আড্ডা



সেদিন অনেককাল পর একটা আড্ডায় যাওয়ার সুযোগ হল। ‘সুযোগ’ কথাটা শুনলেই এমন একটা কিছুর কথা মনে পড়ে যাকে ঝাঁপিয়ে পড়ে ধরতে হয়। যেটা হাত ফসকে পালালে আফসোসের সীমা থাকে না। কালকের আড্ডাটা সে রকম অপরিহার্য কিছু ছিল না। সেটাতে কালকের আড্ডাটার দোষ নেই কোনও, দোষ সম্পূর্ণ আমার। ইদানীং সব আড্ডাই আমার কাছে অপরিহার্যতা হারিয়েছে। তার প্রধান কারণ আড্ডা বিষয়টা শুনতে যত সোজা কাজে করা ততই কঠিন। বিশেষ করে সেটা যদি বাঙালিদের আড্ডা হয়। বাকিরা আড্ডাকে যত হালকা ভাবে নেয় আমরা সে রকম নিই না। আমরা মনে করি আমাদের আজ যত যা খ্যাতিউন্নতি; জ্ঞানেবিজ্ঞানে, কাব্যেউপন্যাসে – দেশেবিদেশে আজ যে বাঙালিদের এত রমরমা এর পেছনে কৃতিত্ব তিনটি জিনিসের। সকালের লুচি, দুপুরের ঘুম আর বিকেলের আড্ডার। আর রবীন্দ্রনাথ তো আছেনই।

জাতির মেরুদণ্ডের এমন চমৎকার ঠ্যাকনাটিকে ঝেড়েমুছে তকতকে করে রাখার জন্য আমাদের যত্নের অভাব নেই। পাছে আমাদের আড্ডা স্রেফ বাজে গল্প আর সময়নষ্টে রূপান্তরিত হয় সেই ভয়ে আমরা সর্বদা কাঁটা হয়ে থাকি। আমাদের সবসময় চেষ্টা থাকে আড্ডাকে কার্যকরী করে তোলার। এই সুযোগে কিছু শিখে নেওয়ার, তার থেকেও বেশি শিখিয়ে দেওয়ার।

বোঝাই যাচ্ছে, এত সব শেখাশেখি করতে গেলে একটা ন্যূনতম আগ্রহ, উদ্দীপনার দরকার হয়। যে বিষয়টা নিয়ে জ্ঞানের আদানপ্রদান হচ্ছে সেটাতে যে আমার কিছু যায় আসে, সেই ভানটুকু করার দায় থাকে। মুশকিলটা হচ্ছে, উদ্দীপনা আর দায় – দুটো জিনিসই আমার ভেতর থেকে অন্তর্হিত হতে হতে এখন একেবারে তলানিতে ঠেকেছে। যেটুকু বাকি আছে সেটুকু আড্ডায় খরচ না করে টাইপ করায় খরচ করব ভেবে রেখেছি।

তবু যে কালকের আড্ডাটায় গেলাম (তাও আবার অফিসফেরতা) তার অনেকগুলো কারণ আছে। এক, বাড়িতে কথা বলার লোক নেই। দুই, টিভির রিমোটের ব্যাটারি শেষ হয়ে গেছে। তিন, আড্ডার কিছু সদস্য আমার চেনা। পূর্বাশ্রমে যখন আমার আড্ডায় অরুচি ছিল না তখন এঁদের সঙ্গে হোস্টেলের উল্টোদিকের বাবলাগাছের তলায় বসে আমি বিস্তর বকেছি। এঁরা যখন আছেন তখন এঁরাই সভা আলো করে রাখবেন, আমি কোণে বসে ক্যান্ডি ক্রাশ খেলছি কি না সে দিকে কারও নজরই যাবে না – এই সব সাতপাঁচ ভেবে আমি আড্ডার ঠিকানায় উপস্থিত হলাম।

গিয়ে দেখি আড্ডায় শুধু মানুষ ছাড়াও একখান গিটারও উপস্থিত আছে। মন নেচে উঠল। কথা একেবারে বলতেই হবে না। শুধু শুনে গেলেই হবে। চমৎকার। ভালো দেখে একখানা কোণ বেছে, অফিসব্যাগটা দেওয়ালে ঠেকিয়ে, তার ওপর নিজেকে ঠেকিয়ে বসে পড়লাম। ব্যস। দু’ঘণ্টার মতো নিশ্চিন্ত।

আড্ডা জমে উঠল। আড্ডা জমানোর পেছনে অভিজ্ঞ আড্ডাবাজদের অবদান তো ছিলই, আমার বন্ধুর বাড়িটিও আড্ডা জমানোর জন্য একেবারে অর্ডার দিয়ে বানানো। প্রতিভাবান আড্ডা-বসিয়ে হয়ে ওঠার সম্ভাবনা বন্ধু দেখিয়েছিল ছোটবেলাতেই। দিনেদুপুরে, রাতেবিরেতে, সকলেই যে যার হোস্টেলের ঘর ছেড়ে ওর ঘরে উজিয়ে যেতাম আড্ডা মারতে। দিল্লির ফেব্রুয়ারির শীতে রাত দশটার সময় এক হোস্টেল থেকে আর এক হোস্টেলে হেঁটে হেঁটে যাওয়া আবার রাত তিনটের সময় হেঁটে হেঁটে নিজের হোস্টেলে ফেরা যা-তা কথা না। তবু সবাই যেত। সেদিন গিয়ে দেখলাম সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বন্ধুর আড্ডা বসানোর প্রতিভায় একটুও জং ধরেনি। সুন্দর করে সাজানো ঘর, কিন্তু সাজটা কোথাও আরামে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে না। যারা ফাঁকি মেরে পরের ঘাড়ে চেপে আড্ডা-বৈতরণী পেরোতে চায় (অবান্তরের লেখক) তাদের জন্য কোণাঘুচিও যেমন আছে, তেমন আড্ডার কর্ণধারদের জন্য ঘরের মাঝখানে টানটান করে পাতা ফরাসও আছে। টাইট জিনসওয়ালাদের জন্য চেয়ার আছে, ঢোলাপাজামাওয়ালাদের জন্য নিচু মোড়া আছে। অথচ ঘরে ঢুকে একবারও ফার্নিচারের দোকানে ঢুকে পড়েছি মনে হচ্ছে না, আধো আলোছায়ায় তারা সবাই একে অপরের সঙ্গে মিলেমিশে গেছে।

