এ মাসের বই/ জানুয়ারি ২০১৭




উৎস গুগল ইমেজেস

হানা কেন্ট-এর বেরিয়াল রাইটস পড়ার ইচ্ছে ছিল আমার অনেকদিনের। বইটার বিষয়ই এমন যে শুনলেই পড়তে ইচ্ছে করে। আইসল্যান্ডের শেষ মৃত্যুদণ্ড হয়েছিল আঠেরোশো তিরিশ সালের বারোই জানুয়ারি। মৃত্যুদণ্ডের পদ্ধতির ভালোমন্দ বিচার হাস্যকর মনে হতে পারে, কিন্তু সে পদ্ধতির রকম শুনলে গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠতে হয়। আরেকজন মানুষ, একটি কুঠার দিয়ে দণ্ডিতের মুণ্ডু ধড় থেকে আলাদা করে ফেলবে। সে দণ্ডে দণ্ডিত হয়েছিল দু’জন, Agnes Magnúsdóttir আর Friðrik Sigurðsson। স্থানীয় দুই কৃষককে খুনের অপরাধে তাদের এই সাজা হয়।

হ্যানা কেন্টের গল্প শুরু হয় একটি গরিব কিন্তু সামাজিক প্রতিষ্ঠাসম্পন্ন চাষিপরিবারের কথা দিয়ে যেখানে দণ্ডের আগের কয়েকদিন অ্যাগনেসকে এনে রাখা হয়েছিল। সাধারণত তখন বন্দীদের পাঠানো হত ডেনমার্কে, সেখানেই তাদের অন্তিম দণ্ড হত, কিন্তু এখানে খরচ কমানোর ও আরও নানারকম প্রশাসনিক অসুবিধের কারণে অ্যাগনেসকে স্থানীয় এই পরিবারটির সঙ্গে শেষের ক’দিন রাখা হয়। বলাই বাহুল্য, পরিবারটি এবং তাদের প্রতিবেশীরাও এ ঘটনায় প্রথমে খুবই বিচলিত হয়ে পড়ে। 

কেন্টের প্রথম উপন্যাস বেরিয়াল রাইটস। লেখার হাত ভদ্রমহিলার চমৎকার। বিশেষ করে সেই সময়কার আইসল্যান্ডের ছবি তিনি বড্ড সুন্দর ফুটিয়েছেন। দারিদ্র্য, প্রতিকূল জলবায়ুর সঙ্গে সংগ্রাম, মানুষজন। অ্যাগনেসের আগমনে পরিবারটির বিভিন্ন সদস্যের বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া, কারও বিদ্বেষ, কারও কৌতূহল, কারও ভয়, এবং ক্রমশ সে সব অনুভূতির বদলে যায়, ন্যায়অন্যায়, শাস্তি, ক্ষমা ইত্যাদি সম্পর্কে আজন্মলালিত ধারণাকে ভেঙেচুরে নতুন করে গড়ে, এ সমস্তই অতি যত্নে এবং সফলতায় ফুটিয়েছেন হ্যানা। 

সত্যি ঘটনা নিয়ে গল্প, কাজেই প্রচুর রিসার্চ করতে হয়েছে কেন্টকে। বইয়ের মাঝে মাঝে সে সবের প্রমাণও রেখে গিয়েছেন তিনি। সে সময়ের প্রশাসনিক এবং চার্চের অফিশিয়াল দলিলদস্তাবেজ থেকে রেফারেন্স দিয়েছেন, পাদরি এবং পুলিশের বয়ান তুলে দিয়েছেন। এটা করতে গিয়ে গল্পের স্রোত ব্যাহত হয়েছে বলেই আমার মনে হয়েছে। আর একটা যেটা অসুবিধে, গল্পের একটা বিরাট অংশ স্মৃতিচারণা। তার ছোটবেলা, অসীম স্ট্রাগল, লাঞ্ছনার মধ্যে বেড়ে ওঠা, তার অপরাধের কার্যকারণ ইতিবৃত্ত, সবটাই আমরা জানতে পারি অ্যাগনেসের স্মৃতিচারণায়। সেটা একটু ক্লান্তিকর। 

