্য করলেন, তাঁর গল্পটা তো এই গল্পটার কোথাও খাপ খায় না। ইনি নিজে প্যারিসে বহিরাগত। শুরুতে আমার মতোই পদে পদে নাকাল হয়েছিলেন। ভাষা শিখে নিতে ঝাড়া একটি বছর লেগেছিল তাঁর। তাই তিনি নিজের সব কাজ ফেলে আমার সঙ্গে কাউন্টার থেকে কাউন্টারে ঘুরলেন। প্রমাণ করে দিলেন যে ফ্রেঞ্চ জানলেই প্যারিসে সব কাজ সোজা হয়ে যায় না। আইফেল টাওয়ার দেখতে যাওয়ার দিনের টিকিট কেটে দেওয়া সাহেবের কথা মনে পড়ল। মেট্রোতে পাশের সিটে বসা মেয়েটার কথা মনে পড়লগায়ে পড়ে আলাপ করে বলেছিল, ইন্ডিয়ান কুর্তা ওর খুব পছন্দ। সো কালারফুল।

আমি অবাস্তব নই। আমি জানি এর পরেও প্যারিসে এ ঘটনা ঘটবেবেকারিতে গিয়ে ভয়ে ভয়ে “বোঁজুঁ মাদাম” সম্বোধন করে জিভে জল আনা কোনও পেস্ট্রির দিকে আঙুল দেখিয়ে যখন বলব, “এর একটা চাই, সি’ভু প্লে।” তখন কাউন্টারের ওপার থেকে ফ্রেঞ্চে আমার দিকে প্রশ্ন আসবে, “ভুলে-ভু শোহ্‌?” আমি তাকিয়ে আছি দেখলে আমার মুখের সামনেই সে চোখ ঘোরাবে, এমনকি উঁচু গলায় সহকর্মীর সঙ্গে ফ্রেঞ্চে রসিকতাও করতে পারে। তখন আমাকে প্রাণপণে অন্য স্টোরিগুলোর কথা মনে করতে হবে। মনভালো করা, বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দেওয়া স্টোরিগুলোনা হলে এ’শহরে দু’মাস দশদিন কাটানো বড় কষ্ট।
 

Comments

  1. ahare ..khub dukhyer kichu ghoteche mone hocche ! :(

    ReplyDelete
    Replies
    1. দুঃখের না...এখন অ্যাকচুয়ালি একটু খারাপই লাগছে। এই জন্য বলে রাগের মাথায় কথা বলা এবং অবান্তর লেখা, দুটোই ভুল। প্যারিসিয়ানদের (সবার নয়, অফ কোর্স) মেজাজ অন্যান্য দেশের লোকদের তুলনায় একটু বেশি খিটখিটে, আর আমরা যেমন হেলায় ইংরিজির পায়ে লুটিয়েছি, ওরা সেটা করেনি। এই গ্লোবালাইজেশনের যুগে এক জায়গায় গিয়ে ভাষার জন্য কমিউনিকেট করা যাবে না, এটা কল্পনাতে থাকে না বলেই মেনে নিতে প্রথমটা কষ্ট হয়।

      Delete
    2. আমার চেন্নাইতে আসা প্রায় দেড়মাস হল- ইনফর্মাল কোর্সে তামিল শিখছি... আর বেশি কিছু বলার দরকার নেই নিশ্চয়ই? তবে আমার কিন্তু খারাপ লাগে না, এই হিন্দির আধিপত্য মেনে না নেওয়াটা- আমার দরকারে এখানে এসেছি, দরকারেই কিছুটা ভাষা শিখে নেবো- ব্যস্‌ ... তবে দু'মাস দশদিনের জন্য ব্যাপারটা যে খুবই চাপের, তাতে সন্দেহ নেই।