ভালো জাতের আড্ডার জন্য আড্ডাবাজদের ভালো হওয়া যতটা দরকারি তার থেকে কোনও অংশে কম দরকারি নয় আড্ডার ঠেকের ভালো হওয়া।  তার কারণ, আড্ডা একটা সচল-সজীব বস্তু। আপনি বলবেন সে তো বটেই, “মরা মানুষে কি আড্ডা দিতে পারে নাকি?” আমি মানুষের নয়, আড্ডার সজীবতার কথা বলছি। আড্ডা নিজে সজীব বলেই বেড়ে ওঠার জন্য তার উপযুক্ত বাতাবরণ লাগে। মাপমতো সার, জল ও সূর্যালোকের দরকার হয়। অনুকূল ঠেকে এ সব উপাদান পর্যাপ্ত পরিমাণে পেয়ে আড্ডা লকলকিয়ে বাড়ে। ক্রমে ক্রমে বেড়ে সে একটা স্বতন্ত্র শরীর পায়, আর আড্ডাবাজেরা পরিণত হয় শরীরের একএকটা অঙ্গপ্রত্যঙ্গে। একটা শরীর জন্মায় গঙ্গার ঘাটে, একটা মন্দিরের চাতালে, আর একটা জন্মায় স্টেশন রোডে রামকৃষ্ণ বস্ত্রালয়ের বারান্দায়। প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর এক জায়গার আড্ডার শরীর তুলে অন্য আড্ডার মাটিতে পুঁততে যান, আড্ডা বেঘোরে মরবে। এ আড্ডার মাথা কেটে ও আড্ডার গোড়ালিতে জুড়ে দিন, দুটোর একটাও বাঁচবে না।

এত কথা অবশ্য খালি চোখে যা ধরা পড়ে না। খালি চোখে দেখলে মনে হয় সফল আড্ডার সব কৃতিত্বই বুঝি আমার, আমাদের। এই যে বেছে বেছে এমন বিষয় বার করছি, যা ইন্টেলেক্টের গোড়ায় সারও যেমন দিচ্ছে, তেমনি আলোচনার ফাঁকে ফাঁকে নায়ক সিনেমার সংলাপও গুঁজে দিতে দিচ্ছে। এটা তো আর আড্ডা করে দিচ্ছে না, যা করার আমিই করছি।

কিন্তু একটা আড্ডা শুধু বিষয়ে চলে না, সংলাপে তো নয়ই। ইন ফ্যাক্ট আমার তো মনে হয় যে কোনও আড্ডার সার্থক হয়ে ওঠার পেছনে সে আড্ডার বিষয়ের অবদানের অংশটুকুই সবথেকে গৌণ। বিষয় চাইলে বক্তৃতাসভায় গেলেই হয়, কিংবা বিতর্ক সমিতিতে। নিয়ম করে অফিসের সবগুলো পিপিটি প্রেসেন্টেশন শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বসে বসে শুনলেও বা আটকাচ্ছে কে?

আমার মতে একটা ভালো আড্ডা সেটাই যেটায় যে কোনও বিষয় নিয়ে আরাম করে কথা বলা যায়। তথ্যে ভুল করে ফেলার টেনশন না রেখে, এই বুঝি আমাকে কেউ বোকা ভাবল সে নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে। সোজা হয়ে বসে, বালিশের ওপর কাত হয়ে পড়ে, দাবার চাল দিতে দিতে, কিংবা মিউট করে রাখা টিভি থেকে চোখ না সরিয়েই।

তার মানে কি কোনও বিষয়ে না জেনে যা প্রাণে চায় যেমনতেমন করে তাই বকে যাওয়ার লাইসেন্স থাকাটাকেই ভালো আড্ডার শিরোপা দিচ্ছি? মোটেই না। আমি বলছি না হলিউডি সিনেমার মতো করে রিলেটিভিটির ব্যাখ্যা দিতে হবে বা বাবা রামদেবের মতো করে জিনের রহস্য ফাঁস করতে হবে। সমকামীর ছেলে সমকামী হয়, বিষমকামীর ছেলে সমকামী হয় না। ছেলে যখন হয়েছে তখন নিশ্চয় বাবা সমকামী নন। সুতরাং প্রমাণিত হল যে ছেলের পক্ষে সমকামী হওয়া অসম্ভব। সে নিয়ম মানলে তো আইনস্টাইনকে কোনওদিন কোনও আড্ডাতেই প্রবেশাধিকার দেওয়া যায় না। তাহলে তো রকেটসায়েন্সে গবেষণা করা বন্ধুটি রকেট উৎক্ষেপণে সলিড ও লিকুইড প্রপেল্যান্টের নিজ নিজ ভূমিকার কথা বন্ধুদের জলের মতো করে বুঝিয়ে দিতে চাইলে তার মুখ গামছা দিয়ে বেঁধে তাকে ঘরের কোণে বসিয়ে রাখতে হয়।

আমার বক্তব্য শুধু এই যে রকেটের বর্ণনা শেষ হয়ে গেলে ঘরের কোণে বসে চোখ বুজে হাঁটুতে মৃদু মৃদু তাল রাখা বন্ধু হঠাৎ চোখ খুলে উঠে যদি বলে, “আচ্ছা, তোদের লিটারেচারে ইউ এফ ও নিয়ে কী বলছে?” তাহলে “এটা কে, কোত্থেকে এসেছে” করে হই হই করে ঝাঁপিয়ে তার মুখ বন্ধ করে দেওয়া ভালো আড্ডায় চলে না। তাহলেই প্রমাণ হয়ে যাবে এ আড্ডা ভালো আড্ডা নয়। ভালো যদি হত তাহলে সবাই বরং ঝাঁপিয়ে পড়ে ইউ এফ ও নিয়ে নিজের নিজের মত জাহির করত। ইউ এফ ও ফাঁকিবাজি না বুজরুকি না পেন্টাগনের চেপে দেওয়া সত্যিকারের ফেনোমেনন এই নিয়ে পরের দেড়টি ঘণ্টা কোথা দিয়ে কাবার হয়ে যেত কেউ টেরও পেত না।

