পার্বতীর পারে ৩


পার্বতী কুটিরের সুদৃশ্য বোর্ডের পাশে গাড়ি থামল। অর্চিষ্মানকে রুম ডেলিভারির অফার ঝালিয়ে, আমাকে আরেকবার নো ক্যান্সারের গ্যারান্টি দিয়ে ভাইসাব চলে গেলেন। তাড়ায় ছিলেন মনে হল। টাকা মিটিয়ে নামছি, এক পা তখনও গাড়ির ভেতরে, গাড়ি নড়ে উঠল।

এখানে পার্বতীর গর্জন অবিরাম। সিঁড়ি বেয়ে গর্জনের কাছাকাছি পৌঁছলাম। পরিশীলিত কণ্ঠের মালিক অবশেষে শরীর ধরে বেরিয়ে এলেন। নাম সুযোগ। সুযোগ হাসিমুখে জানালেন আমাদের জন্য একটি অসামান্য সারপ্রাইজ রেডি করে রেখেছেন তিনি। সারপ্রাইজটা হচ্ছে যে আমাদের কোত্থাও যাওয়ার দরকার নেই। টেন্ট আবার অ্যাভেলেবল হয়ে গেছে, আমরা পার্বতী কুটিরেই থাকতে পারি।

বাট ইউ মাস্ট ভিজিট গিগলিং গুন সামটাইমস্‌। ইট’স রিয়েলি আ বিউটিফুল প্রপার্টি, ভেরি ওয়েল মেন্টেন্ড।

টেন্ট ফাঁকা হলেও এখনও পরিষ্কার হচ্ছে। সুযোগ আমাদের চেক ইনের সুযোগ দেবেন দুপুর একটায়। ততক্ষণ যেন আমরা বাগানে বসে পার্বতীর গান শুনি আর নাচ দেখি। বলে আমার উদ্দেশ্যে বাগানের মাঝখানে পাতা টেবিলের পাশের একটা চেয়ার টেনে দিলেন।

অর্চিষ্মান নিজের চেয়ার নিজেই টেনে বসতে যাবে, আমি বললাম ইয়ে মানে যদি ছায়ায় বসার সুযোগ দেন। সুযোগ নিশ্চয় নিশ্চয় বলে এদিকওদিক তাকালেন। অদূরের বিল্ডিং-এর বারান্দার ছায়ায় পাতা চেয়ারটেবিলের দিকে তর্জনী তুলে বললাম ওখানে বসব? সুযোগ বললেন হোয়াই নট? বলে মুচকি হাসলেন। কুন্তলাম্যাম কাল আমাকে প্রথম ফোনটা করার দশ মিনিট আগে এই ঘরটাই বেরিয়ে গেছিল, না হলে আপনারা এই ঘরটাতে থাকারই সুযোগ পেতেন।

ঘরে থাকার সুযোগ পাইনি বারান্দায় বসার পেলাম। জীবনভাইয়া এসে দু'কাপ কালো কফি টেবিলে বসিয়ে দিলেন। স্লিম, সাদা কাপের মুখে খাপে খাপ ঢাকনা। তুলতেই কড়া ঝাঁজ ব্রেনের ডোপামিনের ঝর্না খুলে দিল। শরীর ক্রমে চেয়ারের বেতের বুনুনির ফাঁকে ফাঁকে ফিট হয়ে গেল, অদৃশ্য পাখিদের কলরব হাই ডেফিনিশনে বেজে উঠল, চারপাশের সবুজে দৃষ্টি অভ্যস্ত হতে সে সব অদৃশ্য পাখিদের একটাকে পাতার ভিড়ে আবিষ্কার করে ফেললাম। আমার কড়ে আঙুলের সমান হবে। ওইটুকু মাথায় আবার একটা ঝুঁটি। সাইজের অসমানুপাতিক ব্যস্ততা।  কফির ফাঁক দিয়ে অচেনা যে গন্ধটা নাকে ঢুকল সেটা নির্ঘাত ক্লোরোফিলের। ইগো থেকে যাবতীয় অপমানের কাঁটাও খসে পড়বে পড়বে এমন সময় ফোন বেজে উঠল আর পরিশীলিত কণ্ঠে সুযোগ বললেন আপনাদের তাঁবু রেডি।

আমি এর আগে তাঁবুতে থাকিনি। অর্চিষ্মান বলছে ও-ও নাকি থাকেনি। এটা অবশ্য রিয়েল তাঁবু না। তাঁবু তাঁবু খেলা। আধুনিক ইট কাঠের বাথরুমের লাগোয়া ওয়েদারপ্রুফ গোল ছাউনি। ছাউনির ভেতর খাট, খাটের পাশে বেডসাইড টেবিল, কাঠের বুককেসের এক তাকে তিনটে বই, অন্য তাকে ইলেকট্রিক কেটলি, র‍্যাটানের কিউট ঝুড়িতে চা, নেসক্যাফে, নেসলে এভরিডে হোয়াইটনার, সাদা ও বাদামি চিনির স্যাশে। তাঁবুতে ঢুকে ইস্তক মনে হচ্ছিল কী যেন নেই কী যেন নেই। সুযোগ বললেন বলেন তো ফ্যান দিয়ে যেতে পারি। লাফিয়ে উঠলাম। তাহলে তো ষোল কলা পূর্ণ।

পেডেস্টাল ফ্যান এসে গেল। একজন যতক্ষণ ফ্যানের হাওয়া খেল অন্যজন স্নান সারলাম। স্নানের পর বিছানায় উল্টে পড়তে ইচ্ছে করছিল তারপর মনে পড়ল খুবই কম সময়ের জন্য এসেছি। সময় নষ্ট না করে বেরিয়ে পড়া দরকার। যদিও আগের পর্বের কমেন্টে রাজর্ষিকে লিখলাম কসোলে জীবনের মানে ফিগার আউট করা ছাড়া আর কিছু করার নেই,  সত্যি নয়। ক্ষীরগঙ্গা ট্রেকিং-এ যাওয়া যায়, মণিকরণে উষ্ণ প্রস্রবণ দেখে লঙ্গরখানায় খাওয়া যায়, আশেপাশে সুন্দর সুন্দর নামের গ্রাম আছে সে সব গ্রামে গিয়ে থাকা যায়, বৌদ্ধ গুহায় ঢুকে আস্তে করে চেঁচিয়ে ইকো পরীক্ষা করা যায়।

বাবামা অজন্তা ইলোরা নিয়ে গিয়েছিলেন। গাইড গুহাগুলো ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখাচ্ছিলেন। প্রতিধ্বনির জন্য ফেমাস একটা গুহায় ঢুকে ভদ্রলোক বললেন কেউ একটা গান ধরুন তারপর দেখুন কেমন শোনায়। সবাই লজ্জা লজ্জা মুখ করে দাঁড়িয়ে রইল। আমিও লজ্জা লজ্জা মুখ করে দাঁড়িয়ে রইলাম তবে আমার লজ্জাটা অন্য কারণে। জানতাম বেশিক্ষণ দাঁড়াতে হবে না। মা গান ধরলেন। মহাবিশ্বে মহাকাশে মহাকাল মাঝে। আমি মানব একাকী ভ্রমি বিস্ময়ে, ভ্রমি বিস্ময়ে। বাড়ির ছাদে যেমন করে গাইতেন তেমন করেই। চোখ বুজে, গলা খুলে, সব ভুলে। সবাই চুপ করে মায়ের গান শুনল। আমার যে তাতে খুব গর্ব বোধ হয়েছিল তা নয়। আমার মা যে বাসের অচেনা সহযাত্রীকে চেঁচিয়ে বলেন আপনি আমার বাচ্চা মেয়ের সামনে গালাগালি দেবেন না, এয়ারপোর্টের বদলে ভুল রাস্তায় চলে যাওয়া বাস থামিয়ে জানালা দিয়ে গলা বাড়িয়ে ভুলভাল অসমিয়াতে কথোপকথন চালিয়ে বাস ঠিক রাস্তায় ফিরিয়ে আনেন, অন্ধকার গুহায় একদল র‍্যান্ডম অবাঙালি টুরিস্টের মাঝখানে খোলা গলায় রবীন্দ্রসংগীত ধরেন, এ সবে আমার লজ্জাই করত। আমার গোপন শখ ছিল এমন মায়ের যিনি সবার মতো চুপটি করে ভিড়ে মিশে থাকেন, দৃষ্টি আকর্ষণ করেন না। তাতে প্লেন মিস হয়ে যায় হোক।