      Delete
    3. এই আধিপত্য ব্যাপারটা খুব মজার বললে সুনন্দ। আমরা যারা বিভিন্ন জায়গায় আধিপত্য করি তারা অনেক সময় আধিপত্যটাকে আইডেন্টিফাই-ই করতে পারি না। আমার দিল্লির অফিসের এক সহকর্মী, যে আদতে হিন্দি বলয়ের বাসিন্দা, প্রায় আকাশ থেকে পড়েছিলেন এই শুনে যে আমি হিন্দির এক দুই তিন চার নম্বর পড়তে স্বচ্ছন্দ নই। বেশ কয়েক সেকেন্ড আমার দিকে তাকিয়ে ছিলেন। এই বেসিক নলেজটা ছাড়া আমি এতদিন পাঁচ আঙুলে ভাত খেলাম কী করে সেটাই ভাবছিলেন বোধহয়। আমাকে বলতেই হল যে হিন্দির এক দুই তিন চার না জেনেও দিব্যি বহাল তবিয়তে জীবন কাটানো যায়, এই ভারতবর্ষেই। এবং সে জীবন রীতিমত আনন্দের।

      আর সাবভারসিভ হওয়াতে আমার কোনও আপত্তি নেই, বরং হলে আমি সেটাকে ভালো চোখেই দেখি, কিন্তু ইনফরমেশন লেখা কাউন্টারে বসে আমার মতো চুনোপুঁটিকে হেনস্থা করে ইংরিজির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার আইডিয়াটা বেশ হাস্যকর। বা হিন্দি না বলে অটোচারীকে ঠকানোর আইডিয়াটাও। ওটা আধিপত্য মেনে না নেওয়া নয়, ওটা স্রেফ শয়তানি।

      Delete
    4. না, না, ওটা যে শয়তানি তা নিয়ে তো কোন সন্দেহ নেই- আর সেটা অটো বা কাউন্টারের বাইরের সাধারণ মানুষ খুব একটা করেও না... (এখানে আরোই বোঝা যাচ্ছে না, কারণ তো বলেইছি, এটা প্রায় বাঙালি ইন্সটিটিউট), তবে এই আচরণের কারণ ঠিক হিন্দির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ নয়, বরং তার চেয়ে অনেক বেশি পুরনোকে ফেলতে না পারা... ফ্রেঞ্চের ক্ষেত্রে সে কথা খাটেনা, কিন্তু তামিল চোদ্দটা ক্লাসিকাল ল্যাঙ্গুয়েজের একটা, ২০০০ বছরের পুরনো, ভারতের একমাত্র প্রাচীন ভাষা- যাতে এখনো লোকে কথা বলে,(আর বলতে সংস্কৃত, কিন্তু সে আর মন্ত্রের বাইরে কই?) শুধু ভারতে নয়- আরো তিন'টে দেশে... মোদ্দা কথা হল, ভাবটা এই- কষ্ট করে হিন্দি শিখতে পারো, তামিল পারবে না? (ভারতের কিন্তু কোন রাষ্ট্রভাষা নেই... http://articles.timesofindia.indiatimes.com/2010-01-25/india/28148512_1_national-language-official-language-hindi)

      তবে হ্যাঁ, যদি বল, এই রকম অতীতমুখো হওয়া কি স্বাস্থ্যকর? তবে সে অন্য প্রশ্ন... :)

      Delete
    5. হাহা, সুনন্দ, আমি বুঝতে পেরেছি তোমার মনের টান তামিল শেখার প্রতি। কাজেই এ বিষয়ে আর কথা বাড়িয়ে লাভ নেই। তুমি ভালো করে তামিলটা শিখে নাও, তারপর তোমার থেকে আমিও না হয় শিখে নেব।