ভালো আড্ডার আর একটা উপাদান হচ্ছে খাওয়াদাওয়া। খাওয়াদাওয়ার ভালোমন্দ উচিতঅনুচিত ভালোমন্দ নিয়ে নিদান দেওয়ার মতো মূর্খ আমি নই। আড্ডার বিষয়ের মতোই খাওয়াদাওয়ার পছন্দঅপছন্দও যার যার আপরুচির ওপর ন্যস্ত করা ভালো। তবে বিষয় আর খাবারের মধ্যে একটা গোড়ার অমিল তো আছেই। একটা মূলত বায়বীয় আর অন্যটা ঘোর বস্তুমূলক। যে যা খুশি নিয়ে বক্তব্য রাখতেই পারে কিন্তু যে যা খুশি খেতে চাইলে সেটা ব্যবহারিক দিক থেকে অসুবিধেজনক।

আড্ডার খাওয়াদাওয়া স্থির করতে বসে প্রথম মনে রাখার কথাটা হচ্ছে আড্ডায় খাটবে মূলত মগজ, পাকস্থলী নয়। দু’নম্বর মনে রাখার কথাটা হচ্ছে যে মানুষের শরীরে এনার্জি সীমিত। পাচনক্রিয়ায় যেটুকু খরচ হয়ে যাবে, মাথাখাটানোর জন্য সেটুকুকে পাওয়া যাবে না। একই দশা হবে খাবার তৈরি করতে বা থালায় থালায় বাড়তে বা এঁটো থালা তুলতে খরচ হওয়া এনার্জিরও। কাজেই আড্ডার মেনুতে বিরিয়ানি, মুর্গমুসল্লম কিংবা ধোঁকার ডালনা না থাকলেই ভালো। তিন নম্বর এবং সবথেকে জরুরি মনে রাখার কথাটা হচ্ছে ভালো আড্ডার যা নিয়ম, ভালো আড্ডার খাওয়াদাওয়ারও সেই নিয়ম। সবার জন্য, সবার মতো করে। যাতে ফুডিসম্রাটও না খেতে পেয়ে মরবেন না, আবার পেটরোগা, দুঃখী সদস্যটিও শুধু মুখে বাড়ি ফিরে যাবেন না। সব কূল বাঁচিয়ে আমার মতে বাঙালি আড্ডার সবথেকে উপযুক্ত খাবার হচ্ছে চা আর মুড়ি। শুকনো বা তেললংকা দিয়ে মাখা।

আধুনিক বাঙালি আড্ডায় অবশ্য চায়ের মতোই সুলভ হয়ে পড়েছে শিভাস রিগ্যাল। আড্ডার সাফল্যের কথা বোঝাতে ‘কাপের পর কাপ চা উড়ে গেল’র বদলে আজকাল হামেশাই শোনা যাচ্ছে ‘পেগের পর পেগ উড়ে গেল'। আড্ডাবাজদের যদি সে রসে উৎসাহ থাকে তবে তাঁরা সে পথে যাবেন, কার কী বলার আছে,  তবে আমার ব্যক্তিগত ভোট সবসময় থাকবে চায়ের পক্ষে।

আমার পক্ষপাতটা যত না গোঁড়ামিজনিত তার থেকে অনেক বেশি অভিজ্ঞতাসম্ভূত। কাপের পর কাপ চা উড়ে গেলেও আড্ডাবাজদের আচরণে তার আশু কোনও ছায়া পড়ার সম্ভাবনা কম। প্রয়োজনের অতিরিক্ত ক্যাফাইন, থেব্রোমাইন, থিওফিলাইন রক্তে মিশে গিয়ে ব্রেন উত্তেজিত হবে, স্নায়ু টানটান হবে, গলার শির ফুলে উঠবে। বড়জোর রাতে বিছানায় শুয়ে অনেকক্ষণ ঘড়ির কাঁটার টিকটিক শুনতে হবে, ব্যস।

শিভাস রিগ্যালের প্রভাব এত নিরীহ না-ও হতে পারে। এর বিস্তর উদাহরণ আমি দেখেছি। তার একটা আপনাদের বলি।

শীতকালে কবিতা লিখতে দাদা গিয়েছিলেন পাহাড়ে।

শুনে আমরা বললাম, “ড্যাং না ক্যাং না গ্যাং?” (কোন গল্প বলতে পারলে হাততালি।)

জানা গেল গ্যাং। ট্যুরিস্ট স্পট বলে গাড়িঘোড়া থাকাখাওয়ার পরিকাঠামোগত সুবিধেটুকুও পাওয়া যাবে, আবার অফ সিজন বলে আদেখলা হামলে পড়া ভিড়ও থাকবে না, এত সব ভেবেটেবে যাওয়া। কিন্তু গিয়ে শুধু গ্যাংটকে দাদার মন উঠল না, তাঁর ইচ্ছে হল বরফপাত দেখার। কাজেই একটা গাড়িভাড়া করে আরও উঁচু পাহাড়ের দিকে রওনা দিলেন দাদা।

রাতের বেলা গা গরম করবে বলে ড্রাইভার আর খালাসি মদ খাওয়ার তোড়জোড় করল। সাবজী প্রসাদ করবেন কি না জিজ্ঞাসা করাতে দাদা বললেন, “আলবাত।” তারপর বললেন, সোডা জল ইত্যাদি রসভঙ্গকারী ইমপিওরিটির ব্যবস্থা তাঁর জন্য করতে হবে না, তিনি এমনিই “স্ট্রেট মেরে দেবেন এখন।” তারপর সেই যে শুরু হল দাদার মার, যতক্ষণ না ড্রাইভার আর খালাসি সাষ্টাঙ্গ হয়ে পড়ে তাঁর কাছে নাড়া বাঁধল ততক্ষণ থামল না।

এদিকে গল্পের মৌতাতেই হোক, কি শহরের বদ্ধ ঘরের দূষিত জলবায়ুর জন্যই হোক, আড্ডায় বসে একের বেশি দু’টি পেগ স্ট্রেট মেরেই দাদা বেসামাল হয়ে পড়তে লাগলেন। গল্পের দাদার সঙ্গে বাস্তবের দাদার অমিল ঘোরতর প্রকট হয়ে উঠতে লাগল। শেষটায় গ্যাংটকের মলে কার অঞ্চলপ্রান্তের গেরোয় নিজের হৃদয় বাঁধা রেখেছিলেন সেই কথা মনে করে উচ্চস্বরে ভেউভেউ কান্নায় আড্ডার সমাপ্তি হল। ইউ এফ ও নিয়ে একটা ভয়ংকর ইন্টারেস্টিং আলোচনা হচ্ছিল, সব মাটি।

এর থেকে র’চা ভালো কি না?