যাকগে মরুকগে। নিজের কুসন্তানগিরির কথা আর কতই বা নিজে মুখে বলব।  কসোলের টু ডু লিস্টে ফেরত যাই। বৌদ্ধ গুহায় ঢোকা যায়, মনাস্টেরির গোল ঘণ্টা হাত বুলিয়ে ঘোরানো যায়, তিব্বতি রিফিউজি বসতি, টশ (উচ্চারণ ভুল হতে পারে) জাতীয় সুন্দর সুন্দর নামের গ্রামে ঘোরাঘুরি করা যায়, এমনকি গিয়ে থাকাও যায়, পার্বতী ঘিরে শ্বসনতন্ত্রের মতো হাইকিং ট্রেল ছড়িয়ে আছে, সেগুলোতে হেঁটে হেঁটে বেড়ানো যায়।

লাস্ট টু ডু-টায় আমাদের আগ্রহ আছে। কিন্তু এখন হাঁটব না। এখন আমরা শহরের দিকটায় যাব। অর্চিষ্মানের অফিসের কুল ডুড সু এসব দিকের বাঁধা খদ্দের। কাল বাসে বসে সু-কে অর্চিষ্মান জানিয়েছিল যে আমরা কসোলের দিকে যাচ্ছি। সু কয়েকটা ক্যাফের নাম, উপযোগিতাসহ, লিখে পাঠিয়েছে। সেগুলো সবই শহরের দিকে। তাদের মধ্যে কোনও একটা ক্যাফেতে বসে খাবদাব, লোক দেখব আর কাজের ভঙ্গি করব।

যতক্ষণ রেডি হলাম অর্চিষ্মান তাঁবুর সামনের দোলনায় দোল খেল। আমি বেরিয়ে তাঁবুর জিপে টিপতালা মেরে বললাম, চল।

কসোল শহর এখান থেকে পাঁচ কিলোমিটার। হেঁটেই যাব। কারণ এই হাঁটাগুলোই আমাদের বেড়ানো। রাস্তা ফাঁকাই। মাঝে মাঝে উল্টোদিক থেকে চকরাবকরা হারেম প্যান্টস, বব মার্লের প্রোফাইল আঁকা টি শার্টের ওপর পুঁতির মালা ঝুলিয়ে ঢুলু ঢুলু ফরেনাররা আসছেন, পোলাইট ঘাড় নাড়ছেন। পোলাইট ঘাড় নেড়ে পেরিয়ে যাচ্ছি। আপ ডাউন দুদিক থেকেই গাড়ি আসছে। প্রাইভেট কার, ট্যাক্সি, বিল্লোরানি নামের ডগমগ ট্রাক। রাস্তা ঘেঁষে সাইড দিতে হচ্ছে। বারকয়েক সাইড দেওয়ার পর রিয়েলাইজ করলাম আমরা যথার্থ খচ্চরের মতো খাদের ধার দিয়ে হাঁটছি কাজেই সাইড দিতে বুক কাঁপছে। সাইড বদলে পাহাড়ের দিকে এলাম। জঙ্গলের ফাঁক দিয়ে সারি সারি তাঁবুর চোখা মাথা। এগুলোই গিগলিং গুন কি না কে জানে।

চড়াই হাঁটছি, পিঠে ব্যাকপ্যাক, অথচ যেহেতু মাথা ভারহীন কষ্ট হচ্ছে না। দু’কিমি মতো পার হয়ে রিভারসাইড ক্যাফে লেখা বোর্ড। আমি বললাম এটা সু রেকোমেন্ড করেছিল না? অর্চিষ্মান বলল শিওর? বললাম নিজের নাম কুন্তলার থেকেও বেশি শিওর। বলে ঢুকে গেলাম।

অফ কোর্স, ক্যাফেটার নাম সু-এর লিস্টে ছিল না। কিন্তু রিভারসাইড ক্যাফে, অর্চিষ্মানও একমত হতে বাধ্য, আমাদের এই ট্রিপের বেস্ট মিস্টেক।


রিভারভিউতে থাকার ব্যবস্থাও আছে। ক্যাফের অংশটুকু বাড়িয়ে নদীর ধারে নিয়ে আসা হয়েছে। নদীর ধারের একটা ফাঁকা সিট বেছে বসলাম। রংবেরঙের টুপি মাথায় পরিবেশক এসে জিজ্ঞাসা করলেন আমরা কী খেতে চাই? অর্চিষ্মান গলা ঝেড়ে ব্রাউনি বলাতে ছেলেটা এমন ভঙ্গি করল যেন টুপি না থাকলে মাথা চুলকোত। ব্রাউনি তো বানাই না আমরা। অর্চিষ্মান টুপি জিনিসটার ঘোর বিরোধী এবং ঘন ঘন আঙুল দিয়ে মাথার চুল টেনে এলোমেলো করে। সেটাই করে বলল সে কী আমার বন্ধু যে বলেছিল আপনারা ব্রাউনির জন্য বিখ্যাত। ছেলেটা আরও কনফিউজড মুখ করে বলল আপনার বন্ধু কবে এসেছিল? অর্চিষ্মান আমার দিকে তাকাল। মনে করার চেষ্টা করলাম অর্চিষ্মান কবে অফিস থেকে এসে বলেছিল আমাদের কুল ডূড সু কসোল গেছিল জানো? গেলে হয়। বললাম। আগের বছর জুনজুলাই নাগাদ। ছেলেটা দাঁত বার করে বলল তখন আমাদের ক্যাফে বানানোই হয়নি।

শাকশুকা না কী একটা আনতে বলল অর্চিষ্মান, আমি আলুভাজা। আমার ডানদিক দিয়ে পার্বতী বয়ে গিয়ে অর্চিষ্মানের পিঠের পেছনে অদৃশ্য হয়েছে। অর্চিষ্মানের মাথার ওপারে ছোটবেলার ড্রয়িং খাতার মতো দুদিকের পাহাড় ঢালু হয়ে এসে একটা বিন্দুতে মিশেছে। একটা পাহাড়ের ঢালের পাশ দিয়ে সূর্য উঁকি মারছে। খাবার এল। কসোলের খাবার চমৎকার। রিভারভিউর শাকশুকা, আলুভাজা তো চমৎকারই, পরে যত ক্যাফেতে খেয়েছি, হোটেলে যত রুম ডেলিভারি নিয়েছি সব টপ নচ।

রিভারসাইডে তিন সাড়ে তিন ঘণ্টা বসেছিলাম। অর্চিষ্মান কফি নিয়ে, আমি লেমন জিঞ্জার টি। লেমন জিঞ্জার টি-র সঙ্গে আমাদের অন্তরঙ্গতার শুরু যে জায়গাটায় তার থেকে নন লেমন জিঞ্জার টি সুলভ জায়গা ভূভারতে নেই। গোয়া। রিভারসাইড ফাঁকাই ছিল। একটাদুটো খদ্দেরের দল এসে আশপাশের টেবিলে বসছিল, খাওয়াদাওয়া সেরে উঠে যাচ্ছিল। আমরা যে যার ল্যাপটপে বুঁদ হয়ে ছিলাম। হাওয়া দিচ্ছিল। কখনও মৃদু, কখনও জোর।


