চেয়ার প্রসঙ্গে
রিষড়ার বাড়িতে সবসময়েই মানুষের থেকে চেয়ার বেশি ছিল। কোনওটা কাঠের, কোনওটা বেতের, কোনওটা প্লাস্টিকের, কোনওটা সস্তা স্টিলের কাঠামোর ওপর নাইলনের দড়ির বুনুনির। কোনওটা বেঢপ, কোনওটা ফোল্ডিং, কোনওটার একটা পায়ার নিচে ভাঁজ করা কাগজ গুঁজে বাকি তিনটে পায়ার সঙ্গে সমান করা।
একটাও সুদৃশ্য কিংবা মহার্ঘ নয়, ইকো ফ্রেন্ডলি তো নয়ই।
কিন্তু সবক'টাই মারাত্মক কাজের।
খেয়াল করুন, মানুষের থেকে বেশি চেয়ার বলেছি, দরকারের থেকে বেশি বলিনি। রিষড়ার বাড়ির আরও একটা বৈশিষ্ট্য ছিল, অন্তত আমার বড় হওয়ার সময় ছিল, সেটা হচ্ছে নিমেষের মধ্যে বাড়িতে ঠাসাঠাসি ভিড় হয়ে যেতে পারত। মানে ধরুন আমি বাবা মা ঠাকুমা পিসি আপনমনে যে যার তালে ঘুরছি, হঠাৎ গেটের সামনে তিনখানা রিকশা এসে থামল, হাসি হাসি মুখে সাতজন নামলেন। রামরাজাতলা কিংবা হালিশহর কিংবা বেলঘরিয়া কিংবা মছলন্দপুর কিংবা টিটাগড় থেকে আমাদের সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন। অকস্মাৎ। নোটিস দিয়ে আত্মীয়স্বজনের বাড়ি যাওয়াটা সে সময় ব্যাড ম্যানার্স বলে গণ্য হত। বাড়িতে বাড়িতে ফোন আসার আগে তো খবর দেওয়া সম্ভবও ছিল না, আসার পরেও বেশ ক'বছর কাউকে কারও বাড়ি ফোন করে যেতে দেখিনি। বাড়ির ফোন মূলত ব্যবহার হত পাশের বাড়ির লোকের ফোন এলে ডেকে দেওয়ার জন্য।
আত্মীয়স্বজনের ভিড়টা সপ্তাহান্তেই বেশি হত, তা বলে উইকডেজে চেয়ারগুলো বসে বসে ফাঁকি মারতে পারত না। স্কুল কলেজ অফিসের ভিড় পাতলা হয়ে গেলে বেলা এগারোটা থেকে একটা পর্যন্ত (দেড়টায় মিউনিসিপ্যালিটির কলের জল চলে যাওয়া আগে চান সারতে হত) বাড়িতে পাড়ার মহিলাদের জমায়েত হত, চেয়ার ভর্তি হয়ে মাটিতেও বসতে হত কাউকে কাউকে। বিকেলে চাইনিজ চেকার চ্যাম্পিয়নশিপে অংশগ্রহণ করতে ঠাকুমার বন্ধুরা আসতেন, খেলোয়াড় দর্শক মিলিয়ে চেয়ার ফাঁকা পড়ে থাকত না। বিজয়ার সন্ধেয় পাড়ার পুকুরে ভাসান হওয়ার পর চেয়ারে কুলিয়ে ওঠা যেত না। একটা বয়সের ওপরের মানুষেরাই চেয়ারে বসতে পেতেন, একটা বয়সের নিচের লোকদের চেয়ার অফার করা হত না, করলেও তারা অ্যাকসেপ্ট করত কি না সন্দেহ। ঘরের একধার থেকে প্রণাম শুরু করে একবারে ওইধারে পৌঁছে তারা মাথা তুলত, তারপর দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই নাড়ু নিমকি খেয়ে, 'আচ্ছা ঠাকুমা/জেঠিমা/কাকিমা আসছি' বলে পাশের বাড়ির দিকে দৌড়োত। এই যে এখন সবাই যে যার মোবাইলে বিশ্বকাপ দেখছে এবং গোল হলেই দৌড়ে টুইটার