একটি মোগলাই সকাল



দিল্লিতে অনেক কিছু হয়, হতেই থাকে। নাট্যোৎসব, সেমিনার, আলোচনাসভা, বুক লঞ্চ, মার্গসঙ্গীতের সান্ধ্যসভা। বেশিরভাগ অনুষ্ঠানেই আমাদের যাওয়া হয় না। কারণ এক, কুঁড়েমি; দুই, সময়ের অভাব; তিন, যাতায়াতের অসুবিধে। অনুষ্ঠানগুলো শুরু হয় সব রাত সাতটার পর, শেষ হতে হতে গভীর রাত, ফেরার অটো পাওয়া যায় না। কাজেই বাদ।

তাই মাসের শুরুর দিকে একদিন যখন কাগজের চারের পাতা খুলে দেখি দিল্লিতে লিট্যারেরি ফেস্টের অংশ হিসেবে মাইলখানেক লম্বা অনুষ্ঠানসূচির বিজ্ঞাপন, আমি বেশি উৎসাহ দেখাইনি। ওপর ওপর চোখ বোলাচ্ছিলাম। যা ভেবেছিলাম তাই। বেশিরভাগই হবে রাতে কিংবা অটো-আনফ্রেন্ডলি জায়গায়। দীর্ঘশ্বাস ফেলতে না ফেলতেই চমক। হুমায়ুন’স টুম্ব ওয়াক। তাও আবার শনিবার। তাও আবার সকাল দশটায়। এতদিন ধরে হুমায়ুনের সমাধিমিনারে যে মেরামতি এবং সংরক্ষণের কাজ চলছিল (এখনও চলছে) সে বিষয়ে নানা কথা বলবেন বিশেষজ্ঞ, আর সে সব শুনতে শুনতে বিশেষজ্ঞের পেছন পেছন হাঁটবেন শ্রোতারা। বিনামূল্যের এই ওয়াকের জায়গা আগে এলে আগে পাবেন ভিত্তিতে বাঁটোয়ারা হবে প্রথম পঞ্চাশজনের মধ্যে।

আমি সব কাজ ফেলে ফোন নিয়ে পড়লাম। বার দশেক ‘আপকে ডায়াল কিয়া গয়া নম্বর ইসি ওয়ক্ত ভ্যাস্ত হ্যায়’ শোনার পর একটি মিষ্টি কিন্তু ভ্যাস্ত গলার ‘হ্যালো’ শোনা গেল। বললাম ওয়াকের জন্য আমার আর আমার হাসব্যান্ডের রেজিস্ট্রেশন করাতে চাই। আমার নাম অমুক বন্দ্যোপাধ্যায় আর আমার বরের নাম তমুক...

‘...বন্দ্যোপাধ্যায়। গটচা।’ বলেই মহিলা খট করে ফোন কেটে দিচ্ছিলেন, কোনওমতে তাঁকে থামিয়ে ঠিক নাম লেখানো হল। নাম লিখিয়ে খুশি হয়ে আমরা শনিবারের অপেক্ষা করতে লাগলাম।


যথাসময়ে শনিবার এসে পড়ল। ইদানীং দিল্লির ওয়েদারের মাথামুণ্ডু বোঝা দায় হয়ে উঠেছে। কোনও কোনও দিন সকাল দশটায় আকাশ জয়সলমিরের মতো ঝকঝকে তো কোনও দিন আকাশের চেহারা দেখে মনে হচ্ছে যেন চেরাপুঞ্জিতে রয়েছি। নির্দিষ্ট শনিবার ছিল চেরাপুঞ্জি আর জয়সলমিরের মাঝামাঝি একটা দিন। চারদিকে থরে থরে কুয়াশা, কিন্তু সে কুয়াশার জাত পাতলা। অদূর ভবিষ্যতে সূর্যের আশা আছে

জার্মানি থেকে ফিরে আমার পাংচুয়্যালিটির সত্যিই অনেক উন্নতি হয়েছে। আমাদের অটো যখন টুম্বের গেটের সামনে পৌঁছল তখনও চারধার ভোঁভাঁ খালি। খালি দুচারটে কালোকোলো কুকুরছানা লাফালাফি করে বেড়াচ্ছে। ইতিউতি দু-চারজন প্রাতর্ভ্রমনার্থী, আর দূরে কুয়াশার মধ্যে ক্রিকেট ম্যাচ।


