জেঠু, গোবিন্দ আর পুঁটের গল্প



লাক্ষাদ্বীপ-জেঠুকে আমরা সবাই জেঠু বলে ডাকতাম বটে, কিন্তু দাদু ডাকলেও খুব বেমানান কিছু হত না। বছর দুয়েক আগে, প্রায় একশো বছর কমপ্লিট করে জেঠু মারা গেছেন। যৌবনে লাক্ষাদ্বীপে চাকরি করতে গিয়েছিলেন, সেখানেই সংসার পেতে, ছেলেমেয়ে মানুষ করে, শেষকালে আমাদের বাড়ির উল্টোদিকে এসে ঘাঁটি গেড়েছিলেন। জেঠুর সঙ্গে এসেছিলেন জেঠিমা, তাঁদের মেয়ে, মেয়ের জামাই, ছোটছেলে, ছোট ছেলের বউ। মেয়ে উত্তরপাড়ায় ফ্ল্যাট কিনে সংসার পাতল, ছোটছেলে বউসহ এবাড়িতেই থাকল। জেঠুর বড়ছেলে লাক্ষাদ্বীপের মেয়ে বিয়ে করে ওখানেই সেট্‌ল্‌ করেছে, তার আর এদিকে আসার আশা নেই।

কোনও বছর পুজোয় বাড়িতে থাকলে জেঠুজেঠিমাকে বিজয়ার প্রণাম করতে যেতাম। জেঠুর তখন বয়স নব্বই পেরিয়ে গেছে। শরীর গেছে, মাথারও যেতে বিশেষ বাকি নেই। প্রণাম সেরে, দাঁতভাঙা নাড়ু চুষতে চুষতে একঘণ্টা ধরে তাঁর শরীরের বিভিন্ন জায়গার বিভিন্ন রকম ব্যথাবেদনার বিবরণ শুনতে হত। পুরোটাই যে বাধ্যবাধকতা তা নয়। ব্যথার কথা শেষ হলে জেঠু ঝুলি থেকে আরও নানারকম ইন্টারেস্টিং গল্প বের করতেন। তাদেরই অপেক্ষায় বসে বসে টাইমপাস করা আর কি।   

‘তোমরা তো সব ছেড়েছুড়ে চলে গেলে, এদিকে পাড়ায় যে কী সব হচ্ছে সে তো খবর রাখ না।’

এই তো। ‘কী হচ্ছে জেঠু?’

জেঠু হুইলচেয়ার থেকে শরীরের ঊর্ধ্বাংশ অতি কষ্টে আমার দিকে ঝোঁকানোর চেষ্টা করতেন। বুঝতাম, কানে কানে কিছু বলার বলার চেষ্টা করছেন। আমি চেয়ারের পায়ার ওপর ভর দিয়ে কান এগিয়ে দিতাম জেঠুর মুখের কাছে।

‘আমাদের রমণী চক্কোত্তি আর ঘোষগিন্নি, আরে ওই যে তোমাদের পাশের বাড়ির ঘোষগিন্নি...’

‘হ্যাঁ হ্যাঁ, বুঝেছি বুঝেছি।’

‘প্রেম করছেন।’ জেঠুর মুখ অভক্তিতে কুঁচকে যেত।

অট্টহাস্যের ছিপিটা পেট থেকে ছিটকে বের হওয়ার আগেই আমি টপ্‌ করে নাড়ুটা মুখে পুরে দিতাম।

‘রোজ সকালে প্ল্যান করে একসঙ্গে মর্নিংওয়াক করতে বেরোয়। ভাবে কেউ বুঝি টের পায় না। আমি তো বারান্দায় বসে বসে সব দেখি।’

আমি প্রাণপণে নাড়ু চুষতাম। রমণীবাবু হচ্ছেন পাড়ার আরেকজন প্রবীণ জ্যাঠামশাই। আমাদের জেঠুর থেকে বছর বিশেকের বেশি ছোট হবেন না। আর ঘোষগিন্নিরও বয়স ষাটের ওপারেই হবে। নিয়মিত ফেশিয়াল করে গালের চামড়া টানটান রেখেছেন।

