পার্বতীর পারে ১
অন্যদিন দু’বার বাজায়, বৃহস্পতিবার অর্চিষ্মান চারবার বেল বাজাল। গুডফ্রাইড ইভে আসন্ন লং উইকেন্ডের উত্তেজনায় নির্ঘাত। এ জুতোর ডগা দিয়ে ও জুতোর গোড়ালিতে চাপ দিতে দিতে বলল, প্রসেনজিৎ চলে গেছে? বললাম, তিরিশ সেকেন্ড আগে এসেছে।
লুচি করতে বলবে? লুচি আর সাদা আলুর তরকারি? মানে তোমার যদি অন্য কিছু খেতে ইচ্ছে না করে?
ময়দা আছে কি না-র সাড়ে তিনমিনিটের প্যানিক পেরিয়ে ঘরে এলাম। অর্চিষ্মান নাকের ডগায় ফোন ধরে খাটে চিৎপাত। রোজই চিৎপাত হয় কিন্তু আজকের ভঙ্গিটা সামান্য আলাদা। অন্যদিনের ‘তুলে নে মা’-র বদলে আজ চোখেমুখে শিকারী বাজের তৎপরতা। অর্চিষ্মান নেক্সট তিনদিনের মজা খুঁজছে।
প্রসেনজিৎ কোস্টার খুঁজে এনে চায়ের কাপ নামিয়ে রান্নাঘরে ফিরে গেল। অর্চিষ্মান জিয়োহ্ বলে শূন্যে মুঠি ছুঁড়ল। অতি উত্তম এসে গেছে নেহরু প্লেসে। ছ’বেলার একবেলা সর্টেড। আরেকবেলা ওই দোকানটায় খাব, আরে ওই যে ওই দোকানটায় অনেকদিন ধরে যাব যাব করছি, আহা বল না, ওই যে ব্যাম্বু না গার্ডেন, আমি বললাম মেনল্যান্ড চায়না, তখন বলল হ্যাঁ হ্যাঁ মেনল্যান্ড চায়নাতে খেতে যাব, তুমি কুংফু পান্ডা ফোর-এর কথা বলছিলে সেটাও যাওয়া যায় আরেকবেলা, আরেকবেলা জামা মসজিদ যেতে হবে রমজান থাকতে থাকতে, আরেকবেলা রাহুলকে জপাব যদি আসে। ক'বেলা হল? অল্প কাজও করতে হবে।
আমরা চা খেতে খেতে ইউটিউবে বিখ্যাত বাঙালিদের ইন্টারভিউ দেখতে লাগলাম। রান্নাঘরে প্রেশারকুকারে ঘন ঘন সিটি পড়তে লাগল। সঙ্গে ছ্যাঁকছোঁক। আধঘণ্টা পর রান্নাঘরের স্লাইডিং ডোর সরিয়ে উঁকি দিয়ে প্রসেনজিৎ বলল, এখনই দিয়ে দিই খেয়ে নাও, নাকি? গরম থাকতে থাকতে?
আমরা টিভির দিকে হাঁ করে তাকিয়ে রইলাম, প্রসেনজিৎ খাটের ওপর পেপার, পেপারের ওপর থালা, থালার পাশে লুচির ক্যাসারোল আর তরকারির বাটিতে হাতা গুঁজে বসিয়ে দিয়ে গেল। বসিয়ে ঝাঁটা হাতে ও ঘরের দিকে গেল।
প্রসেনজিৎ লুচিও বোঝে না, সাদা আলুর তরকারিও বোঝে না। লুচির নামে বড় সাইজের বাদামী বাতাসা আর সাদা আলুর নামে মাখামাখা মশলাদার আলুরদম নিয়ে আসে। অর্চিষ্মান পৃথিবীর যে তিনটে জিনিসে অবাক হয় তার একটা হচ্ছে প্রসেনজিতের হাতের লুচি। একজন প্রফেশনাল রাঁধিয়ে ঘটি হয়ে এত খারাপ লুচি বানায় কী করে? প্রসেনজিতের হাতের লুচি খেতে খেতে অর্চিষ্মান প্রত্যেকবার ওর বাগবাজারের কোনও এক জেঠিমার হাতের লুচির স্মৃতিচারণ করে। সে লুচি নাকি হেমামালিনীর গালের মতো ফোলা; মেরিলিন মনরোর চুলের মতো প্ল্যাটিনাম। বাগবাজারের জেঠিমার লুচি আর শ্রীরামপুরের জেঠিমার আলুপোস্ত; অর্চিষ্মানের মতে ঘটিসভ্যতার পিন্যাকল।
লুচিতে আলু জড়িয়ে মুখে পুরে যদিও দুজনেই আহাবাহা করে উঠলাম। প্রত্যেকবারই উঠি। কারণ গোটা ব্যাপারটা তো আসলে প্রত্যাশার খেলা। লুচি আলুর তরকারির প্রিকনসিভড আইডিয়াটা থেকে বেরিয়ে এসে যদি ভেবে নিই প্রসেনজিৎ যে খাবারটা এত যত্ন করে রেঁধে বেড়ে মুখের গোড়ায় এনে ধরেছে সেটাই আমরা খেতে চেয়েছিলাম তাহলেই আর কোনও সমস্যা থাকে না। তাহলেই তরকারি চমৎকার সুস্বাদু; লুচি রমণীয়।
অর্চিষ্মান চেঁচিয়ে বলল প্রসেনজিৎ, খুব ভালো হয়েছে গো। প্রসেনজিৎ মুচকি হেসে বলল তাও তো টমেটো ছিল না। বলে সসপ্যানে করে জল নিয়ে কারিগাছের গায়ে ঢালতে গেল। অর্চিষ্মান আমার দিকে তাকিয়ে বলল, পাহাড়ে যাবে?
