ফ্রেঞ্চ উইন্ডো



মূল গল্পঃ The Open Window
লেখকঃ Saki

*****

কামরায় ঢুকে বিপ্লব সরকার দেখলেন জানালার পাশের সিটটা অলরেডি দখল হয়ে গেছে। একটা ষণ্ডা দেখতে বাচ্চা ছেলে, হাতে একটা চিপসের প্যাকেট নিয়ে বসে আছে। বসে বসে পা দোলাচ্ছে। মুখ চলছে।  মাঝে মাঝে হাঁ হচ্ছে, তাতে ভেতরে হলুদ রঙের চিপসের মণ্ড মাখামাখি লাল জিভ লকলকিয়ে উঠছে। আশপাশের সিট, মেঝে জুড়ে চিপসের গুঁড়ো ছড়াছড়ি।

ছেলেটার উল্টোদিকে বসে আছেন দুজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ। একজন পুরুষ, একজন মহিলা। দুজনেই ষণ্ডা, দুজনেরই সারাশরীর থেকে আত্মবিশ্বাস ঠিকরোচ্ছে। মা বাবা দুজনেই ছেলের কার্বন কপি। 

বাবামায়ের মধ্যে কিছু একটা উত্তপ্ত কথোপকথন চলছিল, থেমে গেল। বিপ্লব হাসার চেষ্টা করলেন, প্রত্যুত্তরে কোনও হাসি এল না। তিন জোড়া চোখ এখন তাঁর দিকে সোজা তাকিয়ে আছে। যুদ্ধ শুরুর আগের মুহূর্তে চোখে চোখ রেখে মেপে নিচ্ছে প্রতিপক্ষের শক্তি। 

জানালার সিটের দিকে আরেকবার অসহায় ভাবে তাকালেন বিপ্লব। লাস্ট মোমেন্টে বুকিং করার সময় জানালার সিটটা খালি পেয়ে কী স্বস্তিই না পেয়েছিলেন। এসি কামরায় জানালার অবশ্য খুব সুবিধে নেই। হাওয়া না আসলে জানালাকে জানালা বলতে বাধে বিপ্লবের। সে সুবিধে ছিল ছোটবেলায়, যখন তিনি আর তাঁর দিদি বাবামায়ের সঙ্গে সেকেন্ড ক্লাসে চেপে দিল্লি বম্বে বৃন্দাবন মথুরা বেড়াতে যেতেন। হাওয়া আর হাওয়ার সঙ্গে ধুলো। খেতে খেতে যাও সারারাস্তা। অবশ্য হাওয়া খাওয়ার সৌভাগ্য বিপ্লবের হত না বেশি, দিদির কপালেই সে সুখ জুটত। যদিও বা অনেক কাকুতিমিনতি করে, মাংকিটুপি পরার অপমানজনক শর্ত মেনে তিনি জানালার পাশে বসতে পেতেন, আধঘণ্টা হতে না হতে মায়ের ভবিষ্যদ্বাণী নির্ভুল করে প্রবল হাঁচি শুরু হত। ব্যস তাঁর হাওয়া খাওয়ার ওইখানেই সমাপ্তি, জানালা আবার দিদির কবলে। 

তবু যে তিনি জানালার ধার বেছেছেন তার কারণ আছে। একটা মিনিমাম মাইনে পাওয়ার পর আর সেকেন্ড ক্লাসে চড়া যায় না। এসি কামরাতেও জানালাটা থাকলে একটা ছুতো করে আশেপাশের লোকের আই কন্ট্যাক্ট এড়িয়ে অন্তত বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকা যায়। 

এমন সময় একটা ধাক্কা এসে বিপ্লবের ভাবনার সুতো ছিঁড়ে দিল। দিদি। দিদির পেছন পেছন সুটকেস ঘাড়ে নিয়ে একটা লালজামা কুলি। বিপ্লববাবু বলেছিলেন তাঁকে ছাড়তে আসার কোনও দরকার নেই, তিনি ম্যানেজ করতে পারবেন, যথারীতি কাজে দেয়নি। ইন ফ্যাক্ট, কথাটা দিদির কানে ঢুকেছে কিনা সেটাই বিপ্লব বুঝতে পারেননি। দিদি যেমন তৈরি হচ্ছিলেন তেমনই তৈরি হতে থাকলেন, বিপ্লবের গোছানো সুটকেস ঠিক করে গোছানো হয়েছে কি না নিজে হাতে পরীক্ষা করে দেখে এবং ভুলগুলো ঠিক করে শোওয়ার পাজামা নিচে পাঠিয়ে, দাড়ি কামানোর সরঞ্জাম আর হাওয়াই চটি ওপরে এনে রাখছিলেন। ষ্টেশনে পৌঁছে কুলি ধরার দায়িত্ব নিজে নিয়ে বিপ্লববাবুকে ট্রেনে উঠে সিট খুঁজে বসার আদেশ দিয়েছিলেন।  

বোঝাই যাচ্ছে যে আদেশটা বিপ্লববাবু পালন করে উঠতে পারেননি। 

পরিস্থিতি পড়তে দিদির দু’সেকেন্ডের বেশি লাগল না। শুধু সিটই দখল হয়নি, সিটের নিচে মালপত্র রাখার জায়গাও ভর্তি হয়ে গেছে। দিদি অনুমতির অপেক্ষা করলেন না। কুলিকে বললেন, “জাগা নিকালো।” কুলি মাথা থেকে সুটকেস নামিয়ে ঝুঁকে পড়ে সিটের নিচের একখানা ব্যাগের হ্যান্ডেল ধরে টান দিতেই ভদ্রলোক ভদ্রমহিলা হাঁ হাঁ করে উঠলেন। কিন্তু দিদির ক্ষমতাও তাঁদের কাছে আর চাপা নেই, কাজেই প্রতিবাদের বদলে তাঁরা সহযোগিতার রাস্তাই নিলেন। ব্যাগের ব্যবস্থা হল, এবার সিট। দিদি বললেন, “আমার ভাইয়ের নার্ভের সমস্যা। বদ্ধ জায়গায় থাকলে সমস্যা গুরুতর হয়, ফিটও হতে পারে। কাজেই জানালার ধার মাস্ট।” ফিটের অতিকথনটা বিপ্লবকে কুঁকড়ে দিল, কিন্তু তিনি এটাও দেখলেন যে ভদ্রলোক ভদ্রমহিলার চোখ গোলগোল হয়ে গেছে। ছেলেকে তাঁরা আদেশ করলেন তাঁদের দিকে চলে আসতে। ছেলেও বিপদের গন্ধ পেয়ে ত্যান্ডাইম্যান্ডাই না করে চিপসের ব্যাগ নিয়ে বাবামায়ের দিকে চলে গেল। দিদি নিচু হয়ে সিটের ওপর থেকে চিপসের গুঁড়ো ঝেড়ে বিপ্লবের দিকে ফিরে বললেন, “বসে পড়।” ট্রেন ভোঁ দিল। “সাবধানে যাস, কোনওরকম অসুবিধে হলে মিসেস সেনকে তক্ষুনি বলিস। চুপ করে থাকিস না। দুগ্‌গা দুগ্‌গা” বলে সাড়ে সাইত্রিশ বছরের ভাইয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে ট্রেন থেকে নেমে গেলেন বৈদূর্যকণা সরকার। ট্রেন ছেড়ে দিল। 