ফেসবুকে গিয়ে 'গোওওওল' কিংবা, 'আহা, ফ্রি কিকটা দেখলে?' লিখছে, (আমি তাদের দোষ দিই না, বিশ্বকাপ ফুটবল একা একা দেখার থেকে প্যাথেটিক ব্যাপার কমই আছে), তখনও এমন দুর্দিন আসেনি। খেলার রাতে টিভির ঘরের প্রতিটি চেয়ার দখল হয়ে যাওয়ার পর কিছু লোককে তক্তপোশে এবং মাটিতে বসতে হত। তাতেও না কুলোলে টুল আনা হত। দুটো টুল ছিল আমাদের বাড়িতে। এখনও আছে। একটা কাঠের এবং লম্বা, একটা লোহার এবং বেঁটে।
এই কোটি কোটি চেয়ারের মধ্যে কালো কাঠের বেঁটে বেঁটে একজোড়া চেয়ার, সামনের ঘরে কাঠের গোলটেবিলের (কে যেন বুদ্ধি খাটিয়ে সেটা ধপধপে সাদা রং করে দিয়েছিল) দুপাশে বসে থাকত। আমি জন্ম থেকে দেখছি চেয়ারদুটোকে। ষাট শতাংশ নিশ্চিত হয়ে বলতে পারি, বাবাও ওদের জন্ম থেকে দেখছেন। কেউ কখনও খুঁচিয়ে চেয়ারদুটোর হাতলের জায়গায় জায়গায় কাঠের পালিশ তুলে দিয়েছিল কোনও কারণে, তারপর যারাই বসত আনমনে সে সব পালিশতোলা ক্ষতে হাত বোলাত, মনখারাপ হলে নখ দিয়ে খুঁটত, ব্রাজিল আর্জেন্টিনাকে গোল দিলে হাতপাখার হাতল ঠুকে এনকোর জানাত। বাবার আমলে কেমন ছিল জানি না, আমি যতদিনে সিনে এসেছি ততদিনে চেয়ারদুটোর দুই দুই চারখানা হাতল ক্লাস নাইনের কুন্তলার গালের মতো হয়ে গেছে।
দুটো চেয়ারেই ব্যবহারে ব্যবহারে চিঁড়ে চ্যাপটা হয়ে যাওয়া মেরুন রঙের ওয়াড়পরানো গদি ছিল আর পিঠে চাপানো ছিল মেরুন রঙের ঢাকনা। সেগুলোকে যখন কাচতে নিয়ে যাওয়া হত, সিটে আর পিঠে অল্প হলুদ হয়ে যাওয়া বেতের বুনুনি নিয়ে চেয়ারদুটো লজ্জিত মুখে বসে থাকত। খালিগায়ে ফ্যানের হাওয়া খেতে পেয়ে খুশিই হত মনে হয়।
চেয়ারদুটো এখন আর নেই। কবে গেল দিনতারিখ মনে নেই, কেন গেল মনে আছে। পোস্টিং-অন্তে তেজপুর থেকে চলে আসার সময় বাবা মায়ের জন্য একটা আসাম সিল্ক আর বাড়ির জন্য একটা ছোটখাটো সিংহাসনের আয়তনের বাঁশের চেয়ার নিয়ে এসেছিলেন। মা বলেছিলেন, আবার শাড়ি কেন, আলমারিতে তো আর জায়গা নেই। চেয়ার প্রসঙ্গে সে রকম কিছু বলা হয়েছিল কি না জানি না।
বলা উচিত ছিল, কারণ আলমারি আর শাড়ির সম্পর্ক যা, বাড়ি আর চেয়ারের সম্পর্কও তাই। যত চাই তত জড়ো করা যায় না। একসময় থামতে হয়। যদি না মার্ক ড্যানিয়েলিউস্কির 'হাউজ অফ লিভস'-এর বাড়ির মতো বাড়ি হয়, যে বাইরেটা একই রকম থাকে কিন্তু ভেতরটা অতি ধীরে ক্রমশ বিস্তৃত হতে থাকে। ভগবানের দয়ায় আমাদের বাড়ি সে রকম নয়, কাজেই সিংহাসনকে জায়গা দিতে কোনও না কোনও বলিদান লাগতই। ভেতরের ঘরের খাট আলমারি তো বিদায় করা যায় না, তাছাড়া অত বাহারের সিংহাসন, বাইরের ঘরে থাকলে তবু পাঁচটা লোকে দেখতে পাবে। বাইরের ঘরের তক্তপোশ বা টিভিও বলিদান দেওয়া যায় না, মা কালী আগেই থেকেই বুদ্ধি খাটিয়ে দেওয়ালের ওপর চড়ে বসে আছেন, জায়গা না থাকার অজুহাতে আর যাকেই হোক তাঁকে ফেলে দেওয়া যাবে না।
