বাঙাল বাড়ির আলুপোস্ত



মাঝে মাঝে নাকতলার মায়ের সঙ্গে রান্নাবান্না নিয়ে কথাবার্তা হয়। রেসিপি চালাচালি। চালাচালি মানে শুধুই চলা, একদিক থেকে অন্যদিকে। মা বলেন, আমি দ্রুত মগজে টুকে নিই। মায়েদের রেসিপি যেমন হয়, সোজা এবং অব্যর্থ। তাছাড়া অফিস যাওয়া মায়েদের রেসিপির যে সুবিধটা বাড়তি সেটা তো আছেই। সকালবেলা রেঁধেবেড়েখেয়ে টাইমে অফিস বেরোনো যায়, আর অফিস থেকে ফিরে রেঁধেবেড়েখাওয়ার শক্তি থাকে। নাকতলার মায়ের থেকে শেখা একটা থ্রি-ইনগ্রেডিয়েন্টস্‌ (নুন গুনলে ফোর) মুরগির রেসিপি শিখেছি, তাছাড়াও এবার বাড়ি গিয়ে একটা অসামান্য টমেটোর সুরুয়া খেয়ে এসেছি, সেগুলো অবান্তরে ছাপানোর ইচ্ছে আছে।)

ক্কচিৎ কদাচিৎ হাততালি পাওয়ার লোভে আমি মাকে আমার রান্নার গল্প শোনাই। কোনও একটা রান্না আমি কীভাবে করলাম, সেসব ফলাও করে বলি। সেদিন যেমন চিঁড়ের পোলাও খেতে খেতে রন্ধনপ্রণালী আলোচনা হচ্ছিল। “তারপর ওই আগে ভেজে রাখা বাদামগুলো আর ধনেপাতাকুচি দিয়ে নামিয়ে নিলাম, ব্যস হয়ে গেল” বলে যেই না শেষ করেছি, মা দু’সেকেন্ড কীসের জন্য যেন অপেক্ষা করে থাকলেন, তারপর বললেন, “আর চিনি? চিনি দিলে না?”

নাম যখন পোলাও যখন তখন সেটাতে চিনি দেওয়াই উচিত, কিন্তু আমি দিই না। কারণ আমার বাড়ির চিঁড়ের পোলাওয়ে কখনও চিনি দেওয়া হয় না। অর্চিষ্মান আজীবন মিষ্টি চিঁড়ের পোলাও খেয়ে বড় হয়েছে, ওর নিশ্চয় আমার রাঁধা চিঁড়ের পোলাও খেতে অখাদ্য লাগে, কিন্তু ভদ্রতা করে মুখ বুজে খেয়ে নেয়। আমিও ওর ভদ্রতার সুযোগ নিয়ে বাড়িতে চিনিহীন চিঁড়ের পোলাওয়ের প্রবর্তন করেছি। আমার নিজের অংশটুকু তুলে রেখে অর্চিষ্মানের অংশটুকুতে চিনি মিশিয়ে দিলেই হয়, তাও দিই না।

কেন দিই না, সেটার পেছনে হয়তো আমার অভদ্রতা বা ঠ্যাঁটামোটাই প্রধান, কিন্তু একটু তলিয়ে ভাবলে বোঝা যাবে যে অন্য একটা চোরা কারণও আছে। কারণ না বলে সেটাকে ইনস্টিংক্ট বলাই ভালো। আমার বাড়ির, আমার শৈশবের, আমার অভ্যেস, আমার ট্র্যাডিশনগুলোকে বাঁচিয়ে রাখার ইনস্টিংক্ট। (এমন নয় যে আমাদের বাড়িতে কেবল আমার বাড়ির ট্র্যাডিশনই চলে। অনেক কাজই নাকতলার কায়দায় হয়। কারণ আলোচনা করে আমরা দেখেছি যে সেই কাজের পক্ষে ওই কায়দাটা বেটার। কিন্তু রান্নাটা যেহেতু শুধুই আমি করি, তাই রান্নাঘরে যখন দু’রকম ট্র্যাডিশনের বিবাদ বাধে, তখন আমার ট্র্যাডিশনটা চালিয়ে দেওয়ার একটা অবভিয়াস সুযোগ/ অধিকার আমার আছে। আর নিখুঁত সৌজন্যবোধসম্পন্ন সঙ্গীর সঙ্গে থাকার সুবিধে তো আছেই।)