সকালের ট্রেনে জার্নি করে বিকেলে পৌঁছনোর ইচ্ছে ছিল না বিপ্লবের। দিনের শেষে কোথাও গিয়ে সেটল করতে অসুবিধে হয়। কিন্তু আবার একটা সুবিধেও আছে। সকালে পৌঁছলে সারাদিন বাড়ির লোকের সঙ্গে আলাপচারিতা করার দায় থাকে। বিকেলে পৌছলে বেশিক্ষণ সেটা করার আগেই রাত নেমে আসবে, তাড়াতাড়ি খাওয়াদাওয়া সাঙ্গ করে রাতের বেলা একা ঘরে গিয়ে শান্তি। সবরকম বিবেচনা করে তাই সকালের ট্রেনের টিকিটই কেটেছেন বিপ্লব। 

কোথায় যাচ্ছেন বিপ্লব? চেঞ্জে। কলকাতা থেকে সুপারফাস্ট ট্রেনের হিসেবে সাত ঘণ্টা পশ্চিমের এক প্রত্যন্ত শহরে। বিপ্লব যে অফিসের যে পোস্টে চাকরি করেন সে পোস্টের লোকজন চেঞ্জে যেতে হলে বিদেশে যায়। নেহাত যদি দেশে যেতে হয় তাহলে যায় এয়ারপোর্টওয়ালা শহরে। অনেক বছর আগে, চাকরির শুরুর দিকে একবার প্লেনে চেপেছিলেন বিপ্লব। কিন্তু হবি তো হ’ সেবারই আবহাওয়া খারাপ থাকায় মাঝপথে প্লেন লাফাতে শুরু করে, মাইকে ঘন ঘন প্যানিক না করার এবং যদি এমারজেন্সি ল্যান্ডিং-এর দরকার পড়েই তাহলে কীভাবে মাথার ওপরের অক্সিজেন মাস্ক মুখে পরতে হবে তার নির্দেশ আসতে থাকে। মিনিট দশেক পর সব শান্ত হয়ে যায়, কিন্তু ততক্ষণে বিপ্লব সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন। জীবনে আর কোনওদিনও এয়ারপোর্টমুখো হননি তিনি। 

কিন্তু বিপ্লব চেঞ্জে যাচ্ছেনই বা কেন? কারণ বিপ্লবের অফিসে কিছুদিন আগে পুজোর বোনাসের সিজন গেছে। বিপ্লব কি বোনাস পাননি? অফ কোর্স পেয়েছেন। বিপ্লব সরকারের সমস্যাটা বোনাস পাওয়া নয়, দেওয়ার। কাজের লোকদের নিয়ে সমস্যা নেই, তাঁদের বিপ্লব বেশি বেশি করে সুযোগসুবিধে পাইয়ে দেন। সমস্যা হচ্ছে অফিসের কিছু ত্যাঁদড় লোককে নিয়ে, যারা কোনও কাজ না করে বুক ফুলিয়ে ঘোরে। কোনওরকমের নিয়মকানুনের তোয়াক্কা থাকলে তাদের ন্যূনতমের বেশি বোনাস দেওয়া যায় না। তাছাড়া বাকি সকলের প্রতি অবিচারও হয়। এ বছর পরিস্থিতি একটু বেশি গরম ছিল। বোনাস ডিক্লেয়ার হওয়ার পর ওই ত্যাঁদড়দের একজন ইউনিয়নের দলবল সঙ্গে নিয়ে বিপ্লবের ঘরে ঢুকে তাঁরই পেপারওয়েট তুলে নিয়ে তাঁরই টেবিলে ঠুকে “অফিসটা কি তোর বাপের জমিদারি?” চেঁচানোর পর বিপ্লবের প্যানিক অ্যাটাক, প্যানিক অ্যাটাক থেকে একটা মাইনর স্ট্রোক মতো হয়। অফিসের লোকজন অ্যাম্বুলেন্স ডেকে নার্সিং হোমে নিয়ে যায়, দিদি অর্ধেক রান্না গ্যাসে ফেলে রেখে দৌড়ে আসেন, ভাইকে নিজের বাড়ি নিয়ে যান। সাতদিন মেডিক্যাল লিভ এবং ট্র্যাংকুলাইজারের চড়া ডোজের পরেও যখন বিপ্লববাবু শেষ শরতের মাঝরাতে ঘেমে চান হয়ে বিছানায় ধড়মড় করে উঠে বসতে থাকেন তখন ডাক্তার আর দিদি মিলে স্থির করেন যে হাওয়াবদলই একমাত্র রাস্তা। তখনই ওই শহরের নামটা দিদির মাথায় আসে। বছরচারেক আগে দিদি একবার স্বামীকন্যাসহ এখানে বেড়াতে গিয়েছিলেন। হোটেলটোটেল কিছু নেই, আছে খালি খোলা মাঠ আর মাঠের ভেতর ছড়ানোছেটানো আশি নব্বই একশো বছরের পুরোনো বাংলো। বাঙালি বড়লোক আর ইংরেজদের হাওয়াবদলের জন্য বানানো। বেশিরভাগই ভাঙাচোরা, দুয়েকটা এখনও টুরিস্টদের জন্য ভাড়া দেওয়া হয়। দিদিরা যে বাড়িটায় গিয়েছিল সেটা অবশ্য এই দু’দলের একটাতেও পড়ে না। সেখানে এখনও বাড়ির অরিজিন্যাল মালিকের নাতিনাতবউ বসবাস করেন। মাঝেসাঝে জানাশোনার মধ্যে পেয়িং গেস্ট নেন। দিদিই ফোনটোন করে সব ব্যবস্থা করে দিলেন। বললেন, “দু’সপ্তাহ কাটিয়ে আয়, একেবারে নতুন মানুষ হয়ে ফিরবি, দেখিস।” জামাইবাবু বললেন, “ফিরতে ইচ্ছেই করবে না। ভেরি পিসফুল প্লেস।” ভাগ্নি মুখ ব্যাজার করে বলল, “এক্সট্রিমলি বোরিং”।

*****

সুটকেস আর কাঁধের ব্যাগ নিয়ে বিপ্লব যখন লালনুড়ি বেছানো প্ল্যাটফর্মে এসে নামলেন তখন সূর্য পশ্চিম আকাশের ঠিক মাঝখানে। তিনি ছাড়া আরও দু’চারজন নেমেছে ট্রেন থেকে, বোঝাই যায় তাঁরা স্থানীয় লোক। তাদের সঙ্গে ছোটদের লালনীলসবুজ প্লাস্টিকের খেলনার মস্ত মস্ত বান্ডিল। এইসব ছোট শহরের ব্যবসায়ীরা অনেক সময় কলকাতা থেকে পাইকারি দরে জিনিসপত্র কিনে নিয়ে আসে। বাগরি মার্কেটের একজন দোকানির ছেলে বিপ্লবের কলেজের বন্ধু ছিল। সে বলেছিল তার বাবার দোকান থেকে নাকি পাটনা ভুবনেশ্বরেও মাল যায়।  