সিদ্ধান্ত নেওয়া শক্ত হল না। কালো চেয়ারদুটোর চেহারা ততদিনে আরও খোলতাই হয়েছে, মেরুন ঢাকনা জায়গায় জায়গায় ফাঁসা। ফেলে দেওয়া অবশ্য হল না, বাবা চোখ কপালে তুলে চেয়ারের খোঁদলময় হাতলে হাত বুলিয়ে বললেন, ফেলে দেব?! এ কাঠ আজকাল আর পয়সা দিলেও পাওয়া যায় না, জানো?
যতীনবাবু এলেন। চেয়ারদুটো টুকরো টুকরো করে ফেলে, শিরিষ কাগজ দিয়ে ঘষে, দরকার মতো এদিকসেদিক জুড়ে বা ছেঁটে তাদের নতুন ফ্যাশানের দু'খানা চেয়ারে পরিণত করে ভ্যানে চাপিয়ে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে গেলেন। নতুন চেয়ারেরা বারান্দায় অধিষ্ঠিত হলেন। তাঁদের সম্মানে বারান্দার মিনি সিলিংফ্যান ঝুলল। ফ্যানের তলায় সে চেয়ারে ক'বছর আগে পর্যন্ত ঠাকুমা বসে থাকতেন। এখন বাবামা বসে থাকেন।
*****
সকালবিকেল কারিগাছে জল দিতে যাওয়ার সময় পার হওয়া ছাড়া এ বাড়ির একটা ঘর এখনও আমাদের কোনও কাজে লাগেনি। মাঝে মাঝে বলাবলি করি, কী লাভ হল বড় বাড়িতে এসে? ওই ঘরটা তো পুরো ওয়েস্ট।
কিন্তু ব্যবহার করি না বলে একটা ঘরকে একেবারে ফাঁকা ফেলে রাখা যায় না। দুটো বুককেসের একটা ওই ঘরে রেখেছি, তিনটে বাঁধানো ছবির একটা ওই ঘরে টাঙিয়েছি। এখনও আমাদের বাড়িতে কেউ আসেনি কিন্ত আসতেও তো পারে? এলে ওই ঘরে বসতে দেব ঠিক করে রেখেছি। বসতে দিতে গেলে চেয়ার লাগবে। দুটো চেয়ার আছে আমাদের, লেখাপড়ার টেবিলদের সঙ্গে এসেছিল। বাড়াবাড়ি রকমের কেজো দেখতে।
অফিসের রিসার্চে আর অবান্তরের লেখায় ফাঁকি দিয়ে ইন্টারনেটের বাজারে চেয়ারের সন্ধানে নামলাম। বাজেটের মধ্যের পছন্দমতো চেয়ার খুঁজে খুঁজে বুকমার্ক করলাম। বাজেটের সামান্য বেশি অথচ চোখে- লাগছে-বেশ চেয়ারদেরও বাদ দিলাম না।
শুক্রবার লাঞ্চের পর 'আমি কী খেলাম তুমি কী খেলে' নিয়মরক্ষা ফোনে চেয়ারের কথা উঠল। বুকমার্ক করা গোটা পঞ্চাশ চেয়ার দেখতে উৎসাহী কি না জানতে চাইতে অর্চিষ্মান বলল, ওরে বাবা কুন্তলা, বস তাগাদা দিচ্ছে, অনেক কাজ। কাল সকালে চা খেতে খেতে বেছে অর্ডার দিয়ে দেব।
তারপর বলল, জানো তো, বসার ঘরের জন্য একরকমের চেয়ারের খুব শখ আমার।
আমি বললাম, শুনি শুনি কী রকম।
সেই যে পুরোনো দিনের কাঠের চেয়ার হত না?...
