Writing Tag



উৎস গুগল ইমেজেস

লোকের লেখা পড়তে তো আমার ভালো লাগেই, কিন্তু লোকে কী করে লেখে সেটা পড়তেও সমান ভালো লাগে। কখন লেখে, কোথায় লেখে, টানা লেখে না লিখতে লিখতে বার বার জল খেতে ওঠে এইসব। যাঁরা বিখ্যাত লেখক তাঁদের সৃষ্টির প্রক্রিয়ার কথা তো জানতে ইচ্ছে করেই, কিন্তু ইন্টারনেটের সুবিধে হচ্ছে আমার মতো অলেখকরাও চাইলে নিজেদের কথা নিজেরা বলতে পারি। 'রাইটিং ট্যাগ বলে একটা প্রশ্নপত্র আছে ইন্টারনেটে, আমি সেটা সলভ্‌ করে ছেপে দিলাম। যেহেতু ট্যাগটা ওদের দেশে তৈরি, তাই তাতে নানারকম আগডুম বাগডুম প্রশ্ন ছিল, যেমন ‘হাতের লেখা' প্রিন্টেড না কার্সিভ?' যেগুলো আমার ক্ষেত্রে অবান্তর। কাজেই আমি সেগুলো বাদ দিয়ে নিজে কিছু প্রশ্ন যোগ করেছি। আরও একটা ডিসক্লেমার, আমি এখানে ব্লগিংকে রাইটিং-এর সঙ্গে একাকার করে দেখেছি, আশা করি সত্যিকারের রাইটাররা রাগ করবেন না।


*****

১। লেখার আইডিয়া আসে কোথা থেকেঃ অন্যের লেখা, গল্পের বই, রাস্তাঘাট থেকে। অসংখ্য, অগুন্তি আইডিয়া। আমার সমস্যাটা আইডিয়ার অভাবের নয়। আমার সমস্যা হল সেই আইডিয়াগুলোর পেছনে সময় না দেওয়ার।

২। আইডিয়ার পাওয়ার পরঃ লেখা শুরু হয়। একটা ব্যাপার আমি বার বার খেয়াল করেছি, আইডিয়া বেশিদিন ফেলে রাখলে অবধারিত সেটাকে বোকা বোকা মনে হয়। মনে হয়, মাগো, এই নিয়ে আবার লেখে কী করে লোকে? কাজেই পত্রপাঠ লেখা শুরু করা দরকার। লেখার শুরু, মাঝখান, শেষ তক্ষুনি মাথায় আসে না। খানিকক্ষণ বিষয়টা নিয়ে আনতাবড়ি টাইপ করার পর মনে হয় আচ্ছা, এইভাবে শুরু করা যেতে পারে। তাছাড়া লেখা শুরুর আগে এবং চলাকালীন যে সব পয়েন্টগুলো মাথায় আসে আলাদা কোনও জায়গায় লিখে রাখলে সুবিধে হয়ে দেখেছি। এখন আমি গোয়েন্দা পরাশর বর্মা-কে নিয়ে একটা পোস্ট লিখছি, তার পয়েন্টস তালিকা আপাতত এইরকম দেখাচ্ছে (এই পয়েন্টগুলো অবশ্য লিখতে লিখতে নয়, পড়তে পড়তে মাথায় এসেছে, তবু উদাহরণ হিসেবে দিলাম।)-

পরাশর বর্মা সত্যি একজনের ছায়াবলম্বনে
কবি হিসেবে তিনি মান পেতে চান, গোয়েন্দা হিসেবে নয়
"দোলা দেবার মতো মেয়ে/ যেন সমস্ত চোখের জল শুকিয়ে গিয়ে মরা নদীর বালি আর নুড়িগুলো বেরিয়ে আছে। "
একবারে পুরো গল্পটা বলা হচ্ছে, গল্পের সঙ্গে সঙ্গে আমরা এগোচ্ছি না। 
পরাশর ও সাংঘাতিক শিশিঃ বম্বে
পরাশর ও অশ্লীল গল্পঃ দিল্লি
নামকরণের অ্যাংগেল
মাঝখান থেকে গল্প শুরু করার প্রবণতা
বোম্বাই বার বার ফিরে ফিরে এসেছে, প্রেমেন্দ্র মিত্রের বম্বে যাওয়ার ব্যাপারটা লিখতে হবে
ঘনাদার ছাপ, ভাঙা রেডিও, ইনফ্রারেড আলোর ক্যামেরা আর টেপরেকর্ডার বসানো (আসলে নেই)
পরাশরের কবিতা দর্শন বোঝানোর জন্য 'পরাশর বর্মা ও কবিতার ঘণ্ট’ থেকে উদ্ধৃতি দেওয়া যেতে পারে (সমগ্র ২)
কবিতার ঘণ্ট-তে খুনি পরাশর বর্মাকে ডাক পাঠাচ্ছে, সেই চমকও আছে। 
কোথাওই/ বেশিরভাগ গল্পেই ক্লায়েন্টের সঙ্গে পরাশরের প্রথম মোলাকাত দেখা যায় না। 
পরাশর শখের বৈজ্ঞানিক
 প্লটবৈচিত্র্যঃ ত্রিকোণ প্রেমের গল্প, বিদেশী মুদ্রা পাচার…।