      Delete
  2. ওমা ! ফরাসীদের এই অসহযোগিতার গল্প তো হুবহু মিলে যায় আমাদের দেশের দক্ষিণ ভারতীয়দের সঙ্গে। প্রথমবার গেছি সেখানে। ব্যাঙ্গালোরের মত জায়গায় সারাদিন ঘুরে ক্লান্ত হয়ে ঠিক হল আজ শুধু আলুসিদ্ধ, বেগুনভাজা আর ঘি দিয়ে রাতের খাবার হবে। নিজেদের হোটেলে সেসব পাওয়া যাবে না শুনে আমরা অন্য একটা জায়গায় গিয়ে যা হেনস্তা। তারা হিন্দি বুঝতে চায় না। ইংরাজিতে কথা বলবেই না, শুধু তামিল চাই, যদিও তারা এসব ভাষাই জানে। আমাদে্র এই বহুভাষী দেশে তো মহা মুস্কিল। শেষ পর্যন্ত আমরা নিজেদের পছন্দমত খাবার পাই নি। এছাড়াও নানা ক্ষেত্রে এধরণের ব্যবহারের গল্প তো ঝুলি ভরা।
    তোমার গল্প পড়ে মনে হল ফরাসীরা তো ভারতে এসে দক্ষিণেই বাসা বেঁধেছিল। বোধহয় সেখান থেকেই এই অভ্যাস নিয়ে গেছে।

    ReplyDelete
    Replies
    1. মালবিকা, সে ফ্রেঞ্চরা এসে আমাদের শিখিয়ে গেছে, সেটাও হতে পারে। সব দোষ আমাদের কেন হতে যাবে, বালাই ষাট।

      সাউথ ইন্ডিয়া নিয়ে এই ধরণের গল্প আগেও শুনেছি। খুবই মারাত্মক।

      Delete
  3. K. tumi mon kharap koro na. paris rude-ness er "single story" gulo tumi "service oriented" jaygay pabe, paris jehetu major tourist destination aar dokan bajar station ei shob e jara kaaj koren tara ektu tourist overdose peye jay.

    Kintu aam jonota dekhbe besh polite. arekta byapar holo french der "german" aar "engrez" associated culture er proti ekta apochonder byapar achey (historically, french ra beshir bhag byaparei eder kachey gaddu kheyechilo :))........

    anek byapar e bangali aar marwari somporker ekta mil pai. tachara ekhon jara teenager era school e prothom thekei engrezi sikhchey.....ager generation er lokjon high school er agey english porena (unless private school educated).

    jai hok not to over-defend kintu aamar paris er din gulo khub bhalo ketecilo thanks to people around tai "single story of rudeness" ta aami bhishon bhabe protest kori :)

    ReplyDelete
    Replies
    1. আরে না না, মন খারাপ করিনি শম্পা। আসলে অসুবিধে যে এতটা হবে আগে কল্পনা করিনি বলেই শকটা বেশি হয়েছে আরকি।

      তোমার টুরিস্টের ওভারডোসের সঙ্গে পুরোটা একমত হতে পারলাম না। টুরিস্টের ওভারডোস তো অনেক জায়গাতেই হয়, তারা কি এভাবে রিঅ্যাক্ট করে নাকি? আর প্যারিসে যে টুরিস্টের ওভারডোস হবে সেটা তো নতুন করে চমকানোর কথা কিছু নয়, ওদের তো সেইজন্যই ইংরিজি জানা লোক বেশি করে রাখা দরকার, অন্তত যেখানে পরিষ্কার ইনফরমেশন দেওয়ার কথা লেখা আছে। একটাই যুক্তি মাথায় আসছে আমার, যে বাকি টুরিস্ট-অধ্যুষিত জায়গারা টুরিস্টদের টাকায় করে খায় তাই টুরিস্টদের স্বার্থের কথা মাথায় রাখে। প্যারিসের বোধহয় সে টাকার দরকার নেই, তাই বহিরাগতদের প্রতি সহযোগিতার দায়ও নেই। ইন ফ্যাক্ট, অসহযোগ প্রকট করে তোলার সাহসও আছে।

      তোমার বাকি কথাগুলোর সঙ্গে একেবারে একমত। নতুন প্রজন্মের লোকেরা ইংরিজি বলে, এবং সবথেকে বড় কথা ইংরিজি বলতে হচ্ছে বলে মরমে মরে যায় না। আর রাস্তাঘাটে ট্রেনেবাসে বেশিরভাগ লোকই আমার তোমার মতো স্বাভাবিক।

      Delete
  4. amar kintu Paris shohortar sathe soi patano jaay jatiyo mone hoyechilo...ar Forashi bhashhato darun legechilo....obodhyo ami chilam tourist, rojkar jibon kemon hobe se to jana nei!