অবশেষে পাহাড়ের ঢাল গড়িয়ে সূর্য পার্বতীতে ডুবে গেল। সাদা মেঘ ধূসর হল, হাওয়ার টেম্পারেচার কমে গেল, এবার ওঠা যাক নাকি বলতে বলতে পাওয়ার কর্ড গুটিয়ে আমরা বেরিয়ে পড়লাম। এক্ষুনি বাড়ি ফিরব না অবশ্য। কসোলের মূল শহরের দিকে হাঁটব।


পার্বতীর গর্জনের পাশাপাশি কসোলের আরেকটা অনবরত ব্যাপার হচ্ছে একটি বরফঢাকা পর্বতচূড়া। কসোলের যে বিন্দুতেই দাঁড়ান না কেন, যে রাস্তাতেই হাঁটুন না কেন একটা প্রকাণ্ড, সুউচ্চ বরফঢাকা পর্বতচূড়া আকাশ থেকে আপনার দিকে তাকিয়ে থাকবে। ছোটবেলায় বাড়িতে মোটা পাতার চৌকো চাইনিজ ছবির বই ছিল। চাইনিজ মানে প্রকাশনা চাইনিজ । ভাষা বাংলা। একটা বইয়ের নাম ছিল ‘ছোট ঘোড়া নদী পার হয়’। প্যাস্টেল রঙের গোলগোল টানে আঁকা ছবি। গল্পের হিরো টাট্টুঘোড়ার ঘাড় নিচু করা, হাঁটু ভাঁজ করা তেজী ভঙ্গি মাথায় চিরদিনের মতো ট্যাটু হয়ে গেছে।

আরেকটা বই ছিল যার নাম ভুলে গেছি। একটা বাচ্চা মেয়ে বিকেলে মাঠে খেলতে গেছে। খেলতে খেলতে সন্ধে হয়ে গেছে আর মেয়েটা বাড়ি ফেরার রাস্তা চিনতে পারছে না। মেয়েটার খুব ভয় লাগছে, কান্না পাচ্ছে। মেয়েটা মাঠের ধারে বসে কাঁদছে। এমন সময় আকাশে চাঁদ উঠেছে। চাঁদ মেয়েটাকে জিজ্ঞাসা করছে কাঁদছ কেন? মেয়েটা বলছে আমি হারিয়ে গেছি। চাঁদ বলছে চল আমি তোমাকে বাড়ি পৌঁছে দিচ্ছি। এই না বলে চাঁদ মেয়েটাকে পথ দেখাতে দেখাতে আকাশে হাঁটছে। এ গলি সে গলি ঘুরে, দোকানপাট পেরিয়ে। মেয়েটার হাত একবারের জন্যও ছাড়ছে না। তারপর হঠাৎ মেয়েটা দেখছে ও ওর বাড়ির দরজায় দাঁড়িয়ে আছে আর আকাশে গোল চাঁদ মুচকি মুচকি হাসছে।

তেমনি জঙ্গলের ভেতর দিয়ে পথ দেখিয়ে পর্বতমশাই আমাদের কসোলের মূল শহরে পৌঁছে দিলেন। পাহাড়ি শহর যেমন হয়। আমার যে সেটা দারুণ লাগে তেমন নয় কিন্তু অর্চিষ্মানের অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো ভালো লাগে। চিপা গলির দুপাশে খোলা নর্দমা, খোলা পাইপ দিয়ে ছরছর শব্দে ননস্টপ তরল এসে পড়ছে, ঘিঞ্জি বাজার, টুরিস্টের ভিড়। দুপাশের দোকান ফাটিয়ে জিনিস বারান্দায়, বারান্দা উপচে রাস্তায় পড়পড়। হাতে বোনা রংচঙে ব্যাগ, জ্যাকেট, ড্রিমক্যাচার। ম্যাক্র্যাম সুতোর বোনা। গোল, চৌকো, তিনকোণা আলপনার লাগোয়া রঙিন ফুরফুরে পালক, পুঁচকে টুংটাং ঘণ্টা। এত কিনতে ইচ্ছে করছিল। কিনতে পারলাম না। কারণ আমি যে বেড়াতে গিয়ে খুচুরমুচুর কিনে এনে বাড়ি ভরাই না সেটা নিজের আইডেনটিটি বানিয়ে ফেলেছি। ঝামেলাটা হচ্ছে অধিকাংশ জায়গায় খুচুরমুচুর কিনতে ইচ্ছে করে না, কসোলে করছিল। খুব, খুব করছিল। ঝুলন্ত, দুলন্ত ড্রিমক্যাচারগুলোর দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে বাড়ির দেওয়ালগুলো মানসচক্ষে দেখছিলাম। জন্ডিসরং দেওয়ালে ঝলমলে হলুদসবুজ ওরাংওটাং ড্রিমক্যাচার (নাকি ধপধপে সাদাটা নেব? নাঃ নোংরা হয়ে যাবে। আমি তো আর ঝুল ঝাড়ব না প্রসেনজিতের মর্জি যবে হবে তবে ঝাড়ু পড়বে। তার থেকে ধূসর আর গোলাপির কম্বিনেশনটা বেটার। পুরো কালো আবার বাড়াবাড়ি।) ঝুলছে, ফ্যানের হাওয়ায় পর্দা উড়ছে, ঘণ্টা দুলছে, আমি পাখি হয়ে ঘর থেকে ঘরে উড়ছি, আমার কোনও দুঃখ নেই, অ্যাংজাইটি কাকে বলে চিরদিনের মতো ভুলে গেছি।

অর্চিষ্মান বলল কেনো কেনো। কবে মরে যাবে তখন অতৃপ্ত আত্মা মুক্তি পাবে না, ড্রিমক্যাচারের সুতোয় পেঁচিয়ে এদিকসেদিক গোঁত্তা খেয়ে বেড়াবে। অর্চিষ্মানের আমার আত্মার অতৃপ্তি নিয়ে কাঁচকলা, ওর উদ্দেশ্য সে আত্মা যাতে ওর ঘাড় না মটকায় সেটা এনশিওর করা। রাস্তা পেরিয়ে বারান্দায় উঠে দর পর্যন্ত করলাম। বড়গুলো হাজার, মেজগুলো সাড়ে সাতশো, সেজগুলো পাঁচশো, কনিষ্ঠগুলো দেড়শো। দোকানি তাকিয়ে আছেন দেখেও একটা পুঁচকে ঘণ্টায় একবার আঙুল ছুঁইয়ে চলে এলাম। আমার ইচ্ছে হলেই তো হবে না, কুন্তলার আইডেনটিটির সঙ্গে সে ইচ্ছের মিল হতে হবে। হল না। কুন্তলার আইডেনটিটির ফাঁদে পড়ে আমার ইচ্ছের গলা টিপলাম।

গলা টিপে পেছন ফিরে দেখি এক ভদ্রমহিলা ফুচকার দোকান খুলছেন। স্টিলটপ টেবিল। টেবিলের ওপর কাচের বাক্সে ফুচকা, মাটির হাঁড়িতে জল, স্টিলের বাটিতে আলু, মাখা হওয়ার আগের অবস্থায়। বললাম ফুচকা প্লিজ, উইথ ওনলি খাট্টা পানি। অর্চিষ্মান বলল খাবে না তাই ভদ্রমহিলা আমার জন্যই বানালেন। আলুমাখার পর টেস্টও করতে দিলেন। বললাম দয়া করে যদি ঝালটা একটু বাড়ান। বহোৎ আচ্ছা বলে ম্যাডাম দু'আঙুলে রক্তবর্ণ লংকাবাটা নিয়ে আলুতে মেশালেন। মিশিয়ে প্লাস্টিকের উঁচু মোটা থলে থেকে একটা ফুচকা বার করে বুড়ো আঙুল দিয়ে ফুটো করলেন যখন প্রায় ডলবি ডিজিটাল শব্দ সৃষ্টি হল।

প্রথম ফুচকাটা মুখে পুরলাম। ভদ্রমহিলার দৃষ্টি আমার মুখে স্থির। ঠিক হ্যায়? বললাম আরেকটু ঝাল হলেই...