কিছুক্ষণের মধ্যেই গুটিগুটি করে এক-দুজন লোক এসে উপস্থিত হলেন। দেখেই বোঝা যাচ্ছিল যে এঁরা সাধারণ দর্শনার্থী নন, এঁরা ওয়াকে এসেছেন। বেশ ‘লিট-ফেস্ট লিট-ফেস্ট’ চেহারা, হ্যান্ডলুমের কুর্তা, ফ্যাবইন্ডিয়ার জহর কোট, চোখে বুদ্ধিজীবী চশমা আর মাথায় বুদ্ধিজীবী ছাঁট। ঠোঁটে পোলাইট হাসি, মুখে পরিশীলিত ইংরিজি। কেউই রাস্তার কুকুর দেখলে নিজেদের সামলাতে পারেন না, উবু হয়ে আদর করতে বসে যান।


উনিশশো সাতানব্বই সালে, ভারতের স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে, হিজ হাইনেস দ্য আগা খান, হুমায়ুনের সমাধি এবং সমাধিসংলগ্ন বাগান সারিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দেন। পর্বতপ্রমাণ এই দায়িত্ব সম্মিলিতভাবে নেয় আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া আর আগা খান ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্ক। আগা খান ডেভেলপমেন্টের তরফ থেকে প্রোজেক্ট ডিরেক্টর রতিশ নন্দা ছিলেন সেদিন আমাদের গাইড-কাম-শিক্ষক।


কাঁটায় কাঁটায় দশটা বেজে পাঁচে আমাদের হন্টন শুরু হল। গলায় ক্যামেরা আর বুকে অসীম উত্তেজনা নিয়ে আমরা রতিশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে হনহনিয়ে হাফ-হেঁটে হাফ-ছুটে চললাম। উত্তেজনাটা যত না নতুন জিনিস দেখার, তার থেকেও বেশি দেখা জিনিসকে নতুন ভাবে দেখার। হুমায়ুন’স টুম্ব হচ্ছে দিল্লির সেই দর্শনীয় জায়গা যেটা আমি আর অর্চিষ্মান সবথেকে বেশিবার দর্শন করতে গেছি। তার মুখ্য কারণ দুজনেরই অফিস থেকে জায়গাটার নৈকট্য, আর গৌণ কারণ জায়গাটার সৌন্দর্য। জমজমাট শহরের ঠিক মধ্যিখানে এতবড় একটা যত্নে সাজানো বাগান, বাগানের মধ্যে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে লালসাদাপাথরের তৈরি প্রকাণ্ড প্রাসাদ। হুমায়ুন’স টুম্বে আমরা একা একা গেছি, দোকা দোকা গেছি, বাড়ির লোক বেড়াতে এলে তাঁদের নিয়ে গেছি। কিন্তু সে সবই ছিল আনগাইডেড দর্শন। এবারের দর্শন স-গাইড। তার থেকেও বড় কথা, এবার আমরা এই ঐতিহাসিক মিনার দেখব, ইতিহাসের দৃষ্টিকোণ থেকে নয়, এর স্থাপত্য এবং সে স্থাপত্যের সংরক্ষণের দৃষ্টিকোণ থেকে।


হুমায়ুনের সমাধির শুরুটা কিন্তু হুমায়ুনকে দিয়ে নয়। শুরু হজরত নিজামুদ্দিন অউলিয়া নামের এক সুফি সন্তকে দিয়ে, যিনি ভালোবাসা আর সহিষ্ণুতার শিক্ষা দিয়ে বেড়াতেন দিল্লির পথে পথে। চোদ্দশো শতকের গোড়ার দিকে তাঁকে সমাধিস্থ করা হয় কাছের হজরত নিজামুদ্দিন বস্তিতে। বলাই বাহুল্য তখন বস্তির নাম অন্য ছিল। সুফি সাধুর সমাধি হজরত নিজামুদ্দিন দরগা নামে বিখ্যাত হয়। দরগা ঘিরে তৈরি হয় একটা জগৎ। সুফি কাওয়ালি আর কাবাবের মেলবন্ধনে সে জগতের জুড়ি দিল্লি শহরে মেলা ভার


