যোগমায়া হালদার অন্তর্ধান রহস্য






ডেডলাইনের সীমা বারপাঁচেক বাড়িয়ে অবশেষে সেন্ড টিপে, হাঁফ ছেড়ে, গল্পটা সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান অর্জন করব বলে নেটে ঢুকলাম। এই জ্ঞানার্জন অবান্তরে পোস্টদানের নিমিত্তে। 'চার নম্বর প্ল্যাটফর্মে ছায়া অবলম্বনে আমার গল্প বেরিয়েছে এই যে রইল লিংক, ইচ্ছে হলে পড়ুন না ইচ্ছে হলে কাটিয়ে দিন' বলে পোস্ট সারতে কেমন লাগে। গল্পটার ইতিহাস ভূগোল, গল্পের লেখকের বংশলতিকা, লেখক হওয়ার সংগ্রাম, সমাজের দর্পণে গল্পের প্রতিভাস, গল্পের দর্পণে সমাজের প্রতিচ্ছবি, নামকরণের সার্থকতা, ইত্যাদি নিয়ে কুড়ি নম্বরের এক পিস ‘যাহা জান লিখ’ না নামালে আর হল কী।

কিন্তু সে সদিচ্ছেয় ছাই পড়ল। সে রকম কিছু যে পাওয়া গেল না তার জন্য তো বটেই, যা পাওয়া গেল তার জন্য আরও বেশি করে। আঁচ পেলাম যে গল্পটা সম্ভবতঃ সি বি এস সি পাঠ্যক্রমের অন্তর্গত হলেও হতে পারে। ক্লাস এইটের।

জেনে থেকে আমি মুহ্যমান। শেষমেশ কি না সিলেবাসের গল্প? একটা রচনার সমস্ত গ্ল্যামার, রহস্য, পেডিগ্রি যদি খুন করার মতলব থাকে, তাহলে তাকে স্কুলের সিলেবাসে ঢুকিয়ে দিন। আমার আঁচ পাওয়া ভুলও হতে পারে, আমি তো সি বি এস সি-তে পড়িনি, অর্চিষ্মান ইংলিশ মিডিয়াম হলেও বোর্ড সেই বাংলা, কাজেই শিওর হওয়ার কোনও উপায় নেই। অফিসে গুচ্ছ গুচ্ছ সি বি এস সি আছে, কিন্তু তাদের ধরে ধরে, ভাই Patrick Waddington-এর The Street That Got Mislaid তোমরা ইস্কুলে পড়েছিলে কি না জিজ্ঞাসা করলে খুবই অদ্ভুত হবে। 

অনেক কষ্টে মুহ্যমানতা কাটিয়ে নিজেকে আবিষ্কারপূর্ববর্তী মানসিক অবস্থায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলাম।

অনেক গল্প থাকে পড়লেই ইচ্ছে হয় এটা নিজের মতো করে লিখি, কোনওটা সম্পর্কে কখনওই মন খুঁতখুঁত যায় না। যে গল্পগুলো সম্পর্কে নিঃসন্দেহ হয়ে শুরু করি, সেগুলোর ক্ষেত্রেও অনেকসময় লিখতে শুরু করে প্রাথমিক উত্তেজনা ঝিমিয়ে পড়ে। ভয় হয় লিখতে গিয়েই যে রেটে হাই উঠছে, পড়তে গিয়ে লোকে ঘুমিয়ে না পড়ে।

এই গল্পটার ক্ষেত্রে সেটা হয়নি। লাফিয়ে লিখতে শুরু করেছিলাম, গোটা লেখা জুড়ে ভালোলাগা নিটোল ছিল। তার দুটো কারণ। এক, গল্পটা ভারি ভালো। দুই মেন ক্যারেকটারের একজন মানুষ অন্যজন রাস্তা। দুই, মানুষ মূল চরিত্র যে যোগমায়া হালদার, তার মতো স্পষ্ট আমি খুব কম চরিত্রকেই দেখতে পেয়েছি, পাইনি বললেও চলে। 

এ বারের চার নম্বর প্ল্যাটফর্মে বেরোনো Patrick Waddington-এর The Street That Got Mislaid-এর ছায়া অবলম্বনে লেখা আমার ছোটগল্প ‘যোগমায়া হালদার অন্তর্ধান রহস্য’এর লিংক এই রইল।



Comments

  1. "ঠিক বয়সে বিয়ে না হলে মেয়েদের স্ক্রু ঢিলে হয়ে যায়, ও আগেও দেখেছে।"

    এইটা মানতে পারলাম না। এরকম কিছু ব্যোমকেশের স্প্যাস্টিশটাতেও ছিল। avoid করলে খুব খারাপ হত না বোধহয়।

    গপ্পটা কিন্তু দারুণ হয়েছে। 5*। 💐💐

    ReplyDelete
    Replies
    1. ভেবেছিলাম এক্সপ্লেন করব না কিন্তু বোঝা এত শক্ত হচ্ছে যখন করে দিচ্ছি। আমি মনে করি না ঠিক বয়সে বিয়ে না হলে মেয়েদের স্ক্রু ঢিলে হয়ে যায়। ওটা অসিত মনে করে। আর অসিতের মতো লোক আপনি হয়তো দেখেননি, আমি কোটি কোটি দেখেছি। ওই রকম হার্মলেস কিন্তু ভেতর থেকে নারীবিদ্বেষী চরিত্রে আমাদের চারপাশ গিজগিজ করছে। আমি সে রকম একটা চরিত্র দেখাতে চেয়েছি।