যাওয়াই যায়। কবে বল?
অর্চিষ্মান বলল, এই তো, প্রসেনজিৎ বেরিয়ে গেলে?
মুখের গ্রাসটা শেষ করলাম। তারপর বললাম, ফার্স্ট চয়েস তো ম্যাকলয়েডগঞ্জ জানি, অন্য কোনও অপশন আছে?
কসোল যাওয়া যায়।
প্রসেনজিৎ বারান্দার দরজায় ছিটকিনি তুলে সসপ্যান যথাস্থানে রেখে বেরোনোর আগে বলল কাল সন্ধের বদলে দুপুরে আসব? আমরা বললাম কাল সম্ভবতঃ আসতে হবে না। তোমাকে হোয়াতে লিখে দেব। প্রসেনজিৎ বহোৎ আচ্ছা বলে এক হাতে কুড়ার প্যাকেট অন্য হাতে চাবি ঘোরাতে ঘোরাতে চলে গেল।
অর্চিষ্মান লাফ দিয়ে থালাবাটি মাজতে গেল, আমি টান মেরে জিনস টি শার্ট গোল পাকাতে শুরু করলাম। ইন্টারনেটে জামাকাপড় প্যাক করার মিলিটারি কায়দা শেখার পর থেকে নর্ম্যাল ভাঁজ করা ছেড়ে দিয়েছি। অর্ধেকেরও কম জায়গা লাগে। যার যার নিজস্ব ব্যাকপ্যাক ছাড়া একটা কমন কাঁধের ব্যাগে দুজনের জামাকাপড়, ওষুধের ব্যাগ, একজোড়া করে এক্সট্রা চটি। কসোলে ঠাণ্ডা দেখাচ্ছে কাজেই একটা করে জ্যাকেট।
বাসন মাজতে মাজতে আর ব্যাগ গোছাতে গোছাতে ম্যাকলয়েডগঞ্জ আর কসোলের তুলনামূলক বিশ্লেষণ চলল। ম্যাকলয়েডগঞ্জ আমাদের সেকেন্ড পুরী। ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে চলে যাব। গুডফ্রাইডের ভিড়টা একটা কনসার্ন কিন্তু হোটেল চেনা, ম্যানেজ হয়ে যাবে। কসোল প্রথমবার যাচ্ছি। তাছাড়া কসোলের ক্রাউড নিয়ে সতর্কতার প্রয়োজন আছে। অনূর্ধ্ব পঁচিশ টং বালকবালিকাদের বাউন্ডারি ক্রস করতে চাই না। তাদের আমাদের বাউন্ডারি ক্রস করতে দিতে চাই না। উস গম সে গুজর চুকে।
পনেরো বছর আগে হলে পনেরো মিনিটে বেরোতে পারতাম, এখন সব সেরে বেরোতে পঁয়তাল্লিশ মিনিট লেগে গেল। রাহেজায় দাঁড়িয়ে আমি অ্যাভোমিন, ব্যান্ডেড আর ছোট কোলগেট কিনলাম, অর্চিষ্মান অটো বুক করল। ম্যাকলয়েডগঞ্জই যাই বা কসোল, বাস ধরতে আই এস বি টি কাশ্মীরী গেট যেতেই হবে।
অটোতে বসে রেডবাসের সাইট খুলল অর্চিষ্মান। ফ্রম-এর খোপে দিল্লি লিখে আমার দিকে তাকাল। আমি বললাম, কসোল। চ্যালেঞ্জ নিলে শক্ত চ্যালেঞ্জই নেওয়া ভালো। চিরাগ দিল্লির সিগন্যাল সবুজ হল, পঞ্চশীল পার্ক হুস করে পেছনে ছুটে গেল, আমি আর অর্চিষ্মান যে যার ফোনে হুমড়ি খেয়ে রইলাম। অর্চিষ্মান বাস বুক করছে, আমি হোটেলের সন্ধান। কাজে ফাঁকি দিয়ে কসোলের হোয়াট টু ডু, হোয়াট টু ইট, হোয়্যার টু স্টে ঘেঁটেছি অনেক। প্রত্যেকবারই ফ্যামিলি ফ্রেন্ডলি অ্যাকোমোডেশনের লিস্টে পার্বতী কুটিরের নাম টপে এসেছে। গুগল থেকে ফোন নাম্বার খুঁজে ফোন করলাম। ঊনত্রিশ তিরিশের বুকিং চাই। মূলচন্দ ফ্লাইওভারের ক্যাঁচরম্যাচর ছাপিয়েও ওপাশের কণ্ঠের পরিশীলন স্পষ্ট। চেক করে তিনি জানালেন, সিরফ্ ঊনত্রিশ তারিখের বুকিং মিলবে তাও লাস্ট ঘরটা দশ মিনিট আগে বেরিয়ে গেছে, এখন শুধু পাওয়া যাবে সুইস টেন্ট। আমি বললাম বাথরুম প্রাইভেট তো? ভেরি গুড। ওটা আমাদের জন্য রাখুন। নেক্সট কী করতে হবে লিখে জানান।