কাবাবের কথা থাক। যেহেতু সাধুসন্তের সমাধির কাছে সমাধিস্থ হওয়া পুণ্যের ব্যাপার, তাই হজরত নিজামুদ্দিন দরগার চারপাশে দেখতে দেখতে আরও সমাধিরা গজিয়ে উঠল। রতিশ সেই কথাটাই বোঝাতে চাইছিলেন আমাদের। আমরা যে ব্যাপারটাকে হুমায়ুন’স টুম্ব বলে চিনি, সেটা আসলে আশেপাশের প্রায় ষোলটি ভিন্ন ভিন্ন সমাধির সমন্বয়। যাঁদের সমাধি, তাঁদের মধ্যে হুমায়ুন সবথেকে বিখ্যাত ছিলেন, তাঁর সমাধির সাইজও বাকি সব সমাধির থেকে বড়, কাজেই গোটা জায়গাটাই হুমায়ুনের সমাধি নামে পরিচিত হয়েছে। কী একচোখোমি বলুন দেখি?

ভাগ্যের কথা, সংরক্ষণের সময় কর্তৃপক্ষ এ রকম একচোখোমি করেননি, সম্রাটের সমাধির সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা আশেপাশের বাকি সমাধিদেরও যত্ন নিয়েছেন। ইসা খান (শেরশাহের দরবারের এক আফগান অভিজাত), বু হালিমা (অনেকে বলেন ইনি ছিলেন আকবরের ধাত্রী), আফসারওয়ালা (আফসার অর্থাৎ অফিসার। আকবরের অফিসের এক হোমরাচোমরা অফিসারের সমাধি আছে এখানে) সমাধি। এখানেই শেষশয্যায় শুয়ে আছেন রাজকুমার দারা শিকো। সারানো হয়েছে ‘হুমায়ুন’স টুম্ব’-এর চৌহদ্দির সামান্য দূরের বাতাশেওয়ালা মহল।



হুমায়ুন’স টুম্ব (অর্থাৎ কি না, হুমায়ুন এবং আরও অন্তত পনেরো জনের টুম্ব---কিন্তু বলতে সুবিধের জন্য আমরা গোটা জায়গাটাকে হুমায়ুনের টুম্ব বলেই চালাব) বানানো হয়েছিল পনেরোশো ষাট সালে। সে সময় এই রকম দেখতে সমাধি, সারা ইসলামিক দুনিয়ায় আর একটিও ছিল না। রতিশ বলছিলেন, অনেক কথা শোনা যায় যে হুমায়ুনের সমাধি আসলে ইরানের অমুক সমাধির আদলে তৈরি, পারস্যের তমুক সমাধির ছায়া অবলম্বনে বানানো---কিন্তু সেগুলো স্রেফ গুজব। সমাধি সংরক্ষণের কাজ শুরু হওয়ার পর এ নিয়ে তিনি বিস্তর পড়াশুনো করেছেন, পার্সিয়ান স্থাপত্যের গোড়াঘর, অধুনা ইরান ও তার আশেপাশের জায়গায় সশরীরে গিয়ে সরেজমিনে তদন্ত করে দেখেছেন, হুমায়ুনের সমাধি এক এবং একমেবাদ্বিতীয়ম।



হাঁটতে হাঁটতে আর রতিশের কথা শুনতে শুনতে যেটা পরিষ্কার হয়ে গেল যে যেকোনও গভীর এবং জটিল কাজের মতোই সংরক্ষণের কাজটাও আসলে বহুমাত্রিক। মাল্টিডিসিপ্লিনারি। সংরক্ষণ মানে শুধু ঝাড়পোঁছ বা ঠুকঠাক নয়, সংরক্ষণ মানে একটা সময়কে বুঝে, সে সময়ের সমাজ অর্থনীতি ধর্ম সংস্কৃতিকে অধ্যয়ন করে, সে সময়ের বিলুপ্ত রূপটাকে আবার জটিল ইঞ্জিনিয়ারিঙের মাপজোক কষে ভগ্নস্তুপের ওপর ফুটিয়ে তোলা। দরকার সেই সময়ের মানুষগুলোকে বোঝাও। কেন তখনকার সমস্ত মিনার ঘিরে চতুষ্কোণ বা অষ্টভুজ বাগানের ছড়াছড়ি? শুধু কি দেখতে ভালো বলে? নাকি রক্তের সম্পর্কহীন এক শহরে চিরদিনের মতো ছেড়ে আসা। শৈশবের স্মৃতি নতুন করে পুঁতে দেওয়ার চেষ্টা? পারস্যের পথে পথে এমন কত সাজানো বাগান যে থাকত।