সূর্য আছে বটে, কিন্তু নিস্তেজ। ভুরু না কুঁচকেই সোজা তার দিকে তাকানো যায়।  হাওয়া অলরেডি ঠাণ্ডা হয়ে এসেছে। এদিকে ঠাণ্ডাটা কলকাতার থেকে বেশি। সেটা আন্দাজ করে ট্রেন থেকেই হালকা একটা সোয়েটার পরেই নেমেছিলেন বিপ্লব। এখন মনে হল দিদির আদেশ মেনে মাফলারটাও পেঁচানো উচিত ছিল। এবার তাঁর ষ্টেশনের বাইরে বেরিয়ে রিকশা ধরার কথা। বিপ্লব এদিকওদিক তাকালেন। বোঁচকাওয়ালারা নেমেই পেছন ফিরে হাঁটতে শুরু করেছে। ছোট প্ল্যাটফর্মের ঠিক মাঝখানে একটা হলুদ রঙের ঘর। প্ল্যাটফর্মের একদিকে রেললাইন, অন্যদিকে চ্যাপ্টা বর্শার মতো নীল সাদা রং করার লোহার বেড়া। ঘরটার পাশ দিয়ে রেলিং-এর গায়ে একটা ফাঁকা জায়গা, বোঁচকাওয়ালারা যেটা দিয়ে বেরিয়ে গেলেন। তার মানে ওটাই বাইরে যাওয়ার গেট। 

গেটের পাশে একটা বাঁকাচোরা বুড়ো উবু হয়ে বসে ঝিমোচ্ছে। সামনে জং ধরে কালো হয়ে যাওয়া টিনের আচ্ছাদনের ওপর একটা ছোট কেটলি। বয়ামে গোল গোল বিস্কুট রাখা। অনেকদিন খাননি, কিন্তু ছোটবেলার স্মৃতি এখনও জিভে লেগে আছে। মুখে দিলেই ঝুরঝুর হয়ে গুঁড়ো হয়ে যাবে। অল্প মিষ্টি আর ডালডার হালকা গন্ধ। খেতে ইচ্ছে করছিল বিপ্লবের। কিন্তু খেলেন না। বাইরের কিছু খাওয়া তাঁর বারণ। শুধু এক ভাঁড় চা কিনে খেলেন। সামনে অচেনা লোকজনের সঙ্গে মুখোমুখি হওয়ার ব্যাপার আছে। এই সময় চা-টা দরকার। 

রিকশা চলতে শুরু করার পর কিন্তু বিপ্লবের মনে নার্ভাসনেসের কেটে গিয়ে একটা বেশ খুশির ভাব জাগল।  দুপাশে খোলা মাঠ, তার মধ্য দিয়ে পিচের রাস্তা, এ দিগন্ত থেকে ও দিগন্ত পর্যন্ত আকাশ দেখা যাচ্ছে। শেষ কবে এতখানি বড় আকাশ দেখেছেন তিনি মনে করতে পারলেন না। তার পশ্চিম দিক এখন সূর্যাস্তের রঙে মাখামাখি, কিন্তু পূর্বদিকের নীল অলরেডি ঘন হতে শুরু করেছে। হালকা কুয়াশা জমতে শুরু করেছে মাঠের ওপর। 

রিকশা যে বাড়িটার সামনে এসে তাঁকে নামিয়ে দিয়ে চলে গেল সেটাকে দেখে আরও ভালো লাগল বিপ্লবের। ছড়ানো একতলা বাড়ি। সামনের বাগানে সামান্য অযত্নের ছাপ। বাড়ির গায়ের রংটাও ঠিক আর ধপধপে সাদা নেই। সামান্য ধূসর হয়ে এসেছে। আশ্বস্ত হলেন বিপ্লব। চকচকে, ঝকঝকে, ধোপদুরস্ত মানুষ বা জিনিস দেখলে তাঁর হাত পা কাঁপে।  বিপ্লববাবুর মনে হল বাড়ির ভেতরের লোকগুলোও যেন এরকমই হবে, খানিকটা ঢিলেঢালা, খানিকটা অভ্যেসে মলিন। বাড়ির সামনে ছাওয়া গাড়িবারান্দা। লালনুড়ি বেছানো পথ ধরে সেদিকে এগিয়ে গেলেন বিপ্লববাবু। গাড়িবারান্দা থেকে সিঁড়ি উঠে গেছে বাড়ির দরজায়। এক, দুই, তিন, চার, পাঁচ, ছয়, সাত নম্বর সিঁড়ির ধাপে দাঁড়িয়ে দরজার সেকেলে লোহার কড়ায় যেই না হাত ছোঁয়ালেন বিপ্লব ম্যাজিকের মতো দরজাটা খুলে গেল। 

দরজার ওপাশে একটা বাচ্চা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। লিকপিকে গড়ন। ডিমের মতো মুখে একজোড়া জ্বলজ্বলে চোখ। চোখের চাউনি দেখে বিপ্লব বুঝতে পারলেন প্রথমে মেয়েটাকে যত বাচ্চা মনে হয়েছিল মেয়েটা আসলে তত বাচ্চাও নয়। ওঁর বোনঝি সোহিনী সামনের বছর মাধ্যমিক দেবে, তার কাছাকাছি বয়সের হবে কি? মেয়েটা কে? সেনদের ছেলেমেয়ের কথা কিছু তো বলেনি দিদি। অবশ্য বলার সময়ও পায়নি। 

মেয়েটার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বিপ্লব প্রথম টের পেলেন যে বাড়িতে তিনি সামনের পনেরো দিন কাটাতে চলেছেন, তাদের সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না। একটু আগের নিশ্চিন্তিটা টোল খেয়ে গেল। 

বিপ্লব জিজ্ঞাসা করলেন, “মিসেস সেন আছেন?” 

মেয়েটা ঘাড় নাড়ল। নেই। কলারের ভেতর ঘামের বিন্দু জমছে, টের পেলেন বিপ্লব। সোয়েটারটা খুললে ভালো হত। 

মেয়েটা সোজা তাকিয়ে আছে তাঁর দিকে। চোখ তো নয়, যেন ধারালো বর্শা। বিপ্লবের মগজ এফোঁড় ওফোঁড় করে চলে যাচ্ছে। মগজের কোণায় কোণায়, আড়ালে আবডালে, যত কুচিন্তা কুমতলব আছে তাদের যেন আর লুকোনোর উপায় নেই, সব যেন এই দৃষ্টির সামনে উন্মোচিত হয়ে যাবে। 

“আপনি কি বিপ্লব সরকার?”

মেয়েটার গলা অসম্ভব রকমের রিনরিনে। আর তীক্ষ্ণ। 

এবার বিপ্লবের ঘাড় নড়ল। হ্যাঁ। 

“ভেতরে আসুন। পিসি বসতে বলে গেছেন।”

একটা প্রায়ান্ধকার এবং প্রকাণ্ড হলঘরে পা রাখলেন বিপ্লব। এ বাড়ির সিলিং তাঁর কলকাতার ফ্ল্যাটের প্রায় দেড়গুণ উঁচু। ঘুলঘুলি দিয়ে যেটুকু মরা আলো আসছে তাতে হলের এদিকে ওদিকে সাদা চাদরের ঢাকার নিচে কয়েকটা উঁচুনিচু আউটলাইন দেখা যাচ্ছে। সোফা, সেটি, একটা পিয়ানো, দেওয়ালের গায়ে দাঁড় করানো গ্র্যান্ডফাদার ক্লক। যেন চাদর মুড়ি দিয়ে শীতঘুমে গেছে সবাই। চাদর সরিয়ে নিলেই আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসবে।