অটো চিড়িয়াখানা পাস করছে। অর্চিষ্মানের বাস বুকিং ডান। এখন দুজনে মিলে তিরিশ তারিখের আস্তানা খুঁজছি। মোক্শ বলে একটা হোটেল অর্চিষ্মানের মন টেনেছে। বেশ কেতি দেখতে, বল? ফোন করলাম। সোল্ড আউট। আরও তিনচারটে অ্যাটেম্পট বৃথা গেল। অর্চিষ্মান বলছে লিটল ইটালি ইন-এর ছবিগুলো ভালো, একবার দেখবে নাকি। ফোন করলাম। ইটস রিংগিং। কেউ তুলছে না। ফোন কেটে পরবর্তী হোটেলের খোঁজে নামলাম। আমার ফোন বাজল। ট্রুকলারে লিটল ইটালি ইন। হাঁ ভাইসাব, তিরিশ তারিখের রুম পাওয়া যাবে? যাবে। ভেরি গুড। কিউ আর পাঠিয়ে দিন, ফিফটি পারসেন্ট অ্যাডভান্স করে দিচ্ছি। ভদ্রলোক ফোন নম্বর বলছেন ডিটেলস পাঠানোর জন্য, নাইন ফাইভ থ্রি… আমি জোরে জোরে রিপিট করছি, অর্চিষ্মান নিজের ফোনে নম্বর টুকে নিচ্ছে এমন সময় এক ব্রো সাইলেন্সারহীন পালসারে অটোর কান ঘেঁষে উড়ে গেলেন। এ রকম চারপাঁচবার ঘটার পর অর্চিষ্মান অটোভাইসাবকে দাঁড়াতে বলল। ভাইসাব ক্রাফট মিউজিয়ামের আমগাছটার ছায়া ঘেঁষে দাঁড়ালেন। আমরা নম্বর টুকে নিয়ে নাড়িনক্ষত্র পাঠালাম। ওদিক থেকে কিউ আর এসে গেল। পেমেন্ট করে রিসিটের স্ক্রিনশট শেয়ার করলাম, ঘর বুক হয়ে গেল, অটো আই এস বি টি-র মেন গেটে ঘ্যাঁচ করে থামল।
বাস অবশ্য ঠিক আই এস বি টি থেকে ছাড়বে না। ছাড়বে কাশ্মীরী গেট মেট্রোর পাঁচ নম্বর গেট থেকে। যা আই এস বি টি মেন গেট থেকে পাঁচ মিনিটের হাঁটাপথ। হাঁটা দিলাম। কোটি কোটি বাচ্চা ছেলেমেয়ে রুকস্যাক কাঁধে দাঁড়িয়ে আছে। বাস আসবে ন’টা চল্লিশে। ছাড়বে ন'টা পঞ্চাশে। এখন ন’টা সতেরো। অর্চিষ্মান চিলি চটকা কুরকুরে, বিংগো টেড়েমেড়ে আর কোকাকোলা নিয়ে এল।
ন’টা ঊনচল্লিশে বাস এল। নীল গায়ে লাল তারা আঁকা। সিট পরিষ্কার, পর্দা পরিষ্কার, জানালার কাচ পরিষ্কার। জানালার সিট অর্চিষ্মানকে অফার করলাম অন্ততঃ পাঁচবার। ছ’বারের বার অর্চিষ্মান বলল ওরে বাবা কুন্তলা তুমি যে জানালার ধারে বসেছ তাতেই আমার মন ভরে গেছে। সতীর জানালাই পতির জানালা।
আই এস বি টি থেকে ছেড়ে মজনু কা টিলায় অপেক্ষারত কয়েকজন যাত্রীকে তুলে বাসের দরজা বন্ধ হল। আমাদের সিট পাঁচ ছয়। তিন চারে বাবা মা ও বেটা। বেটা রাত একটা পর্যন্ত বাসের ছাদ ফাটিয়ে চেঁচালেন। মুখটা মিষ্টি বলে বেশি রাগ হচ্ছিল না। বেটা সিটের ওপর দিয়ে গলা বাড়িয়ে আমার সঙ্গে লুকোচুরি খেললেন। অর্চিষ্মান ফোনে প্রাণপণ চোখ সেঁটে রাখল কারণ এ খেলা একবার শুরু হলে কতক্ষণ চলবে জানা নেই। অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইসাব জলের বোতল, বমির প্লাস্টিক দিয়ে গেলেন। আমরা তাকাতাকি করলাম। মনে আছে? একবার ম্যাকলয়েডগঞ্জ থেকে ফিরছিলাম। ওভারনাইট বাস। আমাদের সিট পড়েছিল লাস্টের আগের আগের রো-তে। ওপারের দুই সিটে এক বয়স্ক ভদ্রলোক আর এক তরুণী। নর্থ পোলে দেখলেও বলে দেওয়া যাবে ভারতীয় ধ্রুপদী নৃত্যের সঙ্গে দুজনের সম্পর্ক নিবিড়। পাবলিক প্লেসে আমাদের দুজনেরই কান খাড়া রাখার অভ্যেস কাজেই ধরে ফেললাম সম্পর্কটা গুরু শিষ্যের। একটা বা দুটো বড় ব্যাগের বদলে ওঁরা অসংখ্য ছোট ছোট পলিথিনের প্যাকেটে নিজেদের মালপত্র প্যাক করেছিলেন। তাতে যেটা হয়েছিল, সারা রাত ধরে বাসের ঝাঁকুনিতে ওঁদের একেকটা করে পুঁটলি গড়াতে গড়াতে বাসের একেবারে সামনে চলে যাচ্ছিল আর গুরুমশাই কখনও হামাগুড়ি দিয়ে কখনও দৌড়ে সেগুলো উদ্ধার করে আনছিলেন। লাস্ট দুটো রো জুড়ে একদল তরুণ তুর্কি উইকেন্ডের হিমালয়ান গেটঅ্যাওয়ে সেরে দিল্লি ফিরছিলেন। প্রকৃতির নিয়ম মেনে তাঁদের অনেকেই বাসে ওঠা ইস্তক সুদৃশ্য শিষ্যার প্রতি প্রভূত সুতো ছাড়ছিলেন।