      ব্যোমকেশের "প্যাস্টিশে" এই রকম আপনি পেয়েছেন কারণ আমি ওখানে শরদিন্দুকে নকল করার চেষ্টা করেছি। আর বাঙালি যদি চোখ খুলে শরদিন্দু পড়ত তাহলে দেখত এই ধরণের নারীবিদ্বেষী মন্তব্যে ওঁর রচনা ছয়লাপ।

      আমার "অ্যাভয়েড" করার প্রশ্ন ওঠে না কারণ আমি নারীবিদ্বেষী নই। যেটা অ্যাভয়েড করতে পারি সেটা হচ্ছে দাঁতভাঙা গল্প লেখা, যাতে এই ধরণের কনফিউশন আর না জাগে।

      Delete
  2. আপনি নারী বিদ্বেষী নন সেটা আলাদা করে বলার দরকার নেই।

    অসিত বলেছে এবং শরদিন্দুর স্টাইলে আপনি লিখেছেন, এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু স্টাইলের খারাপটাও জেনেশুনে নিতে হবে এমন কোন কথা নেই। আর চরিত্ররা যা বলে তার দায় লেখকের উপর বর্তায়। যেমন, আপনিও শরদিন্দুকে দায়ী করলেন, অজিতকে নয়।

    শেষ কথা:ওটা পরামর্শ নয়। feedback। সাধারণ পাঠকরা লেখকদের যা দিয়ে থাকেন। ভালো থাকবেন ।

    ReplyDelete
  3. বৈজয়ন্তীMarch 3, 2019 at 10:43 AM

    কেন এইতো বেশ ভালো আছে। আর সহজ লাগবে? চামচ মনে হবেনা তো?

    শরদিন্দু আমার প্রিয়তম লেখক।
    তবুও আমি আপনার সাথে একমত।
    ওনার লেখায় কোটি কোটি এমন মন্তব্য আছে(শুধু ব্যোমকেশ না, বাকিগুলোতেও)। গায়ে মাখিনি তার দুটো কারণ। এক, ওই ভাবনা গুলো যুগের চলতি ভাবনার সাথে মগজে গেঁথে যায়। উনিও সেই সামাজিক ধ্যানধারণা থেকে বেরোতে পারেননি। সেটা মানুষ হিসেবে ওনাকে হয়তো অতুলনীয় করে তোলেনি। কিন্তু তাতে লেখার ধার একফোঁটা কমেনি।
    দ্বিতীয়, বড্ডো ভালোবাসি।
    ওনার লেখা আমায় ব্যক্তিগত ভাবে অনেক দিয়েছে, সমৃদ্ধ করেছে।
    বিছানায় শুয়ে শুয়ে অনেক দেশকাল ঘুরে ফেলেছি। ইতিহাস ভালোবাসতে শিখেছি, মাধ্যমিকে প্রায় লেটার ছুঁইছুঁই, বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে সবসময় হায়েস্ট।
    রোমান্সের প্রেমে পড়েছি।

    যারা শরদিন্দুকে আমার মতোই ভালোবাসে, হয়তো ওসব অগ্রাহ্য করেই বাসে।


    যোগমায়া হালদারের অন্তর্ধান মচৎকার হয়েছে।

    ReplyDelete
    Replies
    1. ধন্যবাদ, বৈজয়ন্তী।

      Delete
  4. Ei re. Eto din dhore Abantor pore loker mone holo kina lekhika anti-feminist motamot poshon koren? E toh bhari muskil dekhchhi.

    ReplyDelete
  5. khub sundor golpo. khub valo laglo

    ReplyDelete
    Replies
    1. ধন্যবাদ, সুহানি।

      Delete
  6. Golpotar modhye besh ekta notunotwo ache. Ami erokom golpo age porini. er songe poribhoy koriye dewar jonyo dhonyobad. Bornona ta khub sundor, tobe keno janina, majhe majhe gaa ta chhom chhom kore utchhilo, bisesh kore bhodromohila ebong Jogmaya'r kothopokothon er ongshe.
    Btw, Jogmaya k short e Joga dakata darun....Laluda mone pore gyalo.
    :D :D :D

    ReplyDelete
    Replies
    1. গল্পটা আমারও খুব ভালো লেগেছে, অরিজিত। যোগমায়ার ভালো নাম আর ডাকনামের আদ্যক্ষরে একটা গোলযোগ ঘটেছে কিন্তু জগা মাথায় আসার পর আর কোনও নামই পছন্দ হচ্ছে না। আপনারও নামটা ভালো লেগেছে জেনে খুশি হলাম।

      Delete
  7. এইটা ইঞ্জিরি মূল গল্পটার থেকেও বেটার লাগলো।

    ReplyDelete
    Replies
    1. ধন্যবাদ, চুপকথা।

      Delete
  8. Golpo ta khub onnorokom .. age erokom porini.. bhalo laglo..

    ReplyDelete
    Replies
    1. থ্যাংক ইউ, ঊর্মি।

      Delete
  9. থ্যাংক ইউ কুন্তলাদি। ভারী অদ্ভুত গল্প....এরকম এক দুটো হারিয়ে যাওয়া রাস্তা,কিংবা পাড়া থেকে গেলেই ভালো হত...

    ReplyDelete
    Replies
    1. আছে হয়তো, প্রদীপ্ত, আমরা টের পাচ্ছি না।

      Delete

Post a Comment