আমার গলার স্বরে আতংক বেরিয়ে পড়ল। যে সব চেয়ারের পায়ার বদলে সিংহের থাবা থাকে?
অর্চিষ্মান বলল, কুন্তলা, আমারতোমার বসার ঘরে সিংহের থাবা পাগলের কাণ্ড দেখাবে।
সে তো দেখাবেই।
থাবাটাবা নয়, সিম্পল স্ট্রেটফরওয়ার্ড কাঠের চেয়ার, খালি বসার আর পিঠের জায়গাটা সাদা বেতের ক্রিসক্রস।
আরও কী সব বলছিল অর্চিষ্মান, কিন্তু আমি অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছিলাম। উল্টোদিক থেকে দু'জন আসছিলেন হেঁটে হেঁটে। বেঁটেমতো, শ্যামলা রং। আমার দিকে তাকিয়ে হাসছিলেন। আমিও মুখ হাসি হাসি করলাম, করেই সম্বিত ফিরল, চট করে ঘাড় ঘুরিয়ে পরীক্ষা করে নিলাম পেছনের রাস্তাটুকু। দুপুর দুটোর আটচল্লিশ ডিগ্রি রোদে খাঁ খাঁ, অনেক দূরে একজন সিকিউরিটি ভাইসাব গাড়ির চাকার নিচে আয়না ধরে পরীক্ষা করছেন। যাক, ওঁরা আমাকে দেখেই হেসেছেন তার মানে। ক্যান্টিনে বা কনফারেন্সে কোথাও একটা দেখে থাকবেন নিশ্চয়।
আন্টিজির দোকান থেকে চা খেয়ে এসে চেয়ার খুঁজছি, মিনিট দশেক বাদেই কাজ শুরু করব ভাবছি, স্ক্রিনের কোণে চ্যাটবাক্স মাথা তুলল। অন্যদিনের মতো ইউটিউবের না, গুগল ইমেজেস-এর লিংক।
ei je eitar kotha bolchilam. bhalo na?
ক্লিক করলাম। ট্যাব খুলে গেল।
স্ক্রিন থেকে একটা চেয়ার আমার দিকে তাকিয়ে আছে। চেয়ারটাকে আমি চিনি। সেই কালোকোলো বেঁটেখাটো ষণ্ডা চেহারা, সেই সামান্য হেলানো পিঠ, সেই বেতের বুনুনি। খালি মেরুন ঢাকনা নেই আর হাতলদুটো স্পটলেস।
*****
চেয়ারের নিচে যে দামটা লেখা ছিল সেটা দেখে হাসাও যায় কাঁদাও যায়। অফিসে বসে কোনওটাই করা উচিত হবে না মনে করে ট্যাব বন্ধ করে বেরিয়ে এলাম। চেয়ার খোঁজায় ক্ষান্ত দিয়ে অফিসের কাজে মন দিলাম। পরদিন সকালে চা খেতে খেতে অর্চিষ্মান বলল, তোমার বুকমার্ক করে রাখা চেয়ারগুলো দেখি চল।
আমি বললাম, না থাক। বরং ওই চেয়ারটার মতো কিছু জোগাড় করার চেষ্টা করা যাক।
পুরোনো ফার্নিচারের মার্কেট দিল্লিতে বেশ কয়েকটা আছে। পঞ্চকুইয়া রোড, মুনিরকা, মহীপালপুরের দিকটায়, কীর্তিনগরে। আমাদের বাড়ির সবথেকে কাছে লাজপত নগরের অমর কলোনির ফার্নিচার মার্কেট। সেদিন দুপুরেই গেলাম। সারি সারি দোকান, কোনখানটায় একটা শেষ হয়ে অন্য দোকান শুরু হচ্ছে ঠাহর হয় না। দোকানের পেছন দিকে শিল্পীরা বসে কাঠের কাজ করছেন। বড় বড় ধাতব কুলার ঘরঘর ঘুরছে।
