বর্ষশেষের পোস্ট
দু’হাজার আঠেরো অবশেষে বিদায় হচ্ছে। তাড়াতাড়ি হচ্ছে না। হিন্দিতে একটা চমৎকার শব্দ আছে ধোবিপিছাড়, গত বারো মাস, বাহান্নটা সপ্তাহ ধরে আমাকে সেই করে, তবে হচ্ছে। আত্মীয়বিয়োগ জাতীয় বড় বড় খারাপ ঘটনা তো ঘটেছেই, বেড়াতে যাওয়া কম হয়েছে, বই পড়া কম হয়েছে, বাইরে খাওয়া সিনেমা দেখা কম হয়েছে, বেশি হয়েছে খালি অফিসের কাজ।
দু’হাজার আঠেরো একটি অতি জঘন্য বছর। দু’হাজার উনিশ যেন এরকম না হয় ভগবান।
দু’হাজার আঠেরোর রেজলিউশন রিভিউ করছি না আর, কারণ এই নয় যে রেজলিউশন রক্ষা হয়নি। আমার ডায়রির প্রথম পাতায় যে রেজলিউশনগুলো (গোটা বাইশ) লিখেছিলাম আশ্চর্যজনকভাবে তার বেশিরভাগই (দুই-তৃতীয়াংশ মতো) রক্ষা হয়েছে। রিভিউ করছি না কারণ সে রেজলিউশনগুলোর অধিকাংশই ব্যক্তিগত অর্থাৎ সেগুলোর কথা অবান্তরে আগের বছর লিখিনি কাজেই সেগুলোর পূর্ণ হওয়া না হওয়ার ফিরিস্তি অবান্তরে দেওয়ার মানে হয় না। তাছাড়া বছরের মাঝখানে কিছু রেজলিউশন জড়ো হয়েছিল, সেগুলো সামলাতে গিয়ে হিসেব গোলমাল হয়েছে। সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাস নাগাদ প্যানিক অ্যাটাক হওয়ার জোগাড় হয়েছিল যে কোনও কূলই রক্ষা হবে না। কপালজোরে বেশিরভাগই রক্ষা হয়েছে।
দু’হাজার আঠেরোতে বই পড়েছি আপাতত চুয়াল্লিশ। পঞ্চাশ হল না। হবেও না। পঁয়তাল্লিশ হলেও হতে পারে। মর্নিং শোজ দ্য ডে কথাটার অসারত্ব আবারও প্রমাণ হল। জানুয়ারি ফেব্রুয়ারিতে নানাবিধ বইমেলার দৌলতে গোটা কুড়ি বাংলা বই শেষ করে সেই যে ঢিলে দিলাম, টুকটাক ইতিউতি পড়তে পড়তে হঠাৎ সেপ্টেম্বর মাস নাগাদ খেয়াল হল আমি ‘অন ট্র্যাক’ থেকে ‘বিহাইন্ড শেডিউল’ হয়ে পড়েছি। তখন পিক আপ নেওয়ার চেষ্টা করলাম কিন্তু অন্যান্য কাজ, বিশেষ করে আমার বসও পিক আপ নিলেন। কাজেই পঞ্চাশের বুড়ি আমার এ বছর আর ছোঁয়া হল না। নভেম্বরে একবার শেষ চেষ্টা করেছিলাম, ওই এক মাসে ছ’টা না সাতটা বই পড়েছি, কিন্তু মরণকালে নাম করলে হরিও হাত বাড়ান না। বই কম পড়ার আরও একটা কারণ, অজুহাত হিসেবে নয়, এমনিই বলছি কারণ কথাটা সত্যি, এ বছর আমি এমন কোনও বই পড়িনি যা আমাকে আরও বই পড়তে উদ্বুদ্ধ করেছে। ভালো বই, বই পড়ার ইচ্ছের আগুনে ধোঁয়া দেয়। এ বছর সে রকম কোনও বইয়ের সঙ্গে আমার দেখা হয়নি। আমার চেষ্টার অভাবে নয়। আমি আমার পড়ার গাড়ি গড়গড়িয়ে চালানোর জন্য বার বার আমার প্রিয় লেখকদের দ্বারস্থ হয়েছিলাম। কোনও কোনও সময় সেটা ব্যাকফায়ার করেছে ( রবার্ট গ্যালব্রেথের লিথ্যাল হোয়াইট), কোনও কোনও সময় (অ্যান্থনি হরোউইটজের দ্য সেন্টেন্স ইজ ডেথ, আইমিয়ার ম্যাকব্রাইডের দ্য লেসার বোহেমিয়ানস) করেওনি। কিন্তু এমনও ঘটেনি যে তারা আমাকে ভাসিয়ে নিয়ে গেছে।