আমাকে ভুল বুঝবেন না, বুড়ো হলেই যে প্রেম হতে পারবে না, এরকম কোনও ধারণা আমার নেই। বরং বুড়োবয়সেই যে প্রেম জমে ভালো সে আমার বিলক্ষণ জানা আছে। কিন্তু তাও কেন আমাকে অত কষ্টে হাসি চাপতে হত সেটা বুঝতে গেলে আপনাদের আমাদের পাড়ায় গিয়ে শ্রী রমণী চক্রবর্তী এবং শ্রীমতী ঘোষকে (ঘোষজেঠিমার ভালো নামটা কাল সকালে ঠাকুমাকে ফোন করে জিজ্ঞাসা করব) একবার স্বচক্ষে দেখতে হবে।

বুড়ো বয়সে তো দূর অস্ত, আমি বিশ্বাস করি না এঁরা কেউ নিজেদের টিনএজেও প্রেম করেছেন বা প্রেমে পড়েছেন। রমণীমশাই নিজের থেকে গরিব লোক দেখা মাত্র যেরকম নির্বিবাদে তুইতোকারিতে নেমে আসেন আর ঘোষজেঠিমা যেমন তেজে ‘ওরে পাম্পটা চালা রেএএএ’ হাঁক পেড়ে জীবনের প্রত্যেকটা দিন শুরু করেন, তাতে প্রেমট্রেম ইত্যাদি সুকোমল ব্যাপারে তাঁদের কারোরই কখনও কোনও উৎসাহ ছিল বলে আমি বিশ্বাস করি না।

কিন্তু লাক্ষাদ্বীপ-জেঠু করতেন। তিনি মনেপ্রাণে জানতেন, রোজ সকালে এই যে ঘোষজেঠিমা আর রমণীবাবু মর্নিংওয়াক করতে বেরিয়ে তাঁর বারান্দার সামনে একে অপরকে ক্রস করছেন, একে অপরের দিকে তাকিয়ে সৌজন্যবোধে টুক্‌ করে মাথা হেলাচ্ছেন, এ সবের পেছনে রয়েছে অবৈধ অসৈরন প্রেমের নির্লজ্জ বেহায়াপনা।

‘যাকগে, যে যা খুশি করছে করুক, আমার আর কদ্দিন।’ দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে দাদু হুইলচেয়ারের পিঠে এলিয়ে পড়তেন।

‘ছেলের বউ তো অলরেডি খেতে দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে...”

এই রে। আমি লাফ মেরে উঠে পড়তাম। এইবার জেঠুর প্রলাপ আমোদ ছাড়িয়ে গোলমেলে এলাকায় ঢুকে পড়েছে। ‘আচ্ছা জেঠু আসি?’ বলে গলা তুলে ‘জেঠি এলাম, বৌদি এলাম’ ঘোষণা করে গেট খুলে পগারপার।

জেঠু যাঁকেই সামনে পেতেন বলতেন। খবরের কাগজওয়ালা, দুধওয়ালা, ডাক্তারবাবু, কাজের মাসি, মিটার চেক করতে আসা ইলেকট্রিক অফিসের কর্মচারী, ফিজিওথেরাপিস্ট গোবিন্দ।

ছেলের বউ খেতে দেয় না, ছেলে কথা বলে না। আমার পেনশনের টাকা তো আমি চোখেই দেখতে পাই না, সব ওরা নিয়ে নেয়। বাঁচলাম কি মরলাম খোঁজ নেওয়ার বেলায় মেয়ের দেখা নেই, খালি বলে বাড়ি আমার নামে লিখে দাও।  