তারপর ড্রাইভারজি স্পিড তুললেন। আমাদের যুগ্ম স্মৃতিতে ওর থেকে রাফ ড্রাইভিং-এর অভিজ্ঞতা আর নেই। বাসশুদ্ধু বমির সুনামি শুরু হল। অ্যাসিস্টান্ট ভাইসাব প্লাস্টিকের জোগান দিতে দিতে নাজেহাল হলেন। হেডব্যান্ডশোভিত, ওয়ান লাভ লেখা গেঞ্জিপরিহিত তুর্কিরা বমি করে করে নেতিয়ে পড়ল। অটল রইলেন খালি গুরু এবং শিষ্য। তাঁদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা রেওয়াজ করা ফিট বডি, এইচ পি টি ডি সি বাসের ঝাঁকুনিতে টসকায় না। গুরুজি তো মালপত্রের পেছন পেছন দৌড়ে নিজেকে ব্যস্ত রাখলেন, মেয়েটি নিজেকে আর্তের সেবায় নিয়োগ করল।
পি সি সরকারের ঝোলার মতো মেয়েটির ব্যাগ থেকে মৌরির শিশি, আদাকুচির কৌটো, পাতিলেবু, ছুরি, জলের বোতল, ডিসপোজেবল গ্লাস বেরোল। এতক্ষণের কথোপকথনের মাধ্যমে গড়ে ওঠা বন্ধুত্বের খাতিরে মেয়েটি নাইটিঙ্গেল রূপে আবির্ভূত হল। এতক্ষণ যাকে ইমপ্রেস করার জন্য এত হাঁকপাঁক, তারই সামনে বমি করে ভাসানোর দীনতায় ছেলেগুলো অলরেডি আধমরা হয়েছিল, তার ওপর মেয়েটির শুশ্রূষার সাধাসাধি প্রতিরোধে ছেলেগুলোর প্রাণ বেরোল। নেহি চাহিয়ে নেহি চাহিয়ে, উই আর অলরাইট ইত্যাদি বলে তারা তাদের ধসে যাওয়া ম্যাসকুলিনিটির ছিটেফোঁটা উদ্ধার করার অক্ষম চেষ্টা করতে লাগল।
অত হাসি আমি আর অর্চিষ্মান জীবনে কমই হেসেছি। লুকিয়ে হাসতে হচ্ছিল বলে ব্যাপারটা আরও পেনফুল হয়েছিল।
এই বাসে আমার পেছনের সিটে একটা বাঙালি ছেলে বসেছে। ইয়ং প্রফেশনাল। সিটে বসার দেড় মিনিটের মধ্যে যার ফোন বেজেছে। হ্যাঁ মা, বল। মা প্রশ্ন শুরু করেছেন। বাস ছেড়েছে? কতক্ষণে পৌঁছবে? পাশের সিটে কেউ বসেছে? (এই প্রশ্নটা বোধহয় স্পেসিফিক উদ্দেশ্যে করা), নেক্সট কোথায় বাস থামবে? সেখান থেকে উল্টোপালটা কেউ উঠে পাশের সিটে কেউ বসবে কি না, কখন বাস পৌঁছবে, হোটেল সেফ কি না, ক’দিন থাকবে…
সত্তর পারসেন্ট উত্তর ছেলেটা হুম্-এ সারছে, বাকি কুড়ি পার্সেন্ট হ্যাঁ বা না-এ, বাকি নয় দশমিক নয় নয় নয় পারসেন্ট মোনোসিলেবিক শব্দে। পাশে উটকো লোক এসে বসার প্রশ্নটায় একমাত্র একটা গোটা জটিল বাক্য খরচ করল। সে বসলে বসবে, ট্রেনে লোকে বসে না?
মায়েদের এস এম এস, ফোন কল নিয়ে শিল্পসাহিত্যের একটা গোটা সাব-ঘরানা আছে। লিট মিটে তারকা লেখকরা মায়ের ফোন করা এবং উবার ব্যাপারটা না বুঝে ওঠাসংক্রান্ত রম্যরচনা পাঠ করে হাততালি কুড়োন। অ্যামেরিকান রাত্রিকালীন টক শো-তে কর্মীদের ফোন খুলে খুলে নিজস্ব মায়েদের কিউট এবং বোকা মেসেজ পড়ে পড়ে শোনানোর ভিডিওতে মিলিয়ন লাইক ও কমেন্ট পড়ে। ঠোঁটে লিপস্টিক মেখে শার্টের ওপর শাড়ি পেঁচিয়ে গলা মিহি করে মায়ের অভিনয় করে লোকে বাংলা সংস্কৃতির নক্ষত্র হয়ে যায়।
পেছনের সিটের কথোপকথন শুনতে শুনতে ভাবছিলাম এটা কি হতে পারে একটা লোক উল্টোদিকের গলার শৈত্য টের পাচ্ছে না? মোনোসিলেবিক জবাবের মর্মার্থ বুঝতে পারছে না? মা হলেই তো কারও গায়ের চামড়া মোটা হয়ে যায় না। তবু এই অনিচ্ছে আর অশ্রদ্ধার গনগনে আঁচ অগ্রাহ্য করে যতক্ষণ পারা যায় উল্টোদিকের লোকটাকে ফোনে আটকে রাখা। না হলে যে একাকীত্বটা সেটা আরও অসহনীয়।
