ম্যাকবুক আর সাপ্তাহিকী



বয়স হলে মানুষের নীতিতে টান পড়ে। আসলে আত্মবিশ্বাস কমে যায়। আমি যে নীতিতে বিশ্বাস করি সেটা সত্যি বিশ্বাস করার মতো কি না এই সব প্রশ্ন জাগে। আর পাঁচ বছর আগে যদি কেউ আমাকে জিজ্ঞাসা করত যে তুমি কখনও ম্যাকবুক (বা অ্যাপেল কোম্পানির যে কোনও প্রোডাক্ট) ব্যবহার করবে কি না তাহলে আমার উত্তর কী হত সেটা আর এখানে রিপিট করার দরকার নেই। আমি একজন ম্যাটকে চিনতাম যে বলত সে কোনওদিন ম্যাক ব্যবহার করবে না কারণ ‘ইট ইজ টু পপুলার’। হুজুগের প্রতি বিতৃষ্ণা আমার ম্যাকবুক ব্যবহার না করার একটা কারণ, কিন্তু আরও একটা কারণ ছিল। চশমার পাওয়ার মাইনাস বারো হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমার চোখের আরও একটা সমস্যা আছে। সেটা হচ্ছে সবার, সবকিছুর ভেতর একটা ‘টাইপ’ নজর করা। আমার মনে হয়েছিল অ্যাপেল একটা বিশেষ ‘টাইপ’এর লোক ব্যবহার করে। নিজেকে সেই টাইপে ফেলতে আমার ইচ্ছে করেনি। আমি সম্পূর্ণ সচেতন যে 'কোনওদিন অ্যাপেল ব্যবহার করব না’টাও একটা টাইপ। কিন্তু এই টাইপটায় নিজেকে ফেলতে আমার আগেরটার থেকে কম অনিচ্ছে হয়েছিল। 

তারপর বয়স হল। টাইপ বিচারের অব্যর্থতা নিয়ে নিজের মনে নানারকম দ্বিধাদ্বন্দ্ব জন্মাতে লাগল। মনে হতে লাগল স্থিতিস্থাপকতা দার্ঢ্যের থেকে সুবিধেজনক। ঠিক এই সময় আমার দু’নম্বর সোনি ভায়ো দেহ রাখল। অর্চিষ্মান নিজে ‘ম্যাকবুক টাইপ’ (অর্চিষ্মানের আর কোনও টাইপ নিয়ে আমার মাথাব্যথা নেই, কারণ অর্চিষ্মান শেষ পর্যন্ত ‘আমার টাইপ’), ওর মৃদু উসকানি ছিলই। এমন সময় অ্যামাজনে সস্তায় (ম্যাকবুকের তুলনায় সস্তা) ম্যাকবুক প্রো-এর অফার শুরু হল। সব মিলিয়ে আমার বাঁধ ভাঙল। কিনে বাড়ি আনলাম। নিজের মনের খচখচানি দূর করার জন্য মাইক্রোসফট অফিস কিনে ইনস্টল করলাম। অভ্র না নামালে আমার চলত না। তাই অভ্র নামালাম।

ম্যাকবুক চলা বন্ধ করে দিল। কেনার পরের দিন। 

আমাদের বাড়ি থেকে পঞ্চাশ হাত দূরে একটা অ্যাপেল সারাইয়ের দোকান আছে। সেখানে বেশিরভাগই আইফোন সারানোর খদ্দের আসেন। যা-ই খারাপ হোক না কেন দোকানের পক্ষ থেকে বলে দেওয়া হয় ইয়ে রিপেয়ার নহি হোতা। কম্পানি পলিসি নেহি হ্যায়। আমাকে সেরকম কিছু বলা হল না। একদিন বয়সী ম্যাকবুক ব্যবহারকারীকে সেরকম কিছু বলতে গেলে বুকের রীতিমত পাটা আর চোখের রীতিমত চামড়া লাগে বলেই বোধহয়। তবে জিজ্ঞাসা করা হল অভ্র নামিয়েছেন? থার্ড পার্টি ডাউনলোড? এর পরেও যদি ম্যাকবুক চলে তাহলেই নাকি আশ্চর্য। আমি অপরাধীর মতো চুপ করে রইলাম। ফরম্যাটিং হল। সাতদিন ভয়ে ভয়ে থাকার পর অভ্র ডাউনলোড করলাম। এবার বন্ধ হল না। ঢিকিয়ে ঢিকিয়ে চলতে লাগল।