আর এমন সিরিয়াস মুখ করে বলতেন যে বিশ্বাস না করার কথা কারওর মাথাতেই আসবে না। বিশেষ করে যারা রমণীবাবু-ঘোষগিন্নির প্রেমের উপাখ্যান না শুনেছে তাদের মাথায় তো আসবেই না। আমি নিশ্চিত অনেকেই জেঠুর কথা অক্ষরে অক্ষরে বিশ্বাস করত। নিজেদের মধ্যে জেঠুর ছেলেমেয়ের পিণ্ডি চটকাত। বলত, সারাজীবন নিজের সমস্ত সাধ-আহ্লাদ বিসর্জন দিয়ে, গলায় রক্ত তুলে, ছেলেমেয়ে মানুষ করার প্রতিদান তো এই।   

জেঠু যখন মারা গেলেন তখন আড়ালেআবডালে দু-একজন বলেওছিল, মরে বেঁচেছেন। সংসারে যা অবহেলা সয়েছেন। আমরা যারা রমণীবাবু-ঘোষগিন্নির গল্পটা খোদ জেঠুর মুখ থেকে শুনেছি, তারা ফিসফিসানিগুলো শুনে শিহরিত হয়েছিলাম। দু’হাত কপালে ঠেকিয়ে বলেছিলাম, কি ভাগ্যিস জেঠু সেলিব্রিটি নন। তাহলে আর দেখতে হত না।

যেমন ধরা যাক, জেঠু যদি এককালের নামকরা ফুটবলার হতেন। বিস্মৃত, বঞ্চিত, ইন্ডিয়ান নির্বাচকদের অ্যান্টি-বাঙালি ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে সারাজীবন ক্লাবস্তরে খেলে যাওয়া ফুটবলার নন, সারা ভারতের ফুটবলপ্রেমীদের মন জয় করা ফুটবলার। নস্ট্যালজিয়া কলামে যদি নিয়মিত কোনও না কোনও কেউকেটার বকলমে জেঠু-সংক্রান্ত স্মৃতির চর্বিতচর্বণ ছাপা হয়ে বেরত, তাহলে জেঠু মারা গেলে পর এই ফিসফিসানিগুলো কী চেহারা নিত?

উদাহরণের খাতিরে ফিজিওথেরাপিস্ট গোবিন্দর কথাই ধরা যাক। কেরিয়ারের একমাত্র সেলিব্রিটি ক্লায়েন্ট মারা যেতে গোবিন্দ দুঃখে একেবারে কাতর হয়ে পড়ত নিশ্চয়। মনের দুঃখ কাকে বলবে ভাবতে ভাবতে গোবিন্দের মাথায় হঠাৎ ঝিলিক খেলে যেত। কেন ওপাড়ার পুঁটেই তো আছে।

পুঁটের গল্পটাও ইন্টারেস্টিং। পটল দিয়ে শিঙিমাছের ঝোল খাওয়া মার্কা চেহারা, গোঁফের রেখা বেরোনর আগে থেকেই পাড়ার দেওয়ালপত্রিকায় তেড়ে বিরহের কবিতা লিখত। গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে ফ্যা ফ্যা করে ঘুরে বেড়াচ্ছিল, হঠাৎ একদিন শুনেছিলাম পুঁটে চাকরি পেয়েছে। উৎফুল্ল প্রকাশনীতে।

পাড়ার অনেকেরই চোয়াল মাটিতে ঠেকে গিয়েছিল। করেছে কি ছোকরা? দেওয়ালপত্রিকায় বিরহের কবিতা লিখে লিখে হাত পাকিয়ে সোজা উৎফুল্ল? পশ্চিমবাংলার সংস্কৃতির যাবতীয় ভাতকাপড়ের দায়িত্ব যারা নিজেদের কাঁধে বহন করে নিয়ে চলেছে, সেই উৎফুল্লে? প্রাথমিক শকের ভাবটা কেটে গেলে কেউ কেউ ব্যাপারটা সম্বন্ধে তলিয়ে খোঁজ নিয়েছিল। মুখ বেঁকিয়ে বলেছিল, আরে উৎফুল্ল মানে শনিবার শনিবার উৎফুল্লের যে সাপ্লিমেন্টটা বেরয়, যাতে যত রাজ্যের বানিয়ে বানিয়ে লেখা ব্যক্তিগত চিঠি আর ‘কান মুলছি/মুলতে চাই’ কলামগুলো ছাপে, পুঁটে চাকরি পেয়েছে সেই ডিপার্টমেন্টে।