খুব গোদাভাবে দেখতে গেলে বাঙালি খাওয়াদাওয়ার দুটো গোদা ট্র্যাডিশন। ঘটি ট্র্যাডিশন, বাঙাল ট্র্যাডিশন। তবে এর ভেতরেও অনেক ঘোরপ্যাঁচ থাকতে পারে। নাকতলার বাড়িতে যেমন। নাকতলার মা খাঁটি বাঙাল বাড়ির মেয়ে, নাকতলার বাবা খাঁটি ঘটি। সাতপুরুষ ধরে সাকিন বাগবাজারকিন্তু বাবার বাবা জীবনের বেশিরভাগ সময় চাকরিসূত্রে বাংলার বাইরে কাটিয়েছিলেন এবং বোধহয় সেই কারণেই আমার দিদিশাশুড়ির রান্নায় নাকি ঘটি ছোঁয়া প্রায় ছিলই না। এদিকে আজীবন ঘটি প্রতিবেশীদের সঙ্গে গা ঘেঁষাঘেঁষি করার ফলেই বোধহয় মায়ের বাপের বাড়িতে রান্নায় ঘটিদের মতো মিষ্টি দেওয়ার চল আছে। কাজেই ব্যাপারটা দাঁড়িয়েছিল যে শাশুড়ি ঘটি হয়েও রান্নায় মোটেই মিষ্টি দিতেন না, আর মা ঘোর বাঙাল হয়েও রান্নায় মিষ্টি ছাড়া খেতে পারতেন না। মা বলেছেন, শ্বশুরবাড়িতে প্রথমপ্রথম এসে মিষ্টিহীন রান্না খেতে তাঁর বেশ অসুবিধে হত। তাঁর শাশুড়িমা তখন মায়ের জন্য সেটাই করতেন যেটা আমি অর্চিষ্মানের জন্য করি না, অর্থা কি না নিজেদের রান্না নামিয়ে রেখে পুত্রবধূর জন্য আলাদা করে চিনি মিশিয়ে দিতেন। খেতে বসে কুচকুচ করে চিনি মুখে পড়ত। সেটাও বেশ অদ্ভুত অভিজ্ঞতা।

তবে শ্বশুরবাড়ির খাবার অদ্ভুত লাগার ব্যাপারটা যে খালি ঘটি বাঙালের সংঘাত হলেই হবে, তেমন নয়। আমার বাড়িতে যেমন এ সমস্যা নেই, আমার বাবা মা দুজনের পূর্বপুরুষই পদ্মাপারের লোক। মামাবাড়ি ঢাকা, বাবার বাড়ি বরিশাল। তবু দু’তরফের রান্নাতে বিস্তর তফা। তফাতের একটা কারণ ভৌগোলিক অবস্থান। বরিশালের লোকেরা নদী আর নারকেল গাছের রাজত্বে বাস করে। তাই তারা যাতে পায় তাতেই নারকেলকোরা আর শুঁটকি মাছ দেয়। প্রথমবার বিয়ে হয়ে শ্বশুরবাড়ি এসে মা এ সত্য টের পেয়েছিলেন। পাইকপাড়া থেকে রিষড়া অনেকখানি রাস্তা, তাছাড়া বেরোনোর আগে কান্নাকাটি করে মায়ের বেজায় খিদে পেয়ে গিয়েছিল। তাই তিনি আশীর্বাদের পিঁড়িতে বসে সাত সাতটা রসগোল্লা খেয়ে ফেলেছিলেন। মা অবশ্য এখন দাবি করেন যে খিদেতে নয়, তিনি সাতটা রসগোল্লা খেয়েছিলেন ভদ্রতা করে। আমি ভাবছি আশীর্বাদ করে সবাই একখানা করে রসগোল্লা মুখের কাছে ধরছে, না বললে বোধহয় খারাপ দেখাবে, তাই আমি মুখ বুজে খেয়ে নিচ্ছি। লজ্জা করে যে না বলতে হবে সে কী করে জানব। সে যাই হোক, আমার ঠাকুমা ভয়ানক মিষ্টি খেতে ভালোবাসতেন, পুত্রবধূর রসগোল্লা খাওয়ার ক্ষমতা দেখে তিনি ইমপ্রেসড হলেন। যাক, এতদিনে মিষ্টি খাওয়ার একটা সঙ্গী পাওয়া গেল। সবার আশীর্বাদ হতে আমার ঠাকুমার পালা এল। জেঠিটেঠিরা সব শাঁখ বাগিয়ে ধরলেন, সন্ধ্যের সবথেকে ক্রুশিয়াল আশীর্বাদ হতে চলেছে। সবাই রসগোল্লা নিয়ে এসেছিল, ঠাকুমা এলেন পায়েসের বাটি হাতে নিয়ে। চামচে করে পুত্রবধূর মুখে পায়েস তুলে দিলেন। সারারাত নিভু আঁচে জ্বাল দিয়ে ঘন করা দুধে অল্প সুগন্ধী চাল আর বেশি করে নারকেল কোরা গিজগিজ করছে। পায়েস মুখে দিয়ে মায়ের চোখে নতুন করে জল এসে গেলসবাই ভাবল আহারে, মা মরা মেয়ে নতুন করে মা পেয়ে অভিভূত হয়ে পড়েছে। আসল কারণটা শুধু মা জানলেন (আর অনেকবছর পরে জানলাম আমি)। মায়ের চোখে জলটা এসেছিল মরা মায়ের নয়, মরা মায়ের হাতের পায়েসের কথা মনে করে।