অর্চিষ্মান বলত, এটা স্বাভাবিক নয়। তোমার কপালে খারাপ মেশিন জুটেছে। আমি কিছু বলতাম না। কারণ আমি জানতাম এ হচ্ছে নিজের নীতি, তা সে যতই অযৌক্তিক হোক না কেন, থেকে সরে আসার শাস্তি। দশ মাস কাটার পর অবস্থা এমন সঙ্গিন হল যে ল্যাপটপ একবার শাটডাউন করলে আধঘণ্টার আগে খোলা যেত না। একদিন জাস্ট খুলল না। 

আবার গেলাম দোকানে। ম্যাকবুক নিয়ে কর্তৃপক্ষ অফিসের ভেতর অদৃশ্য হলেন। বেরিয়ে এসে বললেন, সব ঠিক করে দিয়েছেন। তারপর আমার দিকে তাকিয়ে হেসে বললেন, বহোত ইউজ হুয়া হ্যায়।

তা হুয়া হ্যায়। সকাল সন্ধ্যে বাংলা টাইপ আর ইউটিউব। ম্যাকবুকের তন্বীতনু সে ধকল সইতে পারেনি। যে কথাগুলো বলতে ইচ্ছে করছিল সেগুলো গিলে বাড়ি চলে এলাম। একই সমস্যা আবার হল। আবার দোকানে গেলাম। এবার দোকানিরা চিন্তায় পড়লেন। যত দুর্ব্যবহারই হোক না কেন, এরকম বেগড়বাই করা ম্যাকবুকের পক্ষে ভালো দেখায় না। তাঁরা নিদান দিলেন, হার্ড ড্রাইভ মে হি প্রবলেম হোগা। 

গোটা ঘটনাটার মধ্যে একমাত্র ভালো খবরটা তখনই পাওয়া গেল। দশ মাসের মাথায় ধরা পড়েছে, কাজেই হার্ড ড্রাইভ বদল হবে বিনামূল্যে। হলও তাই। এখন ম্যাকবুক দিব্যি চলছে। আমরা বুঝলাম কম দামে পচা জিনিস চালিয়ে দেওয়াই হচ্ছে অনলাইন ‘অফার’। আমাদের কপালে বেশি খারাপ জিনিস জুটেছিল, এক বছরের লক্ষ্মণরেখা পেরোনোর ক্ষমতাও তার ছিল না। ভাগ্যিস। 

এই ল্যাপটপটা যে বছর খানেক পরেই দেহ রাখবে সে নিয়ে আমার কোনও বিভ্রম নেই। আমি অলরেডি ভাবতে শুরু করেছি এটার পর কী কেনা যায়। যাই কিনি না কেন, হালকা কিনব। ছোট নয়, হালকা। অর্চিষ্মান একবার টুক করে বলেওছে, এয়ার কিনতে পার। এবং আমি অন্যমনস্ক হয়ে উত্তর দিয়েছি, হ্যাঁ সেটাও দেখা যেতে পারে। 

*****

এ বার এ সপ্তাহের ইন্টারনেট। 


                What you do speaks so loud that I cannot hear what you say.
                                                                                                – Ralph Waldo Emerson



খবরাখবর

ফুল স্টপেই ফুল স্টপ পড়ে যাচ্ছে নাকি। পূর্ণচ্ছেদের পরিণতি নিয়ে বলতে পারব না, তবে বিস্ময়চিহ্নের ব্যবহার যে বাড়াবাড়ি রকম বেড়েছে সেটা কিছুদিন ধরে মনে হচ্ছিল বটে। 