    ReplyDelete
    Replies
    1. আমি সই পাতাতে চাইলেও প্যারিস আমার সঙ্গে সই পাতাতে চাইবে কি না সেইটাই হচ্ছে প্রশ্ন পৌষালি। তবে আই গেস্‌ সব বড় শহরেই (সে শহর নিজের না হলে, বা সেখানে অনেকদিন একটানা বাস না করলে) ব্যাপারটা একই রকম।

      Delete
  5. প্যারিস খুব বাজে জায়গা । সব ফরাসীরা না কিন্তু - শহুরে কোট-প্যান্ট পরা লোকজন - ইংরিজি জানলেও সাহায্য করে না, কিন্তু একটু শহরের বাইরে বেরোলেই ব্যাপারটা পুরো উল্টো - ইংরিজি জানেন না এমন লোকজন ডেকে ডেকে তোমাকে সাহায্য করবেন । ভার্সেই বেড়াতে গিয়ে দেখেছিলাম - আর প্যারিস থেকে ৫০ কিমি দুরে গেলে তো কথায় নেই ।

    বাই দ্যা ওয়ে - আমি আপাতত: সুইজারল্যানড -এ যেখানে থাকি, অফিস-এর বাইরে অধিকাংশ লোক-ই "জুন সে পা" - মানে কোন ছোটবেলা ইংলিশ পড়েছে - এখন একেবারেই গছন্তি । তা সত্তেও সাহায্য করার জন্যে দু হাত বাড়িয়ে বসে আছে । ঘটনাক্রমে আজ-ই অফিস-এ একজন সহকর্মী-র ফ্রেঞ্চ বাক্যালাপ শুনে ভুল করে জিগ্গ্যেস করে ফেলেছিলাম তুমি সুইস না ফ্রেঞ্চ -- মহিলা খুব মর্মাহত হলেন। বললেন - "আমি নাহয় ডেডলাইন আর প্রজেক্ট প্ল্যানিং নিয়ে একটু খিটখিট করি - তাবলে তুমি কিনা আমাকে ফ্রেঞ্চ ভাবলে? উ-লা-লা সব্যা ..."

    প্যারিস নিয়ে ভালো কিছু বলতে পারলে ভালই লাগত - বিদেশে এমনিতেই বিরহে আদ্খানা হয়ে আছ - (ইংরিজি না বলা দেশে নির্ঘাৎ আরও বেশি করে) কিন্তু সাহস যোগাতে পারছি কই ? ওই ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় ধার করে বলতে পারি - প্রথম একমাস একটু কষ্ট যাবে - তারপর সয়ে যাবে ...

    ReplyDelete
    Replies
    1. সব্যসাচী, তোমার সান্ত্বনার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ। আমাকে অবশ্য কোটপ্যান্টওয়ালা লোক হেল্প করেছে, আমার মনে হয়েছে সমস্যা তখনই যখনই মাঝখানে একটা কাউন্টার এসে পড়ে। টিকিট কাউন্টার, বেকারির কাউন্টার, সুপারমার্কেটের কাউন্টার ইত্যাদি প্রভৃতি। সেটা খুবই অদ্ভুত, কারণ এই জায়গাগুলোতেই সাহায্যের সবথেকে বেশি দরকার।

      তবে তোমার কথায় ভরসা রাখছি আমি, নিশ্চয় দু'দিন পর অভ্যেস হয়ে যাবে। আর আমাকেও অত বেশি 'লস্ট' দেখতে লাগবে না। কাজেই...

      Delete
  6. Amaro kintu Paris er eirakom asahojogitar galpo shunei Chennai er Autorickshaw r kotha mone pore galo. Tumi jatoi English bolo , hindi bolo ar tara seta jatoi januk na keno , jodi ekbar bujhte pare tumi Tamil janona tahole tarao Tamil chhara ar onyo kono bhasa janena .