চোখ সইয়ে নিতে যতখানি সময় লাগল বিপ্লবের ততক্ষণে মেয়েটা অনেকখানি এগিয়ে গেছে। ভারি সুটকেস সামলে সাবধানে পা ফেলে ফেলে পিছু নিলেন বিপ্লব। অন্ধকারের মধ্যে মেয়েটার অবয়ব শুধু দেখতে পাচ্ছেন তিনি এখন। কী জোরে হাঁটছে মেয়েটা। পেছনে বিপ্লব আসছেন কি না সেটা দেখার প্রয়োজনও মনে করছে না। হঠাৎ ডানদিকে বেঁকে অদৃশ্য হয়ে গেল। মেরেছে। যতখানি সম্ভব স্পিড বাড়ালেন বিপ্লব। ডানদিকে একটা দরজা। এখান দিয়েই নিশ্চয় ঢুকেছে মেয়েটা। এবার একটা করিডর। এবং আলো বলতে শুধু ঘুলঘুলি দিয়ে আসা সূর্যরশ্মি। বিপ্লব হাঁটতে থাকলেন। দূরে সামনে একটা ছায়া নড়ছে। মেয়েটারই হবে। বিপ্লব হাঁটতে থাকলেন। কত লম্বা করিডর? বিপ্লববাবুর অফিসের কলিগ পরন্তপ, হরর গল্পের পোকা। তাতে অসুবিধে নেই, অসুবিধে হচ্ছে যে বিপ্লববাবুর অসুবিধে হয় জেনেও (বা হয়তো জেনেই) সে নতুন পড়া হরর গল্প বা সিনেমা ব্যাখ্যান করে বিপ্লবকে শোনায়। পরন্তপ কী একটা গল্প বলেছিল, অ্যামেরিকার কোন শহরে নাকি একটা বাড়ির খোঁজ পাওয়া গিয়েছিল যার ভেতরটা বাইরের থেকে বড়। সেই বাড়িতে একটা করিডর ছিল যেটা থাকার কথা নয়। ক্রমে সেই করিডর দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হতে শুরু করে। বাড়ির বাইরেটা অবিকল একই থেকে যায়। 

বিপ্লবের চোখের সামনে একফালি আলোর চৌকো ভেসে উঠল। একটা দরজা খুলে দাঁড়িয়েছে মেয়েটা। বিপ্লব ঘরে ঢুকলেন। মেয়েটা দরজা বন্ধ করে পেছন পেছন ঢুকে এল। 

যাক। এ ঘরে আলো জ্বলছে। দেওয়ালের গা থেকে ঝোলানো বাহারি সেকেলে লন্ঠনের ভেতর থেকে বৈদ্যুতিক বাতি। বেশ বড়, সাজানো ঘর।  ঘরটা ব্যবহার হয় বোঝা যাচ্ছে। ঘরের মাঝখানে মোটা মোটা গদিওয়ালা সেকেলে সোফাসেটি পাতা। মেঝেতে কার্পেট। সবই পুরোনো যদিও। কিন্তু ঘরটা এত ঠাণ্ডা কেন?

বিপ্লব একটা চেয়ারে বসলেন। মেয়েটা উল্টোদিকের চেয়ারে বসল। ডুবেই গেল বলা যায়। কী রোগা, বাপরে। মেয়েটা আবার সটান তাকিয়ে আছে বিপ্লবের মুখের দিকে। বিপ্লবের অস্বস্তি হতে লাগল। মেয়েটা নির্বিকার। একটা কিছু কথোপকথন চালানো দরকার। কিন্তু কী কথা বলবেন তিনি? এই বয়সের ছেলেমেয়ের সঙ্গে কী কথা বলা যায়? বোনঝির সঙ্গে কী কথা বলেন তিনি ভাবতে চেষ্টা করলেন। মনে পড়ল না। কেন মনে পড়ল না সেটাও সঙ্গে সঙ্গে মনে পড়ল অবশ্য। বোনঝির সঙ্গে অ্যাকচুয়ালি কোনও কথোপকথনই চালানো যায় না। সারাক্ষণ কান থেকে হেডফোনের তার ঝুলতে থাকে। 

বিপ্লব হাসলেন। মেয়েটা হাসল না। বিপ্লব গলা ঝেড়ে, কোন ক্লাসে পড় গোছের কিছু একটা জিজ্ঞাসা করতে যাবেন, এমন সময়, 

“আপনি পিসিকে কতদিন ধরে চেনেন?”

অ্যাঁ? অপ্রত্যাশিত রিনরিনে গলাটা আবার চমকে দিল বিপ্লবকে। এরকম শিশুর মতো গলা এ রকম একটা মেয়ের হয় কী করে? 

“আপনি পিসিকে কতদিন চেনেন? “

“আমি…আমি তোমার পিসিকে চিনি না। আমার দিদি, বৈদূর্যকণা সরকার, বছর তিনেক আগে এখানে বেড়াতে এসেছিলেন। তোমার পিসির বাড়িতেই ছিলেন। ওঁর রেকমেন্ডেশন নিয়েই…মানে উনিই বললেন আরকি।”

মেয়েটা গম্ভীরমুখে মাথা নাড়ল। 

“আসার আগে ফোনে কথা বলেছেন নিশ্চয় পিসির সঙ্গে?”

কথোপকথন খুবই অদ্ভুত পথ ধরে এগোচ্ছে, কিন্তু বিপ্লব সুতো ছাড়তে রাজি নন। 

“আসলে এত হুড়োতাড়া করে হল সব, কথা বলার সুযোগ হয়নি। আমার দিদি অবশ্য ফোন করেছিলেন, কথা হয়েছে।”

একটু থেমে যোগ করলেন, “অবশ্য কী কথা হয়েছে তা আমি জানি না।”

মেয়েটার ভুরুদুটো কুঁচকে আছে। ব্যাপারটা কী? সন্ধ্যে হয়ে আসছে, এরা এখন না করে দিলে কোথায় যাবেন, কী করবেন ভেবে রীতিমত চিন্তা হতে লাগল তাঁর।

চিন্তায় সাধারণত তাঁর ঘাম হয়, কিন্তু এই ঘরে রীতিমত ঠাণ্ডা লাগছে। অথচ মেয়েটা তাঁর সামনে বসে আছে, একটা পাতলা সুতির জামা গায়ে দিয়ে, কোনওরকম হেলদোল নেই। দু’হাত দিয়ে নিজেকে সোয়েটারের ওপর দিয়ে জড়ানোর চেষ্টা করলেন বিপ্লব।

"আপনার ঠাণ্ডা লাগছে, না?” 