দু’হাজার আঠেরোতে আমি টের পেয়েছি মিনিমাম শরীরচর্চা করা আর না করার তফাৎ আমার শরীর, আরও বেশি করে মন, এখন টের পায়। দু’হাজার আঠেরোতে নিয়মিত ভোরবেলা মাদুর পেতে কুকুর, মকর, ভুজঙ্গ আরও যা যা হওয়ার হয়েছি, দু’হাজার উনিশেও হব। দু’হাজার উনিশে বয়স আরও এক বছর বেড়ে যাবে কাজেই শরীরচর্চার গুরুত্ব বাড়বে বই কমবে না।
দু’হাজার আঠেরোতে আমি লিখেছি বেশি। আর লিখতে গিয়ে একটা জিনিস টের পেয়েছি। আরও দ্রুত লিখতে শিখতে হবে। আর প্রোজেক্ট শেষ করতে হবে। ডান ইজ বেটার দ্যান পারফেক্ট কথাটার মাহাত্ম্য আমি এ বছর যত বেশি করে বুঝেছি আগে বুঝিনি। একটা লেখার ফাইন্যাল চেহারা কখনওই লেখা শুরুর আগে মাথার মধ্যের সে লেখার চেহারাটার মতো হয় না। কাজেই সেটা গালে পুরে বসে থাকার থেকে শেষ করে বাজারে ছেড়ে দিয়ে নতুন লেখা ধরাই একমাত্র বুদ্ধির কাজ।
দু’হাজার আঠেরোতে আরও একটা জিনিসের মর্ম আমি বুঝেছি, তা হল ডেডলাইন। ডেডলাইন বিনা আমার জীবন অন্ধকার। সমস্যাটা হচ্ছে আমার এমন অনেক কাজ করতে ইচ্ছে করে, করা দরকার বলে মনে হয়, যেগুলোর জন্য কেউ আমাকে ডেডলাইন দেওয়ার নেই। নিজেকে নিজে ডেডলাইন দেওয়া যায়, কিন্তু সে সব ডেডলাইন রক্ষা না হলেও যে তত কিছু ক্ষতি হবে না এই জানাটা মগজে সদা জ্বাজ্বল্যমান থাকে। আর্থিক ক্ষতি হবে না। সময়ের ক্ষতিই বা এমন কী? আজ হল না, কাল হবে। এ মাসে হল না, নেক্সট মাসে হবে। এ বছর না হলে, সামনের বছর। একেবারে শেষের যে ‘ডেড’ লাইনটা এই সব দিন মাস বছরের শেষে অনড় অটল দাঁড়িয়ে আছে সেটার কথা মনেই থাকে না। দু’হাজার উনিশে সেটা মনে রাখার চেষ্টা করব। না মনে থাকলে বড় বড় লাল অক্ষরে 'ডেড' লিখে টেবিলের সামনে ঝুলিয়ে রাখব ঠিক করেছি।
নিজেকে নিজে ডেডলাইন দেওয়া যায়, কিন্তু সে সব ডেডলাইন রক্ষা না হলেও যে তত কিছু ক্ষতি হবে না এই জানাটা মগজে সদা জ্বাজ্বল্যমান থাকে।
ReplyDeleteএই একটা কারণেই কিস্যু হলোনা জীবনে। প্রোকাসটিনেশনের চূড়ান্ত করে ফেললাম।
আরে হতাশ হওয়ার কিছু নেই, বৈজয়ন্তী। নতুন বছর থেকে আমরা আর এ রকম করব না। ওকে?
Delete2019 jano 2018r theke bhalo jay sobar. 2018 ta ekebare joghonyo.
ReplyDeleteShoreer chorchar kotha ta mokkhom bolechho. 2019 e otai amar sob theke drirho resolution. Madur pete bhujongason ar na korlei noy.
কর কর, বিম্ববতী। ভুজঙ্গাসন অত্যন্ত উপকারী জিনিস।
DeleteAbantor tatha Kuntala ebong tar poribar ke Engriji noboborsher agrim subhechchha janai. Amader sabar jibone 2019 jeno shubho hoi. bocchorsesher dingulo anonde...moja kore katiyo.