মহিলার চোখের পাতা স্লো মোশনে পড়ল। ঘাড় ইমপারসেপটিবলি নড়ল। ঠোঁটে প্রায় অদৃশ্য হাসি ফুটল। পাঁচ আঙুলে খামচা করে রক্তবর্ণ লংকাবাটা তুলে আলুতে মেশালেন। ডলবি ডিজিটালে আকাশবাতাস কাঁপল। তেঁতুল জলের হাঁড়িতে গুবগুব শব্দ তুলে দ্বিতীয় ফুচকাটি আমার হাতে ধরা শালপাতায় এসে পড়ল। দু'আঙুলে তুলে মুখে পুরলাম।

ভদ্রমহিলা ভুরু প্রশ্নবোধক নাচালেন। মুখের ভেতর ফুচকা ম্যানেজ করতে করতে, সুখে বুজে আসা চোখ খোলা রাখার প্রাণপণ চেষ্টা করতে করতে, ডানহাতের তর্জনী বুড়ো আঙুলের গোল্লা পাকিয়ে বাকি তিনটে আঙুল পেখমের মতো মেললাম।

ভদ্রমহিলা হেসে উঠে বললেন আপ বম্বে সাইড সে হো কেয়া?

সর্বনাশ। আমাকে বিগ সিটি গার্ল ভেবেছেন দেখছি। ডিটেলে না গিয়ে পশ্চিমবংগাল বলে সারলাম। কাজের সূত্রে দিল্লিতে থাকি। মহিলার মুখে শান্ত দুঃখ ফুটল। আগে মেয়েদের চাকরি করতে বাইরে যেতে হত না। বাড়িতে থাকা আরামের কিন্তু বাইরে যাওয়াও অত খারাপ না গোছের  স্ট্যান্ড নিলাম। ফুচকা দেওয়ানেওয়া চলল। মহিলা বললেন না খারাপ আর কী। ভালোও নিশ্চয় আছে। বললাম ঠিক বলেছেন। পুরো ভালো পুরো খারাপ কিছু হয় না, মিলিয়েমিশিয়ে থাকে। মহিলা বললেন হ্যাঁ কিন্তু আজকাল মনে হয় খারাপের ভাগই যেন বেশি। থ্যাংক ইউ বলে শালপাতা বালতিতে ফেলছি ভদ্রমহিলা বললেন সুখা লে লো। বলে আমাকে তো শুকনো ফুচকা ফাউ দিলেনই, অর্চিষ্মানকেও সাধলেন। অর্চিষ্মান নুয়ে পড়ে নেহি নেহি বলল। গুগল পে করতে গিয়ে জানা গেল ভদ্রমহিলার নাম সোনম (নাকি সোনল?) ঠাকুর। টাটা বলে হাঁটতে শুরু করলাম।

বরফের টুপি পরা পর্বত সঙ্গে সঙ্গে চললেন। আমি যতক্ষণ ড্রিমক্যাচার নিয়ে হ্যাংলামো করছিলাম, আইডেনটিটি আর ইচ্ছের ডুয়েল লড়ছিলাম, ঝাল ফুচকা খাচ্ছিলাম, একবারও দৃষ্টি সরাননি। ঠায় তাকিয়ে ছিলেন। আমরাও না তাকিয়ে পারছিলাম না। পারা সম্ভবও না। কেমন জ্যান্ত মনে হয় না? এটা অ্যানথ্রোপোমরফিজমের অ্যাটাক হতে পারে। যে অ্যাটাকে দিবারাত্র হুলোর গলায় ডায়লগ বসিয়ে হাসাহাসি করি। এই যে পার্বতী ছুটেছে, ফিজিক্সের ল’এর থেকেও মনে হচ্ছে বাপরে কী তাড়া বিয়াসের সঙ্গে দেখা করার। তেমনি বরফঢাকা পর্বতমশাইকে যতবার দেখছি ততবার টেকটোনিক প্লেটের গুঁতোগুঁতির পরিণতি মাথাতেই আসছে না। খালি ভাবছি একজন ভীষণ গম্ভীর, ভীষণ শক্তিশালী লোক আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে, যা যা বাঁদরামো করছি সব নজরে রাখছে। রবীন্দ্রনাথ বাবার সঙ্গে বালকবেলা থেকে ব্রাহ্মমুহূর্তে হিমালয়ের দিকে তাকিয়ে ধ্যানের ট্রেনিং পেয়েছিলেন শুনেছি। ওই ট্রেনিং-এর পর পূজা প্রকৃতি গুলিয়ে না যাওয়াই অদ্ভুত।

এভারগ্রিন ক্যাফে এসে গেল। এটাকেই আমি রিভারসাইডের সঙ্গে গুলিয়েছিলাম। এবার অর্চিষ্মান আমাকে ভরসা করেনি, সু-এর মেসেজ খুলে দেখে নিয়েছে। এভারগ্রিন ক্যাফে আর এভারগ্রিন ক্যাফের স্পেশাল ব্রাউনির কথা সু-র লিস্টে আছে। কনফিডেন্টলি ঢুকে গেলাম। ধ্যানস্থ বুদ্ধের কোলে ফোয়ারা, পাম গাছের ঝাড়, জানালার বাইরে আকাশের গায়ে সেই মহারাজ এ কী সাজে। নর্ম্যাল টেবিল চেয়ার যেমন আছে, একপাশে বড় টেবিলের চারপাশে কমিউন্যাল গদিআঁটা বসার জায়গাও। আলপনা আঁকা মেঝেতে পা ফেলে ফেলে কাউন্টারে গিয়ে দাঁড়ালাম। আমাদের ব্রেক চলছে ঘণ্টা দুই বাদে আসুন, সংক্ষিপ্ত উত্তর দিয়ে ভদ্রলোক ভেতরে ঢুকে গেলেন।

এমন স্পষ্ট ভাষায় নিজের মনের ভাব প্রকাশ? জাস্ট লাইক ওয়াও মুখ করে এদিকওদিক ঘুরে দেখতে লাগলাম। এঁরা কসোলের কুল কিডস্‌, নিজেরা ব্রেক নিচ্ছেন বলে আমাদের ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বার করে দেবেন না। দোকানের পেছনে একটা হাফ ভেজানো দরজা খুলে উঁকি দিয়ে একগাদা ধোঁয়ার মধ্যে কিছু মানুষের আউটলাইন চোখে পড়ল।

সন্ধে নামছিল। সন্ধের থেকেও বেশি করে নামছিল ঠাণ্ডা। পাতলা জ্যাকেটের নিচে গায়ে কাঁটা দিচ্ছে। এভারগ্রিন কর্তৃপক্ষের ব্রেক শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করব কি না একে অপরকে জিজ্ঞাসা করলাম। দুজনেরই উত্তর না বেরোলো। সু-র লিস্টের নেক্সট ক্যাফের দিকে হাঁটা দিলাম।সানশাইন ক্যাফে।

সানশাইন ক্যাফের চেহারা দেখলে বুড়ির বাড়ির ছবিটা মনে পড়বেই। এভারগ্রিনের পেছনের ঘরটা যেমন ছায়া ছায়া, ধোঁয়া ধোঁয়া, সানশাইনের গোটাটাই তেমন। অর্চিষ্মান আমার দিকে তাকাল। আমি অর্চিষ্মানের দিকে। প্রমিসিং। ঢুকে গেলাম। ভেতরে দিনের বেলাতেও সানশাইন ঢোকে কিনা সন্দেহ আর এখন তো বাইরেও গোধূলি। নিবু আলোয় মেঝেতে পাতা গদিতে লোকজন আর রুকস্যাক ছড়িয়েছিটিয়ে এলিয়ে আছে। একেকজন একেকটা জ্যান্ত চিমনি।