“ওই একটু” হাসলেন বিপ্লববাবু। 

“আসলে ওই দরজাটা খোলা তো, তাই।” মেয়েটা তর্জনী তুলে বিপ্লবের মাথার পেছনদিকে দেখাল। বিপ্লব ঘাড় ঘোরালেন। 

একটা দরজা। হাট করে খোলা। দরজা ঠিক নয়, ফ্রেঞ্চ উইন্ডো।  মাটি থেকে সিলিং পর্যন্ত লম্বা কাঠের ফ্রেমের ভেতর খোপ খোপ করা কাচের জানালা। এদিকে তিন, ওদিকে তিন। ছোটবেলায় পড়া বিলিতি গল্পে খুব থাকত এই ফ্রেঞ্চ উইন্ডো। কান্ট্রিসাইডের গল্পে বিশেষ করে। সেখানের চরিত্ররা যখনতখন ফ্রেঞ্চ উইন্ডো বেয়ে ঢুকে আসতেন। উইন্ডোর বাইরে হয় থাকত ছাঁটা সবুজ ঘাসে ঢাকা বিস্তীর্ণ মাঠ, সেখানে সাহেবরা ক্রোকেট খেলতেন, নয় ছোট্ট ঘেরা বারান্দা, মেমসাহেবরা তার রেলিং-এ ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলতেন।

সেই থেকে বিপ্লবের খুব শখ ছিল ফ্রেঞ্চ উইন্ডোওয়ালা বাড়িতে থাকার। বউবাজারের দোতলার দু’কামরার ভাড়াবাড়ির জানালার শিক ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে তিনি কল্পনা করতেন।  জানালাটা আসলে একটা ফ্রেঞ্চ উইন্ডো আর বাইরের নর্দমা আর কলার খোসায় ছয়লাপ, উপচোনো ভ্যাটওয়ালা গলিটা আসলে ক্রোকেট খেলার মাঠ। রাস্তা দিয়ে চলাফেরা করা রুগ্ন, দুঃস্থ, সেয়ানা চেহারার থুতু ফেলা মানুষগুলো আসলে সবাই একএকজন লর্ড, ধপধপে ইস্তিরি করা সাদা শার্ট প্যান্ট পরে ক্রোকেট খেলতে বেরিয়েছে। ভোরবেলা হুড়মুড়িয়ে দৌড়োনো কাজের মাসিরা আসলে লেডির দল, তাদের হাতের থলির ভেতর পোরা আছে রঙিন লেসের ছাতা, সেটা মাথার ওপর মেলে ধরে, ঘুরে ঘুরে তারা তাদের রোজ গার্ডেন পরিচর্যা করবে। 

ছোটবেলার সব স্বপ্ন তো বড়বেলায় মনে থাকে না, বেশিরভাগই মুছে গিয়ে সুবিধেজনক, প্রাপ্তিযোগ্য একেকটা বিষয় বা বস্তুর চেহারা নেয়। কিন্তু এই স্বপ্নটা ভোলেননি বিপ্লব। নিজের ফ্ল্যাটের বারান্দার দরজাটা ওইরকম ফ্রেঞ্চ উইন্ডোর ধাঁচে বানিয়েছেন। মাথার ওপরটা আর্চের মতো বেঁকানো। উইন্ডোর বাইরের বারান্দায় টবে রেডিমেড পূর্ণবয়স্ক গাছ এনে রেখে গেছে ডেকোরেটর। বিপ্লব রোজ সকালে তাদের জল দেন, গার্ডেনিং-এর সাধ ঘোলে মেটান। ইচ্ছে হলে বারান্দায় বসে আকাশ দেখতে পারেন, বেতের বোনা চেয়ারও আছে। কিন্তু সময় হয় না বিপ্লবের। যদি বা কখনও জোর করে নিজেকে বসাতে যান, গরম লাগে, মশা কামড়ায়, তাছাড়া দশ তলার ওপরেও পলিউশনের হাত থেকে রেহাই নেই। বিপ্লবের অ্যালার্জিটাও যায়নি, ফ্রেঞ্চ উইন্ডোর স্বপ্নের মতো পিছু ধাওয়া করে বড়বেলা পর্যন্ত এসেছে। 

তাঁর বাড়ির ফ্রেঞ্চ উইন্ডোটা নকল, খেলা খেলা, কিন্তু এটা জাত। কাঠের ফ্রেম পুরোনো হয়েছে, গায়ের সাদা রং মলিন হয়েছে, কিন্তু একটা গম্ভীর, জাঁদরেল ভাব এখনও ফুটে বেরোচ্ছে উইন্ডোর গা দিয়ে। সেটার একটা কারণ বোধহয় বাইরের দৃশ্যও। দরজা দিয়ে একটা  নুড়ি বেছানো পথ নেমে গেছে মাঠের ভেতর। খানিক দূরে একটা অর্ধবৃত্তের আদলে কতগুলো উঁচুনিচু ইটের পাঁজা সাজানো। একসময় একটা পাঁচিল ছিল বোঝা যায়। বেশিরভাগটাই এখন মাটিতে মিশে গেছে। তার ওপারে ধু ধু ন্যাড়া সমতল মাঠ। মাঠের ওপর জমা কুয়াশার ভেতর দিয়ে দূরে দিগন্ত বরাবর ঘন আবছা রেখা দেখতে পেলেন বিপ্লব। ওটাই বোধহয় সেই জঙ্গলটা, যেখানে পিকনিক করতে গেছিলেন তাঁর দিদিরা। 

কিন্তু এরা দরজাটা খোলা রেখেছে কেন? হু হু করে ঠাণ্ডা ঢুকে আসছে তো। 

মেয়েটা বিপ্লবের মনের কথা ধরে ফেলল। বলল, ‘পিসি ওই দরজাটা বন্ধ করতে দেয় না, বিশেষ করে  সন্ধ্যেবেলায়।”

“কেন?” গৃহকর্ত্রীর সিদ্ধান্তের ব্যাখ্যা চাওয়া অনধিকার জেনেও বিপ্লব নিজেকে চাপতে পারলেন না। 

"আপনার দিদি ক’বছর আগে এসেছিলেন এখানে?”

“তিন সাড়ে-তিন হবে।”

“ওইজন্যই খবরটা জানেন না।”

“কী খবর?” ভালো খবর যে নয় সেটা বোঝাই যাচ্ছে।  

মেয়েটা উত্তর দিল না। এখন ওর দৃষ্টি খোলা দরজাটার দিকে  মেলা। একটু আগে পর্যন্তও দৃষ্টিতে একটা যে উজ্জ্বল, জীবন্ত ভাব ছিল এখন সেটা নেই। বাইরের কুয়াশা এসে যেন একটা আবছা পর্দা টেনে দিয়েছে বাচ্চাটার দু’চোখের ওপর। চোখ মেলে আছে ও, কিন্তু কিছু দেখছে না। 

“বছর দুই আগে, ইন ফ্যাক্ট, ঠিক এই সময়েই, পুজোর পরপর, আমার স্কুলের ছুটি তখনও চলছিল, আমি এখানেই ছিলাম… আমার পিসেমশাই, পিসতুতো ভাই রুবু আর টমি, পিসিদের স্পিৎজ, সন্ধ্যের দিকে বাজারের দিকে গিয়েছিল। এই যে মাঠ দেখছেন, এটা ধরে সোজা নাকবরাবর চলে গেলে রেললাইন, রেললাইনের ওপারে বাজার। স্টেশন আছে, স্টেশনে ওভারব্রিজও আছে, কিন্তু সেটা একটু ঘুরে.... সোজা রেললাইন ক্রস করলে অনেক তাড়াতাড়ি হয়। পিসি বারবার বারণ করত কিন্তু পিসেমশাই শুনতেন না। সে বছরও খুব কুয়াশা হয়েছিল, এ’বছরের মতোই। পিসেমশাই দেখতে পাননি, একটা ট্রেন, সুপারফাস্ট। পিসেমশাই আর রুবু ওখানেই…, টমি হাসপাতালেও কিছুক্ষণ বেঁচে ছিল। আমাদের দেখে লেজ নাড়ার চেষ্টা করেছিল…”

মেয়েটার গলার আওয়াজ হাওয়ায় প্রায় মিশে গেছে। বিপ্লব কাঠ হয়ে বসে রইলেন। 

“পিসি তারপর থেকেই… গত দু’বছর তো পেয়িং গেস্টও রাখেনি। তারপর সবাই অনেক করে বলাতে আবার পেয়িং গেস্ট রাখতে শুরু করেছে। এই আপনিই প্রথম। না হলে একা একা থাকতে আরও কষ্ট হত। এমনি সবই ঠিক আছে, কিন্তু ওই দরজাটা…”

“দরজাটা?” এই ফ্যাঁসফেঁসে গলাটা বিপ্লবের নিজের?