ReplyDeleteআপনাকেও বছর শেষের আর নতুন বছরের শুরুর অনেক শুভেচ্ছা, সুস্মিতা।
DeleteEi bochor jonmodin er post ta dile na to.. belated Happy Birthday, Merry Christmas , Happy New Year.. :)
ReplyDeleteহ্যাপি নিউ ইয়ার আর থ্যাংক ইউ। ভালো কথা কিছু মনে আসছিল না রে লেখার মতো, খালি মনে হচ্ছিল মরে যাওয়ার দিকে আরও এক বছর এগিয়ে গেলাম। তাই আর পোস্ট দিলাম না।
Deleteশরীরচর্চা শুনে মনে পড়লো। গত কবছর ধরেই বেশ খেয়েদেয়ে ফুলে ফেঁপে প্রস্থে বাড়ছিলাম। পাত্তা দিছিলাম না. শরীরর্চচাও আজ করব, কাল করবো বলে পাশ কাটিয়ে যাচ্ছিলাম। ওয়েক আপ কল এলো যখন আগস্টে যখন দেশে যাওয়ার পরে সব মাসি পিসিরা বলতে শুরু করল "তোর চেহারাটা এতদিনে বেশ ভালো হয়েছে।" তাড়াতাড়ি করে ওজন নিয়ে মাথায় হাত, বাহান্নর আমি খাতে পিতে ঘরকি হতে হতে ছেষট্টিতে গিয়ে থেমেছি। ফেরত এসেই একটা ফিটবিট কিনলাম। সাপ, কচ্ছপ, কুকুর, উট হবার সময় নেই, তাই লিফটকে বিদায় জানালাম। অফিস হতে এক পা দূরের কিচেনকে বিদায় জানিয়ে পাশের বিলিডিংএ দৌড় শুরু করলাম ঘন্টায় ঘন্টায় চা কফির যোগান নিতে। বলতে নেই, পাঁচমাসেই অনেকদূর ফেরত এসেছি, তবে তার থেকেও বড় কথা অনেক বেশি ঝরঝরে, চনমনে বোধ করছি। তাই এই চর্চা জারি রহেগা।
ReplyDeleteআর তোমার ওই ডেডলাইন আমার ক্ষেত্রেও সমপ্রযোজ্যঃ। নিজেকে দেওয়া ডেডলাইনের কোনো অ্যাকাউন্টেবিলিটি নেই, তাই সেগুলোই মিস হয় বেশি। এবার তোমার ওই লাইনটা মাথায় রাখবো ভাবছি, "ডান ইজ বেটার দ্যান পারফেক্ট।" এই পারফেক্টের চক্করে গত এক বছরে কিচ্ছুটি প্রায় লেখা হয়নি। নতুন বছরে সেটা ঠিক করার একটা রেজোলিউশন নিয়েছি। দেখা যাক কদ্দুর কি রক্ষা হয়.
হবে হবে, চুপকথা। নো চিন্তা। ব্যায়ামে আর কিছু উপকার হয় কি না জানি না, তবে সারাদিনের চনমনেত্বটুকু ই যথেষ্ট প্রাপ্তি।
Delete2018 amar o khub baaje ketechhe, deadline er pechhone doure haaklanto. tobe tomar ei katha ta darun laglo, done is better than perfect. 2019 ey etake implement korbo :) tomader bochhor ta durdanto katuk.
ReplyDeleteতোমারও দুহাজার উনিশ ভালো কাটুক, প্রিয়াঙ্কা।
Deleteদেখতে দেখতে ২০১৮ শেষ হয়ে গেল, কুন্তলাদি।ভেবে দেখলাম এই বছরটায় আমারও সেরকম উল্লেখযোগ্য বিনোদনমূলক অ্যাক্টিভিটি সত্যিই কিছু নেই একগাদা অফিসের কাজ,কনফারেন্স, ডেডলাইন আর লেটনাইট ছাড়া।নো ভ্রমণ।কেরালা ট্রিপ ক্যানসেল হল আত্মীয়বিয়োগের জন্য।বছরের গোড়ার দিকে প্রথম চাকরির শহর চেন্নাইতে যেতে হয়েছিল, সেটাও অফিসের কাজেই অবশ্য।গিয়ে মনে পড়লো পাঁঁচ বছর আগে সেই জায়গাতেই অবান্তরের সাথে পরিচয়।আর তারপর থেকে একটা পোস্ট-ও বাদ দিইনি কখনো।দুপুরের দিকে লাঞ্চের পর টুক করে কেবিনে ফিরেই অবান্তরটা একবার দেখে নিই, কোন নতুন পোস্ট এলো কিনা।আর কোন ব্লগের সাথে এতটা একাত্মতা হয়নি কখনো।আর নতুন বছরে অনুবাদগুলো নিয়ে একটা বই হোক, এটাই চাইবো। ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন , আনন্দে থাকুন।নতুন বছর শুভ হোক
ReplyDeleteতোমারও নতুন বছর শুভ হোক, ঋতম। অবান্তরের প্রতি তোমার ভালোলাগা অক্ষয় হোক। তুমি আমাকে চার নম্বর প্ল্যাটফর্মের সোমেন বসুর সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিয়েছিলে, সে জন্য কৃতজ্ঞতা জেনো।
Deleteagami bochor bhalo katuk... aro onek notun notun lekha porar ashay roilam.
ReplyDeleteশুভেচ্ছা রইল আপনার প্রতিও, মধুজা। নতুন বছর খুব ভালো কাটুক।
Delete