‘শুনুন,’ আগন্তুক বললেন, ‘লাঞ্চ তো হল – আগে এক কাপ চা হবে কি?’
‘সার্টেনলি।’
‘শুধু একটা কাপ আর লিকার দিলেই হবে। আমি র’টী খাই।’

কোন গল্প?

এই যে’রকম আড্ডার কথা বললাম, খুব শক্ত লাগল কি? লাগল না তো? অথচ বাস্তবে এই সহজসরল আড্ডাই কত বিরল সে কথা ভাবলে আশ্চর্য হয়ে যেতে হয়। বাস্তবকে দোষ দিয়ে লাভ নেই অবশ্য। আড্ডার দেমাকে মশমশ করা বাঙালির সাহিত্যেও বিশুদ্ধ আড্ডা কিছু ঘাট খেলছে না। অথচ সম্ভাবনা ছিল। শিবু, শিশির, গৌর, সুধীর, ক্যাবলা, হাবুল, পটলরাম এরা সবাই আসর সাজিয়েই বসেছিল, এমন সময় দাদারা সে আসরে ঢুকে পড়ে আড্ডা মাটি করলেন। ঘরজোড়া মাদুরের মধ্যে একখানা ইজিচেয়ার এসে উপস্থিত হল। বক্তা-শ্রোতা ইত্যাদি জাতিভেদের উৎপত্তি হয়ে ভালো আড্ডার গোড়ার শর্তটাই গেল ভেস্তে।

তা বলে কি ভালো আড্ডার উদাহরণ একটিও নেই? আছে বৈকি। চৌদ্দ নম্বর হাবশীবাগান লেনের মেসের আড্ডাটাই প্রায় নিখুঁত আড্ডার উদাহরণ। সে আড্ডায় মাসিক পত্রপত্রিকা থেকে শুরু করে পাখোয়াজ ইত্যাদি চিত্তবিনোদনের বিচিত্র উপকরণ যেমন আছে তেমনি বিচিত্র চিত্তবিনোদনকারীদের জমায়েত। কলেজের প্রফেসর, ইনশিওরেন্সের দালাল, অফিসের কেরানি। বৈচিত্র্য যে আড্ডার স্বাস্থ্যের কতখানি উপকার করে হাবশীবাগানের মেসের আড্ডা তার প্রমাণ। হঠযোগ, বাবাজী, ঝি-বেটির খোঁজ করা, অফিসের ছোটসায়েবের পিণ্ডি-চটকানো – একঘেয়েমির সম্ভাবনাই নেই।  

(অবশ্য এমন ইন্টারেস্টিং আড্ডাটিও একেবারে দোষমুক্ত নয়। আমার বিশ্বাস এস্ট্রোজেনের একটু ছিটে পড়লে এ আড্ডার রং আরও খুলত বই কমত না। তবে আমার কিনা এই আড্ডার রচয়িতার প্রতি পক্ষপাত আছে তাই আমি এটা তাঁর দোষ না বলে সময়ের দোষ ধরে নিচ্ছি।)

দেখেছেন, আড্ডায় কিছু বলার না থাকলেও, আড্ডা নিয়ে বলার কথা আমার আছে যথেষ্টই। আড্ডা বিষয়ে আমি ভয়ানক ডিম্যান্ডিং। হাই মেন্টেন্যান্স। আমার এই মনোভাবের সঙ্গে সেই লোকটার মিল আছে যে অনেকদিন আগে, ছোটবেলায় একবার বাবার সঙ্গে হরিদ্বারের গলিতে রাবড়ি খেয়েছিল। কেউ না নিলেও, সেই থেকে সে নিজেই নিজেকে রাবড়ির একজন মস্ত বড় সমঝদার বলে ধরে নিয়েছে। খাওয়াদাওয়ার আড্ডা বসলেই খালি ঘুরেফিরে বলছে, “আহা, সেই যে হরিদ্বারের গলির দোকানে বাবার সঙ্গে বসে মাটির ভাঁড়ে রাবড়ি খেয়েছিলাম, তেমনটি আর কোথাও খেলাম না।”

হয়তো কথাটা সত্যি নয়। যদিও হয়তো সেই পাঁচবছর বয়সের পর সে ভালোখারাপ কোনওরকম রাবড়িই আর কোনওদিন চেখে দেখেনি। হয়তো আবছা হতে হতে জিভ থেকে সে রাবড়ির স্বাদ উবে গেছে অনেকদিন আগেই, সময়ের পাকে খালি স্মৃতির ভেতর ঘন থেকে ঘনতর হয়েছে তার স্বাদ। নামহীন দোকানের সামনে রাস্তার ওপর দুধের কড়াইয়ের পেছনে বসে থাকা গরিব ময়রা রূপান্তরিত হয়েছে রাষ্ট্রপতির প্রশংসা পাওয়া খানদানি ভিয়েনশিল্পীতে। নোংরা লেগে থাকা তোবড়ানো স্টিলের প্লেটের ছবিতে মুছে সে জায়গায় সোঁদা গন্ধওয়ালা নতুন মাটির ভাঁড় এঁকে নিয়েছে নস্ট্যালজিয়া।

আমারও হয়েছে সেই দশা। কতদিন আড্ডা মারিনি, তবু আড্ডার ভালোমন্দ বিচার করার অধিকার নিয়ে আমার কোনও সংশয় নেই। সেই যে বাবলাগাছের নিচে বিকেলবেলা আড্ডা বসত। সেই সিনিয়র জুনিয়র, ছেলেমেয়ে, সায়েন্স-সোশ্যাল সায়েন্স, এস এফ আই-আইসা ভেদাভেদমুক্ত আড্ডা। গাজা স্ট্রিপ থেকে শুরু করে অনিল বিশ্বাস ছুঁয়ে মেসে দুপুরের ঘাসের ঝোলে এসে ডুবে মরা আড্ডা। নারায়ণভাইয়ার বেশি মিষ্টি চা আর হাফ জিলিপি খেয়ে বাকি হাফ শাহরুখনাম্নী কুকুরছানার মুখে গুঁজে দেওয়া আড্ডা। আমার মনের মধ্যে দিনের পর দিন সে আড্ডার স্মৃতি ক্রমেই উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর হচ্ছে। যে কোনও আড্ডার নেমন্তন্নে গিয়েই মন বার বার মিলিয়ে নিচ্ছে এই আড্ডার সঙ্গে সেই আড্ডার খুঁটিনাটি। বলাই বাহুল্য, স্মৃতির সঙ্গে অসম যুদ্ধে বাস্তব গোহারা হারছে প্রতিবার। সবাই যখন জমিয়ে আড্ডা দিচ্ছে, আমি বসে বসে ভাবছি, শেষমেশ কি না এই? এর থেকে তো বাড়িতে গিয়ে ঘুমোনো ভালো ছিল।