বেতের বুনুনির কাঠের চেয়ার সব দোকানেই আছে বা অর্ডার দিলে তৈরি হয়ে যাবে। কিন্তু তাদের সকলের চেহারাই আমার আর অর্চিষ্মানের পছন্দের সামান্য এদিকওদিক। হয় বাড়াবাড়ি রকম চওড়া হাতল, নয় সেটের অন্তর্গত - আলাদা বিক্রি হবে না, নয় আমাদের বাজেটের বাইরে। চারটে দোকান দেখা হয়ে গেছে, মার্কেটের মুড়ো থেকে শুরু করেছিলাম ল্যাজা নজরে আসছে, এমন সময় একটা দোকানের সামনে এক ভদ্রলোককে কানে ফোন নিয়ে বসে থাকতে দেখলাম। ওঁরও মুখ বিরক্ত, আমরাও হতোদ্যম। ওঁকেই ধরলাম। আমাদের মাইলখানেক লম্বা স্পেসিফিকেশন শুনে ভদ্রলোকের মুখ আরও ব্যাজার হল। হাঁকিয়েই দিতেন হয়তো, কী মনে করে ফোন কেটে দিয়ে উঠলেন। বললেন, ওইরকম দুটো চেয়ার তিনি কোনও একটা কোণে পড়ে থাকতে দেখেছেন।
বেতের বুনুনির কাঠের চেয়ার সব দোকানেই আছে বা অর্ডার দিলে তৈরি হয়ে যাবে। কিন্তু তাদের সকলের চেহারাই আমার আর অর্চিষ্মানের পছন্দের সামান্য এদিকওদিক। হয় বাড়াবাড়ি রকম চওড়া হাতল, নয় সেটের অন্তর্গত - আলাদা বিক্রি হবে না, নয় আমাদের বাজেটের বাইরে। চারটে দোকান দেখা হয়ে গেছে, মার্কেটের মুড়ো থেকে শুরু করেছিলাম ল্যাজা নজরে আসছে, এমন সময় একটা দোকানের সামনে এক ভদ্রলোককে কানে ফোন নিয়ে বসে থাকতে দেখলাম। ওঁরও মুখ বিরক্ত, আমরাও হতোদ্যম। ওঁকেই ধরলাম। আমাদের মাইলখানেক লম্বা স্পেসিফিকেশন শুনে ভদ্রলোকের মুখ আরও ব্যাজার হল। হাঁকিয়েই দিতেন হয়তো, কী মনে করে ফোন কেটে দিয়ে উঠলেন। বললেন, ওইরকম দুটো চেয়ার তিনি কোনও একটা কোণে পড়ে থাকতে দেখেছেন।
শতশত সোফা, সেটি, কফি টেবিল, বাহারি বাক্স, গদি আঁটা চেয়ারের তলা থেকে তারা বেরোলো। আকারেপ্রকারে রিষড়ার বাড়ির চেয়ারদুটোর মতোই, কিন্তু বাড়ির চেয়ারদুটো শেষ অবস্থাতেও এদের সঙ্গে আত্মীয়তা স্বীকার করতে রিফিউজ করত। ধুলোয় ধুলোময়, বেতের ব নেই, সিট আর পিঠের জায়গায় দু'খানা হাঁ হাঁ গর্ত। ভদ্রলোক এতক্ষণে একটু নরম হয়েছিলেন, সান্ত্বনা দিলেন, ঘাবড়াবেন না, পালিশটালিশ করলে, বেতটেত বুনলে একদম নতুন হয়ে যাবে।
সত্যি কথা বলতে কি ওঁর সান্ত্বনা শুনে নয়, ওই গরমে আর ঘুরতে পারছিলাম না বলেই 'যা থাকে কপালে' বলে অর্ডার দিয়ে দিলাম। গুড্ডুজি বললেন চার পাঁচ দিনেই হয়ে যাবে। হলে উনি ফোন করে জানিয়ে দেবেন। আমরা অ্যাডভান্স দিয়ে বানকাহিতে খেতে চলে গেলাম।
গুড্ডুজির ফোন এল সোমবার লাঞ্চের আগেই। অফিসফেরতা চেয়ার নিয়ে বাড়ি ফিরলাম। কাঠের স্বাভাবিক রং রেখে দিয়েছেন ওঁরা। ভালোই করেছেন। কালো রং করে দিলে ও চেয়ারজোড়ার দিকে তাকালে আমার গা ছমছম করত।