পিঠেপায়েসটা যে ঢাকার লোকে বানাতে জানে এটা অস্বীকার করার কিছু নেই। ঢাকার লোকে অবশ্য দাবি করে পিঠেপায়েস চচ্চড়ি চাটনি সবই তারা অন্যদের থেকে ভালো বানাতে জানে। দাবিটায় সত্যতা থাকলেও থাকতে পারে। আমার মেজমামি ছিলেন ঢাকার মেয়ে। মামির হাতের পাটিসাপটার মতো স্বর্গীয় জিনিস আমি আর খাইনি। মামির হাতের হিংবেগুনের মতো স্বর্গীয় জিনিসও খাইনি। মামির হাতের রুই মাছের ঝোল, পালং শাকের ঘন্ট, শুক্তোর মতোও না। ঢাকার মেজমামির সঙ্গে ফাইট দিলেও দিতে পারেন একমাত্র আমার ফরিদপুরের জেঠি। তবে গোটা ফরিদপুরের লোক ওইরকম রাঁধতে পারে নাকি আমার জেঠির মতো কিছু ক্ষণজন্মা প্রতিভারাই পারেন, সেটা আমি জানি না।

আমাদের বাড়ির রান্নায় অবশ্য এখন আলাদা করে ঢাকা বা বরিশাল কোনও ছোঁয়া আলাদা করে পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না।  আমার ধারণা দুটো মিলেমিশে গেছেতার একটা কারণ হচ্ছে মা যতদিন দিদিমার ছত্রছায়ায় ছিলেন ততদিন কিছুই রান্না করেননি, পুরোটাই করেছেন শ্বশুরবাড়িতে এসে। ঠাকুমাও যে মাকে খুব করে বরিশালের রান্নায় দীক্ষিত করতে পেরেছেন তেমন নয়। কারণ আমার ঠাকুমা রান্নাবান্না ব্যাপারটা খুব পছন্দ করতেন না। কিন্তু ঠাকুমা যে আমলে যে বাড়ির বউ ছিলেন, তাঁদের কাছে “আমার রান্না করতে জঘন্য লাগে” মুখ ফুটে বললে সবাই ওঝা ডাকতে ছুটত। একটা অবিশ্বাস্য দীর্ঘ সময় ধরে, শাশুড়ি ননদ স্বামী এবং পাঁচসন্তানের সংসারে তাঁকে তাঁর বিশ্রী লাগা কাজটা করে যেতে হয়েছে। মা এসে রান্নাঘরের দায়িত্ব নেওয়ার পর ঠাকুমা হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছিলেন। মা নিজের মতো করে রান্না করতেন, ভয়ে ভয়ে থাকতেন অনভ্যস্ত হাতের রান্না খাওয়ার মতো হচ্ছে কি না, কিন্তু সব রান্না মুখে দিয়েই ঠাকুমা সোসাহে বলতেন, দারুণ হয়েছে। দুর্দান্ত হয়েছে। ঠাকুমার উসাহ দেখে বাকিরাও কোনওদিন কিছু বলেনি। এখন আমার মা জ্যামিতিবইয়ের বৃত্তের মতো গোল রুটি বেলতে পারেন, কিন্তু শুরুতে সবক’টাই অস্ট্রেলিয়ার ম্যাপ হয়ে যেত। ঠাকুমার কাছে সেই নিয়ে লজ্জাপ্রকাশ করায় তিনি বলেছিলেন, “আমরা অস্ট্রেলিয়ার ম্যাপের মতো রুটি খেতেই ভালোবাসি। গোল রুটি তো সবাই খায়।”