“পিসি কিছুতেই ওই দরজাটা বন্ধ করতে দেয় না সন্ধ্যেবেলা। পিসি মনে করে একদিন ওরা ফিরে আসবে। মানে যদি ওরা নাও হয়, যদি ওদের…”

ঠাণ্ডা আর গরম যে একইসঙ্গে লাগতে পারে একটা মানুষের সেটা বিপ্লব এই প্রথম প্রত্যক্ষ করলেন। তাঁর ঘাড়ের খাড়া হয়ে ওঠা লোমের ভেতর দিয়ে একফোঁটা ঘাম পিঠের দিকে নেমে গেল। 

“আমরা অনেক বোঝানোর চেষ্টা করেছি… তারপর ডাক্তারবাবু বললেন বেশি জোর করার দরকার নেই, আফটার অল, শুধু তো একটা দরজা। তাতে যদি একটা মানুষের শান্তি হয়…”

দড়াম!।

বিপ্লববাবু প্রায় চিৎকার করে উঠতে যাচ্ছিলেন, এমন সময় ঘরের দরজাটা সশব্দে খুলে, যে দরজাটা দিয়ে বিপ্লববাবু ঘরে ঢুকেছিলেন, ঢুকে এলেন একজন ভদ্রমহিলা। ইনি যে বাড়ির মালকিন, মিসেস অনুশীলা সেন, সেটা বলে দিতে হয় না। উশকোখুসকো চুল, ভয়ানক ব্যস্ত, কেজো চেহারা। বিপ্লবের দিকে তাকিয়ে চোখ গোলগোল করলেন ক্ষমাপ্রার্থনার বন্যা বইয়ে দিলেন মহিলা।  

“সরি সরি, ভেরি সরি, অনেকক্ষণ এসেছেন না? আসলে আমাদের পাম্পটা খারাপ হয়ে গেছে, প্লাম্বারকে ফোন করে করে পাওয়া যায় না,  শেষে আমাকেই বেরোতে হল …” 

বিপ্লব মুখে প্রতিভদ্রতা করতে লাগলেন কিন্তু তাঁর সতর্ক চোখ মহিলার চোখমুখ ভাবভঙ্গি জরিপ করতে লাগল। দেখে কিন্তু কিছু আঁচ করার জো নেই। তারপরেই তাঁর নিজের কথা মনে পড়ল। একই সত্যি তাঁর নিজের ক্ষেত্রেও খাটে। তাঁকে দেখেও কি এই মুহূর্তে কি অনুশীলা সেন বুঝতে পারছেন এই  মাঝবয়সী শার্টপ্যান্ট পরা ভদ্রলোক রাতে ঘুমোতে পারেন না, দুঃস্বপ্ন দেখে চিৎকার করে ওঠেন, অফিসে যেতে প্যালপিটেশন হয়, অচেনা লোকের চোখের দিকে তাকাতে বুক কাঁপে? নিশ্চয় না। অনুশীলা সেনের প্রতি হঠাৎই সহমর্মিতা বোধ করলেন বিপ্লব।

ধপাস করে চেয়ারে বসে বললেন অনুশীলা, “বিন্তি, একটু জল খাওয়া না সোনা। আর ওদিকে দেখ তো কেউ আছে কি না, থাকলে চা দিতে বল। আপনি চা খান তো? নাকি কফি?” 

পিসির চেয়ারের পেছন দিয়ে বেরিয়ে গেল বিন্তি। মেয়েটার চলাফেরার মধ্যে একটা নিঃশব্দ ব্যাপার আছে, যেন মাটিতে পা পড়ে না।

“আমার দাদার মেয়ে। খুব বুদ্ধিমান। পুজোর ছুটিতে আমার কাছে এসে এসেছে। আলাপ হল?”

কথাবার্তা অন্যদিকে ঘুরল। বিপ্লব ক’দিন থাকবেন, তাঁর ছুটি নেওয়ার কারণ, তাঁর দিদিজামাইবাবুর কুশলসংবাদ ইত্যাদি। অনুশীলা সেই বিরল গুণের অধিকারী যিনি বলার থেকে শোনেন বেশি। বিপ্লবের অজান্তেই তাঁর ভেতর থেকে সতর্কতাটা চলে গিয়ে একটা রিল্যাক্সড ভাব বাসা বাঁধছিল।  নিজের দিদির পর এই প্রথম কাউকে নিজের কথা এত সহজে বলতে পারছিলেন তিনি। অফিসের চাপের কথা। সহকর্মী, ঊর্ধ্বতন, অধস্তনদের রূঢ়তার, রুচিহীনতার কথা। কাটথ্রোট কম্পিটিশনের কথা। বলতে বলতে তিনি এমন আত্মহারা হয়ে পড়লেন যে জল খেয়ে আঁচল দিয়ে মুখ মোছার অছিলায় অনুশীলা সেন হাই চাপছেন সেটা খেয়ালও করলেন না।  

কোথাও যে একটা সুর কেটেছে সেটা প্রথম বিপ্লব বুঝলেন অনুশীলা সেনের চোখ দেখে। শান্ত, সৌজন্যমাখা চোখদুটো অতর্কিতে টানটান হয়ে উঠল। বিপ্লববাবুর মুখ থেকে সামান্য ডানদিকে সরে গিয়ে স্থির হল মিসেস সেনের দৃষ্টি। বিপ্লব জানেন ওইখানেই ফ্রেঞ্চ উইন্ডোটা। 

আর ঠিক তখনই আওয়াজটা কানে এল তাঁর। চট করে শুনলে শাঁখের শব্দ বলে ভুল হয়, কিন্তু চারপাশ থেকে কুয়াশার মাফলার সরিয়ে নিলে ওটা হয়ে যাবে একটা দূরপাল্লার ট্রেনের ভোঁ।  ছ’টা দশের সুপারফাস্ট। এটাতে এলে অনেক কম সময় লাগত বিপ্লবের। কিন্তু এটা এই ষ্টেশনে থামে না। খুব জোরে চালিয়ে প্ল্যাটফর্মের ধুলো উড়িয়ে বেরিয়ে যায়, তখন যদি কোনও হতভাগ্য রেললাইনে…

 “এত কুয়াশা হয় আজকাল” অনুশীলার গলা শঙ্কিত। অবসন্ন। 

“সত্যি, আমাদের কলকাতায় তো কুয়াশা প্রায় হয়ই না…” বিপ্লবের নকল অনুযোগটা মাঝপথের বেশি এগোতে পারল না। তার আগেই আরেকটা শব্দ এসে থামিয়ে দিল তাঁকে। এটা ট্রেনের শব্দ নয়। এটা একটা কুকুরের ডাক। আর এটা ট্রেনের মতো অত দূর থেকেও আসছে না। এবার কুকুরের ডাক ছাপিয়ে আরেকটা শব্দ শোনা গেল। কোনও যান্ত্রিক ধ্বনি নয়। বা জন্তুর অবোধ্য চিৎকার নয়। এটা পরিষ্কার বাংলা। 

“অনুউ? অনুউউ?” 