ঘণ্টাখানেক পর ছেলেটির ফোনে আরেকটা ফোন এল। বন্ধুর ফোন। শুনলাম কারণ না শুনে উপায় ছিল না। কথার ভঙ্গি শুনেই বোঝা যাচ্ছিল এমন কিছু জিগরি না। জিগরি হওয়া সম্ভবও না। বন্ধুটির টাইপ হচ্ছে যদি শোনে কেউ মানালি বেড়াতে যাচ্ছে বলবে ধুস মানালি আবার কেউ যায় নাকি, তোর যাওয়া উচিত ছিল জিম করবেট। বেড়ানো পেরিয়ে কে মেয়ে পাচ্ছে কে পাচ্ছে না ঘুরে কোন হোয়াটসঅ্যাপে চ্যাটে কে ভুল করে কী স্ক্রিনশট শেয়ার হয়েছে নিয়ে পনেরো মিনিট কথোপকথন হল। তার পর দেড় ঘণ্টা ধরে যেটা চলল সেটাকে আমি বলি ‘অর বতাও’ টক। যে টকের একমাত্র মোটিভেশন নিজের স্ট্রেসের সঙ্গে চুপ করে একটি সেকেন্ডও কাটানোর অপারগতা।
আড়ি পাততে পাততে ভাবছিলাম লোকে অবান্তর হ্যাজে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ব্যয় করবে অথচ মায়ের সঙ্গে দশ মিনিট ভদ্রভাবে কথা বলবে না। কেন বলবে না সেটা সেই ইলেভেন টুয়েলভে জয়দেব সরখেলই জানিয়েছিলেন অবশ্য। সাপ্লাই ভার্সেস ডিমান্ড। ওয়াটার ভার্সেস ডায়মন্ড। সবথেকে আফসোস হচ্ছে খেলাটা এক মিনিটে ঘুরিয়ে দেওয়া যায়। কিন্তু ঘোরাতে হবে মাকে। সম্পূর্ণ নীরব হয়ে যাওয়ার সংযম দেখাতে হবে। এক সপ্তাহ যাবে। দু’সপ্তাহ। এক মাস। দু’মাস। তারপর এই ছেলেই সুড়সুড়িয়ে নিজে থেকে ফোন করবে। বুকের ধুকপুকুনি চেপে চনমনে গলায় হ্যালো মা? কেমন আছ? কী খাচ্ছ? বলে একটা দিব্য মধুর কথোপকথনে লিপ্ত হবে।
পাত্তা একটা জিরো সাম গেম। একদিকের কমলে অন্যদিকের বাড়ে।
হরিয়ানায় ঢোকার মুখে প্রবল জ্যাম। দাঁড়িয়ে আছি তো আছিই। জানালার বাইরে সবুজ বোর্ডে পড়ছি সিংঘু বর্ডার ওয়ান কিমি। অর্চিষ্মানকে খোঁচা মেরে খবরটা দিলাম। অর্চিষ্মান তাই বুঝি বলে টুইটারে ফেরত গেল। জ্যাম ছাড়ল। বাসের অডিওতে কুমার শানু মৃদু গলায় গান ধরলেন। কুমার শানুর গান শুনলেই পিসির কথা মনে পড়ে। আমাদের ওখানকার বিধান কলেজে নাকি কুমার শানু, কুমার শানু হওয়ার আগে, পরপর পাঁচবার টানা ফিল্মফেয়ার জেতার আগে, কিশোরকণ্ঠীর স্লটে নিয়মিত পারফর্ম করতে আসতেন। পিসি একবার শুনতে গিয়েছিল। টিংটিঙে রোগা শরীর থেকে বেরোনো গলার দাপট শুনে ঘাবড়েওছিল। পরে ইন্টারভিউতে পড়েছিলাম, লতা মঙ্গেশকর বলেছিলেন অ্যায়সা পিচ ইন্ডিয়া মে জ্যাদা নহি মিলেগা।
মসৃণ রাস্তায় ড্রাইভারজি জ্যামের শোধ তুললেন। বাসের ভেতরের আলো ঢিমে করে দেওয়া হয়েছে। উঁচুদরের এয়ার সাসপেনশন টেকনোলজি বাসের বদলে যুধিষ্ঠিরের রথের ফিলিং দিচ্ছে। ড্রাইভারজির কেবিনের কপালজুড়ে ঘণ্টার ঝালরে ঝর্নার বি জি এম। চড়া এসি চেতনার ওপর ক্রমশঃ ভারী হয়ে উঠছে। আধবোজা পাতার ফাঁক দিয়ে দেখছি ঘণ্টার টায়রার কেন্দ্রে মণির মতো একজোড়া দেড়হাত বাই দেড়হাত হৃদয়াকৃতি কুশন। বেগুনি ও সবুজের ছোপ দেওয়া গোলাপি নরম পশমে তাদের সারা শরীর ঢাকা। বাসের দুলুনিতে দুই হৃদয়ের একে অপরকে অল্প অল্প ঠেলাঠেলি দেখতে দেখতে ঘোর লাগছিল। অর্চিষ্মান ঘাড় পাতবে না, না হলে এরকম একজোড়া পশমি হৃদয়বালিশ আমি বাড়িতে ঝোলাতাম।