Comments

  1. পোস্ট পড়ার আগে প্রশ্নের উত্তরটা দিয়ে দিই - "গ্যাংটকে গন্ডগোল"

    ReplyDelete
    Replies
    1. ভেরি গুড, পিয়াস। কিন্তু পরের প্রশ্নটা? একটু নিচে আর একটা গল্পের ক্লু আছে, দেখো।

      Delete
    2. দ্বিতীয় প্রশ্নটা চোখেই পড়েনি প্রথমবার। তারিণীখুড়ো কি? কিন্তু আগন্তুক কেন হবে তাহলে ? নাহ, পারলাম না !

      Delete
    3. আগন্তুক মানে ট্রেনের কামরায় আগুন্তুক, পিয়াস। এই ক'টা লাইন দেখে বোঝা একটু শক্তই ছিল। পরের প্যারাটা দিলেই হুস করে পেরে যেতে, তাই শয়তানি করে দিইনি।

      Delete
    4. তিনদিন পরে অবশেষে লেখাটা পড়ে শেষ করলাম। দ্বিতীয় প্রশ্নটা একটু শক্ত ছিল ঠিকই, তবুও ওটা না পারাই প্রমাণ করে দিচ্ছে যে কুইজের বাণপ্রস্থ এসে গেল আমার।

      আমি কিন্তু গাদাগুচ্ছের লোক মিলে আড্ডার থেকে দু'জন কি বড়জোর তিন-চারজন মিলে আড্ডা দেওয়া ঢের বেশি পছন্দ করি। সংখ্যাটা তারচেয়ে বেশি হলেই আমি কোন একটা কোনেখাঁজে সেঁধোতে সেঁধোতে একেবারে বিলীন হয়ে যাই।

      বাই দ্য ওয়ে, 'পটলডাঙার প্যালারাম' দেখছি পোর্টম্যান্টো হয়ে 'পটলরাম' হয়ে গেছে। আর শিভাস রিগ্যালের প্রতি আমার একটু দুর্বলতা আছে (ওই চারমিনারের প্রতি যেরকম, সেইরকম আরকি)। ব্যারিস্টার প্রসন্নকুমার বাসুর প্রিয় পাণীয় বলে কথা!

      Delete
    5. আরে এ সব কী কুকথা, পিয়াস? বাণপ্রস্থ টানপ্রস্থ? তোমার কুইজ পারফরম্যান্সের সূর্য এখনও মধ্যগগনে পৌঁছয়নি, আমার কথা মিলিয়ে নিও।

      পটলরামটা লিখতে লিখতেই ভাবছিলাম কোথাও একটা গোলমাল হচ্ছে। এখন বুঝতে পারলাম। থ্যাংক ইউ। পি কে বসু, বার অ্যাট ল-র রেফারেন্স দেখে খুশি হলাম। উনি চিরকাল নেপথ্যেই রয়ে গেলেন বাঙালি গোয়েন্দাদের নাট্যশালায়।

      Delete
    6. কি জানি, পরপর দু'দিন দুটো ক্লিন বোল্ড হলাম কিনা ! তবে সেদিন কিন্তু আমি বলতে চেয়েছিলাম তারিণীখুড়ো তাঁর সাঙ্গোপাঙ্গদের কাছে আগন্তুক কেন হবেন? বাংলা গল্পে লিকার চা খান এমন একটা চরিত্রই মাথায় আসছিল যে !

      বাসুসাহেব আমার খুবই প্রিয়। বাংলার যে'কজন গোয়েন্দাদের পড়েছি, তার প্রথম তিন-চারজনের মধ্যেই রাখব হয়ত। বাংলার গোয়েন্দাদের নিয়ে পারলে কখনো একটা লেখা লিখো, সেটা যদি অলটাইম র‍্যাঙ্কিং গোছের কিছু হয় তবে তো কথাই নেই।

      Delete
    7. এটা একটা দারুণ গবেষণার বিষয় হয়তে পারে কিন্তু, পিয়াস। 'বাঙালির গোয়েন্দা'। সাধারণত আমি রিসার্চের নাম শুনলে দৌড়োই, কিন্তু এই টপিকটার নাম শুনেই কোমর বেঁধে নামতে ইচ্ছে করছে।

      Delete
  2. উরিব্বাস, আড্ডা নিয়ে এত গবেষণা করেছেন?
    প্রথম উত্তরটা গ্যাংটকে গণ্ডগোল, দ্বিতীয়টা জানি না।
    আমার মতে আড্ডা জমার কয়েকটা প্রি-রিকুইজিট আছে -
    ১ প্রি প্ল্যানড আড্ডা হতে হবে। আগে থেকে প্ল্যান করে এলে আড্ডাবাজরা খোশমেজাজটা সঙ্গে করে নিয়ে আসেন, অন দ্য স্পট তৈরি করতে হয় না।
    ২ খাওয়াদাওয়া সংক্ষিপ্ত করার ফেভারে আমিও, কিন্তু তা বলে চা আর মুড়ি নয়। নিদেনপক্ষে চপ কাটলেট।
    ৩ খুব ক্লোজগ্রুপ না হলে শিভাস রিগ্যাল বাদ দেওয়াই বাঞ্ছনীয়।

    ReplyDelete
    Replies
    1. সেটাই তো দুঃখ, দেবাশিস। সবাই যখন আড্ডা মেরে সময় নষ্ট করছিল আমি তখন আড্ডা নিয়ে গবেষণা করে সময় নষ্ট করছিলাম। প্রথম দুটো পয়েন্টে আপনার সঙ্গে ক্ষেত্রবিশেষে একমত আবার একমত নয়ও, কিন্তু তিন নম্বরটাতে সর্বদা একমত। চেনা মাতাল তবু সহ্য হয়, অচেনা মাতাল . . .