    ReplyDelete
    Replies
    1. এই রে, চেন্নাইয়ের কথা বারবার এসে পড়ছে দেখছি। খুব ছোটবেলায় গিয়েছিলাম, সমস্যা হয়েছিল কি না মনে নেই, মা বাবাকে জিজ্ঞাসা করে দেখতে হবে। তবে এ ধরণের অভিযোগ আগেও শুনেছি।

      Delete
  7. প্যারিস নিয়ে আমার কোনো অভিজ্ঞতা নেই, তাই বেশি কিছু না বলাই ভালো। তবে এ ধরনের সমস্যা একটু আধটু চেন্নাইতে হয়েছে আমার। আপনি "ইংলিশ-ভিংলিশ" দেখেছেন? আমার আপনার টিকিট কাটার দৃশ্যটা ভাবতে গিয়ে শ্রীদেবীর কফি অর্ডার করা মনে পড়ে গেল।

    ReplyDelete
    Replies
    1. ভাবুন, নিজের দেশের মধ্যেই, অ্যাঁ? কোনও মানে হয়। ইংলিশ ভিংলিশ-এর উপমাটা ভালো দিয়েছেন (তবে তড়িঘড়ি বলি, আমি কিন্তু কেঁদে ফেলিনি, বরং রাগে কান দিয়ে ধোঁয়া বেরোনোর মতো ব্যাপার হয়েছিল)

      এই প্রসঙ্গে আরেকটা কথা বলতে হচ্ছে। এ ধরণের অভিজ্ঞতা অনেকটাই কপালের ব্যাপার। আমার নিজের এন ওয়াই সি-তে অসুবিধের ছিটেফোঁটা হয়নি, তাই আমি সিনেমাটা (বিশেষ করে ওই কফি কেনার দৃশ্যটা) দেখে বলেছিলাম, ভ্যাট্‌, বাড়িয়ে বলেছে। এ রকম আবার হয় নাকি বস্‌, কই আমার সঙ্গে তো হয়নি। তাতে আরেকজন বলল, আলবাত হয়, আমি হতে দেখেছি, একাধিকবার।

      Delete
    2. Shotyi, ekshobaar hoy, amaar nijer shonge hoyechhe prothom jokhon USA te ashi. Sob jaatir modhyei ekta shajatyobodher gorbo thaake jeta barte barte naak-unchupona aar onyoke chhoto korte shekhay, Americander, French der protyekeri nijer nijer kaarone. Tai aami nicher ekta commenter shonge 100% ekmot...mokkhom dawai hochhe bishuddho Bangalay uttor dewa. Tomar jodi French niye gorbo thakte paare, ektu adhtu Bangla bhasha tomakeo hojom korte hobe boiki.

      Delete
    3. এই টোটকাটা অনেকেরই মনে ধরেছে দেখছি শ্রমণ। সেটাই খুব আশ্চর্যের বিষয়, নিজেকে নিয়ে গর্ব করতে গেলে অন্যকে ছোট দেখাতে হয় কেন।

      Delete
  8. বলি শোন , আমার ঝটিকাসফরে মেট্রো নিয়ে একটু গোলমাল হচ্ছিল । নিজেই বোধহয় গজগজ করছিলাম । সেই শুনে এক খুনখুনে বুড়ি বলেই ফেলল প্রায় ঝামটা দিয়ে-ইংরিজিতে ,it's not complicated,it's LOGICAL
    বোঝ ঠ্যালা ।
    মিঠু

    ReplyDelete
    Replies
    1. হাহাহাহা, এইটা মজার। আমি নিশ্চিত তোমার তখন হাসি পায়নি, কিন্তু এখন শুনে আমার খুবই হাসি পাচ্ছে। আসলে জাত্যাভিমানটা এ তল্লাটে খুবই প্রবল।