অনুশীলা চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন। কোনও তাড়া নেই, উচাটন ভঙ্গি নেই। একটু আগের চাপা উত্তেজনাটা কেটে গিয়ে এখন চোখেমুখে শুধু স্বস্তি। হাসছেন অনুশীলা। ঠাণ্ডা, নরম হাসি। 

“এসে গেছে।”  

ঘরের তিন নম্বর প্রাণীটির দিকে চোখ গেল বিপ্লবের। বিন্তি ঠকঠক করে কাঁপছে। বিন্তির চোখ বিস্ফারিত। বিন্তি সোজা তাকিয়ে আছে বিপ্লবের পেছনের খোলা ফ্রেঞ্চ উইন্ডোটার দিকে।

“মাআআআ”

এত কাছ থেকে চিৎকারটা এল যে ছিটকে পেছন ফিরলেন বিপ্লব। ভাঙা পাঁচিলের ইটের পাঁজাগুলোর কাছে ঘন কুয়াশার মধ্যে ফুটে আছে তিনটে ছায়া। একটা বিপ্লবের থেকে হাতখানেক লম্বা, একটা তাঁর কোমরের কাছাকাছি উচ্চতার, আরেকটা প্রায় মাটির সঙ্গে মিশে আছে। ছায়া তিনটে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বিপ্লবকে দেখছে কি? 

সবার ছোট ছায়াটা সবথেকে আগে নড়ে উঠল। কান ফাটানো গর্জন করে বিদ্যুৎগতিতে ছুটে এসে সাদা নরম তুলোর বলখানা বিপ্লবের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ামাত্র তাঁর চোখের সামনে সব অন্ধকার হয়ে গেল। 

*****

টেবিলের মাঝখানে রাখা ভাতের পাত্র থেকে একহাতা ভাত নিয়ে রুবুর পাতে দিতে দিতে অনুশীলা বললেন, “কী হল ভদ্রলোকের কে জানে। দেখে তো অত খারাপ কিছুও মনে হচ্ছিল না…রুবু, যা দিচ্ছি খেয়ে নাও, ঘ্যান ঘ্যান করবে না…”

বিপ্লব সরকারের জ্ঞান ফিরিয়ে, ডাক্তার ডেকে, ট্র্যাংকুলাইজার ইঞ্জেকশন দিয়ে, মোটামুটি স্টেডি করে তোলার পর অনেক অনুরোধ করেও থেকে যেতে রাজি না করাতে পেরে শেষমেশ গভীর রাতের ফিরতি ট্রেনে তুলে দিতে কাল সেন পরিবারের ওপর দিয়ে একটা ঝড় বয়ে গেছে। অলকেশ সেন অফিসে ফোন করে জানিয়ে দিয়েছেন, আজ তিনি আসতে পারছেন না। উত্তেজনার পর বাড়িতে বেশ একটা ছুটির মেজাজ (কেউ স্বীকার করতে না চাইলেও)। অনুশীলা মাছ মাংস রাঁধিয়েছেন, সপ্তাহের মাঝখানে এই অপ্রত্যাশিত ছুটিতে টেবিলে এখন সেসব খাওয়া হচ্ছে। 

“কতবার বলি আগে থেকে ভালো করে খোঁজখবর নাও। যত সব…” পাগলছাগল শব্দটা বলতে গিয়েও উপস্থিত বাচ্চাদের কথা ভেবে গিলে নিলেন অলকেশ সেন। 

“আহা, মিসেস সরকারের নিজের ভাই, তার যে আবার খোঁজখবর লাগবে কী করে বুঝব।”

“কে মিসেস সরকার?”

“আরে সেই যে হাজব্যান্ড ওয়াইফ আর একটা মেয়ে? গড়িয়ার ফ্যামিলি? মেয়েটা ভীষণ সুইট, বিন্তির সমানই হবে। দু’একবছর এদিকওদিক।”

বিন্তি পিসির অন্যমনস্কতার সুযোগ নিয়ে থালা থেকে মাছভাজার প্রায় গোটা একদিকটা ছাড়িয়ে নিয়ে টেবিলের তলায় হাত এগিয়ে দিল। টমির জিভ তৈরিই ছিল, বিন্তির আঙুল থেকে মাছভাজা মুখে পুরে নিল। বিন্তির পায়ে থাবা বুলিয়ে বলল, “থ্যাংক ইউ।” টমিরও গত ক’ঘণ্টা ভয়ানক কেটেছে। লোকটা গোঁ গোঁ করে অজ্ঞান হয়ে যাওয়ায় প্রথম চোটটা ওর ওপরেই পড়েছিল। অচেনা লোকের সঙ্গে অত গায়ে পড়ে ফ্রেন্ডলি হতে যাওয়ার দরকার কি ইত্যাদি ইত্যাদি। টমি একটু ফ্রেন্ডলি, সেটা ও অস্বীকার করছে না। এতে অনেকের অনেক রকম প্রতিক্রিয়া হয়, কেউ ঘাড় চুলকে দেয়, কেউ হ্যাট হ্যাট করে, অনুশীলার এক বন্ধু চটি শুদ্ধু সোফার ওপর উঠে দাঁড়িয়েছিলেন, অনেকদিন পর্যন্ত সাদা সোফা কাভারের ওপর দুটো চটির ছাপ ছিল, কিন্তু তা বলে একেবারে অজ্ঞান? রাগে টমির গলা দিয়ে গর্জন বেরিয়ে পড়ছিল, অনেক কষ্টে সামলে নিল। এই মুহূর্তে টেবিলের তলায় ওর উপস্থিতিটা প্রকাশ হয়ে পড়া বাঞ্ছনীয় নয়। তাছাড়া টেবিলের ওপর থেকে আঙুলে করে আরেকটা কী যেন খাবার জিনিস এসে নেমেছে। আলুভাজা! টমির ফেভারিট। কপ করে আলুভাজাগুলো মুখে পুরে জিভটা বার করে রোগা রোগা আঙুলগুলো একবার চেটে দিল টমি। 

“কথা বলার সময় কিছু টের পাওনি?” 

“কিচ্ছু না। দিব্যি স্বাভাবিক লোক। মানে, ভয়ানক বোরিং, অফিস বস চাকরি এই নিয়ে বলে যাচ্ছে তো যাচ্ছেই, কিন্তু তা ছাড়া অ্যাবসলিউটলি নর্ম্যাল। আমি আসার আগে বিন্তিও তো কতক্ষণ লোকটার সঙ্গে বসে ছিল। ও কিছু বুঝেছে কি না জিজ্ঞেস কর?”