সে নিন্দুকেরা যে ভাবেই ব্যাপারটা দেখুক না কেন, আমরা পুঁটের উন্নতিতে খুশিই হয়েছিলাম। বেশির ভাগ সময়েই লেখার নিচে বাই-লাইন থাকত না, কিন্তু আমরা কাগজ হাতে পেয়েই এ সপ্তাহে কোনটা পুঁটের লেখা সেটা চিহ্নিত করার খেলা খেলতাম নিজেদের মধ্যে। বিরহ নিয়ে কথাবার্তা থাকলে সাধারণত ধরে নেওয়া হত যে ওটাই পুঁটে লিখেছে। আফটার অল, ছোটবেলা থেকে বিরহ পুঁটের স্পেশালিটি।

গোবিন্দর সমস্যার এদিকে সমাধান হয়ে গেছে। জেঠুর সৎকারের পরদিন সকালেই এক নন-সেলিব্রিটি ক্লায়েন্টের অ্যাপয়েন্টমেন্ট ক্যান্সেল করে বাইক ভটভটিয়ে সে হাজির হল পুঁটের বাড়িতে। পুঁটে তখন তেল মেখে গামছা পরে বারান্দায় বসে উৎফুল্লের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রকাশনীর দৈনিকে চোখ বোলাচ্ছিল, ওপাড়ার ঘুঁটে এ দৈনিকে চাকরি পাওয়ার পর থেকে পুঁটে বাড়িতে এটা রাখতে শুরু করেছে। এমন সময় অতিথি দেখে পুঁটের মেজাজ গরম হয়ে গেল। অফিসটাইমে কারা যে লোকের বাড়িতে খেজুর করতে আসে, ইনসেনসিটিভ কোথাকার। কিন্তু মুখের ভাব মনে গোপন করে, যথাসাধ্য পরিশীলিত কণ্ঠে পুঁটে জিজ্ঞাসা করল, ‘আরে গোবিন্দ যে? কী ব্যাপার? কী চলছে?’

গোবিন্দ চাবি ঘুরিয়ে বাইক থেকে নেমে গটগটিয়ে বারান্দায় উঠে এল। পুঁটে কাগজ খামচে ধরে অজান্তেই দু’পা পিছিয়ে গেছে। ছোটবেলা থেকেই গোবিন্দর ব্যায়ামে ঝোঁক, অতর্কিতে মুভ করলে পুঁটের পক্ষে কিছু করা সম্ভব হবে না। গোবিন্দ মুখের পেশী কংক্রিটের মতো জমাট রেখে বলল, ‘স্কুপ আছে।’

হোয়াট? পুঁটের এবার হাসি পেয়ে গেছে। এ'রকম পাবলিকের কথা সহকর্মীদের কাছে পুঁটে শুনেছিল বটে। রাইটার দেখলেই নিজের জীবনের প্লট শোনাতে চায়, জার্নালিস্ট দেখলেই স্কুপের সন্ধান দিতে চায়। তবে ওর কাছেও যে লোকে স্কুপ দিতে আসতে শুরু করেছে এইটা ভেবে পুঁটের একটু একটু গর্বও হল।

গোবিন্দ পুঁটের তরফ থেকে কোনও প্রতিক্রিয়ার অপেক্ষা করেই গড়গড়িয়ে নিজের স্কুপ বলে গেল। পুঁটে মুখ হাঁ করে পুরোটা শুনল, তারপর ঘুঁটের কাগজ কুচিমুচি করে গোল্লা পাকিয়ে আকাশের দিকে ছুঁড়ে দিয়ে গোবিন্দকে পাঁজরে টেনে নিল।

‘স্কুপ বলছ কী বস্‌, কেচ্ছা বল, কেচ্ছা! বস বস, কী খাবে বল, ঠাণ্ডা গরম?...আরে তা বললে কী করে হবে, এতদিন পর এলে। এই বুঁচি, চায়ের জল বসা তো...’