আপাতত খালি ঘরে, একখানা বুককেস আর দু'খানা ছবির সঙ্গে অতিথির অপেক্ষায় দুজনে চুপটি করে বসে আছে।
আর আমি অফিসের কাজ আর অবান্তরের লেখায় ফাঁকি দিয়ে ইন্টারনেটে ওদের জন্য মেরুন ঢাকনা খুঁজে বেড়াচ্ছি।
ছবি কৈ? হ্যাঁ? সেই পঞ্চাশটা চেয়ারের লিংক?
ReplyDeleteওসব দিলে যে কজন আছেন তাঁরাও পালাবেন, শাল্মলী।
Deleteমোটেই কেউ পালাবেন না। বললেই হলো?
Deleteছবি হোক ?
ReplyDeleteদেখছি, অন্বেষা।
DeleteAre bah.. telepathy er thakur dada er moto bapar.. photo dao..
ReplyDeleteযা বলেছিস, ঊর্মি।
DeleteAhhh haaa ki sundor likhlen. Maya-i bhora lekha. Prai Bhibhutibhushan er ek-khana choto golper moto. Er chaye boro prosongsha amar kichu jana nei. Ei dhoroner lekha gulo-i apni khub bhalo lekhen. Sudhu duto chair, byas. Plot nei, choritro-ra name matro, golper sesher chomok nei, kintu ki bhalo lekha. Sudhu maya-i bhora. Asole ei plot amader sobar jana, ei choritro-der amra sobai chini, tai sudhu du-ek kothai booker govire kulkul kore nostalgia boye jai.
ReplyDeleteআরে থ্যাংক ইউ, ঘনাদা। মন ভালো করে দিলেন। থ্যাংক ইউ।
Deleteচেয়ারের সঙ্গে আমার সম্পর্কটা বড়ো বেদনাবিধুর।
ReplyDeleteছোটোবেলায় যখন ভাড়াবাড়িতে থাকতাম, তখন ঘরে জিনিসপত্র একেবারে ঠাসাঠাসি হয়ে থাকত। হাঁটার সময় রীতিমতো দেখেশুনে পা না ফেললেই নখের কোণে খাটের পায়া, ট্রাংকের সাইড, এমনকি ভাঙা মেঝের এবড়োখেবড়ো অংশের অনুরাগের ছোঁয়া লেগে আমাদের মুখ থেকে বাপরে-মারে এবং বয়োজ্যেষ্ঠদের মুখ থেকে নানা প্রাকৃত বচন বেরোত। সেই বিপদসঙ্কুল পরিবেশে বসার জন্য খাট, এবং শতরঞ্চিই ছিল বেস্ট। তা বাদে ছিল, মাতৃকুল অসমনিবাসী হওয়ার স্মৃতি হিসেবে কিছু বেতের মোড়া, এবং বেতেরই ভয়ঙ্কর শক্ত ও যন্ত্রণাদায়ক কয়েকটা চেয়ার। শুধু শক্ত বলে নয়, পেরেক-ফেরেক বেরিয়ে সেগুলো যে চেহারায় থাকত তা গেম অফ থ্রোনের ওই ডেঞ্জারাস চেয়ারটার সঙ্গে তুলনীয়। বহু সংগ্রামের পর বাড়িতে নীলকমলের গোটাকয়েক চেয়ার ঢুকেছিল ঠিকই, কিন্তু সেগুলোর আসন হিসেবে বাড়ির বাতিল বালিশ ফিট করায় খুব অসুবিধে হয়েছিল। ওগুলো সারাদিন বেড়ালদের দখলেই থাকত। আমাকে বসতে হত সেই বেতের বস্তুগুলোতেই।
বড় ভালো লিখলেন, ঋজু।
Deletearey chobi dao. kokhono dilli gele tomar bari jawar amar khub icche. tumi jodi allow koro toh.