টেবিলের সবার ঘাড় বিন্তির দিকে ঘুরল। বিন্তি চট করে জবাব দিল না। গম্ভীর মুখে ভুরু কুঁচকে ভাবল খানিকক্ষণ। 

“প্রথমটা কিছু বুঝিনি, তারপর উনি যখন বললেন…”

“কী বললেন?” একসঙ্গে এল প্রশ্নটা।

“বললেন যে, উনি খুব খুশি হয়েছেন এখানে বেড়াতে আসতে পেরে। সাধারণত পুজোর এই পরের সময়টায় তো ওঁর কোথাও যাওয়ার অবস্থা থাকে না। বাড়িতে বন্দী থাকতে হয়।  তেমন খারাপ হলে, আগের বছর হয়েছিল, রাঁচি না কোথায় ডাক্তার দেখাতে যেতে হয়, ব্যস। এ বছর ওঁর শরীর একটু ভালো থাকায় ওঁর কলকাতার ডাক্তার চেঞ্জে যেতে সাজেস্ট করেন। তখনই ওঁর দিদির মাথায়…” পিসি পিসেমশাইয়ের মুখের ওপর একবার চোখ ঘুরিয়ে আনল বিন্তি, “… তোমাদের বাড়ির আইডিয়াটা আসে।”

অলকেশ হাঁ বন্ধ করে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মাথা নাড়লেন। হরিবল্‌। কিন্তু মনে মনে একটু খুশিও হলেন। এইবার যদি অনুর শিক্ষা হয়। পেয়িং গেস্ট, যত্তসব। অনুশীলা হাঁ করেই ভাবতে লাগলেন। আর না বাবা। মিসেস সান্যালের রোম্যান্স বুকক্লাবে হাজিরা দেবেন তিনি সকালবিকেল সেও ভি আচ্ছা, কিন্তু পেয়িং গেস্ট আর না। টমি ঠোঁটে লেগে থাকা আলুভাজার স্বাদটা শেষবারের মতো জিভ দিয়ে চেটে নিয়ে বিন্তির পায়ের ওপর গুটিসুটি মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ল। আর বিন্তি থালার ভাত নাড়াচাড়া করতে করতে কী যে ভাবতে লাগল কে জানে। ওর মনের তল পাওয়া অত সোজা না। 


Comments

  1. সত্যজিত রায়ের নীল আতঙ্ক মনে পড়িয়ে দিলেন তো ....
    শুধু একটা কথা ছিল| "হঠাৎ ডানদিকে বেঁকে অদৃশ্য হয়ে গেল। মেরেছে। " - এই 'মেরেছে' শব্দটা বিপ্লবের বাকি ভোকাবুলারির সঙ্গে একটু বেমানান লাগছে না কি ?
    "ছোটবেলার সব স্বপ্ন তো বড়বেলায় মনে থাকে না, বেশিরভাগই মুছে গিয়ে সুবিধেজনক, প্রাপ্তিযোগ্য একেকটা বিষয় বা বস্তুর চেহারা নেয়।" - ভীষণ সত্যি !

    ReplyDelete
    Replies
    1. লাগছে বুঝি? ঠিক আছে, তাহলে মুছে দেব। ধন্যবাদ।

      Delete
  2. Ei golpo to english e porechhilam bohudin age. Tomar version tao khub bhalo laglo. Sudhu ekta chhottto apotti.. Baiduryakona r bhai hisebe Biplab nam ta oto manachhey na.

    ReplyDelete
    Replies
    1. আচ্ছা, বদলে দেব তাহলে। ধন্যবাদ, চুপকথা।

      Delete
  3. মূল গল্পটার থেকে বেশি ভালো হয়েছে | অরিজিনালটায় গা-ছমছম ব্যাপারটা ছিল না যেটা এখানে আছে |

    ReplyDelete
  4. চমৎকার , আর নামকরন গুলো খাসা আদার দ্যান ঐ উপরের উপরের জন যেমন বললেন , বিপ্লব।

    ReplyDelete
    Replies
    1. আচ্ছা, প্রদীপ্ত। ধন্যবাদ।

      Delete
  5. 5 star as usual Mrs lekhika...durdanto,gograse porlam.

    prosenjit

    ReplyDelete
    Replies
    1. ধন্যবাদ, প্রসেনজিৎ।

      Delete
  6. bah darun! tinni

    ReplyDelete
    Replies
    1. থ্যাংক ইউ, তিন্নি।

      Delete
  7. Aaj sondhebelatei bhabchhilam, anek din aapni gappo lekhen ni, anujog korte habe. Rattire ese dekhi tatka gappo wait korchhe. Pore khub bhalo laaglo, khasa hoyechhe...

    Tabe ekta khatka: Bangali barir bidhaba/Sadhaba ki dekhe bojha jaabe na? Bhadraloker sandeho hawa uchit chhilo.

    BTW, aapni taranath tantriker galpo sab porechhen? aapnar bhalo laagbe.

    ReplyDelete
    Replies
    1. ধন্যবাদ, চন্দ্রচূড়। তারানাথ তান্ত্রিক পড়েছি।

      Delete
  8. Osadharon hoyeche. Ami ei golpo tar age bangla onubad porechi, kaar kora mone nei. Apnar lekhan ta satyajit ray er "brazil er kalo bagh" golpo sonkoloner kotha mone poriye diyeche. Hoito choto choto du ekta gondogol ache, jegulo oneke comment e bolechen, kintu lekha ta eto bhalo hoyeche je oi sob chokhe pore na. Lekha ta pore onekkhon heshechi. Tar por amar maye ke pore suniyechi. Amader dujoner i bhalo legeche. Apni "Bobby Winkham" er golpo poreche ? Particularly, "Mr Potter takes a rest cure" ?

    ReplyDelete
    Replies
    1. ধন্যবাদ, ঘনাদা। না ববিবাবুর লেখা তো পড়িনি। তবে আপনি যখন বললেন নিশ্চয় খুঁজে পড়ব।

      Delete
    2. sorry, sorry, amar ektu bhul hoyechilo. Bobby Winkham ekjon character, from P.G. Wodehouse stories. Onekta 'binti'-r moto.

      Delete
  9. Replies
    1. থ্যাংক ইউ, শাশ্বত।

      Delete
  10. দারুণ গল্পটা তো

    ReplyDelete
  11. সবাই বলে ফেলেছে। তাও আরেকবার বলতে ইচ্ছে করছে - বৈদূর্যকণা নামটা গল্পের থেকেও বেশী ভাল হয়েছে।

    ReplyDelete
    Replies
    1. হাহা, থ্যাংক ইউ, অনির্বাণ।

      Delete
  12. Golpota khub bhalolegechhe. Ek ni:swashe pore felechhi :)

    ReplyDelete
  13. 1) ei golpo ta niye sobai sob bole feleche tai r kichu bollam na.
    2) itihaser swapnobhango sesh korechi----bhalo legche tobe ektu boro hole mone hoe aro bhalo lagto.
    3) ekhon the witches porchi---ek niswas e. THANKU :D :D

    ReplyDelete
    Replies
    1. যাক, তোমার বইগুলো পড়ে ভালো লেগেছে জেনে নিশ্চিন্ত হলাম, প্রিয়াঙ্কা।

      Delete
  14. khub bhalo laglo, K. Original tao bhalo kintu tomar lekha tar madhe ekta ga chhom chhom kora'r byapar achey....daroon laglo..chaliye jao :)

    ReplyDelete
    Replies
    1. ধন্যবাদ ধন্যবাদ, শম্পা। তোমার উৎসাহ সবসময়েই স্পেশাল।

      Delete
  15. Replies
    1. থ্যাংক ইউ, ঊর্মি।

      Delete

Post a Comment