তারপর তো শুধু সময়ের অপেক্ষা। বাকি সব স্টোরি থামিয়ে রেখে কাগজশুদ্ধু লোক পুঁটের স্টোরির পেছনে পড়ল। গোবিন্দর ইন্টারভিউ নিল পুঁটে স্বয়ং। ‘আমার তো চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া আর কিছু করার ছিল না, হাজার হোক আমি বাইরের লোক। তবু, অত বড় একটা লোক শেষজীবনে এত কষ্ট পেয়ে গেলেন...’ বলতে বলতে গোবিন্দর গলা বুজে এল। দু’দিনের ভেতর পনেরশ শব্দের সে ইন্টারভিউ ছাপা হল, গোবিন্দর পাসপোর্ট সাইজ ছবি সহযোগে। পুঁটের বস পুঁটেকে ঘরে ডেকে পিঠ চাপড়ে দিলেন। ডিপার্টমেন্টে রাতারাতি পুঁটের গণ্ডাগণ্ডা শত্রু সৃষ্টি হল।

সেই সব শত্রুদের কেউ কেউ প্রমাণের প্রসঙ্গ তুলেছিল। যাদের সম্পর্কে কথাগুলো বলা হচ্ছে, তারা কেউই তো কাল্পনিক নয়। সকলেই রক্তমাংসের মানুষ, কাদামাটির পৃথিবীতে হেঁটেচলে বেড়ান। এই টুইটারের জমানায় তাদের ট্রেস করতে কতক্ষণ? তার ওপর তারা আবার সেলিব্রিটি-সন্তান। খ্যাতির ছিটেফোঁটা পাননি, কিন্তু তার বিড়ম্বনাটুকু সয়েছেন ষোলআনা।

পুঁটের বস্‌ হাত নেড়ে উড়িয়ে দিলেন। বলেছেন, কেউ কিছু বললে বলবে, ‘পত্রিকার পক্ষ থেকে বার বার জেঠুর ছেলেমেয়েদের এসএমএস করেও কোনও উত্তর পাওয়া যায়নি।’ পুঁটে বাড়ি ফিরে, ‘কাঁকড়ার জাত কি আর সাধে বলে বাঙালিকে?’ বলে সমস্ত পরিশীলন হাওয়ায় উড়িয়ে দিয়ে একটা চার অক্ষরের গালি দিল। বুঁচি ‘আঃ দাদা’ বলে ঝামটে উঠল, কিন্তু পুঁটে সেসব গায়ে না মেখে দাঁত বার করে হাসল। আজ ওর মেজাজ খুশ।

গোবিন্দও খুশি। পেপারে কোনওদিন ওর ছবি ছাপবে কে ভেবেছিল, অ্যাঁ? হাফপ্যান্ট-বেলার বন্ধুরা, যারা সব সাকসেসফুল হয়ে অ্যামেরিকায় ডেরা বেঁধেছে, যারা এতদিন ওর ফিজিওথেরাপির কথা শুনে জিভ টাকরায় ঠেকিয়ে চুকচুক করেছে আর বলেছে, ‘ছেলেটার মধ্যে কিন্তু পার্টস্‌ ছিল’, তাদের সারাজীবনে ক’টা ইন্টারভিউ ছাপা হবে কাগজে, তাও আবার উৎফুল্লে, সেটাই গোবিন্দ দেখবে এবার।