ReplyDeleteএই আমি তোমাকে নেমন্তন্ন করে রাখছি, কুহেলি।
DeleteLekha Porte Porte khub ASA korchilam chair er chobi dekhte pabo.
ReplyDeleteহাহা, বেশিরভাগ পাঠকই সে রকম আশা করছিলেন বোঝা যাচ্ছে। আশা পূরণ না করতে পারার জন্য দুঃখিত।
DeleteAste aste ghor bhore uthbe dekho ... songsar kora ekei bole. :-)
ReplyDeleteOi room ta te ekta godi fele boi ar gaaner jinish rekhe adda r ghor baniye nao.
সত্যি বলতে শর্মিলা, ভরিয়ে তুলতেও যে খুব চাই তা নয়। ঠাসাঠাসি হলে আবার খালি ঘরের জন্য প্রাণ কাঁদবে।
DeleteAmra shuru korechilam duto suitcase, duto godi ar duto plastic chair diye ... khaat o chilo na. Ekhon teen bhk choto mone hoye ... songsar songsar khelte khelte bujhtei parini :-)
Deleteএইটা একদম ঠিক বলেছ, শর্মিলা। জায়গা আসলে খালি রাখা যায় না। অজান্তেই ভরে ওঠে।
DeleteBoro bhalo likhechhen apni. MOn bhalo kora lekha. :)
ReplyDeleteথ্যাংক ইউ, সায়ন।
DeleteKuntala,
ReplyDelete6th August Kolkata jaoyar pothe Delhi te ghonta chhoyeker halt achhey. Tomar dekha paoyar kono chance achhey ki?
Chupkotha
এই রে, এত আগে থেকে তো বলা মুশকিল, চুপকথা।
DeleteAah, ki aaram laglo na porey.......
ReplyDeleteধন্যবাদ।
Delete"বাড়ির ফোন মূলত ব্যবহার হত পাশের বাড়ির লোকের ফোন এলে ডেকে দেওয়ার জন্য" ... haa haa haaa ... eta jaa taa rokomer mokkhom ... prothom prothom amader barite phone asar pore .. ashe pasher sabar barir gushti gotranter golar swar amar chena hoye giyechhilo .. samna samni tader k ajo dekhi ni .. :D :D ..
ReplyDeleteআমাদেরও এরকম চেনা হয়ে গিয়েছিলেন কয়েকজন।
Deleteআহ কি সুন্দর ই না লেখা
ReplyDeleteথ্যাংক ইউ, থ্যাংক ইউ।
DeleteAha, lekhata boro sundor hoyeche. :)
ReplyDeleteMerun dhhakna pawa gyalo?
কই আর পাওয়া গেল, অরিজিত, ও দুটো মনে হচ্ছে রিষড়ার দর্জিকে দিয়েই বানাতে হবে।
Deleteবড় ভালো লাগলো কুন্তলাদি।
ReplyDeleteধন্যবাদ, প্রদীপ্ত।
DeleteAmi next February Delhi jabo. Oi beter chair e boste chai :-)
ReplyDelete-Manidipa
নিশ্চয়, মণিদীপা।
Delete