তবে এগুলো ছোটখাটো অভিযোগ। বেরিয়াল রাইটস নিঃসন্দেহে পড়ে দেখার মতো বই।  

*****

উৎস গুগল ইমেজেস

মাইকেল শেবন লিটারেরি সাহিত্য ঘরানায় একজন পরিচিত নাম। প্রচুর পুরস্কার পেয়েছেন তিনি, মায় পুলিতজার। আমি তাঁর অন্য কোনও গল্প পড়িনি, কিন্তু তিনি একটি রহস্যগল্পও লিখেছেন জেনে সেটা পড়ার ইচ্ছে হল। ইডিশ পোলিসমেন’স ইউনিয়ন গোয়েন্দাগল্প পাঠকদের মধ্যে এবং অপাঠকদের মধ্যেও সাড়া জাগিয়েছিল। ইন ফ্যাক্ট ‘লিটারেরি’ মিস্ট্রি নভেলের যে কটা তালিকা আমি এ যাবত দেখেছি ইন্টারনেটে, সবেতেই শেবনের ইডিশ পোলিসমেন’স আছে।

সব মিলিয়ে আমি আর পড়ার লোভ সামলাতে পারলাম না। গল্পের পটভূমি অতি ইন্টারেস্টিং। যাকে বলে অল্টারনেট হিস্ট্রি। অর্থাৎ যা হয়েছে তা না হয়ে যদি অন্যরকম হত। যদি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আলাস্কার সিটকায় ইহুদি সেটলমেন্ট হত আর যদি উনিশশো আটচল্লিশে ইজরায়েল রাষ্ট্র ধ্বংস হয়ে যেত, সেই প্রেক্ষাপটে রহস্য ফেঁদেছেন শেবন। ঘটনাস্থল সিটকা, আলাস্কা। ল্যান্ডসম্যান, সিটকা পুলিশফোর্সের অফিসার, বর্তমানে ব্যক্তিগত ঝামেলায় জর্জরিত, ডিভোর্সের পর একটা লজঝড়ে হোটেলে এসে থাকছেন। সেই হোটেলেই একটি মৃতদেহ আবিষ্কার হয়। এবং ল্যান্ডসম্যান, তাঁর পার্টনার শেমেটস-এর সঙ্গে রহস্যোদ্ধারে নামেন। মাত্রাতিরিক্ত ভালো দাবা খেলতে পারা ছাড়া মৃতদেহের পরিচয় সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানা যায় না। গল্প এগোনোর সঙ্গে সঙ্গে লোকটির আসল পরিচয় প্রকাশ পায়, যেটা আমি বলছি না, কারণ সেটা আমার মতে স্পয়লার, যদিও উইকিপিডিয়া লিখে দিয়েছে। গোটাচারশো পাতা পেরিয়ে রহস্য সমাধান হয়। 

ইডিশ পোলিসমেন’স ইউনিয়ন গোয়েন্দা গল্প বটে, কিন্তু আমি নিশ্চিত একে গোয়েন্দাগল্প বলে চালাতে গেলে শেবন, বা অন্তত শেবনের অনুরাগীরা খুশি হবেন না। কারণ সত্যিই, ইডিশ পোলিসমেন’স আরও অনেক কিছু। দাবাখেলা আর আলাস্কা তো বোঝাই যাচ্ছে, একই সঙ্গে ইহুদিসংক্রান্ত বিশ্বরাজনীতির ঘোলাজল এবং আলাস্কার ইহুদি জনজীবনের ওপর তার প্রভাব আমার মতে এ বইয়ের কেন্দ্রীয় চরিত্র। 

ইডিশ পোলিসমেন’স ইউনিয়ন আমার কেমন লেগেছে সেটা বলতে গিয়ে একটু থতমত খাচ্ছি। এ বইয়ের একেকটা অংশের প্রতি আমার প্রতিক্রিয়া একেকরকম। ইহুদি ইতিহাসের অংশটুকু সম্পর্কে আমার ধারণা এতই অস্বছ যে তার বিচার করা আমার কর্ম নয়। প্রচুর সময় লেগেছে আমার গল্পের ভেতরে ঢুকতে। হিব্রু শব্দ, বাক্য এবং ধর্মীয় রেফারেন্সে থিকথিক করেছে শেবনের লেখা। শেবন পাঠকের জন্য কাজটা সহজ করার চেষ্টা করেননি, সে নিয়ে আমার কোনও অভিযোগও নেই। শেবনের ভাষা অসম্ভব ফুলেল, অনেকেই তাঁর ভাষার প্রশংসা করেছেন, আমার খুব একটা মনে ধরেনি। ইডিশ পোলিসমেন’স ইউনিয়ন-কে গোয়েন্দাগল্প হিসেবে বিচার করলে অবশ্য আমার কিছু বলার আছে। প্রথম বলার বিষয়, গল্পের মুখ্য চরিত্র। পুলিশ প্রসিডিউর‍্যালে এই ডিপ্রেসড মাঝবয়সী পুরুষগোয়েন্দার প্রকোপ এত বেশি যে  ল্যান্ডসম্যান আলাদা করে মনে থাকেন না। তাছাড়াও রহস্যটা সমাধান করা হয়েছে খুবই দায়সারা ভাবে। মানে আপনি যদি ‘কে করেছে’ ‘কে করেছে’ ভাব নিয়ে গল্পের মধ্য দিয়ে যান তাহলে হতাশা অপরিহার্য। 

*****

উৎস গুগল ইমেজেস


ডগলাস অ্যাডামসের নিজের ভাষায় এই বইয়ের বর্ণনা হচ্ছে thumping good detective-ghost-horror-who dunnit-time travel-romantic-musical-comedy-epic. 