What does it mean when you dream you’re being chased by an elephant? Does anyone have a copyright on the Bible? Does the Pope have to be a virgin? নিউ ইয়র্ক পাবলিক লাইব্রেরির ‘মানুষ গুগল’দের নিত্য এই সব প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। 

আমার যদি গাছপালা বাঁচিয়ে রাখার প্রতিভা থাকত তাহলে আমি এইরকম বাড়িতে থাকতে লাফিয়ে রাজি হতাম। 

আমি নিজে Fuck Off Fund-এর মস্ত বড় সমর্থক। তবে ফান্ড থাকা সত্ত্বেও লোককে মুখ বুজে মার খেতে দেখেছি আমি। আসলে লড়াই করতে গেলে ফান্ড, ব্যক্তিত্ব, সাহস সবগুলোই লাগে। কোনওটা কম পড়লেই চলে না। 

ছবি/সচল ছবি


নিঃসন্দেহে ইতিহাসের বিখ্যাততম থেরাপি কাউচ। এই কাউচে শুয়ে শুয়ে ফ্রয়েডের রোগীরা নিজেদের পেটের কথা উজাড় করতেন।  

হায়দ্রাবাদের ন্যাশনাল ফিশারিজ ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের বিল্ডিংটা সত্যি সত্যি মাছের মতো দেখতে জানতেন? 

ভিডিও


খেলা/কুইজ/লিস্ট

উইজডম হ্যানাত্যানা বলেছে বটে, কিন্তু আসল কথাটা হচ্ছে আমার কথা শুনলে আমাকে বুড়োহাবড়া মনে হয়। (এক্স্যাক্ট বয়স বার করেছে আটষট্টি।) 

পরশুর ইংরিজি হচ্ছে ওভারমরো। ব্রিটিশ অ্যাকসেন্ট আসলে অ্যামেরিক্যান অ্যাকসেন্টের উত্তরসূরী।  ক্রিয়াপদ হিসেবে ‘আনফ্রেন্ড’ ব্যবহার হয়ে আসছে ষোলোশো ঊনষাট থেকে। এসব আমি জানলাম এই লিস্টটা থেকে। 

গান 

রেডিওতে শুনে নতুন করে ভালো লেগে গেল। আপনারাও শুনুন। 



Comments

  1. bah amio 68. wisdom noy, prudishness amar jonno.
    Fuck Off Fund. Last 6 years er sob bhul decision er quick recap holo porte porte.
    amar onek poysa thakle ami hp spectre laptop kintam. but amazon e dam ta dekhe chokh phete jol elo.

    ReplyDelete
    Replies
    1. তোমার কমেন্ট পড়ে আমিও দামটা দেখলাম, কুহেলি। এ জীবনে হবে না।

      Delete
  2. Almost 8 years back I bought a DELL, when it was only available online through their own website. Joto rough use shombhab taar thekeo beshi korechi. Still use it, never felt the need to upgrade. No complaints at all. I swear by DELL now. It can be one of your options when you buy your next one.

    ReplyDelete
    Replies
    1. ওহ তাই নাকি। গুড গুড, মাথায় রাখলাম।

      Delete
  3. আরে এই গানটা আমার সবচেয়ে পছন্দের গানগুলোর মধ্যে একটা! ভাবলে অবাক হতে হয়, রেকর্ডিং ইত্যাদি প্রযুক্তির একেবারে বালখিল্য অবস্থায় এরকম সব জিনিস লোকে নামাত কি ভাবে, তার জন্যে কত প্রতিভা আর কত দূরদৃষ্টির প্রয়োজন হত !
    এ প্রসঙ্গে আরেকটি প্রিয় গানের কথা| নার্গিস, রাজ কাপুর, বৃষ্টি, ছাতা| আর বলতে হবে? ওই গানে হারমনি শুনলে গায়ে কাঁটা দেয়| অলওয়েজ|

    ReplyDelete
    Replies
    1. দুটো গান প্রসঙ্গেই একেবারে একমত, অন্বেষা।

      Delete

Post a Comment