রতিশ বললেন, হুমায়ুন’স টুম্বের মতো এই রকম প্রকাণ্ড মাপের সংরক্ষণের কাজ তো শক্ত বটেই, আরও শক্ত সংরক্ষণের ফিলসফি নিয়ে একমত হওয়া। কী সংরক্ষণ করা হবে, কীভাবে সংরক্ষণ করা হবে, সেই নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে খটামটি লেগেই আছে। অনেকেরই মত হচ্ছে, preserve as found. অর্থাৎ কাজ শুরু করার আগে সমাধি, বাগান ইত্যাদি যেমন পাওয়া গিয়েছিল, সেই চেহারাটাকেই কোনওমতে ঠুকপালিশ করে রেখে দেওয়া। রতিশ বললেন, সেই মত অনুযায়ী যদি কাজ হত, তাহলে যেটা সংরক্ষিত হত, সেটার সঙ্গে আসল হুমায়ুনের সমাধির কোনও সম্পর্ক থাকত না। সেটা হত বেসিক্যালি ব্রিটিশ ইঞ্জিনিয়ারদের মতে হুমায়ুনের সমাধি যে রকম দেখতে হওয়া উচিত, সেই চেহারাটার সংরক্ষণ।

ব্রিটিশরা যে দেশটার কত ক্ষতি করেছে, সেটার আরও একটা নমুনা শুনলাম সেদিন। রতিশ বললেন, হুমায়ুনের সমাধি যে রকম শক্তপোক্ত ভাবে বানানো হয়েছিল, তাতে সেটাকে নিজের মনে থাকতে দিলে আরও হাজারখানেক বছর সেটা নিশ্চিন্তে দাঁড়িয়ে থাকত। সময়ের ছাপ পড়ত, এদিকসেদিক ফাটল ধরত, রোদবৃষ্টিজলে সাদা রং ধুয়ে গিয়ে অফ-হোয়াইটে পর্যবসিত হত। ব্যস। এইটুকুই।


বিপদ হল এইসব ছোটখাটো খুঁত সারাতে গিয়ে। সাদার ওপর নীলের সূক্ষ্ম কাজ করা টাইলস উঠে গেছে, সাহেব ইঞ্জিনিয়াররা এসে তার ওপর সটাং সিমেন্ট মেরে দিলেন। চুনাপাথরের শতাব্দীপুরোনো আস্তরণ চটে যাচ্ছে, সিমেন্ট আছে কী করতে? যদিও সিমেন্টের থেকে চুনাপাথর স্বাভাবিকভাবেই টেঁকে অনেক বেশিদিন, (কেন টেঁকে সেটাও রতিশ আমাদের ব্যাখ্যা করে বুঝিয়েছিলেন---প্রসেস করতে গিয়ে প্রথমে অক্সিজেন বেরিয়ে যায়, তারপর আবার যোগ হয় ইত্যাদি ইত্যাদি। এর বেশি জানতে চেয়ে আমাকে বিপদে ফেলবেন না, প্লিজ) কিন্তু সিমেন্টই তখন স্টেট অফ দ্য আর্ট মেটেরিয়াল, কাজেই নির্বিচারে চারদিকে সিমেন্ট মেরে দেওয়া হল।


সে সব সিমেন্ট খুঁড়ে আসল সমাধিসৌধের কাঠামো বার করতেই লেগে গেছে অনন্ত কাল। সৌধের ছাদ থেকে চল্লিশ সেন্টিমিটার পুরু, মিলিয়ন কেজি কংক্রিট, ম্যানুয়ালি খুঁড়ে তুলতে হয়েছে। চল্লিশ হাজার স্কোয়্যার ফিট বারান্দার‍ সিমেন্ট খুঁড়ে তুলে সেখানে অরিজিন্যাল স্টাইলের স্যান্ডস্টোন বসাতে হয়েছে। দেওয়ালের গা থেকে সিমেন্টপ্লাস্টার তুলে আবার যত্ন করে সেখানে চুনাপাথরের স্তর বসানো হয়েছে। মুঘলদের অনুকরণে বড় বড় গ্রাইন্ডারে চুনাপাথরের সঙ্গে গুড়, ডিমের সাদা, ফলের শাঁস আর মার্বেলের গুঁড়ো মিশিয়ে, যাতে সেটা সাদা মার্বেলের মতো দেখতে লাগে।