অধিকাংশই বাচ্চা। বাচ্চা মানে ভীষণ বাচ্চা। কলেজটলেজ। গুডফ্রাইডের ছুটিতে দল বেঁধে বেড়াতে এসেছে। প্রথম আলাপের আড়ও দেখলাম, পুরোনো আলাপের এলানিও। কসোল নিয়ে আমাদের দোনামনার একটা কারণ ছিল এই ডেমোগ্রাফিটা। দুইয়ের বেশি অনূর্ধ্ব পঁচিশ একসঙ্গে দেখলে গলি পালটাই, সে জায়গায় এক শহরভর্তি ওই বয়সের লোকের মধ্যে গিয়ে পড়ব? যেচে? বয়স হওয়ার একটা খারাপ দিক হচ্ছে খারাপ লাগা জিনিসে জেনেশুনে আর পা দিতে মন করে না। এত খারাপ লাগা জিনিসের মধ্যে দিয়ে নিজেকে দিবারাত্র টেনে নিয়ে যেতে হয় যে যেখানে তার দরকার নেই সেখানে জেনেশুনে ঘাড় পাততে পারি না। পারি না বলে কত কিছু ছাড়তে হল। অভ্যেস, জিলিপি সন্দেশ, ভালোবাসার ডিক্ল্যারেশন, রিইউনিয়ন। একমাত্র ব্যতিক্রম বাংলা সিনেমা। খারাপলাগা সম্পর্কে যত নিশ্চিত হই অপেক্ষা তত বাড়ে। ওই একটি জায়গা আমার সমস্ত মর্ষকামের রিলিজ ঘটায়।

কিন্তু কসোল আমাদের প্লেজেন্টলি সারপ্রাইজ করেছে। পঁচিশঅনূর্ধ্বের গিজগিজে ভিড় অথচ অস্বস্তিজনক নয়। শেষদিন উদারকণ্ঠে বলতে যাচ্ছিলাম জেনারেশন জি কিন্তু ভালোই, অর্চিষ্মান বলল থামো তো। নেশা করে আছে বলে। ফুল ফ্যাকাল্টিতে থাকলে এরা সব একেকটা নৃসিংহ অবতার।

ফরাসের তাকিয়ায় হেলান দিয়ে হাতপা মেলে বসারই ইচ্ছে ছিল কিন্তু সরে বসতে বললে পাছে কচিকাঁচারা অপমান করে, দোকানের ধার ঘেঁষে পাতা ফাঁকা টেবিলে বসলাম। অর্চিষ্মান মাটন শিক কাবাব না কী নিল, আমার খিদে ছিল না বলে লেমন জিঞ্জার টি। কিন্তু কুল ডুড সু কাবাব আর লেমন জিঞ্জার টি-র জন্য সানশাইন সাজেস্ট করেনি। যেটার জন্য করেছে সেটা পাব কি না সে নিয়ে ততক্ষণে দুজনেরই সংশয় জেগেছে। রিভারসাইডে মিসফায়ার করেছি, এভারগ্রিনে ঘাড়ধাক্কা খেয়েছি। তবু একবার শেষ চেষ্টা। কাবাব শেষ করে অর্চিষ্মান ভদ্রলোককে ইশারা করল। যে ভদ্রলোক পারপেচুয়াল হাসি মেখে টেবিলে টেবিলে ঘুরছিলেন। প্রথমটা ভদ্রতা ভেবেছিলাম তারপর যখন দেখলাম কাবাব শুনেও হাসলেন লেমন জিঞ্জার টি শুনেও হাসলেন তখন বুঝলাম হাসির উৎস আমরা নই।

হাসতে হাসতে ভাইসাব টেবিলের পাশে এসে দাঁড়ালেন। অর্চিষ্মান বলল এডিব্‌ল মোমো মিলেগা ভাইসাব?

ভদ্রলোক কল্পতরুর মতো হাতের ভঙ্গি করলেন। চাহনে সে সব কুছ মিলতা ব্রো।

অর্চিষ্মান একটা মোমো চাইল। আমি আহত লুক দিলাম। অর্চিষ্মান বলল ওরে বাবা কুন্তলা এই অন্ধকারে অচেনা রাস্তায় পাঁচ কিলোমিটার হেঁটে ফিরতে হবে। ফুল আউট হলে চলবে না। একটা এখন হাফ হাফ করে খাই, একটা প্যাক করে নিয়ে যাব হোটেলে পৌঁছে হাফ হাফ করে খাব। যে লোক গাঁজার মোমো খাওয়ার আগে এত তলিয়ে ভাবে সে আমাকে বিয়ে করে ফেলল কী করে এটা আমার চিরকালের রহস্য এবং কৃতজ্ঞতা।

ছোট প্লেটে মোমো এসে গেল। গোল ডালের বড়ার মতো দেখতে একটা জিনিস, সাদা থকথকে কীসের মধ্যে শোয়ানো। মেয়োনিজ নাকি? অর্চিষ্মান বলল কনডেন্সড মিল্ক। গাঁজা + মিষ্টিতে এফেক্ট যাতে বেশি হয়। ভ্যালু ফর মানি নিয়ে যাতে কেউ প্রশ্ন না তুলতে পারে।

নামে মোমো হলেও বাইরের মোড়কটা আখরোট লেভেলের শক্ত। চামচ দিয়ে কাটার চেষ্টা করলাম। অর্চিষ্মান বলল হয়েছে কুন্তলা, কামড়ে অর্ধেকটা খাও বাকিটা আমাকে দাও। চামচ রেখে হাতে মোমো নিয়ে দাঁত বসাতে যাব, একটা ভয়ানক চিন্তা মাথায় এল।

ভেজ না ননভেজ? অর্চিষ্মান বলল মানে? বললাম মানে গাঁজাটা যে পুরের সঙ্গে মিশিয়েছে সেটা পনীর না পাঁঠা? অর্চিষ্মানের মুখ দেখেই ও কী বলতে চলেছে বুঝে নিয়ে যা থাকে কপালে বলে মোমোতে কামড় বসালাম।

চিন্তার দরকার ছিল না। ফুল ভেজ। মোমোর ভেতর পনীরও নেই পাঁঠাও নেই। পুরোটাই পাতা। পাক দেওয়া নারকেলের পুরের মতো দেখতে। ঘাস রাঁধলে সম্ভবতঃ এর কাছাকাছি খেতে হবে। কষটা, উদ্ভিদগন্ধ। অর্চিষ্মান বাকি হাফটা খেয়ে নিল। চামচ ডুবিয়ে চেটে চেটে দুজনে কনডেন্সড মিল্ক শেষ করলাম। তারপর টেক অ্যাওয়ে মোমোর প্যাকেট হাতে ঝুলিয়ে রাস্তায় বেরোলাম।