রাস্তার দু'পাশে বসতি কমে এসেছে। খাঁ খাঁ মাঠের মাঝখানে আচমকা ব্যাংকোয়েট হল আর রিসর্ট। প্রতিবার অর্চিষ্মানকে জিজ্ঞাসা করি। কারা আসে? প্রতিবার অর্চিষ্মান কাঁধ ঝাঁকায়। কে জানে। এ বছর দেখলাম জেনে ফেলেছে। বলল আরে আগের মাসে রাজস্থান গেলাম না? জয়পুরের পঞ্চাশ ষাট কিলোমিটার দূরে ধুধধুড়ে মাঠে এরকম একটা হাল্লারাজা মার্কা রিসর্টে আমাদের তুলেছিল। প্রতিদিন ফিল্ড থেকে জিভ বার করে হাঁপাতে হাঁপাতে ফিরে দেখতাম নতুন নতুন গেস্ট। একদিন একদল বাচ্চা এল। একদিন তিনটে এস ইউ ভি চেপে তিন দম্পতি। সারাদিন ওই হোটেলের পুলেই ভাসছে, মদ খাচ্ছে, চোখের ওপর তোয়ালে ফেলে নাক ডাকছে। প্রচুর লোক এভাবে বেড়ায়। হোটেলটাই ডেস্টিনেশন।
মুরথল গেল। ধাবাগুলো রাস্তার বাঁ দিকে। আমাদের সিট বাসের ডানদিকে। ঘাড় বাড়িয়ে রেখেছিলাম। অমৃক সুখদেব ধাবা পেরোতেই "আমাদের ধাবা!" বলে উত্তেজনা প্রকাশ করলাম। সেদিন আমরা কত দূর এসেছিলাম বুঝতে পারছ? অর্চিষ্মান বলল পাঞ্জাব হরিয়ানার রাতের গ্রাম দেখতে ওর নাকি দারুণ লাগে। এই যে দুপাশে ঘুপচি ঘুপচি দোতলা তিনতলা বাড়ি, বন্ধ ওষুধের দোকান, এ দৃশ্য নাকি ওর বুকের ভেতর একটা হু হু-র জন্ম দেয়। আমি বললাম দিল্লিতে তো এক্স্যাক্টলি এ ধরনের কনস্ট্রাকশন দেখে শিউরে শিউরে ওঠ, তাহলে হরিয়ানায় ভালো লাগছে কেন? অর্চিষ্মান আমতা আমতা করতে লাগল। নিজের ভুল শুধরে নিলাম। কেন ভালো লাগে বুঝিয়ে বলার থেকে কঠিন কাজ পৃথিবীতে নেই।
বাস থামল। ডিনার ব্রেক। অর্চিষ্মান হাই তুলে আড়মোড়া ভেঙে নেমে গেল। আমি সিট ছেড়ে উঠছি, কোলে রাখা ফোন ধুপ করে পড়ে গেল।
ফোন উদ্ধার করতে অনেকগুলো বাধার সম্মুখীন হলাম। এক, বাসের আলো আমার সিটের নিচে পৌঁছচ্ছে না কাজেই জায়গাটা ঘুটঘুটে অন্ধকার। দুই, আমার সিটের নিচে আমাদের কাঁধের ব্যাগ (কারণ বাংকের প্রস্থে শুধু ব্যাকপ্যাকই ঢোকানো গেছে। আর আমরা বাহননির্বিশেষে লাগেজ চেক ইন করার বিরোধী। কাজেই বাসের গর্ভের বদলে সিটের নিচে ব্যাগ নিয়ে বসেছি।) তিন, অর্চিষ্মান নিজের ফুটরেস্ট না গুটিয়েই নেমে গেছে। হাত বাড়িয়ে ওর সিটের ওপাশের হ্যান্ডল ধরে ফুটরেস্ট গোটানোর চেষ্টা করে ছাড়ান দিলাম। তারপর ওর ফুটরেস্ট আর আমার সিটের মাঝখান দিয়ে যতখানি শরীর নিচু করা যায় করলাম। নিজের সিটে মাথা ঠেকে গেল। এবার সিটের নিচে ব্যাগের পাশের অন্ধকারে হাত ঢুকিয়ে দিলাম। ফোন ছাড়া যেন হাতে আর কিছু না ঠেকে ঠাকুর।
ফোনই ঠেকল। নাস্তিকগুলো এর পরেও বলবে ভগবান নেই। ঠেকার পরই যদিও বিপদের মাত্রাটা পুরোপুরি টের পেলাম। ফোন এবং হাত কোনওটাই আমি সিট আর ব্যাগের ফাঁক দিয়ে বার করতে পারছি না। এই অনৈচ্ছিক এবং আধখ্যাঁচড়া পার্শ্ববলাসনে কয়েক মুহূর্ত কাটল। ব্রিদ ইন। ব্রিদ আউট। তারপর স্রেফ উইলপাওয়ারের জোরে হাত আর ফোন দুইই বেরোল। ঘাড় তুলে, সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে, অর্চিষ্মানের ফুটরেস্ট টপকে বাস থেকে নামলাম।
দরজার মুখে দাঁড়িয়ে অর্চিষ্মান দুই হাত দুলিয়ে সামনে পেছনে তালি দিচ্ছিল। এত দেরি হল যে? উত্তর শোনার আগেই বলল এই রাতভরের লং ড্রাইভ, মাঝরাতে ধাবায় ডিনার, এগুলোর জন্যই তো বাড়ি থেকে বেরোনো, বল?