এক লাইনে লিখে দেওয়া গেলেও কাজটা হাতেকলমে করা সহজ ছিল না, বুঝতেই পারছেন। লোকবল, সময়, অর্থ---জলের মতো খরচ হয়েছে। কিন্তু সব কি আর টাকা দিয়ে হয়? সমাধি সারানোর কাজ শুরু করে রতিশরা বুঝলেন সব থেকে বড় বিপদটা তাঁদের জন্য অপেক্ষা করে আছে। পার্সিয়ান কায়দার টাইল, যা মুঘল স্থপতিদের বাড়ির কথা মনে পড়াত, যা দিয়ে তাঁরা সযত্নে হুমায়ুনের সমাধির গা মুড়ে দিয়েছিলেন, সে শিল্প ভারতে কবেই অবলুপ্ত হয়েছে। এখন কেউ বেঁচে নেই যে ও রকম টাইল বানাতে পারে। উপায়? টাইলের জায়গায় সিমেন্ট মেরে দেওয়া? উঁহু। কর্তৃপক্ষ উজবেকিস্তান থেকে ওস্তাদ কারিগর আনালেন। কারিগর চার বছর ধরে অ্যাপ্রেনটিসদের হাতে ধরে কাজ শেখালেন।


হুমায়ুন’স টুম্ব সংরক্ষণ প্রোজেক্টের এটা আরেকটা মৌলিক দিক। এই যে নতুন কারিগরের দল, এরা সবাই সংলগ্ন নিজামুদ্দিন বস্তির তরুণ ছেলেমেয়ে। সংরক্ষণ কর্তৃপক্ষ স্থানীয় মানবসম্পদ ব্যবহার করেছেন, এঁদের সারাজীবনের মতো একটা কাজ শিখিয়েছেন। এই বস্তির বাসিন্দারা সাত-শতাব্দীপ্রাচীন এক সংস্কৃতির জীবন্ত ধারক ও বাহক, অথচ এঁদের অনেকেই জীবনযাপনের ন্যূনতম সুবিধেটুকু থেকে বঞ্চিত। সংরক্ষণ কমিটি এঁদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিষেবার দিকেও নজর দিয়েছে।


দেড়ঘণ্টা কোথা দিয়ে কেটে গেল সত্যি সত্যি বুঝতে পারিনি। অতক্ষণ ধরে যে হাঁটছি, পায়েও ব্যথা করছিল না একটুও। শুধু শেষদিকটায় রতিশের গলা অল্প অল্প ধরে যেতে শুরু করেছিল।

যখন সমাধির বাইরে বেরিয়ে এলাম, তখন কুয়াশা একেবারে হাওয়া। চারদিকে ঝলমল করছে রোদ্দুর। আমাদের প্ল্যান ছিল তিনমিনিট দূরের নিজামুদ্দিন বস্তিতে গিয়ে করিমস্‌-এ শোরবা আর শামিকাবাব আর গুর্দা কলেজি দিয়ে লাঞ্চ সারা, কিন্তু দোকান তখনও বন্ধ। আমরা বেরিয়ে এসে উল্টোদিকের গলিতে গালিব কাবাব শপের দিকে গেলাম, সেখানেও বিধি বাম। অগত্যা নেহরু প্লেস মেট্রোর ফুডকোর্টে করিমস্-এর শহুরে শাখার কাবাব সান্ত্বনা পুরস্কার ভরসা। একবার প্রস্তাব উঠেছিল, করিমসের বদলে কেরালা এক্সপ্রেসে খেলে কেমন হয়, কিন্তু সে প্রস্তাব অচিরেই নাকচ হয়ে গেল। এরকম একটা আপাদমস্তক মোগলাই সকাল উত্থাপাম আর ফিল্টার কাপি দিয়ে মাটি করা জাস্ট ক্ষমার অযোগ্য হত বলে।




Comments

  1. daroon laglo post ta. hyan ratish er conservation er opor ekta talk shunechilam anek bochor agey...ted talk chilo mone hoy

    ReplyDelete
    Replies
    1. রতিশবাবুকে আমার খুব ভালো লেগেছে শম্পা। বিষয়টা নিয়ে ভালো জানেন, জানাটা ভালো করে কথায় প্রকাশ করতে পারেন। তাছাড়া নিজের কাজ নিয়ে উত্সাহী। সেদিনটা খুব ভালো কেটেছিল।

      Delete
  2. বাঃ! আমি রীতিমত অভিভূত, সরকারের এইধরনের চিন্তাভাবনায়!

