প্রথম দেখা
মেগাচতুর্থী আর গান্ধীজয়ন্তী একই সঙ্গে পড়ায় অনেক সুবিধে হল। প্রতিবারই পড়ে পাওয়া ছুটির আগে ভাবি এই করব সেই করব, কিছুই করে ওঠা হয় না।
এবার ঠিক করেছিলাম করবই।
করলাম। আরাম। সকালটা আরাম করতে করতেই চলে গেল। পুজো এত তাড়াতাড়ি আসার একটা ভালো ব্যাপার হল চ্যানেলে চ্যানেলে পুজোর হুড়োহুড়ি শুরু হয়ে গেছে। ওখান থেকেই ‘মেগা’টা পিক আপ করেছি। ‘মহা’র দিন শেষ। এখন মেগাপুজো, মেগাপ্রতিমা, মেগাভোজ। একটা মেগাভোজের ভিডিওতে দীপকদা, আমাদের চিরঞ্জিৎ, ভজহরি মান্নায় খাচ্ছিলেন। শুনলাম দিনাজপুরের দম চিকেন ওঁদের সিগনেচার ডিশ। আপনারা কেউ খেয়েছেন নাকি?
চিরঞ্জিৎ বললেন ওঁরা নাকি একবার কলকাতার চারটে দোকানের মোগলাই পরোটা আনিয়ে খেয়ে দেখেছিলেন, কোনটা ভালো। অর্চিষ্মান বলছে এবার সি আর পার্কে পুজোয় বসা সব দোকানের বিরিয়ানি নাকি ও খেয়ে খেয়ে নম্বর দেবে।
পুজো আজকাল নম্বর দেওয়ার সিজনও বটে। প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে সেলিব্রিটিরা বেরিয়ে পড়েছেন মা দুর্গাকে নম্বর দিতে। আবীর, ঈশা,পাওলি, আরও সব কারা কারা। এ বারে সোনার দুর্গা অনেক নম্বর পাচ্ছে। আপনারা দেখলেন নাকি?
একটু পরে অর্চিষ্মান বলল, এই দেখো, জেলার পরিক্রমা শুরু হয়েছে। যেন জেলার দায়িত্ব সব আমার আর কলকাতা ওর জায়গির।
তবে ঠাকুর দেখার থেকেও আমাদের উৎসাহ ছিল একটা স্পেশাল মেগাভোজের অনুষ্ঠান দেখায়। গুমনামী বাবার টিম দুপুর দেড়টায় টিভিতে এসে মাটন বিরিয়ানি খাবেন, ভেজ বিরিয়ানি কনডেম করবেন, সিনেমা প্রোমোশন করবেন। সঙ্গে সঙ্গে রেস্টোর্যান্টের প্রোমোশনও হবে। যুগটাই পড়েছে প্রোমোশনের। অনেককেই অভিযোগ করতে শুনেছি বাঙালি প্রোমোট করছে না বলেই বা প্রোমোশনকে নিচু চোখে দেখছে বলেই নাকি জাতটার কিছু হচ্ছে না। ওঁদের স্যাম্পেলে নিশ্চয় আমার স্যাম্পেলের থেকে ভিন্ন বাঙালিরা আছেন। আমি তো বাঙালিদের কিছু কম প্রোমোট করতে দেখছি না।
ওদিকে টিভিতে তারকারা মেগাচতুর্থীর মেগাভোজে বসলেন, এদিকে আমরা করুণমুখে ক্ষুন্নিবৃত্তির পাত পাড়লাম।
ওঁরা বাংলা, ওয়েল, কলকাতা বিরিয়ানির মাটন, আলু, ডিমের ত্র্যহস্পর্শের জয়গান গাইতে গাইতে নরম পাঁঠার মাংসে চামচ গাঁথলেন, আমরা রাইস কুকারের গরম ভাতে কাসুন্দি দিয়ে করলাভাজা মাখলাম। প্রসেনজিৎ আলু তুলে দিলেন পাত থেকে, সিম্পল স্টার্চ নো নো (আমি ওঁর সংযমের ফ্যান। ওঁর দুপাশে যারা বসেছিলেন বয়সে অনেক কম হওয়া সত্ত্বেও সবথেকে জোয়ান ওঁকেই লাগছিল), আমরা মুসুর ডালে পাতিলেবু চিপে আলু কুমড়োর ঝিরিঝিরি ছেঁচকি সহকারে মুখে তুললাম। থালার পাশে পেঁয়াজি আর মটর ডালের বড়া রাখা ছিল। বিজলিদি বড়া ভেজে দিয়েছে, বাবা নিয়ে এসেছেন। আমাদের খাওয়া হয় না সন্দেহ করে। এত এনেছেন যে এমনি এমনি খেয়ে, ঝোল বানিয়ে খেয়ে শেষ করতে পারছি না।