তবে আমার বিশ্বাস মা একেবারে আনাড়ির মতো রাঁধতেন না। কারণ রেসিপি খুব অদ্ভুত জিনিস। ও জিনিস বইতে থাকে না। থাকে হাতের আঙুলে, জিভের স্মৃতিতে, দৃষ্টিতে, গোটা শরীরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। মা কখনও নিজে রান্না করেননি, কিন্তু রান্নাঘরে দিদিমার কাছে বসে স্লেটপেনসিলে অংক তো কষেছেন? জ্বর গায়ে স্কুল কামাই করে পিঁড়িতে বসে দুধমুড়ি তো খেয়েছেন? খেতে খেতে কখন দুধের বাটিটা হয়ে গেছে আর্কটিক মহাসাগর, মুড়িগুলো তিমি মাছ, আর চামচটা ঠিক যেন হারপুন। একচোখে কালো ফেট্টি বাঁধা মা বীরবিক্রমে তিমি শিকার করে বেড়াচ্ছেন, দু’হাত দূরে একজন যে তেল গরম করে জিরে তেজপাতা ফোড়ন দিচ্ছে, মাছ কেটে নুনহলুদ মাখাচ্ছে, সেসব ধুয়েমুছে সাফ। কিন্তু মায়ের মগজ ওই বয়সেই মারকাটারি মাল্টিটাস্কার, সে আড়চোখে সব দেখে নিচ্ছে, টুকে রাখছে। দিদিমা পাঁচআঙুল জড়ো করে জিরে তুললেন, তারপর তিন আঙুলে নুন। বহুবছর পর যখন মা উনুনের সামনে দাঁড়াবেন, কোথায় ভাইকিং, কোথায় তিমি, কোথায় হারপুন, কোথায় দিদিমা? এই সারি সারি ধনে জিরে লংকা হলুদের অকূল পাথার কে তাঁকে পার করাবে? মায়ের মন বলবে, আর রক্ষা নেই, মগজ বলবে, ঘাবড়িও না, আমার কাছে রেসিপি আছে। আমি জানি কোনটা দিয়ে কী করতে হয়। এই বলে ওই ধুদ্ধুড়ে আউট অফ ফোকাস ছবিখানা স্মৃতির খাঁজ থেকে বার করে হাতের তেলো বুলিয়ে যথাসম্ভব টান করে মায়ের হাতে ধরিয়ে দেবে আর মায়ের অনভ্যস্ত হাতের পাঁচ আঙুল জড়ো হয়ে ভয়ে ভয়ে এগিয়ে যাবে জিরের কৌটোর দিকে।

আমার অবশ্য মা আছেন। তার থেকেও বড় কথা ইন্টারনেট আছে। আলুপোস্ত খাওয়ার ইচ্ছে হলে গুগলে আলুর পর পি টাইপ করতে না করতে সাড়ে তিন লাখ আলুপোস্তর রেসিপি বেরিয়ে পড়বে। হলুদ দেওয়া এবং না দেওয়া, পেঁয়াজ দেওয়া এবং না দেওয়া, জিরে ফোড়ন দেওয়া এবং না দেওয়া, তেল দেওয়া এবং না দেওয়া। মাইক্রোওয়েভে রাঁধা, স্লোকুকারে রাঁধা, গ্যাসে রাঁধা, ওভেনে রাঁধা। অবিশ্বাস্য রেঞ্জ। কিন্তু আরও অবিশ্বাস্য ব্যাপার হচ্ছে এই সাড়ে তিন লাখ কায়দার মধ্যে একটিও আমার বাড়ির মতো না। আমার ছোটবেলায় টিভি দেখতে দেখতে রুটি দিয়ে খাওয়া আলুপোস্তর মতো না। নামিদামি শেফেরা তাঁদের আজীবনের অভিজ্ঞতা খরচ করে আলুপোস্ত রেঁধেছেন, ক্রমাগত ট্রায়াল অ্যান্ড এররের মাধ্যমে রেসিপিকে খুঁতহীন করেছেন, তবু আমার মাজেঠিমার হাতের মতো করতে পারেননি। অদ্ভুত।