ধাবাগুলোর জন্য একমাত্র বেঢপ বিশেষণটা প্রযোজ্য। নন এসি বসার জায়গা পেরিয়ে এসি অংশে ঢুকলাম। লাল ফোমের সিট। সানমাইকার টেবিলটপ। অর্চিষ্মান ছোলেরাইস নিল, আমি আলুপেঁয়াজ পরোটা। পরোটার সঙ্গে একখাবলা সিগনেচার সাদা মাখন। অর্চিষ্মান ছোলেচাওলের চামচ মুখে পুরে মাথা দুলিয়ে বলল একসময় এই দু’পদের কম্বো খাবারগুলোকে কী নিচু চোখে দেখতাম। রাজমা চাওল। ছোলে চাওল। এখন দিব্যি লাগে।
আরও লোকজন ঢুকছিল। অধিকাংশই আমাদের হাঁটুর বয়সী। তাদের পকেটে হাত ঢুকিয়ে হাঁটা, একে অপরকে ব্রো আর ডুড সম্বোধন শুনে আমরা ফিসফিস করে প্রশ্রয়মিশ্রিত হাসাহাসি করছিলাম। বলাবলি করছিলাম, দুজনেই জীবনে প্রথমবার বাড়ি থেকে বেরিয়ে দিল্লি এসে এক্স্যাক্টলি এদের সামনেই পড়েছিলাম এবং দুজনেরই প্রাণপাখি কেমন উড়ে গিয়েছিল। কী স্মার্ট, কী সোয়্যাগ, কী কনফি। আমার তার সঙ্গে ফাউ, কত ইংরিজি। আর এখন এদের দেখে হাসি ছাড়া কিছু পায় না। অথচ আমি এখনও আনস্মার্ট, এখনও আন্ডারকনফিডেন্ট। যেটা বদলেছে সেটা বয়স। বয়স দেখাশোনাচাখার একটা কবচকুণ্ডল পরিয়েছে যাকে ভেদ করার সাধ্য, অন্ততঃ এদের নেই।
চায়ে চুমুক দিয়েই মাথা ঘুরে গেল। এ চায়ে চা কম দুধ বেশি। ফিকি আনতে বলেছি কিন্তু দুধ এত ঘন আর মালাইদার যে তাতেই মিষ্টির ঠাকুরদাদা হয়ে গেছে। দু’চুমুক খেয়ে অপরাধী মুখে অর্চিষ্মানকে বললাম, আর খাব না। অর্চিষ্মান বলল, তোমার চেয়ারের নিচ দিয়ে সুপারসনিক স্পিডে কী একটা দৌড়ে গেল। বলে মধ্যমা আর বুড়ো আঙুল ছড়াল। এই সাইজ। পেছনে সরু লম্বা ল্যাজ।
আমি বললাম ওসবে বিচলিত হলে এখানে খাওয়া যাবে না। জায়গাটা বীভৎস নোংরা। অর্চিষ্মান বলল নোংরা বুঝি? দেখালাম ওর ঠিক পাশে মেঝেতে একটা ঘুচিমুচি ন্যাপকিন পড়ে আছে। ন্যাপকিন হোল্ডারে মাখনের পোঁচ। আচারের বাটিতে গোঁজা চামচটা অন্ততঃ পঁচিশজন খাইয়ে ডান হাত দিয়ে ধরেছেন। অর্চিষ্মান চোখ ঘোরাল। তোমার চোখেও পড়ে। আমিও চোখ ঘোরাতে পারতাম। তোমার সত্যি চোখে পড়ে না?
ঘোরালাম না। অ্যান আই ফর অ্যান আই উইল লিভ দা হোল ওয়ার্ল্ড ব্লাইন্ড।
(ক্রমশঃ)
কয়েকদিন ধরে খুব যাচ্ছেতাই রকম জীবনে 'কি চাই -কি চাইনা-কোনগুলো সামাজিক নিয়মে চাইতে শিখলেও ঠিক করে চাইতে পারছিনা' এইসব জটিল মুশকিলের দোনোমনাতে ভুগছি। তারপর আজকে আপনার পোস্টটা পড়ে লুচি আর হুট করে বেরিয়ে পড়তে পারার ক্ষমতায় স্ট্যাম্প পড়লো। 'সত্যি সত্যি চাই'-এর লিস্টটার জোর বাড়ছে।
ReplyDeleteআজকের পোস্ট অ'ফাম হয়েছে। ভূমিকা, আবহ রচনা, উপমা চয়ন.. সব ফাটাফাটি, হেব্বি। বাহুবলী ২ এর থেকে বেশি আগ্রহে অপেক্ষা করবো।
বৈজয়ন্তী, এ রকম কমেন্ট পেলে অনেক লিখতে ইচ্ছে করে। আমি যেমন পারি তেমনই।
Deleteসে জন্যই একটা মহাভারত কমেন্ট লিখব এবার। আপনার কমেন্টটা দুজন লোকের (যাঁদের আমি রেয়াত করি) বলা দুটো কথা মনে করিয়ে দিল। প্রথমটা দোনোমনা সংক্রান্ত, কিছুটা চাওয়া সংক্রান্তও। ওঁর পুরোনো স্কুলের পুরস্কার বিতরণী সভায় বক্তৃতা দিতে গিয়ে চন্দ্রিল ভট্টাচার্য বলছিলেন যে ছোটরা ভাবে বড়রা সব ফিগার আউট করে ফেলেছে। এর থেকে মিথ্যে কথা আর হয় না। একজন ছোট যেমন একটা বেড়ালের দিকে তাকিয়ে ভাবে ল্যাজটা টানব না টানব না, বড়রাও ওই রকম বিবিধ বেড়ালের ল্যাজ টানবেন না টানবেন না ভাবতে ভাবতেই জীবনের মধ্যে দিয়ে হাঁটেন। কখনও টানেন, কখনও টানেন না। যখন টানলেন কেন টানলেন বা যখন বেড়ালকে ঘাঁটালেন না কেন ঘাঁটালেন না তার কোনও যুক্তিগ্রাহ্য কারণ নেই। কাজেই দোনোমোনাই লাইফ।