খাওয়াদাওয়া সেরে পর্দা টেনে ঘরখানা মায়াময় করে ঘুমোলাম দুজনে। এমন ঘুম যা ভাঙার পরের সাড়ে সাত সেকেন্ড নিজের এজ সেক্স লোকেশন গুলিয়ে যায়। চা খেয়ে ঘোর কাটিয়ে বেরোনো হল।
সন্ধে হয়ে গেছে। চতুর্দিকে আলো জ্বলেছে। সেদিনই সবাই ঠাকুর দেখতে বেরিয়ে পড়েছে। আসলে ছুটি পেয়েছে তো। যাঁরা এক হাত লাঠিতে এবং আরেক হাত প্রিয়জনের হাতে দিয়ে ধীরে ধীরে হাঁটছেন তাঁরা বেরিয়েছেন, বাচ্চা ছেলেমেয়েরা বেরিয়েছে, মাঝবয়সীরাও ঝকমকে শাড়ি জামা পরে হাসিহাসি প্যান্ডেলপানে চলেছেন।
আর আমরা সবে যাচ্ছি শপিং করতে।
প্যান্টালুন্সে ঠেলাঠেলি ভিড়। কত টাকার ওপরে বাজার করলে নাকি লটারিতে প্রাইজ উঠছে, মিনিটে মিনিটে হাততালি দিয়ে উঠছেন কর্মীরা। আমরা খবর নিইনি, আবোলতাবোল জিনিস জিতে বাড়ি বোঝাই করতে চাই না।
আমরাই একা নই, আমাদের মতো লেটলতিফ অনেকেই আছেন। এদিক ওদিক থেকে “এটা ভালো?” “এটা বিচ্ছিরি,” “ওটা মিডিয়ামে আছে কি না জিজ্ঞাসা কর,” ভেসে আসছে। ঠেলাঠেলি করে কিছু কেনাকাটি হল। কেনার থেকেও বিরক্তিকর হচ্ছে ট্রায়াল দেওয়া। কেউ কেউ পঞ্চান্নখানা জামা নিয়ে ঢুকছেন, বেরোবার নাম নেই। ভেবেছিলাম কিনেই উদ্ধার করেছি, টাকা দেওয়ার লাইন দেখে চিত্ত চমৎকার। লাইনে দাঁড়িয়ে একজনের সঙ্গে গোটা ব্যাপারটার “সিস্টেমের অভাব” নিয়ে হাহুতাশ করে টাইমপাস হল খানিকটা।
বাড়ি এসে আবার খাওয়ার হাঙ্গামা কে করে, তাই খেয়েই ফিরলাম। কিন্তু তাতেও কি সংসার ছাড়ে? বয়ামের গায়ে লেগে থাকা চিনির শেষ গুঁড়োটাও ঝেড়ে চায়ে দেওয়া হয়ে গেছে। আজ চিনি না নিয়ে গেলে সবাই বলবে, নিজে খায় না কি না, আমাদের চায়ে চিনি পড়ল কি না পড়ল তাপউত্তাপ নেই। কই চানাচুর কিনতে তো ভুল হয় না?
চিনি আর আটার প্যাকেট হাতে ঝুলিয়ে মেলা গ্রাউন্ডের প্যান্ডেলে ঢুকলাম। প্রতিমার সামনে হলুদ পর্দার আড়াল। সকলেই পর্দা পেরিয়ে ঠাকুর দেখছে, আমরাই বা বাদ যাই কেন।
পর্দা পেরিয়ে কোমর সোজা করার সঙ্গে সঙ্গে উদ্ভাসিত হলেন মা দুর্গা। সহাস্যময়, সালংকারা। সাঙ্গোপাঙ্গরা একচালে ঘেঁষাঘেঁষি হয়ে দাঁড়িয়ে। চালচিত্রের বর্ডারে শিবঠাকুরের সারি সারি মুণ্ডু।
একশো রকম অনুভূতি বুকের ভেতর ধাক্কাধাক্কি করতে লাগল। বিস্ময়, নস্ট্যালজিয়া, মায়া, বিষাদ, শোক।
খানিকক্ষণ দাঁড়িয়ে মাদুর্গার চোখ, লক্ষ্মীসরস্বতীর শাড়ি, কার্তিকের টেরি, গণেশের ভুঁড়ি, অসুরের সিক্স প্যাক আর সিংহের তেজ নিয়ে টুকটাক মন্তব্য করে বাড়ি চলে এলাম। আজ বিকেলে বাড়ি ফেরার পথে ভাবছি আরেকবার দেখে যাব।
Bah, darun lekha.