কাজেই এই আমাদের বাড়ির আলুপোস্তর রেসিপি ইন্টারনেটের ব্যাংকে জমা রইল। আমি যতদিন বেঁচে থাকব, এভাবেই পোস্ত রাঁধব। আমার বাড়ির ট্র্যাডিশন আমি না রাখলে কে রাখবে?


আমাদের বাড়ির মতো আলুপোস্ত রাঁধতে গেলে . . .  

কী লাগবেঃ
চারটে বড় আলু খোসা ছাড়িয়ে টুকরো করে কাটা
পোস্ত দুই বড় চামচ, নুন কাঁচালংকা দিয়ে বাটা* (মা বলেন, খুব মিহি করে না বাটতে,  পোস্ত একটু “গোড়া গোড়া” রাখতে)
নুন ও সর্ষের তেল, প্রয়োজনমতো

কী করে করবেন
জলে নুন দিয়ে আলু সেদ্ধ করতে বসান। এমন পাত্রেই বসান যেখানে গোটা রান্নাটা করতে পারবেন।  আলু পুরো সেদ্ধ হওয়ার পর বাড়তি জলটুকু ফেলে দিন (বা একটা পাত্রে রাখুন, পরে দরকার হলে অল্প দেবেন)। পোস্তবাটাটা আলুগুলোর মধ্যে দিয়ে নাড়ুনচাড়ুন। যদি দেখেন খুব শুকনো লাগছে, পাশে রাখা জলটা অল্প অল্প দিন, যতক্ষণ না ঝোলের ঘনত্ব আপনার মনমতো হচ্ছে। নুনঝাল চাখুন। গ্যাস বন্ধ করুন। ওপর থেকে সর্ষের তেল চামচে করে ছড়িয়ে দিন।

গরম রুটি দিয়ে টিভি দেখতে দেখতে খান।

*আমার শিলনোড়া নেই, মিক্সিও না। ছাত্রজীবনের স্মৃতি হিসেবে একখানা কফিগ্রাইন্ডার আছে। আমি পোস্তটা কোর্স সেটিং-এ দিয়ে গুঁড়ো করে নিয়ে, তারপর জল মেশাই, তারপর কাঁচালংকা ঘষে মিশিয়ে দিই।


এই অবস্থায় খেতে তো অমৃতের মতো লাগেই, কিন্তু এর পরিপূর্ণ মহিমা টের পেতে হলে পরদিন সকালে জ্বাল দিয়ে ঝোল সম্পূর্ণ শুকিয়ে নিয়ে মুড়ি দিয়ে খেয়ে দেখতে হবে। ভাবুন একবার, মুড়িপোস্ত! বাঙাল বাড়িতে?! আগেই বলেছিলাম, ট্র্যাডিশন খুব অদ্ভুত জিনিস।


Comments

  1. Postor chobi dekhe jiv e jol chole elo. Ar amra ghoti desher manush, biulir dal r posto pele to kothai nei.

    ReplyDelete
    Replies
    1. হাহা, সুহানি, বিউলির ডালটা আমাদের বাড়িতে একেবারেই চলে না, কিন্তু পোস্ত খুবই চলে।

      Delete
  2. thik bolecho Kuntala, Tradition khub adbhut jinish r recipe o. shotti i recipe thake smriti te ...tomar alupostor recipeta o alada...cheshta kore dekhbo

    ReplyDelete
    Replies
    1. আরে দেবশ্রী, এটা রান্না এতই সোজা যে এটাকে রেসিপি বলা মানে বেশি গুরুত্ব দেওয়া। তুমি চেষ্টা করে দেখতে পার, তবে ভালো লাগবে কিনা কথা দিতে পারছি না, আমি নিশ্চিত তোমাদের বাড়িতেও একটা ট্র্যাডিশনাল পোস্ত আছে।