ফাইন্যাল লেখায় খুব সম্ভবত সবগুলো পয়েন্ট ছুঁয়ে যাওয়া হবে না, তবু কী কী ছুঁয়ে যাওয়া যেতে পারে সে বিষয়ে একটা ধারণা করার জন্য এই লিস্ট খুব কাজে দেয়।

৩। লেখার স্পিডঃ মারাত্মক ঢিলে। আমি খেয়াল করে দেখেছি, ফাঁকিবাজি, ইন্টারনেট চেক, জল খাওয়া, বাথরুম যাওয়া ইত্যাদি মিলিয়ে আমি গড়ে দু’ঘণ্টায় মোটে শ’পাঁচেক শব্দ লিখি/টাইপ করি। 

৪। কোথায় লিখতে ভালো লাগে? খাটে বসে। কিন্তু অচিরেই বসাটা আধশোয়া এবং তারপর শবাসনের রূপান্তরিত হয়, যে ভঙ্গিটা লেখার পক্ষে অসুবিধেজনক। কাজেই ভালো না লাগলেও লেখার জন্য চেয়ারটেবিল আদর্শ। বিছানার ওপর অনেকসময় ছোট টেবিলটা নিয়ে বসি, কিন্তু ওই পুঁচকে টেবিলকেও কান ধরে নামিয়ে দিতে কতক্ষণ? কাজেই সেফেস্ট হচ্ছে চেয়ারটেবিলে বসে লেখা।

৫। কখন লিখতে ভালো লাগে? লেখার বিষয়বস্তু মাথায় থাকলে এবং মনে সদিচ্ছা থাকলে সারাদিনই লিখতে ভালো লাগে। কিন্তু সেটা খেয়েপরে বাঁচার পক্ষে বিশেষ অনুকূল নয়। কাজেই আমি চেষ্টা করি ভোরবেলা লিখতে। এতে দুটো সুবিধে হয়। এক, দিনের শুরুটা একটা ভালোলাগা কাজ দিয়ে করা যায়। আর সারাদিন ‘লিখলাম না লিখলাম না' সে অপরাধবোধ বা আফসোস হয় না।

৬। লেখার টার্গেটঃ হয় দু’ঘণ্টা নয় এক হাজার শব্দ। রোজ হয় না বলাই বাহুল্য, কিন্তু রোজ যে হওয়ানোর ইচ্ছে থাকে সেটা সত্যি। 

৭। লিখতে লিখতে গান শুনি কি? শুনি, তবে বাণীপ্রধান নয়। সেগুলো ভাবনায় ছেদ ঘটায়। বেস্ট হচ্ছে হিন্দুস্থানী মার্গ সংগীত। শুনতেও ভালো, কাজেও অসুবিধে করে না।

৮। একসময় কি একটা লেখাই লিখি? পাগল? পাঁচশোটা ড্রাফট, একেকটা একেক স্টেজে আটকে থাকে। একটার থেকে আরেকটায় লাফালাফি করে বেড়াই। কোনওটাই শেষ করি না।

৯। লেখাসংক্রান্ত প্রিয় উদ্ধৃতিঃ অনেক আছে, তবে নিচে যে দুটো লিখলাম সে দুটো আমার মতো প্রতিভাহীনদের আশ্বস্ত করার জন্য দরকারি।

I think that all writing is useful for honing writing skills. I think you get better as a writer by writing, and whether that means that you're writing a singularly deep and moving novel about the pain or pleasure of modern existence or you're writing Smeagol-Gollum slash you're still putting one damn word after another and learning as a writer.
                                                                                                              —Neil Gaiman

Quantity generates quality. 
                                                                                                      — Ray Bradbury 