ReplyDeleteSubho Sosthi Kuntala, Pujo khub bhalo katuk. :)
Pujabarshiki porlen eibar kichu?
শুভ ষষ্ঠী, অরিজিত। এ বছর আমি অসামান্য সংযম দেখিয়ে একটাও পুজোবার্ষিকী কিনিনি। আসলে আগের বছরের আধপড়া আনন্দমেলাটা এখনও চোখের সামনেই শুয়ে আছে, তাতে খানিকটা সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধে হয়েছে। আপনি পড়লেন?
DeleteAmi September er majhamajhi obdi prochondo songjom dekhiyechhilam, kintu ekdin office e faka bose thakay sob golmaal hoye gyalo. Mashik Krittibas, Bartaman, Shuktara, Kishore Bharati aar Prasad kine fellam, online :(
DeleteKrittibas ta porchhi, monddo lagchhena apatoto. Onyogulo dhiresusthe dhorbo. Tobe ebar Ananda group er ektao niini, eta ekta boro songjom er porichoy, ki bolen?
amio sei eki chokkore, mane office e kaj chhara bose thakar chokkore pujosonkhya sondesh, kishor bharati, shuktara, hyangla enshel ar kishor gyan bigyan ta kine fellam. Anandamelar traumatic obhigyotar pore ananda gosthikei dhore tyajyo boi kore diyechhi.
Deleteঅরিজিত, আপনি তো বিঞ্জ শপিং করে ফেলেছেন দেখতে পাচ্ছি। পড়ে জানাবেন কেমন লাগল। আনন্দ সংযমটা সত্যিই বলার মতো।
Deleteচুপকথা, কিশোর ভারতী আমার বাবার প্রিয় পত্রিকা ছিল অনেকদিন, এখন আছে কি না জানি না।
Er sathe, ei weekend a Gumnaami ba Byomkesh o dekhe aso; besh ekta complete byapar hoye jabe :)
ReplyDeleteArre Gurgaon teo pantaloons/Central e ki bicchiri bhir, sobdike bangali - ar oi lomba line sob counter e. By the way - tumi je oi lottery r chokkore poroni, setai best news. Kichhu na khali trolley othe, tao 6k'r shopping e -ekebare baaje. Central ete to ekta salesman kichutei chharbena, khali bole jechhe ar 500 shopping korun ar lottery scratch korun..seshkhale khub kora kore bolte holo..
ওহ হ্যাঁ হ্যাঁ ট্রলি মাথার ওপর তুলে তুলে দিচ্ছিল, ওটাই বুঝি লটারির প্রাইজ? বাঁচা গেছে নাম দিইনি।
Deleteগুমনামী সোল্ড আউট। ব্যোমকেশ এসেছে বুঝি? দেখতে হবে। আরে কালই দেখলাম হইচইয়ে বর্ণপরিচয় এসেছে, কী বাজে লাগছিল, একগাদা পয়সা নষ্ট করলাম হলে গিয়ে। অর্চিষ্মানের জোকার দেখার খুব ইচ্ছে, দেখা যাক ওটাই দেখব হয়তো পুজোয়।
পুজো ও বছর শুভ হোক কুন্তলাদিদি আর অর্চিষ্মান দাদা। আর আগে যে কতরকম খাওয়াদাওয়ার গল্প শুনতাম বিভিন্ন জায়গার সেইরকম গল্প পারলে পোস্ট করো প্লিস।
ReplyDeleteতোমাকেও শারদ শুভেচ্ছা জানাই, সূচনা। গল্প করার মতো খাওয়াদাওয়া কম হয় আজকাল, তাই আর পোস্ট দিই না। তবে পুজোতে ইন্টারেস্টিং কিছু খেলে জানাব।
Delete"একশো রকম অনুভূতি বুকের ভেতর ধাক্কাধাক্কি করতে লাগল। বিস্ময়, নস্ট্যালজিয়া, মায়া, বিষাদ, শোক।"
ReplyDeletesomosto bangalir protyek pujoy Ma durgar mukh dekhar abubhuti ke ek line e prokash korle!
হাহা, শুভ বিজয়া, কাকলি।
Delete