আপনার "সত্যি সত্যি চাই"-এর প্রসঙ্গে আমিও ভেবেছি। সত্যিটা হচ্ছে আমি সত্যি সত্যি চাই জীবনে একটা বড় জোর দুটো জিনিস। সেগুলো প্র্যাকটিক্যাল না হতে পারে কিন্তু এখানে প্র্যাকটিল্যাটির কথা হচ্ছে না, হচ্ছে চাওয়ার কথা। আমার বিশ্বাস যাঁরা স্ব স্ব ক্ষেত্রে গ্রেট হন তাঁরা নিজেদের সত্যি চাওয়াটার জন্য বাকি সব পনে-, হাফ- আর সিকি-চাওয়াগুলোর মুখে লাথি মারতে পারেন। তাঁরা হয়তো নিজেদের একমাত্র চাওয়াটার পাশাপাশি অনেককিছু পেয়েছেন বা পান কিন্তু সে প্রাপ্তিগুলো সর্বার্থেই সেকেন্ডারি।
সিলভিয়া প্ল্যাথের একটা উক্তি পড়েছিলাম অনেক ছোটবেলায়। "Perhaps when we find ourselves wanting everything, it is because we are dangerously close to wanting nothing." যত দিন যাচ্ছে এর মর্ম বুঝতে পারছি। বা হয়তো পারছিও না, কে জানে।
বাসের ছেলেগুলির হারানো ইমেজ আর শিষ্যা নর্তকীর সেবা করার গল্পটা দারুন।
ReplyDeleteপরের অংশের অপেক্ষায় থাকলাম।
থ্যাংক ইউ, রাজর্ষি। কসোল গেছেন? না হলে যেতে পারেন, বেশ ভালো জায়গা। খুব বেশি করার নেই, কিন্তু জীবনের মানে ফিগার আউট করার জন্য চমৎকার জায়গা। অথচ বোরিং না।
Deleteহাহা... আর না, কসোল যাওয়া হয়নি।
Deleteওইদিকে কখনো ট্রিপ হলে মাথায় রাখবো।
ei post tar opekhyae chhilam.
ReplyDeletedelhi theke Himachal-er bus trip-er bornonae emon ekta periode phire gelam jar shonge ekhonkaar durotto thik sal tarikher hishebe kora jaabe na...
এটা ভালো বললে। ভেবে দেখলাম, আমারও অধিকাংশ স্মৃতির সঙ্গে দূরত্বটা সময়ের নয়, একটা গোটা কুন্তলার।
Deleteতোমার এই বেড়াতে যাওয়ার পোস্টের অপেক্ষায় থাকি... আশা রাখি আমিও একদিন এরকম আধ ঘন্টার নোটিশে ব্যাকপ্যাক কাঁধে পাহাড় চলে যেতে পারবো..
ReplyDeleteথ্যাংক ইউ, শাল্মলী।
Deleteদারুণ শুরু হয়েছে, লুচি খেতে খেতে পঁয়তাল্লিশ মিনিটে বেড়াতে বেরিয়ে যাওয়া থেকে খুব inspiration নিলাম। আমি একদিন/রাত আগে অবধি করেছি, এবার তিন ঘণ্টা টার্গেট 😊
ReplyDeleteঊর্মি।
Deleteএকদম, ঊর্মি। ধাপে ধাপে।
DeleteDurdanto bhalo shuru holo.. bakita poRar ashay thaklam.. khub bhalo lage beRanor golpo
ReplyDeletechawa na chawar comment er quote ta khub bhalo laglo
Indrani
থ্যাংক ইউ, ইন্দ্রাণী। আপনার কমেন্ট সবসময় মন ভালো করে।
DeleteUff, Dilli to Himachal overnight bus gulo te ekkaale pray daily passengeri kortam. Tomar bornona porei mone mone "phirbe na se ki phirbe naaaa" gaichhi.
ReplyDeletePorer kistir opekkhay roilam.
থ্যাংক ইউ, বিম্ববতী। গুশাইনির রাজু কটেজের কথা আগে শুনেছিলাম, কিন্তু ফাইন্যাল ঠেলাটা তোমার কাছ থেকেই এসেছিল যতদূর মনে পড়ছে। অর্থাৎ আমাদের চিরকালের ভালোলাগার একটা স্মৃতির ক্রেডিট তোমার।
DeleteGhoti Shobyotaar pinnacle :PPPP
ReplyDeleteOnek din por lekha elo ebaar ..
- Parama
হ্যাঁ পরমা। আজকাল আর কিছু ইচ্ছে করে না, শুধু পড়ে পড়ে ঘুমোনো ছাড়া।
DeleteUnfortunately - same pinch :/
Deleteদারুণ লেখা তো বটেই, ৪৫ মিনিটের নোটিশে ঘুরতে বেরিয়ে যাওয়াটাও কম রোমাঞ্চকর না কিন্তু।
ReplyDeleteবাসের গল্পটা আলাদা করে পোস্ট দাবী করে কিন্তু।
সব মিলিয়ে এবারের বেড়ানোর গল্প এক্কেবারে জমজমাট।
পরের পার্ট জলদি দিও।
-প্রদীপ্ত
থ্যাংক ইউ, প্রদীপ্ত। হ্যাঁ, আজকালের মধ্যেই হয়তো নেক্সট পার্ট পাবলিশ করব।
DeletePatta amar moto onek manusher khetrei ekta chorom negative game hoye jay, kokhono jeno zero kelvin.
ReplyDeleteসেই বোধহয় স্কুলের পর এই টার্মটা শুনলাম। কত কথা মনে পড়ে গেল।
Delete