      Delete
    2. jano kalke tomar lekha theke onupranito ba/ebong uytshahito hoye ami kal office theke giye Riddhir jonno ekta sahoj doi chicken baniyechilam (eta amar ma banaten amar jakhan jar hoto, mukhe ruchi thakto na). riddhi kal chicken khete chaichilo, rannar didi baniye dito kintu amar mathate ghurchilo tomar bola kotha gulo. thik i to recipe to shudhu boi ba khatate lekha thake na r best recipe gulo lekha thake jibhe, smritite, emon ki anubhuti te. Riddhiro smriti thakuk or mayer hater chicken....parobortikal ki habe jani na. Shirshendur Sanket er mato habe ta bhabi na... kichu tradition amrao rekhe jai parer projanmer jonno.

      r haan traditional posto ekta amader o ache, shetao muri diye khete khub bhalo lage.

      Delete
    3. কী বলব বল তো, দেবশ্রী? অনেকরকম অনুভূতি একসঙ্গে মনে হচ্ছে, তাদের কোনওটার একটার সঙ্গে আরেকটার মিল নেই। একবার মনে হচ্ছে ঋদ্ধির কী মজা, মায়ের হাতে রাঁধা দিদিমার রেসিপির মুরগি দিয়ে ডিনার করল, আবার মনে হচ্ছে, অফিস থেকে বাড়ি ফিরে তোমার রান্না করতে কষ্ট হল নাকি। তবে তুমি চিন্তা কোরো না, ট্র্যাডিশন আপনি থাকবে। এই যে অফিস থেকে ফিরে চমৎকার রান্না করে খাওয়াচ্ছ, একসঙ্গে বসে টুনটুনির বই পড়ছ, এগুলো সব ওই ব্রেনের খাঁজে খাঁজে জমা হয়ে থাকছে, কোনও ইরেজারের সাধ্য নেই এগুলো মুছে দেওয়ার।

      Delete
  3. Ki shundor recipe ta! Dui bhabei banabo. Ami ruti diye kokhono aloo posto khaini ... sheta o try korbo. Thank you Kuntala ... tomar barir tradition jeno eyi bhabe e tumi bojaaye rakhte paro.
    Lekha ta o shundor ... mon bhore gelo.

    ReplyDelete
    Replies
    1. এই ভাত রুটি দিয়ে খাওয়ার ব্যাপারটা আমাদের বাড়ির আরেকটা ট্র্যাডিশন, শর্মিলা। আমরা সব দিয়েই সব খাই। আমার বাবার ফেভারিট খাওয়ার কম্বো হচ্ছে রুটি দিয়ে মাছের ঝোল। তরকারির জে ভাত দিয়ে খাওয়ার/ রুটি দিয়ে খাওয়ার বাছবিচার হয় সেটা আমি জেনেছি বেশ বড় হয়ে।

      Delete
  4. অন্বেষা সেনগুপ্তMarch 17, 2016 at 2:23 AM

    আহাহাহাহাহা, দেখেই খিদে পেয়ে গেল যে ! আলুপোস্ত, একটু বেশি সর্ষের তেল দিয়ে, আর সঙ্গে কাঁচালঙ্কা সর্ষের তেল দিয়ে পোস্তবাটা - অগর ফিরদৌস বর রু-এ জমীন অস্ত, হমীন অস্ত,হমীন অস্ত, হমীন অস্ত!
    বিউলির ডাল বস্তুটা আমার খুব একটা পোষায় না| আর, আমি একেবারে নিপাট বাঙাল হওয়া সত্বেও, আমাদের বাড়ির তরকারিতে মিষ্টি দেওয়া হয়|

    ReplyDelete
    Replies
    1. ওহ, রান্নার মিষ্টি না দেওয়াটা রার মানে ততটাও বাঙাল নয়, যতটা আমি ভেবেছিলাম। বিউলির ডাল আমিও চেখে দেখেছি, অন্বেষা, খুব বেশি মহিমা টের পাইনি।