হাড়মজ্জা কেঁপে উঠল। পরে সুযোগ কনফার্ম করেছিলেন। এ সময় কসোলের দুপুর আর রাতে প্রায় দশবারো ডিগ্রির তফাৎ হয়। কিন্তু অসুবিধেটা ঠাণ্ডা না, অসুবিধেটা অন্ধকার। ও রকম অন্ধকার লাস্ট কবে দেখেছি, আদৌ দেখেছি কি না মনে নেই। (বাবা বললেন দেখেছিস দেখেছিস, মায়াবতী মনে কর। করলাম। উঁচু উঁচু পাহাড় আর ঘন ঘন জঙ্গল। সে জঙ্গলে কেবল রামকৃষ্ণ মিশনের মহারাজ আর বাঘ চরে বেড়ায়। রাতে খেয়ে আশ্রমের মূল বিল্ডিং থেকে ছোট ছোট দল করে পাহাড়ের ঢাল বেয়ে কটেজে ফেরা হত। ঘাড় ঘোরালেই দেখা যেত পাহাড়চুড়োয় আশ্রমের আলো দূর টিমটিমে তারা হয়ে যাচ্ছে। একেকদিন একেকজন আশ্রমিক গাইড হিসেবে আসতেন। ভাবতাম বন্দুকটন্দুক তো নেই বাঘ এলে আমাদের সঙ্গে এঁর পরিণতির কী তফাৎ হবে? এখন আন্দাজ করতে পারি। বাঘের নাইট ভিশন মানুষের থেকে ছ'গুণ শক্তিশালী। গেরুয়া দেখলেই উল্টোদিকে দৌড় লাগাত।)

এখানে বাঘ, মহারাজ, তারা কিচ্ছু নেই। নির্ভেজাল অন্ধকার। গোড়াতে অত বুঝিনি। সামনে মোবাইল জ্বালিয়ে একটা দল হাঁটছিল। পেছন পেছন হাঁটছিলাম। দলে একটা ছেলে বোধহয় গান করে। বোধহয় না, করে। বেশ ভালোই করে। দলের একজন ফরমায়েশ করল ওই গানটা গা। ছেলেটা জানে ও ভালো গায় (এবং অন্য কী কী ভালো পারে সে বিষয়ে আইডিয়া খুব একটা স্পষ্ট নয়) কাজেই ফুল পেখম মেলে গান ধরল। যেই না ধরা দলের বাকিরা অন্য কী একটা জোকে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। জোক থামলে সবাই বলল হ্যাঁ কী যেন গাইছিলি আবার গা। ছেলেটা আবার ফুল এনার্জি দিয়ে অন্ধকার কাঁপিয়ে দেড় লাইন গাইল। অমনি দলের এক মহিলা অন্ধকারে কার পা পাড়িয়ে দিলেন। সেই নিয়ে হাসাহাসি শুরু হল। গান থেমে গেল। হাসি সামলে আবার গানের ফরমাইশ। জানতাম ছেলেটা ফরমাইশ পালন করবে, করলও। আগের তিনবারের সমান ব্যগ্র আন্তরিকতায়।

মিরর ক্র্যাকড ফ্রম সাইড টু সাইড-এর শুরুতে একটা দৃশ্য ছিল। মিস মার্পল ওঁর সহকারী কাম পাহারাদারকে টুপি দিয়ে বেড়াতে বেড়িয়েছেন। সোজা হাঁটছেন নতুন ডেভেলপমেন্টের দিকে। যেখানে নতুন রকমের লোকজন নতুন রকমের বাড়ির নতুন রকমের বারান্দায় নতুন রকম পোশাক পরে বসে নতুন রকম চুটকি শুনে হাসছে। সেই সব নতুন লোকদের দেখতে দেখতে প্রাচীন মিস মার্পল হাঁটছেন। শরীর অশক্ত, স্পিরিট চাঙ্গা। এমন সময় এক নির্মীয়মাণ বাড়ির দোতলায় এক তরুণ জুটি ঘন অবস্থায় দেখা দিল। কথা বলতে বলতে প্রেমিকের প্রতি মুগ্ধ মনোযোগী মেয়েটি ছাদের কিনারায় পৌঁছে পা ফসকে নিচে পড়ার উপক্রম করল। মিস মার্পল দেখলেন ছেলেটি একপা পিছিয়ে গেল। মেয়েটি কিছু একটা ধরে সামলাল। ছেলেটি যথাযথ প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে আবার খুব প্রেম প্রেম ভাব করল। তারপর দুজনে ছাদ থেকে নেমে এসে রাস্তায় দাঁড়াল। মিস মার্পল মেয়েটার পাশ দিয়ে পাস করার সময় কানে কানে বললেন আর যাই কর একে বিয়ে কোর না। বলে পিছু তাকালেন না। সোজা হেঁটে বেরিয়ে গেলেন। মেয়েটা থতমত খেল তারপর ছেলেটার মুখের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর মুখে ভাবতে লাগল।

বুদ্ধিতে না হলেও বয়সে মিস মার্পলের কাছাকাছি পৌঁছচ্ছি বলেই হয়তো আজকাল ঘন ঘন এমন সব পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছি যেখানে ঢুকে পড়ে গতিপথ ঘেঁটে দিতে ইচ্ছে করছে। পুরো সাহস জোগাড় করে উঠতে পারিনি এখনও (অর্চিষ্মান বলছে থ্যাংক গড) না হলে দৌড়ে গিয়ে এই ছেলেটার কানে কানেও বলতাম। এমন কোনও জায়গায় গান গেয়ো না যেখানে তোমার গান শোনাটা লোকের প্রায়োরিটি নয়।

দলটা এত আস্তে হাঁটছিল আর অপ্রতুল জ্যাকেটে আমাদের এত ঠাণ্ডা লাগছিল যে ওভারটেক করলাম। তাতে যেটা হল সেটা হচ্ছে বাচ্চাগুলোর মোবাইলের আলো আর পাচ্ছিলাম না। নিজেদের মোবাইল জ্বালিয়ে খানিকটা রাস্তা পেরোলাম। উল্টোদিক থেকে হুস হুস করে গাড়ির হেডলাইট আমাদের পেরিয়ে যাচ্ছিল। একটা গাড়ির হেডলাইট এক্সট্রা স্পিডে মাথার চুল উড়িয়ে, হাড় এক্সট্রা কাঁপিয়ে চলে যেতেই টের পেলাম আমরা নিকষতর অন্ধকারে ডুবে গেছি। অর্চিষ্মানের মোবাইল কোনও কারণে নিভে গেছে। থেমে গেলাম। অর্চিষ্মানের লাইট কালার জ্যাকেট পর্যন্ত দেখতে পাচ্ছি না। আশপাশে জনমানুষ নেই কিন্তু সামহাউ একলা লাগছে না। আমাদের জাপটে ধরা অন্ধকারটা যেন জ্যান্ত হয়ে উঠেছে।

কয়েক সেকেন্ড দাঁড়িয়ে সে অন্ধকারের ধুকপুক শুনলাম। তারপর বললাম মোবাইল জ্বালো। অর্চিষ্মান মোবাইল জ্বালল। হাঁটা শুরু করলাম। দূরে রিভারসাইডের বোর্ড টিমটিম করে উঠল। কাল সকালে আবার এখানে আসব হ্যাঁ? আরও খানিকটা হেঁটে অবশেষে পার্বতী কুটিরের ল্যাম্প দেখা গেল।

তাঁবুর তালা খুলে ঢুকে জিপ টেনে দিলাম। আজ রাতে আর বেরোনো নেই। দুপুরে চা বলা হয়েছিল তার অব্যবহৃত প্লেট এখনও বেডসাইড টেবিলে। প্যাকেট খুলে প্লেটে মোমো ঢাললাম। আমি অর্ধেক খেলাম, বাকিটা অর্চিষ্মান খেল। তারপর জামাকাপড় ছেড়ে লেপের তলায় ঢুকে অপেক্ষা করতে লাগলাম ঘোর কখন ঘনাবে।