    তবে লাইব্রেরির সিঁড়ির গল্পটা ঢপ্‌ কিনা জিজ্ঞেস করেছিলি?

    ReplyDelete
    Replies
    1. উনি তো ঐতিহাসিক নন, কাজেই ইতিহাস নিয়ে কথা হয়নি। তবে আমরা যখন সিড়ি (চন্দ্রবিন্দু পড়ছে না) দিয়ে উঠছিলাম তখন সাবধান করে দিয়েছিলেন, যে হুমায়ুনের সমাধিতে এসেছি মানেই যে হুমায়ুনের মত করে দেহত্যাগ করতে হবে তার কোনও মানে নেই।

      Delete
  3. Ki daroon byapar! Humayun's tomb er elaka ta amar bheeshon priyo! Miss kore gelam dekhe kharap lagchhe!

    ReplyDelete
    Replies
    1. ওটা আমারও দিল্লির অন্যতম প্রিয় জায়গা বিম্ববতী।

      Delete
  4. khub bhalo laglo pore ...ami kakhono e dharaner walk e jaini.ekhane The Bombay Heritage Walks bole akta hoy,anekbar bhebechi jabo ,kintu hoye otheni,lekhata porar por iccheta bere gelo..chabigulo darun,gato bachar ki durdanto ghurechilam amra ekhane !!!

    ReplyDelete
    Replies
    1. সিরিয়াসলি, গত বছরের ঘোরাটা আমারও খুব ভালো লেগেছিল তিন্নি। বম্বে হেরিটেজ ওয়াকে যেতে পারিস কিন্তু।

      Delete
  5. Du bar Dilli giyeo ei jayga ta jete parini, doler bakira boleche okhane giye ki korbi, sob e ek rakam r kache kono metro station o nei. Tar theke Palika Market e sostay kenakata kora bhalo.

    Apnar lekha pore dekhar agroho ta bere gelo, er pore Dilli gele Humayun er samadhi to dekhboi, sange apnar sange dekha kore boimela theke kena Abantor e apnar ekta autograph o niye asbo.

    ReplyDelete
    Replies
    1. পালিকা বাজার? সে তো সাংঘাতিক জায়গা শুনেছি। প্রাণ হাতে করে দরাদরি করতে হয়। পরের বার এলে নিশ্চয় করে হুমায়ুনের সমাধিতে আসবেন সৌগত। ভালো লাগবেই। অবান্তর জোগাড় করেছেন বুঝি? থ্যাঙ্ক ইউ, থ্যাঙ্ক ইউ।

      Delete
  6. ইতিহাস নিয়ে যা কিছু বর্ণনার ভঙ্গীটা তোমার অনবদ্য। আগেও প্রমাণিত হয়েছে।আর ছবিগুলি সত্যিই ভাল হয়েছে। এইসব বিষয় নিয়ে মানুষের বোধকে জাগিয়ে তুলতে যথেষ্ট সক্ষম। তুমি কি বুঝতে পেরেছ, এই পোস্টটার মাধ্যমে তুমি সত্যিই কি করে ফেললে? তোমায় ধন্যবাদ।

    ReplyDelete
  7. আরো একটা কথা ভুলে গিয়েছিলাম। দেশ জুড়ে সবরকম নৈরাশ্যের মধ্যে আমাদের সংস্কৃতিকে এইভাবে সংরক্ষণের প্রতিবেদনটি খুবই আশাব্যঞ্জক। আমার অত্যন্ত ভাল লাগল। সবই তাহলে অন্ধকার নয়।

    ReplyDelete
    Replies
    1. একেবারেই অন্ধকার নয় মালবিকা। কত লোক যে ভালো কাজ করেন, আমরা জানতেই পারি না। লেখাটা আপনার ভালো লেগেছে জেনে ভালো লাগল।

      Delete
  8. I had been there and it's a great experience; Akbar's tomb ,Sikandra (near Agra) is also a great place to visit. Parle ak weekend e somoy kore dekhe asun :)

    ReplyDelete
    Replies
    1. ওহ, সেকান্দ্রা যাবই যাব। হুমায়ুন'স টুম্ব কী ভালো না, রণদীপ?