      Delete
  3. Second ta bodh hoi barin bhowmik er byaram.. kintu eto kichu thakye kukur chanar nam shahrukh???

    ReplyDelete
    Replies
    1. একদম ঠিক উত্তর, অর্ণব। শাহরুখ ভালো নাম তো।

      Delete
    2. আরে বাঃ, বারীন ভৌমিকের ব্যারাম। ওই র'টি কথাটি শুনেই বারীনবাবুর সব মনে পড়ে যায়।

      Delete
    3. এক্স্যাক্টলি, দেবাশিস। এটা অর্ণব দারুণ পেরেছে।

      Delete
  4. গ্যাংটকে গন্ডগোল।

    শিভাসের নিন্দা করছেন করুন, তবে শিভাস পেটে পড়ার পর যে সব তথ্য বেরিয়ে আসতে থাকে তার ছিঁটেফোঁটাও যদি চায়ের গুণে বেরোত! :-)

    ReplyDelete
    Replies
    1. হাহা, আরে অরসিকের নিন্দেয় কান দেবেন না, তথাগত। গ্যাংটকে গণ্ডগোল ঠিক উত্তর। অভিনন্দন।

      Delete
  5. "রবীন্দ্রনাথ কি আড্ডা দিতেন ?"

    ReplyDelete
    Replies
    1. প্রশ্নটা দারুণ। মনে হয় প্রায়শই দিতেন, তবে বোধহয় ভূতের সঙ্গে।

      Delete
    2. কিন্তু প্রশ্নটা নিয়ে যে প্রশ্নটা কাল থেকে আমার মাথায় ঘুরছে সেটা হচ্ছে, প্রশ্নে কোটেশন মার্ক কেন? প্রশ্নটা কি তন্ময়ের নয়? প্রশ্নটা তবে কার?

      Delete
    3. ওঃ, আচ্ছা এটা কি অরণ্যের দিনরাত্রির সংলাপ?

      Delete
    4. মানেটা কী? এত খুশি হয়ে ফেলের খবরটা দিলে যখন তখন সঙ্গে সঙ্গে ঠিক উত্তরটাও বলে দেওয়াও কি উচিত ছিল না? এটা কোথাকার সংলাপ প্লিজ বল, সোমনাথ।

      Delete
    5. bojho kando .. abar agontuk .. (lekhikesh'ke) lekha khub valo hoyechhe ..

      Delete
    6. প্রশ্নটা উৎপল দত্তের। (আগন্তুকের ছোটমামা)। রবি ঘোষ সবে আড্ডা নিয়ে ভালোবাসার দু'চারটে কথা বলে ফেলেছেন। সেই সময়ে প্রশ্নটা করা। :)

      Delete
    7. আমার মনে হয় ভদ্রলোক প্রশ্নও করেননি। সোজা জানান দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ আড্ডা দিতেন না।

      ভূতেদের সঙ্গে আড্ডা? সেটা জব্বর হবে। :)

      Delete
    8. তন্ময়, থ্যাংক ইউ থ্যাংক ইউ।

      অর্ণব্, এই উত্তরটাও ঠিক। চমৎকার।

      অনির্বাণ, ধন্যবাদ। সিরিয়াসলি, এবার আগন্তুকটা একবার ঝালিয়ে না নিলে আর চলছে না।

      Delete
    9. "আগন্তুকের" ওই জায়গাটা কিন্তু তোমার লেখাটার সাথে বেশ প্রাসঙ্গিক। আমি তো ওই "এখন তো সবই নিম্নগামী" কথাটা যেখানেসেখানে কোট করি। এই নাও, জায়গাটুকু কেটে দিলাম ... http://www.tubechop.com/watch/4363075

      Delete
    10. থ্যাংক ইউ, পিয়াস। দেখছি।

      Delete
  6. এই যাহ.. এই প্রথম অবান্তর এর সাথে ভিন্নমত হতে হলো :(
    ধোকার ডালনা, ডিমের চপ, কষা মাংস এই সব না হলে আড্ডা হয়? ঘন্টাখানেক ঐসবের স্বাদ গন্ধ রাধুনীর কি গুন discuss করে .. তারপর তা থেকে আরো অপূর্ব সব রান্নার নসটালজিয়া তে আক্রান্ত হয়ে কাটাতে আরো আধ ঘন্টা কাটিয়ে সবে দশ টা বাজলো। এইবার তো dessert খেতে খেতে স্টার্ট হবে সমাজের অবস্থা , প্রেসিডেন্ট এর রিসেন্ট বিল, চীন ভালো না জাপান, বেড়ানোর গল্প এইসব।
    তবে ওই শিভাস রিগাল এর বেলায় ১০০% একমত! এইটা না হলে আড্ডা হবেনা এই ব্যাপারটা ক্রমেই অসহ্য হয়ে উঠেছে।

    ReplyDelete
    Replies
    1. আহা, ভিন্নমত না হলে আড্ডা জমবেই বা কী করে কাকলি? কাজেই ভিন্নমত হয়েছে ভালোই হয়েছে।

      Delete
  7. ei lekhata darun hoyeche ! ! - tinni

    ReplyDelete
    Replies
    1. যাক। থ্যাংক ইউ ভেরি মাচ।

      Delete
  8. Masters er somoy adda chhilo Dipak Da r chayer dokane. Motamuti dokanta Vesuvius hoye jeto. Prem vanga, notun prem gorar strategy, soddo downloaded cinema-boi-ganer jonno pendrive niye khablakhabli theke NET er group study sob e cholto ... ar maser sheshe chayer bill uthto minimum 500 taka per head. Dipak Da o eisob mukh buje mene nito. Echhara school e thakte mather parer adda (daknam: Star thek), Hospital pukur parer adda (daknam: chilka) esob to bikkhyato chhilo ... ei vulval somoyer jatonay computer ta sombol kore konokrome tnike achhi.. Sottie thikthak adda bochhore du-tin bar er beshi ditei pari na. Ei lekhata montake ek alokborsho dure thele dilo.