      Delete
  9. hmmm...besh baje byapar.. chennai te lok-janer erakam akta 'stance' thake...tobe tomar katha sune mane hachhe Paris could be dangerous!!
    darao...ami akjan french ke chini, j Bombay ese astana basieche. parer bar dakha hale kathin banglay katha balbo...english r hindir dhar o gheshbona!! jake bole hata nate pratishodh :)

    ReplyDelete
    Replies
    1. আরে থ্যাংক ইউ থ্যাংক ইউ সায়ক। তোমার প্রতিশোধের প্ল্যান জব্বর। একেবারে বঙ্কিমি বাংলা দিয়ে শুরু কোর তো সায়ক। ব্যাটাদের বড্ড বাড় বেড়েছে।

      Delete
  10. একটা টোটকা বলব? হাসি হাসি মুখে কনফিডেন্টলি বাংলা বলবে (যদি উল্টোদিকের জন ফরাসি ছাড়া কিছু না বলতে চায়! ) এবং বুঝিয়ে দেবে, তোমার কাজ না হওয়া পর্যন্ত তুমি জায়গা ছেড়ে নড়ছ না। বিশ্বাস কর, কাজ হয়। এর পর যদি কেউ ভাঙা ভাঙা ইংরেজিতে সাহায্য করতে চায়, তা হলে অবশ্যই সটান ইংরেজিতে ফেরা। তুমি ফরাসি জান না, সেটা তোমার অপরাধ হতে পারে না। বরং উনি গণ-পরিষেবার কাজে বসে একটা চালু আন্তর্জাতিক ভাষা জানেন না, এটা ওঁর সমস্যা, তোমার নয়! আর কী জানো তো, সারা পৃথিবী শক্তের ভক্ত ...!
    আর খুচরো কারণে (সাইকেলের আলো নেই ইত্যাদি) পুলিশে ধরলেও এই একই টোটকায় কাজ দেয়। মাতৃভাষা। :)

    ReplyDelete
    Replies
    1. Khub haslam ei totka-ta pore. Kintu khub sandeho hochhe je eta kaaj-e ase. Next time keu Kannada/Tamil bollei ami Bangla bolbo!

      Delete
    2. থ্যাংক ইউ থ্যাংক ইউ শীর্ষ। মাতৃভাষা সবজায়গাতেই কাজে লাগে, এক কলকাতা ছাড়া। তোমার উপদেশ মাথায় রাখলাম। তবে এটা করা শক্ত, মানে করার কনফিডেন্স জোগাড় করা শক্ত। তবে করতে পারলে কাজে দিতে পারে সেটা আমারও ধারণা।

      কোয়েল, টোটকা কাজে দিল কিনা জানিয়ো।

      Delete
  11. Ei totka ta daroon kaajey day. Amar bohu bondhu Chennai er tnyador auto wallah der bangla bole kaat kore diechhe. Kuntala di, tumio cheshta kore dekhte paro.

    ReplyDelete
    Replies
    1. tai naki? tahole porokh kore dekhte hochchhe to.

      Delete
  12. jaah amar to pore paris sommondhe mohobhongo holo khub i..french ra bujhi khub khitkhite r rude hoy? amader ak french jnr prof ke serom i dekhechilam bote, kin2 seta je general bapar bujhini.. :(

    ReplyDelete
    Replies
    1. আমার লেখা পড়ে জেনারেল ব্যাপার মনে হল বুঝি স্বাগতা? তাহলে আমি সত্যিই দুঃখিত।

      Delete
  13. আমিও শুনেছিলুম যে জনৈক বাঙালি কবি বিদেশে গিয়ে মজার ছলে দোকানদার-কে বলেছিলেন- "২টো কলা দিন"! বাংলায় কাজ হয়েছিল এবং জিনিসটিও এসেছিল; কিন্তু সেটা 'কলা' নয়, (কোকা) 'কোলা'!

    ReplyDelete
    Replies
    1. কী সাংঘাতিক, এটা একবার করে দেখতে হচ্ছে তো।

      Delete

Post a Comment