১০। কম্পিউটার না খাতা? কম্পিউটারের সুবিধে হচ্ছে কম সময়ে বেশি লেখা যায়। আমার (এবং বাকি সবারই আমার ধারণা) হাতের লেখার থেকে টাইপিং-এর স্পিড অনেক বেশি। তাছাড়াও এন্ড প্রোডাক্টটা যেহেতু কম্পিউটারেই যাবে, টাইপ করার সময়টা বাঁচে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে খাতার উপযোগিতা অনস্বীকার্য। এক, ইন্টারনেটের ছোঁয়া নেই, দুই, যেহেতু বাধ্য হয়েই সময় বেশি লাগে, লিখতে লিখতে মাথা চালানোর সুযোগটা বেশি থাকে। অর্থাৎ, ব্রেনস্টর্মিং-এর পর্যায়ে খাতা বেটার। তবে আমার মতো লোকের খাতায় লেখার অসুবিধে হচ্ছে যে আমার সবসময়েই নতুন খাতায় লিখতে ইচ্ছে করে। কাজেই তারা সংখ্যায় রক্তবীজের মতো বাড়তে থাকে। শত শত খাতা, ডায়রি, নোটপ্যাড মাত্র দু’তিন পাতা লেখা হয়ে বাড়িতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। ওগুলোতে আর ফিরে গিয়ে লেখা হবে না জানি, কিন্তু কত রেনফরেস্ট কচুকাটা করে ওই সব খাতা বানানো হয়েছে মনে পড়লে ছুঁড়ে ফেলে দিতে হাত কাঁপে।

১১। প্রিয় পেন? সেলো ব্র্যান্ডের যে কোনও পেন। আপাতত সেলো ফাইনগ্রিপ-এ লিখছি। কোন্‌ কনফারেন্স-এ যেন দিয়েছিল।

১২। লিখতে লিখতে খাওয়া? নাঃ। বড্ড ডিস্ট্র্যাক্টিং। বড়জোর চা চলতে পারে। বিস্কুট ছাড়া।

১৩। লেখার জন্য সবথেকে উপকারীঃ পড়া

১৪। লেখার জন্য সবথেকে ক্ষতিকরঃ ইন্টারনেট

১৫। গোটা ব্যাপারটার মধ্যে সবথেকে শক্ত ব্যাপারঃ লেগে থাকা। লিখতে লিখতে নিজেই যখন বুঝি লেখাটা জঘন্য হচ্ছে তখনও ‘হোক খারাপ, তবু লিখব’ বলে ল্যাপটপ বা খাতা কামড়ে পড়ে থাকা।

১৬। লেখাবিষয়ক কোন অভ্যেস আমার আশু দরকারঃ যা শুরু করেছি, তা শেষ করা।

১৭। কেন লিখি? একসময় মনে হত, বিখ্যাত হওয়ার জন্য। এখন মনে হয়, না লিখলে খুব খারাপ লাগবে, তাই।



Comments

  1. ki bhalo post....
    point 8, 9, 13, 15 , 16 r jonoy like dilam.

    ReplyDelete
    Replies
    1. থ্যাংক ইউ, প্রিয়াঙ্কা।

      Delete
  2. ১০ নম্বর পয়েন্টটা পড়ে অবাক হলাম। আমি আবার খাতা ছাড়া লিখতেই পারি না। এমনকি খাতায় আমার হাতের লেখা দেখলেই বোঝা যাবে যে কখন আমাএ ভেবে লিখতে হচ্ছে আর কখন মাথা হাতের চেয়ে অধিক বেগে চলছে।
    :)
    -শুভরূপ

    ReplyDelete
    Replies
    1. ওহ, আমার কিন্তু ধারণা ছিল খাতায় লেখার লোক আজকাল কমে যাচ্ছে, শুভরূপ। আপনি খাতাকলম চালু রেখেছেন জেনে ভালো লাগল।

      Delete
  3. khub khub bhalo post. darun laglo. aapni aaro likhun, bhalo likhun - ei shubheccha thaklo.

    Indrani

    ReplyDelete
    Replies
    1. aar high five oi notun khatar byapar e.. oi rog ta aamaro aache..

      Delete
    2. হাই ফাইভ, ইন্দ্রাণী।

      Delete
  4. Khub shundor post. Khata computer-er dilemma amar probol. Khatay na likhle lekha ashtei chay na amar, specially Bangla lekha, aar aajkaal khata-r theke computer-er shongei shomoy katai beshi, ei contradiction-e goto ek bochhor kichhui lekha hoyni. Ekhon theke aste aste cheshta korchhi computer-e lekhar shonge maniye nite, dekha jaak. :( :(

    ReplyDelete
    Replies
    1. নিশ্চয়, শ্রমণ, লিখতে থাকো, আমরা পড়ব।

      Delete
  5. আমার সঙ্গে কিছু কিছু পয়েন্ট একেবারে মিলে গেল!

    ReplyDelete
    Replies
    1. হাহা, হাই ফাইভ, অলোকপর্ণা।

      Delete

Post a Comment