ছোট করে বললে, বইটা অদ্ভুত। খুবই অদ্ভুত। এতই অদ্ভুত যে গল্পে কী ঘটেছিল তা আমি অলরেডি ভুলে গেছি। খালি মনে আছে একজনের বাড়ির সিঁড়িতে একটা সোফা আটকে গিয়েছিল, সে প্রত্যেকবার সেটাকে টপকে যাওয়াআসা করছিল, আর ছিল একজন ইলেকট্রিক মংক, আর ছিল বাথরুমে জ্যোৎস্নার আলোয় দাঁড়িয়ে থাকা সাদা ঘোড়া, কুবলাই খান, কোলরিজ, মোৎজার্ট, সাইন কার্ভ।

ডগলাস অ্যাডামসের লেখার সঙ্গে পরিচিতি থাকলে অবশ্য এগুলো নিয়ে চমকানোর কিছু নেই। অন্যরকম কিছু হলেই অদ্ভুত। আপনার যদি অদ্ভুতরসে আগ্রহ থাকে তাহলে পড়তে পারেন, না থাকলেও পড়তে পারেন, মোটে একশো সাতাশ পাতার বই। এই বই নিয়ে রিভিউ লেখার সাধ্য আমার নেই, আমি খালি আমার ভালোলাগা একটা অংশ এখানে তুলে দিলাম। 

The horse walked with a patient, uncomplaining gait. It had long grown used to being wherever it was put, but for once it felt it didn’t mind this. Here, it thought, was a pleasant field. Here was grass. Here was a hedge it could look at. There was enough space that it could go for a trot later on if it felt the urge. The humans drove off and left it to its own devices, to which it was quite content to be left. It went for a little amble, and then, just for the hell of it, stopped ambling. It could do what it liked.

What pleasure.

What very great and unaccustomed pleasure.

It slowly surveyed the whole field, and then decided to plan out a nice relaxed day for itself. A little trot later on, it thought, maybe around threeish. After that a bit of a lie down over on the east side of the field where the grass was thicker. It looked like a suitable spot to think about supper in. 

Lunch, it rather fancied, could be taken at the south end of the field where a small stream ran. Lunch by a stream, for heaven’s sake. This was bliss. 

It also quite liked the notion of spending half an hour walking alternately a little bit to the left and then a little bit to the right, for no apparent reason. It didn’t know whether the time between two and three would be best spent swishing its tail or mulling things over. 

Of course, it could always do both, if it so wished, and go for its trot a little later. And it had just spotted what looked like a fine piece of hedge for watching things over, and that would easily while away a pleasant pre-prandial hour or two. 

Good.

An excellent plan.

And the best thing about it was that having made it the horse could now completely and utterly ignore it. It went instead for a leisurely stand under the only tree in the field.


Comments

  1. Bah, onek notun boiyer khoj pawa gelo. Burial Rights ta obossoi porar ichhe roilo. Michael Chabon aar Douglas Adams er boigulor description dekhe ektu dome gelam, dekha jaak.

    ReplyDelete
    Replies
    1. আমার তিনটের মধ্যে বেরিয়াল রাইটসটাই বেস্ট লেগেছে, অরিজিত। পেলে পড়ে দেখতে পারেন।

      Delete
  2. Burial Rites porechi.. darun bhalo legeche...

    Chabon er boita amar kichudin er moddhei porar icche.. kothin recommendation royeche.. asha korchi boita beshi pretentious noy aar aami shesh korte parbo..

    Douglas Adams try korar ekhoni sahos hocche na.. onake amar ektu beshi odbhut lage.. beshikkhon porte pari na.. jodio apnar tule deya onsho ta khub bhalo laglo

    bhalo thakben

    Indrani

    ReplyDelete
    Replies
    1. আপনিও ভালো থাকবেন, ইন্দ্রাণী। ডগলাস অ্যাডামস আমার শক্ত লাগে।

      Delete

Post a Comment