    ReplyDelete
    Replies
    1. দীপকদা কেন, আমি হলেও মেনে নিতাম হীরক। শুধু মেনে নিতাম না, কোনওদিন তোমরা আড্ডা বসাতে দেরি করলে দোকানের গায়ে হেলান দিয়ে রাখা সাইকেলটা নিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ডেকে আনতাম। পার হেড পাঁচশো টাকা বলে কথা। (আমি কিন্তু দীপকদা'কে অসম্মান করছি না একটুও, মজা করে বললাম।) এই প্রেমের স্ট্র্যাটেজির ব্যাপারটা বলে অনেক মজার গল্প মনে করিয়ে দিলে, হীরক। সত্যি, যত না প্রেম তার থেকে বেশি স্ট্র্যাটেজি। আর দেখবে স্ট্র্যাটেজি বাতলানোর উৎসাহ তাদেরই বেশি যাদের একটাও প্রেম হয়নি।

      তবে পুকুরপারের আড্ডার ডাকনাম চিল্কা? আড্ডার ঠেককে ভালোবেসে তার এত সুন্দর নাম দেওয়ার মতো একটা ফন্দি যে তোমাদের মাথায় এসেছিল এই জন্য কুর্নিশ।

      Delete
    2. Didigo kal rate thik- thak ghumote parini. Mon ta eto aai- dhai korchilo... Amader aro ekta thek chill, ekta Mather moddhe. Ei sheet kale okhane parar ek dadu ekta ghuri oraten. Silk er toiri ghuritar lej (north Bengal e bole letti) chilo pray 100 haat. Amrao moja peye dedar ga ghamiye sokal- sondhe oratam, namiye antam. Hnapate hnapate cheye dekhtam... Amader ghuri noy, amrai akashe vese cholechhi.. Aj vore Ami sei ghuritake abar swopne dekhechi.. Ar etuku jani, ei Brownian motion er Moto jibone chhitke jawa carom er ghnuti guloke buker moddhe dhore rekhe Ami onelta due hnete jete Pari.. Jodi ei swopno gulo amake na vule jay.

      Delete
    3. খোলা মাঠ, সিল্কের ল্যাজওয়ালা ঘুড়ি, লাটাই হাতে দাদু - এ সব এই দুনিয়ার কথাই হচ্ছে তো? এই কানের কাছে সর্বক্ষণ হর্ন বাজানো দুনিয়াটা? আমি এ সব বাস্তবে কখনও দেখিনি তাই স্বপ্নে দেখার আশাও শূন্য। তোমাকে খুব হিংসে করলাম, হীরক। আর সঙ্গে সঙ্গে এই আশীর্বাদও করলাম, এই স্বপ্নগুলো যেন তোমাকে কক্ষনও না ভোলে।

      Delete
  9. ক্লাস টেনের বাংলা পরীক্ষা। সাত নম্বর প্রশ্ন - রচনা লেখোঃ- বিষয় আড্ডা।
    আজ ফল বেরোবে। সবার মনে এক প্রশ্ন, বাংলায় কে হায়েস্ট পাবে রে?রচনাটা যা বিতিকিচ্ছি ছিল। একটু পর দিদিমনি এসে বললেন, এই বিষয়ে সব থেকে বেশি নম্বর পেয়েছে কুন্তলা বন্দ্যোপাধ্যায়। সত্যি কুন্তলা, রচনাটা যা লিখেছো, তোমায় হায়েস্ট না দিয়ে আমার জাস্ট উপায় ছিল না।
    জোক্‌স্‌ এপার্ট, জীবন যুদ্ধে আড্ডা হল মরুদ্যানের মত, অথই জলে হাবুডুবু খেতে খেতে নিঃশ্বাস নেবার জন্য সুন্দর এক দ্বীপের মত। তবে ভাল আড্ডা পেতে হবে। সকলেই মনে করে দেখুন, অবান্তরের পাতায় আমরা রোজ কুন্তলার সাথে যে আড্ডা জমাই তার কি কোন তুলনা আছে? বিচিত্র বিষয় নিয়ে রোজ কুন্তলা আমাদের সাথে অক্লান্ত উৎসাহে আড্ডা জমাতে আসে। এখানে ঘর সাজাতে হয় না, খাবার জোগাড় করতে হয় না, মন কষাকষি নেই, সময়ের বাধ্যবাধকতাও নেই। নিজের সুবিধামত খালি নেট খুলে বসে পড়লেই হয়। কত রকম ভাবে মন দেওয়া নেওয়া হয়। নতুন মানুষের সাথে পরিচয় হয়। ভাল না লাগলে চুপ করে থাকো, কেউ গুঁতোবে না। নির্মল আনন্দে কিছু সময় কাটিয়ে যাওয়া। এর থেকে ভাল আড্ডা আর কোথায় পাওয়া যাবে?

    ReplyDelete
    Replies
    1. এই কমেন্টের উত্তরে কী লিখব বুঝতে পারছি না। থ্যাংক ইউ বললে মনের ভাব প্রকাশ পাবে না, আবার কিছু না বলে চুপ করে থাকলেও সবাই ভাববে অভদ্র। তাই মনের মধ্যে যে সন্দেহটা হচ্ছে সেটাই মুখ ফুটে বলি, মালবিকা। আমার মনে হয় আপনি অবান্তরকে অন্যায়রকম বেশি ভালোবাসেন আর তাই এই আড্ডাটাকেই আপনার সবথেকে বেশি ভালো মনে হয়। যখন আমাদের সত্যি বাংলা রচনা লেখার বয়স ছিল তখন আমরা দিদিভাইদের মনের এই ভাবটাকে বলতাম, "পার্শিয়ালিটি।" আপাদমস্তক বাংলা ইস্কুলে পড়া মেয়ের দল, মাই নেম ইজ অমুক-এর বেশি ইংরিজি বলতে গেলে হাঁটু কাঁপে, কিন্তু এই ভাবটা কখনও ইংরিজির বদলে মাতৃভাষায় প্রকাশ করার কথা দুঃস্বপ্নেও ভাবিনি। 'পার্শিয়ালিটি'র মধ্যে যে অবিচার আর যন্ত্রণা আছে 'পক্ষপাতিত্ব'র মধ্যে তার এক ছটাকও আছে কি?