      Delete
  9. খুব ভালো লাগল পড়ে। অবান্তরের হার্ডকপি এইমাত্র হাতে এল, লাঞ্চ করতে করতে একটু উলটেপালটে দেখলাম।

    আপনার ইতিহাসের প্রতি ঝোঁক আছে আগেও দেখেছি, কিন্তু ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট আছে কি? থাকলে এই লিঙ্কটা ফলো করতে পারেন

    https://www.facebook.com/DelhiHeritageWalks

    দিল্লির যে সব স্থাপত্য আর্কিয়োলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার অন্তর্গত নয়, এরা সেই স্থাপত্যগুলো ঘুরিয়ে দেখান। বেশিরভাগ গাইডই দিল্লি ইউনিভার্সিটির পোস্টগ্র্যাজুয়েট ছাত্রছাত্রী, তাই বর্ণনার বহর হয়ত রতিশসায়েবের চেয়ে একটু কম হতে পারে। তবে মন্দ নয়। আমার মত পেটুকপ্রকৃতির মানুষের জন্য এরা ফুডওয়াকও অরগানাইজ করে থাকেন।

    আর যাতায়াতের অসুবিধে নিয়ে ঘাবড়াচ্ছেন কেন? মান্ডি হাউসের আশেপাশে অনেক থিয়েটার হয়, রাতে মেট্রো করে ফিরতে পারবেন। ইন্ডিয়া হ্যাবিটেট সেন্টার, অ্যালায়েন্স ফ্রান্সে, ইন্ডিয়া ইন্টারনাশন্যাল সেন্টার - এসব জায়গাতেও হরেকরকম নাচাগানাযাত্রাপালা ইত্যাদি লেগেই থাকে। দেখার পর খান মার্কেটে ডিনার খেয়ে নিয়ে মেট্রো পাওয়া যাবে।

    ReplyDelete
    Replies
    1. দিল্লি ওয়াকের কথা জানি জানি। ওরা একটা বইও বার করেছিলেন শুনেছিলাম, প্ল্যান করেছিলাম বইটা জোগাড় করে নিজেরাই হেঁটে হেঁটে বেড়াব, কিন্তু প্ল্যান আর বাস্তব হয়নি। ফুড ওয়াকটায় যাওয়ার ইচ্ছে আছে, দেখা যাক হয় কি না।

      আর সত্যি বলছি, যাতায়াতটা একটা অজুহাত। সংস্কৃতিচর্চার টান অতই থাকলে অটো মেট্রো সবই পাওয়া যায়।

      পোস্টটা আপনার ভালো লেগেছে জেনে খুশি। বই অবান্তর জোগাড় করার জন্য অনেক ধন্যবাদ দেবাশিস। আপনারা সত্যি পৃথিবীর সেরা ব্লগ-পাঠক।

      Delete
  10. আপনার লেখা এবং ছবি ভীষণ সুন্দর হয়েছে। পড়তে তো ভাল লাগলই, কিন্তু তার থেকেও ভাল লাগলো এটা জেনে যে এত সুন্দরভাবে ভাবনাচিন্তা করে এরকম একটা ঐতিহাসিক সম্পদকে সারিয়ে তোলা হচ্ছে। আমাদের দেশে এ জিনিসটা সত্যিই বিরল।

    ReplyDelete
    Replies
    1. ঠিক ঠিক সুগত। খুব ভালো কাজ করেছেন ওরা। সময় করে দিল্লি আসলে দেখে যেতে পারেন।

      Delete
  11. khub darun lekha hoyeche.. pore khub bhalo laglo...

    ReplyDelete
    Replies
    1. থ্যাঙ্ক ইউ থ্যাঙ্ক ইউ, ইনিয়া।

      Delete
  12. ছবি, বর্ণনা, ইতিহাসে সকালটা একদম জমে গেল। :)

    ReplyDelete
  13. ' হুমায়ুনের সমাধি' ke sarie tolar chesta ... tomar lekha... chhobi... darun laglo. ...
    - Ichhadana.

    ReplyDelete
    Replies
    1. আরে থ্যাঙ্ক ইউ ইচ্ছাডানা।

      Delete

Post a Comment