      Delete
  5. মায়ের চোখে জলটা এসেছিল মরা মায়ের নয়, মরা মায়ের হাতের পায়েসের কথা মনে করে।mon ke chuye jaoa lekha...baro bhalo..kemni kore lekho balo to boss

    amader ma dida ra onek kichui adjust korechen,onek kastoi korechen,sei gulo bhable majhe majhe kharap lage..

    muriposto to ami grand hotel er breakfast chere humhum kore khabo...kachha pijay ar jhal chanachur samanyo..oh mama..ei alu posto takei age seddho na kore age kosha,pore seddho try korte paro..disadvant..hapa/time ta ektu besi lagbe

    prosenjit

    ReplyDelete
    Replies
    1. মুড়িপোস্তর ব্যাপারে আমি তোমার সঙ্গে একমত, প্রসেনজিৎ। মন্তব্য করার জন্য অনেক ধন্যবাদ।

      Delete
  6. "এই বলে ওই ধুদ্ধুড়ে আউট অফ ফোকাস ছবিখানা স্মৃতির খাঁজ থেকে বার করে হাতের তেলো বুলিয়ে যথাসম্ভব টান করে মায়ের হাতে ধরিয়ে দেবে" - অসাধারণ লাগলো, গোটা পরিচ্ছেদ টাই।
    সাদা জিরে ফোড়ন দিয়ে আলুপোস্ত যারা রাঁধে , তারা কি মানুষ? আলুপোস্ত কে তাদের হাত থেকে সযত্নে বাঁচিয়ে রাখতে হবে :)

    ReplyDelete
    Replies
    1. থ্যাংক ইউ, থ্যাংক ইউ, কাকলি। জিরে ফোড়ন দিয়ে পোস্ত রাঁধাটা যে একটা ঘৃণ্য এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ সে নিয়ে আমি তোমার সঙ্গে একমত।

      Delete
  7. Khub bhalolaglo lekhata pore. Keno jani na amar thakumar (ami mamma boltam) mone porchhe khub.

    ReplyDelete
    Replies
    1. থ্যাংক ইউ, সায়ন। ঠাকুমারা ওইরকমই হন। সামনে না থেকেও সর্বক্ষণ মনের মধ্যে ঘোরাফেরা করেন।

      Delete
  8. khub bhalo laglo pore, aloo posto r ki sundar chehara hoyeche !!!

    ReplyDelete
    Replies
    1. হাহা, থ্যাংক ইউ, তিন্নি।

      Delete
  9. Chobi khana dekhei khide peye gelo...2011 theke Americar basinda ami, posto dekhle lobhir moto achoron kori... tomar recipe durdanto !

    ReplyDelete
  10. ami jani na alu posto ki kore radhte hoy. kintu khete khubi bhalobasi. shutki mach o equally bhalobasi. amar gushtir sathe dur duranto diyeo kono bangal connection nei. choddo purush dhore kolkatar basinda. kintu ghoti-bangal er stereotype amar opor invalid.

    ReplyDelete
    Replies
    1. বাঃ, এটা বেশ ভালো ব্যাপার, কুহেলি।

      Delete
  11. Ami bangal, amar bou ghoti. Amar ma er alu poshto apnader moto kintu amar bou er mote ota alu-poshto i noi. Bardhaman er ghoti er alu-poshto i sotyi alu poshto. Ei prosonge aro boli, Dhaka-r bangal ra kintu ranna-i ektu mishti dai. Eta ami amar byaktigoto obhigota-i jani, Leela Majumdar o likhechen (kothai bhule giyechi).

    ReplyDelete
    Replies
    1. সে যতই সত্যি হোক না কেন, আমার বাবা এই মিথ্যে পোস্তই ভালো। ঢাকার লোকেদের মিষ্টি দেওয়ার ব্যাপারটা হয়তো ঠিকই বলেছেন, ঘনাদা, আমার ধারণা আমাদের বাড়ির মিষ্টিহীনতাটা বরিশালের ছোঁয়া। কিংবা স্রেফ আমাদের বাড়ির চরম নোনতা এবং তেতো ব্যক্তিত্বের মানুষদের।

      Delete
    2. Amar ma ar bou er modhye kar alu-poshto beshi bhalo sei bole ami mara pori ar ki ! Somosya holo, ei ranna ta te ami nije thik subidha korte pari na.