জেঠুর ছেলেমেয়েদের কী হল? হাতিঘোড়া কিছুই হল না। রাস্তাঘাটে ক’দিন পাড়াপড়শি এড়িয়ে চলল, বাজারের সবজিওয়ালা ক’দিন তিরিক্ষি ব্যবহার করল, আলুপটলের দাম কমাল না, ইরিটেটিং আত্মীয়স্বজনরা গোঁসা করে ফোন করলেন না (সেটা অবশ্য মন্দের বদলে ভালোই হল)।

আই মিন, মন্দের বদলে ভালোই হত। সবটাই তো কল্পনা। সেলিব্রিটি ফুটবলার হওয়া তো দূরের কথা, লাক্ষাদ্বীপ-জেঠু তো ফুটবলে লাথিই মারেননি কখনও, গোবিন্দর ছবিও কাগজে ছাপা হয়নি, পুঁটে এখনও ডিপার্টমেন্টের সবার সঙ্গে রুটিআলুভাজা টিফিন ভাগ করে খাচ্ছে রোজরোজ।

Comments

  1. Kya baat! Jethur bishoye oi khoborta pore amaro birokti boi kichhu hoyni. Etoi jodi loker mathabyatha, ar etoi jodi jethur bonchona, tahole aage keu kichhu koreni kano? Lekhata chhapar jonyo mrityu obdhi opekkha kano korte holo? Utfullo ta din din gollay jachche. Shudhu promaanbiheen kechchhakahinitey kagoj bhoray. Jottosob.

    ReplyDelete
    Replies
    1. সিরিয়াসলি বিম্ববতী, উৎফুল্লের হাল দেখে আমি দিনদিন নিরুৎফুল্ল হয়ে পড়ছি।

      Delete
  2. লেখাটা অনবদ্য। সকাল দেখে বুঝতেই পারিনি কি আসতে চলেছে। তবে ঘটনাটার অতি সরলীকরন হয়ে গেল না একটু? আমি যদিও আদার ব্যাপারী, কি সত্যি কি মিথ্যে সেটা জানিনা তবু এসব কথা আগে পাঁচকান না করার একটা কারন হতে পারে, উনি লাক্ষাদ্বীপের জেঠু ছিলেন না, সেলিব্রেটি ছিলেন। ঐ 'প্রমাণের অভাব'-এর জন্যই তাঁর জীবদ্দশাতে লেবু কচলালে হয়ত হিতে বিপরীত হতে পারত। মানুষটা আরও কষ্টের সম্মুখীন হতেন হয়ত। নিজেই চাইতেন না সেটা। তবে সবই 'হয়ত', সত্যিটা যে কি আমরা কেউই বোধহয় কোনোদিন জানতে পারব না। সত্যি জানতেই হবে এমনও কোন কথা নেই। যেহেতু এখন উনি এইসব কেচ্ছার ঊর্ধে, তাই এইসব নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি না করাটাই শোভন হত, বিশেষ করে জীবদ্দশায় যখন কিছু করা যায়নি বা বলা ভাল, করা যেত না। আমার মনে হয় উনিও এইসব দেখে কষ্টই পেতেন। মরেও শান্তি পেলেন না বোধহয়।

    ReplyDelete
    Replies
    1. আমার লেখাটা তো সরলীকরণ বটেই আবির, কিন্তু পুঁটে আর গোবিন্দের লেখাটা সরলীকরণও নয়, ঝোপ বুঝে কোপ মারার চেষ্টা। তোমার একটা কথার উত্তরে আমার একটা কথা বলার আছে। জেঠু সেলিব্রিটি বলে জীবদ্দশায় লেবু কচলালে গেল না কি না জানি না, কিন্তু চিতার আগুন নিভতে না নিভতে লাফিয়ে পড়ে লেবু কচলানোর একমাত্র কারণ হচ্ছে যে জেঠু সেলিব্রিটি।