খিদে পেল। নাম ভুলিয়ে দেওয়া খিদে। জীবনভাইয়া ফোন তুললেন। আপনাদের সবথেকে বড় সাইজের যে পিৎজা, না না কোনও রকমটকম নেই ভেজ হলেই চলবে, ভেজিয়ে। জীবনভাইয়া বললেন বহোৎ আচ্ছা। কিন্তু সব অর্ডার একত্র হলেই পিৎজার উনুনে আগুন দেওয়া হয় কি না তাই অপেক্ষা করতে হবে। আমরা বহোৎ আচ্ছা বললাম। অপেক্ষা করলাম না কারণ অপেক্ষা করার অবস্থায় ছিলাম না। ব্যাগ হাঁটকে বিংগো টেড়েমেড়ের প্যাকেটের তলার গুঁড়ো, সকালে চায়ের সঙ্গে কেনা বরবোনের (আমার এক চেনা ভাবতেন বিস্কুটটা বুঝি ফ্রেঞ্চ, বলতেন বুর্বোঁ) দুমড়োনো প্যাকেট থেকে বার করে দেড়খানা বিস্কুট। পেডেস্ট্যাল ফ্যানের প্লাগ খুলে, বুককেস থেকে ইলেকট্রিক কেটলি নামিয়ে প্লাগ গুঁজে জল গরম করে একেকটা কাপে দু'প্যাকেট করে নেসক্যাফে আর এভরিডে গুলে খেলাম। অনেক দূর থেকে কে যেন ম্যাম ম্যাম করে ডাকছে। অর্চিষ্মান বলছে কুন্তলা তোমাকে ডাকছে। তাঁবু খোলো। জিপ খুললাম। অন্ধকারে হাতে গোল থালা নিয়ে জীবনভাইয়া, তত্ত্ব হাতে বরযাত্রীর মতো দাঁড়িয়ে আছেন। ক্ষণিকের কনফিউশন পেরিয়ে মনে পড়ল ওটা তত্ত্ব না পিৎজা। থালা কেড়ে নিয়ে থ্যাংক ইউ বলে জিপ টেনে দিলাম। খাটে বসে পিৎজা খাওয়া শুরু হল। বাড়িতেও এভাবেই খাই। তফাৎ বাড়ির বিছানায় পেপার পাতি, এখানে পাতার মতো পেপার নেই। সাবধানে খেতে হবে। আরও একটা তফাৎ, বাড়িতে খাওয়ার সঙ্গে টিভিতে কিছু একটা চলে। মোস্ট প্রব্যাবলি আনন্দবাজার অনলাইনের ইন্টারভিউ। আমাদের পার্সোনাল পছন্দের এক ইন্টারভিউয়ার আছেন। নাম বলছি না বললে সবাই চিনতে পারবে। অর্চিষ্মান ওঁর নাম রেখেছে নারদ। মারাত্মক নিষ্পাপ মুখে এ সপ্তাহ বউকে বরের কেচ্ছা নিয়ে  জিজ্ঞাসাবাদ করে পরের সপ্তাহে বরকে বউয়ের কেচ্ছা নিয়ে জেরা করতে যান। আমরা মাঝে মাঝে  বলাবলি করে ওঁকে রিয়েল লাইফ ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাব। কলকাতা শহরের সমস্ত গসিপের অ্যাকসেস পাওয়া যাবে।

তাঁবুতে টিভি নেই। নিঃশব্দে, রুদ্ধশ্বাসে খাচ্ছি। মাঝে মাঝে দূরে গুড়গুড় শব্দ হচ্ছে। জীবনভাইয়া যখন পিৎজার থালা হাতে দাঁড়িয়ে ছিলেন একবার বিদ্যুৎ চমকেছিল বটে। অ সা মা ন্য পিৎজা। স্যাডলি ভীষণ তাড়াতাড়ি ফুরিয়ে যাচ্ছে। অর্চিষ্মান বলছে আমাদের এত ভালোলাগার পেছনে জীবনভাইয়ার কেরামতির থেকে সানশাইন ক্যাফের মোমো দায়ী। অর্চিষ্মানের দাবি যদি খানিকটা সত্যি হয়ও পুরোটা নয়। কসোলের খাবারদাবার অসামান্য। হোটেলের রান্নাঘর থেকে ওই মানের পিৎজা ভাবা যায় না। প্লেট থেকে পিৎজার গুঁড়ো আঙুল দিয়ে চেপে চেপে জিভে তুলে জীবনভাইয়ার নম্বর লাগাল অর্চিষ্মান। ডেজার্ট মে কেয়া মিলেগা ভাইসাব?

কুড়ি মিনিট পর (কারণ চকোলেট সসটা বোতলের পেট টিপে ঢালা নয়, উনুনের সামনে দাঁড়িয়ে  ফ্রম স্ক্র্যাচ বানানো) ট্রে-তে দুটো জাম্বো বাটি নিয়ে জীবনভাইয়া এসে গেলেন। এবার জীবনভাইয়ার মাথার ওপর দু'বার বিদ্যুৎ চমকাল। আমার কনফ্রনটেশনে ভয়। আর ভয় বিদ্যুৎচমকে। তাড়াতাড়ি ট্রে টেনে নিয়ে গুড নাইট বলে সে রাতের মতো তাঁবুর জিপ টেনে দিলাম।

এমন আইসক্রিম জীবনে বেশি খাইনি। হার্শির বোতলের চকোলেট সসের থেকে এক কোটি গুণ ভালো চকোলেট সস। আইসক্রিমের মেদুরতা বলে বোঝানো যাবে না। চামচ দিয়ে যতটা পারা যায় বাটি চেঁছে আইসক্রিম শেষ করে অর্চিষ্মানকে বললাম তুমি ভাবছ আমি নেশার ঘোরে ভালো বলছি, সে রকম না। আমার অ্যাকচুয়ালি বেশি নেশা হয়নি। অর্চিষ্মান একটু চুপ করে থেকে বলল ওরও না। যেটুকু হয়েছে সেটার জন্য কসোল পর্যন্ত উজিয়ে আসার দরকার ছিল না। মেবি আমাদের প্রত্যাশা বেশি ছিল? নাকি একঘণ্টা আগে অর্ধেক মোমো একঘণ্টা বাদে বাকি অর্ধেক খেলাম বলে তেমন কাজে দিল না?

লেপ টেনে শুয়ে পড়লাম। মেঘের ডাকের মধ্যে ফাঁক ক্রমশঃ কমছে। কোথায় গিটার বাজিয়ে গান হচ্ছে। অ্যাংস্টি রক। সুর কম দরদ বেশি। কান পেতে শোনার চেষ্টা করছি। অর্চিষ্মানের নিঃশ্বাসের শব্দ পাচ্ছি না। তার মানে ঘুমোয়নি, ঘাপটি মেরে গান শুনছে। একটা অস্বস্তি হচ্ছে। একটা কিছু গোলমাল। লাস্টে আর্তনাদ মতো ছেড়ে গাইয়ে গান শেষ করলেন। আমি আর অর্চিষ্মান একসঙ্গে লেপ থেকে মাথা বার করে বললাম, বাংলা না?

পরের গান শুরু হল। এও রক। এও অ্যাংস্টি। মেঘের গর্জনের ফাঁকে ফাঁকে কান খাড়া করে রইলাম। বাংলা না। কারণ একটা চেনা ফিলিং হচ্ছে, ঠিক হতে হতেও কান ঘেঁষে ভুল হয়ে যাওয়ার। আসাম আর ওডিশা ভবনের ক্যান্টিনে খেলে এই ফিলিংটা হয়। দু'জায়গার খাবারই আমরা ভীষণ তৃপ্তি করে খাই কিন্তু খেতে খেতে মনে হয় দু'চারটে জিনিস অল্প এদিকওদিক করে দিলে রান্নাটা আরেকটু বেশি ঠিক হত। সেই যুক্তি অনুসরণ করে চিহ্নিত করলাম রকগানের ভাষা আইদার অসমিয়া অর ওড়িয়া। থার্ড গান শুনে নিশ্চিত হলাম অসমিয়া।