      Delete
  12. darun post. aluposto dekhei jhnapie porlam. recipe ta khub bhalo laglo. tel kom khub. try korbo. ma er hater rannar sottii kono tulona hoina...

    ReplyDelete
    Replies
    1. ওই তেলের ব্যাপারটা আপনি খেয়াল করেছেন বলে বলছি, ইচ্ছাডানা, এখন তো জন্ডিসের ভয়ে আমরা ওই ওপর থেকে তেল ছড়ানোর ব্যাপারটা করছি না, কাজেই এটা এখন অয়েল-ফ্রি রেসিপি। সেটাও রীতিমত ভালো খেতে।

      Delete
  13. এই বলে ওই ধুদ্ধুড়ে আউট অফ ফোকাস ছবিখানা স্মৃতির খাঁজ থেকে বার করে হাতের তেলো বুলিয়ে যথাসম্ভব টান করে মায়ের হাতে ধরিয়ে দেবে আর মায়ের অনভ্যস্ত হাতের পাঁচ আঙুল জড়ো হয়ে ভয়ে ভয়ে এগিয়ে যাবে জিরের কৌটোর দিকে। - sudhu ei line tar jonnei apnar nobel pawa uchit. :) :) Aamar Maa, Bou, Sasuri Maa sabai ache apnaar lekhay. Daarun. Khub Bhalo Laglo. Posto ebhabe randhbo. Dekhi kamon laage.

    ReplyDelete
    Replies
    1. ধন্যবাদ, চন্দ্রচূড়।

      Delete
  14. bohu bohu din dhore kono ekta problem er jonno abantor e comment post hocchilona.. ei priyo jinis niye post ta khub e sundor hoyeche.. ami apadmostok ghoti.. muri postor kotha abantor e ekdom asha korini.. hahaha.. amra to alu postor jhol, sukno, kancha posto bata, postor bora, kopi posto,peyaj posto, potol posto sob e khai.. tomar tao besh dekhte lagche.. lekhata khub bhalo..

    ReplyDelete
  15. kintu ami alu age seddho korina..

    ReplyDelete
    Replies
    1. ওই আলু সেদ্ধ করে নেওয়ার ব্যাপারটা আমার ধারণা সময় আর খাটুনি বাঁচানোর জন্য, ঊর্মি। ভাজতে হলে সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।

      Delete
  16. Bah, simple, AR tai Sundar. Aro sonkhepe sarte chaile Amar Masi r recipe dichchi - er theke sonkhep hoyna. Tobe kemon lagbe Janina. Oi timi shikar ityadi r onek habijabi smriti r modhye peripherally Nana indriyo o modhye diye magaje gethe jaoar moto, Amar barite ETA hoto bolei hoyto Amar eita bhalo I lage, bakider lagbe na. Lekgar oi jayga ta khub bhalo hoyechhe.

    Recipe - korai a sarsher tel diye tar modhyei Chhoto kore tukro Alu, posto (gota, chaile olpo bata, puro mihi bata noy), kancha lonka, holud, nun. Byas, olpo aanch a. Tel age garam noy, kissu noy, tel ei alu seddho AR ki....borojor Pore halka joler chhite, jotokahan na posto siddho hochche AR alu desired makha state. Ektu halka sarsher tel er gondho AR jhanz thakbe, seta jader pochhondo noy, tader ETA bhalo lagbe na.

    ReplyDelete
    Replies
    1. বাঃ, আপনার মাসির রেসিপিটা চমৎকার। একদিন নিশ্চয় করে দেখব।

      Delete
  17. লেখাটা আলুপোস্তর মতই সুস্বাদু।
    আর আলুপোস্তর ছবিটা দেখে এই বিকেলে প্রচন্ড খিদে পেয়ে গেল, কাল লাঞ্চে খেতেই হবে। :)

    ReplyDelete
    Replies
    1. হাহা, থ্যাংক ইউ, অরিজিত।

      Delete
  18. অসাধারণ রেসিপি । কারণ আমি নিজে বাঙাল । নতুন কিছু রেসিপি থাকলে দয়া করে জানাবেন ।

    ReplyDelete
  19. Replies
    1. হাহা, থ্যাংক ইউ, রণিতা।

      Delete

Post a Comment