      Delete
    2. আজকে যার জন্মদিন সেই সুকুমার রায়-এর একটা কবিতায় আছে না - উঠ্‌ছে হাসি ভস্‌ভসিয়ে সোডার মতন পেট থেকে। সেইরকমই উৎফুল্ল বাবুদের পেট থেকে দরদ সোডার মত ভসভসিয়ে উঠেছে আরকি। আবার সুকুমার রায় - হযবরল-র সেই উকিল কুমীরের মত চোখের মধ্যে নখ দিয়ে খিমচিয়ে পাঁচ ছয় ফোঁটা জল বার করেছে। তারপর হুলিয়ে কেচ্ছাকীর্তন। পাবলিক খাবে, এই কথাটা যদি বুঝতে পারে, তাহলে নিজের পরিবারকেই এরা ছাড়বে না, সেলিব্রেটি জেঠু তো কোন ছাড়। এই কর্মটি করে কার ভালো হলো কে জানে। বাঙালী অবশ্য মানুষ মরে-টরে গেলেও ছাড়ান দেয় না, রবীন্দ্রনাথকেই দেয়নি, জেঠু তো নস্যি। শুনেছি শেষযাত্রায় দাদুর চুল-দাঁড়ি উপড়ে নিয়েছিল। জেঠুর না জানি কি উপড়ে নিত।

      Delete
  3. ইয়াল্লা, করেছেন কি? ইদানীং এক মহারথীর অবসরগ্রহণের প্রসঙ্গ খুব চলছে... তিনি লেগস্পিন করতে পারেন, ইনসুইং করতে পারেন, দুর্দান্ত ফিল্ডিং করতে পারেন, আর পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যাটসম্যানের মত ব্যাট করতে পারেন।
    আপনিও দেখি ভ্রমণকাহিনী লিখতে পারেন, রম্যরচনা লিখতে পারেন, ক্যুইজ লিখতে পারেন, সেন্টিমেন্টাল লেখা লিখতে পারেন, মাঝে মাঝে ইয়ে, বোরিং লেখাও লিখতে পারেন। নাঃ, সত্যিই আপনার জ্ঞানপীঠ ঠেকায় কে?

    ReplyDelete
    Replies
    1. ভাগ্যিস বোরিং-লেখাগুলোর কথা উল্লেখ করলেন দেবাশিস, না হলে ভাবতাম আপনি মিছিমিছি বানিয়ে বানিয়ে আমার প্রশংসা করছেন। একটুও বিশ্বাস করতাম না। কিন্তু এখন করছি। আর যথারীতি নুয়ে পড়ে থ্যাংকইউ-ও বলছি। সিরিয়াসলি, থ্যাংক ইউ।

      Delete
  4. asambhab bhalo lekha :) just anabadyo ...Lakshadweep er dadu toh puro amar dida :)

    ReplyDelete
    Replies
    1. থ্যাংক ইউ তিন্নি, জেঠুর সঙ্গে আমাদের দিদার মিল পেয়ে আমিও যৎপরোনাস্তি চমৎকৃত।

      Delete
  5. ha ha ha, darun lekha. ashe pashe eirakom onek lokjon ghure beran... :-D.

    ReplyDelete
    Replies
    1. সে তো বেড়ানই ইচ্ছাডানা।

      Delete
  6. বাঃ! বেশ লিখেছেন তো! আমি তো পড়তে পড়তে সম্প্রতি মারা যাওয়া বাঙালি বৃদ্ধ সেলেব্রিটিদের কারুর সঙ্গে মিল পাই কিনা দেখা শুরু করে দিয়েছিলাম।

    ReplyDelete
    Replies
    1. থ্যাংক ইউ থ্যাংক ইউ।

      Delete
  7. দারুন হয়েছে তবে উৎফুল্ল টা ধরতে পারলেও বৃদ্ধ দাদু কে চিনতে পারলাম না ...অবশ্য তাতে লেখাটা একি রকম ভালো রয়ে গাছে :)

    ReplyDelete
    Replies
    1. থ্যাংক ইউ, থ্যাংক ইউ।

      Delete

Post a Comment