আমি আর অর্চিষ্মান দুজনেই বিশ্বাস করি বাংলায় রকগান হয় না। বাঙালি রকস্টার হয় না। অসমিয়া বাংলার এত কাছাকাছি ভাষা হওয়ার কারণে সরি টু সে, অসমিয়াতেও হয় না। তাতে অসুবিধের কিছু নেই। আমাদের ভাষাতে অনেক কিছু হয়। চমৎকার দুঃখ হয়। উমদা বেদনা। কান্না তো ওয়ার্ল্ড ক্লাস হয়। কিন্তু রাগ হয় না। রকও হয় না।

সেই হতে হতেও না হওয়া রক শুনতে শুনতে আমরা জমে যাওয়া বিছানায় গড়াগড়ি খেয়ে হাসতে লাগলাম। হাসির চোটে লেপ খসে পড়ল, দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম হল, অনেক চেষ্টা করেও আমরা কিছুতেই হাসি থামাতে পারলাম না। বাইরে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামল।




Comments

  1. Ganja momo? Erokom satty hoy bujhi? Bah.
    যে লোক গাঁজার মোমো খাওয়ার আগে এত তলিয়ে ভাবে সে আমাকে বিয়ে করে ফেলল কী করে এটা আমার চিরকালের রহস্য এবং কৃতজ্ঞতা - eta pore amaro ganja momo khaoar motoi effect holo. Kichhukshan tha tha kore haslam.

    ReplyDelete
    Replies
    1. এ মোমোর সন্ধান আমারও অজানা ছিল, শিবেন্দু। কসোলে গিয়ে জানাশোনা সবই হল। চমৎকার জিনিস।

      Delete
  2. মোবাইল থেকে কমেন্ট করতে গিয়ে পাইনি, এইবার রাইট ক্লিকে পেলাম।🙏প্রথমেই হাই ফাইভ। ওই চৌকো বইগুলো আমাদের বাড়িতেও ছিল, এক পাতা ছবির নিচে একটু খানি লেখা। ওই দিয়েই আমার বই পড়ার উদ্বোধন হয়েছিল। আর ওই হারিয়ে যাওয়া বাচ্চার চাঁদের সঙ্গে বাড়ি ফেরার বইটা আমারও ছিল.. ওই বইতে প্রথম উইলো গাছের নাম জেনেছিলাম, এখনো মনে আছে ছবিটা, ঝাপুর ঝুপুর একটা রূপসী গাছ..
    চাইনিজ ভীষণ চিত্তাকর্ষক আরেকটা বইয়ের নাম মনে পড়ছে - বানররা কেমন করে চাঁদ ধরে।

    আপনার পোস্ট পড়ে দুটো ইচ্ছে হচ্ছে। এক তো পাহাড়ি শহরে বেড়াতে যাওয়া, আর দুই গাঁজা খাওয়া। সিদ্ধির অভিজ্ঞতা হয়েছে, খুবই গোলমেলে। গাঁজাটা বাকি।
    পরবর্তী কিস্তির অপেক্ষায় রইলাম।

    ReplyDelete
    Replies
    1. আমি জীবনে একবারই দোলে ভাং খেয়েছিলাম। ও অন্য জিনিস। আমার জীবন থেকে চব্বিশ ঘণ্টা কমপ্লিটলি হাওয়া হয়ে গেছে।

      বানরের চাঁদ ধরার বই আমিও পড়েছিইইইইইই!!!! ছবিটাও মনে পড়ে গেল। লেজ ধরে ধরে লাইন দিয়ে প্রচণ্ড চনমনে মুখের বাঁদরেরা সম্ভবতঃ কুয়োতে নামছে। তাই না? ইস কেমন কমন বই বেরিয়ে পড়ল ছোটবেলার। এটা দারুণ হল।

      উইলো গাছের ব্যাপারটা একদম মনে নেই। চাঁদ আর মেয়েতেই এমন মজে ছিলাম যে পার্শ্বচরিত্রে মনোযোগ দিইনি নির্ঘাত।

      খুব ভালো লাগল, বৈজয়ন্তী। থ্যাংক ইউ।

      Delete
  3. Khub bhalo lekha - Jete khub ichhe kore, tobe ato dure je journey tei onek ta somoy chole jay. Kasauli, Shimla obdi thik thak, kintu tar pore khub tiring lage. Tobe apnar lekha pore jabar ichhe holo.
    Amra kintu sob jayga thekei hajar ta aje baaje jinish pottor - dreamcatcher, fridge magnet, t-shirts, tupi ei sob niye ashe : )

    ReplyDelete
    Replies
    1. আরে রণদীপ! কতদিন পর! খুব ভালো লাগল। জার্নিটাকে বেড়ানোর মধ্যে ঢুকিয়ে নিন। আমি ঠিক এই কথাটাই সেদিন অর্চিষ্মানকে বলছিলাম। আমার বাড়ি থেকে সি পি যাওয়ার পথে বাঁদিকে বেঁকে আমার পুরোনো অফিসের রাস্তা। যতক্ষণ আমি রাস্তায় ওই মোড়টা পর্যন্ত যাই, কিচ্ছু মনে হয় না। যেই মোড়টা পেরিয়ে যাই মন উল্লাস করে ওঠে। বেড়াতে যাচ্ছি!!!!!

      কসোল চিল করার জন্য খুব ভালো লেগেছে আমাদের। ইচ্ছে হলে একবার যেতে পারেন।

      ইস ড্রিমক্যাচার নিয়ে এসেছেন? হিংসে করলাম।

      আচ্ছা আমি কি আপনাকে আগে তুমি বলতাম? গুলিয়ে গেছে।

      Delete
    2. Ha, 'tumi' tai thik. Bari bhorti oi sob jinish. Onek somoy bag theke baar i kora hoyna. Ak dik diye bhalo - sobai ke gift kora jai - oi ar ki.

      Delete
    3. হ্যাঁ আমারও কমেন্ট লিখতে গিয়ে মনে হচ্ছিল গোলমাল হচ্ছে। ব্যাক টু তুমি তাহলে। সত্ত্বর সব ব্যাগ থেকে বার করে গিফট করে দাও। তোমাদের বাড়ি খালি হোক, গিফট পেয়ে বাকিদের মন ভালো হোক।

      Delete
  4. Nesha kintu ekdom-i hoyni. :D

    Amra ekbar Raju's Cottage eisob nesha kore eto khabar kheye felechilam je lojjar chote ar chaite parini. Tarpor edik odik dekhe shawl er tolay du baati apple crumble churi kore ghorer bhetor paliye eshechilam. Se apple crumble ar omriter modhye kono tofat nei. Oi swaad amar jeeboner shesh din obdhi mone thakbe.

    ReplyDelete
    Replies
    1. Anonymous kano holo post ta bujhte parlam na. :/

      Delete
    2. 😁 বুঝেছি বিম্ববতী। তোমাদের যা আপেল ক্রাম্বল তা-ই আমাদের আইসক্রিম উইথ চকোলেট সস। একই দেবতার অবতার।

      Delete
  5. রিভারসাইড ক্যাফের ছবিটা দেখে সত্যিই দারুন লাগছে।

    আর ঠিকই তো - আমাকে "খুব বেশি করার নেই" বলে, তারপর একদুটো নয়, পুরো চারখানা লেখা বানিয়ে ফেললেন, কতকিছু করেছেন সেইসব লিখে! হুমম!

    শেষটা এখানেও একঘর!

    ReplyDelete
  6. Assam e ekbar gajapata diye shidoler bora kheyechilam. Hehehe. Shudhu bathroom jabar somoy pore gechilam, eii mone ache.

    ReplyDelete
    Replies
    1. আগের জন্মে শিদল আমিও খেয়েছিলাম মনে আছে আসাম গিয়ে হীরক। হ্যাঁ, মাথা খুব হাল্কা হয়ে যায়, পড়ে যাওয়াই স্বাভাবিক। ওই জন্য আমি খুউউউউউউউব ধীরে ধীরে চলাফেরা করি।

      Delete

Post a Comment