      যাই হোক, মোদ্দা কথাটা হচ্ছে আমি নিশ্চিত আপনি অবান্তরের সঙ্গে পার্শিয়ালিটি করে তাকে হায়েস্ট মার্কস দিচ্ছেন। তবে এ পার্শিয়ালিটির সুফল যেহেতু আমিই পাচ্ছি তাই প্রতিবাদ করছি না। বরং মনে মনে বলছি, যেন আমার, থুড়ি, অবান্তরের প্রতি এই পার্শিয়ালিটি আপনার চিরদিন বজায় থাকে।

      Delete
  10. আরে আড্ডার আবার দিন ক্ষণ মান লাগে নাকি? আমি তো ঘুমিয়ে ঘুমিয়েও আড্ডা দিতে পারি। তবে আমরা যারা এক্ষুণি আন্টার্ক্টিকা অভিযানে যাচ্ছি না বা পরবর্তী লোকসভা নির্বাচনে লড়ছি না, তাদের জন্য আড্ডার অপর নাম অক্সিজেন। আর কে না জানে অক্সিজেন ছাড়া জলও তৈরী হবে না।

    ReplyDelete
    Replies
    1. ঠিক ঠিক, সৌরাংশু। আপনার ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে আড্ডা দেওয়ার প্র্যাকটিসটা আমিও করব ভাবছি।

      Delete
  11. Adda chhara amar mote jiboni britha... rojakarer ei hutoputi gnutognuti ( jodio ami motei esob korte chaina... sudhumatro jibon chalanor jonye korte badhyo hoi ) eisober theke jakhon takhon niswas nebar jonyei je kono somoi adda r jonye ami prostut. tobe hna baba oi adda r songe cha ar tar songe ta thakle ami abar ektu beshii prostut... ektu beshirakomer petuk kina... :-)

    ReplyDelete
    Replies
    1. আমিও, ইচ্ছাডানা। আমার পরজন্মে রাজার অযোগ্য ভাই হিসেবে জন্মানোর খুব শখ, যাতে দায়িত্বহীন মস্তিতে জীবন কাটাতে পারি। আর আপনি পেটুক কেন হতে যাবেন, বালাই ষাট। বাই দ্য ওয়ে, সামনের সপ্তাহে আপনার গন্ধরাজ চিকেন বানাবো ঠিক করে রেখেছি। বাজারে একটা লেবুওয়ালাকে শনাক্ত করা গেছে।

      Delete
    2. হাহাহা, আমাকে আপনি এই চিনলেন, ইচ্ছাডানা? আমি চা আর ম্যাগির বাইরে কিছু বানালেই আপনাদের হেঁকেডেকে বলি, গন্ধরাজ চিকেন তো এক্সোটিক ব্যাপার। নিশ্চয় বলব।

      Delete
  12. দুঃখের বিষয় কলকাতায় আমার জানাচেনা যাবতীয় আড্ডা এখন মোদি মমতা এবং শিভাস রিগ্যালে কনসেণ্ট্রেটেড...ফলে আমারও শুধুই মনে হয় এর থেকে তো বাড়ি গিয়ে ঘুমোনো ভালো ছিল (কিন্তু আমার বাড়িতে বসা আড্ডাগুলোয় তো সে পথও নেই !!)

    ReplyDelete
    Replies
    1. হ্যাঁ, হোস্টই যদি ঘুমিয়ে পড়ে তবে সেটা ভালো দেখাবে না। তবে আমি তোমার দুঃখ বুঝতে পারছি, অদিতি। রাজনীতি যতক্ষণ আড্ডার অংশ ততক্ষণ ঠিক আছে, সেটাই গোটা আড্ডা জুড়ে বসলে আমারও ভয়ানক ঘুম পায়।

      Delete
  13. গ্যাংটকে গণ্ডগোল, বারীন ভৌমিকের ব্যারাম।

    ReplyDelete
  14. আহা, আড্ডা খুব ভাল জিনিস। তবে কিনা, আড্ডার অনেক রকমফের আছে। সকালে চায়ের আড্ডা, বিকেলে চায়ের আড্ডা, অফিসের আড্ডা, বাড়ির সকলের সঙ্গে আড্ডা, পাড়ার রকে বসে আড্ডা, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা, ফোনে আড্ডা, হোয়াটস্‌অ্যাপে আড্ডা - আড্ডার কি আর শেষ আছে? শিভ্যাস, ব্রুকবন্ড, আমিনিয়া - এইসব ভেরিয়েব্ল, আড্ডাটাই আসল। :)
    বেড়ে লাগলো।

    ReplyDelete
    Replies
    1. তা ঠিক, অরিজিত। লেখাটা ভালো লেগেছে জেনে খুশি হলাম। থ্যাংক ইউ।

      Delete
  15. Aamar aajkal kromoshoi mone hoy adda byaparta kirom hallucination er moto. Nei....kintu feel kori jeno hochche....kimba ultota adda hochche ....maane sobar orokom ekta feeling hoyto ba hochche je adda hochche...amar nijer hothat mone hoy nah KOTHAY aar aadda hochche..!!!! Aar ei je virtual adda....taate ki aar choriye chitiye bose thaka addakari der mukhe kon KOTHAY dop Kore jwale otha ....kon kothau neebhe jawa...kon kothar faanke thonter kone muchki haasi dhore rakha....taar resh dhore aabar notun golpo sutre poth chola.....emon hoy ki??? Tobu ekhon erokom virtual adda I sombol.......kuntala....tor sathe to koto bochor Dekha hoyna...adda hoyna...kolkatay ele janan dibi? Adda hobe hoyto...aager moto. 14 tarikh tor jonmodin..onek shubhechcha aar bhalobasa janalam. Ei durer addao thakuk...aar kacher adda Kobe hobe Jana's....onekdin hoyna .....

    ReplyDelete
    Replies
    1. আরে তোর আমার জন্মদিন মনে আছে, সাহানা? থ্যাংক ইউ থ্যাংক ইউ। নিশ্চয় জানাব কলকাতা গেলে। তবে আমার তো ভার্চুয়্যাল আড্ডাও বেশ লাগে। সামনে থাকলে, তুই যেমন বললি, সেই মুখের ভাব, মনের কথা অনেক বেশি স্পষ্ট করে বোঝা যায় সত্যি, কিন্তু আঁচটাও বড় বেশি গায়ে লাগে।

      Delete

Post a Comment